অপু আর আমি - ২

মাশীদ এর ছবি
লিখেছেন মাশীদ (তারিখ: সোম, ৩১/০৭/২০০৬ - ৩:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ক্লাস ফাইভের দিকে কি কোন ঝগড়া হয়েছিল? ঠিক মাথায় আসছে না। হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। ঝগড়া বোধ হয় শুরু হয়েছিল তারো অনেক পরে।

যা হোক, ক্লাস সেভেন থেকে আবার শুরু করছি। মাঝখানের 3 টা বছর অপুর প্রতক্ষ্য প্রভাববিহীন বলেই হয়ত আমার কাছে বেশ স্মৃতিবিহীন।

অপু বরাবরই খুব চুপচাপ ছেলে। ক্লাসের এক কোণায় বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। যেন ক্লাসে থেকেও নেই! আমি অন্যদিকে এক মুহূর্তও চুপ থাকতে পারিনা। পড়ালেখায় ভাল ছিলাম, তাই বাবা-মা'র কাছে টিচারদের একটাই অভিযোগ, মেয়ে পড়ায় ভাল কিন্তু খুব 'চঞ্চল'। কো-এড হলেও ক্লাসের মেয়েরা তখনো ছেলেদের সাথে অতটা ফ্রি না। তাই যেকোন কারো হয়ে যেকোন কাউকে ধমকাধমকির কাজ আমি চরম উৎসাহে করি। এর মধ্যে অপুও বাদ যায় না। আমি ঝাড়ি দেই, আর এই ছেলে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আর আমি ভাবি, 'এই ছেলে সারাদিন ভাবেটা কি?' ।

অপু চমৎকার ছবি আঁকত , এর মধ্যে বেশ কিছু আর্ট কম্পিটিশানে প্রাইজ পেয়েছে। ক্লাস ফোর থেকেই আমরা জানি এ ছেলে লেখেও ভাল। স্কাউটিং এও বেশ অ্যাক্টিভ ছিল। কোন ক্লাসে মনে নেই, একবার স্কাউটিং এর ক্যাম্প হল স্কুলে। আমি বুয়েট ক্যাম্পাসে থাকতাম বলে বারান্দা থেকে দেখলাম ওরা যাচ্ছে স্কুলের দিকে। বারান্দা থেকে কত কিছুই না দেখতাম। কিন্তু ওর কারণেই হয়ত সেটা এখনো মনে আছে।

তবে সত্যি সত্যি প্রেমে পড়া তখনো অনেক দূর। ক্লাস সেভেনেই হয়ত প্রথম ঘটনা অন্যদিকে টার্ন নিল।

1991 এর আগ পর্যন্ত অপুর ফোন নেই বলেই জানতাম। এর মধ্যে হঠাৎ করেই একদিন অপুর একটা গল্পের বই হাতে পেলাম। সেটার 1ম পাতায় খুব সুন্দর হকরে লেখা 'অপু 8*****'। আমার রিঅ্যাকশান, 'লে হালুয়া! এবার বাছাধন কই পালাবে?' তখনো ভালবাসার মধ্যে না শেয়ার করার বোধ অনেক দূরে, তাই ক্লাসের সবগুলো মেয়েকেই আমাদের 'গুডি বয়' অপুর নাম্বারটা দিয়ে দিলাম। একটা ভাল ছেলেকে ত্যাক্ত করাই যেন প্রধান উদ্দেশ্য। বিশেষ করে আমাদের ক্লাসে ছেলেদের থেকে মেয়েগুলোই বেশি মারদাঙ্গা ছিল বরাবর। 1ম ফোনটা আমিই করেছিলাম। আমার জন্য যে একটা অন্য জগৎ অপেক্ষা করছে - সেটা না জেনেই।

আমার সাথে ক্লাসের অনেক ছেলেরই জিগরি দোস্তি ছিল। অনেকের সাথেই নানা বিষয়ে ফোনে কথা হত। আমার বাসাও এ ব্যাপারে বেশ উদার ছিল। অপুর সাথে কথা শুরু হল অন্যদের মতই। কিন্তু একটা চাপা কৌতুহল ওকে নিয়ে আমাদের সবারই ছিল। এ ছেলেটা কি অত ভাবে? আমার ব্যক্তিগত ধারণা ছিল ও মহা অাঁতেল টাইপ। ফোনে কথা বলতে গিয়ে দেখলাম he has a great sense of humor as well! এ ব্যাপারটা আমার খুব মজা লাগত। অবাক হতাম খুব যে এই ছেলে এত মজা করতে পারে। আমি ছাড়া অন্যরাও ওকে ফোন করত। সাইকি, লাবনী - আমরা সবাই এক সার্কেলেরই ছিলাম। কিন্তু ওদের বাদ দিয়ে একদিন হঠাৎ করেই অপু আমাকে ফোন করে বসল। কোন মেয়েকে করা ওর প্রথম ফোন। Again, he made me feel special. আমিও হঠাৎ দেখলাম অন্যদের থেকে ওর ফোন পেলেই বেশি ভাল লাগত। কত কথাই না হত! কিন্তু পরদিন ক্লাসে গেলে আবার দৃষ্টি সেই জানালা দিয়ে বহির্গামী! যেন চেনেই না!

এই 1991 সালে হঠাৎ করেই যেন বাংলা ব্যান্ডের জগতে বিপ্লব ঘটল। ওয়ারফেজ, উইনিং সহ নানা বিখ্যাত-কুখ্যাত ব্যান্ড বেছে বেছে ঐ সময়েই আত্মপ্রকাশ করা শুরু করল। আমরা সবাই (অপু-আমিসহ আরো অনেকে) পেলাম একটা নতুন দুনিয়া। 35/40 টাকা দিয়ে ক্যাসেট কেনা তখন একটা বড় ব্যাপার। একেকটা অ্যালবাম বের হয়, সাইকি-লাবনী-নাফিস-আসিফ-অপু না হয় আমি কিনি আর আমরা সবাই ধার নিয়ে শুনি। আরেকভাবে শোনা শুরু হল, ফোনে। সব গানই তখন মনে হয় আমাদের। এরমধ্যে আরেকটা ব্যান্ড বের হল, নাম 'লেসন'। ব্যান্ডের একজন অপুর কাজিন বলে ও একটা কপি পেল। ফোনে শুরু হল শোনা -

ঘুমিয়ে পড় যদি আমায় ভেবে
স্বপ্নে ভাস যদি আমায় দেখে
এ হৃদয় মাঝে যদি রাখো গো আমায়
ভোরের পাখি হয়ে গান শোনাবো তোমায়...

এই ব্যান্ডের এই প্রথম অ্যালবামটার প্রত্যেকটা গান মনে হল যেন আমাদের জন্যই লেখা। গানগুলো ফোনে বা বাসায় শুনি আর ভাব আরো গভীর হয়। কিন্তু মন তখনো অপুর প্রতি ভালবাসাবোধ বোঝার মত পরিপক্ব ছিল না। ভাল লাগত এটা বুঝতাম। ওরও যে ভাল লাগে সেটাও টের পেতাম। কিন্তু সেটার গভীরতা তখনো বুঝতাম না।

সেটা ঠিক কবে মাথায় আসল?

এর উত্তর এখনো জানিনা। কথা বলতে বলতে আর গান শুনতে শুনতে ক্লাস সেভেন গেল। এরপর আবার যেন কোথায় গোলমাল হল। ছোটবেলায় খুব সিরিয়াস মনে হওয়া সেসব গোলমাল এখন মনে পড়ে না।

হঠাৎ আবার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল। আবার 3 বছরের একটা বিরতি। এরপরের গল্প ক্লাস টেনে গিয়ে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।