নাটকের গান

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: রবি, ০২/১২/২০০৭ - ১০:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যখন শুধু একটাই চ্যানেল ছিলো, সবেধন নীলমণি আমাদের বিটিভি, তখন অখন্ড মনোযোগে সেটায় প্রাচারিত প্রায় সব নাটকই দেখা হতো। এখনো ভালো নাটক নিয়ে কথা বলতে চাইলে বুড়ো মানুষদের মতো স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি, একে একে মনে আসে ছোটবেলায় দেখা নাটকগুলোর কথা।
আজ আনমনে ভাবতে গিয়ে অনেক আগে দেখা অনেকগুলো নাটকের বিচ্ছিন্ন কিছু দৃশ্য, সংলাপ আর গানের কথা মনে আসছিলো এক এক করে।
সংশপ্তকের ডায়ালগ মনে পড়ে, টাকা আমার চাই, নইলে জমি! মধু পাগলা, হুরমতী আর কানকাটা রমজানের কথাই বা ভুলি কেমনে?
সম্ভবত বারো রকম মানুষ নাটকের একটা বহুল প্রচলিত সংলাপ ছিলো- ছিটগ্রস্ত বালিকা। রূপনগরের খালেদ খানের মুখে- ছি ছি, তুমি এত খারাপ- সেই ছোটবেলায়ও বলতাম বন্ধুদের।
রূদ্্রের লেখা গান- ভালো আছি ভালো থেকো- প্রথম শুনেছিলাম কোন একটা নাটকে। নাম ভুলে গেছি, কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে- শংকর সাঁওজাল ছিলেন সেই নাটকে।
নাটকের গান কথা ভাবলেই আমার সবচে বেশি মনে পড়ে অয়োময়ের কথা। বেশ কিছু সুন্দর গান ছিলো তাতে, যেমন,

-> আউলা চুলে নাচোরে,
বাউলা গলায় গাও,
নাচিতে নাচিতে বন্ধু-
এদিক ওদিক চাও।

এটা মনে হয় আবুল হায়াতের গলায় চিত্রিত হয়েছিলো। তাই কি?
আরো একটা গানের খন্ডাংশ মনে পড়ে-

->
আমারে লইয়া চলো রহমত চাচার বাড়িতে,
রহমত চাচা বইসা আছে আমড়া কাঠের পিড়িতে।

আরেকটা গান মনে আছে। মোবারক যখন পাখিকে গোসলের জন্যে নদীতে নিয়ে যায়, তখন একটা গান গাইছিলো-

-> দুনিয়া চলে চমৎকার,
চলে দুনিয়া চমৎকার,
আমি এই দেখি চান্দের আলো,
এই দেখি অন্ধকার।

তবে, অয়োময়ে প্রচারিত আমার সবচে পছন্দের গান হলো-
-> আসমান ভাইঙ্গা জোসনা পড়ে,
আসমান ভাই-ঙ্গা-া-া জোসনা পড়ে,
আমার ঘরে জোসনা কই?
আমার ঘরে এক হাঁটু জল পানিতে থই থই।

খুব মন খারাপ হলে, যখন নিজেকে প্রতারিত মনে হয়, অথবা অবহেলিত, নিজে নিজে এই গান গেয়ে উঠি।
আরেকটা গানের এক লাইনও আমার ভীষন প্রিয়-
" আমার মরণ চানি্ন পহর রাইতে যেন হয়...।''

নাটকের গান নিয়ে ভাবতে বসে আরেকটা গানের কথাও মনে পড়ছে- শুভ্র দেবের গাওয়া নাকি গলার গান-
-> জীবনের ছোট ছোট ঢেউ,
অভিমানে, আবেগে, নিয়ে যায় কোথায়,
জানে না কেউ। জানে না কেউ।

শুভ্র-র গান আমার খুব ভালো লাগে না। তবু মনে পড়লো দেখে লিখলাম।

আরেকটা গানও আমার খুব পছন্দের ছিলো। কোন নাটক, কার গলায় চিত্রায়িত মনে নেই, আফসানা মিমি, বা শান্তা ইসলাম হবে হয়তো, গানটা এরকম-
-> থেকে থেকে কোকিল ডাকে ,
মন যে কেমন করে লো,
চারিধারে জোসনা ঝরে,
আমি একা ঘরে লো!

অতীব চমৎকার গান। গানের শেষে, আরেকটা জটিল ডায়ালগ আছে, "আহারে, মইরা যামু গা!''

প্রশান্ত জলাশয় কত দূরে আর কত দূরে- বলে একটা গানের কথাও মনে পড়ছে খুব। এই একটা লাইনই জানি, সেটাই গুনগুনাই মাঝে মাঝে।

লিখতে লিখতে অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে- আপাতত শেষ করি আমার খুব প্রিয় একটা দৃশ্যের কথা বলে।
অয়োময় নাটকে, আবুল হায়াত তার সবচে ছোট মেয়েকে কোলে তুলে গলা জরিয়ে গান গাইছেন,
আগে চলে দাসী বান্দি
পিছে সখিনা, ও ময়না পিছে সখিনা,
তাহার মুখটা না দেখিলে, প্রাণে বাঁচতাম না!
গাওয়া শেষে কি একটা কথার পরে হায়াত পিচ্চি মেয়েটাকে বলছেন, " জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ, বলো তো মা কই যাই?''
ঐটুকুন মেয়ে চটপট করে বলে, " বাজান, তুমি গাছে ওঠো!''

এখনো মনে পড়লে প্রাণ খুলে হেসে উঠি, জীবনের সরলতায় মন ভেজাই।
-------------!!!----------------


মন্তব্য

কর্ণজয় এর ছবি

পুরানো নাটকের গান বললে প্রথম মনে হলো .. আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে
হুমায়ূন আহমেদেও কোন সিরিজটায় যেন ..
ধুর ছাই কিসস্যূ মনে পড়ছে না

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এটা সম্ভবতঃ এইসব দিনরাত্রি ।
মামুনুর রশীদের একটা ধারাবাহিক নাটকে শংকর সাঁওজাল গাইতেন-' ভালো আছি ভালো থাকি' সম্ভবতঃ 'স্বপনের শহর'

'সেই এক গায়েন' নাটকে জহিরুদ্দিন স্বপন একটা দুর্দান্ত গান গাইতেন । এই মুহুর্তে মনে পড়ছেনা ।

টিসা ও সেলিম(মাহবুব!) এর একটা নাটকে সেলিম গাইতেন ' কাশফুলের মালা পড়াব তোমার অংগে...'

কুলনাই কিনারা নাই ' নাটকের শেষদৃশ্যে যখন আফজাল সদ্য বিধবা সুবর্নাকে ফিরিয়ে আনছেন তার শ্বশুর বাড়ী থেকে তখন একটা গান বাজতো । বড় হাহাকারময় । এই মুহুর্তে মনে পড়ছেনা ।

মানস বন্দোপাধ্যয়ের একটা গানে ছিলো কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া- ' তুমি ছিলে শালবনের রাজা'

সদরুল পাশার একটা নাটকে বাজিয়েছিলো- ' আই লাভ ইউ মর দ্যান আই কেন সে...'

একটা মুক্তিযুদ্ধের নাটক প্রায়ই দেখাত । হুমায়ুন ফরিদী ছিলেন । ছোট্ট একটা মেয়ে গানের সাথে নাচতো- 'মোমের ও পুতুল,মোমের দেশের মেয়ে' । মেয়েটার ওড়না দিয়ে চোখে বেঁধে ধরে নিয়ে যায় ফরিদীকে ।

সেই নাটক ও নাই, নাটকের গান ও নাই মন খারাপ
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

মামুনুর রশীদের একটা নাটক ছিল মুক্তিযুদ্ধের। ১৯৮১/৮২র দিকের। তার শেষ গান ছিল সবকটা জানালা খুলে দাও না...



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

নিঘাত তিথি এর ছবি

প্যাকেজ নাটক আসার পরে একটা ধারাবাহিক নাটক খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো, নাম "না"। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের নিয়ে নাটক। এই নাটকে সূচনা এবং সমাপ্তিতে একটা অসাধারণ গান ছিলো সানী জুবায়েরের গাওয়া,
"জীবনটা শুধু হিসেবের যন্ত্র নয়
বেহিসেবও জীবনের মন্ত্র নয়..."

জাহিদ হাসান, বিপাশার একটা ধারাবাহিক ছিলো, নামটা মনে পড়ছে না। খুব সুন্দর গান ছিলো একটা, "বাঁধন খুলে দিলাম", তিমির নন্দীর গাওয়া।

আর অতি বিখ্যাত "প্রতিশ্রুতি" নাটকে প্রচার হওয়া "মন শুধু মন ছুঁয়েছে" তো লিজেন্ড। নাটকটাও। মানস বন্দোপাধ্যায়- শাম্মী-লুৎফুন্নাহার লতা, কি এক জিনিস দাঁড় করিয়েছিলো! আমি দেখেছিলাম শুক্রবারের "মনের মুকুরে"তে পুনঃপ্রচারের সময়।

হাসান ভাইয়ের কথায় "কাশফুলের মালা পড়াব তোমায় আমি" গানটার কথা মনে পড়লো। তখন আমরা পিচকা। এই গান মোটামুটি সারাদিন গাইতাম বুইঝা না বুইঝা, আর আমার বড় বোন রেগে যেতো, কি ছাতামাথা গাস এগুলা? হাসি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

guesr_writer rajkonya এর ছবি

কোন একটা নাটকে (বিটিভি আমলের) একটা শুনেছিলাম,
''ডাক দিয়েছো বলেই যাব ভেব না,
তোমার ডাকে হৃদয় আমার কাঁপে নাআআআআ...
তোমার ডাকে হৃদয় আমার কাঁপে না
কাঁপে না, কাঁপে না, কাঁপে না,
ডাক দিয়েছো বলেই যাব ভেব নাআআ''
স্কুলে দুই বান্ধবী এই গানটা খুব গাইতাম। অথচ কোন নাটক, কার গান কিচ্ছু মনে নেই।

প্যাকেজ নাটক মাত্র শুরু হয়েছে। এমন সময়কার একটা নাটকে (বিপাশা, জাহিদ হাসান) কুমার বিশ্বজিত ও কনকচাঁপার গাওয়া গান,
''তুমি সাগরের চেয়ে আরো বেশি সুনীল,
যেন স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর।
তুমি জোছনার চেয়ে আরো বেশি নিবিড়,
যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় অন্তর।।'' খুভ ভাল লেগেছিল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।