ঢিল

মনামী এর ছবি
লিখেছেন মনামী (তারিখ: শুক্র, ০২/০৪/২০১০ - ১:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকাল ওদের আড্ডাগুলো বেশ সরগরম। ওরা যারা দেশকে ভৌগোলিক সীমারেখার বাস্তব পরিধির চেয়ে অধিক কিছু মনে করে, ওরা যাদের কাছে দেশ বিস্তীর্ণ চেতনার কায়াহীণ পরিমন্ডলে একটি উজ্জ্বল অবস্থিতি, ধুলা-মলিন পৃথিবীতে তারা লুটাতে দেয়না দেশমাতৃকার পবিত্র আঁচল, তাই দেশকে ঝুলিয়ে রেখেছে উচ্চমার্গীয় চিন্তার সুতোয় বোনা শিকেয়।

আজকাল ওদের আড্ডাগুলো বেশ সরগরম। মাটির পৃথিবীতে একটি স্বতন্ত্র অস্তিত্বের জন্য, একটি "দেশ" হয়ে ওঠার জন্য ওদের দেশকে একটি অবিস্মরণীয় লড়াই লড়তে হয়েছিল। একপাল হায়েনার সঙ্গে লড়েছিল হাড় লিকলিকে কৃষক, আর সদ্য কৈশোর পেরুনো ছেলেটি, পেটে ভাত জোটেনা এমন মজুর, আর নরম গদির আদর মাখা শরীরের যুবকটি। কিন্তু এতসব মানুষের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল কিছু রোয়া ওঠা শেয়াল। পশুত্বের তান্ডবে মেতে উঠলো হায়েনা ও শেয়ালের দল - মাংস চাই, আরো মাংস। হায়েনার থাবা গুড়িয়ে দিল দ্যুতিময় চোখের মানুষগুলো, ভেঙ্গে দিল বিষদাঁত। কিন্তু শেয়ালগুলো লেজগুটিয়ে গর্তে ঢুকে গেল।

আজকাল ওদের আড্ডাগুলো বেশ সরগরম। কারণ এবার শেয়ালগুলোকে গর্ত থেকে টেনে বের করা হবে। কতদিন শেয়ালগুলো মানুষের মত ঘুরে বেড়িয়েছে আর আকাশ থেকে খসে পড়েছে একটি করে দ্যুতিময় তারা। সেই হাড় লিকলিকে কৃষক, আর সদ্য কৈশোর পেরুনো ছেলেটি, পেটে ভাত জোটেনা এমন মজুর, আর নরম গদির আদর মাখা শরীরের যুবকটি - যারা অস্ত্র কাকে বলে জানতোনা কিন্তু হাতে তুলে নিয়েছিল যারা মৃত্যু কাকে বলে জানতোনা কিন্তু বুক পেতে দিয়েছিলো তারা যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠেছে। সেই মেয়েটি যাকে জীবন্তু ছিড়ে খেয়েছে হায়েনার পাল - তার মূক চোখে আগুন জ্বলে উঠেছিল। কিন্তু কেউ কিচ্ছু বলেনি।

আড্ডায় সব শেয়ালের বংশবিনাশশেষে ওরা বাড়ি ফেরে। এরা রাস্তায় বের হয় কিভাবে? কেন মানুষ এদের পিটিয়ে মেরে ফেলেনা? নিদেনপক্ষে একটা ঢিলও তো ছুঁড়তে পারে?

‘আপনারা শুধু ওই ধর্ষণ দেখেন। কিন্তু চোখের সামনে যে ইডেন, বদরুন্নেসা কলেজে ধর্ষণ হয়েছে, সেটা দেখেন না? আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। চোখের সামনে খুন হয়ে যায়, সেটা দেখেন না। আপনারা খালি যুদ্ধাপরাধ চোখে দেখেন? খালি হাড্ডি খুঁজে বের করেন, সাক্ষী খোঁজেন।’

কা কা রবে কাক কি প্রতিবাদ জানায়? কাকের কি অতীত থাকে, স্মৃতি-বিস্মৃতিতে গড়ে অস্তিত্বের ভীত? মানুষেরাতো অতীত বেঁচে দিয়েছে কাবুলিওয়ালাদের কাছে। তাই শেয়ালে যখন তাড়িয়ে তাড়িয়ে অতীতের হাড্ডি লেহন করে তখন বিমূঢ় স্থবিরতায় মদির হয়ে থাকে। ওদের আড্ডাগুলো হয়ে ওঠে সরগরম। তাই প্রতিবাদের ঢিল রাস্তায় গড়াগড়ি খায় আর শেয়ালের বিষ্ঠায় ভরে যায় নগরীর রাজপথ।


মন্তব্য

নাশতারান এর ছবি

যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে এ যুদ্ধ শেষ হবে না। একাত্তরের ধর্ষণকারীদের বিচার হয় নি বলেই ইডেন, বদরুন্নেসা কলেজে ধর্ষণ হয়। একাত্তরের খুনীদের বিচার হয়নি বলেই আজো চোখের সামনে খুন হয়ে যায়। এই কাক-শকুন-শেয়াল-কুকুর-হায়েনা-শূকরদের মুখ যথাসময়ে বন্ধ করা হয়নি বলেই আজ তারা মুখ খুলতে সাহস পায়।

[ বানানঃ কায়াহীণ > কায়াহীন, রোয়া > রোঁয়া, গুড়িয়ে > গুঁড়িয়ে,‌ ভীত > ভিত, বেঁচে > বেচে ]

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

মনামী এর ছবি

মুখ খুলতেই কেবল নয় চোখ রাঙানোরও সাহস পায় কারণ আমরা তাদের শত্রু ভাবার বিষয়ে দ্বিধাহীন নই। বানানের ভুলগুলো দেখিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

সংসপ্তক এর ছবি

ভালো লেগেছে।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

মনামী এর ছবি

ধন্যবাদ।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

গল্পে চলুক

এমন দিন আসুক যেন এমন গল্প আর আমাদের লিখতে না হয়।

মনামী এর ছবি

সেই দিনের জন্যই এই গল্প লেখা। আমরা যেন প্রমান করতে পারি আমরা অতীত বিকিয়ে দেইনি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো

মনামী এর ছবি

আপনি কে জানলে আরো ভাল লাগতো।

হাসিব এর ছবি

হমম । পড়লাম ।

মনামী এর ছবি

ভালো না মন্দ?

বইখাতা এর ছবি

চলুক চলুক

মনামী এর ছবি

হাসি

শুচি এর ছবি

অসাধারণ। আমি যতগুলো লেখা এযাবত পড়লাম, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে সুন্দর। মেটাফোরগুলি সুন্দর। সবচেয়ে বড় কথা, ক্রোধটা প্রকাশ পেয়েছে ষোলআনা। পড়তে পড়তে যন্ত্রনাটা অনুভব করলাম আরেকবার...হেরে যাবার যন্ত্রনাটা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।