আগের পর্ব
পর্ব ৫
দূর থেকেই অর্ণব দেখল রহিম কাকা বারান্দায় উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন! বাড়িতে রহিম কাকা আর ও ছাড়া আপাততঃ কেউ নেই। এই লোকটা সেই ছোট বেলা থেকে অর্ণবকে আগলে রেখেছেন। কখন থেকে তিনি এ বাড়িতে অর্ণব ঠিক বলতে পারবে না। কিন্তু হুঁশ হবার পর থেকে রহিম কাকাকে তার সাথী হিসেবে পেয়ে এসেছে ও। তাই অর্ণবকে সবার চেয়ে তিনি বোঝেনও বেশি। বাবা-মা তাকে কখনোই রাত-বিরেতে বাইরে থাকতে দিতেন না! রহিম কাকাও চাননি তবে অর্ণব তাকে ম্যানেজ করে ফেলেছে ঠিক। ‘কাউকে না জানিয়ে সারারাত বাড়ির বাইরে থাকা কি ভালো?’ একটা কাকুতি যেন ঝরে পড়ল রহিম কাকার কন্ঠ থেকে। উত্তরে মিষ্টি করে একটু হাসল ও শুধু। অর্ণব জানে এই হাসির বদৌলতে সাত খুনও মাফ হয়ে যেতে পারে!
গোসল সেরে নাশতা খেয়ে একটা নিরুদ্বিঘ্ন ঘুম দিল অর্ণব। ‘মস্তিষ্ককে যত কাজ করাবে তাকে বিশ্রামও দেবে তত’- এই রকম একটা সূত্র দাঁড় করিয়ে নিয়েছে নিজে নিজে। এখন কাজে লাগাল সূত্রটাকে ও।
ঘুম ভেঙ্গে গেলেও বিছানা ছেড়ে তখনই উঠে পড়ল না অর্ণব। গড়াগড়ি করতে করতে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনাবলীকে একসূত্রে গাঁথার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না কিছুতেই। রহস্যটা এখন পর্যন্ত রহস্যই ওর কাছে। কোন কারণে কাল্পনিক প্রতিদ্বন্ধী এই সব ঝামেলা সৃষ্টি করছে কিছুতেই বুঝতে পারছে না অর্ণব। এই সময় চন্দনকে কাছে পেলে খুব উপকার হোত ওর। আলোচনার মাধ্যমে হয়তো সমাধান পাওয়া সম্ভব হোত। অর্ণব উঠে গিয়ে চন্দনের বাসায় ডায়াল করল। বোন ধরল ওর ছোট বোন। মেয়েটির গলায় চমৎকার মিষ্টি একটা ভাব আছে। কিন্তু চন্দনকে পাওয়া গেল না। কোন এক আত্মীয়ের বাসায় নাকি গেছে চট্টগ্রামে। ধুর!
পরের দিন ফোনের সুতীক্ষ্ন চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গল অর্ণবের। ঘুম জড়িত কানে ও শুনল মিসেস শেখরের ভয়ার্ত কন্ঠ। ঘটনা খুব দ্রুত ঘটেছে। এবার আর ‘ক্রসের ত্রাস’ সৃষ্টি নয়- চুরির চেষ্টা করা হয়েছে ‘উদয়নে’। যদিও খোয়া যায়নি কিছুই। মিসেস শেখর বুঝে উঠতে পারছেন না এখন তাঁর কী করা উচিৎ। কিংকর্তব্যবিমূঢ়! দ্রুত বেরিয়ে পড়ল ও ‘উদয়নে’ যাওয়ার জন্য।
বাড়িটা অসম্ভব চুপচাপ। ভদ্রমহিলা ব্যাপারটিকে পুলিশকে জানাবেন কি না ভাবছিলেন। একটা কিশোরের হাতে এই দায়িত্ব দেয়া তাঁর ঠিক হয়েছে কি না এই ব্যাপারেও এখন তিনি দ্বিধান্বিত। অর্ণব দেখল দোতলার স্টোর রুমটাকে তছনছ করা হয়েছে। একটা তালা ছিল- সেটা কীভাবে যেন খোলা হয়েছে। ঘরটাতে কিছু পুরনো আমলের কাঠের আসবাব ছাড়া আর কিছুই নেই। অর্ণব ফাঁপড়ে পড়ে গেল। রহস্য স্রষ্টাদের একটা উদ্দেশ্য হতে পারে বাড়িটা হাতানো। সেই ক্ষেত্রে বাড়িটার ভৌগলিক অবস্থান এই অনুমানের বিপক্ষে। অর্ণব অনেক বইয়ে পড়েছে ‘ভিলেন’ কোনো কোনো বাড়ি দখল করতে চায়। সেক্ষেত্রে বাড়িটার পাশেই থাকে কোনো ব্যাংক বা জাদুঘর। এক্ষেত্রে ওসব নেই। অর্ণব ভালভাবে স্টোর রুমটা দেখল। দুটো বেঢপ আকৃতির নকশা করা টেবিল, একটা ড্রেসিং টেবিল- দেখেই বোঝা যায় আয়নাটা ভেঙ্গে গেছে বা সরানো হয়েছে। এছাড়া কিছু ভাঙ্গা-চোরা কাঠের পাল্লা রয়েছে। অর্ণব দেখল ড্রেসিং টেবিলটার প্রত্যেকটি দেরাজ মেঝেতে পড়ে আছে। কোনো একটা জিনিস উদ্ধারের প্রচেষ্টা স্পষ্ট। অর্ণব ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এসব দেখছিল তখন ওখানে মিসেস শেখর এলেন।
‘বুঝলে কিছু?’
‘তেমন কিছু না। তবে মনে হচ্ছে আসবাবপত্রের মধ্যে কিছু খুঁজছে ওরা’, অর্ণব কোনো দিকে না তাকিয়ে বলল।
‘ওহো! তোমাকে তো একটা কথা বলাই হয়নি’, ঝট করে ফিরল অর্ণব মিসেস শেখরের দিকে। ওর পঞ্চ ইন্দ্রিয় অত্যন্ত সজাগ হয়ে উঠেছে প্রশ্নবাচকতায়। কী বলা হয়নি?
‘স্যুভেনির কালেকশন ছিল আমার হবি। একদিন কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম কিছু ঐতিহাসিক আসবাবপত্র বিক্রি হবে নিলামে। ঢাকার আহসান মঞ্জিলের। এই যে ফার্ণিচারগুলো দেখছ- সেখানকারই। সেখানে এক ভদ্রলোক সুন্দর অনেক জিনিস একাই কিনেছিলেন। আমি এগুলো কিনতে পেরেছিলাম কেননা তিনি এগুলো চাননি। সুন্দর একটা দেয়াল ঘড়ি পছন্দ হয়েছিল আমার- কিন্তু ভদ্রলোকের জন্য কিনতে পারিনি। বেশি দাম হেঁকে কিনে নিলেন!’
উজ্জ্বল হয়ে উঠল অর্ণবের চোখ। এইটুকু শোনাই যথেষ্ট ছিল ওর জন্য। মাত্র কিছু দিন আগের ঘটনা। সংবাদপত্রে আলোড়ন তুলেছিল বলে অনেকেরই হয়তো মনে আছে। সরকার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করার এক পর্যায়ে কিছু রহস্যজনক সিন্ধুক পায়। যেগুলো ইংল্যান্ডের এক বিশিষ্ট কোম্পানির তৈরী। চাবি না থাকায় ওগুলো খোলা নিয়ে সরকারকে পড়তে হয় বিপাকে। কোনো মতেই ভাঙ্গা যাচ্ছিল না লক। শেষে অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে যা-ও বা খোলা হলো সিন্ধুক কিন্তু সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে শূণ্য বেরুলো প্রতিটি লকার! তাহলে তাদের সঞ্চিত অর্থ-সম্পত্তি কোথায় গেল? অর্ণবের ধারনা সেগুলোর সন্ধান হয়তো নবাব বাড়ির আসবাবপত্রের মধ্যে লুকোনো থাকতে পারে। এবং সেটি উদ্ধারের অংশ হিসেবেই হয়তো এই স্টোর রুম আক্রমণ। দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল অর্ণব। আসবার আগে মিসেস শেখরকে অতিরিক্ত রকম আশ্বস্ত করে এল। যেন রহস্যের সমাধান পেয়ে গেছে ও! (চলবে)
মন্তব্য
জমছে। একবারে কুলফি মালাই চাই কিন্তু।
শীতকালে কুলফি মালাই চলবে?? ঠান্ডা লেগে যাবে না!!!
হায়রে ভাই। ঢাকায় আবার শীতকাল পাইলেন কই? কতদিন খেজুরের রস খাই না; কতদিন কুলফি মালাই খাই না।। আহারে সেইসব দিনগুলো!
আহা!!!!!!!
পর্বগুলো আরেকটু লম্বা করে ছাড়ুন না। বদহজম হচ্ছে তো।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ইলাস্টিসিটি অনেক বেশি তাই লম্বা হচ্ছে না!
চলুক, বেশ লাগছে তো!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ কবি!
ভালো চলছে!
কেবল আরেকটু বড় আপডেট হলে বেশি ভালো লাগত!
বড় করা যায় কিন্তু কী টেপাটেপি করতে বেশ ইয়ে লাগে আর কি!
পড়তেছি
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন