আমার নাইজেরিয়ান জমজ ভাই

মাশীদ এর ছবি
লিখেছেন মাশীদ (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০৩/২০০৬ - ৮:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


সিঙ্গাপুরে এসেছি গত বছরের একদম শুরুতে। National University of Singapore এ। আসার পরপরই খুব মন খারাপ ছিল। মাকে ছেড়ে আসা, অপুকে ছেড়ে আসা (তাও আবার আসার আগে কুৎসিত ঝগড়া করে এসেছি), ঢাকার অসংখ্য বন্ধুকে ছেড়ে...বিশেষ করে বহুদিন ফুচকা খাওয়া যাবে না এই দুঃখে দিন খুবই খারাপ ভাবে কাটা শুরু হল। সারাক্ষণই দেখি খারাপ লাগে। কিছুতেই মন ভাল হয় না। কবে আবার দেশে যাব - চিন্তাভাবনা মোটামুটি এই এক ট্র্যাকে আটকে গেল।

যাই হোক, আসার প্রথম সপ্তাহেই নবীনদের জন্য একটা Orientation অনুষ্ঠান ছিল। সেটায় যাবার পর একটু ভাল লাগা শুরু হল। নানা দেশ থেকে আসা অনেকের সাথে আলাপ হল। ওদের অনেকের অবস্থাই আমার মত। আমাদের একেকজন একেক দেশের হলে কি হবে 'Homesickness' আমাদের সবাইকে মুহূর্তেই এক করে দিল। বুঝলাম, দুনিয়ার সবার সুখ-দুঃখই একরকম। বিদেশ-বিভুঁইয়ে আমি একাই 'একা' নই।

Orientation এ খুব কম মানুষই National costume পরে এসেছিল। এদের মধ্যে আমাদের দেশের মেয়েদের সালোয়ার-কামিজের মত বেশ আলখাল্লাটাইপ জামা পরা খুব হাসি-খুশি একটা ছেলে দৃষ্টি কাড়ল। ওর কাছে গিয়ে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে হাসিমুখে নিজের পরিচয় দিলাম,'মাশীদ'। ছেলেটাও হাত বাড়িয়ে দিয়ে বেশ হাসিমুখেই বলল,'মাশুদ'। আমার হাসি কিছুটা ম্লান হয়ে গেল। বেটা কি বয়রা? নাকি আমার উচ্চারণ এত খারাপ? আমি এবার বেশ জোড় দিয়ে বললাম,'মাশীঈঈঈদ'। ওমা, এবারেও বেটা একটুও হাসি না কমিয়ে বলল,'মাশুউউউদ'। আমার এরপর প্রায় ধৈর্যচু্যতি ঘটল। খুবই জোড় দিয়ে চড়া গলায় বললাম,'মাশীঈঈঈঈঈদ!' ছেলেটাও তখন প্রায় চেঁচিয়ে বলে উঠল,'My name is Mashood!!' আশেপাশের সবাই হেসে ফেলল। আমরাও ব্যাপারটা ধরতে পেরে হাসতে হাসতে শেষ!

মাশুদের ভাষ্যমতে আমরা আসলে জমজ ভাইবোন। এই সিঙ্গাপুরে বহুকাল আগে আমাদের জন্ম। তারপর ঘটনাচক্রে নিয়তি ওকে নিয়ে গেছে নাইজেরিয়া, আমাকে বাংলাদেশে। চেহারায় পার্থক্য সে কারণেই। কিন্তু দুই জমজকে কে কোনকালে পেরেছে 'দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা...রেললাইন বহে সমান্তরাল'টাইপ রাখতে! তাই আবার এই সিঙ্গাপুরে দু'জনের হঠাৎ দেখা।

যাক, Orientation এ গিয়ে নতুন সমদুখী অনেক বন্ধু তো পেলামই, হারিয়ে যাওয়া জমজ ভাইকেও খুঁজে পেলাম। বিদেশে একা থাকার কষ্ট কিছুটা হলেও কমল।

[আমার মা গত জুনে এখানে যখন বেড়াতে আসল, মাশুদ তখন তাকে খুব সুন্দর করে 'আম্মা' ডাকা শুরু করে দিল। এবার ডিসেম্বরে দেশে গেলাম যখন তখন আম্মা তার ছেলের জন্য একটা পাঞ্জাবি দিল। ওদের দেশীয় পোশাকের সাথে বেশ মিল আছে, শুধু ওরা যে কাপড়ের জামা পরে পায়জামাও একই কাপড়ের পরে, সে যত বাহারী কাপড়ই হোক না কেন। মাশুদ পাঞ্জাবি পেয়ে আহ্লাদে আটখানা। এখন নাকি ও আসলেই বাংলাদেশী।]

[ছবিতে আমার পাশে নীল গেঞ্জি পরা ছেলেটি মাশুদ। বাকিরা সবাই আমাদের ইরানী বন্ধু। একজন চীনা বন্ধুও আছে। গত 9ই আগস্ট সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ডে'তে একসাথে fireworks দেখতে যাওয়ার সময়কার ছবি, সাদিকের তোলা।]


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

কী দারুণ স্মৃতি!

---মোখলেস হোসেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।