ভূমিকাতেই লেখক জানিয়ে দিয়েছেন, এই বইটি মুখ নয়, মুখোশও নয়, বরং একটা ‘কথামুখ’ এর আদল তৈরি করা হয়েছে কেবল।
শেষ পৃষ্ঠার নম্বর ৪৫ হলেও, সব মিলিয়ে আট ন’হাজারের বেশি হবে না শব্দ সংখ্যা। না গল্প, না উপন্যাস, একটা বড় গল্প বরং বলা যেতে পারে এটিকে। তাই বইটির এই ক্ষীণ আকৃতির কারণেই যে লেখকের এই ভূমিকা, তা বলাই বাহুল্য।
তবু এর মাঝেই একাধারে সব করকম মুনশিয়ানা দেখালেন হাসান আজিজুল হক। কী দুর্দান্ত সূচনা। আবারও মনে হলো, গল্পের শুরুটা যদি পাঠককে অপেক্ষায় রাখতে পারে শেষটুকুর জন্যে, তাহলেই কেবল সেটা সার্থক গল্প হয়ে উঠতে পারে।
এবারের বইমেলা থেকে কিনে আনা বইগুলো একে একে পড়তে শুরু করেছি। সর্বশেষ পড়া হলো, বইমেলার বেশ জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের উপন্যাস ‘আরশিনগর’। গুডরিডসে বইটিকে পাঁচ এর ভেতরে দেড় দিতে চেয়েছিলাম, সেটার উপায় না থাকায় দুই রেটিং দেবার পরে মনে হলো, বিস্তারিত না হলেও কারণগুলো অন্তত সংক্ষেপে এখানে টুকে রাখি।
রেফারেন্স বডি বলে একটা মজার ব্যাপার প্রথম পড়ি পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে। তার সঙ্গত হিসেবে আমাদের মধ্যে একটা কথা খুব চালু হয়ে গেছিলো, ‘আপেক্ষিক ব্যাপার’। সে কতকাল আগে, সময় এখন আর ঠিক মনে নেই। কিন্তু পড়বার পর থেকে খুব ভক্ত হয়ে যাই এটার। বইয়ে দেয়া উদাহরণটা খুব সাধারণ কিছু ছিল হয়ত, চাঁদ ভাবছে সে একটা স্থির পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে কেবল, পৃথিবীটা সূর্যকে নিয়ে একই কথা ভাবছে, অথচ এরা সবাই একটা বিরাট মহাবিশ্বের অংশ হয়ে প্রতিনিয়ত ছুটেই যাচ্ছে। রেফান্সের বডি-র অদল বদল ঘটিয়ে দিলে সবাইই স্থির, আবার সবাইই গতিশীল।
এই জ্ঞান হবার পর থেকেই জেনে গিয়েছিলাম, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্যি কথা হয়তো এটাই যে, পৃথিবীর সব কিছুই আপেক্ষিক, শুধু খেয়াল রাখতে হবে তোমার রেফারেন্স বডি কোনটা।
‘ডুব’ দেখা হলো অবশেষে।
মেলবোর্নের সিনেমা হলে বসে বাংলা সিনেমা দেখবার আনন্দ অন্যরকম, সুযোগ এত কম আসে যে যখন আসে তখন মিস করতে ইচ্ছে করে না। দেশের ছবি হলে গিয়ে যদি না দেখি তাহলে সিনেমা শিল্পই বা বেঁচে থাকবে কী করে?
এবারে তবু দ্বিধায় ছিলাম অনেক। যাবো কি যাবো না, ট্রেলার দেখে আমার মনে একটা অদ্ভুত ভয়ও কাজ করছিলো, মনে হচ্ছিলো মুভি দেখা শেষে হয়তো ভয়ংকর একটা মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরবো। মনে হচ্ছিল এই গল্পের চিত্ররূপ দেখবার জন্যে আমি হয়তো আসলে এখনও প্রস্তুত হতে পারিনি, হয়তো আরও কিছু বছর লেগে যাবে আমার।
তবু দেখতে গেলাম। সব দ্বিধা পাশ কাটিয়ে, গল্পের জানা পটভূমিকে মাথা থেকে সরিয়ে দিয়ে দেখতে গেলাম ‘ডুব’।
সর্বশেষ ইমনের করা কাজ দেখেছিলাম আমাদের বসার ঘরের টিভিতে, সেটা ছিল আরএময়াইটি-র ফিল্ম কোর্সের জন্যে ওর বানানো একটা শর্ট ফিল্ম। ইমন আর তন্বীর মেলবোর্নে থাকাকালীন একটা বছর আমাদের জন্যে উল্লেখযোগ্য একটা সময় হয়ে থাকবে আজীবন, সেটা নিয়ে লিখেছি আগে এখানেই, নাম ছিল ‘গগন আজ দেশে ফিরছে”। সে দিন সকাল বেলা আমাদের বাসায় বসে দুইজনে ব্যাগ গোছাচ্ছে, আর পাশের ঘরে বসে আমি ভীষণ মন খারাপ করে লিখে চলেছি সেই ব্লগ, অতঃপর রাতে যখন ওদের প্লেনে তুলে দিয়ে আসলাম, মনে আছে তারপরের অনেকগুলো দিন আমার আর তিথি-র চারপাশ জুড়ে ছিল একটা অদ্ভুত শূন্যতা।
সেই প্লেন উড়ে চলে যাবার বছর চারেক বাদেই যে আমি আবু শাহেদ ইমনের পরিচালিত সিনেমা বড় পর্দায় দেখার জন্যে এই মেলবোর্নেরই এক সিনেমা হলের টিকেটের লাইনে দাঁড়াবো, সত্যি বলছি, এই কথা সেদিন ঘুর্নাক্ষরেও ভাবিনি!
শ্রোতার আসরের দশ বছর পূর্তির পরিবেশনা দেখে একটা চমৎকার সুখানুভূতি নিয়ে শনিবারের রাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম আমার মেলবোর্ন জীবনেরও দশ বছর হয়ে গেলো। দশ বছর, একটা লম্বা সময় আসলে।
এই দূর পরবাসে একটা বাংলা গানের দলের দশ বছর পূরণ করে ফেলাটা কিন্তু মুখের কথা নয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের কী কী মনে হতে পারে?
সবচেয়ে প্রচলিত যেটা হয়, গভীর ঘুম ভাঙ্গার পরে হঠাত বুঝে উঠতে খানিক সময় লেগে যায় যে, এখন কোথায় আছি। ছোটবেলায় এরকম হতো, আমি কি গ্রামের বাড়িতে আছি নাকি নিজের বিছানায় শুয়ে সেটা বেশ খানিকক্ষণ বুঝতে পারতাম না।
রাজপ্রাসাদের সৈন্যরা সব শেষ, উজিরের মরল খানিক আগেই, বীরবেশে আমি রাজার ঘরে ঢুকতে যেতেই রাজকন্যা ফোন দিলো, আমার মুঠোফোনের স্ক্রিনে ছবি সমেত নাম ভেসে উঠলো তার, কঙ্কাবতী! আমি তো চমকে উঠলাম। হাতের চকচকে খোলা তলোয়ার সাই করে বগলে চেপে অন্য হাতে কল রিসিভ করেই বললাম, হাআআলোওওও, নেমজ কুমারস, ডালিমস কুমারস!
শুরু-
-----------------
গত বছর ডিসেম্বরে দেশে যাবার পরে একটা অচিন্ত্যনীয় ব্যাপার হলো।
সারা দেশে তখন নির্বাচন পূর্ববর্তী আন্দোলন আর অবরোধ, সেই সাথে লেগে আছে হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও...। দেশে যাবার আগে আগে শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকেই বললেন এরকম পরিস্থিতিতে না যেতে, নির্বাচন শেষ হোক, পরিস্থিতি শান্ত হোক, তারপর যাওয়া যাবে।
আমি তেমন একটা গা করলাম না। নিজের দেশে যাচ্ছি, সেটার জন্যে আবার পরিস্থিতি বিবেচনা কী? অনেককেই দেখেছি দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশে যাবার আগে ‘ওয়েদার’এর খোঁজ নেন, তা না হলে দেশে গিয়ে অসুখে পড়েন, আমার এখনও এরকম হয়নি। একবার শুধু অতিরিক্ত নিমন্ত্রণের চাপে পেটের বারোটা বেজে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে ছিলাম কদিন, এ ছাড়া আমার এতদিনকার চিরচেনা ‘ওয়েদার’ কখনোই আমাকে বিপদে ফেলেনি। আর এইসব হরতাল, অবরোধ এসব তো আমাদের নির্বাচনী কালচার, ডরাইলেই ডর, নইলে তেমন কিছু না।
তোমাকে নয়-
-----------------
আমার কেবলই কেড়ে নেবার স্বভাব-
যা কিছু ভাল লাগে কিংবা লাগার,
তার সব, সব কিছুই চাই আমার।
ঐ দোকানীর রাংতা মোড়ানো স্বপ্ন ভরা বয়াম,
ও পাড়ার ঐ দুরন্ত ব্যাটসম্যানটির সুনাম,
অদ্ভুত সব চকমকি মার্বেল, আর-
অগোছালো চুলে মায়ের অনিচ্ছুক বিলি কাটার আরাম।