মেহবুবা জুবায়ের এর ব্লগ

১৯৭১

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০৩/০৯/২০১১ - ১০:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব > দ্বিতীয় পর্ব > তৃতীয় পর্ব > চতুর্থ পর্ব > পঞ্চম পর্ব > ষষ্ঠ পর্ব > সপ্তম পর্ব

> অষ্টম পর্ব

এখানে, এই পর্বে আমি ধারাবাহিক ভাবে কিছু না লিখে সেই সময়ের কিছু টুকরো টুকরো ঘটনা শেয়ার করছি। যেভাবে আমার মনে এসেছে সে ভাবেই লিখছি। সময়ের হের-ফের হতেই পারে। তার জন্য আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

আমরা ঢাকায় ফিরে আসবার পর থেকেই স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র শোনা হতো। সন্ধ্যার পর বড়রা ছাদে চলে যেতেন। আমাদের ছাদে কয়েকটা অসমাপ্ত ঘর ছিলো বাতিল নির্মাণ সামগ্রীতে ঠাসা। তারই খানিকটা পরিষ্কার করে, পাটি পেতে সেখানে বসে তারপর রেডিওর নব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার ধরা হতো। কখনো শোনা যেত, কখনো শোনা যেতো না।  শুরু হতো গান দিয়ে। “জয় বাংলা বাংলার জয়” তারপর সেই সব গান, যে গানগুলি আমাদের স্বাধীনতার গান নামে পরিচিত।


১৯৭১

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০৩/০৮/২০১১ - ১:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব > দ্বিতীয় পর্ব > তৃতীয় পর্ব > চতুর্থ পর্ব > পঞ্চম পর্ব > ষষ্ঠ পর্ব > সপ্তম পর্ব

গ্রামগুলি আর নিরাপদ ছিলো না। ঢাকার ওপর দখল নিয়ে পাক-আর্মিরা তখন আশে-পাশে গ্রাম-গঞ্জে হামলা চালাতে শুরু করেছে। আমাদের গ্রামে থাকাটা আব্বার কাছে আর নিরাপদ মনে হলো না। ঠিক মনে নেই, তবে মনে হয়, এপ্রিলের শেষের দিকে আমরা ঢাকায় ফিরে এলাম। আমার মেজবোনের জন্মদিন ২৮শে এপ্রিল। আমরা ফিরবার পর আম্মা ওর জন্মদিন উপলক্ষে পায়েস রান্না করেছিলেন। আমাদের উত্তরবঙ্গের লোকদের মাঝে, মনে হয়, ঘটা করে জন্মদিন পালন করবার রেওয়াজ ছিলো না। তবে জন্মদিন উপলক্ষে পায়েস রান্না করা হতো, সেটা কাঁসার বাটিতে করে জুড়োতে দেওয়া হতো মিটসেফের ভেতর। যার জন্মদিন তাকে কিশমিশ-বাদাম ছড়িয়ে বেশ যত্ন করে তা খেতে দেওয়া হতো।


১৯৭১

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০৭/২০১১ - ২:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব > দ্বিতীয় পর্ব > তৃতীয় পর্ব > চতুর্থ পর্ব > পঞ্চম পর্ব > ষষ্ঠ পর্ব

চারিদিকে বাঁশঝাড়। মাঝখানে খানিকটা জায়গা পরিষ্কার করে মেজবাহ ভাইরা ট্রেনিং নিতেন। আমরা যেখানটায় থাকতাম সেখান থেকে জায়গাটা অনেক দূর, অনেকটা হাঁটতে হতো। ট্রেনিং দিতো একজন তাঁতি, সে ছিলো রঙের মাস্টার। সুতা রঙ করার কেমিকেলগুলো একসাথে মেশাতো ও। নামটা এখনো মনে আছে মনতু মিয়া (অবসর প্রাপ্ত ই.পি.আর)। পায়ে ব্যথা পেয়ে আগেই অবসর নিয়েছিলো। একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটত। বয়স কত, ঠিক জানি না। তখন মনে হতো, অনেক বড়। কিন্তু আসলে বেশি না, ৪৫-এর নিচেই হবে।


১৯৭১

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১১/০৬/২০১১ - ৪:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব > দ্বিতীয় পর্ব > তৃতীয় পর্ব > চতুর্থ পর্ব > পঞ্চম পর্ব

ডেমরায় আমাদের একটা টেক্সটাইল মিল ছিলো, সেখানকার কেয়ার টেকার আয়েস আলী ২৮ মার্চ খুব ভোরে চলে এলো আমাদের ডেমরায় নিয়ে যেতে। আব্বাকে মাঝে মাঝে ওখানে গিয়ে থাকতে হতো, তাই মোটামুটি থাকার একটা ব্যবস্থা ছিলো। তবে এতজন লোকের থাকার ব্যবস্থা নিশ্চয়ই ছিলো না।

আম্মা তার পাড়াতো আপা-ভাবীদের ছেড়ে একা কোথাও যাবেন না, মরতে হয় সবাই একসাথেই মরবেন। এই ঘোষণা দেওয়ার পর সবাই একসাথেই ডেমরা যাওয়া হবে, ঠিক হলো।


১৯৭১

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০৫/২০১১ - ১২:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব > দ্বিতীয় পর্ব > তৃতীয় পর্ব > চতুর্থ পর্ব

সবুজ মামার বাসায় কিছুই ছিলো না। এমনকি ঠিক মতো প্লেট-গ্লাস, হাঁড়ি-পাতিল, বিছানা-পত্র কিচ্ছু না। শুধু একটা বিরাট ফিলিপসের ধূসর রঙের রেডিও আর একটা বড় পাতিল ছিলো। সেটাতে করে পাড়ার মুদি দোকান থেকে চাল-ডাল কিনে এনে শুধু খিচুরি রান্না করে খেতাম আমরা। প্লেট-গ্লাস বেশী ছিলো না বলে পালা করে খাওয়া হতো। পাড়ার মুদি দোকানটা তখন পর্যন্ত ছিলো বাঙালির। দোকানটা সামনের দিকে বন্ধ, কিন্তু পেছনের একপাশে একটু খোলা ছিলো। ওদিক দিয়েই পাড়ার লোকে কেনাকাটা করতো। তেমন ভালো কিছু ছিলো না সেখানে। মনে হয়, পান-বিড়ির দোকানের মতো ছিলো সেটা। সিগারেটের মধ্যে স্টার, বগা, উইল্স আর সবচেয়ে বেশী ছিলো বিড়ি।


১৯৭১

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/০৫/২০১১ - ৭:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব

০৪

আমরা যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম সেটা শাহজাহানপুর হলেও অনেক অনেক ভেতরে। বাড়ির কাছে রিক্সা আসারও রাস্তা ছিলো না। বাসাটা ছিলো সবুজ মামার, আমাদের লতায়-পাতায় মামা। তখনও বিয়ে করেন নি। তিনি ছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফিজিক্সের লেকচারার। তাঁরাই ছিলেন প্রথম ব্যাচ, যাঁরা বাংলাদেশ হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছিলেন। তখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পিএইচডি করা যেতো না।


১৯৭১

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০২/০৫/২০১১ - ৫:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব

পিঠে হাতের ছোঁয়া পেয়ে চমকে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম বড়াপু। ওকে দেখেই আমি মাথাটা সরিয়ে ফেললাম চট করে, যাতে আর চড় না মারতে পারে। কিন্তু ও আমাকে চড় মারলো না, বরং দু’হাতে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। তারপর প্রায় কোলে করে আমাকে গেস্টরুম থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলো ড্রেসিংরুমে। সেখানে আমাদের পরিবারের সবাই গাদাগাদি করে বসে ছিলো। আমরাও একপাশে বসে পড়লাম। গতরাতে বড়াপুই বাথরুমের দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছিলো। আমাকে গেষ্টরুমে আটকিয়ে রেখে ভয় দেখাবার জন্য।


১৯৭১

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১৮/০৪/২০১১ - ৫:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব

০২
ঠিক আমাদের বাসার উল্টোদিকে ছিলোও বিঘা খানিকের একটা খালি জায়গা ডি.এস.পি. চাচাদের বাউন্ডারি ওয়ালের সাথে লাগানো। আমরা বলতাম ছোট মাঠ। ২৫শে মার্চের বিকালে আমরা ছেলে-মেয়েরা ছোট মাঠে সাতচারা খেলছিলাম। তখনও মাগরিবের আজান দেয়নি, মাগরিবের আজান ছিলো আমাদের ঘরে ফেরার হুইসেল। সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে হঠাৎ খেয়াল করলাম, ডি.এস.পি. চাচাদের বাসার সামনে অনেক লোকের জটলা, আব্বাও ছিলেন তাদের মাঝে, তাঁরা ঊচ্চস্বরে কথা বলছিলেন, আমরা খেলা বাদ দিয়ে দৌড় লাগালাম কী হচ্ছে জানবার জন্য। জানলাম, বঙ্গবন্ধুকে বিট্রে করে ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গিয়েছে।


১৯৭১

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১১/০৪/২০১১ - ৩:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অক্টোবরের ২৪ তারিখে আমার বাবা মারা গেলেন, সেদিনই স্বপ্নে আব্বাকে দেখলাম। সেই একাত্তরের সব ঘটনায়। সেগুলি এত স্পষ্ট, এত জীবন্ত যে, চোখ খুলে অনেকটা সময় লেগেছে বাস্তবে ফিরে আসতে। সে রাতে নির্ঘুম চোখে ফিরে গিয়েছিলাম সেই দিনগুলিতে। আমি নিজেও জানতাম না আমার এতো কথা মনে আছে। আমি কখনো সেইভাবে মনে করে দেখিনি একাত্তরের সেই সময়টাকে।


এই তো জীবন!

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১২/১১/২০১০ - ১১:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার ছেলে স্কুল বাস্কেটবল টিমে এক পয়েন্টের জন্য সুযোগ পেলো না। ভালো করে কথা ফোটবার আগেই সে ঘোষণা দিয়েছিল, বড় হয়ে সে NBA বাস্কেটবল প্লেয়ার হবে। দুই-তিন বছর বয়সে যখন সে প্রবল দোটানায় ভুগছে ডায়নোসরাস না পাওয়ার রেঞ্জার
কোনটা হবে, তখনো বলতো “ABA ডায়নোসরাস” বা কখনো “ABA পাওয়ার রেঞ্জার" হবে।

বাপের কোলে বসে বাস্কেটবল খেলা দেখতে দেখতে সে বড় হয়েছে। বাবার বাস্কেটবলের প্রতি অনুরা ...