দাহকালের কথাঃ চলুন ডাইনোসর হই

হযবরল এর ছবি
লিখেছেন হযবরল (তারিখ: মঙ্গল, ০২/১০/২০০৭ - ৭:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাছা আমার
গিরগিটির ছা;
যখন যেমন
রং বদলায়।

এই মাঠে, ঐ
মাচায় উঠে
রামধনু গায়।

সোনা আমার
পারলে কিন্তু,
মানুষ ও খায়।

(বাছা আমার)
গিরগিটিকে ভয় পাই। খুব ভয় পাই।

- বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

গত ২৯ শে সেপ্টেম্বর মাহমুদুজ্জামান বাবুর লেখাটা প্রথম আলোয় এসেছিল। অনেকেই হয়তো লেখাটা পড়েছে, এবং অনেকেই পড়েনি। লেখাটা আগেই দেবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু প্রথম আলোর ফন্টের যে দশা তাতে আমার মতো ফন্টজ্ঞানহীন লোকের জন্য বড়ই কঠিন লেখাটা কাট-পেস্ট করা। সুতরাং লিংক-ই সই।


মন্তব্য

সুজন চৌধুরী এর ছবি

ভালো।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মঁসিয়ে হযুরাম-আপনে কই থাকেন মিয়া?
----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৌরভ এর ছবি

ভাইয়া, প্রথম আলো থেকে লিংক দেয়ার থেকে কপি-পেস্ট দেয়া জরুরি। আর্কাইভ লিংক কবে যে পড়তে দেয় আর কবে দেয়না, বোঝা মুশকিল।

মামু-অরূপ ভ্রাতদের টুল
টার পেজে গিয়ে, নিচের ঘরে কপি-পেস্ট দিবেন প্রথম আলো'র টেক্সট। বংশী সিলেক্ট করে, ইউনিকোডে বদলে উপরে নাও বাটনে প্রেস করবেন। ব্যস, হয়ে গেলো। জয় মামু-অরূপ গং!
আপাতত আমি কপি-পেস্ট দিলাম।



দাহকালের কথা

মাহমুদুজ্জামান বাবু

চলুন, ডাইনোসর হই!

হলিউডের চলচ্চিত্র পরিচালক স্পিলবার্গ স্বনামে খ্যাতিমান। অনেকের মতো আমিও তাঁর নাম শুনি জুরাসিক পার্ক চলচ্চিত্রটি দুনিয়াজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়ার পর। নির্মাণশৈলীর মুন্শিয়ানায় একটি কাল্পনিক গল্প কতটা বাস্তব এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হতে পারে, জুরাসিক পার্ক তার উদাহরণ। চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিল ডাইনোসর। পৃথিবী থেকে অনেক কাল আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই বিশালাকৃতির প্রাণীটির হাড়গোড় এখনো পাওয়া যায় কোথাও কোথাও এবং সেই হাড়গোড় জোড়াতালি দিয়ে পৃথিবীর বড় বড় দেশের বড় বড় জাদুঘরে ‘কঙ্কাল ডাইনোসর’ প্রদর্শিত হয়। অনেক টাকার টিকিট কেটে ছেলে-বুড়ো সবাই তা দেখেন। দেখেন এবং বিস্নয়াভিভুত হন। ভাবেন, এত বড় হয়েছিল কীভাবে? ভাবেন, বড়ই যদি হয়েছিল, তাহলে সাইজ হয়ে গেল কী কারণে? ‘সাইজ’ শব্দটায় খটকা লাগছে? মানে, ফসিল হয়ে গেল আর কি। টিকতে পারল না। বাঁচল না। হাড্ডিগুড্ডি হয়ে গেল। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, বড় হলেই টিকে থাকা যায় না। এই যে মানুষ হাজার বছর ধরে আছে, টিকে আছে−তার যেমন কারণ আছে, তেমনি প্রাণিজগতের অন্যরা যে বিলুপ্ত হলো, সেটারও কারণ আছে।

কারণটা খুব সহজ। প্রকৃতি ও পারিপার্শ্বিকতার বিরুদ্ধে সচেতন সংগ্রাম করে মানুষকে টিকে থাকতে হয়। প্রাণিজগতে মানুষই কেবল তা করে এবং পারে। আর অন্যরা চায় খাপ খাইয়ে নিতে। অনুকুল পরিবেশে খাপ খাওয়ানো সহজ; কিন্তু যদি বিরুদ্ধ বা প্রতিকুল সময় আসে? তখন? খাপ খাইয়ে নিতে গেলে ধ্বংস অনিবার্য। যে পরিবেশে ওই বিশাল ডাইনোসর বেঁচে ছিল পৃথিবীতে, সেই পরিবেশ বদলের সঙ্গে সঙ্গে ডাইনোসরের বুদ্ধি তো আর বদলাল না−তার তো বুদ্ধিই নেই, মানুষের সঙ্গে এখানেই তো ওদের পার্থক্য, মগজে! সুতরাং বিরুদ্ধ প্রতিবেশকে না পাল্টে, খাপ খাইয়ে চলতে গেলে ফসিল হতে হবে। মানুষ কি তা করে?

আমরা করছি। অনেক কষ্টে, অনেক বলিদানে, আত্মত্যাগ ও সংগ্রামে নিজেদের করে পাওয়া এই দেশটাতে আমরা তা-ই করছি। দেশ শাসনের জন্য (পরিচালনার জন্য নয়) শাসকেরা একেকবার গদিতে এসে বসেন, তাঁদের পছন্দমতো বিধান জারি করেন এবং বলতে থাকেন−তাঁরা যা করছেন, তা সবার মঙ্গলের জন্য করছেন, মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী আমরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে থাকি আর দেখতে থাকি আমাদের যাবতীয় ‘মঙ্গল’ জনপদ ছেড়ে জঙ্গলের দিকে দৌড়াচ্ছে। আর তখনই যদি আমরা বলতে চাই ‘ভুল হচ্ছে’, আমাদের ব্যক্তিগত কন্ঠস্বরসহ সব গণমাধ্যম তখন মঙ্গলের নামে অবরুদ্ধ হয়, দমিত হয়। এই হয়ে এসেছে এ দেশে। এখনো হচ্ছে। এটা বদলানো দরকার।

সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না−এই ভেবে আমাদের পুলক বোধ হয় এবং বিষয়টা ঠিকই। কিন্তু আসল সত্য থেকে খানিকটা নিয়ে তাতে যদি অনেকখানি মিথ্যা মিশিয়ে, সত্য-মিথ্যা জড়াজড়ি করিয়ে কোনো একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে ঢোল পিটিয়ে জানান দেওয়া হয় জনসমাজে, ‘কান নিয়েছে চিলে’-জাতীয় উসকানির দৌড়ে বাঁশি ফুঁ দেওয়া হয়; সেই রাষ্ট্রের ‘মঙ্গলবাবু’ কী রকম মানিক সাহেবের চিপায় (মাইনকার চিপা) পড়েন, তা কি আমাদের গত পনেরো-বিশ দিনের বাংলাদেশ দেখে বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? পৃথিবীখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী, পন্ডিত নোয়াম চমস্কি সত্য বিকৃতির প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘...ইতিহাসকে পুরোপুরি বিকৃত করাটাও সমান দরকারি। এ হলো ওই অসুস্থ জড়তাকে ঝেড়ে ফেলার পথ−অর্থাৎ আমরা যখন কাউকে আক্রমণ করছি, তাকে ধ্বংস করছি, তখন তা দেখে যেন মনে হয় যে আমরা ভয়ঙ্কর আগ্রাসী কোনো দানব বা ওই রকম কোনো কিছুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করছি মাত্র।’
আমাদের চারপাশে কি সে রকমটাই চলছে না?

অনেক বিজ্ঞজন, কৃতী মানুষ, সমাজের প্রকৃত কল্যাণকামী প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় মানুষেরা দেশ ও সমাজের নানা ধরনের সংকটের দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন, করছেন। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ যেদিন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে ঘোষণা দিলেন যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিও সরকার ভেবে দেখবে−কী যে আনন্দ হয়েছিল, চোখে জল এসে গিয়েছিল খুশিতে। এখন চোখের সেই জলকণাকে খুঁজে বেড়াই। বড় বেশি তাড়াতাড়ি আবেগে ভেসেছিল সে। আনন্দের অশ্রু খুব দামি। দামি জিনিসটি অযথাই বাষ্কপ হলো! হতাশ হওয়ার একশটা কারণ আছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শ্রদ্ধেয় মুক্তমনা শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুছ ও অধ্যাপক এস তাহের আহমদের নির্মম হত্যাকান্ডের আজও কিছু হলো না। হবে বলেও মনে হচ্ছে না। আমরা যে মেনে নিয়েছি! আমাদের এখন মেনে নেওয়ার, খাপ খাইয়ে নেওয়ার ধ্বংসমুখী ‘ফসিল প্রবণতা’। কারণ, সত্যটাকে চিনতে পারছি না।

কলকাতার কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিশ্চয়ই চিনেছিলেন। লিখেছেন,
‘বাছা আমার
গিরগিটির ছা;
যখন যেমন
রং বদলায়।

এই মাঠে, ঐ
মাচায় উঠে
রামধনু গায়।

সোনা আমার
পারলে কিন্তু
মানুষও খায়।’
(বাছা আমার)
গিরগিটিকে ভয় পাই। খুব ভয় পাই।
মাহমুদুজ্জামান বাবু: গায়ক ও সংস্কৃতিকর্মী।
mzbabu65 at yahoo.com


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।