ছন্নছাড়া ০৫

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি
লিখেছেন যাযাবর ব্যাকপ্যাকার (তারিখ: রবি, ১৬/০২/২০১৪ - ৮:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছন্নছাড়া আবহাওয়া

আবহাওয়াটা এমন, যে কাজে মন দেয়া যাচ্ছে না। অথচ এখন আমারই কাজ বাকি, আমি দেরি করলেই কাজ পেছাবে। কিন্তু এমন বিকাল-সন্ধ্যায় একটা বই হাতে বের হয়ে যেতে হয় ঘর থেকে, একটু দূরে কোন ক্যাফেতে বসে বৃষ্টি ধোয়া গোধূলী মিলিয়ে যেতে যেতে সন্ধ্যার ইলেট্রিক বাতিতে সজ্জিত হয়ে উঠতে দেখা যায় আলোকিত শহরকে।

আমাদের ছোট শহরে সেরকম নিরিবিলি জায়গা কম। শহরের কেন্দ্রে সবথেকে ব্যস্ত বাজারে একটা চারতলা বিল্ডিং-এর তিনতলায় একটা ক্যাফে আছে, সেখানে চারিদিকে গ্লাস দিয়ে ঘেরা জায়গায় টেবিল আছে। ইচ্ছা করছে ঐখানে চলে যাই। বইটা থাকবে খোলা, কিন্তু পড়া হবে না, ধোঁয়া ওঠা মগের উপর দিয়ে শুধু আনফোকাসড দৃষ্টিতে দেখা হবে দুই-তিন তলা মার্কেটের উপর দিয়ে পুরানো শহরের মাথার উপর দিয়ে নদীর দিকের বৃষ্টিধোয়া দূরের আকাশ।

কিন্তু যাওয়া হবে না।

ফেসবুক আর বন্ধুত্ব

মাঝে ফেসবুকের একাউন্ট বন্ধ ছিল। কিছু যায় আসেনি, কারণ আমার কাছে ফেসবুকের মতো ফালতু কিছুর গুরুত্ব ছিলো না সে সময়ে, এখনো নেই আসলে। সোশাল নেটওয়ার্কের হাউকাউ, মন্তব্য আর নোট শেয়ারে দেশের বা দশের খুব একটা কিছু এসে যায় না। ২০০৮ থেকে ছিলাম, একাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট/রিঅ্যাক্টিভেট খেলা দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে কয়েকজনকে নিজের তালিকা থেকে বাদও দিয়ে দিয়েছিলাম। হুট করে দরকারে দেখি যোগাযোগের উপায় নাই! অনেকেই বলেছে নাকি নোটিফিকেশনে কাজের অসুবিধা হয়, বা ব্যস্ত থাকে তাই যাতে ঢোকার ইচ্ছাটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাই ডিঅ্যাক্টিভেট করা। আমি ঠিক ব্যাপারটা কখনোই বুঝি নাই, এখনো বুঝি না। আমার জড় বুদ্ধিতে যে কোন অ্যাডিকশনই ক্ষতিকর, হোক তা ড্রাগস, সিগারেট, বা ফেসবুক, গেমিং কিংবা কোন মানুষ! যা থেকে নিজেকে সরাতে পারছি না, চাইলে অন্যদিকে মনোযোগ ফেরাতে পারছি না, যাতে করে ক্ষতি হচ্ছে অন্য কোন কিছুর, বা নিজের, যাতে করে বেশি গুরুত্ব পাবার যোগ্য বিষয়গুলো, মানুষগুলো কম গুরুত্বে পৌঁছে যাচ্ছে, তা ক্ষতিকর নিঃসন্দেহে! আর যদি সামান্য ফেসবুকের আডিকশনই দূর করতে না পারি তবে কেম্নে কী! আত্মনিয়ন্ত্রণ তো নাই বললেই চলে তবে!

বন্ধুবান্ধবরা মনে হয় খুব একটা খেয়ালও করেনি অনুপস্থিতি। দুনিয়াটা খুবই ছোট, দরকার লাগলে যে কারও সাথে যোগাযোগ করা আসলে খুবই সহজ। শুধু ইচ্ছেটা থাকতে হয়। আসলে যে বন্ধুত্ব স্রেফ অন্তর্জালের পাতাতেই থাকে, ফোনে আর ইমেইলে আর sms-এই থাকে, দরকারে যে বন্ধুকে পাওয়া যায় না, যার পছন্দমাফিক সময়ে, নিজেকে যোগাযোগ করতে হয়, যে বারবার যোগাযোগ করতে চাচ্ছি মেসেজ, মেইল, ফোন দেখার পরেও ব্যস্ততা, মেজাজ, ইচ্ছা, ইত্যাদি নানান অজুহাতে কলব্যাক করে না, সত্যিই দরকারে পাশে থাকে না, তাদের উপরে বাস্তব জীবনে নির্ভর করাটা বাতুলতা।

একসময়ে প্রতিদিন সকালে চেক করা ফেসবুক, ফোন, মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, চ্যাট, ইমেইল -এর অভ্যাস চট করে দূর করা যায় না, কিন্তু ইচ্ছা থাকলে যেহেতু সবই করা যায়, তাই সেই অভ্যাসও অনভ্যাসে রপ্ত হয়ে যায়। সেই অনভ্যাসের রপ্ত করতে হলে ভালো বুদ্ধি হলো গা-ঢাকা দেয়া, অন্য কোন অনেক বেশি জরুরি কাজে ডুব দেয়া, প্রায়োরিটিতে অন্যকিছুকে, অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছুকে উপরে তুলে দেয়া। যেটার জন্যে প্রতিদিন শুরু করা যাবে নতুন উদ্যমে। আমাদের বইয়ের প্রজেক্ট ছিলো সেরকমই। সেটার কথা বলছি একটু পরেই।

মনে হয় এর আগেও কয়েকটা লেখায় বন্ধুত্ব ব্যাপারটা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছি। আসলে একই জিনিস বারবার দেখে দেখে খুব একটা আশা রাখা অপ্রোয়জনীয় মনে হয়। ছোট থেকে নিজের সব সমস্যা মোকাবেলা করে বেড়ে উঠতে শিখেছি বলেই কেউ নিজের সমস্যা নিয়ে কানের কাছে প্যানপ্যান করলে আমি সহানুভূতিশীল হতে পারি না। মুখে মধু না ঝড়িয়ে ক্যাটক্যাট করে সত্যটাই আগে শোনায়ে দেই বলে খুব একটা পছন্দের মানুষও হয়ে থাকতে পারি না বেশিদিন কারও। কাজেই যারা কিছুদিনের আলাপেই আমাকে বলে আমাকে তাদের খুব পছন্দ হয়েছে, খুব খাতির করতে চায়, আমি তাদেরকে খুব একটা বিশ্বাস করতে পারি না। ক্ষেত্রবিশেষে নিজেই সাবধান করি, যে আমাকে কিন্তু বেশিদিন হজম করা অত সহজ কাজ নয়! যেহেতু চট করে কাওকে কাছে আসতে দেয়া, বন্ধুত্ব করা আমার ধাতে নাই, সেই কারণেই মনে হয় যখন কাছের কোন বন্ধু আমার বন্ধুত্বটুকুর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে না, এক্সপেক্টেশন কম রাখা সত্ত্বেও খারাপ লাগে, আমিও তো আসলে শেষ পর্যন্ত মানুষ! আর যখন তাদেরকে নিজেদের কথার খেলাপ করতে দেখি, তখন নিজেকে বিট্রেয়েড মনে হয়।
গত কয়েকবছরে আরেকটা অন্যতম বিট্রেয়াল ছিলো পুরানো বন্ধুদের স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সাথে জড়িত হতে দেখা।

কিন্তু কী কথা থেকে কোথায় এলাম, ফেসবুকে আত্মপ্রেম, দেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, নিজেদের প্রেম, PDA (এইটা খুবই চমৎকার একটা জিনিস, আর একদিন আলাপ করবোনে), দেখতে দেখতে ত্যক্ত, বিরক্ত হয়েই অফ করে দিলাম। যাদের আসলেই আমাকে দরকার লাগবে, বা খোঁজই নিতে চাবে আমার নিজের, সরাসরি সশরীরে না হলে স্বফোনে খোঁজ নিতেই পারবে! হয়েওছে তাই।
তবে একাউন্ট ডিঅ্যাটিভেট করতে গিয়ে বুঝলাম এইটা আসলে কিছুই না, সাইন আউট করা কেবল! শুধু আপনি যতদিন সাইন্ড আউট থাকবেন, কেউ আর আপনার কোন কিছুই দেখতে পাবে না। সুবিধাও হলো, অসুবিধাও হলো। কিছু কিছু গ্রুপে আমার কিছু জরুরি পোস্ট দেয়া ছিলো, সেগুলো 'অদৃশ্য' হয়ে গেল। যে গ্রুপগুলো আমার জরুরি দরকারে লাগে, যেমন অনুবাদের কাজে, সেটার তথ্য আবার আমি পেলাম না, এইসব আরকি। কিন্তু তাও লগ ইন করার খায়েশ হল না। লাভের লাভ যা হল তা হল পুরো ডিসেম্বর মাস একদম সেই স্কুলবেলার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ অনুভূতি হলো, একাধারে প্রায় ২০টা বই পড়ে শেষ করে দিলাম!
তাহলে একাউন্ট কি ডিঅ্যাক্টিভেটেডই রইলো?
নাহ! পারলাম না! হার মানতে হলো যেদিন কসাই কাদেরকে সত্যিই ঝুলিয়ে দিলো সেইদিন! ইংরেজীতেই লিখি - I just had to rub it into some people's faces!
শো-অফের জন্যে ফেসবুকের তুলনা নেই!

বইটা

আমাদের উদ্যোগ প্রায় শেষের পথে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, পুরো ২০১২-২০১৩ আমি নিজের প্রফেশনের বাইরে যে কোন কাজে যতটুকু মনোযোগ দিয়েছি তার থেকে বেশি দিয়েছি এই বইটার পেছনে। ইন্টারনেটে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের পাতায় কাটানো সময়, চ্যাট-মেইল, ফোনে কথা বলার থেকে সরাসরি প্রত্যক্ষভাবে কোন কাজে জড়িত থাকার গুরুত্ব ২০১৩-এর ফেব্রুয়ারি যারা আমার মতো বাংলাদেশে থেকে, নিজের চোখ দিয়ে দেখেছে, অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করেছে, তারা জানে। যে টুকু সময় আমি রাস্তায় ছিলাম, হোক তা শাহবাগে নয়, আমাদের ছোট শহরের কম চওড়া রাস্তায়, আমি যা উপলব্ধি করেছি রন্ধ্রে রন্ধ্রে তা ফেসবুকের লাইক-কামানো নোটে আর স্ট্যাটাসে আর মন্তব্য কপচে, আর তর্ক করে উপলব্ধি করা যায় না। ছাগুত্ব নিয়ে মিম ছবি শেয়ার করার থেকেও বেশি কাজে দেয় যদি ছোট ভাইবোনদের সাথে, ভাগ্নে-ভাগ্নীদের সাথে সরাসরি কথা বলা যায়, গল্পচ্ছলে আলোচনা করা যায়।

অন্তর্জালের গুরত্ব নেই তা নয়, শাহবাগের শুরুও কিন্তু এখান থেকেই। কিন্তু পুরোটা সময় সেখানে না কাটিয়ে আমাদের ঠিক আশেপাশে, যে যেখানে, যে দেশের, যে শহরেই থাকি না কেন, সেখানেই ঠিক আমার নিজের ঘরে, নিজের কর্মক্ষেত্রে, নিজের পরিবারেই যদি দেশের কিছু নিয়ে কাজ করি, তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র মাথা চাড়া দিয়ে থাকতে পারে না।

"১৯৭১: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা" বইটাতে ৫০ জন মানুষের অভিজ্ঞতা সংকলিত হয়েছে। সেখানে যেমন মুক্তিযোদ্ধার দেখা সম্মুখ সমরের বর্ণনা আছে, আছে সেলিনা হোসেনের বর্ণনায় ইকবাল হল (বর্তমান জহুরুল হক হল) বাংলা একাডেমির ধ্বংসযজ্ঞ, আছে সাধারণ এক গৃহিণীর বর্ণনা থেকে শুরু করে দেশের নামী অধ্যাপকদের বর্ণনা, একজন সাধারণ মানুষের চোখে ফয়েজ লেকে সঙ্ঘটিত গণহত্যার বিবরণ, ডাম্প করে যাওয়া হাজারের উপরে মেয়েদের লাশের বর্ণনা - প্রতিটা আর্টিকেল প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ। রশীদ হায়দার যখন বইটা সম্পাদনা করেন, তখন ১৯৮৯ সাল। বাংলাদেশের একটা অদ্ভুত ক্রান্তিলগ্নে মফিদুল হক বইটার প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই দুইজনের কাছে কৃতজ্ঞ, যে তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ডকুমেন্টেশনের কাজটা শুরু করেছিলেন। সচল হাসিব ভাইয়ের একটা ছোট আইডিয়াকে কেন্দ্র করে আমরা তিনজন সচল বইটা ইংরেজী অনুবাদের কাজে হাত দেই। পরবর্তীতে এই বইয়ের অনুবাদের কাজে জড়িত হয়েছে দেশী ও প্রবাসী প্রায় ৩৫ জন বাংলাদেশী তরুণ-তরুণী, কোন রকমের লাভের আশা না রেখে, স্রেফ ভলান্টিয়ার বেসিসে। আমাদের সবারই উদ্দেশ্য একটাই ছিলো, এই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইংরেজীতে বই কম। যে ভয়াবহ গণহত্যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ঘটে গেছে, তা জানানো প্রয়োজন বিশ্বকে, না হলে তথ্য বিকৃতির ভারে শর্মিলা বোসেদেরই হয়তো জয় হয়ে যাবে কোন একদিন!
আজকে বইটার অনুবাদ কাজ শেষ। এডিটিং-ও শেষের পথে। এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্যরা যেভাবে সব কাজ ছেড়ে শুধু বই নিয়েই মেতে আছেন, আমরা আশাবাদী। গত দেড় বছরে আমরা প্রায় ১৫টি অনুদিত আর্টিকেল সচলায়তনে প্রকাশ করেছি। ইচ্ছা আছে এ মাসেই বাকি অনুবাদগুলো প্রকাশ করার। আমাদের আশা আছে বইটি প্রকাশিত হবে প্রিন্টেড বই হিসেবে এবং পাশাপাশি ই-বুক হিসেবে, খুব শীঘ্রই।

বইয়ের কাজ চলাকালীনই শাহবাগের গণজাগরণ এসেছে। গোটা বাংলাদেশকে নতুন করে পুনুরুজ্জিবীত করে দিয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। একটা স্বাধীন বাংলাদেশ, যার জন্যে শুধু এই বইটির ৫০টি মানুষই নন, আমাদের বাবা-মা, আত্মীয়রা, দেশের প্রতিটা মানুষ কী ভীষণ আকুতি নিয়ে অপেক্ষা করেছে, কী অসম্ভব সংগ্রাম করেছে, তা অভাবনীয়। সেই কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়ার খুব জরুরি দরকার ছিলো আরেকবার। আমার বাবা বলে - বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তা না হলে এই দেশটা নাকি স্বাধীন হতো না। কথাটা ঠিকই, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে, একটা স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধীতা করেছে, সেই স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে সাপোর্ট করেছে, করছে এখনো, তারা আর যাই হোক, 'বাংলাদেশী' হতে পারে না।

এই বইটার অনুবাদের নানান পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে, আমি বাংলাদেশের জন্যে কিছু করছি। খুব সামান্য হয়তো আমার অবদান, তবু, তবু আমি আমার এই দেশটার জন্যে কিছু করতে পারছি! রাতদিন কম্পিউটারে বসে থাকার জন্যে, অন্য কাজ ফেলে রেখে শুধু এইটা নিয়ে মেতে থাকার জন্যে অনেক কিছুই হয়তো মিস করেও যাচ্ছি, কিন্তু মনে মনে খুব খুশি লাগছে, আমাদের পরের প্রজন্মের জন্যে আমরাও কিছু একটা শুরু করে দিয়ে যাচ্ছি, তাই ভেবে! এরপরে হয়তো আরও অনেকে উৎসাহী হবে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো লিখে ফেলতে, বা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা শুনতে চাইবে পরিবারের যিনি দেখেছেন তার কাছে, হয়তো লিখে ফেলবে সেই গল্পটাও। এখন এই অন্তর্জালের যুগে ফেসবুকে আত্মপ্রচারণার ফাঁকেই যদি সেইগল্পগুলোর ছড়িয়ে দেয় দু'চার'দশজনও, একটা বড় চেইন রিঅ্যাকশন কি শুরু হবে না? একদিন কি সবাই জানবে না বাংলাদেশের গল্প?

আজকে আসলে কাজ করতে ভালো লাগছে না। জানি ইমেইলের ইনবক্সে তাড়া দিয়ে কাজ জমছে। কিন্তু আমি মন দিতে পারছি না কাজে, একদিকে যেমন খুব খুশি খুশি লাগছে, অন্যদিকে খুব উদাস লাগছে। শুধু একটা কথাই ভাবছি -
১৯৭১: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বইটার শুরুতে লেখা আছে, বইটা উৎসর্গ করা হয়েছে - "বাঙালীর অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধে অনাগত সকল বীরের উদ্দেশ্যে"

রাজীবের নাম মনে পড়ছে... রাজীবদের জন্যেই বইটা উৎসর্গ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০১৩-তে বাংলাদেশের পথে পথে চিৎকার করে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচার চাওয়া লাখো তরুণ-তরুণীকে এই বইটা উৎসর্গ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ৪২ বছর আগে লাখো তরুণকে পেয়েছিলো, আগামীতে আরও লক্ষ অনাগত বীর পাবে - আমি বিশ্বাস করি এ কথাটা, মনে প্রাণে।

পাদটীকা

  • ১. লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম, এই পোস্টটা এডিটরিয়াল বোর্ডের অন্যতম সদস্য, আর আমার ব্যক্তিগত বন্ধুর ২ দিন বয়সী পিচ্চি 'অব্যয়'র জন্যে ডেডিকেটেড। তুমি তোমার আম্মুর মতোই বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে বড় হবে সেই প্রত্যাশা।

মন্তব্য

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু
আপনারা যে কাজটি শেষ করেছেন দিদি তার জন্য কিছু বলার ভাষা আমার নেই।
শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম।
পরম আগ্রহ নিয়ে ই- বুকটি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
বইটি কি কোন প্রকাশনী থেকে ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ বই আকারে প্রকাশিত হবে?
অব্যয়ের জন্য অনেক আদর আর ভালবাসা রইল। নিশ্চিত জানি সে তার মায়ের মতই বাংলাদেশকে হৃদয়ে নিয়ে বড় হবে, খাঁটি একজন মানুষ হবে।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ধন্যবাদ সাফিনাজ আপা। মূল বইটির প্রকাশক মফিদুল হক-ই ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এডিটোরিয়াল বোর্ডের সাথে আলাপও হয়েছে। প্রিন্ট আর ই-বই একসাথে প্রকাশ করার ইচ্ছা সবারই, তাই আপাতত আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বই প্রকাশিত হলে অবশ্যই জানতে পারবেন।

এই বইটা আসলে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাইব্রেরিতে পৌঁছে দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরা সবথেকে বড় অবদান রাখতে পারেন বাংলাদেশের গণহত্যার ডকুমেন্টেড কিছু আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

দিদি?!!

আমি তো এতদিন দাদা ভেবে এসেছি!!! সরি, সরি, ভেরি সরি!

____________________________

আশালতা এর ছবি

শো-অফের জন্যে ফেসবুকের তুলনা নেই - এইটা একটা খাঁটি কথা।
আর বাকিটুকুর জন্যে অভিনন্দন। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

চরম উদাস এর ছবি

কবে কোথায় পাব বইটা? অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকলাম।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

মূল বইটি প্রকাশিত হয়েছি ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৯। সেই হিসেবে ২৬ মার্চ, ২০১৪ স্বাধীনতা দিবস একটা চমৎকার সময় হতে পারে হয়তো ইবই আর প্রিন্টেড বই দুইটাই প্রকাশের... দেখা যাক। হাসি
ধন্যবাদ আপনাদের শুভেচ্ছা আর আগ্রহের জন্যে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

দীনহিন এর ছবি

পুরো জাতি কৃতজ্ঞ থাকবে আপনাদের এই কাজটির জন্য! আমাদের জাতীয় জীবনে অন্ধকার নেমে আসে বারবার, তবু রয়েছে আপনাদের মত উদ্যোগী তরুন, যারা ঠিকই আলো হাতে পথ চিনিয়ে দেন, নিয়ে যান সম্মুখপানে! বাংলাদেশ কখনো ব্যর্থ রাষ্ট্র হবে না, আপনাদের জন্যই।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আমি সবসময়েই বাংলাদেশকে নিয়ে আশাবাদী। শিল্পী এস এম সুলতান বাংলাদেশের শুকনো, হাড়জিড়জিড়ে মানুষগুলোকে শক্তিশালী, পেশীবহুল করে এঁকে গেছেন। উনি নাকি বলতেন যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ভেতরের শক্তি, প্রাণস্পৃহা, উদ্যম। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম অনেক উদ্যমী, তাদেরকে শুধু করার সুযোগটা দিতে হয়।
এই বইটার লেখাগুলো অনুবাদের কাজে যারা বিনা বাক্য ব্যয়ে হাজির হয়েছেন, কাজ করেছেন সামান্য হলেও, করছেন এখনো, তাদের সবার কাছেই আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞ।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

এক লহমা এর ছবি

বইটার কাজ শেষ হয়েছে জেনে খুব ভাল লাগল। অত্যন্ত মূল্যবান কাজ করেছেন আপনারা। আশা করি এ বই হাতে পাব কোনদিন।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আশা করছি দ্রুতই পাবেন। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই জীবনে প্রয়োজনের মুহূর্তে যাদের পাওয়া যায় না তাদের উপরে বাস্তবে নির্ভর করলে কষ্টই পেতে হয়।

বইয়ের সফলতা কামনা করছি।
-----------------------------------
ভালো মেয়ে

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

মুশকিল হলো যখন খুব আগ্রহ নিয়ে গল্প করে আবার বড় মুখ করে বলেও যে আপনি হলেন সেইরকমের বন্ধুবান্ধব যাদের কাছে ছোটবড় সব টুকিটাকি ভালোলাগা জিনিসই শেয়ার করা যায়, তখন নিজের কাছে নিজের গুরুত্ব বেড়ে যায়, ঐ যে মানুষ তো, মহামানব তো আর না! আর আপনি চানও নাই ধরেন অত গুরুত্বপূর্ণ কেউ হতে, নিজের আসলেই ছোটখাটো জিনিসেই ভালো লাগে, মজা পান, তাই শুনেনও মন দিয়ে হয়তো। কিন্তু তারপরেই আপনি আবিষ্কার করবেন, আপনার আসলে গুরুত্ব যা তা হলো অন্যের মনমতো করে চলতে কতখানি পারলেন তাতে, বা আপনার নিজের ছোটখাটো মজার জিনিস আগ্রহ নিয়ে শেয়ার করাটা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এগুলা হলো দরকারের 'বন্ধুত্ব', নির্ভর করার বন্ধুত্ব না। বা আরও ভালো করে বললে এগুলা হলো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বন্ধুত্ব। আসলে নিজে নিজেই সবকিছু করতে করতে মাঝে মাঝে মনে হয় যে নির্ভরশীল মানুষজন থাকলে ভালোই হতো, যাদের চিন্তাভাবনা কিছুদন পরেই পাল্টি খাবে না, তা দেশদশ নিয়েই হোক বা আপনাকে নিয়েই। তো ঐখানেই বারে বারে ঠেকে যাই, ঐ যে আবারও হাজার হলেও মানুষ তো! ম্যান ইজ মরটাল! মানুষ মাত্রেই ভুল হয়।

লোকে অবশ্য ভুল বুঝতে পারে, ভাবতে পারে জবের অকৃতজ্ঞ তো! কাওকেই ভালো বন্ধু মনে করে না। তা ঠিক না। আমার বন্ধুভাগ্য কিন্তু আসলে বেশ ভালো। যারা সত্যিই ভালো বন্ধুবান্ধব তারা দীর্ঘদিন ধরে আমার নানান eccentricity সহ্য করেও আমার সাথে আছে, বহু বছর ধরেই। থাকবেও মনে হয়।

যাই হোক, শুভেচ্ছার জন্যে ধন্যবাদ। এটা আসলেও ছন্নছাড়া পোস্ট ছিলো। কালকে ফেসবুকে লম্বা স্ট্যাটাস না দিয়ে বইটা নিয়েই কথা বলি বরং এখানে খানিক এই ভেবে লেখা। পরে ভালো করে বইটা নিয়ে অবশ্যই লেখা আসবে, আর অনুবাদগুলোর পোস্টও।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এই কাজের সাথে জড়িত সকলকে গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু
এটা একটা সময়ের মূল্যবান দলিল হয়ে থাকবে,
অনিন্দ্য অব্যয়ের মত পরের প্রজন্মের কাছেও পৌঁছে দেবে আমাদের মুক্তিযু্দ্ধের সময়কার বিভীষিকা, মানুষদের কষ্ট আর ত্যাগ।

শুভেচ্ছা হাসি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

বইটার জন্য অধীর আগ্রহে বসে রইলাম।

আর সেই সাথে ছোট্ট অনুরোধ - যদি কোন সাহায্যে আসি, যত ছোটই হোক না কেন, জানাবেন প্লীজ। যে কোন রকম সাহায্য করতে পারলে নিজেকে কৃতজ্ঞ মনে করবো।

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।