ধারাবাহিক উপন্যাসঃ প্রসাধনী আয়না

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি
লিখেছেন জহিরুল ইসলাম নাদিম [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১৮/১১/২০১১ - ১০:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের পর্ব
পর্ব ৪

সেই ছোট্ট ঘরটায় অর্ণবের জন্য বিছানা পাতা হয়েছিল। সেটায় শুয়ে একটা কিশোর থ্রিলার-এ ডুবে গেল ও। বিপদে পড়েছে কিশোর, মুসা আর রবিন। প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে ওরা গুহামুখ দিয়ে। ঘুটঘুট্টি অন্ধকার দশদিকে। হঠাৎ কিসের সাথে বাঁ পাটা বেধে গেল কিশোরের। তাল না রাখতে না পেরে হুড়মুড়িয়ে পড়ল সে সামনে। আঁতকে উঠল কিশোর ভীষণভাবে। এই বুঝি বিশাল ভক্সওয়াগনটা উঠে পড়ল ওর পিঠে!

‘বাইজান দরেন!’, বোমা ফাটালো যেন কেউ অর্ণবের কানে। উপুড় হয়ে পড়ছিল ও পায়ের ওপর পা তুলে। চমকে উঠে এক পাক ঘুরে গেল ও চকিতে। কাজের মহিলাটি হাতে গরম চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের কাছেই লজ্জা পেয়ে গেল অর্ণব। এতটা বিভোর হয়ে গেছিল ও? বর্তমান অবস্থান স্পষ্ট হলো তখন ওর কাছে। সাড়ে দশটা বাজে। ওকে সারারাত জাগতে হবে একটা রহস্যের পিছু নিতে। আর এই মহিলা নাকি সেই রহস্যের প্রত্যক্ষদর্শী!
‘আচ্ছা আপনার কী মনে হয়- বাগানের ব্যাপারে বলছি। জানেন কিছু?’, চা-টা নিতে নিতে কথাটা জিজ্ঞেস করল অর্ণব। একটা দেঁতো হাসি উপহার দেয়ার পর মহিলার উত্তর, ‘যানুম না ক্যান? এইডা তো চান রাইতের লাহান ফকফক্যা! ফুল পাতা নিয়া রাইত বিরাইতে মাতামতি কারা করে জানেন না? ভূত-পেত্নীরা! এক রাইতে জালানা দিয়া বাইরে চাইছি দেহি একটা ভূত না পেত্নী অই বাগানের দেয়ালে নাচতাছে’! অর্ণব বুঝল কুসংস্কার এই মহিলার মনে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকে গেছে! অর্ণব কাপটা ফেরত দিল। যাওয়ার মহিলা জানিয়ে গেল এই বাড়িতে সে আর বেশি দিন নয়। ভূতের বাড়িতে মানুষ থাকে!

বইটা শেষ করে আনতে আনতে অর্ণবের প্রচন্ড ঘুম পেয়ে গেল। এমনিতেই ও সারাদিন যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে। চিন্তা-ভাবনাও কম করেনি। অনেক কষ্ট করেও অর্ণব মাত্র একটা পর্যন্ত জেগে থাকতে পারল। এখন সার্কিট ভালোয় ভালোয় কাজ দিলেই রক্ষা! রাত দুটো পাঁচে বেজে উঠল মিনি কলিং বেল। তির তির একটা শব্দ তুলে কাঁপল কিছুক্ষণ। গাঢ় ঘুমের পর্দা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে আরেকটু দেরী হলেই মিস করত অর্ণব। ও যখন পুরোপুরি হুঁশে এলো শেষ বারের মতো বাজল যন্ত্রটা। ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসল অর্ণব। কয়েক সেকেন্ড সময় নিল স্থির হতে। খুবই আস্তে শব্দ না করে বাগানমুখী জানালার একটা কপাট খুলে বাগানের দিকে তাকাবার সময় একটি সম্ভাবনা অর্ণবের সমস্ত পরিকল্পনাকে প্রায় নষ্ট করে দিচ্ছিল আরকি! ঘুটঘুট্টে অন্ধকারে ও দূরের জিনিস দেখবে কী করে? এই চিন্তাটা একবারও ওর মাথায় আসেনি। কিন্তু দরদি চাঁদ ওকে বাচিঁয়ে দিল এ যাত্রা। সমস্ত মন প্রাণ ঢেলে জ্যোছনা নামের মধুটি বিলোচ্ছিল সে পৃথিবীকে- তার সামান্য ছোঁয়া পেয়ে ঝলমল করছিল এই বাগানটাও। আর তাতেই অর্ণব স্পষ্ট দেখল একটা বামনের মুভমেন্ট। এত খাটো লোকও হয়! দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো ও এক তলায়। তারপর সন্তপর্ণে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো বাগানে। হামাগুড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে একটা ঝোপের পেছনে চলে এলো ও। এই ঝোপটাকে অর্ণব আগেই নির্বাচন করে রেখেছিল। স্বচক্ষে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য। সিদ্ধান্তটা অতিরিক্ত রকমের সাহসী। সম্ভাব্য বিপদকে বরণ করে নেবার তেমন দরকার হয়ত ছিল না। কিন্তু রক্ত গরম বলে কথাটা এ ক্ষেত্রে হয়তো প্রযোজ্য! ঝোপটা থেকে হাত পাঁচেক দূরে কয়েকটা গোলাপ গাছ। কিছু কুঁড়ি ফুটি ফুটি করছে তাতে। বামনটা এগিয়ে এলো সেটার দিকে। অর্ণবের চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল। এতক্ষণ ও যাকে বামন লোক বলে ঠাউরে এসেছে সে আসলে কোনো বামন নয়। একট বাচ্চা ছেলে! দশ বারো বছরের! একটা প্লায়ার্স জাতীয় কিছু দিয়ে গাছটার ডাল পালা কাটছে ছেলেটা। তারপর সেগুলোকে একটি জায়গার মাটি আলু-থালু করে সাজিয়ে রাখল। অর্ণব জানে একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক নকশায় ফুল গুলো সাজাচ্ছে ছেলেটা। যে নকশা একটা বিপদচিহ্ন সূচিত করে। কিন্তু অর্ণব ছেলেটার পক্ষেই ‘বিপজ্জনক’ একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। ছেলেটা কাজ শেষে ফিরে যেতে যেই উদ্যত হয়েছে অমনি অর্ণব ঝোপ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর প্রচন্ড শক্তিতে তাকে লক্ষ্য করে ঝেড়ে দৌড় দিল। দ্রুত পদক্ষেপে শুকনো পাতায় মর্মর ধ্বণি উঠবেই। ছেলেটা যখন পেছন ফিরে তাকিয়েছে তখন অর্ণব তার থেকে হাত চারেক দূরে এবং শূণ্যে! ছেলেটার প্রচন্ড আর্ত চিৎকারে ঘুম লা-পাত্তা হল মিসেস শেখরের।

ছেলেটা ভয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। মেঝেতে বসে গুঙিয়ে গুঙিয়ে কাঁদছে। এতটা ব্যথা দেয়ার ইচ্ছে অর্ণবের সত্যি ছিল না। নিজেকে সামান্য অপরাধী মনে হল ওর। ছেলেটাকে প্রশ্ন করা মাত্র ও যা যা জানে বলে গেল গড়গড় করে। আরো মার খাওয়ার ইচ্ছে তার নেই। অর্ণব বুঝল ছেলেটা যদিও ‘ক্রসের ত্রাস’ প্রতিষ্ঠা করছিল কিন্তু এই ব্যাপারে তার হাত সামান্যই। জনৈক ভদ্রলোক তাকে অনেক টাকার লোভ দেখিয়ে এই কাজ করার কথা বলেন। ভদ্রলোক তাকে টাকাও দেন। কিন্তু অই লোকের নাম, পরিচয় এমনকি চেহারাও তার অজানা। ছেলেটা টোকাই শ্রেণীর, থাকে পাশের বস্তিতে। অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা পাওয়ার লোভ সে সামলাতে না পেরে সে এই কাজ করেছে। রাত বিরেতে আসতে ভয় লাগে বলে সে তার একটা বন্ধুকে নিয়ে আসে। ও থাকে দেয়ালের ওপাশে। ছেলেটার চিৎকারে ‘বন্ধু’ যে উধাও হয়েছে সে কথা বুঝতে অসুবিধে হল না। বাগান রহস্যটাকে অর্ণব যতটা সহজ ভেবেছিল আসলে তা নয়। ওর ধারণা ছিল ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে ধরলেই সব স্পষ্ট হয়ে উঠবে। কিন্তু ব্যাপারটা আগের চাইতে ঘোলাটেই যেন হয়ে উঠল বেশি। কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে পড়ার মত। একজন পরিণত প্রতিদ্বন্ধীর বিরুদ্ধে লাগতে হবে এখন থেকে। অর্ণবের মাইনাস পয়েন্ট হল লোকটার ‘টার্গেট’ সম্পর্কে ও পুরো অন্ধকারে। আর প্রতিদ্বন্ধীর প্লাস পয়েন্ট হল ও যা করছে জেনে শুনেই করছে। অর্ণব ছেলেটাকে কিছু ধমক টমক দিয়ে ভবিষ্যতে এদিকে আর না আসবার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দিল। সময়ের কাছে আত্মসমর্পণের কাজ ছাড়া আপাততঃ দ্বিতীয় কোনো কাজ ও খুঁজে পেল না।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়ল অর্ণব। ও ভেবেছিল মিসেস শেখরকে না জানিয়ে চলে যেতে হবে। মিষ্টি ঘুমের সময়টা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করার কোনো মানে হয় না। কিন্তু ভদ্রমহিলা লনের ঘাসের ওপর স্কিপিং করছেন চমৎকার একটা ছন্দ বজায় রেখে। অর্ণব মুগ্ধ হয়ে দেখল কতক্ষণ। (চলবে)


মন্তব্য

তাপস শর্মা এর ছবি

চিন্তিত

শিশিরকণা এর ছবি

উপুড় হয়ে পড়ছিল ও পায়ের ওপর পা তুলে

কেমনে সম্ভব?
আরও যোগ করব, পড়ে নেই আগে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

শিশিরকণা এর ছবি

ঘ্যাচাং

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

কল্যাণ এর ছবি

হুম্ম

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি

মানে কী?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।