নত্রঙ্গী

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: বুধ, ২৮/০৭/২০১০ - ৪:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হই হই অল্প-দ্দা মে-এ-এ-এর...। অল্পদ্দামের নু-উপুর দিয়ে-এ-এ-এ... লক্ষৌ টাকার মাআআ-নু-উউস কিনেছি। হই হই...

কাড়া নাকাড়া ড্রাম কঙ্গো করতাল সানাই একসাথে বেজে উঠে গান ছাপিয়ে। এখানে তালযন্ত্র গানের জন্য নয় বরং নাচকে জঙ্গি করে তোলার জন্য আর গানটা শুধু তাল আর নাচ শুরু করার জন্য

ছোটখাটো প্রিন্সেসদের একক আর দলীয় নাচের শেষে অনেকক্ষণ ধরে যন্ত্রগুলো হাইপিকে বাজতে থাকে। যন্ত্রের তালে তালে দর্শকরা যখন একেবারেই টলমল তখন ঝুপ করে সবগুলো যন্ত্র থেমে যায় আর মৃত্যুর শোকবার্তার মতো বশির ভাইয়ের গম্ভীর ভরাট কণ্ঠ ভেসে আসে মাইকে- সুপ্রিয় দর্শক মণ্ডলী... সুপ্রিয় দর্শক মণ্ডলী বলে অনেকণ চুপ করে থাকেন বশির ভাই। তারপর আবার সরব হয় তার কণ্ঠ- সু-প্রিয় দর্শক মণ্ডলী। সু-জলা সু-ফলা শস্য শ্যা-মলা এই দেশের প্রতিটি যাত্রামোদী দর্শক যার মোহনিয়-অতুলনীয় স্বর্গীয় সুধাময় নৃত্যে বিমোহিত উদ্বেলিত হয়ে উঠেন... যার নৃত্যগীতের ছন্দে যুবক-বৃদ্ধ সকলের দেহমন নেচে উঠে ছন্দের তালে... যার নৃত্যের তালে মাটির গভীরে কবরের অন্ধকারে নেচে উঠে মৃত মানুষের কঙ্কাল... যার নাচের প্রতীক্ষায় যাত্রার প্যান্ডেলে নাবালক শিশুটিও কান্না ভুলে তাকিয়ে থাকে আলো ঝলমল মঞ্চের দিকে... যার দেহ বল্লরি প্রতিটা পুরুষের মনে জাগায় অব্যক্ত কামনা আর প্রতিটা রমণীর বুকে দুঃখময় দীর্ঘশ্বাস... এবার আসছেন... এবার আসছেন সেই  বহু প্রতীতি কুইন অব দ্যা প্রিন্সেস... মিস লক্ষ্মী...

দুদ্দাড় করে আবার বেজে উঠে বাদ্য। অনেকক্ষণ চলতে থাকে সেই বাজনা। তারপর আবার হঠাৎ থেমে যায়। আবার শোনা যায় উচ্চগ্রামে বশির ভাইয়ের কণ্ঠস্বর- প্রিয় দর্শক। আসছেন... আসছেন মিস লক্ষ্মী... লক্ষ্মী- লক্ষ্মী- লক্ষ্মী। কুইন অব দ্যা প্রিন্সেস মিস লক্ষ্মী...

এবার বাদ্যের তালে তালে মঞ্চের লাইটগুলো জ্বলে নিভে তৈরি করে এক আলো আঁধারি। অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকে এই খেলা। তারপর মঞ্চের দূরতম কোণে হঠাৎ আলো আঁধারির মধ্যে ঝড়ের বেগে দৌড়ে এসে কত্থকের ভঙ্গিতে দর্শকদের নমস্কার করে মঞ্চের মাঝখানে ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এক অপূর্ব নর্তকী। চারপাশে তুমুল হয়ে উঠে দর্শকদের উল্লাস উচ্ছ্বাস তালি শিষ আর উদ্দাম বাজনা। কিন্তু নর্তকী দাঁড়িয়েই থাকে। এক সময় দর্শকদের উল্লাস থেমে যায়। থেমে যায় বাজনাও। এবার নর্তকী ফ্রিজ ভেঙে মাথা নিচু করে প্রণাম জানায় দর্শকদের। প্রথমে সামনে তারপর ডানে বামে পেছনে। তারপর এক ছোকরা এসে মাইক তুলে দেয় নর্তকীর হাতে। মাইক হাতে নিয়ে নর্তকী বাজনদারদের সাথে কিছু ইশারা বিনিময় করে এসে আবার দাঁড়ায় মঞ্চের ঠিক মাঝখানে। আবারও প্রায় ফ্রিজ। মাইকটা মুখের কাছে তুলে নিয়ে একটু হাসে। তারপর আস্তে করে গলা ছাড়ে- হই হই অল্প দ্দামেএএএএর... অল্পদ্দামের নু-উপুর দিয়ে-এ-এ-এ... লক্ষৌ টাকার মাআআ-নু-উউস কিনেছি...

কলিটা গাওয়ার সাথে সাথে দেরেরাং দেরেরাং দেরেরাং ধা বলে ঝাঁঝরে চারটা বাড়ি শোনা যায় শুধু। তারপর আবার নর্তকী ধরে- হই হই অল্প-দ্দা মে-এ-এ-এর....। অল্পদ্দামের নু-উপুর দিয়ে-এ-এ-এ...

এবার পায়ের নূপুর দিয়ে মঞ্চের মধ্যে কয়েকটা বাড়ি দেয় আর সাথে সাথে বাজনদাররা শুরু করে তাদের ঝুমতানা বাজনা...

মাইক্রোফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে এইবার শুধু ঠোঁট নেড়ে গানটা গেয়ে যায় লক্ষ্মী। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত নাচে তার। গানটা কবে কোন কালে শেষ হয়ে যায় কিংবা গানটা আদৌ আর শেষ করে না সে। একটা পর্যায়ে থেমে গিয়ে শুরু করে চোখ হাসি আর বুকের নৃত্য। মঞ্চের একেক পাশে গিয়ে চোখের একেকটা ইশারা করে আর হইহই করে উঠে সেই পাশের দর্শক। উড়ে উড়ে আসতে থাকে টাকার বান্ডিল। চোখের ইশারার সাথে মিস লক্ষ্মী যোগ করে ঠোঁটের মুদ্রা। সচ্ছল দর্শকরা হাতের মধ্যে নাচায় নোট। সেই সাথে লক্ষ্মী নাচায় তার বুক। দর্শক চুমু খায় টাকায়। লক্ষ্মী চুমু খায় হাতের তালুতে। লক্ষ্মী চোখ নাচিয়ে হাতের ইশারা করে আর তার শরীরে উড়ে এসে পড়ে সেই টাকা। লক্ষ্মী নাচে। চোখে ঠোঁটে বুকে নেচে ঘোরে চারপাশ। তারপর এসে ঠিক মাঝখানে দাঁড়ায়। বাজনার আওয়াজ কমে আসে। লক্ষ্মী তার শরীরটা বাঁকিয়ে মাথা আর বুক পুরোটা নিয়ে যায় পেছনে। এইবার একটু একটু করে নেচে উঠে তার হাঁটুর উপর থেকে রান দুটো। বাজনার আওয়াজ বাড়ে। লক্ষ্মী এবার নাচায় তার মাজা আর পেট। তাল বাড়ে। আবার নেচে উঠে দর্শক। পুরো শরীরটা পেছনে দুলিয়ে লক্ষ্মী আবারও ঘুরতে থাকে চারপাশের দর্শকদের দিকে। চারপাশ থেকে আবারও নেচে উঠে দর্শক। আবারও হই হুল্লুড় আবারও টাকার বান্ডিল। লক্ষ্মীর কোমর নাচে। নাচে নাভি। নাচে পেট। নাচে তার ফর্সা দুই রান। অনেকক্ষণ। অনেকক্ষণ পরে লক্ষ্মী সোজা হয়ে দাঁড়ায়। হালকা হয়ে আসে নাচ। নাচতে নাচতে মঞ্চ থেকে টাকগুলো কুড়ায়। তারপর একেবারে সোজা হয়ে মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে একটা প্রণাম করে দৌড় দেয় গ্রিনরুমের দিকে। থেমে যায় বাদ্য। শুরু হয় যাত্রার ঘোষণা। বেজে উঠে তে-নেনে-নেনে-নেনে তেনে-নেনে-না... যাত্রার মিউজিক। শুরু হয় পালা...

আজকে নাচতে চায়নি লক্ষ্মী। দল থেকে এক বছরের ছুটি চেয়েছিল সে। কিন্তু অধিকারী বশির ভাই বায়না নিয়ে ফেলেছেন। আজকে যদি সে না নাচে তবে বকেয়া একটা টাকাও সে পাবে না পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বায়নাটা তিনি নিয়েছেন তারই নামে। তার নাচ আর সে নিজে গত দুই বছরে বশির ভাইয়ের ব্যবসার সবচে বড়ো সম্পদ। বায়না ধরা। বায়না ঠেকানো আর বায়নার টাকা তোলা। তিনটা কাজেই বশির ভাই তাকে সামনে ঠেলে দেন। দলের সাথে সে না আসলে বায়নার টাকা পাওয়া তো দূরের কথা জান নিয়ে ফিরতে পারবে না বশির ভাই। কারণ পালার সাথে লক্ষ্মীকে নিয়েও চুক্তি হয় বশির ভাইয়ের। ডিসি অফিস থেকে পালার পারমিশনও পাওয়া গেছে লক্ষ্মীর নামে...

বশির ভাইর কথা ফেলা লক্ষ্মীর জন্য কঠিন। কারণ এখন পর্যন্ত লক্ষ্মীর জন্য বলতে গেলে যা করার বশির ভাই করেছেন। না হলে তাকে জেল থেকে অন্য কেউ বের করে আনবে এটা আশা করা কঠিন ছিল লক্ষ্মীর জন্য

সে নাচত।  নাচে অপ্রতিদ্বন্দ্বীই ছিল সে। কিন্তু সে নাচ অন্য নাচ। ক্যাসিক্যালেই ঝোঁক ছিল তার। বাড়ি থেকে কেউ সমর্থন না করলেও একা একাই সে তার নাচ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু একদিন বন্ধুদের সাথে সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল। তাদের সঙ্গে মাদক পাওয়া গিয়েছিল। জানা ছিল বাড়ির কেউ তার জীবন পছন্দ করে না। কিন্তু পুলিশে ধরা পড়ার পরে সবাই সম্পর্ক অস্বীকার করে বসল। তখনই বশির ভাই হাজির। বশির ভাইর সাথে একটা হালকা পাতলা পরিচয় আগে থেকেই ছিল। দুয়েকবার যাত্রায় যাবার অফারও দিয়েছেন। কিন্তু লক্ষ্মী যাত্রায় যেতে চায়নি। বশির ভাই পুলিশ থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার বিনিময়ে যাত্রার অফার দেন আবার...

বের হবার পরে লক্ষ্মী নামটা বশির ভাইয়েরই দেয়া। প্রথম দিনই নাচের শিল্পী আর যাত্রার নাচনেওয়ালির পার্থক্য পরিষ্কার বুঝিয়ে দেন বশির ভাই- নৃত্য শিল্পী দেখায় শরীরের শিল্প আর যাত্রার নাচনেওয়ালি দেখায় শরীর...। শরীর দেখায়- শরীর খাটায় আর ভুলিয়ে রাখে যুবকদের। যাত্রার এই নাচনেওয়ালি সেইসব পাকিস্তানি বাইজির উত্তরাধিকার যাদেরকে আইয়ুব খান বাংলায় পাঠাতো তরুণদের ভুলিয়ে রাখার জন্য; আন্দোলন থেকে সরিয়ে রাখার জন্য। যাত্রায় নাচনেওয়ালির সম্পদ শরীর। নাচের মুদ্রা নয়...

মাত্র অল্প দিনেই লক্ষ্মী হয়ে উঠে বশির ভাইর যাত্রালক্ষ্মী। লক্ষ্মী নামেই সে ব্রান্ড হয়ে উঠে বশির ভাইর দলের। টাকা এবং স্বাধীনতা দুটোই সে পায় বশির ভাইয়ের কাছে। কিন্তু একটা বিষয় পছন্দ করতে পারেন না বশির ভাই। হিরোয়িঞ্চি ছেলেটার সাথে লক্ষ্মীর জড়িয়ে থাকাটা যুক্তি কিংবা দলের দিক থেকে কোনোভাবেই পছন্দ করতে পারেন না বশির ভাই। ওর জন্যই লক্ষ্মী পুলিশে ধরা খেয়েছে। অবশ্য পুলিশ না ধরলে তাকে যাত্রায় আনারও উপায় ছিল না। ছেলেটার মা বাবা ঠিকই তাকে বের করে নিয়ে গেছে। কিন্তু বের হয়ে সে লক্ষ্মীকে ভুলে তার হিরোইন ধরেছে। বশির ভাইর ভাবার যথেষ্ট কারণ ছিল যে ওই ঘটনাতেই ছেলেটার লক্ষ্মীর মন থেকে সরে যাবার যথেষ্ট যুক্তি ছিল। কিন্তু লক্ষ্মী বের হয়ে আসার পরে আবার সে এসে হাজির হয়। তার ইনয়-বিনয়ে লক্ষ্মী আবার পটে যায়। বশির ভাই প্রথমে যুক্তি পরে অনেক কড়াও হয়েছেন। কিন্তু লক্ষ্মীকে ফেরাতে পারেননি। তিনি লক্ষ্মীকে অনেক বুঝিয়েছেন; একজন শিল্পীর দরকার এমন একজন মানুষ যে শিল্পীকে যত্ন করবে। শিল্পী যদি অন্যকে যেত্নর দায়িত্ব নেয় তবে তার পেশা মার খেতে বাধ্য। বশির ভাই নিজের বৌয়ের উদাহরণ দিয়ে লক্ষ্মীকে বুঝিয়েছেন। শেফালির সাথে তার পরিচয় যাত্রা দিয়ে শুরু হলেও বিয়ের পরে সংসারটাকে ধরে রেখে সে বশির ভাইকে এগিয়ে দিয়েছে সামনে। বশির ভাইর যদি শেফালিকে নিয়ে ভাবতে হতো তাহলে দলটাকে অতদূর আনা সম্ভব হতো না। লক্ষ্মীরও এমন ছেলে দরকার যে তাকে দেখে রাখবে। একটা হিরোয়িঞ্চি ছেলের দায়িত্ব লক্ষ্মী না নিয়ে এমন একটা ছেলের দরকার তার যে লক্ষ্মীর দায়িত্ব নেবে...

বশির ভাইর যুক্তি লক্ষ্মী বুঝলেও ধুম করে একদিন সে হিরোয়িঞ্চিটাকে বিয়ে করে ফেলে। বশির ভাইর কিছুই করার ছিল না। তবু সাবধান করে দিয়েছেন সাবধান থাকতে। সংসার যেন পেশার তি না করে। বশির ভাই নিশ্চিত ছিলেন সেই ছেলেটা লক্ষ্মীর কাজে বাধা দেবে না। কারণ তার ভাত বিড়ি নেশা সবই লক্ষ্মীর ইনকামে নির্ভরশীল। তার ভয় হয় হিরোয়িঞ্চিটার যন্ত্রণায় লক্ষ্মী কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলতে পারে। অবশ্য তার এটাও মনে হয় যে এরকম সম্পর্ক বেশিদিন টিকতে নাও পারে। লক্ষ্মীই হয়ত বিরক্ত হয়ে সরে আসবে। কিন্তু তিনি থ বনে যান যখন শোনেন লক্ষ্মীর পেটে বাচ্চা। তিনি বাচ্চাটা ফেলে দিতে বলেন। কিন্তু লক্ষ্মীর ধারণা বাচ্চাকাচ্চা হলে তার স্বামীকে নেশা থেকে ফেরানো যাবে। বশির ভাই তাকে ভয় দেখান- একটার পর একটা দায়িত্ব নিলে নিজের পেশা ঝুলে যেতে পারে। কিন্তু লক্ষ্মীকে খুব একটা ভাবতে দেখা যায় না সে বিষয়ে। বশির ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকাগুলো জড়ো করলে তার বছর খানেক চলে যাবে। তারপরতো আবার এসে কাজে যোগ দিতেই পারবে। তাছাড়া নিজে নাচতে না পারলেও দলের মেয়েদের প্রশিণ দিতে তার অসুবিধা হবে না...

লক্ষ্মী নাচের থেকে ছুটি চায় এক বছরের। কিন্তু ঠিক এই সময়টাতেই দলের এই বায়না। লক্ষ্মীকে নাচতে হবে। লক্ষ্মী বলে তার এই দু আড়াই মাস নাচা ডাক্তারের নিষেধ। বশির ভাই জেদ ধরেন। পুরোনো পাওনা টাকা না দেবার হুমকি দেন...

মাঝরাতে পালার বিরতিতে ছোট ছোট প্রিন্সেসদের নাচের পরে বশির ভাইর ভরাট কণ্ঠ আবারও অনেক অনেক ভূমিকার পরে ঘোষণা করে লক্ষ্মীর নাম। এটা মাঝরাতের নাচ। এই নাচে পোশাক আরো ছোট হয়ে আসবে লক্ষ্মীর। এই নাচে মুদ্রাগুলো বদলে যাবে আদিমতার দিকে। এই নাচ মাতিয়ে রাখার। এই নাচ মাতিয়ে দেবার। এই নাচ সবকিছু ভুলিয়ে দেবার। এই নাচ যুবকদেরকে রাতে জাগিয়ে রেখে দিনে ঘুম পাড়িয়ে রাখার...

বশির ভাইর ঘোষণার পরে ঝুমতালে বেজে উঠে বাদ্যবাজনা। বাজতে থাকে। বাজতেই থাকে। কিন্তু মঞ্চ ফাঁকা। দর্শকরা হই হই করে উঠে। বশির ভাই আবাও দীর্ঘ লয়ে ভূমিকা দিয়ে আবারও ঘোষণা করেন। সে জানে লক্ষ্মী মাঝে মাঝে দর্শকদের আরো উত্তেজিত করার জন্য দেরিতে ঢোকে মঞ্চে। বশির ভাই অপো করেন। আরো বিশেষণ জুড়ে দিয়ে আবারও ঘোষণা করেন। কিন্তু লক্ষ্মী নেই। একজনকে খোঁজ করতে পাঠান। কিন্তু সেও ফিরে আসে না। বশির ভাই আবাও ঘোষণা করে নিজেই এগিয়ে যান গ্রিনরুমের দিকে। গ্রিনরুমের এক কোনায় নাচের পোশাক পরে দুই পায়ের ফাঁকে গামছা চেপে বসে আছে লক্ষ্মী। বশির ভাই লক্ষ্মীকে তাড়া দেন মঞ্চে যাবার জন্য। সাজপোশাক আর মেকাপ পরা লক্ষ্মী তার ফ্যাকাশে মুখ তুলে তাকায় বশির ভাইর দিকে- বশির ভাই। বাচ্চা গলে গেছে আমার...

তারপর ঠোঁট কামড়ে গড়িয়ে পড়া রক্তে আরো শক্ত করে চেপে ধরে মেকাপ মোছার গামছা। যেন রক্ত গড়ালেও কোনোমতেই বাচ্চাটা না গলে আসতে পারে...
২০১০.০৭.২৩-২৮

 


মন্তব্য

রণদীপম বসু এর ছবি

শেষদিকের এই টুইস্টের জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম।

[ ইউনিকোড কনভার্টারে 'ক্ষ' বর্ণটাকে গিলে ফেলেছে মনে হয়।]

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মাহবুব লীলেন এর ছবি

জি স্যার
ঠিক্করে দিলাম ক্ষ
তবে রিচটেক্সট বসানোর পরে মনে হয় আমাদের দরিদ্র নেট সম্পাদনা করার জন্য বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বদলে নিতে চাইলে জানাবেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি


গল্পে রূপক খুঁজি না। রূপ খুঁজি। এই অভ্যাসের পরও, নিন্মোক্ত চিন্তার জন্ম হল -


নতুন একটা দেশে নতুন জনসংস্কৃতির জন্ম হলো না। জন্মাতে গিয়েও গর্ভপাত হল। হত্যাই হল বলা যায়। এখন পরিবর্তন স্বাভাবিক বলে, হন্তারকের সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরেছি আমরা।


এবং অবশ্যই বলতে হয়, আরোপিত অশ্লীলতা মৌলিক যাত্রার অংশ নয়। যতদূর জানি। আপনিও মনে করালেন।


গল্প ভালো লাগল


তারা

___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

প্রথম কথাটা পছন্দ হলো খুব

০২

হন্তারকের সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরেছি আমরা।

এইটা নিয়ে আমি বেশ কনফিউজড। আমি ঠিক বুঝতে পারি না মানুষ কোনটা মনে রাখে আর কোনটা না

যে রাজারা মানুষকে মানুষই মনে করত না ঠাকুরমার ঝুলিতে না খাওয়া ঠাকুরমারা সেই রাজাদের কাহিনীই শোনাতেন সবাইকে

জনসংস্কৃতির জন্ম হলো না কথাটার সাথে আমি পুরোপুরি একমত না। জনসংস্কৃতির জন্ম হবার জন্য যতটা সময় দরকার তা কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি

বাংলার সাধারণ মানুষের সংস্কৃতি চর্চার সবচে বড়ো ক্ষেত্র কিন্তু গান; সেটা বহু আগে থেকেই এখন পর্যন্ত কিন্তু দুর্দান্ত দাপট নিয়েই চলছে। এবং গানের পুরো বিষয়টাই ব্যক্তি কেন্দ্রিক (শিল্পী কিংবা গীতিকার)

দলীয়ভাবে সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস কিন্তু বারবার মোড় বদলেছে। সাধারণে এর চলন শুরু হয়েছে ধর্মীয় আচার দিয়ে কিংবা ইতিহাস (পুরাণসহ) বর্ণনায়। সম্ভবত রামায়ণ গানটাই হলো এর আদিরূপ। তারপর কীর্তন। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যায় এগুলোও মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। একজনই থাকেন কেন্দ্রবিন্দু; বাকিরা সহকারি

আর নাটকটা ছিল মূলত অভিজাতদের সাংস্কৃতিক উপাদান (অন্তত মুনি ভরতের সূত্র ঘাঁটালে অনুমান হয়) এটা সাধারণে এসেছে বহু পরে বহু বিবর্তনের পরে

বৃটিশ বিরোধীতার সময় (শেষ দিকে) দলীয় সংস্কৃতি সাধারণে বেশ প্রচলিত হয়। কিন্তু সেটা দানা বাঁধার আগে দেশভাগ হয়ে শুরু হয় পাকিস্তান বিরোধীতার নতুন চর্চা। সময়ের হিসাবে সেটাও খুব কম সময়। তারপর স্বাধীনের পরে শুরু হয় নতুন প্লাটফর্ম

ফলে অভিনয়ের মতো অন্য জনসংস্কৃতিও আমার মতে যথেষ্ট সময় পায়নি এখনও

জনসংস্কৃতি জন্ম হচ্ছে। একুশে ফেব্রুয়ারির দিকে তাকান। পয়লা বৈশাখ- পয়লা বসন্তের দিকে তাকান। বিজয় দিবস- স্বাধীনতা দিবসের দিকে তাকান; কোনো কিছুর জন্ম হওয়া কি দেখতে পাচ্ছেন যা আগে ছিল না এই অঞ্চলে?

০৩

যাত্রায় বাইজির আমদানী করে আইয়ুব খান। এর আগে যাত্রার ভাঁড়/সঙ এর প্রচলন ছিল। এরাই ফাঁকে এসে (নাটকের বাইরে) দর্শকদের মাতিয়ে রাখত। অভিনেতাদের রেস্ট নেবার/পোশাক বদলাবার সুযোগ দিতো এবং তোলা/টাকা তুলত

মুকুন্দরামের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান পিরিয়ডে যাত্রার মঞ্চও বিদ্রোহী হয়ে উঠে। ফলে আইয়ুব খান যাত্রাকে আনন্দ যাত্রায় রূপান্তর করার জন্য পাকিস্তান থেকে বাইজি পাঠায়। যুক্তি ছিল যুবকদের রাতে মাতিয়ে রাখো যাতে দিনে তারা ঝিমায়

যাত্রার নাচগুলো সেই আনন্দ যাত্রারই ধারাবাহিকতা

শ্যাজা এর ছবি
মাহবুব লীলেন এর ছবি

দইন্যবাদ স্যার

এনায়েৎ ইউ এস ইসলাম এর ছবি

গল্পটি ভালো লাগলো। তবে অনিন্দ্য রহমান সাথে একমত। 'হন্তারকের সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরেছি আমরা।' .. পরিবর্তন আবশ্যক মনে করি।

লীলেন, আপনাকে শুভেচ্ছা।

enayet@fivdb.net

রানা মেহের এর ছবি

গল্পের প্রথম থেকে
"শুরু হয় যাত্রার ঘোষণা। বেজে উঠে তে-নেনে-নেনে-নেনে তেনে-নেনে-না... যাত্রার মিউজিক। শুরু হয় পালা..."" পর্যন্ত দুর্দান্ত লাগছিল লীলেন ভাই।
লক্ষীর ইতিহাস শুরু হতেই গল্পটা কেমন সাদামাটা হয়ে গেল।

ক্যাসিকাল মানে কী? ক্লাসিক্যাল?
লক্ষীর জেলে যাওয়া ঘর থেকে ত্যাজ্য ঠিক বিশ্বাসযোগ্য হয়নি।

ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি বশির ভাইয়ের চরিত্র।
তিনি একবার বোঝাচ্ছেন নাচের শিল্পী আর নাচনেওয়ালির পার্থক্য আবার বলছেন শিল্পীর কেমন জীবনসঙ্গী দরকার। বশির ভাইকে দেবতা বা দানব না দেখে সাধারণ ভাবেই দেখতে চাই তবু সেই যাত্রার সেই সাধারণ আধিকারীকেই পাইনি।

এই প্লট নিয়ে কিন্তু উপন্যাস হয় লীলেন ভাই।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রানার প্রথম অংশের সাথে বোধহয় আমিও একমত। একটু মনে হয় গোঁজামিল হয়ে গেছে। আসোলে আমি লেখায় এক ধরনের রক্তশূন্যতায় ভুগছি। একবার লেখা থেমে গেলে আর শেষ করা হয়ে উঠছে না। এজন্য ইদানীং একটু তাড়াহুড়া করে শেষ করার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এতে অন্তত ভাবনাগুলো গেঁথে রাখা যায় আর পরে কাজ করার সুযোগ বের হয়। এটাকে নিয়ে আরেকটু কাজ করব

০২

কথাটা ক্লাসিক্যালই হবে। কনভার্টার খেয়ে ফেলছে ল

০৩

যাত্রার শিল্পীরা কিন্তু সংসারী হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এরা দলের ভেতরেই সংসার করে। অনেক মেয়েরাই যাত্রায় আসে বাবা- ভাই কিংবা মায়ের হাত ধরে। যাত্রার শিল্পীদের পালা কেন্দ্রিক/অভিনয় কেন্দ্রিক জীবনের বাইরে আলাদা যাত্রা কেন্দ্রিক সোসাইটি না থাকার কারণে তারা কিন্তু যাত্রা মৌসুমের বাইরে একেবারে সাধারণ জীবন সংসারে বিলীন হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রামের বা প্রতিবেশিরা জানেও না

০৪

বশিরভাই দেবতাও না দানবও না। যাত্রার একজন সাধারণ অধিকারী। যাকে প্রতিটা পালার আগে বৃটিশের করা আইন অনুযায়ী ডিসি অফিস থেকে কাচুমাচু করে স্ক্রিপ্ট পাশ করিয়ে আনতে হয়। আয়োজকদের সাথে মুলামুলি করে বায়নার টাকা তুলতে হয়। প্রভাবশালীদের খুশি রাখতে হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটা শিল্পীর বেতন দিতে হয়। ভালো শিল্পী যাতে অন্য দলে চলে না যায় তার জন্য সতর্ক থাকতে হয়; কলে কৌশলে আটকাতে হয়; শিল্পী খুঁজতে হয়। দলের অভিভাবক হতে হয় এবং তারপর প্রফিট করতে হয়

এসব যিনি ভালোভাবে করেন তিনিই হলেন যাত্রাদলের একজন সাধারণ অধিকারী। তিনি বশিরভাই

০৫

উপন্যাস?

যদি লিখতারি

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পটা ভীষণ ভালো লাগলো । মন্তব্য করলাম । কিন্তু কেন যে প্রকাশিত হলো না !

রাহুল দাশ গুপ্ত । [অতিথি] এর ছবি

গল্পটা ভীষণ ভালো লাগলো ।[ মন্তব্য করলাম । কিন্তু কেন যে প্রকাশিত হলো না, বুঝলাম না !]

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।