তারার হাতছানি

নীল রোদ্দুর এর ছবি
লিখেছেন নীল রোদ্দুর [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১৫/০২/২০১০ - ২:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

০১

চারপাশে ঘন অরণ্য। এখান থেকে আড়াই মাইলের মধ্যে কোন মানুষের বসবাস নেই। একেবারেই নির্জন জায়গাটা। শব্দ বলতে পাখির কিচিরমিচির। আশে পাশের গাছে মাঝে মাঝে কিছু বানরের দেখা মেলে। কাঠবিড়ালির ও দেখা মিলেছে। মাত্র দুদিন হল এইখানে এসেছে অরিত্র। একটা ছোট টিলার উপর তার তাঁবুটা। একমাসের খোরাক নিয়েই এসেছে সাথে করে। আসার সময় পথে যে আদিবাসী বসতি চোখে পড়েছে, সেখান থেকেই খাবার পানি নিয়ে এসেছে। ফুরিয়ে গেলে আবার আনা যাবে। আড়াই মাইল, বেশী তো দূরে না। ধারে কাছেই নাকি একটা নদী আছে। ভীষন খরস্রোতা। আগামীকালই ঐটা দেখতে যাবে ঠিক করল সে। এখন বিকাল বেলা। সন্ধ্যা পর্যন্ত অরিত্র এখানে বসে থাকবে। তারপর আর তাবুর বাইরে থাকা ঠিক হবে না। বাঁশিটা বাজানোর জন্য ঠোঁটের কাছে তুলে নিল সে। একসময় সুরের মাঝে মগ্ন হয়ে গেল। এই মূহুর্তে তার বাশির সুর আর কিছু কিচিরমিচির ছাড়া কোন শব্দ নেই আসে পাশে। অবশ্য, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই কিচিরমিচির বেড়ে যাবে। এসবের জন্যই তো এখানে আসা। লোকালয়ের ব্যস্ততায় অস্থির হয়ে গেলে মাঝে মাঝেই এমন অজ্ঞাতবাস নেয় সে। এখানে কোন টেলিফোন নেটওয়ার্ক নেই। এইটা একদিক থেকে ভালো হয়েছে। না হয় মা দিনে কম করে হলেও দুইবার ফোন করত আর চলে আয়, চলে আয় বলে ঘ্যান ঘ্যান করত। অরিত্রের মায়ের ধারনা, তার ছেলেটা পাগল। তার বাবার চেয়েও বেশী পাগলাটে। সেও মাঝে মাঝে অদ্ভুত কিছু পাগলামি করে, কিন্তু ছেলেটার পাগলামি অতিরিক্ত। একটা বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে পাগলামি কিছুটা কমলেও কমতে পারে। মায়ের টান তো বোঝেই না, মায়ের অস্থিরতাও বোঝে না। বউ যদি একটু দেখেশুনে রাখতে পারে। কিন্তু ছেলেটাই তো বোঝে না সে কথা। সে যে কি করবে এই ছন্নছাড়া ছেলেকে নিয়ে। অরিত্র মনে মনে হাসে। বাঁশি থামিয়ে দিয়েছে। এখন পাখিদের ফেরার সময়। ঐযে, তাদের কুচকাওয়াজ শুরু হয়ে গেছে। ভালো লাগায় চখ বন্ধ করে রেখেছে সে। হঠাৎ চমকে গেলো অরিত্র।

চারপাশে তো কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু মনে হল যে, জংগলের মধ্যে কারোর পায়ের শব্দ! তাহলে কি ভুল শুনলো সে? খুব বেশী দূরে হলে তো তার শুনতে পাওয়ার কথা না। হলে কাছেই হবে। কিন্তু কোথায় কে? কেউ তো নেই। ঐ তো আবার শোনা গেল। পূর্ব দিকে না? অরিত্র ঊঠল, দেখা দরকার। কেউ যদি তার নির্জনতা ভাঙ্গায় তাহলে মনে মনে বিরক্তই হবে সে, কালই তাবু গুটিয়ে ঢাকায় ফিরে যাবে। আস্তে আস্তে টিলা থেকে নেমে এল। টিলার উপরে কেউ নেই। নাহ, এখনো কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সন্ধ্যাও তো নেমে আসছে।

০২

সকালে নদীটার খোঁজে গিয়েছিল। আসলেই ভীষন খরস্রোতা। এই নদীতে নামা ঠিক হবে না। নামলেও বেশী ভিতরের দিকে যাওয়া বিপদ জনক। ওইখানেই গোসল সেরে নিল। এসে থেকে এই সুযোগটা পায়নি সে। এখন স্বস্তি পাচ্ছে সে। বেশ খানিকটা ঘুরলো আজ। ক্লান্ত হয়ে বিকালের দিকে ফিরে এলো তাঁবুতে। কি করবে এখন? বই পড়বে নাকি গতকালের মত বাঁশি নিয়ে ধ্যানস্থ হয়ে যাবে। বাঁশিটাই নিল। হঠাৎ বাঁশি থামিয়ে দিল। আজো তার মনে হচ্ছে আশে পাশে কেউ আছে। ঐযে, গাছের আড়ালে একটু পোশাকের প্রান্ত দেখা যাচ্ছে না! আকাশি রঙের। তাড়াতাড়ি উঠেই দৌড়ে গেল সেদিকে। আরে, একটা মেয়েতো! দৌড়ে টিলার নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। নিচে নেমে দেখে কেউ নেই। আশ্চর্য! জলজ্যান্ত একটা মেয়ে এভাবে হাওয়া হয়ে গেল? বেশী তো দূরত্ব ছিল না। মাত্র কিছুক্ষণের জন্য না চোখের আড়াল হয়েছিল! আর সে এভাবে পালালোই বা কেন? না, ব্যাপারটা কি জানতে হবে। পালিয়ে গেলই বা কোথায়? কেমন রহস্য রহস্য লাগছে। সবচেয়ে বেশী অবাক লাগছে, এত দ্রুত চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে পালালো মেয়েটা। মুখটাই তো দেখতে পারলো না। কেবল পিঠ ছড়ানো রেশমী কাল চুল আর আকাশি রঙের স্কার্ট! এইখানে কাউকে এমন পোষাক পরা দেখতে পাওয়ার কথা না! কাল পুরোপুরি সতর্ক থাকতে হবে।

নিরাশ হয়ে তাবুতে ফিরে এল অরিত্র। কিন্তু উত্তেজনায় আর কিছুই করতে পারছে না সে। অনেক বই এনেছে আসার সময়। কাল রাতে যেটা পড়তে শুরু করেছিল, সেটাই হাতে নিল। কিছুই পড়া হচ্ছে না। মাথায় ঘুরছে, কি হল ব্যাপারটা? সে অশরীরী বিশ্বাস করে না, তারমত এতো লেখাপড়া জানা একটা আধুনিক ছেলের কাছে এটা কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর যদি করতও, তবু এমন সাঁঝের বেলায়? রাত হলে না হয় আলাদা কথা ছিল। আরেকটা জিনিশ খেয়াল করেছে সে, দুইদিন এ ঠিক একি সময়ে ঘটল ব্যাপারটা। পায়ের শব্দ। প্রথম দিনও নিশ্চয় এই মেয়েটাই ছিল। কে সে? কোথায় থাকে? এখানে কেন আসে? কিভাবে আসে? হঠাৎ করেই পায়ের শব্দটা পাওয়া যায়। এখানে আসতে হলেও তো কোন না কোন পথে তাকে আসতে হয়। তাহলে তো হঠাৎ করে পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়ার কথা না। তাকে জানতেই হবে ব্যাপারটা কি...

[চলবে]

February 14, 2010


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। রাতের বেলা বই পড়লেন কিভাবে? বাতি নিয়েছেন নিশ্চই? পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

তাবুর ভিতরে বাতি( কিংবা মোমবাতি, ঐটা আমার খুব প্রিয়) তো জ্বলতেই পারে... হাসি

পরের পর্বে আকর্ষন কমে গেলে জটিল হবে! --------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

তুলিরেখা এর ছবি

আমিও অপেক্ষায় আছি পরের পর্বের।
টর্চবাতি নিশ্চয় ছিলো সাথে। নয়তো আলোকোদ্গারী ছত্রাকের আলোয় পড়েছে। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নীল রোদ্দুর এর ছবি

হাসি
আপু, ছত্রাকের আলো, ভালো তো... মাথায় এবার ছত্রাক ব্যাপারটা ঢুকল... দেখা যাক, কবে এটা বের করতে পারি।। --------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

পরের পর্বের অপেক্ষায়। তবে বেশি পর্ব করবেন না, মনোযোগ ছুটে যায়; তাছাড়া, খুঁজে খুঁজে লেখা পাঠ করা কষ্টকর। মন খারাপ

==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ

নীল রোদ্দুর এর ছবি

ঠিক আছে... বেশী পর্ব করব না। আমি খুব বেশী বড়ো করতেও পারি না... মাথার কম ছোটে... হাসি
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

নেক্সট পর্ব কবে?

নীল রোদ্দুর এর ছবি

আসবে অচিরেই... যখনি লিখতে ইচ্ছা হবে, বসে যাবো... :)--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

স্পর্শ এর ছবি

পরের পর্ব তাড়াতাড়ি আসুক। চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নীল রোদ্দুর এর ছবি

হাসি
হাসি
হাসি
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পরের পর্বের অপেক্ষায়...

নাশতারান এর ছবি

আমিও অপেক্ষায় আছি।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।