নাম সমাচার

ঝরাপাতা এর ছবি
লিখেছেন ঝরাপাতা (তারিখ: সোম, ২৪/১২/২০০৭ - ৭:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যতই কবি বলুক না কেন –
নামের বড়াই করো নাকো নাম দিয়ে কি হয়,
নামের মাঝে পাবে নাকো সবার পরিচয়।

কিংবা থার্ডক্লাশ পণ্যের ফার্স্টক্লাশ মাল্টিকালার বিজ্ঞাপনে সুন্দরী তরুণী গলা ফাটিয়ে বলুন না কেন- “নামে নয় গুনেই পরিচয়, অমুক ক্রীম ব্যবহারে ত্বক ফরসা হয়”; কিন্তু একমাত্র আলম মিঞার পচা সাবান, পচা সুজ ছাড়া আপনি আর একটিও পচা নামের পণ্য খুঁজে পাবেন না। বরং নিত্যনতুন আহারী-বাহারী পণ্যের আকর্ষণীয় নাম চেয়ে পুরষ্কারসহ মনোহারী বিজ্ঞাপণ পত্রিকার পাতায় প্রায়ই চোখে পড়বে।

একবার আমার এক বন্ধুর বড় ভাই এসে খুব করে ধরলেন ফাস্ট ফুডের দোকানের জন্য একটা ঝাকানাকা-মার্কা নাম ঠিক করে দেয়ার জন্য। তিন দিন তিন রাত অনেক পারমুটেশন-কম্বিনেশন শেষে নাম ঠিক করলাম- অ্যাপিটাইজার। বন্ধুর ভাইয়েরও নামটা বেশ মনে ধরলো। এক শুক্রবারে ঘটা করে এক প্রাক্তন সচিবকে দিয়ে লাল ফিতা কেটে, সাইনবোর্ডে বিশাল বিশাল অক্ষরে অ্যাপিটাইজার ফাস্ট ফুড এন্ড স্ন্যাকস লিখে উদ্বোধনও করা হলো। কিন্তু তিনদিনের মাথায় আবার তিনি আমার বাসায় এসে হাজির হলেন। চা-পান পর্ব শেষ হলে খানিকটা ইনিয়ে বিনিয়ে মূল প্রস্তাব পেশ করলেন- তোমার দেয়া নামটা নিয়ে একটু প্রবলেম হচ্ছে, যদি আরেকটা নাম ঠিক করে দিতে তবে খুব উপকার হতো। আমি নাম পাল্টানোর কারণ জিজ্ঞেস করলে প্রথমে কেমন জানি একটু লজ্জা পেলেন। তারপর আমতা আমতা করে বলেন, মানে ... মানে তোমার হবু ভাবীর নামটা আফিয়া কিনা। বন্ধুরা সবাই অ্যাপিটাইজারের বদলে আফিয়াটাইজার বলে ডাকতে শুরু করেছে। তাই নামটা না বদলালে প্রেস্টিজ একেবারে পাংচার হয়ে যায়। বন্ধুর বড় ভাইয়ের প্রেস্টিজকে ফুটোর হাত থেকে রক্ষা করতে নামের বিশাল নামাবলী পেশ করেও মনমতো কোন নাম খুঁজে পাওয়া গেলো না।

এতো গেল নামকরণে ঝামেলা। পিতৃপ্রদত্ত নাম নিয়ে ঝক্কিতে পড়ার ঘটনাও কিন্তু কম নয়। আমার এক বন্ধু আছে যার আসল (শাহনুর সাইদ) ও ডাক নাম (শাওন) প্রচুর পরিমাণ ঝামেলা উৎপাদনে সক্ষম। তার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। একবার আমি বন্ধুটির সাথে আই.ডি.বি.তে যাচ্ছিলাম মডেম কেনার জন্য। এমন সময় ফুফাতো ভাইয়ের ফোন এলো। কোথায় যাচ্ছি জানতে চাইলে বললাম- ফ্রেন্ড শাওনকে নিয়ে আইডিবিতে যাচ্ছি। শুনেই তিনি একটু লঘু স্বরে বলেন,কি! ফ্রেন্ড নাকি গার্লফেন্ড! আমি হাসি চেপে বললাম- গার্লফ্রেন্ড, নেন কথা বলেন। তারচেয়ে মজার কান্ডটা ঘটেছিলো আসল নাম নিয়ে। একবার শাওন অসুস্থ হয়ে পড়লে ওর কি যেন একটা দরকারী সার্টিফিকেট তুলতে যাই আমি। নাম জিজ্ঞেস করলে বলি- শাহনুর সাইদ। বিশাল কাগজের স্তুপে অনুসন্ধান চালাতে চালাতে ভদ্রলোক বলেন- বিবাহিত নাকি অবিবাহিত? বিবাহিত বলার পরেই জানতে চান, হাজবেন্ডের নাম কি? ফিরে এসে বন্ধুকে ঘটনা জানালে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, হুম, এফিডেবিট করে নাম পাল্টাতে হবে দেখছি।

নাম নিয়ে হ্যাপার শেষ করি একটা কৌতুক দিয়ে। একবার এক ভদ্রলোক কনকনে শীতের রাতে আশ্রয়ের জন্য সরাইখানার কড়া নাড়েন। ভিতর থেকে মালিক হাঁক ছাড়েন, কে, এতো রাতে? ভ্রদলোক বলেন, ইবনে সাঈদ বিন সমেশর আলী মো: হারুনুর রশীদ। ভিতর থেক মালিক উত্তর দিলেন, দু:খিত, এতো লোকের জায়গা নেই।

অতএব পাঠক, কাজে পরিচয় হলেও নামকে ফেলনা ভাবার আগে আবার একবার চিন্তা করুন প্লিজ।


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

অতএব পাঠক, কাজে পরিচয় হলেও নামকে ফেলনা ভাবার আগে আবার একবার চিন্তা করুন প্লিজ।

সেটা সম্প্রতি আরো ভাল বুঝতে পারছি !

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পড়লাম, মজা পেলাম।

ঝরাপাতা এর ছবি

অসীম কৃতজ্ঞতা স্নিগ্ধা, অরূপদা এবং প্র.প্রে.।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

সৌরভ এর ছবি

হুমম, কথা সত্য।
তয় অ্যাপেটাইজার দোকানে খালি মুখরোচক চলে নাকি?
দোকানের নাম দিতে পারেন, "জম্পেশ!"


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ঝরাপাতা এর ছবি

হুম, আপনার নামটা ভবিষ্যতের জন্য রিজার্ভ রাখলাম।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চলুক

ঝরাপাতা এর ছবি

হাসি


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।