আদমসংস্থান

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: সোম, ১৫/০৯/২০০৮ - ৬:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রোবায়েত ফেরদৌস প্রস্তাব করেছেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্যকে যাদুঘরে পাঠানোর জন্যে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির জন্যে শ্রদ্ধেয় ড. ইউনূসকে বহির্বিশ্বের সাথে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে।

প্রস্তাবটি অভিনব, একই সাথে কার্যকরী হবার সম্ভাবনাও প্রবল। ড. ইউনূসের ভূবনজয়ী ব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে তাঁর মনোরম স্নিগ্ধ হাসি দেখলে মানুষের মন দ্রবীভূত হতে বাধ্য। পরশুরাম পৃথিবীকে একুশবার ক্ষত্রিয়শূন্য করেছিলেন, ড. ইউনূস হাতে কুঠার তুলে নিয়েছেন দারিদ্র্যের মূলে আঘাত করার জন্যে। আমরা চাই না তিনি একুশবার এই খাটুনির কাজ করে হয়রান হোন, আমরা কামনা করি, একটি শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী কোপেই এই বাজে ব্যাপারটির মূলোৎপাটন করে একে স্টাফ করে অবিলম্বে যাদুঘরে পাঠানো হোক। পরবর্তীতে মুজে গিমে-সহ পৃথিবীর বড়বড় দেশের বড়বড় যাদুঘর এই অমূল্য দারিদ্র্যকে ধার নিয়ে নিজেদের দেশে প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করতে পারবে।

আদমসংস্থান দারিদ্র্যহনন ও যাদুঘরায়নের জন্যে একটি অনন্য উদ্যোগ হতে পারে। এতে করে বাংলাদেশ যেমন একদিকে কিছুটা রেহাই পাবে জনসংখ্যার ভার এবং নিজ দেশে কর্মসংস্থানের অভাবজনিত জটিলতা থেকে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও কিছুটা বাড়বে। বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে এই কাজ হওয়া যে প্রায় অসম্ভব, বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয় ইতিহাসের পাতায় নিজেদের অকর্মণ্যতা দিয়ে তা সুদৃঢ়হস্তে খোদিত করে রেখেছে। নোবেলপুরস্কারজয়ী গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কিন্তু জনশক্তির প্রশিক্ষণ ও সুষ্ঠ রপ্তানির কাজে এগিয়ে আসতে পারে। আজ যে অদক্ষ বা অর্ধদক্ষ শ্রমিক নানা পাকেচক্রে হাবুডুবু খেয়ে ভাগ্যের হাতে নিজেকে সমর্পণ করছেন, তিনিই হয়তো দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিদেশের মাটিতে পা রাখতে পারবেন ড. ইউনূসের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে। সারা পৃথিবীর বড় বড় লোকেরাই ড. ইউনূসের গুণমুগ্ধ, কাজেই তাঁর অনুরোধে কয়েক হাজার দক্ষ বাংলাদেশী শ্রমিককে তাঁরা কাজ দিতেই পারেন। ইউনূস ব্র্যান্ডের শ্রমিকরা কিছু বাড়তি সুবিধাও হয়তো পাবেন সেসব দেশে। মধ্যপ্রাচ্যে যেমন মানবেতর পরিবেশে ক্রীতদাসের মতো খাটানো হয় তাঁদের, তেমন ভোগান্তি হয়তো এঁদের আর পোহাতে হবে না।

অসংখ্য দরিদ্র ডুবছে প্রতিদিন একটু একটু করে, তাদের নাকটা শুধু জেগে আছে পানির ওপরে, আর তারা হাত বাড়িয়ে রেখেছে আমাদের দিকে। এই লক্ষকোটি হাতের বোবা আহ্বান কি ড. ইউনূস ফেলতে পারেন? বিশেষ করে দারিদ্র্যকে যাদুঘরে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেবার পর? আমি কাতর আগ্রহ নিয়ে জাতির এই বৈতরণীপারের খেয়ায় তাঁকে বৈঠা হাতে দেখতে চাই। ওসব বন্দরটন্দর নিয়ে পরেও ভাবা যাবে।


মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি

হোয়াইট পোভার্টি? আজ থেকে দশ পনের বছর পরে আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রশ্ন করবে। তাদের পোভার্টি দেখানোর জন্য যাদুঘরে নিয়ে যেতে হবে। ইউনুস ছাড়াও আরও অনেক নেতাই এরকম বলে এসেছেন। অস্ট্রেলিয়ার এক প্রাইম মিনিস্টারও আজ থেকে ২০/২২ বছর আগে সেরকম বলেছিলেন, কদিন আগে সেটা আবার উঠে এসেছে।

কিন্তু মামু ঘটনা হলো গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এই দেশে। বাংলাদেশে তার উল্টো হলে তো খুবই ভাল হয়। দেখেন ইউনুস ব্র্যান্ডের কিছু আমদানি করার জন্য জর্মানিতে কোন এজেন্সি দেয় নাকি। হইলে আমরা কয়জনে মিলা এইদিকে একটা খুলব।

obachirno এর ছবি

প্রস্তাবটা ভালো সে ব্যাপারে কোন সন্দে হ নাই তবে কথা হচ্ছে ড. ইউনুস ্সব করতে গিয়ে আবার নিজের মান সম্মান না হারান৷ এমনিতেই দেশের ভালো করতে গিয়ে গ্রামিন ফোনকে দেশে এনে একটা বিশাল উপকার করেছে দেশের৷ শুরু গ্রামীন ফোনের মাধ্যমেই দেশ থেকে বছর বছর ৩-৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যায়৷ উনি যদি এই রকম আরো কিছু ্‌একটা করেন তাহলে আমাদের দেশের অবস্থা টাইট হয়ে যাবে৷

দ্রোহী এর ছবি

ডাগদর সাবের জন্য নতুন ফর্মুলা?


কী ব্লগার? ডরাইলা?

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারিদ্র দূর করতে খুব কষ্ট পোহানোর কথা নয় তো! অর্থলোভী পিশাচশ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, আর যাদের বদৌলতে এদেশের রাজনীতিতে পলিটিক্স ঢুকেছে, তাদের ধরে ধরে দেশের বাইরে পাঠালেই তো দারিদ্র জাদুঘরে না ঢুকুক, অন্ততপক্ষে শাহবাগ পর্যন্ত তো পৌঁছুতে পারবে! ইউনুস সাহেব কি এগিয়ে আসবেন সেটা করতে?
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আদম সংস্থানের জন্য এটি একটি বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উম্মুক্ত করতে পারে। কিন্তু অনারব দেশগুলোতে যাতে আমরা কাজ করতে পারি তার পদক্ষেপ কি আদৌ সরকার নেবে? বিভিন্ন দেশে দক্ষ শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবুও আমাদের সরকার সেই সুযোগটি নিতে পারছে না। কিংবা ইচ্ছে নেই। হতভাগা আর দরিদ্র মানুষ না থাকলে জনসভাগুলোতে লোক সমাগম তেমন হবে না। হয়তো সেটাও একটি বড় কারণ। অথচ ভারত আদম সংস্থানের দিক দিয়ে কয়েকগুণ অগ্রগামী।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ড. ইউনুসকে শুভেচ্ছাদূত করে গার্মেন্ট সেক্টরের আমেরিকা বাণিজ্য সম্ভবত খুব একটা সফল হয় নাই।
আর রাজনৈতিক দল গড়ার ঘোষণায় একটু লেজেগোবরে হয়ে যাওয়ায় সম্ভবত ইউনুস সাহেব এখন এদিকে ঝুঁকবেন না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বন্দর নিয়ে না ভাবলে চলবে ?
দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠাতে হলে একটা জাদুঘর বানাতে হবে না ? ওটার টাকা তাহলে কোথা থেকে আসবে ?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।