পাগলা নাসির

খেকশিয়াল এর ছবি
লিখেছেন খেকশিয়াল (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৬/০৭/২০০৯ - ৪:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নাসিরউদ্দীনের সাথে আমার পরিচয় ক্লাস টুতে। আমার ঠিক মনে আছে। দেখতাম ক্লাসে আসতো.. চুল উস্কো-খুস্কো একটা ছেলে। আমার পাশেই বসতো। কেমন কেমন যেন ভাব, সবকিছুতেই দুষ্টামি, এটা নাড়ছে তো ওটা ধরছে.. ওটা ধরছে তো সেটা পাড়ছে। কয়েকদিনে মোটামুটি একটা খাতির হয়ে গেল। একদিন স্কুলে যাব, নতুন ঘরকাটা অংক খাতা কিনেছি। ক্লাসে গিয়ে একটু পর পর খালিখাতা খুলছি, ঘ্রাণ নিচ্ছি.. কখন অংক করবো। টিফিনের ঘন্টা বাজলো। ক্লাসে আসলাম, ডেস্কের বক্সে দেখি আমার সাধের নতুন অঙ্ক খাতা নেই! খুঁজি, খুঁজি, পাই না..
নাসিরউদ্দীন বলল, "কি খুঁজিস?"
আমি বললাম, "আমার অংক খাতা" বলার সাথে সাথেই দেখি ও হাসতে লাগল। আমি সন্দেহ করে ওর ডেস্কে উঁকি মেরেই দেখি আমার খাতাটা। ছিঁড়ে কুটিকুটি করে রেখেছে। আমি রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে কি বলবো বুঝতে না পেরে ওর দিকে তাকিয়েছিলাম। আমার কথা হল, "তুই খাতাটা নে ভাল কথা, তুই ওটা ছিঁড়লি কেন?"

সুকুমার রায়ের পাগলা দাশু আমি তখনো পড়িনি। ক্লাস ফাইভে গিয়ে হাতে পাই যতদূর মনে পড়ে। কয়েকদিন আগেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে আমার ব্যাপারটা খেয়াল হল, আমি বন্ধুদের বললাম, "ব্যাচের মধ্যে যদি কাউকে পাগলা দাশু বলা যায় তবে সে নাসিরউদ্দীন।" সবাই স্বীকার করেছিল। আমাদের যখন বলতে গেলে সবারই নিজেদের কিছু জিগরী দোস্ত হয়ে গেছে, দল হয়ে গেছে, তখনো নাসিরউদ্দীনকে দেখতাম তেমন কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেই। একদিন ক্লাস থ্রীতে টিফিনের সময় খেলার মাঠে দেখি এক অদ্ভুত দৃশ্য। একটু আগেই দেখছিলাম ফুটবল খেলছিল কিছু বন্ধু, নাসিরউদ্দীনও খেলবে, তো ওকেও নেয়া হল। টিফিন খাচ্ছি, দেখি মাঠ থেকে ক্যা ক্যা করে চিল্লাছে নাসির! গিয়ে দেখি বিপক্ষ দল আর ওর নিজের দল একসাথে মাঠে ফেলে ওকে তুলধুনো করছে! কিন্তু কিসের কি.. নাসির পাগলা হাসছে, মাটিতে ওলট পালট খাচ্ছে আর বলছে, "পেটে লাথি মারিস না, পেটে বাচ্চা আছে!"। নাসির ওদের সাথে কি করেছিল সেটা এই মূহুর্তে মনে নেই, তবে ওর কথাটার জন্যই এই কাহিনীটা মনে আছে।

নাসির আমাদের সাথে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েছিল। ক্লাস ফোর ফাইভে ও একটা অদ্ভুত ছবি এঁকেছিল মনে আছে, একটা মহিলা আর তার পেটে একটা হাত পা ছুঁড়ে আছে ছোট মানুষের মত বস্তু। আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম এটা কি, ও বলেছিল, "এটা একটা মহিলা, আর তার পেটে বাচ্চা নাচছে।" নাসির, অমিতাভ, রাকেশ, মিন্টু ওরা আইরিন টিচারের কাছে পড়তো। একদিন নাসির নাকি একটা খাতা নিয়ে গেছে, মলাটে খুব সুন্দর একটা মেয়ে। সবাই তো ওর খাতা নিয়ে টানাটানি, টিচার তখনো পড়াতে আসেননি। এভাবে টানাটানি করতে করতে মিন্টু একসময় ছিঁড়েই ফেললো মলাটের কিছুটা। নাসির রেগে বলল, "তুই এটা ছিড়লি কেন.. তুই এখন এই মেয়েকে বিয়ে কর!" টিচার তখন এসে পড়েছিলেন, শুনেই জোড়া বেত দিয়ে নাসিরকে দিলেন উত্তম মধ্যম।

নাসিরের এক চাচাতো বড় ভাই বাবার কাছে পড়তে আসতো। আমাদের স্কুলেই উঁচু ক্লাসে পড়তো। নাসিরউদ্দীনের কথা উঠতে একদিন বললেন, "আরে ওকি করেছে জানো? আরো পিচ্চি থাকতে কারা জানি ওকে খেঁপাচ্ছিল ওর মুসলমানী হয় নাই বলে। ও যখন জানতে পারল মুসলমানী ব্যাপারটা কি, তখন একদিন বাথরুমে ঢুকে নিজেই করতে গেল। কেউ তো জানে না। একটু পরে আল্লারে বলে চিৎকার! সবাই দৌড়ে এসে দেখে সে এক রক্তারক্তি ব্যাপার! সাথে সাথে হাজাম ডাকালেন চাচা, হাজাম এসে তারপর বাকিটা সারলো! ওতো একটা পাগল!"

নাসির ছিল শামসুল হক স্যারের প্রিয় বান্দা। একদিন স্যার আসতে দেরি করছে সবাই ঝুঁকে দেখতে গেছি, দেখি হঠাৎ করে হুড়মুড় করে সব পড়লাম একদম স্যারের পায়ের কাছে। স্যার ত স্কেল দিয়েতো আমাদের হাতে ঠাসঠাস, বললেন "এমন করলি কেন?" কে জানি বলল, "স্যার আমরা তো দেখতে গেছিলাম, নাসির পিছন থেকে ধাক্কা দিলে!" নাসির দেখি হাসছে, স্যার জিজ্ঞাসা করলেন, "নাসির ধাক্কা দিলি কেন?" নাসির বলল, "সব একসাথে কি যেন দেখছে, আমিও দেখব, পারছিলাম নাতো তাই একটার উপরে চড়তে গেলাম, ওটা ভার রাখতে পারলো না.."

শুনলাম নাসির এখন দুবাই আছে। আমার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল সম্রাটের বাড়িতে, ২০০০ এর দিকে । সম্রাটের কথা আগে একবার আপনাদের বলেছি, সে আরেক বস্তু! তো গিয়ে দেখি সম্রাটের খাটের এক কোনে নাসিরউদ্দীন বিছানার চাদর লুঙ্গির মত করে পড়ে গালাগালি করছে সম্রাটকে, আমাকে দেখেই বলল, "দেখ তো দোস্ত! লুঙ্গিটা খুলে নিয়ে গেছে! দিতে বল নাহলে বিছানায় হিশু করে দেব!"


মন্তব্য

সাইফ তাহসিন এর ছবি

"দেখ তো দোস্ত! লুঙ্গিটা খুলে নিয়ে গেছে! দিতে বল নাহলে বিছানায় হিশু করে দেব!"

জটিল বস, জটিল, তুমারে দিয়া লেখা হইব রে ভাই, কি সব আবজাব লেখি, তুমার লেখা পড়লে মনডা ভালু হইয়া যায়। তা নাসু পাগলা এখন দুবাইতে কী করে?

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

খেকশিয়াল এর ছবি

শুনছিলাম ব্যবসা করতাছে, খবর নাই অনেকদিন, দেখি একটা খবর নিতে হইবো

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

সবজান্তা এর ছবি

দারুণ লাগলো। লেখায় পাঁচ তারা।


অলমিতি বিস্তারেণ

রেনেট এর ছবি

হো হো হো

চমেতকার! ফাইভ স্টার!
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

মামুন হক এর ছবি

হাহাহা...দারুন লাগল।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

হো হো হো -বিপ্লব-


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

জিনিস বটে একখান ! দেঁতো হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নিবিড় এর ছবি

মজা লাগল হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

দময়ন্তী এর ছবি

দেঁতো হাসি
কি কান্ড!
----------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

ছোটবেলার দুরন্তপনা/ ফাজলামি ( দেঁতো হাসি ) বজায় রাখতে পারছে যেই, সেই নমস্য!

খেকশিয়াল এর ছবি

নাসির পাগলা এই লেখা কোনভাবে পড়লে আমার খবর আছে হেহেহে
হগলরে ধন্যবাদ

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

সবাই হাসছে দেখি। আমার কিন্তু নাসিরের জন্য মায়া লাগছে। মন খারাপ
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

হিমু এর ছবি

মজা লাগলো খুব। নাসিরের মতো কিছু মানুষ আছে দেখেই পৃথিবীটা ভালো লাগে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

স্নিগ্ধা এর ছবি

অন্যরকম চিন্তা করা মানুষজন আমার বড়ই পছন্দ - এদের জন্যই পৃথিবীটা একঘেয়ে হয়ে যায় না!

রণদীপম বসু এর ছবি

হুঁম, মানুষ আসলে কখনোই কৈশোরকে হারায় না !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মজা পাইলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কী কান্ড!
____________
অল্পকথা গল্পকথা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।