Stephen King এর On Writing - সারসংক্ষেপ (২)

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: রবি, ০২/০৯/২০০৭ - ২:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(প্রথম পর্বের পর)

২৮
(এই অংশটা একটা গল্পের "হয়ে ওঠা" নিয়ে লেখা। স্টিফেনের ভাষ্যে প্রায় পুরোটাই তুলে দিলাম। ব্রাকেটের কমেন্টগুলো আমার।)

আমার ভাই ডেভ কলেজে পড়ার সময় গ্রীষ্মের ছুটি গুলোতে বার্ণসউইক হাইস্কুলে জ্যানিটর হিসেবে কাজ করত। এক গ্রীষ্মের কয়েকটাদিন ওখানে আমিও কাজ করি। সেটা কোন বছর ছিল মনে নেই, তবে সেটা ছিল আমার ভবিষ্যত স্ত্রী ট্যাবির সাথে পরিচয়ের আগের এবং আমার ধুমপানের অভ্যাস গড়ে উঠবার পরের কোন একটা সময়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে আমার বয়স তখন ঊনিশ কি বিশ হবে। হ্যারী নামের এক লোকের সাথে কাজ করতে হত আমার। হ্যারী ফ্যাটিগ (অনেক পকেটযুক্ত ঢোলা প্যান্ট), বড় একটা চেইন ব্যবহার করত এবং একটি হাত নকল ছিল তার।

একদিন আমার আর হ্যারীর কাজ ছিল মেয়েদের শাওয়ার থেকে জং ধরা আর ময়লা হয়ে যাওয়া জায়গাগুলো পরিষ্কার করা। একজন মুসলিম যুবক হঠাৎ করে মেয়েদের কোর্য়াটারে নিজেকে আবিষ্কার করলে যেরকম আগ্রহ আর ভয়মিশ্রিত দৃষ্টিতে সবকিছু আবিষ্কার করে আমি সেইভাবে লকার রুমটা দেখছিলাম। যদিও দেখতে এটা ছেলেদের লকার রুমের মতই, আবার একেবারেই আলাদা। দাঁড়িয়ে প্রসাব করবার জায়গাগুলো ছিলনা, অবশ্যই, আর দেয়ালের সাথে লাগানো ছিল দুটি ধাতব বাক্স - চিহ্নবিহীন এবং পেপার টাওয়ালের আকারের সাথে একেবারেই যায় না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি সেগুলো। "Pussy-plugs", হ্যারী বলল। "মাসের বিশেষ দিনগুলোতে ওদের এগুলো লাগে"।

লক্ষ্য করলাম শাওয়ারগুলোতে আচ্ছাদন দেয়া আছে, অথচ ছেলেদের গুলোতে আচ্ছাদন থাকে না। এখানে প্রাইভেসীতে গোসল করা যায়। হ্যারীকে বলতেই, সে কাঁধ দুটো উঁচু করে বললে, "মনে হয় যুবতী মেয়েরা অন্যের সামনে কাপড় খুলতে লজ্জা পায়"।

আমি যখন অনেক পরে লন্ড্রীতে কাছ করতাম তখন এই দৃশ্যগুলো আমার কাছে আবার ফিরে এলো এবং আমি একটি গল্পের তৈরী হবার দৃশ্যগুলো দেখলাম: কতগুলো মেয়েকে গোসল করতে দেখছিলাম। এই শাওয়ারগুলোতে কিন্তু কোন আচ্ছাদন ছিল না। একটা মেয়ে ছিল যার সেদিন হঠাৎ পিরিয়ড হওয়া শুরু হল। সে মেয়েটার কোন ধারনাই ছিল না যে এটা কি, আর অন্য মেয়েরা - কেউ ঘৃণায় , কেউ ভয়ে সরে গেল আবার কেউ মজা পেল। তারা মেয়েটার দিকে স্যানিটারী ন্যাপকিন বা হ্যারীর ভাষায় "পুসি প্লাগ" ছুড়ে দিতে লাগল। মেয়েটা চিৎকার করতে শুরু করল। এত রক্ত! মেয়েটা ভাবল সে বুঝি মরেই যাচ্ছে, ভাবল সে রক্তক্ষরণে মারা যাচ্ছে আর অন্যেরা তাকে নিয়ে ঠাট্ট করছে ... সে প্রতিক্রিয়া জানায় ... তেড়ে আসে .. কিন্তু কি করবে সে?

কয়েক বছর আগে একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম Life ম্যাগাজিনে, ভৌতিক শব্দের উৎপত্তি কিসে এ বিষয়ক গবেষনায় দেখা গেছে তাদের অনেকগুলোর উৎসই নাকি টেলিকাইনেটিকস থেকে - টেলিকাইনেটিকস হচ্ছে কোন একটা বস্তুকে শুধুমাত্র মানসিক শক্তি দিয়ে সরিয়ে ফেলার ক্ষমতা। কিছু প্রমান পাওয়া গেছে যেখানে উঠতিবয়সী যুবক বা যুবতীদের মধ্যে এই ধরনের ক্ষমতা দেখা গেছে, আর্টিকেলে বলা ছিল, এটা বিশেষ করে ঘটে উদ্ভিন্নযৌবনা যুবতীর ক্ষেত্রে, ঠিক যখন তাদের প্রথম ___

ভুম! দুটো বিচ্ছিন্ন আইডিয়া, উঠতি বয়সের নিষ্ঠুরতা আর টেলিকাইনেটিকস, একসাথে হল এবং আমার হাতে চলে আসল একটা নতুন আইডিয়া। তারপর আমি সেই কাপড় ধোলাইয়ের চাকরী ছেড়ে দৌড় দিলাম তা না, লন্ড্রী রুমের চারিদেকে দৌড়ে হাত দুটো ছুঁড়ে "ইউরেকা!" বলেও চেঁচাইনি। আমার কিছু ভালো গল্পের আইডিয়া ছিল। তারপরেও আমার মনে হল তাঁত বোনার জন্য কিছু ভালো সুতার সন্ধান পেয়েগেছি আমি। মাথার মধ্যে Playboy ম্যাগাজিনের কথাও ঘুরছিল। ছোটখাট গল্পের জন্য Playboy ম্যাগাজিন দুহাজার ডলার পর্যন্ত দিত। এতে আমার গাড়িটার ট্রান্সমিশন সিস্টেম ঠিক করার পরও বাজার সদাই করার জন্য প্রচুর টাকা হাতে থেকে যাবে। এরপর চেতন-অবচেতন মনের ধীর চুলায় গল্পটা রান্না হতে থাকল বেশ কিছুদিন। আমার শিক্ষকতা জীবন শুরু করার পর একরাতে বসে গল্পটাকে একটা সুযোগ দিলাম। একটানে তিনপাতা লেখার পর রাগে কাগজগুলো মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।

যা লিখেছিলাম তাতে চারটা সমস্যা ছিল। প্রথম এবং সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে গল্পটা আমাকে ইমোশনালী নাড়া দিতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ হল, প্রধান চরিত্রের ব্যাপারে আমি তেমন কিছু জানতাম না। ক্যারী হোয়াইট নামের চরিত্রটাকে স্থুল আর প্যাসিভ মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল সে আক্রান্ত হবার জন্য তৈরী। অন্য মেয়েরা তার দিকে স্যানিটারী ন্যাপকিন ছুঁড়ে দিচ্ছিল আর চ্যাঁচাচ্ছিল "Plug it up! Plug it up!" আর আমি পাত্তাই দিচ্ছিলাম না। তৃতীয় এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, সবগুলো চরিত্রই ছিল মেয়ে এবং আমি সে পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলাম না। গল্পের মাধ্যমে আমি একটা নারী গ্রহে অবতরন করেছিলাম, বার্ণসউইক হাইস্কুলের সেই ছোট্ট স্মৃতি এই গ্রহে ঘুরে ফিরে বেড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না।

আমার জন্য একটা লেখা তখনই সেরা যখন সেটা খুব জীবন ঘনিষ্ঠ হয়, চামড়ার সাথে চামড়া ঘষার মতন সেক্সি হয়। মনে হচ্ছিল ক্যারির সাথে আমি রাবারের সুইমিং স্যুট পরে সেক্স করছি, আর কিছুতেই সেটা খুলে ফেলতে পারছি না। চর্তুথ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এই বোধটা যে গল্পটা লিখে পয়সা মিলবে না যদি না আকারে সেটা বেশ ছোটখাট হয়। আন্ডারওয়্যার পরতে ভুলে গেছে এমন চিয়ারলীডারের ছবির জন্য গল্পটাকে প্রচুর জায়গা ছাড়তে হবে - এর জন্যই তো পুরুষেরা আসলে ম্যাগাজিন কিনবে। আগে থেকেই বুঝতে পারছিলাম সপ্তাহ বা মাস খানেক ব্যয় করে একটা গল্প লিখব যেটা আমার পছন্দও হবে না আর বিক্রীও করতে পারব না। তাই সেটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম।

পরের রাতে, স্কুল থেকে ঘরে ফিরে দেখি, আমার স্ত্রী ট্যাবির হাতে পৃষ্টাগুলো। আমার কাগজ ফেলার বাক্স খালি করতে গিয়ে সে সেগুলো পেয়েছে - সিগারেটের ছাই ঝেড়ে, দুমড়ে থাকা কাগজগুলো সোজা করে বসে বসে সেগুলো পড়েছে। সে আমাকে গল্পটা শেষ করতে বলল। সে গল্পটার বাকিটা জানতে চায়। আমি বললাম স্কুলের মেয়েদের ব্যাপারে আমি বিন্দুমাত্র জানিনা। সে বলল এটা নিয়ে সে সাহায্য করতে পারে। দারুন মিষ্টি ভঙ্গীতে চিবুকটা নীচের দিকে নামিয়ে সে হাসল, আর বলল, "এই গল্পটার মধ্যে সত্যি কিছু আছে। সত্যি বলছি কিছু একটা আছে।"

(চলবে...)


মন্তব্য

অয়ন এর ছবি

দারুণ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধন্যবাদ অয়ন।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এটিকে একটি ই-বই হিসেবে সংরক্ষন করার প্রস্তাব করছি।

যথারীতি ভালো লেগেছে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধন্যবাদ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

বিপ্লব রহমান এর ছবি

খুব ভাল হচ্ছে। তারপর?


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

কনফুসিয়াস এর ছবি

আমিও মন দিয়ে পড়ছি। তাপ্পর?

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।