প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানী বিতর্ক, প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি এবং একটি বিশ্লেষণ

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/০৮/২০০৯ - ৬:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গভীর সাগরে ২টা এবং অগভীর সাগরে ১টা ব্লক ইজারা দেবার সরকারী সিদ্ধান্তে প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানীর ব্যাপারটা আবার আলোচনায় চলে এসেছে। ইদানিং আমার পরিচিত কয়েকজনও প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানীর পক্ষে বিপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি দেখাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এ বিষয়টাকে খুব ছোট পরিসরে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলাম।

আমার এই লেখাটা জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। (অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানীর সম্ভাবনার কথা শোনা যায়, কিন্তু এই বিষয়ে আমি খুব একটা কিছু জানি না, অথবা এ ব্যাপারে বাগাড়ম্বর ছাড়া কোন সুস্পষ্ট পদক্ষেপও আমি দেখিনি।)। বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে তেলের ব্যাপারটা বাদ দেওয়া যেতে পারে, কারন বাংলাদেশে তেল আবিস্কারের সম্ভাবনা তেমন দেখি না। কয়লার ব্যাপারটা আপাতত আনছি না। কয়লার ব্যাপারে আমাদের আনেক দূর যেতে হবে এবং বলে রাখা ভাল, কয়লা খুব পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি না। এই মুহুর্তে বাংলাদেশের জীবাশ্ম জ্বালানির বড় অংশ দখল করে আছে প্রাকৃতিক গ্যাস। প্রাকৃতিক গ্যাস আবার পরিবেশ বান্ধব এবং বাংলাদেশের গ্যাসের মান খুব ভাল (সুইট গ্যাস বলা হয়, যাতে অন্যান্য যৌগের মিশ্রন খুবই কম।)। দেখা যাক রপ্তানী বিতর্কের পক্ষ, বিপক্ষের যুক্তি গুলি।

প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানীর পক্ষে

প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানীর প্রস্তাবকরা একটা তত্ত্বের উল্লেখ করেন, 'বাংলাদেশ তেল, গ্যাসের উপরে ভাসছে'। এই তত্ত্বটা উদ্ভাবিত হয় সম্ভবত নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকের অথবা এই দশকের গোড়ার দিকের। আমি এই তত্ত্বের সূত্রপাত কীভাবে হল এ ব্যাপারে খুব একটা নিশ্চিত নই। একটা সম্ভাবনা হল ২০০১ সালে, আমার জানা মতে প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভের উপর দু'টি সমীক্ষা হয়েছিল। সেই দু'টি সমীক্ষাতে দেশে যথাক্রমে ৩২ এবং ৪২ টিসিএফ গ্যাস রিজার্ভের কথা বলা হয়েছিল, হয়তবা এটা থেকেই এই তেল গ্যসের উপর ভাসাভাসির ব্যাপারটা এসেছে। দ্বিতীয়ত আনেক মহারথীরাই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রাচুর্যের কথা বিভিন্ন ভাবে বলেছেন, হয়ত এসব কথাকেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে। টেকনিক্যাল দু'জন বিশেষজ্ঞও এ ব্যাপারের বলেছেন - বুয়েটের অধ্যাপক ডঃ তামিম এবং ডঃ ইজাজ। সবশেষে এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না কেউ এই কথাটা শুধু বাজারে ছেড়ে দিয়েছে আর আমরা তার উপর ভিত্তি করে চায়ের টেবিলে..। রপ্তানীর পক্ষের যুক্তিগুলো আলোচনা করা যাক।

১। দেশে যখন দারিদ্র্য একটা বড় সমস্যা, তখন মাটির নীচে সম্পদ ফেলে না রেখে এর উপযুক্ত ব্যবহার অনেক যুক্তিসঙ্গত। এই সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্র্য কিছুটা কমানো সম্ভব এবং একই ভাবে বিদেশী দাতাদের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।

২। পঞ্চাশ বছর পরে পাওয়া একশত টাকার বর্তামান মুল্য অনেক বেশী, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা কেন? (সহমত, কিন্তু এই সম্পদের মূল্যও তো তুলনামুলক ভাবে আরও বাড়বে তখন।)

৩। খুব দ্রুতই দেখা যাবে বিকল্প জ্বালানি আবিষ্কার হয়ে গেছে, তখন এই সম্পদের আর মূল্য থাকবে না। কী হবে তখন এই যক্ষের ধনের মত আগলে থাকা সম্পদের?

৪। কিছু সংখ্যক প্রস্তাবক আবার অন্যভাবে বলেন, এখনই দরকার নাই, তবে কোথাও বেশী গ্যাস পেলে দেশে ব্যবহারের সাথে সাথে রপ্তানী করা হোক, আবার গ্যাস পাওয়া যাবে (এক ধরনের চক্র চলতে থাকবে)। এর মধ্যে কত কিছু হয়ে যেতে পারে, জ্বালানির নতুন বিকল্প, ঘরে ঘরে হাওয়া থেকে ইলেক্ট্রিসিটি, পানি দিয়ে চলা গাড়ী...।

বিকল্প জ্বালানির ব্যাপারে আমার একটা পর্যবেক্ষণ আছে। প্রথমত, মাঝে মাঝেই দেখা যায় বিকল্প জ্বালানি হিসাবে এটা সেটা আবিষ্কারের কথা, স্বপ্নও দেখা হয় (বা দেখানো হয়) বড় স্কেলে গেলে অনেক কিছু হয়ে যাবে। এই ক্ষুদে আবিস্কারকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের প্রকৌশলগত তাত্ত্বিক জ্ঞান নেই। যার ফলে দেখা যায় যে প্রাথমিক তত্ত্বের উপর পুরো ব্যাপারটা দাড় করানো হয়, তাতেই গলদ আছে। দ্বিতীয়ত, জীবাশ্মের বিকল্প যে সকল জ্বালানি ব্যবস্থা আছে, বাংলাদেশে সেগুলো বড় আকারে প্রয়োগের ব্যাপারে কোন নিশ্চিত পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা।

সরকারের পক্ষ থেকেও কোন নিশ্চিত প্রচেষ্টা নেই (মাঝে মাঝে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের বাগাড়ম্বর ছাড়া অবশ্যই)। আমি বাংলাদেশের মত দেশে খুব সহসাই বড় স্কেলে কোন বিকল্পের কোনই সম্ভাবনা দেখি না। যুক্তরাষ্ট্রের কথাও আমাদের ভেবে দেখতে হবে। প্রথমত যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ, ধারনা করা হয় যার পরিমান অনেক, রপ্তানীতো দূরে থাক, নিজের পর্যন্ত ব্যবহার করছে না। ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয়ত, যদি বিকল্প জ্বালানির কোন বড় আবিস্কার হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রই হবার সম্ভাবনা বেশি।

প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানীর বিপক্ষে

দেখা যাক প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানীর বিপক্ষের যুক্তিগুলো। প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানীর বিপক্ষে যারা অবস্থান নেন, তারা প্রথমেই আমাদের গ্যাসের রিজার্ভের কথা চিন্তা করেন। এ ব্যাপারে উড ম্যাকেঞ্জীর (Wood Mackenzie) জানুয়ারী ২০০৬ সালে তৈরী করা 'পেট্রোবাংলা - বাংলাদেশ গ্যাস সেক্টার মাষ্টার প্ল্যান' এর চুড়ান্ত রিপোর্ট এর পরে আমার জানা মতে আর কোন ব্যাপক-ভিত্তিতে সমীক্ষা হয়নি। সেই রিপোর্টে আপার কেইস (upper case) প্রক্ষেপণে দেখানো হয়েছে ২০১১ সালের পরেই আমাদের গ্যাসের সঙ্কট শুরু হবে। পেট্রোবাংলার হাইড্রকার্বন ইউনিটের (www.hcu.org.bd - এই মূহুর্তে অবশ্য এই ওয়েবসাইটটি কাজ করছে না) ২০০৮ এর ডিসেম্বরের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে ২ পি গ্যাস রিজার্ভের পরিমান ১২.১৫ টিসিএফ, যা 'তেল, গ্যাসের উপরে ভাসছে' তত্ত্বকে তো সমর্থন করেই না, বরং অদুর ভবিষ্যতে গ্যাসের সঙ্কটের সম্ভাবনার কথা বলে।

গ্যাস রপ্তানীর বিপক্ষে যারা অবস্থান নেন তাদের কথা হল, যদি আসলেই বাংলাদেশ গ্যাসের সঙ্কটে পরে, এই মুহূর্তে যা পাওয়ারের সবচেয়ে বেশি যোগান দেয়, তবে তা দেশে একটা বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমি নিজে এই শক্ত যুক্তির সাথে হাড়ে হাড়ে সহমত। এই মুহূর্তে আমাদের গ্যাসের ২ পি রিজার্ভের যে পরিমান (বলে রাখা দরকার ১২.১৫ টিসিএফের মধ্যে প্রুভড কিন্তু মাত্র ৬.৯ টিসিএফ),তাতে মনে হয় আমাদের দ্রুতই গ্যাস খোঁজে বের করতে হবে, অথবা আমরা একটা বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাব। গ্যাসের সঙ্কট যে কত বড় বিপর্যয় ঘটাতে পার, তা শুধু রপ্তানীর রোমান্টিক হইপোথিসিস দিয়ে বোঝা সম্ভব না।

তবে আশার কথা যে, ভৌগলিক অবস্থার বিচারে গভীর সমুদ্রে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি, এবং ভারত এবং মায়ানমারের অভিজ্ঞতা এ ধারনাকে আরও শক্ত করে। তবে এ কথাও ঠিক যে, এটা শুধুই সম্ভাবনা, আমাদের কাছে এমন কি গভীর সমুদ্রের সিসমিক ডেটাও নেই। এখন অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি দেখা যাক।

সম্পদের অভিশাপ

প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি তত্ত্ব আছে (অবশ্য এত প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব না) যার নাম সম্পদের অভিশাপ (Resource Curse)। সম্পদের অভিশাপ ধরনের কথা শুনলে তুতেনখামেনের সমাধিক্ষেত্র আবিস্কার এবং এর পরবর্তীতে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ঘটনার বা রটনার কথা মনে হয়। কিন্তু আলোচ্য তত্ত্ব কোন অলৌকিক কিছু না, একটি অর্থনৈতিক হাইপোথিসিস। এই হাইপোথিসিস আপাত স্ববিরোধী একটা অবস্থার কথা বলে যাতে দেখা যায় প্রাকৃতিক সম্পদে সম্পদশালী দেশ সমুহের, অপেক্ষাকৃত কম প্রাকৃতিক সম্পদের দেশ গু্লো থেকে অর্থনৈতিক উন্নতি কম হয়ে থাকে। (এ সম্পর্কে পলিন জ়োন্স লঙ্গের সুন্দর একটা বিশ্লেষণ পড়েছিলাম। রিপোর্টটি এই সাইটে দেখতে পারেন http://www.yale.edu/macmillan/globalization/jones_luong.pdf)। তা এই সম্পদের অভিশাপের সম্ভাব্য কারন গুলোর মধ্যে একটা গুরুত্বপুর্ন কারন কিন্তু সরকারের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, সরকারের ভিতরে কায়েমি স্বার্থ ইত্যাদি। আমাদের দেশে কিন্তু এগুলো বর্তমান। এই সম্পদের অভিশাপের সাথে সম্পর্কযুক্ত আরেকটি অবস্থার নাম ডাচ ডিজিজ (Dutch Disease)। ডাচ ডিজিজ সোয়াইন ফ্লু জাতীয় কোন রোগ নয়, প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি অর্থনৈতিক অবস্থার নাম। এর মূল কথা, প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অস্বাভাবিক গুরুত্ব, দেশের অন্যান্য শিল্পকে ধ্বংস বা নষ্ট করতে পারে। উপরের দুটি তত্ত্বই কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই তৈরী করা এবং এদের অস্বীকার করার উপায় নাই, বিশেষ করে আমাদের মত দেশে। যদি আমরা বড় আবিস্কার করতে পারি, এ ব্যাপার গুলো গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠবে। আফ্রিকার কয়টি দেশ এর জ্বলন্ত প্রমান।

প্রাকৃতিক সম্পদের উৎপাদনশীলতা

এটা অপেক্ষাকৃত নতুন ধারনা। অর্থ হল এক ইউনিট উৎপাদনের জন্য কতটুকু সম্পদ দরকার। যদিও প্রাথমিক ভাবে এতে পরিবেশের দ্যোতনাই বেশি ছিল, কিন্তু এখন মনে হয় অর্থনৈতিক দিকটাও খুব গুরুত্ব পাচ্ছে। কিছু কিছু লেখকতো ভবিষ্যতে কম্পিটিটিভ এজ হিসাবে প্রাকৃতিক সম্পদের উৎপাদনশীলতার দিকে তাকাচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী গুগোল তার সার্ভারের জন্য নর্থওয়েস্টের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে জমি কিনছে। এটাই হল দুরদৃষ্টি। যাক, ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে যাচ্ছে।

উপসংহার

এই লেখার উপসংহারের কি কোন দরকার আছে? শেষ কথা হল আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তার স্ট্রেটেজিটা খুব দরকার।

অথবা অন্য অনেক ব্যাপারের মত যেমন আছে তেমনই চলুক, কিছুতো একটা হবে - আল্লাহ ভরসা।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পড়লাম। কিন্তু এবিষয়ে মতামত দেয়ার মতো অবস্থা নেই। আসলে কোনটা করলে যে ভালো হবে তা জানিনা, তবে যেটা ভালো হয় সেটাই করা হোক। এটুকু বুঝি যে বিকল্প জ্বালানীর ব্যবস্থা করতে হবে, এবং তা দ্রুত।

প্রথমত যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ, ধারনা করা হয় যার পরিমান অনেক, রপ্তানীতো দূরে থাক, নিজের পর্যন্ত ব্যবহার করছে না। ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয়ত, যদি বিকল্প জ্বালানির কোন বড় আবিস্কার হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রই হবার সম্ভাবনা বেশি।

...............................
নিসর্গ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কদিন ধরে পত্রিকায় পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম এই বিষয়টা নিয়ে কেউ লিখলে ভালো হতো সচলে।
সত্য বলতে কী... ইদানিং আর পত্রিকার লেখা, এমনকি বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণও ঠিক বিশ্বাসযোগ্য লাগে না। সচলের লেখাই নির্ভরযোগ্য। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ খুবই জরুরী একটা বিষয় নিয়ে কথা তোলার জন্য।
আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি বুঝি না। তবে পড়তে আগ্রহী। এই বিষয়ে সচলে একটা দারুণ আলোচনার অপেক্ষায় রইলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নৈষাদ এর ছবি

নজরুল ভাই, গ্যাস নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন ব্যাখ্যায় আমি প্রতিদিনই অবাক হই। যখন উপাত্ত্ব সংগ্রহের সুযোগ ছিল, তখন ভাবি নাই কখনো কিছু লেখালেখির চেষ্টা করব। কিছু লিখার ইচ্ছা রইল, তার আগে উপাত্ত্ব সংগ্রহ করে নেই। ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।