আনাড়ির সসেজপেঁয়াজা

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি
লিখেছেন যাযাবর ব্যাকপ্যাকার (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/০৫/২০১৪ - ১:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পেমের কোবতে অনুবাদ করে বেলাইনে চলে গিয়েছিলাম, লাইনে আসার জন্যে খুন-জখম গল্প অনুবাদ করছিলাম অ্যাজ প্রমিজড। কিন্তু ক্ষুধা লাগলে আমার আর মাথা কাজ করে না, ফ্রিজ খুলে দেখি ভাত আছে, কিন্তু সাথে আর কিছু নাই, কিছু পুরানো সসেজ ছাড়া। তাই আনাড়ি এখন সসেজ রান্না করে ঠাইসসা ভাত খায়। খুন-জখম পড়বার আগে পেট ভরে সবাই ভাত খান। আর সেই জন্যে আনাড়ি রাঁধুনিদের উপযোগী সসেজপেঁয়াজা রন্ধন প্রণালী পোস্ট দেই। আনাড়িদের জন্যে আশ্বাসের কথা হলো, এইখানে খুবই কম উপকরণ ব্যবহৃত হয়েছে। এবং পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আধা ঘণ্টাও লাগে নাই।

রেসিপিঃ আনাড়ির সসেজপেঁয়াজা

প্রস্তুতিঃ

  • ফ্রিজ খোলেন।
  • আঁতিপাঁতি করে ফ্রিজ খুঁজে ভাত দিয়ে খাবার জন্যে মনমতো কিছুই না পেয়ে দুই সপ্তাহ আগের কেনা ব্র্যাকের চিকেন সসেজ-এর প্যাকেট বের করে নিজেই রান্নাঘরের মাঠে নেমে পড়েন।
  • হাত ধোন মিয়া এবার ভালো করে কচলায়ে। কেম্নে কী না জানলে এখানে ঘুরে আসেন আগে একবার। (আরে সবাই নিজের ঢোল নিজেই পেটায়, আমিও পুরাতন ঢোল পিটাই আরকি! দ্রোহী’দা আমাকে বলেছিলেন যে ‘সচল’-রা রান্নার রেসিপি দিলে সেই পোস্ট হিট হয়, কিন্তু ‘সচলা’রা রেসিপি দিলে হয় না। তার মুখে কালিমা লেপন করে আমার পোস্ট দেখেন, এখনো নাকি সেই রেসিপি কত আনাড়ির জীবন বাঁচাচ্ছে বলে দূর-দুরান্ত থেকে খবর আসছে! চোখ টিপি )
  • হাত ধুয়েছেন ভালো করে? গুড! এইবার উপকরণ একত্রিত করেন।

উপকরণ:

  • মুরগার (মোরগ বা মুরগি, দুইটার একটা হলেই হলো, প্যাকেটের গায়ে লেখা না থাকায় ঠিক করে বলতে পারছি না) সসেজ। লক্ষ্য করুন, ৪ইঞ্চি লম্বা, ৬টা সসেজের জন্যে নিম্নলিখিত হিসাব কিতাব।
  • আয়োডিনযুক্ত লবণ – ০.৫ চা-চামচ
  • পেঁয়াজ – বড় ১টা / ছোট ৪টা
  • কাঁচা মরিচ – বড় ১টা / ছোট ২টা
  • সয়াবিন তেল – ৪-৫ টেবিল চামচ
  • রাঁধুনি মাংসের মশলা – ২ চা-চামচ
  • পানি – ১-১.৫ মগ

প্রণালীঃ

  • চাক্কু দিয়ে ১টা বড় পেঁয়াজ, অথবা ৪টা ছোট পেঁয়াজ লম্বা লম্বা করে কেটে করে ফেলেন। পেঁয়াজ কাটার আগে পেঁয়াজ আর চাক্কু দুইটাই ভালো করে ধুয়ে নিয়েন। যারা জীবনেও পেঁয়াজ কাটেন নাই, তাদের বোঝার জন্যে এই টিউটোরিয়াল।

  • এবার মরিচ ধুয়ে ছোট কুচি করে নেন। এইটার আবার টিউটোরিয়াল চায়েন না। এইটা নিজের ইচ্ছা (বা বুদ্ধি) মতো করেন।
  • রান্নাঘরের exhaust fan ছেড়ে দেন, ফ্যান না থাকলে জানালা সব খুলে দেন।
  • একটা কড়াই বা ফ্রাইং প্যান নিয়ে চুলার ওপরে রাখেন, এবার চুলা জ্বালান। এরপর কড়াইতে সয়াবিন তেল দেন ৫ টেবিল চামচ। তেল গরম হলে তাতে সসেজগুলা ছেড়ে দেন। কড়াই হলে ডুবো তেলে (যাতে ডুবে থাকবে সসেজ) চারিদিকেই ভাজা হবে। আর সমতল প্যান হলে উল্টায়ে দিতে হবে যাতে চারিদিকেই লালচে রঙের ভাজা হয়। ভাজার কারণে সসেজের উপরে একটা আস্তরণ পড়ছে দেখবেন, ঐটা বেশি পুরু করে ফেলার দরকার নাই। মোটামুটি লালচে ভাজা হলে চুলা নেভান। এবার সসেজগুলান তুলে ফেলেন একটা প্লেটে।
  • একটু ঠাণ্ডা হলে ভাজা সসেজগুলোকে আড়াআড়ি রেখে, চাকু দিয়ে টুকরা করে কেটে ফেলেন। এখন লম্বা সসেজ দেখতে গোল-গোল ছোট ছোট টুকরা হবে।
  • এবার চুলা আবার জ্বালিয়ে, কড়াইতে থাকা বাকি তেল আবার গরম হলে পেঁয়াজ ও মরিচ কুচি সবটুকু ছেড়ে দেন। এইটা নাড়াচাড়া করতে থাকেন, না করলে পেঁয়াজ পুড়ে যাবে।
  • পেঁয়াজ লাল-লাল হয়েছে দেখলে এবার মাংসের মশলা দেন। এইটা আধা মিনিট নাড়াচাড়া করে হাফ মগ পানি দেন। কড়াইয়ের গরম তেল-মশলা-পেঁয়াজে পানি দেয়ায় আঁতকা ছ্যাঁৎ করে আওয়াজ হবে, ধোঁয়াও হবে - তাতে চমকে গিয়ে খুন্তি ফেলে দৌড় দিয়েন না, হ্যাপেনস্‌।
  • মশলা-পেঁয়াজ মিশ্রণ মাখা মাখা হলে, দেখবেন মশলার গুঁড়া-গুঁড়া, হাঁচি আসা গন্ধটা আর নাই। এর মানে মশলা কষানো হয়ে গেছে। এবার তাতে আগের গোল গোল টুকরা সসেজ ভাজা ঢেলে দেন।
  • আবার হাফ-মগ পানি দিয়ে তারপরে লবণ দেন।
  • পানিটা শুকিয়ে আসলে চুলা নিভায়ে দেন।
  • এবার কড়াই থেকে বাটিতে ঢেলে পরিবেশন করুন, নিজেকেই।
  • তারপরে থালায় ভাত নিয়ে, ভাত দিয়ে সসেজপেঁয়াজা মাখায়ে খেয়ে ফেলেন।

    টেস্ট কেমন হয়েছিলো আমাকে না জানালেও চলবে। আমারটা ভালোই হয়েছিলো, না হলে আর কষ্ট করে রেসিপি দেই?! দেঁতো হাসি

তসবীর ১

তসবীর ২

দ্রষ্টব্যঃ
১। লবণে আয়োডিন আছে কিনা টেস্ট করার জন্যে পাতের এক কোণায় লবণ নিয়ে দুই ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে কচলান লবণটাকে। বেগুনি বেগুনি একটা রঙ আসলে বুঝবেন আয়োডিন হ্যাজ।

২। তেল গরম হয়েছে কিনা বোঝার জন্যে দয়া করে নিজের আঙুল তেলে ডোবাবেন না! বরং কড়াইয়ের তেলের প্রায় এক হাত উপরে নিজের হাতের তালু রেখে দেখেন গরম আঁচ টের পান কিনা, মোটামুটি আঁচ পেলেই তেল গরম হয়েছে।

৩। রাঁধুনি মাংসের মশলায় প্রচুর পরিমাণে শুকনা মরিচ গুঁড়া থাকে দেখলাম, মনে হলো 'মাংসের মশলা' নামটা না দিয়ে শুকনা মরিচ গুঁড়া নাম দিলেই পারতো! এই জিনিস হাতে বেশি লাগায়েন না, পরে হাত জ্বলবে। হাতে লাগলে সেই হাতে চোখে আবার ডলা দিয়েন না!

৪। শুকনা মরিচ বেশি খেতে না চাইলে বা ঝাল কমাতে চাইলে অথবা রাঁধুনির বা আর কারও মাংসের মশলা না থাকলে – নো চিন্তা। এই মশলা গুলান একটা বাটিতে অল্প পানিতে গুলে দিয়ে দেন –
ধইনা গুঁড়া – ১ চা-চামচ
জিরা গুঁড়া – ০.২৫ চা-চামচ
শুকনা মরিচ গুঁড়া - ০.২৫ চা-চামচ (এইটা আসলে সুন্দর একটা লাল-লাল রঙ এনে দেয় রান্নায়, তবে এমনিতে কম খাওয়াই ভালো। কাঁচা মরিচ বরং বেশি খাবেন, ওতে ভিটামিন সি আছে, আবার ঝালও হবে, আফটার এফেক্টও কম হবে হাসি )।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:
প্রক্রিয়াজাত মাংস, যেমন সসেজ বা নাগেট, যত কম খাবেন ততই ভালো। এগুলোতে পুষ্টি উপাদান থাকে কম, ক্ষতিকর উপাদান থাকে বেশি। এইটা হলো জীবন-বাঁচানো-ফরজ রেসিপি, এইরকম হলে আলাদা কথা।

এইখানে যে কোন কোম্পানির যে কোন জিনিসের সসেজ হলেই রেসিপি চলবে।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: প্রস্তুতকৃত পদের সকল প্রশংসার দাবিদার রেসিপি প্রদানকারী। তবে প্রস্তুত পরবর্তী সকল দায়ভার রাঁধুনির, কোন রকম হাসপাতাল, ঔষধ বা ডাক্তার ডাকার জন্যে কোনমতেই রেসিপি প্রদানকারীকে দায়ী করা যাবে না।


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অ্যাঁ বুঝলাম, কিন্তু ফ্রিজে সসেজ না থাকলে এই জিনিস বানানোর উপায় কী?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

হ, ডিস্ক্লেইমার হলো, আগে শখ করে সসেজ কিনে এনে ফ্রিজে ফেলে রাখবেন দুই সপ্তাহ। তার পরে তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে যখন ফ্রিজে আর কিছুই পাবেন না খাওয়ার যোগ্য, তখন বের করে এইটা রাঁধবেন। দেঁতো হাসি

আগে যখন একা একা থাকতাম, এইরকম কিছু হাবিজাবি খাবার কিনে ফ্রিজে রেখে দিতাম। যেদিন খুব বিপদে পড়তাম খাবার না পেয়ে, তখন এই সব হাবিজাবি সসেজ কাজে লাগতো। এখন তো আম্মা রেঁধে দেয়, রেডিমেইড খাবার পাই, তাই অত দরকার পড়ে না। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তিথীডোর এর ছবি

এমনিই খিদেয় জান উড়ে যাচ্ছিল, ছবিদুটো দেখে আরো বাড়ল। এলা লাঞ্চ করি। দেঁতো হাসি
ভাতের মাঝে গত উইকেন্ডে রান্না মুরগির ঠ্যাঙের একপিস জমে ক্ষীর হয়ে থাকা আলুর ঝোলের দুই খাবলা সমেত ঢুকিয়ে ওভেনে দিলুম। আর জাম্বো গ্লাস কোক। এই হলো অলস এবং আনাড়ির রোজকার দ্বিপ্রাহরিক/ নৈশকালীন মেনু। ঠ্যাঙ অবশ্য অমানুষিক মাত্রার হট সস এবং কাঁচা+শুকনো মরিচ এবং ক্যাপসিকাম সহযোগে রন্ধনকৃত হৈয়াছিল, আমি অস্বাভাবিক ঝাল খাই। চাল্লু

আপনার পুরোনো পোস্টটা ঘুরে এলাম। খালিদ (পছন্দনীয়) ভাইয়ের মন্তব্য আসলেই মিস করি।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

কোক কম খান। এই জিনিস আসলেই কোন কাজের না। কোকের বদলা লেবুর শরবত বানায়ে খান, শরবত বানাতে বেশি কষ্ট হলে এমনি পানিতেই লেবু চিপে নেন। দেঁতো হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সত্যপীর এর ছবি

আপনে সসেজ ভাইজা কাটসেন আমি আগে কাইটা নেই তারপরে ভাজি। তাইলে টুকরাগুলির চারপাশেই ভাজা ভাজা হয়। অতি টেশটি!!

..................................................................
#Banshibir.

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

হুম, সেটাও করা যেতে পারে। আমি সসেজের পাতলা আবরণের কারণে হওয়া ভাজা লালচে এফেক্টটা আনতে এভাবে করেছি।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তাসনীম এর ছবি

এইটা আমিও ট্রাই করব, আমার ফ্রিজে সসেজ আছে।

লবণে আয়োডিন আছে কিনা সেটার জন্য আইকিউ টেস্ট নেওয়া যেতে পারে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

কেমন হলো? চিন্তিত

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

দীনহিন এর ছবি

এরূপ রেসিপি কখনো দেখিনি! ভিন্ন মাত্রা যোগ করার জন্য রেসিপি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে!
আর টিউটোরিয়ালটা খুব কাজে লেগেছে, ব্যাকপ্যাকার ভাই! শুধু মরিচ-কুচির টিওটেরিয়ালটা কেন দিলেন না, তাই ভাবছি! হাসি

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সবকিছুর টিউটোরিয়াল আমি দিয়ে দিলে আপনি দিবেন কী?!
ভালো লেগেছে বলায় আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তিথীডোর এর ছবি

ব্যাকপ্যাকার ভাই নন। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাফি এর ছবি

আপনার দেখে আমিও একটা রেসিপি দিয়ে দিলাম।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

তাই নাকি! আমি তো মিস করে গেছি, দাঁড়ান খুঁজে দেখি!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

দেশীছেলে এর ছবি

অতি উত্তম, ট্রাই মারবানে | পীরবাবার (সত্যপীর) টিপস্ অনুযায়ী সসেজ কাইট্টা ভাজুম হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

একদিন খাওয়াবেন?

____________________________

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

রেঁধেই যদি খাওয়াবো তো আর পোস্ট দিলাম কোন দুঃখে! বরং আপনারা রাঁধেন, রেঁধে আমাকে দাওয়াত দেন। দেঁতো হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।