জেবতিক আরিফের মন্তব্যে আমার প্রতিমন্তব্য

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: বুধ, ২৭/০৬/২০০৭ - ২:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

থিসিস কামলা নিয়ে ইদানিং বেশ জেরবার অবস্থা আমার । লেখালেখি বা আলোচনায় অংশ নেয়া কোনটাই হয়ে উঠে না ইদানিং । এখন একটু ফ্রি হইছি । সময় দেব ব্লগে এইবার ।

বেশ কিছুদিন আগে উৎসের এক পোস্টে জেবতিক আরিফের একটা মন্তব্যের প্রতিমন্তব্যে ড্রাফট লেখা হইছিলো । সেটাই তুলে দিলাম আপাতত । উৎসের পোস্টেও মন্তব্যঘরে দেয়া যেত এটা । কিন্তু এটা উৎসের পোস্টের মূল বিষয়ের সাথে ঠিক যায় না বলে এটা নতুন পোস্ট আকারে দিলাম ।


এতে করে ক্যাম্পাসে তাদের যে হোল্ড সৃষ্টি হয়,সেটিতে আকৃষ্ঠ হয় সাধারন ছাত্র ছাত্রীরা।এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাঝ দিয়ে বিকশিত ছাত্রদলের জনপ্রিয়তা প্রতিস্থাপিত হয় সরকারী না না সুযোগ সুবিধা দিয়ে।

আশির দশকে ছাত্ররাজনীতি আর নব্বুই দশকের ছাত্ররাজনীতির মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে । আশির দশকে ছাত্ররা ছাত্রদল, ছাত্রলীগের আন্ডারে সেমি গেরিলা পদ্ধতিতে আন্দোলন করছে । কিন্তু নব্বুই দশকের শুরু থিকা (এরশাদ যাবার পর) ছাত্ররাজনীতিতে একটা ভ্যাকুয়াম ক্রিয়েট হইছিলো । নতুন ক্ষমতা পাওয়া বিনপির আদু ছাত্রনেতাগো নেতৃত্বে আপনে যেভাবে কইছেন সেইভাবে কিছু ছাত্ররে আকৃষ্ট করছে । এই আকৃষ্ট হওয়াটারে কি আপনি জনপ্রিয়তা শব্দটা দিয়ে বোঝালেন ?

যাই হোক ছাত্রদলের এই জনপ্রিয় (!?) রাজনীতি কিছুকাল বেশ নির্বিঘ্নে কাটছে । ঐসময়টা ঢাবি নিকট ইতিহাসে সবচেয়ে শান্ত সময় কাটাইছে । পাবলিক ৪ বছরের কোর্স ৪ বছরে (প্রায়) শেষ করছে ।

আরেকটি বড়ো কারন হলো, বাম আন্দোলনের নেতাদের ঐক্যবদ্ধতা না থাকা। এক জাসদ ভেঙে আজ কতোগুলো জাসদ বাসদ হয়েছে,সেটা সাধারন মানুষের পক্ষে গুনে বের করা মুশকিল হয়তো। ব্র্যাকেট বন্দী এই দলগুলো বি্চ্ছিন্ন ভাবে কোন প্রভাব ফেলতে অক্ষম।একজন ছাত্রকে শুধু কমিউনিজম জানলে হবে না তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন দল করবে,সেকি ছাত্রফ্রন্ট করবে,ছাত্র ইউনিয়ন করবে,ছাত্রমৈত্রী করবে,জাসদ ছাত্রলীগ করবে?
সেই সংগঠনটিও শেষ পর্যন্ত টিকবে কি না,সেটাও প্রশ্ন হয়ে দাড়ায়।
এই সব কনফিউশন শেষ পর্যন্ত সাধারন ছাত্র ছাত্রীদের বিশাল অংশকে বামপন্থার খোজ খবর নিতে অনুৎসাহিত করে।

তো উপরে যে পরিস্থিতি বা অবস্থাটা বললাম সেটা চলে হাসিনার লাগাতার ধর্মঘট পর্যন্ত । এরপর ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার কিছু সময় পর পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতি হয়ে ওঠে হল দখল কেন্দ্রিক । ছাত্রদল প্রথম অবস্থায় হল দখলে রাখতে পারলেও রাতারাতি বেশ কিছু পাতি নেতার ছাত্রলীগে দলবদলে ছাত্রদল উৎখাত হয় ঢাবি থেকে । ছাত্রলীগও এরপর তাদের পূর্বসূরীদের পথ ধরে ।

ভালোই চলতেছিলো এইসব । বামেরা সোভিয়েতের পতনে বিক্ষত । কোন এ্যাকটিভিজ নাই । ছাত্র রাজনীতি সেটা যাই হোক না কেন সেটা নিয়ন্ত্রনে ছিলো ছাত্রলীগের । মাঝে মাঝে ছাত্রদলের অযথা তড়পানি । ঠিক এই সময়ে ঢাবি সিনেট বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় । কিছুটা গুছিয়ে আসা সোভিয়েত পরবর্তী বাম ছাত্ররা তখন এনিয়ে একটা বড় আন্দোলন গড়ে তোলে । এটা ছিলো শুরু । এরপর যৌননিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন, জাবিতে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন, ঢাবিতে যৌননিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন, অধুনা ছাত্রী হলে পুলিশী তান্ডবের বিরুদ্ধে আন্দোলন সবগুলোই বেশ বড় স্কেলের আন্দোলন ছিলো । ছোট স্কেলের ক্ষেত্রে ওসমানী উদ্যান উজাড় করার বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী আন্দোলনটার উল্লেখ করা যায় । যেই ঘটনাগুলো নিয়ে এসব আন্দোলন হইছিলো সেইটা কোন নতুন বিষয় না হইলেও এইরকম বিষয় নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলারে আমি বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির নতুন মোড় ঘোরা বলবো । আপনি লক্ষ্য করেন এই আন্দোলনের ব্যানারটা কি ছিলো । পত্রিকা ঘাটলে শুধু দেখবেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যানারের কথা । প্রকৃতপক্ষে এই পুরো আন্দোলনের সংগঠনটা বাম ঘরানার গড়া । বাম দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য কিন্তু তখন বাধা হয়া দাড়ায় নাই । জামাল ভাস্করের গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্য, সুমন চৌধুরীর ছাত্র ফেডারেশন আর কোন দিক নিতে না চাওয়া ধান্দাল প্রপদ ঠিকই এক প্লাটফরমে কাজ করছে । বামপন্থিগো নেতৃত্বে এইসব আন্দোলনে আওয়ামী আমলে ছাত্রলীগ আর বিএনপি আমলে ছাত্রদল পুলিশের বিটিম হিসেবে কাজ করছে ।

এভাবে খেয়াল করলে দেখবেন যে, গত দশকে যতগুলো বড় বড় ছাত্র আন্দোলন হইছে সবগুলোই এই বামদলগুলোই সাধারন ছাত্রদের সাথে নিয়ে করছে । সাধারন ছাত্ররা হয়তো সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত না । কিন্তু তারা বামদলগুলোর এ্যাজেন্ডার সাথে একত্র হয়ে রাস্তায় নামতে দ্বিধা করে নাই । আরেকটা খেয়াল করার বিষয় হলো এই সবগুলো আন্দোলনে ছাত্রদল ছাত্রলীগ পুরোপুরি অনুপস্থিত । এ্যাজেন্ডা বা গ্রহনযোগ্যতা কোনটা দিয়েই তারা কিন্তু কলকে পায় নাই কারো কাছে । তারা তাদের আমরা সবাই মুজিব সেনা বা আমরা সবাই জিয়া হবো শ্লোগান ছাত্রদের টানতে পারে নাই ।



জামাল ভাস্কর, যূথচারী, জেবতিক আরিফ, সুমন চৌধুরী, সাধক শঙ্কুসহ যারা ছাত্ররাজনীতি নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক আশা করছি । বর্তমান সামরিক সরকারের কার্যক্রমে বর্তমান ছাত্ররাজনীতির কি প্রতিক্রিয়া, এবং সেই প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট কিনা সেটা নিয়েও আলোচনার যথেস্ট অবকাশ আছে বলে মনে হয় । সবার অংশগ্রহন কাম্য ।


মন্তব্য

উৎস এর ছবি

একটা কথা গ্রহনযোগ্য মনে হয়, নব্বই আর আশির দশকে ছাত্ররাজনীতিতে গুনগত বেশ কিছু পার্থক্য আছে। অভি নীরুদের আমলে ক্যারিশমার গুরুত্ব বেশী ছিল বলে মনে হয়। নব্বইএর গন আন্দোলনে আমার ধারনা অভি-আমানদের (পজিটিভ-নিগেটিভ দুটোই) ভুমিকা যতখানি, বাম ঘরানার ছাত্রনেতাদের ততখানি হয়তো নাও হতে পারে।

হাসিব এর ছবি

ঠিক । আমি স্বৈরাচার পরবর্তী ও স্বৈরাচার পূর্ববর্তী সময়ের ছাত্র রাজনীতির মধ্যে গুনগত পার্থক্য পাই । আমি এটাকেই ফোকাস করেছি এখানে ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

সুজন চৌধুরী এর ছবি

হাসিব ভাই বিষয়টা ঠিক বুঝা গেলো না ।
আপনি কি ততকালীন student politics-এর কথা আলোচনা করছেন নাকি এখনকার ?

____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

হাসিব এর ছবি

আমি দু'টো সময়ের একটা তুলনমূলক আলোচনার চেষ্টা করেছি এখানে ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

কনফুসিয়াস এর ছবি

ঢাবি-র আন্দোলনটার কথা বলতে পারি।
সাধারণ ছাত্রছাত্রী ছিলো প্রচুর, ব্যানারও তাদেরই ছিলো, কিন্তু বাম দলগুলার ছেলেমেয়েরাই পেছনে ছিলো ঐটার। আমি আর আমার বন্ধুরা তখন প্রপদ করতাম। প্রপদের সবাই ছিলো এই আন্দোলনে। প্রেস কনফারেন্সে যখন আমরা মধুতে সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়ালাম, তখন কোন এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলো, 'আপনারা তো সবাই তো কোন না কোন দল করেন, তাহলে এটা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন কেমন করে হলো'? ঐ কনফারেন্সে আমাদের মানে প্রপদের মাসুদ ভাই শাপলা আপু ছিলেন। আর ছিলো ইউনিয়ন আর ফ্রন্টের কিছু নেতারা। সবার নাম মনে নাই, ববি, অপি আর রুবেল ভাইয়ের কথা মনে করতে পারছি। তবে সাংবাদিকরা অনেক সাহায্য করেছে, এটা সত্য।
পরের দিকে একটু ঝামেলা হয়ে যায়। আন্দোলন একটু জোরালো হলে ছাত্রদলের পোলাপান এটারে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। ওরা আমাদের মিটিংগুলায় এসে সংহতি প্রকাশ করে আমাদের সাথে থাকবে বলে। এই ব্যাপারটার তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম সবাই। লীগের কিছু কর্মীও ছিলো, তবে নেতারা আসে নাই। কর্মীরাও ছিলো আমাদেরই বন্ধু হিসাবে, লীগের কর্মী হিসাবে না।
একটা পর্যায়ে গিয়ে ববি আর অপির মধ্যেও সমস্যা লাগে। আমরা যখন আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়া উদ্বিগ্ন তখন তারা এইটার নেতা কে সেটা নিয়া ক্যাচাল পাকায়।
হল ভ্যাকেন্টের দিন পুলিশের পিটানী খেয়ে আমার বন্ধুরা সবাই নানা জায়গায় ছড়ানো, দুইজনের জ্বরে হাল কাহিল। আমার হাত পা ব্যথা, কিন্তু কেমন করে জানি জ্বর না উঠায় বিকালেই আবার ক্যাম্পাসে গিয়া হাজির হলাম। এবং আমার ধারণা সেদিন থেকেই এই আন্দোলন একেবারেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের হাত থেকে বের হয়ে পুরোপুরি নেতাদের হাতে চলে গেলো। এটারদরকার ছিলো অবশ্য, কিন্তু ওনাদের নিজেদের ঝগড়া মিটিয়ে পরে হলে ভাল হইতো।

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হাসিব এর ছবি

আমি এটাই বলতে চাচ্ছিলাম । নব্বুই পরবর্তী ছাত্র রাজনীতিতে হল দখল , মাস্তানী ছাড়া আর কোনজায়গাতেই ছাত্রদল ছাত্রলীগ ডমিনেন্ট ফোর্স হিসেবে ছিলো না । যেটা নব্বুই দশক পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলোতে ছিলো ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

কনফুসিয়াস এর ছবি

পরে সময় করে লিখবো আবার। আপনারা কথা আগাতে থাকেন।
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হাসিব এর ছবি

কিন্তু আমাগো বসে কৈ? কোন সাড়াশব্দ নাই !


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এতে করে ক্যাম্পাসে তাদের যে হোল্ড সৃষ্টি হয়,সেটিতে আকৃষ্ঠ হয় সাধারন ছাত্র ছাত্রীরা।এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাঝ দিয়ে বিকশিত ছাত্রদলের জনপ্রিয়তা প্রতিস্থাপিত হয় সরকারী না না সুযোগ সুবিধা দিয়ে।

একথাটি দিয়ে আমি সে কথাই বুঝাতে চেয়েছি যেটা আপনি বলছেন।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে দুইটি বৃহৎ শক্তির একটি ছিল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ (ছাত্রলীগ ও বামঘরানার ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে)আরেকটি ছিল ছাত্রদল।ছাত্রদলের নামের সাথে "জনপ্রিয়তা "শব্দটি ৯১ পরবর্তীতে থাকেনা ,সেই শব্দটি পুন:স্থাপিত হয় "সরকারী সুবিধাপ্রাপ্ত" ছাত্রদল হিসেবে।
সুতরাং এখানে আপনার আর আমার পর্যবেক্ষনে কোন তফাত নেই।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আপনি দ্বিতীয় জায়গায় খুব সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন যে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো কিভাবে ৯০ পরবর্তী সময়ে আন্দোলনে ভুমিকা রেখেছে।
আমার সাথে দ্বিমত হলো কই?আমার কমেন্টটি খেয়াল করুন:

দূ:খজনক ব্যাপার হলো বাম নেতারা এই দেশে আন্দোলনের লাভ কখনো ঘরে তুলতে পারেন নি।সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়,কিন্তু এটা মানতেই হবে যে এই দেশের এমন কোন আন্দোলন হয় নি,যেটার সুত্রপাতের সাথে বাম ঘরানার মানুষ যুক্ত ছিলেন না।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ইস্যুতে বাম সংগঠনগুলোর শক্তিশালী ভুমিকা সশ্রদ্ধ স্বীকার করি।বিশেষ করে শিক্ষাকে পন্য করার বিরুদ্ধে আর জামাত শিবিরের আগ্রাসী রাজনীতির বিরুদ্ধে সৎ কোন লড়াই চালিয়ে গেলে সেটা বামপন্থীরাই চালিয়েছে এখ্নও চালাচ্ছে।

কিন্তু এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে বামপন্থীরা কেন আন্দোলনের নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করবে? এটাকি আত্মঘাতী কৌশল নয়?রাজনীতি হচ্ছে এমন একটি বিষয় যেখানে সংগঠন তার বিস্তার ঘটাতে চাইবেই।

একটি গাছকাটা আন্দোলন,রোকেয়া হলে পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন,শিক্ষাকে পন্য বানানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন বা এ জাতীয় আন্দোলনকে বিচ্ছিন্ন ভাবে নিয়ে হয়তো একধরনের সাফল্য পাওয়া যায়।কিন্তু লংরানে এটি সাধারন ছাত্রছাত্রীদের কাছে সংগঠনকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে পারে না।

ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীদের স্বপক্ষে আমার সংগঠনের কর্মকান্ড,এটি প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাকে বোধহয় সংগঠন নিয়েই দাড়াতে হবে বারবার।
এখন আমি যদি আন্দোলনের সময় সাধারন ছাত্রছাত্রীর ব্যানার নেই,তাহলে বাকি সময় সংগঠন করে লাভ টা কি?
এটা কি পরোক্ষ স্বীকার করা নয় যে আমার সংগঠন এখানে ব্যর্থ,তাই আমাকে বিকল্প ব্যানারের খোজে যেতে হচ্ছে ?
এ বিষয়টি হয়তো সংশ্লিষ্ঠ সংগঠনের নেতা নেত্রীরাই ভালো বলতে পারবেন।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

হাসিব এর ছবি

কিন্তু লংরানে এটি সাধারন ছাত্রছাত্রীদের কাছে সংগঠনকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে পারে না।

কথাটা ঠিক । কিন্তু লঙ রান ট্রেন্ড তৈরী এখনও হয়নি বর্তমান ছাত্ররাজনীতির । ভাষা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত যে ট্রেন্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটার প্রভাববলয় সাধারন মানুষের কাছে এখনও ক্রিয়াশীল । এসময়কার সহিংস ছাত্ররাজনীতিকেই গড়পড়তা মধ্যবিত্ত ছাত্ররাজনীতি হিসেবে বোঝে । একারনেই ছাত্ররাজনীতি বলতে মানুষ হল দখল, ধাওয়া ধাওয়ি, অস্ত্রবাজী ইত্যাদি বোঝে । সুশীল সমাজও এই আপডেট না হওয়া ধারনাটাকে পুরোপুরি ইউটিলাইজ করে । তারা নানাভাবে বলার চেষ্টা করে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত । প্রচার মাধ্যমের একটু সহযোগিতা, আরেকটু সময় এদুটোই পারে মধ্যবিত্ত মনমানসিকতা থেকে বর্তমান ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারনা তৈরী করতে ।

আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ছাত্রদল কিংবা ছাত্রলীগের লংরান পরিকল্পনা না থাকতে পারে কারন তারা বর্তমানে বিশ্বাসী।

কিন্তু বাম আর শিবিরদের তো থাকতেই হবে।
তারা তাদের কাঙ্খিত বিপ্লবের লক্ষ্যে পরিচালিত হবে,সুতরাং তারা অবশ্যই লংরানে চিন্তা করবে।

সেখানে সংগঠন থেকে বেরিয়ে আন্দোলন করা পক্ষান্তরে সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্থ
করারই সামিল বলে আমি মনে করি।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

হাসিব এর ছবি

কিন্তু সেই সাথে নিজেদের সংগঠন থেকে না বেরোলে এই আন্দোলনগুলো গড়াও যেত না সেভাবে । এই কথাটাও মাথায় রাখতে হবে ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আন্দোলনের কৌশলের জন্য যদি সংগঠনকে পাশে ঠেলে দিতে হয়,আন্দোলনের বিজয়ের পর আবার সেখান থেকে সংগঠনের জন্য ফায়দাও তুলতে হয়।আনদোলনের মাধ্যমে যে বিরাট জনপ্রিয়তা আর জনসম্পৃক্ততা সৃষ্ঠি হয়,বিজয়ীরা সেটাকে কাজে লাগাতে পারতেন।

এই কাজটি বাম সংগঠনগুলো কতোটুকু পারেন সেটা নিয়ে আমার দ্বিধা আছে।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

হাসিব এর ছবি

এই কাজটি বাম সংগঠনগুলো কতোটুকু পারেন সেটা নিয়ে আমার দ্বিধা আছে।

এবিষয়ে আশা করছি আমাদের এখানকার বাম ঘরানার রাজনীতিকরা কিছু বলবেন ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জম্পেশ আলোচনা চলছে । চলুক । বেশী গভীরে যাচ্ছিনা । হালকা করে একটা কথা বলিঃ বাংলাদেশের বাম ছাত্র সংগঠনগুলোকে আমার কাছে দক্ষিন আফ্রিকার ক্রিকেট টীমের মতো মনে হয় । দুর্দান্ত পারফর্মেন্স । কিন্তু লাভের গুড় ঘরে তুলতে জানেনা । পিঁপড়া খেয়ে যায় ।
৯০ এর পরের প্রকৃত আন্দোলন গুলোতো অবশ্যই এমনকি ৯০ এর ছাত্র আন্দোলনের চুড়ান্ত পরিনতির ম্যাচমেকার ছিলো বামপন্থী ছাত্রনেতারাই । আমান-হাবীব ৯০ এর পরের দিনগুলোতে জাতীয় বীরের সম্মান পেয়েছেন(অন্ততঃ কিছুদিন), কিন্তু নাসিরউদ্দোজা বিস্মৃত প্রায় ।
আয়রনি এটাই!
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ভালো কথা মনে করিয়েছিস।নাসির ভাই কই এখন কে জানে।আমান খোকনরে দশ দিয়া গুন দিলেও একটা নাসির হবে না।

নাসির ভাইয়ের মতো বক্তা আমি খুব কম দেখেছি জীবনে।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কনফুসিয়াস এর ছবি

বাম দল গুলা সবসময়ে আলাদা ব্যনার খুঁজে না। ছাত্রী হলে পুলিশী নির্যাতনের আন্দোলনটা এরকমই ছিলো যে ঐটার শুরুটা আসলেই সাধারণ ছাত্রদের মধ্য থেকে উঠেছিলো। এই সংক্রান্ত প্রথম মিছিলে, যেইটা কার্জনে ঢুকে, আমি তখন ল্যাবে, ঐখান থেকেই মিছিলে ঢুকে যাই। যখন ঢুকি তখনো আমি সাধারণ ছাত্রই। আমার দলের কেউ আমারে বইলা দেয় নাই এখানে ঢুকো বা এইটা করো। সারাদিনের পরে যখন একটা বেইজের দরকার পড়লো, তখুনি মূলত আমরা প্রত্যেকে নিজেদের সংগঠনের খোঁজে গেলাম।

আর, প্রতিটা আন্দোলনকে আলাদা করে বিচ্ছিন্ন বলা যায় না আসলে। এই সবগুলাই একটা লং রানেরই আওতায় পড়ে, কর্তৃপক্ষের অন্যায় কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার যেই টেন্ডেন্সি, সেইটার রেজাল্ট হিসেবেই এই আন্দোলনগুলা হয়। সুতরাং আলাদা বিষয়ে আন্দোলন হয়েছে বইলাই এগুলা কখনোই একটা আরেকটা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।

দল বা লীগের সাথে বাম সংগঠনগুলার মূল তফাত হলো, ওদের একটা সহজ টার্গেট আছে, ক্ষমতা দখল। বাম দলের সেগুলা থাকে না। ওদের চিন্তাভাবনাই সারাক্ষণ থাকে সমাজ বদল বা অন্যায়ের প্রতিবাদ অথবা দুঃস্থদের সহায়তা। এই ব্যাপারগুলা অনেক বেশি আত্মত্যাগ দাবী করে বইলাই কম মানুষ এইখানে জড়ো হয়, এবং এদের কার্যকলাপও গুলি ফুটানো বা হল দখলের মত করে চোখে পড়ে না। এই কারণেই আন্দোলনের সময়ে যেই জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় সেইটা পরে কাজে লাগাইতে চাইলেও পারা যায় না।
ফান্ডিং-এর অভাবটাও অনেক বড় বাধা। বাম দলের হাতে টাকার ছড়াছড়ি নাই, তাই চটক কম ঐখানে।

রাজনৈতিক স্বার্থকতা অবশ্য ক্ষমতায় যাওয়া নিয়াই বিচার্য্য, এবং এই দিক দিয়া বাম দল অসফল। কিন্তু আমি জানি, বেশ কিছু মানুষ ওদের হাত দিয়া বের হয় যারা আক্ষরিক অর্থেই নিজের দেশের জন্যে সব দিয়ে দিতে পারবে। আমার ধারণা এই ব্যাপারটায় ওরাই সবচেয়ে সফল।
এবং, আমাদের দেশ যখন লং রানের জন্যে দাঁড়াবে, আশা করি এই মানুষগুলাই তার ভরসা হয়ে থাকবে।

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কনফু,সুন্দর বলেছেন।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একমত।
জনদ্রোহ কিন্তু সাধারন শ্রেনী থেকেই আসবে,এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু সংগঠনের দায়িত্ব হচ্ছে এটাকে সঠিক ভাবে পরিচালিত করার চেষ্টা করা,এটাকে একটি সুন্দর পরিনতির দিকে নিয়ে যাওয়া।

বামদের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সহজ অর্জন যোগ্য কাছাকাছি টার্গেটের অভাব,আর্থিক অসুবিধা এই বিষয়গুলোর সাথে একমত।

তবে আপনি বোধহয় আরেকটি ব্যাপার মিস করলেন।ক্যাম্পাসে বাম সংগঠনগুলোর প্রত্যেকটির সদস্য সংখ্যা কম হলেও ঐক্যবদ্ধভাবে তারা কম নয়।অন্তত:তাদের শক্তিকে এখনও অস্বীকার করার উপায় নেই।সবগুলো বাম সংগঠন নিজেদের মাঝে কিছূ ছাড় দিয়ে একসাথে কাজ করতে পারলে হয়তো চমৎকার একটা শক্তি দাড় করানো যেত।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

নাসিরুদ্দৌজা কানাডায় । সম্প্রতি ঘাতক মহিউদ্দীনকে আমেরিকা থেকে বহিস্কারের ব্যাপারে আমেরিকা-কানাডা প্রবাসী বাংগালীরা যে প্রেসারগ্রুপ তৈরী করেছিলেন, নাসির তাদের নেপথ্য সংগঠকদের একজন ।

আমার যদি বোঝতে ভুল না হয়, আরিফ মুলতঃ বামছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যের প্রয়োজনকে হাইলাইট করতে চাইছে । এটা জরুরী ছিল,জরুরী এখনো । বুদ্ধিবৃত্তিক ও পড়াশোনার চর্চা আছে যেখানে সেখানে মতামতের ভিন্নতা আসতেই পারে । কিন্তু লক্ষ্য যদি এক ও সুনির্দিষ্ট থাকে সে ক্ষেত্রে এতো ভাংগন আসলে অপচয় ছাড়া আর কিছু নয় ।
বাম ছাত্র সংগঠন যদি একটা সত্যিকারের প্লাটফর্ম হিসাবে দাঁড়াতো তাহলে অনেকেরই দাঁড়ানোর জায়গা তৈরী হতো । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের প্লাটফর্মের হয়তো অভাব হয়না কিন্তু মফস্বলের যে তরুন,প্রগতিশীল তরুন- সাম্যবাদে প্রেম করে সে দাঁড়াবে কোথায়?

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'...সেটাই।

কমিউনিস্ট মাওলানা ভাষানী আমাদের আর আসেননা ।আমাদের আসেন তাত্ত্বিক নেতারা।

শেরাটনের লবিতে রোজ সন্ধ্যায় বিয়ার গিলে আমাদেরকে মার্কস আর লেলিনের তত্ব বুঝিয়ে সিরাজুল আলম খান "দাদা ভাই "হতে পারেন হয়তো,কিন্তু তাতে করে আমার গ্রামের কৃষকের কাছে তিনি কোনদিনই গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেন না।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

ভাস্কর এর ছবি

পোস্টটা আসলে শুরু থেইকাই দেখতেছিলাম...কিন্তু কোন মন্তব্য করি নাই। কারণ আসলে মন্তব্য কি করুম সেইটা ঠিক বুইঝা উঠতে পারতেছিলাম না। কারন কিছু বিষয়রে আমি এতো সরল কইরা দেখতে পারি না। যেরম আসলেই কি এই ৯০'এর দশক পরবর্তী জমানায় জনপ্রিয়তা আর সমর্থনরে এক অর্থে এক কইরা দেখনের উপযোগিতা আছে কিনা সেইটা নিয়া আমি একটু সংশয়ীপ্রাণ আছি।

খালি ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনেই না, আরো অনেক আন্দোলনেই আমরা অনেক ননপার্টিজান ছাত্র-ছাত্রীরে সাথে পাইছি। তারা অনেকেই আমাগো সংগঠনের সাথে যুক্ত হইছে, অনেকেই ফায়দা হাসিলের সম্ভাবনা দেখতে পাইছে আমাগো অ্যাক্টিভিটিতে...আমি আসলেই কনফিউজ্ড এই সময়ের আচরণগত প্রকাশের পশ্চাতপর্ব নিয়া।

ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে আমরা যখন প্রথম প্রতিবাদ মিছিল করি তখন অনেকেই আমাগো মিছিলের প্রতিধ্বনি তুলছে করতালিতে...অনেক বিভেদ থাকা সত্ত্বেও তাগো ঐ হাততালি একীভূত হইছে একটা সময়...ননপার্টিজানরা আমাগো সাথে রাইতবিরাতে বেশ সপ্রভই ছিলো...কিন্তু আসলেই আমাগো আন্তঃসাংগঠনিক বিরোধ তাগো বিভ্রান্ত করছে বইলাই আমার মনে হয় আজকাল।

প্রপদের ভূমিকা আমি খুব ভালো জানি না...কিন্তু আমাগো ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে অশুচি'র ভূমিকা আন্দোলনের মূল ডিকশনেই বহুত ক্ষতি করছিলো সেইটা কইতে পারি।


বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

ভাস্কর এর ছবি

হাসিব দেখছিলেন মন্তব্য?


বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

ভাস্কর এর ছবি

এইটা কি সাম্প্রতিক মন্তব্যে যায় না?


বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।