সাইকেল! সাইকেল!!

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি
লিখেছেন যাযাবর ব্যাকপ্যাকার (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/০৩/২০১৪ - ২:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


“এই যে! এই যে! বললাম না? প্রতিদিনই যায়!”
মাথার উপরে আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলে দেখি তিনতলা বাসার দোতলার দুই ফ্ল্যাটের দুই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এক, দুই, তিন – তিনজন বছর ৩-৮এর খুকী। ডানের ব্যলকনিতে দাঁড়ানো পিচ্চি সাথীদেরকে নিজের পূর্বোক্ত কোন কথার হাতেনাতে প্রমাণ দিতে পেরে মহা ভাব নিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। আর বামের বারান্দায় দাঁড়ানো অপর দুই পিচ্চি চোখ গোল গোল করে আমাকে দেখছে।
আমি হেসে প্যাডেল করতে থাকি, থেমে গেলে যদি প্রথম পিচ্চির ভাব অন্যদের কাছে একটু কমে টমে যায়, সেই রিস্ক না নিয়ে।

আমাদের আবাসিক এলাকার কাছেই আর একটা এলাকা আছে, সেটা ঠিক বস্তি নয়, দিনমজুর-গেরস্ত নানারকম মানুষ থাকেন। কেউ কেউ মোটামুটি ভালোই জীবনযাপন করেন, গরু-ছাগল পোষেন। গত বছর নতুন সাইকেল কেনার পরপরই ঐদিকে গিয়েছিলাম রাস্তা এক্সপ্লোর করতে। বার দুয়েক চক্কর দেয়ার পরে তৃতীয়বার দেখি টিন-ছনের ঘরগুলোর কাছে একটা ছোটখাটো জটলা। সেখানে ছোট-বড়-বুড়ো অনেকেই আছেন। আমি কাছে যেতেই হাসি দিলো কয়েকজন, কোনরকম ঠাট্টা নয়, উৎসাহজনক হাসি রীতিমতো। জটলা পার হয়ে যাওয়ার পরে বেশ হই-হুল্লোড় উঠলো একটা, সেদিন শার্ট আর জিনস পরে ছিলাম, ভাবলাম এটা নিয়েই কিছু একটা বলছে হয়তো সকলে। কানে এলো একটা মেয়ে বলছে, “ বললাম না? মেয়ে!”


এই আবাসিক এলাকাটার পিচ্চিরা বাবা-মা-শিক্ষককূলের কোচিংসেন্টার প্রীতির মুখে ছাই দিয়ে এলাকার যত ফাঁকা প্লট, সেগুলোতে ক্রিকেট-ফুটবল-ব্যাডমিন্টন এসব খেলে প্রতিদিন বিকালে। খুব বেশি পিচ্চিরাও বসে থাকে না, যারা হাঁটি হাঁটি শিখেছে কেবল, বাবা-মার হাত ধরে বাসার সামনে হাঁটাহাঁটি করেন তারা, নিজেদেরকে একদম ‘বড়দের মতো’ ভেবে নিয়ে তাদের মুখে-চোখে খুশি আর ধরে না! আর আছে আরেকটু বড়রা, তারা দুই চাকায় না পৌঁছালেও তিনচাকার সাইকেল বা ব্যালান্স-হুইলওয়ালা দুই চাকা নিয়ে বেরিয়ে যান। সেদিন বাবার ঘাড়ে চড়ে পেছনে সাইকেল চালিয়ে আসা আমাকে দেখে চোখ গোল করে তাকিয়ে থাকা একজনকে জিভ ভেঙচে দেয়ায় হকচকিয়ে গেছিলেন বেচারা (বলা বাহুল্য ওনার বাবা-মা দেখেন নাই)!
আর এই তো গত সপ্তাহেই আমাকে দেখে ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে তিন চাকা নিয়ে পাল্লা দিতে আসছিলেন আরেকজন খুকী।


বড় রাস্তায় সাইকেল চালাতে গিয়ে ট্রাক বা বাস গায়ের উপরে উঠে যাবে সেই ভয় করে। তবে পথে বেরিয়ে অভিজ্ঞতা খারাপ হয়নি এখনো। আমার এই বুড়া বয়সে সাইকেল কেনায় আমার সহকর্মীরা উৎসাহ দিয়েছেন। এমনকি ঢাকায় একটা কনফারেন্সে গিয়ে আমি একদিন সেখান বেরিয়ে আরও কিছু মেয়ের সাথে সাইকেল চালাতে যাবো শুনে আমার বুড়া বুড়া শিক্ষকরাও প্রশংসাই করেছেন। তবে কর্মস্থলে সাইকেল নিয়ে হাজির হওয়া হয়নি আগে। আমাদের দেশের আবহাওয়া ঠিক সাইকেল চালিয়ে কাজে যাবার উপযুক্ত থাকে না সবসময়ে, বিশেষ করে রাজশাহীতে আর্দ্রতা বেশি থাকে, ৪০-৪৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের তাপটাও অসহনীয় হয়ে পরে গ্রীষ্মে। তার উপরে আমাদের অফিসে এসি-টেসি নাই।

কর্মচারী যারা সাইকেলে যাতায়াত করেন, তারা সিঁড়ির নিচে একটা খাঁচা মতো তালা দেয়া জায়গায় সাইকেল রেখে দেন। ঠাণ্ডা আবহাওয়া দেখে কাজের চাপ কম ছিলো, এমন একদিন সাইকেল নিয়ে হাজির হলাম। ফোন করে অনুরোধ করায় আমাদের ল্যাব-অ্যাসিট্যান্ট সাত্তার ভাই নিজেই নিজের চাবি নিয়ে হাজির আমার সাইকেল নিরাপদে তুলে রাখতে। ফেরার সময়ে পিয়নদের একজন নিজেই বের করে দিলেন সাইকেল, এটা একটা ব্যাপার, কারও কাছ থেকে অসহযোগিতা পেয়েছি এ পর্যন্ত, তা তো নয়ই, বরং সবাই যেন একটু বেশিই আগ্রহী থাকেন আমার কাছ থেকে সাইকেল নিয়ে নিজেরাই তুলে রাখা, বের করে দেয়া, এরকম কাজে সাহায্য করতে। আমি যে ছোট থেকে সাইকেল ধরেছি, নিজেই পারবো, এটা বলে তাদেরকে উৎসাহে পানি ঢেলে দিতে খারাপ লাগে মাঝেমাঝে।


আমি সাইকেল চালানো শিখেছিলাম ৭ বা ৮ বছর বয়সে। আমার দাদাবাড়ির পাশে বিশাল মাঠ ছিলো সেই সময়ে। পাড়ার বড় ভাইরা ফুটবল খেলতো (ক্রিকেট এত জনপ্রিয় ছিলো না সে সময়ে), মহিলারা গরমের বিকালে বের হয়ে সৌজন্যমূলক গল্প করতেন মৃদুমন্দ ঠাণ্ডা হাওয়ায়। সেসব মেলাআআআআ আগের কথা। তখন বাক্স-বাড়ির নগর জীবন ছিলো না, প্রতিবেশীদের সাথে আলাপের সময় ছিলো সবারই।
র‍্যাট রেইসে অংশ নেবেন না, বরং ছেলে-মেয়েকে বেশি সময় দিবেন, এই উদ্দেশ্য নিয়ে ঢাকা থেকে নিজেদের বেশি বেতনের চাকরি বিদায় জানিয়ে আমার বাবা-মা ফিরে এসেছিলেন নিজেদের ছোট শহরে। আমার ছোট ভাই সেই প্রথম ফাঁকা বড় মাঠ দেখলো। যতদূর মনে পড়ে, রাজশাহী ফেরার কয়েকদিনের মাঝেই সাইকেল আর আমাকে নিয়ে আব্বু মাঠে হাজির হলো। আমার বাবার প্রায় সমবয়সী BMW সাইকেলটা পরিচিত একজন বাবাকে দিয়েছিলেন আমার শেখার জন্যে। ঐ সাইকেলটা খোদ ইংল্যান্ড থেকে আনানো হয়েছিলো তার ছেলের জন্যে সম্ভবত। কিন্তু ঢাকায় থাকতে শেখার সুযোগ হয়নি।

সাইকেলসহ মাঠে হাজির হয়ে আমি খুবই উত্তেজিত ছিলাম। আমি সাইকেলে বসে প্যাডেল করি, আব্বু সাইকেল পেছন থেকে ধরে রাখে ব্যালান্স করে। কিন্তু একসময়ে আবিষ্কার করলাম সাইকেল ধরে থাকবে বললেও ছেড়ে দিচ্ছে আব্বু। মুশকিল হলো যেই না আমি খেয়াল করছি যে সাইকেল ধরে নাই কেউ, অমনি ব্যালান্স হারিয়ে পপাত ধরণীতল, অথচ বোঝার আগে পর্যন্ত ঠিকই ব্যালান্স রেখে চালিয়ে যাচ্ছি! বড় ভাইরা ফুটবল খেলা থামিয়ে আমার জন্যে জায়গা করে দিলেন। পরদিন আব্বু আর গেলো না, বড় ভাইরাও আর আমাকে জায়গা ছেড়ে দিলো না। আমি একা একাই বাসার সামনে বড় রাস্তার পাশে সাইকেল নিয়ে এগুনোর চেষ্টা করলাম, আর কী আশ্চর্য! পারলামও! দেঁতো হাসি

গতবছর অনেকটা শখের বশে সাইকেল কিনলাম, Laux-এর মেয়েদের সাইকেল, ৭ হাজার মতো পড়লো। আসলে এই এলাকায় রাস্তাগুলো বেশ ভালো, সাইকেল চালাবার জন্যে আরামদায়ক, হেভি ট্রাফিকও নাই। বিকালে বা সন্ধ্যায় ভালোই লাগবে চালাতে ভেবে, দোকানে খোঁজ করলাম। মেয়েদের ২টা সাইকেল আছে দেখে আমার প্রিয় লাল রঙেরটা নিয়ে ফেললাম নিজের জন্যে। আমার সাইকেলটার বোন আরেকটা Laux সাইকেল আমার এক ছোট বোন নিয়েছিলো রাজশাহীরই দোকানটা থেকে, এখান থেকে সে সেটা জাহাঙ্গীরনগরে তার ক্যাম্পাসে নিয়ে চলে গিয়েছিলো।

সাইকেলের মজাটা হলো, চালাবার সময়ে আমার নিজেকে পুরা পাখি পাখি লাগে! মনে হয় উড়ছিইইইইইইই! হাসি


“কিন্তু সাইকেলটা পাবো কই?”
“দেখি দাঁড়া! আমারটার হাইড্রলিক ব্রেক তুই সামলাতে পারবি না। প্র্যাক্টিস লাগবে।“
“হ!”
“ভাইয়ারটা পারবি মনে হয়, তাও প্র্যাক্টিস লাগবে।“
“ভাইয়ারটা নিলে উনি অফিসে যাবেন কেম্নে?”
“ব্যাপার না, বলে রেখেছি আমি হালকা, ভাইয়ার অসুবিধা নাই। তোকে সাইকেলটা পৌঁছায়ে দিয়ে ভাইয়া রিকশা নিয়ে বাকিটা চলে যাবে। তারপরে আমি খানিকক্ষণ সাথে থাকবোনি, দেখলাম তুই পারিস কিনা ঠিকঠাক ঐটার গিয়ারটিয়ার ম্যানেজ করতে। আর আমি ঐদিকেই একটা মিটিং-টিটিং ফেলবোনি, তাহলে বাকি সময়টা কাটানো যাবে অনায়াসেই।“
“কী বলিস! এতো মহা পেইন দেয়া হবে তোদের দুইজনকেই। আমার একটা বাতিকের জন্যে এত ঝামেলা করবি?”
“দেখ, এটা কোন ঝামেলা না। আর বড় কথা হলো বাতিকটাও সেরকমের কিছু হতে হবে – তোর বাতিকটা ভালো, মেয়েরা সাইকেল চালাবে নারী দিবসের র‍্যালিতে, তুই রাজশাহী থেকে এসে সেই র‍্যালিতে অংশ নিবি। এরকম বাতিক সবার থাকে না, তোর আছে, এটাই বড় কথা।“

নিয়মিত সাইকেল চালাতে চালাতে আসলে শখ বেড়ে গেছে, সেদিন যেই দেখলাম মার্চের শুরুতে শুধুমাত্র মেয়ে সাইক্লিস্টদের জন্যে একটা সাইকেল রাইডের আয়োজন করেছে BDCyclists গ্রুপ, বন্ধুদের কয়েকজনের নাম দেখেই হাত তুলে ফেললাম। যদিও সমস্যা হলো - সেই সময়ে আমি নিজে ঢাকায় থাকলেও, ঢাকায় তো আমার সাইকেল নাই!
তাতে কী! বন্ধুবান্ধব তো আছে! তাদের অনেকেই আবার নিয়মিত সাইকেল চালিয়েই কাজে যায় ইদানীং।
Go green!


[একেবারে বাংলাদেশের সংবাদপত্রদের ইশটাইলে বলছি: ইহার সূত্রঃ ইন্টারনেট, বিশদ জানা নাই]

কলেজের বন্ধু তৌহীদ আর মুঈদ ভাইয়ার সৌজন্যে সাইকেলের ব্যবস্থা হলো। আগেরদিন iferry.com থেকে অর্ডার দেয়া হেলমেটও হাতে পৌঁছে গেছে। পরদিন সকালে সাইকেল পৌঁছেনি তখনো, রঁদেভ্যু বাড়ির কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে, ঐটুকু হেঁটে চলে যেতে বাড়ি থেকে বের হতেই দেখি উল্টোদিকের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে সাইকেল নিয়ে বেরুচ্ছে আরেকটা মেয়ে। কী মনে হতে হাত নেড়ে কাছে গিয়ে বললাম, “আপনি কি মেয়েদের সাইকেল রাইডে অংশ নিতে বেরুচ্ছেন?”
আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা বললো, “ আরে আপু! আমাকে চেনেন তো আপনি!”
চিনতে পেরে হেসে ফেললাম দুইজনেই। আমাদের বুনোহাঁসের বন্ধু, এর আগে একবার আলাপ হয়েছিলো।

গুলশান-১ এর Nando's –এ পৌঁছে কাওকে না দেখে একটু ভড়কে গেলাম। পরে আমাকে পেছনের দিকে Barista-য় যেতে বললে আরেকটা পরিচিত মুখ দেখে মন খুশি হয়ে গেল। আলাপ হলো আরও কয়েকজনের সাথে।
বারিস্তায় কফি আর একটা কাপ-কেক অর্ডার দিয়ে বসতে বসতেই বাকিরা হাজির। বুনোহাঁস কল্যানপুর এলাকা থেকে ডানায় ঢেকে নিয়ে এসেছে আরও কয়েকজন বলাকা।

BDcyclist-দের ভলান্টিয়ার আর বাকি সাইক্লিস্টদের সাথে আলাপ চলতে চলতেই আমার বরাদ্দ সাইকেল নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন মুঈদ ভাই আর তৌহীদ। সাইকেলের সিট অ্যাডজাস্ট করা হলো, গিয়ারে তেল-তুল দিয়ে আমার উপযোগী গিয়ার সেট করে আমাকে রেডি করে দিলেন দুইজনে। গ্রুপ ফটো তোলা হলো সবার।

আমি এদিকে গিয়ার-ওয়ালা চার চাকার বাহন ছাড়া আর কিছু চালাই নাই কখনো, বেশ ভয় লাগছিলো ঢাকায় বড় রাস্তায় চালাবো ভেবে। যদিও শনিবার, আর যাবো আমরা তেজগাঁ, তবুও ট্রাফিক মন্দ না। নান্দো'স-এর সৌজন্যে চা-বিস্কুট খাওয়া, গ্রুপ ফটো-টোটো তোলা শেষ হলে আমরা সকলে রওনা হলাম গুলশান থেকে তেজগাঁর পথে। নান্দোস বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষ্যে বিডি-সাইক্লিস্ট গ্রুপের সাথে মিলে আয়োজন করেছিলো এই রাইডের।

Inspiring Change -8 March 2014

BDCyclist-দলের ছেলে ভলান্টিয়াররা বাদে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৩০ জন নারী। Nando's-এর সৌজন্যে সেদিন দুপুরে তেজগাঁর একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির নারী কর্মীদেরকে দুপুরের খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। সাইক্লিস্টরা খাবার বহনকারী ভ্যানের সাথে সাইকেল চালিয়ে গুলশান-১ থেকে তেজগাঁর প্রিন্স গার্মেন্টস-এ গিয়ে খাবার বিতরণ ও কর্মীদের সাথে সময় কাটিয়ে ফেরত এসেছিলেন নান্দোস-এই। সেখানে তাদের জন্যেও দুপুরের খাবারের বন্দোবস্ত ছিলো।

পুরো উদ্যোগই আমার কাছে প্রশংসনীয় মনে হয়েছে। শুধু ভালো লাগেনি স্পন্সরকৃত একই-রকমের টি-শার্টে মেয়েদের জন্যে নির্ধারিত ‘গোলাপি’ রঙ। এই রং-টা বহির্বিশ্বে মেয়েদের সাথে প্রায় সিলগালা করে ব্র্যান্ডিং করে ফেলা হয়েছে বিগত কয়েক দশকে, কোন বিচিত্র কারণে! বাংলাদেশেই বরং এই রঙের ছাপ মারার ব্যাপারটা অপ্রচলিত ছিলো, একটা কেউ শুরু করলে বাকিরাও করবে, এই আশঙ্কা করি। নারীদের সাথে কোন কিছুর ছিল-ছাপ্পর মেরে দেয়ার ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ বিরক্তিকর মনে হয়। ছেলে ভলান্টিয়ার আর মেয়ে সাইক্লিস্টদেরকে আলাদা রাখতেই যদি টি-শার্টের রঙ আলাদা করতে হয়, তবে নান্দো'স চাইলেই তাদের নিজেদের চিকেন-মাসকটের লাল-কালো কম্বিনেশন ব্যবহার করতে পারতো।

কিন্তু যেমনটা বললাম, এইটা বাদে, বাকি সবকিছুই ভালো লেগেছে। সবথেকে ভালো ব্যাপার ছিলো সাইকেল চালাতে আগ্রহী এতগুলো মেয়ের সাথে পরিচয় হওয়া। ভালো লেগেছে গার্মেন্টসকর্মীদের সাথে আলাপ করে।

নিচে কিছু ছবি দিলাম সেই দিনের।

i. গুলশান-১ এর Nando's ছেড়ে রওনা হচ্ছে সাইকেলারোহীদের দল

ii. গুলশান থেকে তেজগাঁ'র পথে... বাঁয়ে ঐ যে হাতিরঝিলের ব্রিজগুলো দেখা যায়

iii.

iv. গার্মেন্টেস-এর বাইরে রাখা আমাদের সারিবদ্ধ সাইকেলের একাংশ

v. গার্মেন্টস-এ ব্যস্ত কর্মীবৃন্দ। এখানে দেখলাম পুরুষকর্মীর সংখ্যা বেশ ভালোই।

vi. আঞ্জুমান, বাড়ি নেত্রকোণা। কাজে ব্যস্ত কর্মীরা কথা বলতে খুব বেশি ইচ্ছুক নন, আঞ্জুমানের ক্ষেত্রে অবশ্য অনাগ্রহের থেকে মনে হলো বেশি লাজুক।

vii. খাবার বিতরণ করছে নান্দোস-এর মাসকট

viii. ফটোগ্রাফারদের একাংশ

ix. ফিরতি পথে মেয়েদের উচ্ছ্বাস

x. বুনোহাঁসের স্বহস্তে প্রস্তুতকৃত চেইন-তালার পোশাক!

xi. সাইক্লিস্টদের দুপুরের খাবার - সৌজন্যে নান্দোস

xii. বিদায় নেবার আগে স্মমিলিত সাইক্লিস্টদের কয়েকজন। এই ছবিতে সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নারী উপস্থিত আছেন।


নারী দিবস, মা-দিবস আলাদা করে বিশেষ দিবস পালনের যৌক্তিকতা আমার নিজের কাছে কম। নজরুলের কথাটা ঠিক - “পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।“

প্রতিটা দিনই মায়ের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ, আপনার মেয়ের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। দিবস আলাদা করে পালনের আগে জরুরি মেয়েদেরকে সাহসী করে বড় করা, উৎসাহ দেয়া যে তারাও ছেলেদের মতোই সবকিছুই পারে। একটি পরিবারে ছেলেটিও যখন দেখবে তার বোনকে একই কাজ করতে দেয়া হয়, পরিবারের বাইরের অন্য আরেকটি মেয়ে সম্পর্কে তার সম্মান বাড়বে বই কমবে না।

আমাদের দেশে মেয়েদেরকে সেভাবে কোন কাজে উৎসাহ দেয়া হয় না। ‘লোকে’ কী বলবে, এইটা আমরা বেশি ভয় পাই। যতটা না মেয়েরা বড় হতে হতে নিজেরা ভয় পায়, বড়রা বিশেষ করে নিজের সবথেকে আপনজনেরা – বাবা-মা, ভাইবোন, পরিবারের অন্যরা, তাদের মনে ভয়টা জোর করে ঢুকিয়ে দেয় – তুমি তো পারবা না! তুমি করলে সবাই ছি ছি করবে! তোমাকে বিরক্ত করবে, তোমাকে মন্দ বলবে। - ইত্যাদি, ইত্যাদি। হ্যাঁ-এর আগেই না!

কিন্তু রাজপথে সাইকেল চালাতে গিয়ে আমি সেভাবে বিব্রতকর কোন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন এখনো হইনি। আজ থেকে প্রায় দশ-বারো বছর আগে নওগাঁর আত্রাই-এর একটা গ্রামে নিজে দেখেছি স্কুলের মেয়েরা সাইকেল চালানো শিখছে, বাবা-বড় ভাইয়ের কাছে, শখ করে। চালাচ্ছে না হয়তো রাস্তায়, কিন্তু শিখছে তো! যে কোন বিদ্যাই কখনো না কখনো কাজে লাগতে পারে। আর সাইকেল চালাতে ব্যালান্স করা শিখতে হয়, পড়ে গেলে ব্যথা লাগবে সেটা মেনে নিয়ে মাইন্ডসেট করতে হয়। সাহস লাগে পুরা ব্যাপারটায়। শিখে গেলে আনন্দও হয় দারুণ! আমার মজা লাগে যখন আমি সাইকেল নিয়ে বের হলে ছোট-বড় মেয়েরা আড় চোখে তাকিয়ে দেখে কেমন করে সাইকেল চালিয়ে এদিক সেদিক যাচ্ছি আমি।

লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় একটি NGO-তে কর্মরত পরিচিতা একজনের সাথে আলাপে সেদিন জানলাম ঐ এলাকায়, বিশেষ করে বর্ডার বেল্ট রিজিয়নে গ্রাম-গঞ্জেও মেয়েদের সাইকেল চালানো খুবই স্বাভাবিক। সেখানে নারীরা এটা প্রয়োজনের তাগিদে শিখে নিয়েছেন। সামাজিক বা পারিবারিক কোন বাধা তো নাইই, বরং সব মেয়েই শিখছে সাইকেল চালানো এবং চালাচ্ছে। তাকে বলেছি সময় করে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত লিখতে।

১০
ঢাকায় ইদানীং ছেলেরা অনেকেই সাইকেল চালাচ্ছেন। সাইক্লিস্টদের গ্রুপ, সাইকেল অ্যাক্সেসরিজ-এর দোকান, ক্যাফে বা আড্ডা দেবার জায়গা, নানান কিছু হয়েছে। শুধু ঢাকা না, সাইক্লিস্টদের গ্রুপ অন্য শহরগুলোতেও ছড়াচ্ছে ধীরে ধীরে। রাজশাহীতে কিছু স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে সাইকেল নিয়ে নানানরকমের কসরতের একটা গ্রুপ খুলেছে ফেসবুকে দেখলাম। আর সচক্ষে সেদিন টিটি কলেজের মাঠে দেখলাম দুইজন ক্লাস 9-10 পড়ুয়াকে সাইকেলে দাঁড়িয়ে ব্যালান্স করে এগুতে। একটু ভয়ই লাগলো কোনরকমের হেলমেট বা knee-elbow-guard ছাড়া ভর দুপুরে জনবিরল মাঠে দুইটা ছোট ছেলেকে একা একা প্র্যাক্টিস করতে দেখে। সাইকেল যেমন স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্যে ভালো, নিরাপত্তার ব্যাপারটাও যে জরুরি, সেটা এই ছোটদেরকে বোঝাতে পারলে ভালো হতো। আর অফিসগুলোতে যদি শাওয়ার নেয়ার, কাপড় পাল্টাবার সুব্যবস্থা থাকতো, তাহলে হয়তো সাইকেল চালিয়ে অফিস করতে ঢাকার আরও অনেক বেশি তরুণ-তরুণীকে উদ্বুদ্ধ করা যেত। সাইকেল এবং খুব ভালো পাবলিক বাস ঢাকার যানজট নিরসনের অন্যতম উপায় হতে পারে।

বিডিসাইক্লিস্টস দল নিয়মিত অন্যান্য সাইকেল রাইডের আয়োজন করে চলেছে, বিশেষ করে ছুটির বা বিশেষ দিনগুলোতে। ২৬ মার্চ ২০১৪, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যেই হয়ে গেল আরেকটি চমৎকার রাইড। সেভেন-সামিটখ্যাত বাংলাদেশী নারী পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীনও আজকে অংশ নিয়েছেন। বেগম রোকেয়া জীবিত থাকলে নিঃসন্দেহে এই মেয়েটা আর এভারেস্টজয়ী আরেক বাংলাদেশী নারী নিশাতকে নিয়ে গর্বিত হতেন।

সেদিন পরে সাইকেল ফেরত দিতে যাবার পথে বনানী আর বারিধারা হয়ে বেশ ভালো রকমের সাইকেল চালানো হয়েছিলো। সকালের প্রায় পাঁচ, পাঁচ – দশ কিলোমিটার, আর পরে আরও ১২ কিলোমিটারের মতো চালিয়ে বিকালে হাঁপিয়ে গিয়েছিলাম। রাস্তায় তো আর এত কায়দা করে চালানোর অভ্যাস নেই। আমার মতো আনাড়ির হাতে কলেজের বন্ধুর বড় ভাই নিজের ৫০ হাজার টাকা দামের Trek DS 8.3 সাইকেল ছেড়ে দেয়ায় আবেগাপ্লুত হয়েছি। (সত্যি বলছি, সাইকেলের দাম এত তা জানলে আমি আরও বেশি ভাব নিয়ে চালাতাম! রাস্তার মাঝ দিয়ে চলা লোককে গুঁতা দিয়ে বলতাম, “পঞ্চাশ হাজার টেকা দামের ছাইকেল দিয়া গুঁতা দিছি, এখন আমারে ৫০টেকা দেন!” খাইছে )

ভাবছি এবার নিজেই একটা গিয়ার-ওয়ালা দামী সাইকেল কিনে ফেলবো! দেঁতো হাসি


পাদটীকা

  • ১. i, ii, iii, vii, ix নম্বর ছবি বিডিসাইক্লিস্ট দলের আরিফুর রহমান খানের সৌজন্যে।
  • ২. আমার নিজের তোলা ছবিগুলোতে উপস্থিত নারীদের অনুমতি সাপেক্ষে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে।

মন্তব্য

সাফি এর ছবি

১। আমি এত্ত এত্ত সাইকেল চালাই, কই কোনদিন ও কোন নান্দুস গেন্দুস আদর করে খেতে দিলনা।
২। সারি সারি পার্ক করা সাইকেল দেখে মনে হল সিটগুলো অনেক নীচুতে। হয়ত সাইকেলগুলো আকারে বড় - তবে সঠিকভাবে এবং আরাম করে সাইকেল চালানোর জন্য সিটের উচ্চতা এমন হওয়া উচিত যেন আরোহী সিটে বসে থাকা অবস্থায় রাস্তা/মাটি বুড়ো আঙুলের ডগা দিয়ে ছুতে পারে। সিটে বসা অবস্থায় মাটিতে পা রাখা শেখার সময়ের জন্য ঠিক আছে কিন্তু এর বাইরে না।
৩। অনুমতি নেওয়াটা ভাল প্র্যাকটিস। তবে অনুমতি নেওয়ার সুযোগ না থাকলে, কারখানার ভেতরের ছবিছাড়া বাকি সব ছবিই পাবলিক প্লেসে তোলা। সেই ছবির অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা নাই।
৪। ৭০০০টাকায় সাইকেল কিনতে পারা তো অনেক সাশ্রয়ী। এইটা কি সিংগেল স্পিড?

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

১। হা হা হা হা হা! এরপরেরবার ভলান্টিয়ার হয়ে যেয়েন, গ্রুপের ছেলেরাও বঞ্চিত হয়নি খাদ্য থেকে। হাসি

২। ঠিক, নিচুতে সিট, এবং চাকা চওড়া। আমার নিজেরটা কম উচ্চতায় রেখেছিলাম কেনার পরে, অনেকদিন পরে চালাতে গিয়ে ব্যালান্স রাখতে পারবো না, পা ঠেকিয়ে থামাতে হলে এই ভেবে। এখন ভাবছি উঁচু করে ফেলবো, কারণ আসলেই দীর্ঘক্ষণ চালালে পা ব্যথা হয়। ঢাকায় যারা নিয়মিত সাইকেল চালায়, সেইসব ছেলেদের সিট অনেক বেশি উচ্চতায় দেখলাম এইবার খেয়াল করে। আমার বন্ধু আমারটা উঁচু করে দিতে চাচ্ছিলো, আমিই করতে দেইনি সেদিন। তবে আগে একসময়ে উঁচু ছেলেদের যেই বড় সাইকেল পাওয়া যায়, ঐটাও চালাতে পারতাম অনায়াসে, কাজেই সাহস করতে হবে।

৩। কারও ছবি তুলে পাবলিকলি কোথাও দিলে (ফ্লিকার বা ব্লগ) আমি অনুমতি নেয়ার চেষ্টা করি, এটা অভ্যাস। আমার নিজের ছবি আমার অনুমতি ব্যতীত কেউ কোথাও প্রকাশ করলে বিরক্তি লাগে, তাই নিজে আরও বেশি যত্নবান থাকি এই ব্যাপারটায়। এখানে গার্মেন্টসকর্মী যার একক ছবি প্রকাশ করেছি, তার থেকেও অনুমতি নিয়েছি, বেশ খানিকক্ষণ লেগেছে আমার তাকে বোঝাতে যে ঠিক কেন বা কিসের অনুমতি চাইছি। ভালো হতো ওনাকে ছবিটার একটা প্রিন্টেড কপি পৌঁছে দিতে পারলে।

৪। হুম, এটা সিঙ্গেল স্পিড খুবই সাধারণ একটা সাইকেল।

লিখবো লিখবো করে লেখা হচ্ছিলো না, সময়াভাবে। আপনিও লিখতে বলেছিলেন, আরও অনেকেই বলেছিলো। নিজের অভিজ্ঞতার কিছু লেখা হলো, আশাকরছি মন্তব্যে অন্যদের ভালো-মন্দ দুইরকমের অভিজ্ঞতারই আরও কিছু জানা যাবে।

[এডিট: পুরা মন্তব্য করার আগেই পোস্ট হয়ে গিয়েছিলো।]

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

হাসিব এর ছবি

সিটের হাইট এ্যাডজাস্ট করার আগে খুউউব খিয়াল কৈরা bicycle seat height গুগল করে নেবেন। এইটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাইকেল চালাতে গিয়ে হাঁটু কোমরের ব্যাথা তৈরি করা কোন কাজের কথা না।

আরো ভালো হয় ঘেটেঘুটে একটা পোস্ট দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারলে। এতে অন্য বাইকারুরাও উপকৃত হতো।

সাফি এর ছবি

হ এরকম একটা লেখা যায়। দেখি সময় বাইর কইরা। আপনেরা টাইম পেলে লিখে ফেলেন।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

প্রাসঙ্গিক: ঢাকায় সাইকেল-প্রেমীদের গ্রুপ বা ক্লাবগুলো এসব টুকিটাকি ব্যাপারে পরামর্শ, তথ্য ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা করে। ইন্টারনেটে সার্চ করলেও প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়। এমনকি ইউটিউবে ভিডিও টিউটোরিয়ালও আছে প্রচুর। ফেসবুকে সাইক্লিসটদের গ্রুপগুলোর পেইজ/গ্রুপ আছে। সেগুলা থেকে অনেক সাহায্য পাওয়া যায়। কেউ আগ্রহী হলে এগুলোতে জয়েন করে দেখতে পারেন।
মিন হোয়াইল, সাফি ভাই, হাসিব ভাই ছোট ছোট টিউটোরিয়াল লিখতে পারেন কিছু।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

মনে হল আমরাও সাইকেলে করে আপনাদের পিছু পিছু ঘুরে আসলাম পুরোটা!

গোলাপী রংয়ের স্টেরিওটাইপের বিরুদ্ধে আপনার বক্তব্য ভালো লেগেছে। একটা কর্পোরেট হাউস যে স্পন্সর করতে এগিয়ে এসেছে, এটাও ইতিবাচক।

চলুক লেখা, চলুক প্যাডেল

শুভেচ্ছা হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

আয়নামতি এর ছবি

ছাইকেল ভালু পাই দেঁতো হাসি ৫০ হাজারের ছাইকেলটার আলেদা একটা ফটুক দিতেন আপু চক্ষু সার্থক করতাম।
বুনোহাঁসের পর্দানশীন তালার ফটুক দেখে টাশকিত হলেম। বুনোদি ছাড়া আর কাউকে চিনি না। আপনি কুন্টা আপু?
আপনারা গার্মেন্টসে ঠিক কোন উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন বুঝলাম না। ওদিকটা নিয়ে লিখতেন একটু।
অনেকদিন পর আসলেন আপু। কেমন আছেন?

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

এটাই তো একটা আফসোস যে সাইকেলটার আলাদা ছবি তুলে রাখিনি। দেখি মুঈদ ভাইয়াকে বলতে হবে যেন সাইকেলের একটা ছবি আমাকে পাঠিয়ে দেন। হাসি

সাইক্লিস্টরা গার্মেন্টেসে গিয়েছিলেন নারীকর্মীদেরকে খাবার বিতরণ করতে। সাইক্লিস্টদের সাথে মিনিভ্যানে করে প্রায় হাজার খাবারের প্যাকেট গিয়েছিলো, নান্দোস-এর ভলান্টিয়ারদের সাথে (ফ্লিকারে ক্লিক করে দেখেন, নান্দোস এর কর্মীদেরও ছবি আছে)। আমারা যখন পৌঁছেছি তখন বেলা ১২টার মতো, গার্মেন্টস-এ সকলে কাজে ব্যস্ত, তাও আমাদের সাথে কাজ করতে করতেই টুকটাক আলাপ করেছেন। তাদের কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে খাবার পৌঁছানো ও বিতরণ শুরু করে দিয়ে সাইক্লিস্টরা মিনিট ৪০-এর মধ্যেই ফিরতি পথে রওনা হয়ে যান। বাকি বিতরণ কাজে নান্দোস-এর ভলান্টিয়াররা সম্পন্ন করেন। খাবারের স্পন্সর বা বিতরণ বা ফ্যাক্টরি সিলেকশন, এই পুরো ব্যাপারটাই নান্দোস-এর তত্ত্বাবধানে ছিলো। বিডিসাইক্লিস্ট দল শুধু রাইডটুকুর তত্ত্বাবধান করেছেন। আর আমি নিজে শুধুমাত্র সাইকেল চালানোতেই অংশ নিয়েছি। বিস্তারিত জানতে হলে আসলে নান্দোস কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে হবে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

আয়নামতি এর ছবি

আসলে এত দামী সাইকেল কেনার ক্ষমতা নাই তো আপু তাই দেখবার আগ্রহ ছিল আর কিছু না।
গার্মেন্টসের ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য উত্তম জাঝা!

হাসিব এর ছবি

৫০ হাজারের ছাইকেলটার আলেদা একটা ফটুক দিতেন আপু চক্ষু সার্থক করতাম

দু'আ রইলো। ওজন মাত্র পৌণে নয় কিলো।

সাফি এর ছবি

পয়সাওয়ালা নন-প্রো লোকদের ওজন নিয়া মাতামাতি দেখলে বিরক্ত লাগে। আরে ব্যাটা এতই যদি ওজন কম বহন করার সখ লাগে,তাইলে ফ্রিতে নিজের ওজন ২কেজি কমায় নিলেই হয়। এইটা ফুল কার্বন, এইটা মাত্র নয় কিলো কেমনে? আমার সাইকেল এর ওজনই তো নয় কিলোর কাছাকাছি দাম এর ১০ ভাগের এক ভাগ ও না।

সত্যপীর এর ছবি

এতই যদি ওজন কম বহন করার সখ লাগে,তাইলে ফ্রিতে নিজের ওজন ২কেজি কমায় নিলেই হয়।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

..................................................................
#Banshibir.

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লাফাং ...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

যাহ ওটা একটা পঁচা সাইকেল খাইছে দুয়াটা কেনু দেয়া হলু বুঝিনাই ইয়ে, মানে...

অতিথি লেখক এর ছবি

ইস কি যে ভাল লাগলো দেঁতো হাসি । সাইকেল চালানোর খুব শখ ছিল কিন্তু সুযোগ হয়ে উঠেনি। তবে আমি না চালাতে পারলেও আমার মেয়েকে অবশ্যই শেখাবো।
ইসরাত

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপু, আমি মনে করি শেখার কোন বয়স নেই। সাইকেল, সাঁতার, কারাতে, এগুলা সব শেখার কথা ছিলো ছোটবেলায় ... শুধু প্রথমটাই আমি ছোটবেলায় শিখেছি। সাঁতার শিখেছি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে, কারাতে শিখছি এখন! শখের দাম লাখটাকা। ইচ্ছা আছে প্লেন ওড়ানো শিখবো, রাজশাহীতে ফ্লাইং স্কুল আছে এখন, কিন্তু আমার পয়সা নাই শেখার খরচ বহনের। কিন্তু দরকার হলে থুত্থুড়ে বুড়া হয়ে গেলেও শিখবো! চোখ টিপি আপনার মেয়েকে ছোট থেকেই শেখার সুযোগ দিয়েন, আর নিজে যখনই সুযোগ পান শিখে নিয়েন। সাইকেল চালানো অন্তত স্রেফ নিজের ইচ্ছা আর সাহসের ব্যাপার। অল দ্য বেস্ট! হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তিথীডোর এর ছবি

♪♫ সাইকেলটা আমি ছেড়ে দিতে রাজি আছি, পারব না ছাড়তে এ ঠ্যাঙ।' খাইছে

নাহ, এই সামারেই ছাইকেল চালানো শিইখ্যা ফেলুমনে খাড়ান!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

এই সামারেই ছাইকেল চালানো শিইখ্যা ফেলুমনে খাড়ান!

অবশ্যই! গ্রীষ্মের অপেক্ষায় না থেকে আগামী কালকেই পারলে শুরু করুন। দেঁতো হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

নতুন নতুন চালাই আমিও। ছোটবেলায় পারতাম, বড় হয়ে আমাদের আঁকাইন যখন আমাকে শেখাতে এলো তখন দেখি, কি কেরফা, আমি তো দুইপা প্যাডেলে উঠাতেই পারিনা! হাত-পা-মাথা সব কাঁপাকাঁপি করে, যদি পড়ে যাই! আমার পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবো এই ব্যাপারটা ফোবিয়ার মতো মোটামুটি! এই ভয়ে অবশ্য প্যারাগ্লাইডিং করা বাদ দেইনাই, অতো উপর থেকে পড়লে কি হবে সেটা সম্ভবত আমার মোটা মাথা প্রসেস করে কুলিয়ে উঠতে পারে নাই! ম্যাঁও

যাইহোক, সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে আমার একসময় মনে হলো, আমার নিশ্চই পূনর্জন্ম হয়েছে, সাইকেল আর সাঁতার নাকি কেউ ভোলেনা! আমি ক্যাম্নে ভুললাম? আর আমাদের এলাকাটা খুব সাইকেল বান্ধব, এইখানে প্রচুর বাচ্চা সাইকেল চালায়, তাই যখনই কেউ পাশ দিয়ে যায়, তখনই আমাকে একটা না একটা সাজেশন দিয়ে যাচ্ছে দেখলাম, 'এই যে সাহস না হলে হবে না।' 'কোনও ব্যাপার না আর এক পা তুলে ফেলেন, তাইলেই পারবেন!' এইসব মন্তব্য কানে আসতো, আর আমি চিড়বিড় করতাম রাগে! তারপরে আম্মু একদিন বলে বসলো আচ্ছা, তোকে মনে হয় সাপোর্টিং চাক্কা কিনে দিতে হবে! ব্যস, জিদের চোটে তার দশ মিনিটের মাঝেই দেখলাম আমি সাইকেল নিয়ে গেট থেকে মাঠের ঐপাশে চলে এসেছি! কি কেরফা! তারপর তো নতুন গল্প শুরু। বিডি সাইক্লিস্ট এর বিপ্পুর কাছে আমার ফোল্ডিংটা বেচে দিলাম, নতুন আসা মেয়েদের সাইকেল কিনে এখন আমার সেইই ভাব! খাইছে

আর আপু, তোমার দুই নাম্বার ছবিতে আমার প্রথম সাইকেলটা আছে! মেয়েদের রাইডে আমি যেতে পারিনাই তাতে কি হয়েছে, আমার প্রতিনিধি হয়ে আমার সাইকেল ঠিক রাইড কমপ্লিট করেছে! বাঘের বাচ্চা

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

বুঝতে পেরেছি কোন সাইকেলটার কথা বলছো। অনন্যা চালাচ্ছিল যে ছোট সাদা/অফহোয়াইট সাইকেলটা, ঐটা মনে হয়। বড় রাস্তায় আমি এক অনভিজ্ঞ সাইক্লিস্ট আরেক অনভিজ্ঞকে গাইড করে নিয়ে আসছিলাম ফিরতি পথে। দেঁতো হাসি

তোমাকে মিস করলাম ঐদিন। গতকালকের রাইডে তো মনে হয় অংশ নিয়েছ। বিশাল সমাবেশ হয়েছিলো দেখলাম ছবিতে। ভালো লেগেছে সকলের উৎসাহ।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

হ। সেইন্টমার্টিন গেসিলাম ঘুড়ি উড়ানো শিখতে! খাইছে শেখার তো আর শেষ নাই! দেঁতো হাসি ২৬শে মার্চের রাইডে গেসিলাম। এক মুরগিওয়ালা মামাকে সফলতার সাথে ধাক্কা দিয়েছি! ম্যাঁও

এখন মোটামুটি কাছাকাছির মাঝে সব জায়গাতেই সাইকেল চালিয়ে যাই! খুব্বালালাগে! বাঘের বাচ্চা

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

অতিথি লেখক এর ছবি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার, আপু কি যে এক ভাল লাগা ছড়িয়ে দিলেন বিশ্বাস করতে পারবেন না। এতদিন জার্মানীতে দেখেছি। নেদারল্যান্ডের কথা শুনেছি। শীত কিংবা গ্রীষ্ম, রোদ কিংবা বৃষ্টি ছেলে মেয়েরা সাইকেল চালাচ্ছে। বাচ্চা, বুড়ো, বালক। বালিকা, দাদা-দাদী কিংবা এক বছরের গুড়া! সবাই সাইকেল নিয়ে উইক এন্ডে বের হয়। সাথে ব্যাকপ্যাক তো থাকেই।

সাইকেল শুধু চালানোতেই মজা নেই এটাতে ঐক্যের একটা বন্ধনও থাকে। আমি নিজে শখ করে একটা মাউন্টেন বাইক কিনেছি। ঝা চকচকে সেই বাইক চালানো পাহাড়ি রাস্তায় খুব কঠিন। একবার ধপাশ করে পরে দুইদিন হসপিটালে ছিলাম। হাতের ব্যাথা ছিলো প্রায় বছর খানেক।

বাংলাদেশে আপনার যারা এই বিপ্লবের সাথে জড়িত তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। সরকার, প্রশাসন, পরিকলনাবীদদের সময় এসেছে সাইক্লীষ্টদের আলাদা লেন করে দেবার। মানুষকে বুঝতে হবে যুগ এটা চাচ্ছে।

আপনাদের শুভ কামণা। অনেক গুরুত্বপুর্ণ এবং দরকারী পোষ্ট নিঃসন্দেহে। ভাল থাকবেন আপু হাসি

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
ভাবনা আমার শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে, মহুয়ার বনে মাতাল হাওয়া খেলে।
এক মুঠো রোদ আকাশ ভরা তারা, ভিজে মাটিতে জলের নকশা করা,
মনকে শুধু পাগল করে ফেলে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সাইকেল শুধু চালানোতেই মজা নেই এটাতে ঐক্যের একটা বন্ধনও থাকে।

একদম ঠিক কথা! চলুক

আপনার সাইকেল চালাবার আরও অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন প্লিজ। আর দেশে যখন আসবেন তখনও সাইকেল চালানো জারি রেখেন। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

পৃথ্বী এর ছবি

চমৎকার চলুক

আচ্ছা মেয়েদের জন্য আলাদা সাইকেলের কারণ কী? ছেলেদের সাইকেল আর মেয়েদের সাইকেলে পার্থক্য কী? মোটরসাইকেলে তো এরকম ভেদাভেদ দেখি না, বিদেশে প্রচন্ড ভারী হার্লি-ডেভিডসন মোটরসাইকেল মেয়েদের চালাতে দেখেছি, সেগুলো তো মেয়েদের জন্য আলাদাভাবে কাস্টমাইজড না।


Big Brother is watching you.

Goodreads shelf

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

মেয়েদের সাইকেলে সামনের bar-টা থাকে না, ওতে করে সিটের পেছনে পা ঘুরিয়ে সাইকেলে না চেপে সামনে দিয়েই চাপা যায়, কামিজ, স্কার্ট বা চাইলে শাড়ি পরেও সাইকেল সহজেই চালানো যাবে।

আমাদের দেশে এমন সাইকেল পাওয়া যায় না সহজে, অন্তত রাজশাহীতে খুব কম বিক্রি হয় দেখে আনেন না দোকানীরা। এছাড়াও মেয়েদের জন্যে আলাদা ধরনের seat, ও অন্যান্য টুকিটাকি অ্যাক্সেসরিজ আলাদা পাওয়া যায় শুনেছি, সেগুলোও মনে হয় বাইরে থেকে অর্ডার করে আনাতে হবে।

শাড়ি পরে সাইকেল চালাবার কথায় মনে পড়লো, বিডিসাইক্লিস্টদের এক কাপল তাদের বিবাহ অনুষ্ঠানে ভিন্নতা রেখেছিলেন সাইকেলে বরপক্ষ এসে। বরের সাথে ডাবল সিটের সাইকেল ছিলো, বউ অনুষ্ঠানের পরে সেই সাইকেল বরের সাথে চালিয়ে গিয়েছেন। ছবি আগেই দেখলেও সামনাসামনি এবারের রাইডে গিয়ে পরিচয় হলো। এই ডাবল সাইকেলটাও সেদিন রাইডে ছিলো।


আমি ছোট থাকতে আমার শখ ছিলো যে এরকম একটা কয়েকজন মিলে চালাবার সাইকেলে আমরা পুরা পরিবার চালিয়ে বেড়াতে যাবো। এরকম সাইকেল পাইনি তাই করাও হয়নি। কিছুদিন আগেই আমার এক বন্ধুর, বন্ধুর প্রোফাইলে এরকম একটা সাইকেল চালাবার ছবি দেখে তাকে বলছিলেম যে এই শখটা পূরণ করা হয়নি।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

হাসিব এর ছবি
  • গিয়ারওয়ালা সাইকেলে টাকাপয়সা খরচ অনর্থক মনে হয় আমার কাছে। পার্বত্য এলাকা হলে ঠিকাছে। নাহলে ঢাকা বা রাজশাহির মতো ফ্ল্যাট শহরে গিয়ার দিয়ে কী করে মানুষ?
  • শুধু বর্ডার না। মফস্বলে অনেক মেয়ে এঞ্জিও কাজ করে সাইকেল/মটরসাইকেল চালিয়ে। আপনি সম্ভবত দর্শনীয় বস্তু হয়েছেন একারণে যে আপনাকে দেখে এঞ্জিওতে কাজ করেন এরকম কেউ মনে হয়নি দর্শকদের।
  • বাংলাদেশে সাইকেল চালানোর অন্যতম অসুবিধা হলো সাইকেল চালিয়ে অফিসে/ইউনিতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেবার সুযোগ পরিস্থিতি না থাকা। এই বিষয়ে আন্দোলন করে কিছু করতে পারেন কিনা দেখেন। ন্যুনতম একটা রুম যেখানে কাপড় বদলে নেয়া যাবে এবং ওয়েট টাওয়েল দিয়ে ঘাড়মাথা মুছে নেয়া যাবে এবং যেটার মেঝেটা শুকনো এরকম কিছু হলেও হয়। তাও না হলে রুম থেকে কলিগদের বের করে দরজার আটকে কাজটা করতে হবে আরকি।
    আমি কি করি বলি। আমার অফিসে শাওয়ার নাই। এজন্য এক সেট অতিরিক্ত ঘষামাজা ড্রেস রাখি। একটা ছোট বহনযোগ্য ইস্ত্রীও আছে ব্যাগে করে আনা জামাকাপড় সিজিলমিছিল করার জন্য।
  • দেশে সাইকেল চালাতে নাকে মুখে প্রচুর ধুলো ও অন্যান্য দুষিত জিনিস যায় যেটা আপনি বাসে বা ট্যাক্সিতে যাতায়াত করলে যেত না। এই ইস্যুটার সমাধান কী মনে হয়? মেয়েদের যেহেতু চুল বড়ো সেহেতু চুল ঢাকার জন্যও কিছু ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এধরণের প্রাকটিকাল ইস্যুগুলো নিয়ে আরেকটা পোস্ট হতে পারে।
  • প্যাডেল চলুক।
যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

* বিডিসাইক্লিস্টস শুক্রবার করে বাইক ফ্রাইডে করে, ছুটির অন্যান্য দিনেও হয়। সেসব ইভেন্টে ঢাকার বাইরে যাওয়া হয় মাঝেমাঝেই। পাকা রাস্তা বাদ দিয়ে গ্রামের দিকে, মেঠোপথে সাইকেল চালাতে হলে গিয়ার-ওয়ালা সাইকেল আরামদায়ক হবে। আমি নিজেও কিনতে চাই অনেকটা এই কারণেই। আর হুট করে সেরকম সাইকেল চালাতে গিয়ে যাতে সমস্যা না হয়, গিয়ার চেঞ্জে অভ্যস্থ হয়ে থাকা, শেখা এইটার জন্যেও কিনতে চাই।

* লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার কথা শুধু উল্লেখ করেছি আমি। যার সাথে কথা হচ্ছিলো তিনি NGO-কর্মীদের সাইকেল চালাবার কথা বলেন নাই, সাধারণ গ্রাম ও শহর নিবাসী মেয়েদের কথা বলেছেন। সবাই নিজেদের ট্রান্সপোর্টের সুবিধার্থে সাইকেল চালানো শিখে এবং চালায় দেখছেন উনি, এটা উনি সেখানে চাকুরি পেয়ে যাবার আগে থেকেই প্রচলিত ছিলো জানিয়েছেন আমাকে।

একই ধরনের বর্ডার এলাকা সুনামগঞ্জের তাহেরপুরে কিন্তু সাইকেল পুরুষদেরকেও কম চালাতে দেখেছি আমি। কারণ অবশ্য ঐখানে পাহাড়ি পথে সাইকেল এর থেকে মটরসাইকেল আরামদায়ক বেশি। আপনি নিজেই দেখেছেন একটা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা হলো মটরসাইকেল, সেখানে অপরিচিত সাইকেল চালকের সাথেই বোরখা পরে কুলীন বধুও বাইকে উঠে পড়ছেন। কুয়াকাটাসহ আরও অনেক অঞ্চলে, যেখানে চড়াই-উৎরাই পথ বা নসিমন টাইপ গাড়ি চলারও পথ নাই, সেখানে এই মটরসাইকেল পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। এবং সেখানে ঘরের বউ কার সাথে মটরসাইকেলে চড়লো তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না স্রেফ পার্ট অফ এভরিডে লাইফ হয়ে গেছে এই পরিবহন ব্যবস্থা সেই জন্যে। এটা ঐখানে widely accepted সামাজিকভাবেই! কিন্তু আমি এখনো কোথাও পরিবহনে কোন মহিলাকে মটরসাইকেল চালক হিসেবে দেখি নাই। একজন মহিলা মটরসাইকেল চালক এই ব্যবসা করছেন দেখলে ঘুরে তাকাবেই প্রথমে মানুষ এ ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ। অথচ একজন মহিলার পেছনে মটরসাইকেলে আরেকজন মহিলা বসলে বরং ঘরের বধু সাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন বেশি।
জাপানে কোন কোন শহরে ডাবল সাইকেলের ট্রান্সপোর্ট ছিলো বাস-স্টপ টু ঘরের দরজা এমন, কেউ বাজার করে এনে সাইকেলে চেপে ঘরে পৌঁছে যেতেন। এমনটা শুনেছিলাম ২০ বছর আগে, এখনো আছে কিনা কোন শহরে জানি না।

রাজশাহী শহরের বাইরে যে সকল নারী NGO-কর্মীর কাজ থাকে, তাদের মটরসাইকেলে চড়া দেখে অভ্যস্থ হয়তো নগরবাসী, বাই-সাইকেলে চড়ে কাজে যাওয়া কোন মহিলাকে দেখে না। কোন নারী বাই-সাইকেল চালিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করলে আমার চোখে পড়তো, রাজশাহী ছোট শহর। কিছুদিন আগে অবরোধের মাঝে মাত্র একজনকে দেখেছি, ইদানীং আর দেখছি না।

আমাকে লক্ষ্য করার কারণ বিস্ময় এবং নিরীহ কৌতূহল মনে হয়েছে। পারলে আমাকে থামিয়ে দুই-চারটা গল্প করে উৎসাহ দেবেন, এবং পরে অন্যদের কাছে আমার গল্প করবেন, এমনটাই মনে হয়েছে আমার কাছে।

* বাসে বা ট্যাক্সিতে এসি না থাকলে, ধুলা-দূষণ-ময়লা চোখে-মুখে-চুলে যাবেই। রাজশাহী নগরীতে ধুলাটা সমস্যা, ঢাকায় দূষণ, আর রাস্তায় গু-পানি জমে যায় সামান্য বৃষ্টি হলেই, কাজেই মাড-গার্ড ছাড়া ট্রাউজারের তেরটা বাজবে।

ঢাকায় অনেক নারীকে দেখলাম চুল-মুখ ভালো করে স্কার্ফ-ওড়না-কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে নিয়ে তার উপরে হেলমেট পরে সাইকেল চালাতে। ছেলেদেরকে আলাদা প্রোটেকশন নিতে দেখিনি সান-ব্লক ক্রিম ছাড়া। তবে সকলেই সানগ্লাস ব্যবহার করেন। আমিও করি, দেশে সূর্যের প্রখরতা অনেক বেশি।

* প্যাডেল চলুক।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

স্যাম এর ছবি

দারুণ! প্যাডেল চলুক!

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

গুল্লি প্যাডেল চলুক! দেঁতো হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তারেক অণু এর ছবি

চলুক , এপ্রিলে সাইকেল নিয়ে ঘুইরব রাজশাহীতে, কী বুইলছ?

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

বেশ ভালো আইডিয়া! তবে এপ্রিলে ভয়াবহ তাপ থাকবে। সক্কাল সক্কাল বের হয়ে পড়া যায় একদিন, নতুন বাই-পাস সড়ক ধরে একটা ৩০ কিমির রাইড অ্যা্রেঞ্জ করে ফেলা যায়। আর না হলে বর্ষায় হলে ভালো হয় মনে হয়? রাজশাহীতে শহরে তো সেভাবে পানি জমে না, ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো, কাদা-পানির সমস্যাটা অতটা থাকবে না।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

এপ্রিলের কয় তারিখে? আগে থেকে সময়টা জানান। আমার মে তে যাবার প্ল্যান আছে, আগে থেকে জানালে এপ্রিলেও যাবার একটা সুযোগ করে নেয়ার চেষ্টা করতে পারি!!

____________________________

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

এহ! জঘন্য খরা যাচ্ছে। টুকটাক এদিক সেদিক কাজে বের হলেও, আমার মনে হয় না চাইলেও এগুলা এখন অ্যারেঞ্জ করা ঠিক হবে। কেবল চৈত্র মাসের কাঠফাটা গরম, ৩৯-৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড গেলো গত দুইদিন, ঘরের ভেতরেই গায়ে ফোসা পড়ে যাচ্ছে। এখনো বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের আম-লিচু পাকা গরম বাকি আছে। কিছুদিন সময় দিয়ে এগুলা করা ভালো হবে, না হলে সবাইকে হাসপাতালে দৌড়াতে হতে হবেনি। ইয়ে, মানে...

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি

[গিয়ারওলা হোক আর নাই হোক, সাইকেলে যেন ক্যারিয়ার থাকে...
আজকালকার পেছন উদোম সাইকেল গুলো দেখলে মেজজ খারাপ হয়ে যায়]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আমার সাইকেলে ক্যারিয়ার আছে, সামনে। ক্যারিয়ার খুবই কাজের জিনিস। দেঁতো হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আমারটার পেছনেও ক্যারিয়ার আছে তো! হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

তাইলে ঠিকাছে দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চালাবার সময়ে আমার নিজেকে পুরা পাখি পাখি লাগে! মনে হয় উড়ছিইইইইইইই!

আসলেই, সেইরকম অনুভূতি হয় আপু।
দেশে এসে মন ভরে সাইকেল চালাবো ভাবতেই খুশিতে দাঁতগুলো বের হয়ে যাচ্ছে। দেঁতো হাসি
আপনার সাইকেল কাহিনী পড়ে ভালো লাগলো।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

হে হে হে, রাজশাহীর দিকে এলে জানিয়েন আগেই। যে প্রচণ্ড গরম পড়েছে রে ভাই। তাও সকালের দিকে বেশ ভালো আবহাওয়া থাকে। একসাথে চালানো যাবে। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

এক লহমা এর ছবি

দেশ ছেড়ে এসে সাইকেল চালানোটা বাদ হয়ে গেছে - এইটা অনেক সময়ই মন খারাপ করে দ্যায়।
আপনাদের প্যাডেল চলুক পুরোদমে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

কেন কেন? যে দেশে গেছেন ঐ দেশে বুঝি সাইকেল নাই?

আপনার প্যাডেলও চলুক, আজ না হলে কালকে চালান। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ভাল লাগলো লেখাটা পড়ে।

আমিও একটা লিখেছিলাম। আপনার মতো না, আবজাব লেখা খাইছে

সেই কাল ও সাইকেল

দেখা হবে পথে। হ্যাপী সাইক্লিং হাসি

-অপ্রকৃতিস্থ

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

বাহ! আমার বেশ ভালো লাগলো তো আপনার লেখাটা পড়ে। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

রংতুলি এর ছবি

সাইকেল চালাতাম ছোটবেলায়। কিভাবে কার কাছ থেকে শিখেছিলাম মনে নেই। তবে এটা নিশ্চিত আমাকে কেউ ধরে ধরে শিখায়নি। তখনকার উঁচু উঁচু সাইকেলগুলো নিয়ে মামারা শহরে আসতো, কলেজে বা অন্য কোনো কাজে। তো ওগুলো কখনো বাসায় রাখলেই হয়! তখনো সিটে বসে প্যাডেলে পা দেয়ার মতো লম্বায় হয়ে উঠিনি, তো কি হয়েছে, অন্য কায়দায় চালাতাম, আমরা বলতাম হাফ প্যাডেল। দেঁতো হাসি ওভাবেই পাড়া চষে ফেলতাম। আমার দু'বছরের ছোট ভাইটার সাথে তাল মিলিয়ে অনেক কিছুই তখন করতে চাইতাম, করেওছি - ঘুড়ি ওড়ানো, সুতায় মাঞ্জা দেয়া, কাটাকাটির পর ঘুড়ি লুটের দৌড়... ক্রিকেট, ফুটবল, সাইকেল... কোনটা না!

আরেকটু বড় হয়ে যখন ঠিকঠাক চালাই, তখন সুযোগ পেলেই সাইকেল নিয়ে অনেকদূর চলে যেতাম। ততদিনে ভাই সাইকেল পেলেও, আমাকে কেউ কিনে দেয়নি। একদিন জিদ করে প্রায় বারো কিলোমিটার পেরিয়ে একদম নানু বাড়ি চলে গিয়েছিলাম, ভাইয়ের সাইকেলটা নিয়ে। আরেকদিন মামার সাইকেল নিয়ে বের হয়ে রিক্সার সাথে লাগিয়ে চেইনের মাথায় যে অংশটার সাথে প্যাডেল লাগানো থাকে তা পুরাটাই অদ্ভুত কায়দায় খুলে মাটিতে, অল্পের জন্যে পা-টা বাঁচিয়েছিলাম। শেষে একহাতে সাইকেল আরেক হাতে খুলে যাওয়া বাকি অংশটা নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। মন খারাপ

নিজের জীবনে সাইকেল সংক্রান্ত ঘটনাবলির তো আর অন্ত নাই। তাই পোষ্টটা পড়ার পর থেকেই সাইকেল সাইকেল মাথায় ঘুরছে... হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

হাফ প্যাডেল - হেহ হে হে ... ছোটবেলায় এই জিনিস দেখে ভাবতাম আমাকেও এইভাবে চালায়ে দেখতে হবে একদিন (বাবা-মার চোখ এড়িয়ে অবশ্যই)। ছোটবেলায় যে কাজগুলো আমরা নির্দ্বিধায় করে ফেলতাম, যে কথাগুলো অকপটে বলে ফেলতাম, সেগুলো আর করে ওঠা, বলে ওঠা হয় না, বড় হওয়ার পাশাপাশি অকারণ কিছু ভীত জন্মায়, হাফ প্যাডেল সাইকেল চালানো দেখলে এখন ভয় লাগে!

তবে এখন আসলে এই জিনিস চোখেই পড়ে কম। নিচু সাইকেল পাওয়া যায় এখন, ছোটবেলার সেই বড় কালো সাইকেলগুলো কমে গেছে রাস্তায়। সেদিন অনেকদিন পরে দেখলাম একটা পিচ্চি বড় একটা সাইকেলের চাকা কাঠি দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে নিয়ে যাচ্ছে... অনেকদিন পরে দেখলাম এই জিনিসও! এইটা আমার এখনো করে দেখার শখ আছে! দেঁতো হাসি

আর ঘুড়ির কথা শুনে মনে পড়লো, ঐটাও আমার করে দেখা হয়নি... মানে ঘুড়ি পেয়েছি সময়ে অসময়ে, কিন্তু সফলতার সাথে উড়িয়ে দেখা, বা ঘুড়ির লড়াই, এই দুইটাই এখনো করার সুযোগ হয়নি। বাকেট লিস্টে আছে। হাসি

আপনার সাইকেল চালাবার গল্পগুলো ভালো লেগেছে। এরকম অনেকের অভিজ্ঞতা উঠে আসলে বেশ চমৎকার একটা সংগ্রহ হয়, সাইকেল সমগ্র! কখনো সময় করে আরেকটু লিখেন।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।