শিখবা নাকি ক্যামেরাবাজী?: অ্যাপারচার বা আলোকছিদ্র (Aperture)

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০৩/২০০৯ - ১১:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অ্যাপাচার লেন্সের সামনের ছিদ্রটাকে বোঝায় যেটা লেন্সের ভিতর দিয়ে যাওয়া আলোর পরিমান নির্ধারন করে। এই ছিদ্রের আকার বাড়ানোর বা কমানোর জন্য আমাদের চোখের মনির মতো এক সারি ওভারল্যাপিং ব্লেড থাকে। অ্যাপারচার এক্সপোজার এবং ডেপথ অফ ফিল্ডের সাথে সর্ম্পকযুক্ত।

শাটারস্পীডের মতো পরপর দুটো অ্যাপাচারের একটা তার আগের অ্যাপাচারের তুলনায় অর্ধেক আলো ঢুকতে দেয়। অর্ধেক আলো ঢুকতে দেবার ব্যবস্থা করতে ক্যামেরার ডায়াফ্রাম বা পর্দার ব্যাস ১.৪ ভাগের এক ভাগ (২ এর স্কয়ার রুট; হিসাবটা নীচে দেখুন [১]) করে দেয়া হয়। এতে করে পরপর দুটো অ্যাপারচারের আলোর পরিমান অর্ধেক হয়ে যায়, যেমনটা নীচের ছবিতে দেখানো হয়েছে।

বিভিন্ন আকারের অ্যাপারচার বা আলোকছিদ্রতা

সাধারন আলোক নীতি অনুযায়ী, অ্যাপারচার আকার এবং ব্যাস, ফোকাল লেন্থের সাথে সর্ম্পকযুক্ত। যেমন, ২৫ মি.মি.র অ্যাপারচার ব্যাস এবং ১০০ মি.মি.র ফোকাল লেন্থের লেন্স কাজ করবে ৫০ মি.মি.র অ্যাপারচার ব্যাস এবং ২০০ মি.মি.র ফোকাল লেন্থের মত। দুটি ক্ষেত্রেই অ্যাপারচার এবং ফোকাল লেন্থের রেশিও ১/৪। তাই অ্যাপাচারকে আকার হিসেবে প্রকাশ না করে ফোকাল লেন্থের ভগ্নাংশ হিসেবে প্রকাশ করলে তার মানেটা আরো বেশী গ্রহনযোগ্য হয়। এই তুলনামূলক-অ্যাপারচার গুলোকে f-সংখ্যাও বলা হয়ে থাকে। লেন্সের গায়ে, উপরের উদাহরনের ১/৪ কে f/4 বা F4 বা 1:4 হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

যেমনটা একটু আগে জেনেছি, পরপর দুটো অ্যাপাচারের ব্যাস একটা আরেকটার চেয়ে ১.৪ ভাগের একভাগ হয়। তাই f/4 এর পরের f-stop হবে f/4 x 1/1.4, মানে f/5.6 হবে। ভগ্নাংশ পদ্ধতির সুবিধা হচ্ছে, লেন্স পরিবর্তন করে f/4 থেকে f/5.6 এ নিয়ে আসলে আলোর পরিমান অর্ধেক হয়ে যাবে, ফোকাল লেন্থের আকার যাই হোক না কেন। সুতরাং লেন্সের গায়ে লেখা f/সংখ্যার অর্থ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। যেহেতু f-সংখ্যা ফোকাল লেন্থের ভগ্নাংশ, f-সংখ্যা যত "বড়" হবে সেটা তত ছোট অ্যাপারচার নির্দেশ করবে।

সর্বোচ্চ অ্যাপারচার বা লেন্সের গতি
লেন্সের "সর্বোচ্চ অ্যাপাচার" কে "লেন্সের গতিও" বলা হয়। অ্যাপারচার এবং শাটারস্পীড পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে এক্সপোজারের মাধ্যমে। যে লেন্সের সর্বোচ্চ অ্যাপারচার অনেক বেশী (উদা. f/2), তাকে "দ্রুত" লেন্স বলা হয়। কেননা বেশী অ্যাপারচার আপনাকে দ্রুত শাটারস্পীড ব্যবহার করার সুযোগ দেয়, এবং এক্সপোজারও পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমানে। অল্প আলোয় নড়নশীল বস্তুর ছবি তুলতে এধরনের লেন্স খুব কাজে দেয়।

জুম লেন্সগুলোতে ওয়াইড এঙ্গেল এবং টেলি এঙ্গেলে উভয় প্রান্তের ম্যাক্সিমাম অ্যাপারচার বলা থাকে। উদাহরন, 28-100mm f/3.5-5.6। 28-100mm f/2.8 এরকমটা বলা থাকার মানে হচ্ছে পুরো জুম রেঞ্জেই ম্যাক্সিমাম অ্যাপারচার f/2.8। বলা বাহুল্য এধরনের জুম লেন্স অনেক দামী এবং ভারী।

[১] ধরুন পরপর দুটো অ্যাপাচারের ক্ষেত্রফল A এবং B। দ্বিতীয় অ্যাপাচারের আলোর পরিমান অর্ধেক করতে ক্ষেত্রফল B, A এর অর্ধেক হতে হবে।
A/2 = B
=>(πD2)/2 = πd2
=>D/√2 = d
=>D/1.41 = d

(ডিপিরিভিউ থেকে অনুদিত)


মন্তব্য

মুস্তাফিজ এর ছবি

ছবি তুলি ঠিকই কিন্তু এরকম অনেক কিছুর কারিগরী জ্ঞান ছাড়াই। এ জ্ঞানটূকু কাজে দিবে অবশ্যই।

...........................
Every Picture Tells a Story

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমার মনে হয় এধরনের শেখাটাই বেশী কার্যকরী হয়। যেসব ক্ষেত্রে আমি জাম্প স্টার্ট করেছি সেসব ক্ষেত্রে সাফল্য বেশী এসেছে। পুরো থিওরী জেনে শুরু করতে গিয়ে অনেকবারই ধরা খেয়েছি। তবু ফটোগ্রাফী শিখতে এসে এসব না ঘেঁটে উপায় ছিলনা। এত এত টার্ম, এত এত ধরনের ক্যমেরা, এত এত টাকার মামলা - কোনটা কি বুঝতে গিয়েই ফেঁসে গেছি। হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

শব্দগুলোর সাথে পরিচয় অনেক আগে থেকে... বিষয়গুলো বুঝিও একটু আধটু... কিন্তু এইরকম জটিল করে জানতাম না। দারুণ ধন্যবাদ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দারুণ স্বাগতম...

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই পোস্টে ভোটিং অপশন দেখা যাচ্ছে না... এইটা কিভাবে হৈলো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বইয়ের পেইজের ক্ষেত্রে এই অপশন বন্ধ রাখা আছে। যুক্তি: বই যেহেতু একটা কালেকটিভ ওয়ার্ক একটা পেইজের ক্ষেত্রে রেটিংটা পুরো বইয়ের রেটিং নির্দেশ করে না।

বাকিরা কি বলেন?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

হু, যুক্তিটা তো ঠিকাছে।
-------------

--------------------------------------------------------

মাল্যবান এর ছবি

আপনার ক্যামেরা বিষয়ক লেখা গুলি পড়ছি । আমার এস,এল,আর বা ডিজিটাল কোনো ক্যামেরাই নেই। একটি সাধারণ ক্যামেরাতেই সাধারণ প্রয়োজন মিটেছে। একটু অপ্রাসঙ্গিক হলেও জিজ্ঞাসা করি , একটি সাধারণ, খুব হাই ফাই নয়, যা দিয়ে ছবি তুলে আপলোড করতে পারি, এই ধরুন ভারতীয় টাকায় সাত আট হাজারে ,কি ক্যামেরা কিনতে পারি ? আমার এক বন্ধু নিকন পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু সেতো দেখি নানা মডেল ! আপনার কি এখানে কোনো নির্দিষ্ট মডেল বা কোম্পানীর নাম বলতে অসুবিধা হবে ?
একটি ভালো ক্যামেরা থাকলে, সচলে ছবিসহ গল্প জমা দিতে না পারার আক্ষেপ থাকতো না ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।