তোমার এই দুনিয়ার ঝাপসা আলোয়
কিছু সন্ধ্যের গুড়ো হওয়া কাঁচের মতো
যদি উড়ে যেতে চাও তবে গা ভাসিয়ে দাও
দূরবীনে চোখ রাখবোনা
না না না না ...
এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার
তবু গল্প লিখছি বাঁচবার
আমি রাখতে চাই না আর তার
কোনো রাত দুপুরের আবদার
তাই চেষ্টা করছি বারবার
সাঁতরে পার খোঁজার
কখনো আকাশ বেয়ে চুপ করে
যদি নেমে আসে ভালবাসা খুব ভোরে
চোখ ভাঙ্গা ঘুমে তুমি খুঁজোনা আমায়
আশে পাশে আমি আর নেই
আমার জন্য আলো জ্বেলোনা কেউ
আমি মানুষের সমুদ্রে গুনেছি ঢেউ
এই স্টেশনের চত্বরে হারিয়ে গেছি
শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবো না না
না না ...........
তোমার রক্তে আছে স্বপ্ন যত
তারা ছুটছে রাত্রি দিন নিজের মতো
কখনো সময় পেলে একটু ভেবো
আঙ্গুলের ফাঁকে আমি কই ?
হিসেবের ভিড়ে আমি চাইনা ছুঁতে
যত শুকনো পেয়াজ-কলি ফ্রীজের শীতে
আমি ওবেলার ডালভাত ফুরিয়ে গেছি
গেলাসের জলে ভাসবো না না
না না না .....
এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার
তবু গল্প লিখছি বাঁচবার
আমি রাখতে চাই না আর তার
কোনো রাত দুপুরের আবদার
তাই চেষ্টা করছি বারবার
সাঁতরে পাড় খোঁজার......
ভালোবাসার শুনেছি অনেক রঙ থাকে, আমার তো কেবল মিঠে রোদ্দুর আর ঝড়ো বৃষ্টি ছাড়া কিছুই দেখা হল না। বর্ষা আমার প্রিয় ঋতূ বলেই কি মনের চিরকুটে কেবল ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টিরই স্বাক্ষর? সেইসব দার্শনিক প্রশ্ন ভরা চিরকূটগুলো কোথায় হারিয়ে যায়, আমি জানিনা।
গতবছর যখন আমার সুইডেনে চলে যাবার কথা ছিলো বায়োমেডিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে... আমার সেকাল জুড়ে ছিল স্বপ্ন ছোঁবার উত্তেজনা। সেই স্বপ্নের দরজা হঠাৎ যেদিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল... আমার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল ভালোবাসার সবটুকু মিঠে রোদ। আজ আমার গত বছরের ঘড়িটার দিকে তাকালে ভালোবাসার রঙটা বড় বেশী সুযোগ সন্ধানী মনে হয়। বুকফাঁটা কান্না ছিল, আমি পারলাম না, স্বপ্নের দরজা পেরুতে... এরপর বেঁচে থাকার অধিকারটুকু পেতেই রিতীমত হিমশিম খেয়েছি... স্বপ্নতো বিলাসিতা! আমার শরীরে অস্তিত্বে নাকি কষ্ট থিক থিক করতো... বসন্তটা হারিয়ে গেছে।
নিজের সমস্ত শক্তিটুকু দিয়ে বিপ্লবে বিদ্রোহের উত্তাল স্রোতের হাত ধরে স্বপ্নটাকে চিরতরে সমাহিত করার সামাজিক পথটা ভেঙ্গেচুরে দিয়ে যখন আবারো যখন পা বাড়াচ্ছি বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য, আমি একটুও আবেগ আপ্লুত হইনি, একটুও না। জলন্ত ঘর পিছনে ফেলে যে মানুষ জীবিত বের হয়ে আসে, তার তো আবেগে উচ্ছসিত হবার কথা না।
বাক্স পেটরায় লিষ্টি ধরে জামা জুতো পাসপোর্ট ভরে যখন ২৫শে সেপ্টেম্বর রাতে ট্যাক্সিতে উঠলাম, আমি অনুভূতিহীন, নির্বিকার। চেহারা জুড়ে স্তব্ধতা, চোখ তুলে একটি বার বাবার দিকে তাকাতেও পারিনি... আমার বাবা, ফিনিক্স পাখির জন্মদাতা, ফিনিক্সের কাছেও মূর্তিমান সততা, ভালোবাসা আর সাহসের রূপকথা, যে কোনদিন চায়নি, তার ফিনিক্স পাখিটা হারিয়ে যাক কোনদিন! সেই মুহুর্তটায় আমার চোখ ছলছল করে ওঠেনি একটিবারের জন্যও। ট্যাক্সির জানালা গলে শূণ্যে তাকিয়ে মনে মনে বাবাকে একটি কথা বলেছি বারবার... “যুদ্ধে যাচ্ছি বাবা, আশীর্বাদ কর, জয়ী না হয়ে আমি আর কোনদিন ফিরে আসবো না।”
শেষ টেলিফোন আলাপনের অপ্রান্তে ছিলো সঞ্জীবদা, বিদায় জানাতে... এরপর আমাকে আর কে কে খুঁজেছিল, জানিনা... আসবার দেড়দিন আগেই টেলিফোনটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ছেড়ে যাবার কষ্টটা অনুভবের দরজা খোলা রেখে নিজেকে দূর্বল হতে দিতে চাই না কোনভাবেই। মনের স্তব্ধতা কেটেছে, মেঘের রাজ্যে ভেসে যাওয়া প্লেনের জানালা দিয়ে দেখা ভোরের রংধনুতে... এরপরের অনুভূতিটুকু শুধু একটাই... আর কেউ পারবে না আমাকে থামাতে... পারবে না আমার আকাশকুসুম স্বপ্নগুলোর দিকে অট্টহাসি ছুড়ে দিতে... এখন আর আমি জীবন বহন করিনা, জীবন যাপন করি, আমার জীবন। কেবল রাস্তায় আনমনে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে তাদের কথা, যারা গত চারটি বছর আমার আবেগ, অসহায়ত্ব, স্বপ্ন, যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে নিয়ে আমাকে ঘিরে নরক গড়েছিল... মানুষগুলোকে আমি ভালোবাসতাম, ভালোবাসি। বুক ভরে নিশ্বাঃস নিতে গেলেও টের পাই, বুকের ভিতর চিনচিনে একটা ব্যথা, একধরণের ক্ষত অক্ষত রয়েছে আমার মনে। ঐ ক্ষতে আমি কোনদিন মলম লাগাবো না, ভুলে যাবোনা কোনদিন ঐ মুখগুলোও, কেবল ব্যথা সইবার দৃঢ়তা চাইবো প্রাণজুড়ে।
এইখানে পাহাড়, সবুজ, কংক্রীট, স্বপ্নের মধ্যিখানে সারাক্ষণ ব্যস্ত আমি। বৌদ্ধ মন্দির, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ক্লান্ত হয়ে একটু জিরানো, ইন্টারন্যাশনাল লাউঞ্জে সৃষ্টিতে মেতে ওঠা, পড়ালেখা আর গবেষণার দিন পেরুনো একটি একটি করে, কোনটাই আমার জীবনের খাতা থেকে বাদ পড়ে না এখন আর। সবজি কেটে চুলোয় বসিয়ে দিয়ে একঘন্টা পরে দেখেছি, একটুও সিদ্ধ হয়নি, তখন অবাক হয়ে দেখেছি, আমি চুলার সুইচটাই অন করিনি... তেমনি, ম্যাপ ছাড়া, দিকনির্দেশনা ছাড়া অচেনা সুওন শহরে একা একা হেঁটে হেঁটে পথ হারানোর অ্যাডভেঞ্চারেও মেতেছি। যারাই আমাকে চেনে এখানে, তারা বুঝে গেছে, মেয়েটা খামখেয়ালী সাহসী, তবে আমি জানি, মেয়েটা উত্তেজনাপ্রিয়, কারণ শেষটাই মেয়েটার মনে হয়, “জীবনটা কঠিন, তবে সুন্দর!”
লেখার ছিলো অনেক মজার ঘটনা, আঁকতে চাই উচ্ছল কতগুলো ছবি, এখন রাত্তির সাড়ে পাঁচটা, পড়ব বলে ফিরিনি ডর্মে, মনের মাঝে জমে থাকা কিছু অনুভূতির কাছে একান্ত প্রার্থণা শেষে এবেলায় এখানেই নিচ্ছি আমি ছুটি। বাকি আছে শুধু একটি কথা, পরাজিত হবার জন্য আমি নিজেকে গড়িনি, পরাজয় যেখানে এসেছে, আমি সেইখানে থামিনি, দুঃসময়ের চোখে চোখ রেখে বলেছি, তোমাকে চলে যেতেই হবে আমার জীবন থেকে, আশ্রয় দেইনি তোমাকে আমার ঘরে। প্রিয় গায়ক ছোট ভাই [url=]চমক হাসানের গাওয়া গানের একটি কথা[/url], “যা হয় হোক তবু, করিডোর নির্ভয়!”এই আমার দৃপ্ত প্রত্যয়!
মন্তব্য
সুন্দর লেখা।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ধন্যবাদ ভাইয়া
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
কী দুঃখ পেয়েছেন, কে দুঃখ দিয়েছে জানি না। এটুকু জানি, দুঃখ যতই তীব্র হোক না কেন, তাকে ভুলিয়ে দেবার মত সুখ হাতের কাছেই আছে। হাত বাড়িয়েই দেখুন না
লেখা ভাল লেগেছে
সব কিছু ভুলতে হয়না আপি, তাহলে অতীত থেকে শেখা যায় না কিছুই
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
* ২৫শে আগস্ট
চমকের গাওয়া গানের লিঙ্ক, http://www.youtube.com/watch?v=UGQUyd4a6l0&feature=share
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
জীবনে হতে পারে জাতীয় শুভ কামনা।
ধন্যবাদ আপনাকে
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
আপনার এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়কে স্বাগত জানাই।
সাথে চলুন না... পথের শাখা প্রশাখা বেশী না।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
সুন্দর। পোয়েটিক।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
’প্রত্যয়’ অটুট থাকুক প্রত্যয়ী মনে! অনেক শুভকামনা
অটুট থাকুক...
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
আপনার লেখার শিরোনাম দেখে কিছুটা দ্বিধার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। আমার প্যাটেন্ট করা লাইনটা কী তবে মৌলিক নয়? অজান্তেই কি আমি অন্যকারো লাইন কোট করলাম? তা যদি হয়েও থাকে, এ নিয়ে আমি চিন্তিত। অন্য সবকিছুর মত ক্রিয়েটিভিটিরও একটা লিমিট আছে, মানুষ সেই লিমিট পার হতে পারেনা। ব্যক্তিভেদে লিমিটটার হেরফের হয়; পার্থক্য বলতে এটুকুই। তাই আমি খুব মনোযোগ দিয়ে লেখার লাইনগুলো বিশ্লেষণ করছিলাম, কারণ আমি বুঝতে চাচ্ছিলাম আমি আসলে কোন্ লেখার সাথে ওভারল্যাপ করলাম। কিন্তু পাচ্ছিলাম না, এবং শেষ লাইনে এসে পেলাম যখন বুঝলাম আপনি লাইনটি নিয়েছেন চমক ভাইয়ের গানটা থেকে। এই লাইনটায় এসে আমি পুরো লেখাটাকে উল্টো দিক থেকে পড়বার চেষ্টা করলাম এবং বুঝলাম আমি হয়ত অজান্তেই মানুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিলাম, যে মানুষগুলো গানের মাঝে প্রত্যয় খুঁজে। আমি গান লিখছি অনেকদিন হল, কিন্তু এধরনের অদৃশ্য যোগাযোগের অভিজ্ঞতা প্রথম হল। ব্যক্তিজীবনে হতাশা আমারও প্রচুর, তবু অনুভব করছি আমার লেখার একটি লাইন, নিদেনপক্ষে একটি শব্দকে কেউ না কেউ ব্যবহার করেছে হতাশা দূরীকারক হিসেবে। আপনি কে জানিনা, জানতে চাইছিও না জোর দিয়ে, তবু আপনার লেখাটা পড়ে সম্মানিত বোধ করছি।।।
হিমালয়৭৭৭
আমি আপনাকে মন্তব্যের ঘরে পেয়ে গর্ব বোধ করছি... চমকের গানটা শুনেছি আগেই, কাল রাতে মিউজিক ভিডিওটা দেখলাম... সেখানেই খেয়াল করেছি আপনার নামটাও। চমকের হাসি দেখলেই তো আমার মন ভালো হয়ে যায়... আর আপনাকে আমার মোটেও হতাশ মানুষ মনে হয়নি, হতাশ হলে এতো দারুন গান লিখলেন কি করে?
অফ দ্য রেকর্ড, আমি কিন্তু হতাশ নই, হতাশ হলে তো থেমে যেতাম
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
ভালো হয়েছে আপু.........চমক ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেল। এক মাসও হয়নি ভাইয়া পিএইচডি করতে গেছেন...সেকি কষ্ট বেচারার দেশ ছেড়ে যেতে.........
হম আপু, দেশ ছেড়ে প্রথমবার যেতে সবারই কষ্ট হয়... তবে মনটা তো ছেড়ে যায় না।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
দারুন হয়েছে। খাসা লেখা।
ধন্যবাদ প্রদীপ্ত!
প্রদীপ্ত ভাষ্কর বিশ্বাস?
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
মন ছুঁয়ে গেলো লেখাটা।
ধারনা করছি আপনার গভীর কোন দূঃখবোধের কথা। সেই সঙ্গে এও বেশ বুঝে গেছি থেমে যাওয়ার মানুষ আপনি নন; আপনার সৃষ্টিই হয়েছে সাবলীলভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে। এবং আপনি যাচ্ছেনও আপনার সেই স্বপ্নে পথে এগিয়ে...।
নিজে যেহেতু পারিনা, কাউকে যখন দেখি স্বপ্নের দিকে তিল তিল করে এগোতে, বাঁধাগূলো পায়ে দলে এগোতে...খুব ভালো লাগে!
ভালো থাকবেন। ভালো থাকুক আপনার স্বপ্নরা, সফল হোক আপনার দৃপ্ত প্রত্যয়ে পথচলা।
নিজেও পারেন, পারবেন... হাল ছেড়ে না দিলেই ... সেই শুভকামনা রইল।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
এ যেন আমার জীবনের কথা............ভাল লাগলো খুব......
ভাল থাকবেন
...কিশোর
আপনিও ভাল থাকবেন।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
ভালেআ লাগলেআ খুব...
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
নতুন মন্তব্য করুন