বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঘূর্ণায়মান মঞ্চটি রক্ষায় এগিয়ে আসুন

যূথচারী এর ছবি
লিখেছেন যূথচারী (তারিখ: সোম, ২৮/০৪/২০০৮ - ৬:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই লেখাটির মূল তথ্যগুলো লালমনিরহাট থেকে পাঠিয়েছেন জেলার দুই সংস্কৃতিকর্মী শৌর্য দীপ্ত সূর্য এবং আশরাফুজ্জামান মণ্ডল।

লেখকদ্বয় জানাচ্ছেন, ১৯০৫ সালে লালমনিরহাট জেলায় নির্মাণ করা হয়, এমটি হোসেন ইন্সটিটিউট মিলনায়তন। তারা বলছেন, একসময় এটি ছিল ভারতের অন্যতম বিখ্যাত ঘূর্ণায়মান মঞ্চ; ঘূর্ণায়মান মঞ্চ মানে, নাটক মঞ্চস্থ হবার সময় দর্শককে সেট সাজানোর একঘেয়েমি পোহাতে হতো না। একটি দৃশ্য শেষ হবার পর পর্দা নেমে যাবার সাথে সাথেই মঞ্চটি ঘুরিয়ে দিলেই মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দ্বিতীয় দৃশ্য শুরু করা যেতো। ভারী ও মূল্যবান কাঠের তৈরী এ মঞ্চটিতে একাধিক সেট নির্মাণ করা যায়।
১৯০৫ সালে নির্মিত হবার পর থেকে এখানে নাটক মঞ্চস্থ হওয়া ছাড়াও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। অবিভক্ত বাংলার অনেক বরেণ্য কবি-সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তির আগমনে মুখরিত ছিল এ অডিটোরিয়াম। এখানে কবি জসীমউদ্দিনের উপস্থিতিতেই মঞ্চস্থ হয়েছিল তাঁর গীতিনাট্য ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’। কবি মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন ‘আজ আমার রাশিয়াতে বলশয় থিয়েটারের কথা মনে পড়ছে’।
ভারত বিভাগের পর এখানে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কিছুটা কমে যায় এবং ১৯৬৫ সালের পর থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতো। লালমনিরহাট শহরের অসংখ্য প্রবীন ব্যক্তির স্মৃতিতে আজো এমটি হোসেন অডিটোরিয়ামে সায়রা বানু, দীলিপকুমার কিংবা উত্তম কুমারের অভিনীত ছবি উপভোগ করার স্মৃতি জ্বলজ্বল করছে।

পশ্চিম বঙ্গের সাহিত্যিক ড. সুবোধ তালুকদার এই মঞ্চটিতে অনুষ্ঠান উপভোগের স্মৃতিচারণ করেছেন তার জীবনীমুলক গ্রন্থ ‘কাঠ বাঙালের কড়চায়’।

দীর্ঘকাল ব্রিটিশ ভারতের এই ঐতিহ্যবাহী ঘূর্ণায়মান মঞ্চটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা দাবি করছেন এই মঞ্চটি সংস্কার করে এখানে আবার নিয়মিত নাট্যমঞ্চায়নের ব্যবস্থা।

ছবি: শৌর্য দীপ্ত সূর্য এবং আশরাফুজ্জামান মণ্ডল


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

আমাদের দেশে ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রচেষ্টা একেবারেই দায়সারাগোছের। আর যারা অতীত নিয়ে ভাবতে চায়না, তাদের ভবিষ্যত যে উজ্জল গতে পারে, সে তো বলাই বাহুল্য।

**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

তারেক এর ছবি

চলুক
দাবীর সাথে একাত্ম হলাম।
কিছুই জানতাম না এই মঞ্চের ব্যাপারে... আপনার সৌজন্যে জানা হলো। কৃতজ্ঞতা।

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

একমত। চলুক

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এইরকম একটি ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ আছে বগুড়ায়। শুনেছি, যশোরেও একটি ছিলো। লালমনিরহাটের এই মঞ্চের কথা জানা ছিলো না।

ছোটোবেলায় (ষাট দশকের মধ্যভাগ) বগুড়ার ঘূর্ণায়মান মঞ্চে নাটক অভিনীত হতে দেখেছি মনে আছে। মঞ্চের নাম তখন ছিলো এডওয়ার্ড ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ (এখনো নাম অপরিবর্তিত আছে কি না জানি না), অবস্থান এডওয়ার্ড পার্কের অভ্যন্তরে। নাটশালার সামনে শান-বাঁধানো পুকুর, তার পাশে উডবার্ন পাবলিক লাইব্ররি।

সেই সময় মেরিনা টকিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এখানে সিনেমা দেখাতো। পরে ষাটের দশকের শেষের দিকে সিনেমা হলটি অন্যত্র সরিয়ে নিলে রঙ্গমঞ্চটি নীরব পড়ে থাকে। যতোদূর মনে আছে, স্বাধীনতার পরে মঞ্চটির সংস্কার করা হয়েছিলো। এখনো চালু আছে কি না বা ব্যবহৃত হয় কিনা জানা নেই। কেউ জানাতে পারলে খুশি হই।

এই স্থাপনা/প্রতিষ্ঠানগুলির সংরক্ষণের জন্যে যা-কিছু-সম্ভব করা উচিত।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

দ্রোহী এর ছবি

কোন চিন্তা নেই। বাংলাদেশ তো.............. কেউ কোনদিন এই মঞ্চ সংস্কারের উদ্যোগ নিবে না। কালের আবর্তে অতি দ্রুত হারিয়ে যাবে এই মঞ্চ। এটা বুঝতে দিব্য দৃষ্টিধারী হতে হয় না।


কি মাঝি? ডরাইলা?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নাটকের পুরোনো মঞ্চ সংস্কার করবে কী
নতুন এবং চালু মঞ্চগুলো একটা একটা করে বন্ধ করে দিচ্ছে

যূথচারী এর ছবি

মুহাম্মদ জুবায়ের ভাইয়ের সাথে একাত্ম হয়ে বলতে চাই, দেশের অন্য অঞ্চলে যেসব ঐতিহ্যবাহী মঞ্চ বা মিলনায়তন চোখের আড়ালে নষ্ট হচ্ছে, সেগুলো সম্পর্কে একটু জানাবেন?


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।