নষ্ট সময়-৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি
লিখেছেন জুলিয়ান সিদ্দিকী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৭/০৮/২০০৮ - ১২:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কমলা পাশেই ছিল। বলল, 'হুন ছোডো ভাই! পাঁচ হাজার ট্যাকা আমি দিয়া দিমু বাদলরে। তারে তুমি জানাইবা যে, ডাইল কোহিনূর তারে সালাম দিছে। তাইলেই দেখবা তোমারে কেমন বাপ বাপ বোলায়!'

কমলা একবার বাইরে যেতেই আজগর ফাঁক পেয়ে বলল, 'টুনি বস্তিতে নাই?'

'টুনির খবর কেউ জানে না! তুমি কি অনুমান করতে পারো কোই যাইতে পারে?'

'আমি ক্যামনে কমু? বাদ দেও ওই সব!'

কমলা ফিরে এল কোকের বোতল আর কেক নিয়ে। 'মেমানরে আর কি খাইতে দেই?' বলে, সাগরের সামনে সেগুলো নামিয়ে রাখে।

তারপর বলে, 'ছোডো ভাই, তোমার আসল কাম হইলো, টুনিরে খুঁইজা বাইর করা। তার লগে দ্যাহা কইরা কইবা, সে য্যান তোমার আজগর ভাইরে তালাক দেয়। ক্ষতিপুরণ হিসাবে তারে দিমু পাঁচ হাজার ট্যাকা। আর কেউ য্যান তারে বিরক্ত করতে না পারে হেই দায়িত্ব আমার! কথা ফাইনাল কইরা আমার মোবাইলে জানাইবা!' সে একটা কাগজে তার ফোন নাম্বার লিখে সাগরের দিকে বাড়িয়ে ধরলো।

তারপর সাগরকে আস্বস্ত করতে যেন বলল, 'ট্যাকা পৌঁছানি নিয়া চিন্তা করতে মানা কইরো!'

মনে মনে সাগর কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ এ সমস্ত লোকজনের খারাপ মানুষের সাথে খুব ভাল যোগাযোগ থাকে। কেবল ফোনে কথা বলেই অনেক কিছু করে ফেলতে পারে। শেষে সে নিজেই না কোনো বিপদে জড়িয়ে যায়!

কমলা বলল, 'কি চিন্তা করতাছো? খবরডা দিতে পারবা না?'

'অহন টুনিরে কোই পামু হেই চিন্তায় আমার মাতা ঘুরতাছে!'

কমলা একটি হাত তুলে সাগরের পিঠে হালকা চাপড় মেরে বলে, 'আরে পাইলেইত্ত! না পাইলে তোমারে দোষ দিতাছে কে? হ্যায় ঢাকা শহর ছাইড়া পলাইছে কিনা কে কইবো? তয় বাদলরে কতাডা মনে কইরা কইবা! অবশ্য অবশ্য কইবা!'

সাগর বলল, 'তয় আমারে জব্বর শক্ত একট কাম দিলেন ভাবি! আজগর ভাইরে আমি যেমন কোনোদিন পর ভাবি নাই, তানিও যে আমারে পর মনে করে নাই হেইডা ভাইব্যাই খুব শান্তি পাইলাম!'

'মিয়া, বস্তিতে যহন ভেউ-ভেউ কইরা কানতা, তহন তোমার এই আজগর ভাইই তোমারে কান্ধে নিয়া রাস্তায় হাঁটতো। রাইতে ঘুমপাড়াইতো। কতদিন তোমার মায়েরে ছাড়াই আমার কাছে থাকছ হিসাব নাই!'

তারপর আবার বলে, 'আমার কথা হাচা না মিছা হেইডা মদিনার মায়েরে জিগাইলেই পাইবা!'

'আইজ যাই! সাগর বিনিত ভাবে বিদায় চায়।

'আইচ্ছা যাও!' বলে কমলা তার একটা হাত ধরে বলল, 'তোমারে ভালা পোলা বইলাই মনে হয়! এইখানে ঘনঘন আইসো না। আর কোনোদিন শখ কইরাও এইসব কাশের ওষুদ খাইবা না!'

তারপর আবার বলল, 'আইজ থাইকা মনে কর তোমারে শাসন করনের একজন মানুষ অন্তত আছে!'

সাগর মনেমনে বলল, ছ্যা! রান্ডির আবার সংসারি বুলি! কিন্তু কমলাকে কিছু বলল না। আজগরের দিকে তাকিয়ে বলল, 'তোমারও কি শ্যাষ কতা?'

'কোনডার কথা কও?' বুঝতে না পেরে জানতে চায় আজগর।

'এই যে ভাবি কইলো টুনির তালাকের কতা?'

'মনে মনে কতবার যে তালাক দিছি তার ঠিক নাই!'

তারপর আজগর সাগরের কাঁধে হাত রেখে বলল, 'দ্যাখ মিয়া! ট্যাকা দিয়া তারে আমি পাইছিলাম ঠিকই। কিন্তু হ্যায় আমারে কোনোদিন মহব্বত করতে পারে নাই। আমার বিশ্বাস হ্যায় খুব ছোডো বেলা থাইক্যাই কাউরে ভালবাসে। যার কথা অয় মিনিটের লাইগাও ভুলতে পারে নাই!'

সাগর কেমন বোকার মত তাকিয়ে থাকে আজগরের মুখের দিকে।

আজগর বলে, 'আইচ্ছা সাগর, হাচা কইরা একটা কথা কও তো?'

'কি কমু?'

'টুনি কি তোমারে মহব্বত করে? তোমার লগেই তো তার ভাব-সাব বেশি আছিল!'

সাগর বলল, 'কোনোদিন তো আমারে এমন কতা কয় নাই! তয় তোমার লগে বিয়ার আগে একবার আমারে কইছিলো বিয়ার কতা। কিন্তু তার বাপ রাজি অয় নাই!'

'তাইলে ঠিকই আছে! তোমারে ছাড়া আর কাউরে সে মহব্বত করতে পারে না। বস্তিতে এমন পোলা আর দেখি না। আরে মিয়া! আমার মতন খচ্চর মানুষ তোমারে পছন্দ করতে পারে আর মাইয়ারা তো আরো নরম দিলের!'

তারপর একবার খুক করে কেশে নিয়ে গলা পরিষ্কার করে আবার বলে আজগর,' কমলা তোমারে এহানে ঘনঘন আইতে না করছে ক্যান জানো? কারণ সেও তোমারে মহব্বত কইরা ফালাইতে পারে আর হেই ডরেই তোমারে এইহানে ঘন-ঘন আইতে না করতাছে। বুঝলা নিকি মিয়া?'

আজগর হা হা করে ঘর ফাটিয়ে হাসে।

কমলা সাগরের দিকে তাকিয়ে বলল, 'যেই কথা কইলাম হেই মতন কাজ চাই কিন্তু!'

সাগর বলল, 'আমার সাধ্য মতন চেষ্টা করুম।

তারপর বলল, 'রাইত অনেক অইয়া গেছে। আমি যাই তাইলে!'

কমলা বলল, 'যাও। ভালা থাইকো। কাইলকা একটা ফোন দিবা। কমলা তাকে বিদায় জানিয়ে বাইরে বের হয়।

আজগর বলল, 'তুই আর আহিস না। ট্যাকা পাঠানের ব্যবস্থা হইয়া যাইবো!'

তারপর গালিবকে বলল, 'গালিব, তুই হ্যারে রাস্তায় উঠায়া দিয়া আয়!'

গালিব নামের লোকটা সাগরকে পেছন পেছন আসার ইঙ্গিত করে সামনে এগোয়।

কিছু দূর আসবার পর গালিব বলল, 'রিকশায় গেলে পারেন! নাইলে সোজা হাঁটলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে চইলা যাইতে পারবেন!'
(চলবে..)


মন্তব্য

কীর্তিনাশা এর ছবি

চলুক জুলিয়ান ভাই। আমিও পড়ে যাই।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আমার হাতটা ধরেন দেখি! তাহলে আর পড়বেন না! দেঁতো হাসি

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

বলার অপেক্ষা রাখে না । এতো ভালো হছে যে বলে বোঝাতে পারবো না । জুলিয়ান ভাই পাঁচ তারা আপনার জন্য।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

অ-নে-ক ধন্যবাদ দেবোত্তম।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

পড়ে যাই... ভালো লাগা বেড়ে যায় দিনে দিনে...

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

কোয়ান থাকি আ'লেন? ভালোসেন?
ধন্যবাদ আখতারুজ্জামান।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

উপন্যাস এভাবে পড়াটা কঠিন।
তবু দুটো পর্ব পড়ে ফেললাম।
ভালো লাগছে।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

কঠিন কাজ করার নামই তো সাধনা। অনেক ধন্যবাদ।
পুনশ্চ:
ঘুমাই না। কিন্তু ঘুমের ভান করি। দেঁতো হাসি

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।