... ভালোবাসা কারে কয়?

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বুধ, ১৫/০৪/২০০৯ - ৩:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এ গল্পটি আজিমভের ‘হোয়াট ইজ দ্যাট থিং কল্ড লাভ?’ গল্পের ছায়াবলম্বনে লেখা, ২রা মার্চ, ২০০৩।

১.
‘কিন্তু এগুলো তো দু'টো ভিন্ন প্রজাতি।’ অধিনায়ক জিগলু নিচের গ্রহ থেকে ধরে আনা প্রাণী দু’টোকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বললেন। তাঁর আলোকসংবেদী প্রত্যঙ্গগুলো মাথা ছেড়ে বেরিয়ে এলো, সেগুলোর ওপরে বিভিন্ন রঙের ছোপ জ্বলজ্বল করতে লাগলো। অর্থাৎ তাঁর মনোযোগ এখন অনেক বেশি।

ভোন্দলের খুবই আরাম রাগছে আবার পুরনো অভ্যাসে ফিরে যেতে। মাসের পর মাস এই গ্রহে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে, গ্রহের বাসিন্দাদের বিদঘুটে শব্দের অর্থ উদ্ধার করতে গিয়ে খবর হয়ে গেছে তার। এখন আবার সেই আলোর ঝলকানির মাধ্যমে আলাপচারিতায় ফিরে যেতে পেরে চরম স্বস্তি বোধ করছে ভোন্দল। যদিও এখন সে অনেক দূরের গ্যালাক্সিতে, তবুও যেন মনে হচ্ছে, সে বাড়ি ফিরে এসেছে।

‘না স্যার, দু'টো প্রজাতি নয়। একই প্রজাতির দু’টি ভিন্ন রূপ।’ বললো সে।

‘কী যে বলো! দু’টো জীব দেখতে দু’রকম। কেমন যেন, চ্যাপ্টা বাক্সের মতো .. .. তবে উনাকে হাজার শোকর, অন্যান্য প্রাণীগুলোর মতো অত বিদঘুটে নয়। মোটামুটি চলে, হাতপাগুলো আলাদা করে চেনা যায়। অবশ্য কোন রঙের ছোপ নেই .. .. আচ্ছা, এরা কি কথা বলতে পারে?’

‘জ্বি, মহামান্য অধিনায়ক।’ ভোন্দল পর পর সাত রঙের বিচ্ছুরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলো, ব্যাপারটা তার পছন্দ নয়। ‘আমার রিপোর্টে সব খুঁটিনাটি লেখা আছে। এরা গলা আর মুখের সাহায্যে শব্দ উৎপাদন করে, অনেকটা কাশির মতো। আমি নিজেও সেরকম করতে শিখেছি।’ বেশ গর্বিত মনে হলো তাকে। ‘কাজটি অত্যন্ত জটিল।’

‘বলো কী? আমার তো গা গুলাচ্ছে। আচ্ছা, এর জন্যেই তাহলে এদের চোখ এমন চেপ্টা, গর্তে বসানো, হ্যাঁ? অবশ্য আলো দিয়ে কথা বলতে না পারলে চোখেরই বা কাজ কি থাকে, দেখা ছাড়া? যাই হোক, তুমি কেন বলছো এরা দু’টি একই প্রজাতি? বাম দিকের প্রাণীটার আকার ছোট, রোঁয়ার মতো জিনিসগুলো বড় বড়, আর শরীরটাও ভিন্ন অনুপাতে গড়া। দেখো, এর যেখানটা উঁচু, অন্য জীবটার সেখানটা সমতল। এরা কি জ্যান্ত?’

‘জীবিত, তবে এই মূহুর্তে অচেতন, মহামান্য অধিনায়ক। ভয় দমন করে রাখার জন্যে তাদেরকে বিশেষ মনোচিকিৎসা দেয়া হয়েছে, যাতে তাদের সুষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়।’

‘কিন্তু এদেরকে অত সুষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করাটা কি অত জরুরি? আমরা কিন্ত পিছিয়ে পড়েছি .. .. এদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরো অন্তত পাঁচটা প্রাণীজগৎ আছে আশেপাশে, আমাদের সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সময়স্থাণুতা বজায় রাখা খুব খরচের ব্যাপার, জানো তো। এদেরকে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দিয়ে আমি সামনে বাড়তে চাই।’

কিন্তু ভোন্দলের ভেজা ভেজা থলথলে শরীরটা কেঁপে উঠলো, খুবই উৎকন্ঠার মধ্যে আছে সে। তার মোটা জিভটা বেরিয়ে এসে চ্যাপ্টা নাকের ওপর কুন্ডলী পাকিয়ে রইলো, আর চোখগুলো ফিরে গেলো কোটরের ভেতরে। সে তার তিন আঙুল ওয়ালা হাত নেড়ে মানা করতে লাগলো, আর আলোর সঙ্কেতে কথা বলতে বলতে তার চোখের ওপরের ছোপগুলো হয়ে গেলো গাঢ় লাল।

‘উনি আমাদের রক্ষা করুন, মহামান্য অধিনায়ক, কিন্তু এই প্রাণীজগতের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু আশেপাশে এখন নেই! আমাদের সামনে চরম দুঃসময় আসতে পারে। এই প্রাণীগুলো এই গ্যালাক্সির সবচেয়ে বিপদজনক প্রাণী হতে পারে, স্যার .. .. শুধুমাত্র এই কারণে যে এদের দু’টি ভিন্ন রূপ রয়েছে।’

‘তোমার কথা ধরতে পারছি না।’

‘মহামান্য অধিনায়ক, আমার কাজ ছিলো এই গ্রহটির ওপরে গবেষণা করা। খুবই ঝামেলার একটা কাজ, কারণ এই গ্রহের রকমসকমই আলাদা। এমনই আলাদা যে আমি এর কাজকারবার ঠিকমতো বুঝতেই পারিনি। যেমন ধরেন, এই গ্রহের প্রায় প্রতিটি প্রাণীরই দু’টি ভিন্ন রূপ রয়েছে। ব্যাপারটা বোঝানোর জন্যে আমি কোন শব্দই খুঁজে পাচ্ছি না। ধরা যাক, এরা হচ্ছে প্রথম রূপ আর দ্বিতীয় রূপ। আর যদি এদের শব্দে শুনতে চান, তাহলে ঐ ছোট প্রাণীটিকে বলা হয় ‘নারী’, আর বড়টিকে বলা হয় ‘পুরুষ।’ বুঝতেই পারছেন স্যার, এই প্রাণীগুলো নিজেদের এই তফাৎ সম্পর্কে ওয়াকেবহাল।’

জিগলু শরীর কুঁচকালেন। ‘কী জঘন্য!’

‘শুধু তাই না, মহামান্য অধিনায়ক, নূতনের সৃষ্টির জন্যে এই দু’টি রূপকে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে হয়।’

অধিনায়ক জিগলু সামনে ঝুঁকে চেহারায় একই সাথে আগ্রহ এবং বিতৃষ্ণা নিয়ে জীব দু’টিকে খুঁটিয়ে দেখছিলেন, এই কথা শুনে তিনি ঝটিতে সোজা হলেন। ‘পারস্পরিক সহযোগিতা? কী আবোলতাবোল বকছো তুমি? প্রত্যেক প্রাণীই তার নূতনের জন্ম দেয় নিজের সাথে সবচেয়ে অন্তরঙ্গ যোগাযোগের মাধ্যমে, এর চেয়ে বড় কোন গুণ প্রাণের থাকতে পারে না! যদি তা না-ই হয়, প্রাণের তবে মূল্য কী?’

‘এদের একটি রূপ সে কাজটিই করে, তবে অন্য রূপটিকে এ ব্যাপারে অবশ্যই সহযোগিতা করতে হয়।’

‘সেটা আবার কেমন করে?’

‘সেটা বোঝা বেশ ঝামেলার ব্যাপার। বেশ ব্যক্তিগত একটা ব্যাপার। আর আমি যেসব তথ্য বা প্রমাণ খুঁজে পেয়েছি, সেগুলোর কোথাও সঠিক বর্ণণাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে আমি ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করে বের করে ফেলেছি।’

জিগলু মাথা নাড়লেন। ‘কী সব ফালতু কথা! কুঁড়ির জন্ম দেয়াই এ বিশ্বে সবচেয়ে পবিত্র, সবচেয়ে ব্যক্তিগত ক্রিয়া। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ গ্রহে সেটাই ঘটে থাকে। আমাদের আলোককবি কুঝিকঝিক কী বলেছেন দেখোনি? “কুঁড়ি ফোটার সময়, ওরে কুঁড়ি ফোটার সময়, ওরে, মিষ্টি লক্ষ্মী কুঁড়ি ফোটার সময় যখন আসে ..”।’

‘অধিনায়ক, আপনি বুঝতে পারছেন না। এই প্রাণী দু’টির সহযোগিতার ফলে এদের একটি মিশ্রণ উৎপন্ন হয়, যদিও আমি জানি না সেটা ঠিক কিভাবে ঘটে। এভাবেই এদের জগতে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রাণীগুলো জন্মায়। আমাদের কুঁড়ি ফোটার ক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তন ঘটতে হাজার বছর লেগে যায়, আর এদের এখানে এই পরিবর্তন ঘটে প্রতিটি নূতনের জন্মের সময়। এর ফলে এদের বৈচিত্র্য অনেক বেশি।’

‘তুমি কি বলতে চাও এই প্রাণীগুলোর একটি রূপের অংশ আরেকটি রূপের অংশের সাথে মিশ্রিত হয়? তুমি কি জানো এটা কত বড় একটা ফালতু কথা? এটা কি আদৌ সম্ভব? আমাদের শরীরবিজ্ঞান কি বলে?’

‘কিন্তু সেটাই ঘটে।’ ভোন্দল জিগলুর কটমটে দৃষ্টির সামনে সংকুচিত হয়ে দাঁড়ালো। ‘এদের বিবর্তন ঘটে খুব দ্রুত। এই গ্রহে তো জাতি প্রজাতি গিজগিজ করছে। বারো লাখেরও বেশি প্রজাতি এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেছে।’

‘বারোটার বেশি হবে না। এখানকার গাঁইয়া প্রাণীগুলোর নিজস্ব তথ্য নিয়ে নাচলে তো চলবে না, নিজেদেরও চোখ কান খোলা রাখতে হবে।’

‘আমি এরকম ছোট জায়গার মধ্যেই কয়েকশো প্রজাতি দেখেছি, মহামান্য অধিনায়ক। এদেরকে অল্প একটু জায়গা আর অল্প একটু সময় দিলে এরা আরো নতুন নতুন প্রজাতির জন্ম দিতে থাকবে। একদিন দেখা যাবে এরা আমাদের মেরেধরে ভাগিয়ে দিয়ে এই গ্যালাক্সি শাসন করছে।’

‘তাহলে এই “সহযোগিতার” ব্যাপারটা তুমি প্রমাণ করো, পরিদর্শক। তাহলে হয়তো আমি তোমার কথায় পাত্তা দেবো। আর যদি সেটা করতে না পারো, আমি ধরে নেবো তুমি চাপা মারছো। সেক্ষেত্রে আমরা সাথে সাথে অন্য গ্রহের দিকে রওনা দেবো।’

‘আমি প্রমাণ দিতে পারবো!’ ভোন্দলের আলোর ঝলক হলদে সবুজ রঙ ধারণ করলো। ‘এই প্রাণীরা আরো একটি দিক দিয়ে স্বতন্ত্র। এরা ভবিষ্যতের অনেককিছু অনুমান করে নিতে পারে, খুব সম্ভবত তাদের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের পরিণাম হিসেবে। এরা এমন সব মহাকাশ যাত্রা নিয়ে সাহিত্য রচনা করে, যা তারা এখনো তৈরি করতে পারে নি। এই ধরনের সাহিত্যকে তারা বলে “সায়েন্স ফিকশন”। আমি এই ধরনের রচনা নিয়ে বিশেষ গবেষণা করেছি। আমার বিশ্বাস, তারা তাদের বিপদজনক দিকটা এই ধরনের সাহিত্যের মাধ্যমে প্রকাশ করে ফেলবে। আর এই সায়েন্স ফিকশন থেকেই আমি তাদের এই পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারটি জেনেছি।’

‘কিভাবে?’

‘এই গ্রহে একটি সাময়িকী রয়েছে, যেটি এমন কিছু সায়েন্স ফিকশন প্রকাশ করে, যেটি মূলত এই সহযোগিতার নানা ভঙ্গির ওপর জোর দিয়ে থাকে। অবশ্য বিরক্তিকর ব্যাপার হচ্ছে, এতে পুরোপুরি খোলাসা করে কিছু বলে না, কেবল আকার ইঙ্গিতে কাজ সারে। আমাদের আলোকভাষায় এই পত্রিকার নামটিকে অনুবাদ করা যেতে পারে “ক্রীড়াবালক” হিসেবে। যে জীবটি এই সাময়িকীর দায়িত্বে রয়েছে, সে কেবল এই সহযোগিতার ব্যাপারটিতেই আগ্রহী, আর এ ব্যাপারে সে এমন বিজ্ঞানসম্মত ও নিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে যে আমি অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছি। তার সায়েন্স ফিকশনগুলোতে এই সহযোগিতার কিছু উদাহরণ আমি খুঁজে পেয়েছি এবং সেটি অনুসরণ করে সামনে এগিয়েছি। .. .. আর মহামান্য অধিনায়ক, আপনার দোহাই লাগে, এই সহযোগিতার ব্যাপারটি আপনার চোখের সামনে ঘটে যাবার পর যখন প্রাণী দু’টি তাদের নূতনের জন্ম দেবে, এই গ্রহটির একটি কণার অস্তিত্বও যেন আর না থাকে।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে,’ চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন জিগলু, ‘আগে এদের হুঁশ ফিরিয়ে আনো, তারপর যা করার জলদি করো।’

২.

শারমিন সিদ্দিকি হঠাৎ নিজের চারপাশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠলো। তার স্পষ্ট মনে আছে বিকেলবেলা স্টেশনটার কথা। প্রায় ফাঁকা, একজন লোক অপেক্ষা করছিলো কাছে দাঁড়িয়ে, আর বহুদূরে আরেকজন। ট্রেনের গুমগুম শব্দ শোনা যাচ্ছিলো।

তারপর হঠাৎ আলোর ঝলকানি, গা গুলানো একটা অনুভূতি, আবছাভাবে দেখা একটা ঘিনঘিনে সরীসৃপের মতো প্রাণীর চেহারা, তার লালা গড়াচ্ছে, ওপরের দিকে খুব দ্রুত ছুটে চলা, আর এই এখন .. ..

‘ওহ খোদা,’ কেঁপে উঠলো শারমিন, ‘এটা এখনো আছে। সাথে আবার আরেকটা!’

শারমিনের অসুস্থ লাগছিলো, কিন্তু ভয় সে পাচ্ছিলো না। আর এ ব্যাপারে তার প্রায় গর্বই হচ্ছিলো। তার পাশে যে লোকটি চুপচাপ মলিন একটা পাঞ্জাবী গায়ে দাঁড়িয়ে আছে, সে হচ্ছে প্ল্যাটফর্মের সেই লোকটা।

‘এরা আপনাকেও ধরে এনেছে?’ জিজ্ঞেস করলো শারমিন।

‘আর কাকে?’

স্বাধীন মিত্র নিজের হাত তুলে মাথার পাতলা চুল সমান করার চেষ্টা করলো, কিন্তু টের পেলো, মহাকাশযানের ভেতরে কোন একটা শক্তি তার এই কাজে বিরোধিতা করছে। হাল ছেড়ে দিয়ে সে বিষণ্ণ চোখে তার পাশের সরু চেহারার মহিলার দিকে তাকালো। মধ্যযৌবনা, চমৎকার ভাবে ছাঁটা চুল, দামী পোশাক, কিন্তু এই মূহুর্তে স্বাধীনের ইচ্ছে করছে অন্য কোথাও থাকবার। কারো সঙ্গ পেয়েও তার ভালো লাগছে না, হোক না নারীসঙ্গ।

সে মুখ খুললো, ‘আমি জানি না ম্যাডাম। আমি শুধু স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’

‘আমিও তো।’

‘তারপরে একটা আলো দেখলাম, কিছু শুনিনি। এখন দেখি আমি এইখানে। মনে হয় মঙ্গল গ্রহ কিংবা এরকম কোন জায়গার প্রাণী এরা।’

‘আমারও তাই মনে হচ্ছে।’ শারমিন সজোরে মাথা ঝাঁকালো। ‘ফ্লাইং সসার। আপনার ভয় করছে না?’

‘না। ব্যাপারটা কেমন যেন, জানেন? আমার মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। নইলে ভয় পাবো না কেন?’

‘হ্যাঁ, ব্যাপারটা অদ্ভূত। আমারো ভয় করছে না। ও খোদা, এই যে আসছে একটা! এইটা আমাকে ধরলে কিন্তু আমি একটা চিৎকার দেবো! দ্যাখেন এর লিকলিকে হাতগুলো। ঝুলে পড়া ঘিনঘিনে চামড়া, মা গো, আমার বমি পাচ্ছে!’

ভোন্দল খুব সাবধানে এগিয়ে এসে খসখসে তীক্ষ্ণ স্বরে, এতটুকুই সে অনুকরণ করতে পেরেছে, বললো, ‘প্রাণীগণ! আমরা আপনাদের ক্ষতিসাধন করবো না। কিন্তু আপনাদেরকে দয়া করে একটু সহযোগিতা করতে হবে।’

‘আয়হায়, এটা দেখি কথা বলে!’ বলে উঠলো স্বাধীন।
‘কীসের সহযোগিতা?’

‘আপনারা উভয়েই। একজন আরেকজনের সাথে।’ বললো ভোন্দল।

‘হ্যাঁ?’ স্বাধীন শারমিনের দিকে ঘুরলো। ‘দিদি, এ কী বলছে কিছু বুঝতে পারছেন?’

ভোন্দল বললো, ‘আমি বলতে চাইছি .. ..,’ এই বলে সে প্রচলিত একটি সংক্ষিপ্ত শব্দ, যেটি সে ব্যবহৃত হতে শুনেছে, উচ্চারণ করলো।

শারমিনের চেহারা লালচে হয়ে উঠলো। ‘কী?’ খনখনে গলায় চেঁচিয়ে উঠলো সে। ভোন্দলের সাথে অধিনায়ক জিগলুও পেট চেপে ধরলেন, যেখানে তাঁর শ্রবণযন্ত্র ব্যথায় কেঁপে উঠেছে।

শারমিন একনাগাড়ে বকে চললো, ‘আমি একজন বিবাহিত মহিলা, বুঝলেন? আমার স্বামী এখানে থাকলে বুঝতেন মজাটা। আর আপনি ভদ্রলোক,’ মহাকাশযানের ভেতরে সেই পিচ্ছিল বাধা উপেক্ষা করে শরীর মুচড়ে স্বাধীনের দিকে ঘুরলো সে, ‘.. .. আপনি যে-ই হোন না কেন, যদি ভেবে থাকেন .. ..।’

‘দিদি, দিদি .. ..’, স্বাধীন অস্বস্তিভরে মরিয়া হয়ে বললো, ‘আমি তো আর এ ধরনের কিছু বলিনি। মানে, আমি কোন মহিলাকে অপমান করতে চাই না, বুঝতেই পারছেন, কিন্তু আমি, আমি নিজেও বিবাহিত, তিনটা বাচ্চা আছে আমার .. ..। শোনেন .. ..।’

৩.

অধিনায়ক জিগলু বললেন, ‘ঘটনাটা কী হে পরিদর্শক ভোন্দল? এদের হাউকাউ ভারি বিচ্ছিরি।’

‘ইয়ে .. ..’, বিব্রত হয়ে ছোট্ট একটা বেগুনি ঝলক দেখালো ভোন্দল। ‘এখানে আবার খানিকটা জটিল রীতিনীতি আছে। প্রথমে এরা দু’জনেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবে। এতে করে নাকি পরবর্তী কার্যকলাপের তীব্রতা বাড়ে। এই প্রাথমিক পর্যায়ের পর এদের ত্বক অপসারিত করতে হবে।’

‘মানে? এদের ছাল ছাড়াতে হবে?’

‘ঠিক তা না। এদের কৃত্রিম ত্বক রয়েছে, যেটা কোন রকম যন্ত্রণা ছাড়াই অপসারণ করা যায়, এবং করতে হয়। ক্ষুদ্রাকৃতির রূপটির ব্যাপারে এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য।’

‘ঠিক আছে তাহলে। ওদেরকে চামড়া ছাড়াতে বলো। কিন্তু ভোন্দল, আমার কাছে কিন্তু গোটা ব্যাপারটাই খুব ইয়ে মনে হচ্ছে।’

‘আমার কিন্তু মনে হয়, ক্ষুদ্র রূপটিকে এ কাজটি করতে বলা আমার উচিত হবে না। বরং আমরা গোটা রীতিটিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। এই যে, আমার কাছে এখানে সেই ক্রীড়াবালকের কিছু মহাকাশযাত্রার গল্প রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, জোর খাটিয়ে ত্বক অপসারণ করা হয়। এটার কথাই ধরুন, এখানে এই দুর্ঘটনাটির একটি বর্ণণা রয়েছে, এই যে, “সে তরুণীর তন্বী শরীর থেকে এক লহমায় সমস্ত পোশাক প্রায় ছিন্ন করে ফেললো। এক মূহুর্তের জন্যে সে নিজের শরীরের সাথে অনুভব করলো মেয়েটির বক্ষের উষ্ণ কাঠিন্য .. ..”, এভাবেই নাকি চলতে থাকে। এই যে ছিঁড়ে ফেলা, এই বলপূর্বক ত্বকের অপসারণ, এটি একটি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।’

‘বক্ষ?’ প্রশ্ন করলেন জিগলু। ‘আমি তোমার ঝলকের অর্থ ধরতে পারলাম না।’

‘এরা এই শব্দটির মাধ্যমে ক্ষুদ্র রূপটির দেহের সম্মুখভাগের ঊর্ধ্বাংশের স্ফীতিকে বোঝায়, মহামান্য অধিনায়ক।’

‘আচ্ছা। তাহলে এই বৃহৎ রূপটিকে বলো ক্ষুদ্র রূপটির ত্বক ছিঁড়ে ফেলতে। ওহ্, কী বীভৎস ব্যাপার!’

ভোন্দল স্বাধীনের দিকে ঘুরলো। ‘মহাশয়,’ বললো সে, ‘আপনি এক লহমায় এই তরুণীর তন্বী শরীর থেকে সমস্ত পোশাক প্রায় ছিন্ন করুন। এ কাজের জন্য আমি আপনার বাঁধন খুলে দিচ্ছি।’

শারমিনের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, রাগের চোটে স্বাধীনের দিকে মুচড়ে ঘুরলো সে। ‘খবরদার বলছি! খবরদার, আমাকে যদি ছুঁয়েছেন তো .. ..! লম্পট, জানোয়ার কোথাকার!’

‘আমি?’ স্বাধীন অভিযোগের সুরে বললো। ‘আমার তো এই ধরনের কোন মতলব নেই। আপনার কি ধারণা, আমি যেখানে সেখানে জামাকাপড় ছিঁড়ে বেড়াই? দেখেন দাদা,’ ভোন্দলের দিকে ঘুরলো সে, ‘আমার ঘরে বউবাচ্চা আছে। আমার বউ যদি টের পায় আমি এই সব কিছু করেছি, আমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। আপনি জানেন আমি কোন মেয়ের দিকে তাকালেই আমার বউ কেমন ব্যাভার করে? শোনেন তাহলে .. ..।’

‘এই প্রাণীটি কি এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে?’ জিগলু অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করলেন।

‘আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হচ্ছে।’ বললো ভোন্দল। ‘অন্যরকম পরিবেশে, বুঝতেই পারছেন, এদের সহযোগিতার পর্বটি বিলম্বিত হওয়া স্বাভাবিক। তবে যেহেতু আমি জানি যে আপনার কাছে এ ব্যাপারটি অপ্রীতিকর, তাই আমি এই রীতিটি নিজেই সমাধা করবো। ক্রীড়াবালকের কিছু গল্পে প্রায়ই বলা হয় যে একটি অন্য গ্রহের প্রাণী এসে ক্ষুদ্র রূপটির ত্বক উন্মোচন করে। এই যে দেখুন এখানে .. ..,’ নোটবইয়ের পাতা উল্টাতে লাগলো সে। ‘তারা একটি বিচিত্র জীবের বর্ণণা দিয়েছে। এই গ্রহের প্রাণীদের বিচারবুদ্ধির বিশেষ অভাব আছে, বুঝতেই পারছেন। তারা আমাদের মতো রূপবান লালা-আবৃত ব্যক্তির বর্ণণা দিতে অক্ষম।’

‘আরে জলদি করো। সারা দিন লাগিয়ে দিচ্ছো যে!’ খেঁকিয়ে উঠলেন জিগলু।

‘জ্বি, অধিনায়ক। এখানে বলছে যে, বহিরাগত প্রাণীটি “মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো। সে প্রাণপণে চিৎকার করতে করতে সেই দানবের আলিঙ্গনে হারিয়ে গেলো। এলোমেলো নখরাঘাতে তার ছোট্ট জামাটি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।” আপনি বুঝতেই পারছেন, এদের ত্বক যখন অপসারিত হয়, তখন এরা উত্তেজিত হয়ে উচ্চমাত্রার শব্দ উৎপন্ন করে।’

‘যাও তাহলে ভোন্দল, এটার ত্বক অপসারণ করো। কিন্তু দোহাই লাগে, শব্দ করতে দিও না। আমার সারা শরীর কাঁপছে।’

ভোন্দল ভারি বিনয়ের সাথে শারমিনকে বললো, ‘যদি কিছু মনে না করেন .. ..।’ তার একটি চামচসদৃশ আঙুল শারমিনের শাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।

শারমিন প্রাণপণে মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। ‘ছোঁবে না, ছোঁবে না বলছি! তুমি এই শাড়িতে ময়লা মাখিয়ে দেবে! দ্যাখো, এটার দাম সাড়ে চার হাজার টাকা, গুলতামিরা থেকে কেনা! দূরে সরো, রাক্ষস কোথাকার! এর চোখগুলো দ্যাখেন!’ হাঁপাতে হাঁপাতে ভোন্দলকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রাণপণ প্রচেষ্টা করছে শারমিন। ‘একটা চটচটে, মাছির মতো চোখওয়ালা রাক্ষস এইটা! এই শোন, আমি নিজেই খুলছি। খবরদার তুমি এটা ছোঁবে না!’

শাড়িটা খুলতে খুলতে শারমিন চোখ গরম করে স্বাধীনের দিকে তাকালো, ‘খবরদার আপনি এদিকে তাকাবেন না!’
স্বাধীন কাঁধ ঝাঁকিয়ে চোখ বুঁজলো।

শারমিন শাড়িটা খুলে দাঁড়ালো। ‘এইবার? ঠিক আছে?’
অধিনায়ক জিগলু অসন্তুষ্ট ভঙ্গিতে আঙুল নাড়লেন। ‘এটাই কি বক্ষ? তাহলে অন্য প্রাণীটি আরেক দিকে মাথা ঘুরিয়ে রেখেছে কেন?’

‘দ্বিধা, দ্বিধা।’ জবাব দিলো ভোন্দল। ‘আর তাছাড়া, বক্ষ এখনো আবৃত। অন্যান্য ত্বকও অপসারিত করতে হবে। পুরোপুরি প্রকাশিত অবস্থায় বক্ষ অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। এদের সাহিত্যে একে সবসময় আইভরি প্রাসাদ, কিংবা শুভ্র গোলক, কিংবা এমন আরো ভঙ্গিতে বর্ণণা করা হয়ে থাকে। আমার কাছে এর রৈখিক চিত্র রয়েছে, ক্রীড়াবালকের সম্মুখ অংশ থেকে সংগৃহীত। আপনি পরীক্ষা করলে দেখতে পাবেন, প্রায় প্রতিটি উদাহরণেই একটি প্রাণী তার বক্ষ আংশিক কিংবা পূর্ণ উন্মোচিত করে উপস্থিত।’

অধিনায়ক চিন্তিত ভঙ্গিতে ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে শারমিনের দিকে ঘুরলেন। ‘আইভরি কী বস্তু?’

‘জ্বি, এই ঝলকটিও আমার আবিষ্কৃত। এদের গ্রহের একটি আংশিক বুদ্ধিমাণ প্রাণীর দেহের একটি কঠিন অংশকে এরা এই নামে ডাকে।’

‘আহ।’ জিগলু সন্তুষ্টির একটি গাঢ় সবুজ ঝলক দেখালেন। ‘এবার বোঝা যাচ্ছে। এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি এই গ্রহের যোদ্ধা গোষ্ঠীর একজন, আর এই কঠিন অংশ দিয়ে সে তার শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে পারে।’

‘না না না। আমার জানামতে, এর এই অংশটি যথেষ্ঠ পেলব।’ ভোন্দল কথা বলতে বলতে তাদের মূল আলোচ্য বিষয়ের দিকে একটি হাত বাড়িয়ে দিলো, শারমিন চিৎকার করে পিছিয়ে গেলো।

‘তাহলে এর আর কী কাজ থাকতে পারে?’

‘আমার ধারণা,’ ভোন্দল খানিকটা ইতস্তত করে বললো, ‘এদের নূতনের পুষ্টিসাধনের উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহৃত হয়।’

‘এদের নূতনেরা এসে এগুলোকে খেয়ে ফেলে?’ জিগলু একেবারে মুষড়ে পড়লেন।

‘ঠিক তা না। এই বস্তু একটি বিশেষ পদার্থ উৎপন্ন করে যা নূতনেরা গ্রহণ করে থাকে।’

‘একটি জীবিত দেহ থেকে পদার্থ গ্রহণ? ছিহহহ।’ অধিনায়ক তিন হাতে তাঁর মাথা ঢাকলেন, তাঁর তৃতীয় হাতটি শরীরের ভেতর থেকে এতো দ্রুত বেরিয়ে এলো যে ভোন্দল আরেকটু হলেই ছিটকে পড়ছিলো।

‘একটা ঘিনঘিনে তিনহাতওয়ালা রাক্ষস!’ বললো শারমিন।

‘ঠিক।’ সমর্থন যোগালো স্বাধীন।

‘শোনেন ভদ্রলোক, চোখগুলোকে সামলে রাখেন!’

‘আমি কিছু দেখছি না দিদি।’

ভোন্দল আবার এগিয়ে এলো। ‘মহাশয়া! আপনি কি বাকি অংশগুলো অপসারণ করবেন?’

শারমিন মহাকাশযানের ভেতরে যতটুকু সম্ভব শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলো, ‘কক্ষনো না!’

‘তাহলে আপনি যদি চান, আমি এ কাজটি সম্পন্ন করতে পারি।’ বললো ভোন্দল।

‘খবরদার ছোঁবে না! খোদার দোহাই, না! ছি, কি লালা মাখানো সারা শরীরে! আচ্ছা ঠিক আছে, খুলছি।’ শারমিন বিড়বিড় করতে করতে চোখ গরম করে স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে অবশিষ্ট যা কিছু আছে খুলতে লাগলো।

৪.

‘কিছুই তো হচ্ছে না।’ গভীর অসন্তোষ নিয়ে বললেন জিগলু। ‘আমার তো মনে হচ্ছে নমুনা হিসেবে প্রাণী দু'টো একেবারেই খুঁতিয়াল।’

ভোন্দলের মনে হলো, অধিনায়ক তার কাজের বদনাম করছেন। ‘আমি আপনাকে একেবারেই নিখুঁত দু’টি প্রাণী এনে দিয়েছি। এদের মধ্যে আপনি কি সমস্যা খুঁজে পেলেন?’

‘কই, এই বক্ষ জিনিসটা তো কোন প্রাসাদ বা গোলকের মতো মনে হচ্ছে না। তুমি নিজেই আমাকে এই জিনিসগুলোর ছবি দেখিয়েছো, কাজেই আমি জানি তারা দেখতে কেমন। ছবি দেখে মনে হচ্ছে এই গোলক বেশ বৃহদাকৃতির। আর চেয়ে দেখো এর দিকে, গোলক তো দূরের কথা, কিছু শুষ্ক কোষের সমন্বয় মাত্র। আবার খানিকটা রঙচটাও বটে।’

‘কী যে বলেন!’ বললো ভোন্দল। ‘একটু এদিক ওদিক তো হবেই। হাতের তিন আঙুল কি কখনো সমান হয়? দাঁড়ান, আমি বরং প্রাণীটিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি।’
ভোন্দল শারমিনের দিকে ঘুরে প্রশ্ন করলো, ‘মহাশয়া, আপনার বক্ষ কি ত্রুটিযুক্ত?’

শারমিনের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, মুখ হাঁ করে কিছুক্ষণ শ্বাস নেয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারলো না সে। অবশেষে সে কোনমতে বললো, ‘আচ্ছা! .. .. আমি মাধুরী দীক্ষিত কিংবা এলিজাবেথ টেইলর নই, সত্যি কথা, কিন্তু আমার সবকিছু ঠিকঠাক আছে! ও খোদা, আমার স্বামী যদি এখন এখানে থাকতো!’ সে স্বাধীনের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার শুরু করলো, ‘শুনুন আপনি! এই সর্দিমাখা রাক্ষসটাকে বুঝিয়ে বলুন তো, যে আমার কোন ... কোন সমস্যা নেই!’

‘ইয়ে, দিদি,’ স্বাধীন কোমল গলায় বললো, ‘আমি কিন্তু কিছু দেখছি না।’

‘নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই, আপনি তো কিছুই দেখছেন না। সেই তখন থেকে আড়চোখে তাকিয়ে আছেন! আর ঢং করতে হবে না, চোখ খুলে একজন ভদ্রমহিলাকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন, যদি আপনি নিজে একজন ভদ্রলোক হয়ে থাকেন .. .. যা আপনি নন!’

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে।’ স্বাধীন আড়চোখে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শারমিনের দিকে তাকালো। ‘আমি আসলে এমন নাজুক পরিস্থিতির সাথে নিজেকে জড়াতে চাই না, তবে আমার মনে হচ্ছে আপনার কোন সমস্যা নেই।’

‘মনে হচ্ছে? আপনি কি কানা নাকি? জানেন, আমি একসময় মিস রাজশাহী প্রতিযোগিতায় রানার আপ হয়েছিলাম? আর জানেন কেন রানার আপ হয়েছিলাম? কারণ আমার কোমরে একটু সমস্যা ছিলো, অন্য কোথাও নয় .. ..।’

স্বাধীন তাড়াতাড়ি বললো, ‘আচ্ছা, আচ্ছা .. .. আপনার কোন সমস্যাই নেই। সত্যি, আপনি .. .. বেশ ভালো।’ স্বাধীন ভোন্দলের দিকে তাকিয়ে জোরেসোরে মাথা ঝাঁকালো। ‘ঠিক আছে, এনার সবকিছু ঠিক আছে। আমি অবশ্য এ ব্যাপারে এমন কোন বিশেষজ্ঞ নই, তবে এনার কোন কিছু নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।’

শারমিন শ্বাস ফেলে ঢিল দিয়ে দাঁড়ালো।

ভোন্দল হাঁপ ছেঁড়ে বাঁচলো। সে জিগলুর দিকে ফিরে বললো, ‘বৃহৎ রূপটি আগ্রহ প্রকাশ করেছে, মহামান্য অধিনায়ক। আমার মনে হয় প্রেরণাশক্তি কাজ শুরু করেছে। এখন শুধু শেষ পর্বটি বাকি।’

‘সেটা আবার কী?’

‘আমি এটার জন্যে কোন ঝলক খুঁজে পাচ্ছি না, অধিনায়ক। এদের একজনের কথা বলা আর খাদ্যগ্রহণের অঙ্গটিকে অপরজনের একই অঙ্গের ওপর স্থাপিত করা হয়। আমাদের ঝলকে একে বলা যেতে পারে : চুম্বন।’

‘আমি কি বমি করেই ফেলবো?’ গজগজ করতে লাগলেন জিগলু।

‘এটাই হচ্ছে সহযোগিতার চরম পর্যায়। এদের সাহিত্যের সব গল্পে, ত্বক অপসারণের পর দেখা যায় এরা একে অপরকে তাদের হাত পা দিয়ে জাপটে ধরে, এবং আমাদের ভাষায় বলতে গেলে “জ্বলন্ত চুম্বন” করতে থাকে। এই যে দেখুন, এখানে উদাহরণ রয়েছে, “সে মেয়েটিকে জাপটে ধরলো, তার ঠোঁট মিশে গেলো মেয়েটির ঠোঁটের সাথে।’
‘কে জানে, হয়তো একটা প্রাণী আরেকটাকে ধরে খেয়ে ফেলছিলো।’ বললেন অধিনায়ক।

‘মোটেও না।’ ভোন্দল খানিকটা অধৈর্য হয়ে বললো। ‘ওটা ছিলো জ্বলন্ত চুম্বন।’

‘জ্বলন্ত? কী বলতে চাও তুমি? দহন প্রক্রিয়া ঘটতে থাকে নাকি?’

‘আমার তা মনে হয় না। আমার মনে হয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ব্যাপারটিকে তারা এভাবে প্রকাশ করে। আমার ধারণা, তাপমাত্রা এভাবে যত বৃদ্ধি পায়, নূতনের উৎপাদনও তত উৎকর্ষ হয়। এখন যখন বৃহৎ রূপটি ঠিকমতো প্রেরণা পেয়েছে, সে ক্ষুদ্র রূপটির মুখে মুখ রাখলেই নূতনের উৎপাদন করতে পারবে। এই প্রক্রিয়াটি ছাড়া নূতনের জন্ম দেয়া সম্ভব নয়। এটাই সেই সহযোগিতা যেটার কথা আমি এতক্ষণ বলছি।’

‘ব্যস, এটাই? কেবল এটুকুই ...?’ জিগলু হাতের ইশারায় ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু ঝলকে কথাটা প্রকাশ করতে তাঁর রুচিতে বাধলো।

‘এটুকুই।’ বললো ভোন্দল। ‘আমি কোন গল্পেই, এমনকি “ক্রীড়াবালক”-এও আমি এর পর নূতনের জন্ম সংক্রান্ত অন্য কোন শারীরিক ক্রিয়ার উল্লেখ পাইনি। তবে কখনো কখনো গল্পে চুম্বনের পর তারা কিছু কিছু চিহ্ন ব্যবহার করে, যেমন ছোট ছোট কয়েকটা বিন্দু .. .. তবে আমার ধারণা এই বিন্দুগুলো আরো চুম্বনের প্রতীক। প্রতিটি চুম্বনের জন্যে একটি করে বিন্দু, যখন তারা একাধিক নূতনের জন্ম দিতে চায়।’

‘আপাতত দয়া করে একটার ব্যবস্থা করো। এখনি।’

‘নিশ্চয়ই, মহামান্য অধিনায়ক।’

৫.

ভোন্দল যথেষ্ঠ গাম্ভীর্য নিয়ে বললো, ‘মহাশয়, আপনি কি দয়া করে এনাকে চুম্বন করবেন?’

স্বাধীন বললো, ‘দ্যাখেন, আমি নড়তে পারছি না।’

‘অবশ্যই, আমি আপনাকে মুক্ত করে দিচ্ছি।’

‘ইনি এই ব্যাপারটা পছন্দ না-ও করতে পারেন।’

শারমিন ফুঁসে উঠলো, ‘আপনি আপনার জান বাজি ধরতে পারেন, আমি ব্যাপারটা পছন্দ করবো না। আপনি খবরদার কাছে আসবেন না।’

‘ঠিক আছে। কিন্তু আমি এদের কথা না শুনলে এরা কী করবে? দ্যাখেন, আমি এদেরকে চটাতে চাই না। আমরা এমনিই .. .. মানে, বুঝলেন তো .. .. লোক দেখানো পাপ্পি দিতে পারি।’

শারমিন ইতস্তত করলো, সাবধানতার কারণটা বুঝতে পারছে সে। ‘ঠিক আছে। কিন্তু খবরদার, কোন ফাজলামি করবেন না। আমার কিন্তু এসব করার অভ্যেস একদম নেই।’

‘আমি জানি। কিন্তু এসব তো আর আমার মাথা থেকে বেরোয় নি। আপনি নিশ্চয়ই তা মানবেন।’

শারমিন চটে গিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো, ‘রাক্ষসের গুষ্টি যত! এরা নিজেদের কী মনে করে আল্লাই জানে। কেমন লোকজনকে হুকুম দিয়ে বেড়াচ্ছে।’

স্বাধীন একটু কাছে এগিয়ে গেলো। ‘ইয়ে, যদি কোন সমস্যা না থাকে, তো .. ..।’ সে আনাড়ির মতো শারমিনের খোলা কাঁধে হাত রেখে খুব সাবধানে মুখ বাড়ালো।

শারমিনের কাঁধ আড়ষ্ট হয়ে উঠলো। স্বাধীনের ঠোঁট তার
ঠোঁট স্পর্শ করলো।

অধিনায়ক জিগলু চটে উঠে ঝলকাতে থাকলেন। ‘কই, আমি তো তাপমাত্রার কোন বৃদ্ধি টের পাচ্ছি না।’ তাঁর তাপসংবেদী শুঁড় মাথার ওপর সটান খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপতে লাগলো।

‘আমিও না।’ খানিকটা মুষড়ে পড়ে বললো ভোন্দল। ‘কিন্তু সায়েন্স ফিকশনগুলোতে যা লেখা আছে, তা-ই তো ঘটছে। আমার মনে হয়, এর হাত আরো প্রসারিত হতে হবে .. .. আহ, এই তো। দেখছেন, ব্যাপারটা কাজ শুরু করে দিয়েছে।’
নিজের অজান্তেই স্বাধীনের হাত শারমিনের কোমল শরীরের দিকে নেমে এলো। শারমিন কিছুক্ষণের জন্যে তার সাথে মিশে থেকে হঠাৎ মহাকাশযানের সেই অদৃশ্য বাধা থেকে ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো।

‘ছাড়ুন বলছি।’ স্বাধীনের ঠোঁটের চাপে শারমিনের কথা জড়িয়ে গেলো। সে হঠাৎ কামড় বসালো, স্বাধীন জোরে কাতরে উঠে নিজেকে সরিয়ে নিলো। নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো সে, তারপর আঙুলে লেগে যাওয়া রক্তের দিকে তাকালো।

‘এটা কী করলেন বলেন তো?’ অভিযোগের সুরে বললো সে।

শারমিন বললো, ‘আপনি তো আমাকে পাপ্পির কথা বলেছিলেন, তার জায়গায় কি শুরু করেছিলেন এটা? কেমন লম্পট আপনি? ওহ, কেমন জায়গায় এসে পড়েছি আমি? চারদিকে শুধু লুচ্চা আর রাক্ষস!’

অধিনায়ক জিগলু হলুদ আর নীল ঝলকাতে লাগলেন। ‘হয়ে গেছে? আমাদের আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে?’
‘আমার তো মনে হয় এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হয়ে গেছে। সারা বিশ্বেই তো, যখন আপনার কুঁড়ি ফোটানোর দরকার হয়, তখন আপনি কুঁড়ি ফোটান। অপেক্ষার কিছু নেই এতে।’

‘তাই নাকি? তুমি এতক্ষণ যেসব জঘন্য ধ্যাষ্টামোর কথা আমাকে ব্যাখ্যা করে শোনালে, আমি আর ইহজীবনে কুঁড়ি ফোটাচ্ছি না। এখন জলদি কাজ শেষ করো।’

‘জ্বি অধিনায়ক, এখনি করছি।’

কিন্তু সময় বয়ে চললো। অধিনায়কের ঝলক আস্তে আস্তে গাঢ় কমলার দিকে চলে গেলো, আর ভোন্দলের ঝলক প্রায় নিবু নিবু হয়ে এলো।

একসময় ইতস্তত করে ভোন্দল প্রশ্ন করলো, ‘মাফ করবেন, মহাশয়া, আপনি কুঁড়ি ফোটাবেন কখন?’

‘আমি কী ফোটাবো?’

‘নূতনের জন্ম দেবেন কখন?’

‘আমার একটা বাচ্চা আছে।’

‘আমি বলতে চাইছি, এখানে নূতনের জন্ম দেবেন কখন?’

‘আমি বলতে পারি না। আরেকটা বাচ্চা নেয়ার ব্যাপারে আমি চিন্তা ভাবনা করিনি।’

‘কী বলছে, কী বলছে?’ জানতে চাইলেন জিগলু। ‘বলছে কী প্রাণীটা?’

‘মনে হচ্ছে,’ জবাব দিলো ভোন্দল, ‘প্রাণীটি এখন নূতনের জন্ম দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয়।’

অধিনায়কের ঝলকের রঙ উজ্জ্বল হয়ে ঝলসে উঠলো। ‘তুমি কি জানো, পরিদর্শক, আমার কী মনে হচ্ছে? আমার মনে হচ্ছে, তোমার মনটা অসুস্থ এবং নোংরা। এই প্রাণী দু’টির কিছুই হয়নি। এদের মধ্যে কোন সহযোগিতাও হচ্ছে না। কোন নূতনের জন্মও এরা দিচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে, এরা দু'টো ভিন্ন প্রাণী, এবং তুমি আমার সাথে বাজে একটা মশকরা করার চেষ্টা করছো।’

‘কিন্তু, অধিনায়ক .. ..।’ বলে উঠলো ভোন্দল।

‘আর কিন্তু অধিনায়ক কপচাতে যেও না!’ বললেন জিগলু। ‘অনেক হয়েছে, আর না। তুমি আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছো, আরেকটু হলে গা গুলিয়ে আমার বমি এসে যাচ্ছিলো, কুঁড়ি ফোটানোর ব্যাপারে আমার মনটাকেই বিষিয়ে দিয়েছো তুমি, আর আমার সময় নষ্ট করেছো। তুমি আসলে চেষ্টা করছো খবরের কাগজে নাম তুলে বাহবা কুড়োতে, সেটা তুমি যাতে না পাও তার জন্যে যা করতে হয় আমি করবো। এখনি এই প্রাণীগুলোকে আমার চোখের সামনে থেকে দূর করো। এগুলোর ত্বক ফিরিয়ে দাও, আর যেখানে তাদেরকে পেয়েছো সেখানে রেখে এসো। আমার উচিত এতক্ষণ এসবের পেছনে অভিযানের যতখানি পয়সা নষ্ট হয়েছে সেটা তোমার বেতন থেকে কেটে রাখা।’

‘কিন্তু, অধিনায়ক .. ..।’

‘যাও বলছি। এদেরকে ঠিক আগের জায়গায়, আগের সময়ে ফিরিয়ে দিয়ে এসো। এই গ্রহে এর পর কেউ পা ফেলুক, তা-ও আমি চাই না। আর এ ব্যাপারে আমি ব্যবস্থা নেবো, যাতে কেউ পা ফেলতে না আসে।’ জিগলু কড়া চোখে আবার চাইলেন ভোন্দলের দিকে। ‘একই প্রাণী, দু’টি রূপ, বক্ষ, চুম্বন, সহযোগিতা .. .. বাহ্! তুমি একটি আকাট মূর্খ, পরিদর্শক, একটা মহা বেকুব .. .. আর সবচেয়ে বড় কথা, একটা মহা খাচ্চর, খাচ্চর, খাচ্চর লোক।’

আর কোন তর্ক চললো না। ভোন্দল কাঁপা হাতে প্রাণীগুলোকে ফিরিয়ে দিয়ে আসার কাজ শুরু করলো।

৬.

তারা দু’জন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে চারদিকে বিহ্বলের মতো তাকাতে লাগলো। প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, দূরে ট্রেনের গুমগুম শোনা যাচ্ছে।

শারমিন দ্বিধা নিয়ে বললো, ‘আচ্ছা, এগুলো কি সত্যি সত্যি ঘটলো?’

স্বাধীন মাথা নাড়লো, ‘আমার মনে আছে।’

শারমিন বললো, ‘আমরা কাউকে কিছু বলতে পারবো না।’

‘অবশ্যই না। কেউ শুনলে আমাদের পাগল বলবে। বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই?’

‘হুম। ঠিক আছে তাহলে।’ শারমিন একটু সরে দাঁড়ালো।

স্বাধীন বললো, ‘শোনেন। আমি খুবই দুঃখিত, আপনাকে এভাবে বিব্রত করার জন্য। আসলে আমার কিছু করার ছিলো না।’

‘না না, ঠিক আছে, আমি জানি।’ শারমিন মাটির দিকে চোখ নামালো। ট্রেনের শব্দ আরো বেড়ে গেছে।

‘মানে, আমি বলতে চাইছি, আপনার কোন সমস্যা ছিলো না। .. .. মানে, আপনাকে বেশ ভালোই লাগছিলো আর কি, কিন্তু ওভাবে বলতে লজ্জা লাগছিলো আমার।’

শারমিন হঠাৎ হাসলো একটু, ‘না না, ঠিক আছে।’

‘তাহলে চলেন, আমি আপনাকে অন্তত এক কাপ কফি খাওয়াই, তাতে যদি আপনি একটু স্বস্তি বোধ করেন। আমার বউ জানে বাড়ি ফিরতে আমার আরো অনেক দেরি হবে, কাজেই .. ..।’

‘তাই? এদিকে আমার স্বামী একটু বাইরে গেছেন অফিসের কাজে। আমা ছেলেটাও বেড়াতে গেছে আমার মায়ের কাছে। আমারও বাসায় কেউ নেই .. ..।’

‘তাহলে তো ঠিকই আছে। আমরা তো একরকম পরিচিত হয়েই গেলাম।’

ট্রেনটা এসে পৌঁছালো, কিন্তু তারা উল্টোদিকে ঘুরলো, সরু সিঁড়ি বেয়ে আবার রাস্তার দিকে এগোলো দু’জন।

অবশ্য কফি নয়, তারা দু’জন দু’টো ককটেল নিয়ে বসলো। তারপর এই ভর সন্ধ্যেয় স্বাধীন কিছুতেই একা একা শারমিনকে বাসায় ফিরতে দিলো না, নিজে এগিয়ে দিতে শারমিনের দরজা পর্যন্ত গেলো। আর ভদ্রতাবশত শারমিন স্বাধীনকে কিছুক্ষণের জন্যে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালো।

৭.

এদিকে, মহাকাশযানের ভেতরে, হতাশ ভোন্দল তার বক্তব্য প্রমাণের জন্যে একটা শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। অধিনায়ক জিগলু যখন মহাকাশযানের যাত্রার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন ভোন্দল তারা দূরদর্শন যন্ত্রের পর্দার সামনে বসে তার নমুনা দু’টির ওপর নজর রাখছিলো। শারমিনের অ্যাপার্টমেন্টে সে শারমিন আর স্বাধীনের ওপর ফোকাস করা মাত্রই তার শুঁড় সটান দাঁড়িয়ে গেলো। রঙধনুর সাত রঙে সে ঝলকাতে লাগলো, ‘অধিনায়ক! মহামান্য অধিনায়ক! দেখুন এরা এখন কী করছে!’

কিন্তু ঠিক তখনই মহাকাশযান সময়স্থাণুতা ভেঙে নক্ষত্রবেগে যাত্রা শুরু করলো।


মন্তব্য

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

এত বড় লেখা অফিসে বইসা পড়া মুশকিল। বাসায় গিয়া পড়ুম নে!
আপাতত চা খায়া আসি! হো হো হো
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

বহু আগে পড়ছিলাম, আবার ও পড়ে ভাল্লাগলো।

দুর্দান্ত এর ছবি

দলের সাথে লাঞ্চে যেতে পারিনি একটা কলের জন্য। ক্যাফে থেকে স্যন্ডুইচ নিয়ে এখানে এসে দেখি, এটা অপেক্ষা করছে। আসিমভের আসল গল্পটা ভাল লেগেছিল, আর তোমার অনুপ্রাণিত রূপান্তরে এটি আরো উপাদেয় হয়েছে।

'সহযোগীতা',
'প্রেরনা',
'ছাল ছাড়ানো',
'আমার মনে হয়, এর হাত আরো প্রসারিত হতে হবে'।

তোফা!

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

যুগান্তকারী! দেঁতো হাসি
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

বিপ্লব রহমান এর ছবি

লেখাটি ভালো লাগলো...হাসি

তবে শেষাংশটা অনেকটা বাংলাছবির মন্তাজ আলীর মতো...যেমন, আকাশে দুটি বলাকা পাখনা মেলিয়া...ওই ইয়ে আর কি! চোখ টিপি


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ব্যাপক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পূর্বেই পড়েছিলাম...
অনুবাদের সরলীকরণ ভালো লেগেছে।

---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

মূলত পাঠক এর ছবি

খাসা গল্প, আগে পড়ি নি ব'লে আসিমভেরটা কেমন ছিলো জানা নেই, আপনারটা দিব্বি লাগলো।

স্পর্শ এর ছবি

ওহ, কেমন জায়গায় এসে পড়েছি আমি? চারদিকে শুধু লুচ্চা আর রাক্ষস!’

আপনার মাথায় আসেও!!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দূর্দান্ত!!!

এর চেয়ে বেশি আর কী বলা যায়!

আকাশ পাগলা [অতিথি] এর ছবি

বস, দারুণ লিখছেন। আমি যে আপনার কত বড় ভক্ত আপনি জানেন না। আপনাকে অনেকদিন ট্রেস করতেসি। কারও থেকে শুনছেন ?? কিন্তু, আপডেটেড লিংক পাচ্ছিলাম না। এইমাত্র পেলাম।

আর পোস্টটা দারুণ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।