হ য ব র ল

কল্যাণ এর ছবি
লিখেছেন কল্যাণ [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০১/১১/২০১৫ - ১২:৪২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শত ব্যাস্ততার মাঝেও, দিনে-দুদিনে নিয়ম করে একবার হলেও আসি। ঘুরি ফিরি, মনে মনে মন্তব্য লিখি, দেয়া হয় না। মাঝে মাঝেই মনে করি এমন করে ফাটায় একটা লেখা লিখব যে আর কেউ ঠ্যাকাতে পারবে না; দুই খান সচলত্ব একসাথে এসে জমা হবে ইনবক্সে। প্রথমটায় এই হাচলত্বের অবসান, দ্বিতীয়টা বোনাস একাউন্ট – বেছে নাও চরমপ্রকাশ বা ত্রিমাত্রিকববি বা মিথ্যাপীর বা ঢিমু বা এইরকম কিছু। কত কিছু মনে পড়ে, আঙ্গুল নিশপিশ করে, পেটটা যেন ফুলে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীরস রিপোর্ট লিখি, রিস্ক এনালাইসিস করি, স্পেসিফিকেশন লিখি, স্ট্রাটেজি লিখে জমা দেই, বোর্ডে দাঁড়ায়ে স্ট্র্যাটেজি ব্যাখ্যা করি, বিড ইভালুয়েশন করি, চোরেরা অদৃশ্যচাপ দেয় তাদের পছন্দ মত আবর্জনা কেনার জন্যে; এই সবেই দিন শেষ হয়, লেখা আর হয় না। পুরাই ম্যাটেরিয়াল কাজ-কার্বার।

লেখালেখির মূল্য অবিশ্যি অনেক বেড়ে গেছে আজকাল। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল এই মূল্য লেখককে শোধ করা হয় না, লেখকই বরং শোধ করে, অসময়ে মরে যেয়ে। কিন্তু আমলেখকের জীবন গেলেও দেশের অর্থনিতির চাকাটা মনে হয় বেশ নড়েচড়ে, প্রবৃদ্ধিতেও হয়ত শান পড়ে।

সমস্যা একটা হলেই সেটা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়াই চল। এর সাথে আছে দোষ করে সেটা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা, সীমাহীন নির্লজ্জতা, দোষ করেও এদিক ওদিক করে পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা এবং তার ব্যাবস্থা। ক্ষমতায় বড় বড় পদে যারা, তারা বেশ গায়ে ফু দিয়ে নিরাপদেই ঘুরে বেড়ায়, তাদের কোপ খাওয়া লাগে না, ট্র্যাফিক জ্যামে পড়া লাগে না।

মানুষ মেরে ফেললে, প্রশাসনের খুব একটা করার কিছু আসলে থাকে না। ষোল কোটি বেডরুম পাহারা দেওয়া অসম্ভব। আর দুই একটা বোকচোদ মরলে কিছু আশে যায় না – এটাও একটা ব্যাপার। ভোটব্যাঙ্ক ঠিক রাখা বেশি জরুরী। আবার ধরো দোষতো ওই বেকুবগুলোরই, তারাই তো লেখালেখি করে প্রথমে আঘাত দিয়েছে। তুমি ট্রাকের সামনে ঠ্যাং বাড়িয়ে দিয়ে ঠ্যাং খোয়ালে ট্রাকের কি দোষ বাপু! এ প্রসংগে মনে করা যেতে পারে ইতিপূর্বে একজন লেখক হত্যায় স্বনামধন্য আরেক লেখক বানী দিয়েছিলেন "কারণ যে বইটা তিনি লিখেছিলেন, তা এতই কুতসিত যে, যে কেউ বইটা পড়লে আহত হবে”।

শেষ্পর্যন্ত নিয়ম করে দুই একজন মরে পড়ে থাকে অথবা হাসপাতালে প্রাণ নিয়ে লড়ে। পত্রিকা টিভিওলারা গরম খবর পায়। বেশ একটা চনমনে ভাব চারিদিকে। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে খবরে। হয়ত ছুটোছুটি পড়ে যায়, ফোনের পরে ফোন যাওয়া আসা করে, টিআরপি বেড়ে গেছে নিশ্চিত।

প্রশাসন অস্বস্তিতে পড়বে এরকম মনের ভাব প্রকাশ করে যারা লেখে তাদের লিস্ট করে চোখেচোখে রাখার দরকার পড়ে। আর যারা মানুষ মারে তাদের কাজকর্মে প্রশাসনের যেটুকু অস্বস্তিতে পড়া লাগে তা এতই অকিঞ্চিৎকর যে খুনিদের লিস্টি করা বা চোখেচোখে রাখা আর ধরে ধরে গারদে পোরা লাগে না। মজা শেষ হয় নি। কিছু একটা লিখে যে পরিমাণ দোষ করা যায় তাতে জামিন পাওয়া না গেলেও মানুষ মেরে জামিন পাওয়া যায়।

নতুন একটা ব্যাবসার বেশ বোলবোলাও হয়েছে মনে হয় ইদানিং। কাউকে ফ্যালানো দরকার? যায়গামত চলে যাও নাম দিতে। নাম নিয়ে তারা মনে হয় বেশ ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে। হয়ত দায়দেনা কত আছে দেখে নেয়, সেইসাথে ফেসবুক প্রোফাইলের লিঙ্কটা সম্ভবত খোঁজ লাগায়, গুগলে যেয়ে ভাল মত সার্চও করে থাকতে পারে। সব ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে বলে কথা। এই যে, ডিজিটাল প্রসংগে মনে পড়ে গেলো। সম্প্রতি এক বেচারা এমআরপির আবেদন করলেন অনলাইনে, সব ঠিক ঠাক করে, প্রিন্ট করে কাগজ নিয়ে অফিসে যেয়ে শুনলেন ওতে কাজ হবে না। হাতে লিখে ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে, চমতকার। যাইহোক, ঐ যে নতুন ব্যাবসার কথা যা বলছিলাম, উপর মহলে দহরম মহরম নেই – টিক। পত্রিকা/টিভির জ্বালাময়ী সমাজ বিশ্লেষক নয় – টিক। সমাজের বিশিষ্ট নেতাগোছের ব্যক্তি নয় – টিক। লেখে টেখে – টিক, ব্লগে লেখে – আরে শালা মারো গুয়া – টিক টিক টিক। পিছে লেজুড় মোতায়েন কর, গতিবিধি জেনে নিতে হবে তো। বেশ কিছু বেকারের কর্ম সংস্থান হয় পিছু নিতে গিয়ে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাবহার নিশ্চিত হয়, দেশের অর্থনিতির চাকা দুইএক পাক ঘোরে। বাহ বেশ বেশ। সব মিলিয়ে উন্নতি আর উন্নতি।

বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে মাঝে মাঝে একটা ব্যাপার পাওয়া যায়। সুদূর ভবিষ্যতের মানুষ যন্ত্রের কাছে ধরা খেয়ে গেছে। যত মানুষ সব ক্যাপ্সুলের মধ্যে পুরে ফেলা হয়েছে, তাদের শরীর হচ্ছে পাওয়ার সোর্স - ব্যাটারি। অথবা খান কতক মানুষ নেটওয়ার্কে জোড়া দিয়ে ব্রেন ওভারক্লক করে জটিল জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। এতে সাব্জেক্ট মরে গেলেও সমিস্যা নেই, যোগান আছে অফুরন্ত। এই ঘটনা কিন্তু আদতে ঘটেই গেছে। মানুষগুলোকে সব জোয়ালে জুড়ে দেয়া হয়েছে, নিত্যদিনের টানাটানি, অশান্তি, দূষিত বাতাস, জল, সীমাহীন দুর্নিতি সত্ত্বেও জোয়াল চালু আছে। যৎসামান্য নাগরিক সুবিধা দিলেও চলে, না দিলেও চলে। প্রাণটা বের হয়ে গেলেও তোমরা শুধু দিয়েই যাও। তাদের বংশানুক্রমিক সুখসুবিধার ব্যাবস্থা করেই যাও। তোমার পিঠে চামড়া থাকল কি গেলো তাতে কিছু যায় আসে না।

শাঁখের করাত চেন? আসতেও কাটে যেতেও কাটে। কেউ কারোও চেয়ে আসলে কম যায় না, এ বলে আমাকে দেখ ও বলে আমাকে, নিজের নিজের হোল নিয়েই তারা ব্যাস্ত। তাদের দরকার মত পড়ে যাওয়ার জন্যে দু-চার খান বডি কোন ব্যাপারই না। আবার স্বজনেরাও সব ওতপেতে আছে, ছাড়লেই হল, তৈরি সব। এর পরিবর্তন চাও? তাও দেয়া যাবে - বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা আছে, সুশীলেরা আছে, সামাজিকধান্দার পথপ্রদর্শকেরা আছে। মোদ্যা কথা তুমি বাটে পড়েছ, সোজা বাংলায় তোমার পাছা মারা গেছে।

কল্পকাহিনী সত্যি হয়ে গেছে, মানুষ এখন হল গিয়ে একপাল যন্ত্রের ব্যাটারি। তারাতো যন্ত্রই, তুমি যখন মর তাদের কিছু যায় আসে?


মন্তব্য

আয়নামতি এর ছবি

কল্যাণ এর ছবি

মন খারাপ

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অতিথি লেখক এর ছবি

কিচ্ছু ভালো লাগে না। দূর ছাই! কাল থেকে জীবনটা আরেকবার মাটি হয়ে গেল। মানুষ মরে গেলে কারও কিছু যায় আসে?

দেবদ্যুতি

কল্যাণ এর ছবি

মন খারাপ

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অতিথি লেখক এর ছবি

.....................

স্বয়ম

কল্যাণ এর ছবি

মিজান, পিষে ফ্যালো

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অবশেষে লিখলেন! যদিও এটা লিখতে না হলেই ভাল হত মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

কল্যাণ এর ছবি

সংরক্ষণে ক্লিক করে আমি নিজেও ঠিক এই কথাটাই ভাবছিলাম।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

কল্যাণদা, এর চেয়ে আপনার লেখা ব্ল্যাক হোলের ওপারেই থেকে যেত, কোন আপত্তি ছিল না!!

____________________________

কল্যাণ এর ছবি

মন খারাপ

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

কৌস্তুভ এর ছবি

আজ সারাদিন সচলের হোমপেজে সব এ বিষয়েরই লেখা। কিন্তু যে যাই বলুক, দিনশেষে সবই হযবরল, কারণ সরকার থেকে আমজনতা কেউই সেগুলোকে পাত্তা দিচ্ছে না।

কল্যাণ এর ছবি

পিওর হযবরল। দুঃখ হচ্ছে ভোদাই আমজনতা বুঝতেছি না যে সরকার ও বিরোধী সহ ক্ষমতার আশেপাশে যারা তারা সবাই ট্যাক্সের টাকায় বেশ আছে; দুনিয়ার অন্য কোথাও হয় দ্বিতীয় একটা আবাস নয় দ্বিতীয় একটা পাসপোর্ট নিদেনপক্ষে মোটা একাউন্ট তাদের নিশ্চয়ই রেডি। সুতরাং ব্যাং সিদ্ধ হলেও তাদের আসলে খুব একটা কিছু আসছে যাচ্ছে না, বরং আলু পুড়িয়ে খেতেই সবার উৎসাহ।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।