অন্তর্মূখীদের সাথে কিছুটা সময়

নীল রোদ্দুর এর ছবি
লিখেছেন নীল রোদ্দুর [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১৬/০৩/২০১২ - ৭:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পড়া এবং লেখা, এই ছাড়া আমার কোন কাজ নেই এই দুনিয়ায়। যারা আমাকে খুব বইপোকা ধরনের মানুষ ভাবছেন, তাদের আমি নিশ্চিত করেই বলতে চাই, আসলেই আমি তাই। খুব অন্তর্মূখী একজন মানুষ। আমার জীবনটাও বইয়ের পাতার মত। আলতো চোখে তাকালে মনে হলে, কাগজের উপর কিছু ছাপানো অক্ষরের মত নিস্তরঙ্গ জীবন, বইটা হাতে নিয়ে পড়তে বসলে তখন মনে হবে, এই পাত নিস্তরঙ্গ জীবনের মাঝে কত অবাক করা ব্যাপার লুকিয়ে আছে। আমায় জিজ্ঞেস করলে বলব, জীবনটা সুন্দর! সারাটা দিন আমি দুটো জিনিসের সাথে সম্পৃক্ত থাকি, বই আর ইন্টারনেট। সাথে কফির কাপ। আমার মাথায় থাকে কয়েকটি প্রশ্ন, সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করাই আমার কাজ। এভাবে সারাটাদিন চলে যায়, জানালার পাশে সকাল-বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে, আমার কারোর সাথে কথা হয় না। যখন মাথাটা কাজ করেনা, কফির কাপ হাতে চলে যাই ল্যাবের পাশের বারান্দায়। খোলা আকাশ, বাতাস, রোদ্দুর, অথবা নীচে জলের মৃদু তরঙ্গ দারুণ লাগে। আমি সূর্যের আলোর দিকে তাকিয়ে দেখি, কোনদিনই এই আলোটা বিবর্ণ হয়, পুরোনো হয় না। প্রতিদিন নতুন করে এসে হাজির হয়। আমার ছায়ার দিকে তাকিয়ে দেখি, ছায়ায় জীবনে কি নতুনত্ব এসেছে একটু? সারাটাক্ষণ এভাবে নিজের সাথে, বই এর সাথে কথা বলে দিন কেটে যায়। হডজকিন-হাক্সলির মডেল নিয়ে পড়ছি, কোন ফাঁকে হয়ত তাদের নোবেল লেকচারের ফাইলটা খুলে ফেলেছি। চোখ মেলে মডেলের পিছনের মানুষটাকে দেখার চেষ্টা করছি, দেখছি তাদের শ্রমটাকে। এমন একটা মানুষ, যার সামাজিক যোগাযোগ বলতে দুয়েকটা স্ট্যাটাস, ব্লগে বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি, ক্লাস আর ল্যাবে আসা যাওয়ার পথে কয়েকজন সহপাঠীর সাথে কুশল বিনিময়ে সীমাবদ্ধ, তাকে কি বলবেন? অন্তর্মূখী নাকি অসামাজিক?

না, আমি আমার দিবারাত্রির কাব্য শোনাতে লিখতে বসিনি আজ। বসেছি অন্তর্মূখী মানুষদের নিয়ে কিছু বলতে। অন্তর্মূখী মানুষদের নিয়ে কিছু বলার তাগাদাটা এসেছে আমার সুসান কেইনের সেই কথাটি অনুসরণ করে, “মাঝে মাঝে তোমার থলে খুলে পৃথিবীকে দেখাও কি আছে থলের ভিতরে। এই পৃথিবীর তোমাকে দরকার আছে”। হ্যা, আমি জানি, এই পৃথিবীর আমাকে দরকার আছে। আমার মত মানুষদেরকে দরকার আছে এই পৃথিবীর। কেন দরকার আছে? কিভাবে দরকার আছে? শুনতে কি চান সেই গল্প?

পড়া এবং লেখা, এই ছাড়া আমার কোন কাজ নেই এই দুনিয়ায়। যারা আমাকে খুব বইপোকা ধরনের মানুষ ভাবছেন, তাদের আমি নিশ্চিত করেই বলতে চাই, আসলেই আমি তাই। খুব অন্তর্মূখী একজন মানুষ। আমার জীবনটাও বইয়ের পাতার মত। আলতো চোখে তাকালে মনে হলে, কাগজের উপর কিছু ছাপানো অক্ষরের মত নিস্তরঙ্গ জীবন, বইটা হাতে নিয়ে পড়তে বসলে তখন মনে হবে, এই পাত নিস্তরঙ্গ জীবনের মাঝে কত অবাক করা ব্যাপার লুকিয়ে আছে। আমায় জিজ্ঞেস করলে বলব, জীবনটা সুন্দর! সারাটা দিন আমি দুটো জিনিসের সাথে সম্পৃক্ত থাকি, বই আর ইন্টারনেট। সাথে কফির কাপ। আমার মাথায় থাকে কয়েকটি প্রশ্ন, সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করাই আমার কাজ। এভাবে সারাটাদিন চলে যায়, জানালার পাশে সকাল-বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে, আমার কারোর সাথে কথা হয় না। যখন মাথাটা কাজ করেনা, কফির কাপ হাতে চলে যাই ল্যাবের পাশের বারান্দায়। খোলা আকাশ, বাতাস, রোদ্দুর, অথবা নীচে জলের মৃদু তরঙ্গ দারুণ লাগে। আমি সূর্যের আলোর দিকে তাকিয়ে দেখি, কোনদিনই এই আলোটা বিবর্ণ হয়, পুরোনো হয় না। প্রতিদিন নতুন করে এসে হাজির হয়। আমার ছায়ার দিকে তাকিয়ে দেখি, ছায়ায় জীবনে কি নতুনত্ব এসেছে একটু? সারাটাক্ষণ এভাবে নিজের সাথে, বই এর সাথে কথা বলে দিন কেটে যায়। হডজকিন-হাক্সলির মডেল নিয়ে পড়ছি, কোন ফাঁকে হয়ত তাদের নোবেল লেকচারের ফাইলটা খুলে ফেলেছি। চোখ মেলে মডেলের পিছনের মানুষটাকে দেখার চেষ্টা করছি, দেখছি তাদের শ্রমটাকে। এমন একটা মানুষ, যার সামাজিক যোগাযোগ বলতে দুয়েকটা স্ট্যাটাস, ব্লগে বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি, ক্লাস আর ল্যাবে আসা যাওয়ার পথে কয়েকজন সহপাঠীর সাথে কুশল বিনিময়ে সীমাবদ্ধ, তাকে কি বলবেন? অন্তর্মূখী নাকি অসামাজিক?

না, আমি আমার দিবারাত্রির কাব্য শোনাতে লিখতে বসিনি আজ। বসেছি অন্তর্মূখী মানুষদের নিয়ে কিছু বলতে। অন্তর্মূখী মানুষদের নিয়ে কিছু বলার তাগাদাটা এসেছে আমার সুসান কেইনের সেই কথাটি অনুসরণ করে, “মাঝে মাঝে তোমার থলে খুলে পৃথিবীকে দেখাও কি আছে থলের ভিতরে। এই পৃথিবীর তোমাকে দরকার আছে”। হ্যা, আমি জানি, এই পৃথিবীর আমাকে দরকার আছে। আমার মত মানুষদেরকে দরকার আছে এই পৃথিবীর। কেন দরকার আছে? কিভাবে দরকার আছে? শুনতে কি চান সেই গল্প?

আমাদের শিক্ষ্যাব্যবস্থা, আমাদের সমাজ, আমাদের কর্মক্ষেত্র সবকিছুই এমন ভাবে গড়ে তোলা, যেখানে বহির্মূখী স্বভাবের মানুষদের জয়জয়াকার। স্কুলের ক্লাসে সেই শিক্ষার্থীটিই শিক্ষকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে যে চটপটে, মিশুক, চঞ্চল, প্রাণবন্ত। শিক্ষকের কথার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে পরের কথাটি বলতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল, যে ছাত্রটি শিক্ষকের কথার সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলতে পারে না, সে কি প্রাণহীন, নাকি কম বুদ্ধিসম্পন্ন? তার প্রতি বিমুখ কেন হবে শিক্ষক? কেন খাতায় নম্বর দিতে গিয়ে প্রিয় ছাত্রটিকে কিঞ্চিত বেশী আর শান্ত চুপচাপ ছাত্রটি কিঞ্চিত কম দেবেন শিক্ষক? এইসব কেনর উত্তর সেই শিক্ষকের কাছে নেই, তিনি নিজে যখন ছাত্র ছিল, তখন তার শিক্ষকের মাঝে দেখেছে এমনটাই, এটাই দেখেছে তার সহকর্মীদের মাঝেও। এর চেয়ে ভিন্ন কিছু হতে পারে, তা মনেই করেন না তারা সাধারণত। মাঝে মাঝে দুয়েকবার চমকে ওঠেন শান্ত চুপচাপ শিক্ষার্থীটির খাতা দেখে। আমি যখন কলেজে পড়তাম, তখন একটি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পর ঐ বিষয়ের শিক্ষক আমাকে আমার খাতা হাতে দিয়ে বলেছিলেন, তুমি কি অবাক হয়েছ তোমার নম্বর দেখে? আমি শান্তভাবেই বলেছিলাম স্যারকে, না। এই ছোট্ট না শব্দটিতে অবাক হয়েছিলেন আমার শিক্ষক, কারণ তিনি ধারনাই করেননি, ক্লাসের এতো চটপটে শিক্ষার্থীদের ভীড়ে আমার খাতায় দিতে হবে তাকে সর্বোচ্চ নম্বর। উনার শিক্ষার্থীদের মেধা সম্পর্কে পোষণ করা ধারণা কি একটু দুলে উঠেছিল সেদিন? চটপটে মানেই মেধায় সবাইকে ছাড়িয়ে নয়, শান্ত চুপচাপ মানেই মেধায় কোনক্রমেই পিছিয়ে নয়।

শিক্ষা সমাপ্ত করে চাকুরীর জন্য মৌখিক পরীক্ষা দিতে যান। আজকালকার মামা চাচা বাদ দিয়ে যদি নিরপেক্ষভাবেও চাকুরীতে নিয়োগ হয়, তবুও অ্যাকাডেমিক্যালি মেধাবী ছাত্রটির চেয়ে পোষাক এবং কথায় কেতাদুরস্ত ছাত্রটির চাকরী হবার সম্ভাবনায় বেশী। কারণ সেই তথাকথিত ধারণা, কেতাদুরস্ত, চটপটে মানেই প্রতিভাবান। এটা কেবল বাংলাদেশের চিত্র নয়, সমগ্র বিশ্বেই এই চিত্র দেখা যায়। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে হলে আপনাকে বাকপটু হতে হবে। আমার এক প্রাক্তন বস একবার আমাকে বলেছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ প্রেজেন্টেবল গেট আপে আসতে হয়। আমার জানা ছিল না, আমার কর্মক্ষেত্রে আমাকে আলাদা করে প্রেজেন্টেবল কেন হতে হবে? আর কিভাবেই বা তা হওয়া যায়? সেখানে তো মূল্যায়ন হওয়া উচিত আমার কাজের, পোষাক কিংবা চেহারার না। এক সুন্দরী বান্ধবী একদিন অহংকার করেই বলেছিল, একই চাকরীর জন্য তুমি আমি দুজনেই যদি যাই, আর আমি যদি তোমার চেয়ে অ্যাকাডেমিকালি খুব একটা পিছিয়ে না থাকি, তাহলে চাকরী তোমার হবার আগে আমার হবে। কোনদিন আমি আর সেই সুন্দরী বান্ধবীটির একই জায়গায় ইন্টারভিউ দিতে যাইনি, কিন্তু তার কথা কিন্তু নেহায়েত মিথ্যা নয়। সেই বান্ধবী নিজেকে প্রেজেন্টেবল করে উপস্থাপন করতে জানত। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় তাকে ধারণা পোষণ করতে শিখিয়েছে।

সারা পৃথিবীতেই মিডিয়াজগত মাত করে রেখেছে এই উপস্থাপন যোগ্য আউটলুকটাই। খবরের কাগজে অনেক পাতা থাকলেও অনেকেই কেবল ঐশ্বরিয়া রাইয়ের খবর জানতে সিনেমার পাতাটাই সবার আগে খুলে বসেন। বাজারে সেই ডিজাইনের পোশাকটাই বেশী চলে, যেটির বিজ্ঞাপনে ছিল কোন জনপ্রিয় মডেল তারকা। তুলনাটা নিতান্তই অস্বাভাবিক শোনাবে, তাও বলি, অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের জগতে তোললপাড় ঘটানো আবিষ্কার পালসার, এর আবিষ্করক ছিল একটি মেয়ে, কজন জানে তার নাম?

আমাদের সমগ্র সমাজটাই এমনি করে চলছে, যেখানে অন্তর্মূখী মানুষদের জায়গা নেই প্রায় বলতে গেলে। যে শিশুটি চুপচাপ, শিশুটির বাবা-মাও তাকে হীন বুদ্ধির শিশু বলে ধারণা করে, সেই ভাবেই তার সাথে আচরণ করে। বন্ধুদের দলে জায়গা হয়না তার। অজস্র সমালোচনা কথা কানে আসে তার ক্রমাগত, অসামাজিক, অসংস্কৃত ইত্যাদি। অনেক শিশু এইসব আচরণ থেকে ক্রমাগত হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে। ভাবতে থাকে, এই সমাজে বসবাসের যোগ্য নই সে, সে গুরুত্বপূর্ণ নয় চারপাশের কোন মানুষের জন্য। নিজেকে ক্রমাগত গুটিয়ে নিতে নিয়ে একদিন হারিয়ে যায় সে সময়ের খাতা থেকে। উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকে কেবল তাদেরই নাম, যারা পেরেছিল বহির্মূখী জীবনযাপন করতে। অথবা শিশুটি নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলে যা সে নয়, সেইরকম হবার চেষ্টা করে করে। কেউ তাকে বলে না, পৃথিবীতে তোমার জায়গাটি কেবল তোমারই, অনন্য। বরং ক্রমাগত বলতে থাকে, তোমাকে তো আর সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখতে হবে, তোমার ভাইটি যদি পারে, তুমি কেন পারো না? চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে থাকে, বহির্মুখী, তথাকথিত সপ্রতিভ, কেতাদুরস্ত হতে না পারাটা তার অযোগ্যতা।

স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শব্দ খুব পরিচিত, গ্রুপ স্ট্রাডিজ, গ্রুপ ওয়ার্ক। ছোট বেলা থেকে এমন ভাবে শেখানো হয় শিশুদের, গ্রুপ ওয়ার্ক করতে জানাটা অত্যাবশ্যক কিছু। ফলশ্রুতিতে অবহেলার শিকার হয় সেই সব শিশুরা, যারা চটপটিয়ে কথা বলতে পারেনা, দলের সাথে মিশে যেতে পারে না। কিন্তু সত্যটা হল, গ্রুপ স্টাডিজ ছাড়াও শিক্ষা অর্জন সম্ভব, অনেক কঠিন কোন কাজ করে ফেলা সম্ভব, অনেক সাধারণ কিছু কাজ, তাও করে ফেলা সম্ভব। যে শিশুটি অন্তর্মূখী সে তার মত করে তার সমস্যা সমাধান, তার পড়ালেখা করতে জানে। তাকে সেই সুযোগটুকু দিতে হবে আমাদের। ক্লাসের ফার্স্ট মানেই যেমন সবজান্তা, সবচেয়ে মেধাবী নয়, অন্তর্মূখী মানেই হীনবুদ্ধি বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নয়।

ছোটবেলায় আমার মাও আমাকে আর দশটা বাচ্চার মত বাইরে খেলতে পাঠাতো। খেলার দলে জায়গা না পেতে পেতে আমি হয়ে উঠেছি দলগত খেলার প্রতি অনাগ্রহী। একা একা ঘাসফুল, পাখি, আকাশ, প্রকৃতি দেখে কেটেছে আমার বাল্যকাল। একটু বড় হলে নেশা জেগেছে বইয়ের প্রতি। ডুব দিয়েছি বইয়ের পাতায়। স্কুলে সবাই মিলে যখন আড্ডা দিতো, সেখানে আমার জায়গা হত না, তাদের ধারনা ছিল আমি বুঝব না তাদের কথা। কথাটা হয়ত সত্য ছিল, কিন্তু এই সামাজিক প্রক্রিয়াটা বুঝিয়ে দেবার মানসিকতাও ছিল না আমার চারপাশের কারোর। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল, এসবে আমি যে হারিয়ে গিয়েছি, তা নয় মোটেও। আমার আমিকে যেভাবে পেয়েছি, অনেকেই পায়না সেভাবে। আমার বন্ধুরা যখন আক্ষরিক অর্থেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে, সেই সময়ে আমি কথা বলেছি সদ্য পড়া কোন বইয়ের চরিত্রের সাথে। বই পাল্টেছে, আমার কথা বলার মানুষ গুলোও পাল্টেছে। একটা সময় এসেছে, যখন আমি আর উপন্যাসের চরিত্রের সাথে আর কথা বলিনি, কথা বলেছি নিজের সাথে অথবা বইটির লেখকের সাথে, ছাপার অক্ষরে লেখা শব্দগুলো ছাপিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেছি লেখকের মানসিকতা, লেখকের চিন্তাটা। একেকটা সময় এমনও হয়েছে, একজন লেখকের হাতে পাওয়া সম্ভব সব বই আমি পড়েছি লেখকের জীবনদর্শন বোঝার জন্য। আমার পাশে বসা মেয়েটির সাথে আমার আড্ডা হয়নি, আমি দূর থেকে খেয়াল করেছি তাকে, কিভাবে সে হাসে, কেন হাসে, কি তার ভালো লাগে, আমি তার চেহারার অজস্র প্রকাশভঙ্গি পড়তাম। আমার মনে হত, আমি তার মনের সাথে কথা বলছি। এমন নিঃশব্দ কথা আমি বলেছি বহুজনের সাথে। আমার সামাজিকতা হয়েছে এমন ভাবে। এই সামাজিকতার ধারণাটা বহির্মূখী মানুষগুলোর কাছে অজানা। আমার মত মানুষদের বন্ধুত্ব হয়, তারা ভালোবাসতে জানে। অন্তর্মূখীদের বন্ধু সংখ্যাটা হয়ত অনেক থাকে না, তবে সাধারণত গভীর থাকে। আমার বন্ধুদের কাছে লেখা চিঠির উত্তরে প্রায় একটা কথা শুনতে পাই, এতো কিছু বুঝিস কি করে? নিশব্দে একটা সমস্যার বিভিন্ন কোণ থেকে কিভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়, তা অন্তর্মূখীরা কিছুটা হলেও জানে, কথা বলার চেয়ে পর্যবেক্ষণটাই যে তারা বেশী করে। আমার বন্ধুরা, যারা তাদের বিপদের দিনে ফোনটা আমাকেই করে, কিভাবে যেন তাদের সেই বিশ্বাসটা তৈরী হয়েছে, ঐ মুহুর্তটায় আমি দাড়াবো তাদের আত্মার কাছাকছি। ঠিক একইরকম বোধ কাজ করে আমার মধ্যেও, একটা অদৃশ্য গভীর বন্ধন যেন কাজ করে।

সুসান কেইন এই কথাটাই বলতে চেয়েছেন তার বক্তব্যে। বহির্মূখী মানুষদের নিয়ে যে পৃথিবীটা সেই পৃথিবী থেকে চোখ সরিয়ে অন্তর্মূখী মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন। সেই মানুষগুলো আপনাদের মত সামাজিক নয়, কেতা দুরস্ত নয়, তাদের হয়ত সেই জ্ঞানের অভাব আছে, কিভাবে একটা অনুষ্ঠানে হাসতে হবে, কোন পোষাকে কোথায় যেতে হবে, কিন্তু অন্তর্মূখী মানুষদের মনের মাঝে অসংখ্য চিন্তা প্রতিনিয়ত খেলা করে। চুপ করে থেকে থেকে তারা আর কিছু জানুক চিন্তা করতে জানে। তারা চিন্তা করে, একজন সুবক্তা যতখানি বলে, তারচেয়ে অনেক বেশী চিন্তা করে অন্তর্মূখী মানুষটি। তাদের মস্তিষ্কে যত চিন্তা, যত সমাধান খেলা করে সেসবের দরকার আছে এই পৃথিবীতে। সেসব না হলে হয়ত আজ আমাদের সভ্যতা এসে দাড়াতো না এতোদূর। যে মানুষগুলোকে আজ আমরা ইতিহাসের পাতায় দেখি, যারা বদলে দিয়েছে পৃথিবীটাকে, যাদের কাজের ফলাফল ভোগ করছে এই সভ্যতা, তাদের জীবনের দিকে কি একটু চোখ বুলিয়ে আসা যায়? এই সভ্যতাকে বদলে দেবার জন্য তাদের ভাবতে হয়েছে, নিভৃতে নিঃশব্দে কাটাতে হয়েছে অনেকটা সময়। তাদের কাছ থেকে এই নিঃশব্দ সাধনাটা শেখার আছে আমাদের। এরা সবাই সামাজিক ছিল না। তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল নিভৃতচারী। বাকিরা জানতো, কিভাবে সামাজিকতার মাঝে থেকে নিজের ভাবনার জন্য সময়টি বের করে নিতে হবে। এই কাজটি করতে অনেক সময়ই ভুলে যায় বহির্মূখী মানুষেরা, যারা কোন কিছু সামনে আসা মাত্রই উত্তেজিত হয়ে পড়ে, সপ্রতিভভাবে অনেক কিছু বলে ফেলে, করে ফেলে, গভীরে গিয়ে চিন্তা না করেই। তাদেরকেও বুঝতে হবে, কর্মের জন্য খানিকটা ভাবনাও চাই।

না, আমি বহির্মূখী মানুষদের মোটেও অনুৎসাহিত করতে লিখিনি এই লেখা। লিখেছি আমাদের এই একটি সবুজ পৃথিবীতে অন্তর্মূখীতাকে তার সহজ স্বাভাবিক স্থানটুকু দেয়ার অনুরোধ জানাতে। একই রকমের সামাজিক আচরণ, একই রকম সুযোগ, একই গুরুত্ব নিয়ে জীবনযাপন করবে বহির্মূখী অন্তর্মূখী সব ধরণের মানুষ, এমন একটি সমাজের চিন্তা মনের মধ্যে জাগাতে। যে মানুষ শান্ত, চুপচাপ, অন্তর্মূখী, তাকে তার মত করে বড় হতে অনুপ্রাণিত করুন, তার মত করে জীবনযাপন করতে অনুপ্রাণিত করুন, তাকে সমাজ থেকে বাইরে সরিয়ে নয়। আসুন সেই মানুষটাকে অনুভব করতে দেই, সে আমাদেরই একজন। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের সমস্ত যোগ্যতা নিয়ে সে আমাদের মাঝে বসবাস করবে, সেই উপযুক্ত বাসস্থানটুকু, সমাজটুকু আমরা তাকে দেয়ার চেষ্টা করি। সে হয়ত অনেক কথা বলতে পছন্দ করে না, কিন্তু কিছু কথা বলতে অবশ্যই পছন্দ করে। সে হয়ত এগিয়ে গিয়ে কারোর সাথে পরিচিত হতে পারে না, কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে তার সাথে পরিচিত হলে খুশি হয়। সে হয়ত অনেক কথার উত্তর খুঁজে পায় না, কিন্তু সে কারণে অন্যরা তাকে এড়িয়ে গেলে কষ্টও পায় সে। আপনার যে আপনজনটি, বন্ধুটি, সহপাঠিটি এমন অন্তর্মূখী স্বভাবের মানুষ, সেই মানুষটিকে তার মত করে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিন, তাকে এড়িয়ে না গিয়ে, তার সাথে থাকুন, তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। বহির্মূখী মানুষদের জন্য উপযুক্ত এই সমাজ ব্যবস্থায় তাকে তার অবস্থানটুকু নিশ্চিত করতে পারলে একদিন এই সমাজটা পাল্টাবে। নাট্যমঞ্চে এখন আমরা যে নাটকটা দেখি, সেই নাট্য মঞ্চে একদিন হাইপেশিয়া, ফ্রান্সিস ক্রিক, নেলসন মেন্ডেলা, বা তেরেসাদের আরেক পৃথিবীর মানুষ হিসেবে নয়, আমাদের রোজকার পৃথিবীর মানুষ হিসেবেই দেখা যাবে। দেখা যাবে পিছনের বেঞ্চে বসা ছাত্রটিকেও সবার মাঝে। পালসারের আবিষ্কারক, জোসেলিন বেল বার্নেল, যার পাওয়ার কথা ছিল নোবেল পুরষ্কার, তার নামও সেদিন হয়ত অনেকেই জানবে।

শেষ করছি অন্তর্মূখীদের জন্য সুসান কেইনের একটি বার্তা দিয়ে, “I hope you will open up your suitcases for other people to see, because the world needs you and it needs the thing you carry. So, I wish you the best of all possible journeys and the courage to speak softly.”

উপভোগ করুন সুসান কেইনের টেড-বক্তব্য

http://www.youtube.com/watch?v=c0KYU2j0TM4&feature=player_embedded


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

চলুক

সুন্দর লিখেছেন, প্রিয় কবি জীবনানন্দ নিয়েও অনেকে বলে থাকেন উনি অসামাজিক অন্তর্মুখী মানুষ ছিলেন, আমি বলি কোলাহলমুখর, আড্ডাবাজ হলে তো সেই অমর কবিতাগুলো লিখতে পারতেন না।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

মানুষ যখন তার স্বরূপে থাকে বা থাকতে পারে, তখনই তার শ্রেষ্ঠটা প্রকাশ পায়। হাসি

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

সত্যপীর এর ছবি

চমৎকার পোস্ট।

এই ব্যাপারটা আমি ফীল করেছি বিদেশে এসে। দেশে আমার হাঁকডাকে লোকে অস্থির থাকতো, চুপচাপ অঘুমন্ত সময় আমার কেটেছে অল্পই। বিদেশে এসে হঠাত আমি মুখচোরা হয়ে যাই। আমাকে স্কুলে অথবা কাজে প্রশ্ন করুন ঘন্টার পর ঘন্টা ইংরেজী বলে যাবো, কিন্তু তারপরে পাবে গিয়ে সবাই যখন হৈহুল্লোড়ে মেতে ওঠে তখন আমি চুপ করে এক কর্নারে বসে থাকি। কথা হয় হকি নিয়ে, পলিটিক্স নিয়ে, নিউফাউন্ডল্যান্ডের কড ফিশ প্রবলেম নিয়ে, হাসাহাসি চলে স্পিড ডেটিং অথবা স্ক্রিচ রাম পানে প্রিয় বন্ধুর বমি করা নিয়ে। এগুলি তো আমি কিছুই জানিনা। সেই প্রথম একটু একটু ধরতে পেরেছিলাম ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশতে না পারার কষ্ট।

অসাধারন একটি প্রসংগ তুলে আনায় আবারো ধন্যবাদ।

..................................................................
#Banshibir.

নীল রোদ্দুর এর ছবি

আমি আমার নিজের ক্ষেত্রে এবং আরো অনেকের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা অনেক দেখেছি। প্রত্যেকটা মানুষের কিছু সামাজিক চাহিদা থাকে। অন্তর্মূখী মানুষগুলো এই সামাজিক চাহিদা আর নির্জনতার প্রতি আকর্ষণের টানাপোড়েন এ ভুগতে থাকে। এই দ্বিধাটুকুও অনেক সময় হয়ে ওঠেনা বলা, চারপাশের মানুষগুলোও অধিকাংশ সময়েই বোঝে না সেটা।

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

নামুস এর ছবি

চমৎকার লেখা।

আমি নিজেও অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ। তবে অন্তর্মুখী হলে যে মেলামেশা একেবারে কম করতে হবে তা বোধ হয় ঠিক নয়। নিজের পরিচিত গণ্ডিতে অনেকেই খুব ভাল আড্ডাবাজি করতে পারে বা সবাইকে মাতিয়ে রাখতে পারে যারা হঠাৎ নতুন পরিবেশে ঠিক মানিয়ে নিতে পারে না। তাই নতুন পরিবেশে অনেকেই তাদেরকে অন্তর্মুখী বলে ধরে নেয়।

অবশ্য সবচেয়ে ভাল মনে হয় অন্তর্মুখী আর বহির্মুখীর মাঝে যারা কেইন যাদেরকে বলেছেন আম্বিভারট। তারা সব জায়গায় মানিয়ে নিতে পারে।

আর সব বাবা-মায়েরা নিজের সন্তানকে চটপটে দেখতে চায়- এটা একদিকে বর্তমান মিডিয়ার প্রভাব আর একদিকে বাবা-মায়েদের অজ্ঞানতার ফল। সন্তানদের উপর কোনও কিছু চাপিয়ে দিলে সেটার ফল বেশিরভাগ সময় ভাল হয় না।
পৃথিবীতে একজন আরেকজনকে সাহায্য করলে সবার জন্যই এই পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে উঠবে।

-নামুস

নীল রোদ্দুর এর ছবি

সন্তানদের উপর কোনও কিছু চাপিয়ে দিলে সেটার ফল বেশিরভাগ সময় ভাল হয় না।
পৃথিবীতে একজন আরেকজনকে সাহায্য করলে সবার জন্যই এই পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে উঠবে

এটুকু বুঝলেই অনেক শিশুর জীবন সুন্দর হয়ে যেতে পারে। চলুক

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

দ্যা রিডার এর ছবি

আপনার মত আমি ও একজন অন্তর্মুখী মানুষ। তবে কিছু কিছু বিষয়ে আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করি। ভাল লেখা ।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

দ্বিমতগুলো মনের মধ্যে না রেখে প্রকাশ করা ভালো। যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করা যেত তবে।

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

শিশিরকণা এর ছবি

এই দুনিয়ায় চলতে গেলে সব সময় অন্তর্মুখী হয়ে থাকলে চলে না। কমিউনিকেশন স্কিল সব রেজুমেতে একটা বড়ো গুন হিসেবে দেখা হয়। ব্যাক্তিগত জীবনে আমি ভীষণ অন্তর্মুখী। কিন্তু আমার বসের ধারণা আমি খুব ফ্রেন্ডলি, বহির্মুখী মানুষ। পুরাটাই অভিনয়, প্রয়োজনে। নিজেকে এই খোলস থেকে বের করতে আমাকে যথেষ্ট চেষ্টা করতে হয়েছে। যখন আমাকে মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, কথা বলতে হয় তখন নিজের মনের উপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করতে হয়। প্রয়োজন ফুরালে তখন ভীষণ মানসিক ক্লান্তি এসে ভর করে।
কোথাও পড়েছিলাম, যারা বহিঃমুখী মানুষ তারা একলা থাকলে ক্লান্ত বোধ করে আর মানুষের সংসর্গে থাকলে শক্তি সঞ্চয় করে। আর অন্তর্মুখীরা ঠিক উলটো, মানে তারা মানুষের সঙ্গে কাটালে ক্লান্ত হয় আর একাকী সময়ে শক্তি সঞ্চয় করে।
দু'টোর ভারসাম্য খুঁজে পাওয়ার মাঝেই আছে শান্তি আর সফলতা।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

নীল রোদ্দুর এর ছবি

কথা সত্য, ৫০ জন মানুষের মাঝে থাকলে কেন আছি জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে সবাইকে। কি কাজটা করছি থেকে, আসলেই কি কিছু করছি? নাকি হুদাই ভাব দেখায়ে সময় নষ্ট করতেছি? একা একা কাজ করলেও জীবনটাকে হুদাই নষ্ট করতেছি বলে মনে হয় না।

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

চমৎকার পোস্ট।

নীল রোদ্দুর এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো পড়তে।
কী কী যেন বলতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ভাষায় ঠিক গোছাতে পারছি না। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নীল রোদ্দুর এর ছবি

অনেক ধন্যব্যাদ আপু... হাসি
যা যা মনে আসে, তাই নিয়ে একতা পোষ্ট দিয়ে ফেলেন।

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

তুলিরেখা এর ছবি

নীল রোদ্দুর, আমাকে একজন বলেছিলেন, পৃথিবীর বড় বড় কাজগুলো সব বেশীরভাগই করেছেন অন্তর্মুখীরা। উদাহরণ দিয়েছিলেন গ্যালিলিও, নিউটন, কোপার্নিকাস, কেপলার, মেন্ডেল, ডারউইন, আইনস্টাইন----- শুধু যে সায়েন্স এ তা না, শিল্প সাহিত্যেও এরকম দেখা গেছে আর বেশী। হাসি

আসলে অন্তর্মুখীরা মনে হয় প্রচুর শক্তি জমা করে রাখতে পারেন ভাবনা চিন্তা ইত্যাদির জন্য, এদের মধ্যে কেউ কেউ সাহস করে সেই সব ভাবনাচিন্তা গুলো করতে শুরু করেন, তাদের মধ্যে কিছু আরো সাহসী হয়ে সেগুলো রূপায়িত করতে শুরু করেন---তারপরে সমাজ ও সময় যদি ঠিকঠাক হয়, তবে সেসব একদিন দুনিয়া পাল্টে দিতে পারে।

আমি একজনকে জানি, গোটা স্কুল ও কলেজজীবনে সে ছিলো খুবই অন্তর্মুখী, মানে স্কুলে কলেজে বাইরে থেকে দেখে তাই মনে হতো। একমাত্রিক। আসলে সে নিজের ভিতরে লুকিয়ে রেখেছিলো বিচিত্র বহুমাত্রিক চরিত্র, সেটা প্রকাশ পেতে শুরু করে সে যখন ইন্টারনেটে বিভিন্ন ফোরামে বা ওয়েবজিনে সক্রিয় হয়। পুরানো যারা তাকে চিনতো তারা তো বিস্ময়ে হতবাক। হাসি

ভালো থাকবেন নীল রোদ্দুর, লিখবেন অনেক। আপনার নিকনেমটা যে কী ভালো, বিচিত্র সব কলপনা জাগিয়ে তোলে মনের ভিতর। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নীল রোদ্দুর এর ছবি

আসলে অন্তর্মুখীরা মনে হয় প্রচুর শক্তি জমা করে রাখতে পারেন ভাবনা চিন্তা ইত্যাদির জন্য, এদের মধ্যে কেউ কেউ সাহস করে সেই সব ভাবনাচিন্তা গুলো করতে শুরু করেন, তাদের মধ্যে কিছু আরো সাহসী হয়ে সেগুলো রূপায়িত করতে শুরু করেন---তারপরে সমাজ ও সময় যদি ঠিকঠাক হয়, তবে সেসব একদিন দুনিয়া পাল্টে দিতে পারে।

এই কথাটা যদি গোতা সমাজটা অনুভব করতে পারতো, অনেক ভালো হত। হাসি
আপনিও ভালো থাকবেন আপু। হাসি

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

সাবেকা এর ছবি

অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু ভাষার জন্য আটকে যাচ্ছি । এতো ভালো একটা লেখা, কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো । মনে হল অনেকটা মনের কথাই বললেন, কারণ আমিও যে এমনি একজন মানুষ, বেশিক্ষণ মানুষের ভীরে থাকলে হাঁপিয়ে উঠি । অনেক মানুষের মাঝে দিব্যি একা হয়ে যাই আর চিন্তা করতে থাকি নানা আগডুম বাগডুম ! সারাজীবন ভেবেছি আমার দ্বারা কিছু একটা মহৎ কাজ হবে, কিন্তু কিছুই তো হল না এটাই যা দুঃখ । ভেবে ভেবেই জীবন পার করে দিলাম হাসি

নিজের সাথে অনেকটা যুদ্ধ করে করে এ পর্যন্ত আস্তে হয়েছে চরিত্রে একটা ব্যলান্স নিয়ে আসার জন্য মন খারাপ সেটা যে কি কষ্টের একেক সময় । মানুষের বোকা বোকা কথার সাথে প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাসতে হয়, আরও কত কি ।

নিলয় নন্দী এর ছবি

লেখাটা আসলে আমাকে নিয়েই লেখা। মন খারাপ
মন্তব্যগুলোর মধ্যেও নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি।
শুধু অন্তর্মুখী মানুষগুলোই জানে সারাটা জীবন এভাবে নিজেকে নিয়েই কাটিয়ে দিতে হবে।
ভেতরের খবরটা কেউ জানবে না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।