শহীদ জননী তোমায় সালাম

হযবরল এর ছবি
লিখেছেন হযবরল (তারিখ: রবি, ০১/০৭/২০০৭ - ১১:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

(সচলায়তনের জন্মদিনে নিজের ভাললাগাটুকু সবার জন্য)

লম্বা সময় পর হপ্তাখানেকের একটা ছুটি নিয়েছিলাম সমস্ত কাজ থেকে। সত্যিকারের বিরতি। ছুটির মাঝে একবারের জন্যে, কাজ নিয়ে গবেষণা নিয়ে ভাবিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভরপেট খাওয়া, এক কাপ চা, একটা সিগারেট। এরপর আড্ডা কিছুক্ষণ। অবশ্য ছুটিতে সিগারেট খাওয়া কিছুটা কমে গিয়েছিলো। এটার কারণ হতে পারে, কাছের মানুষদের সাথে সময় কাটানো। সিগারেট সম্ভবত সঙ্গ দেয়। দুপুরে কড়া রোদে ঘন্টা খানেক পানিতে ভেসে থাকা, সব মিলিয়ে আদর্শ ছুটি।

এই ছুটিতে হঠাৎ করে ''একাত্তরের দিনগুলি'' আবার পড়লাম। ভালো লাগা বই, পছন্দের বই বার বার পড়া উচিত বলে আমি মনে করি। এক বসায় অনেকবার পড়বার কথা বলছিনা, দুবছর কিম্বা তিনবছর বাদে পড়বার কথা বলছি। সময়ের সাথে সাথে আমাদের মনোজগতের মাঝে অনেক পরিবর্তন হয়। সে পরিবর্তনগুলো আমরা সচরাচর সনাক্ত করতে পারি না। নিজের মাঝে পরিবর্তন সনাক্ত করবার জন্য পরিচিত, ভালো লাগা বই একটা চমৎকার পদ্ধতি। একই শব্দ, একই লাইন আমরা নতুন আঙ্গিকে দেখি প্রতি পঠনে।

শহীদ জননী যখন ''একাত্তরের দিনগুলি'' বইটা লিখেছিলেন তখন নিশ্চয়ই প্রতিদিন নিজের জীবনের ঘটনাগুলো, কষ্টগুলো, আনন্দগুলো তুলে ধরছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই ভাবেননি, তিনি ইতিহাস লিপিবদ্ধ করছেন। বইটা যখন প্রথম পড়েছিলাম, ভেবেছিলাম যুদ্ধের দিনগুলোর ইতিহাস পড়ছি। এখন পড়তে গিয়ে (কতবার পড়েছি ?) আবিষ্কার করলাম বইটা নিজেই ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। একজন মায়ের রোজনামচা নেই বইটা আর, একটা দেশের রোজনামচা, একটা মুক্তিকামী মিছিলের কণ্ঠস্বর হয়ে গেছে, ''একাত্তরের দিনগুলি''।

আমাদের এক জীবনে, আমরা কয়টা জীবন্ত বই পড়বার সুযোগ পাই। আমি একটা পড়বার সুযোগ পেয়েছি। আমি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবি এই কারণে।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

যুদ্ধের সময়ের অভিজ্ঞতাগুলি সংগ্রহ করা খুব প্রয়োজন। সব লেখা একাত্তরের দিনগুলি হয়ে উঠতে হয়তো পারবে না, কিন্তু অনেক জীবনের ছবি তা না হলে হারিয়ে যাবে।

আপনি হাতে পেলে গোলাম মুরশিদের যখন পলাতক বইটা পড়ে দেখতে পারেন। গোলাম মুরশিদ তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যুদ্ধের শুরুতেই সপরিবারে চলে যান পশ্চিম বঙ্গে। সেখানে উদ্বাস্তুজীবনের খুব প্রাঞ্জল বর্ণনা।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হযবরল এর ছবি

গোলাম মূরশিদেরঃ যখন পলাতক, আমার তালিকায় স্থান পেলো।

জাহানার ইমামের গদ্য ভীষণ প্রাঞ্জল। উনার অন্যজীবনবইটাও ভীষণ চমৎকার। বাল্যকাল নিয়ে লিখা।

ফারুক হাসান এর ছবি

ভাল লাগলো ।
"....একজন মায়ের রোজনামচা নেই বইটা আর, একটা দেশের রোজনামচা, একটা মুক্তিকামী মিছিলের কণ্ঠস্বর হয়ে গেছে, ''একাত্তরের দিনগুলি''। "

আরশাদ রহমান এর ছবি

ভালো লাগলো।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বইটায় কান্না নেই কোন, কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে যায়। স্তব্ধ শোক হয়তো এমনই হয়।

ইশতিয়াক রউফ
প্রবাসী,ছাত্র,দুস্থ,দেশপাগল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।