এন্টিগল্প > আদিম >

মনজুরাউল এর ছবি
লিখেছেন মনজুরাউল (তারিখ: শুক্র, ০১/০৮/২০০৮ - ৬:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

টেক্সাস। যুক্তরাষ্টের পশ্চিম। একসময় এখানে ধুঁ ধুঁ ফাঁকা প্রান্তরে স্ট্যালিয়ন পনিটেলে চেপে কাউবয়রা গরু চরিয়ে বেড়াত। ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দে কেঁপে উঠত উপত্যকা। থেকে থেকে বুনো কোন অচেনা প্রণী গর্জে উঠত। রেলে চেপে শহুরে বণিকরা আসত সোনার খোঁজে, হীরার খোঁজে। আরো দূরে ইন্ডিয়ানরা জুবুথুবু হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনত। মেইনল্যান্ডের সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ মানেই মৃত্যু।

আজকের টেক্সাস মানে ঝাঁ চকচকে ক্যাডিলাক,ঢাউস ফোর্ড আর স্পেসে যাবার যোগাড়যন্ত্রের হেডাপিস।এই টেক্সাসের ই একটি ছোট্ট শহরে শুরু হয়েছিল 'আনইউজ্যুয়াল কাম্পিডিশান'। এর আগে এত বেশি বিষয়ের প্রতিযোগিতা হয়ে গেছে যে এখন আর আইটেম খুঁজে পাওয়া যায়না। এমনকি থুথু ফেলা,পেশাব করে কে কত দূরে নিতে পারে তা, নখ কাটা..আরো যে কত কী তার ইয়ত্তা নেই। এবারের আয়োজন ভাত খাওয়া ! ভেরি সিম্পল ! দুশ'গ্রাম চালের ভাত থাকবে। তিনটি ক্যাটাগরিতে খেতে হবে। হাত দিয়ে, চীনা-জাপানি কাঠি দিয়ে আর চামচ দিয়ে। ফরেন ক্যাটাগরিতে ডিভিডি পাঠিয়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল।

ফৈয়াজ ফার্গুসন,জেরোমি আসলাম, আর রাসেল ও নীল, তিন নেক্রোপলিস এ্যাডভেন্চারাস নাম এন্ট্রি করে দিল।

তিন জনই বিস্তর মগজ খাঁটিয়ে একে ধরে তাকে ধরে ভিডিও শ্যুটের চেষ্টা করে গলদঘর্ম হলো। শেষে 'দি আউডিয়া' বলে রাসেল ও নীল রাইট এলবো এবডোমিনাল রেন্জ বরাবর সেঁটে 'ইয়াহ্' গোছের শব্দ করল। পর দিন যথাসাধ্য ইন্টেরিয়র এ্যারেন্জমেন্ট করে , তক্কে তক্কে তেজগাঁও রেললাইনের ধার থেকে ছ'জন হাভাতে কে টাকা গছিয়ে ধরে আনল। তিন পুরুষ,তিন নারী। টানা তিন দিন তাদের কাউকেই এক ফোঁটা দানাপানি দেওয়া হলো না। চতুর্থদিন লাইট,ক্যাম,সাপোর্টিং হ্যান্ড ইত্যাদি নিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট শুরু। ক্ষুধার্থ বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ল তিন পুরুষ-তিন নারী। জেরোমি আসলাম স্টপওয়াচ টিপে বলে উঠল -ইউরেকা ! টু পয়েন্ট সিক্স মিনিট ! এক্সিলেন্ট টাইমিং!
তিন পুরুষ-তিন নারী ভয়ার্ত চোখে লোকগুলোকে দেখছে আর কাঁপা কাঁপা হাতের আঙ্গুলগুলো চাটছে।

এডিট। প্যাক। ডিএইচএল। ফ্লাইট। টেক্সাস। প্যাকওপেন। ইনসার্ট। স্ট্রবমুডে প্লে। রিজেক্ট!

এর দিন পাঁচেক আগে কুড়িগ্রামের বান্দিরচর থেকে চারজন মানুষ কমলাপুরে এসে নেমেছিল। ওদের নাম নেই। পুরুষ-নারী-ছেলে এবং ছেলে। প্রথম ঘন্টায়ই বাসে উঠতে গিয়ে পুরুষ-ছেলে এবং নারী-ছেলে হয়ে আলাদা । সাকিন,পুরুষ-ছেলে শিশুহাসপাতালের পেছনে। নারী-ছেলে মগবাজার রেল লাইনের ধারে। দু'জোড়াই প্রায় কাছাকাছি সময়ে আড়াই দিনের মাথায় খাবার জোটাতে পেরেছিল। পুরুষ খাওয়া শুরু করে ভেবেছিল অর্ধেক খেয়ে ছেলেকে দেবে। নারী ভেবেছিল ছেলের খাওয়া হলে সে খাবে। কারোরই ভাবনা ঠিক হয়নি। পুরুষ ফ্যাল ফ্যাল করে ছেলের দিকে তাকিয়ে পাথর,আর নারী পরম তৃপ্তিতে মেয়ের মাথায় হাত বুলোচ্ছিল।
পৃথিবীর এই আদিমতম দৃশ্য টেকের জন্য ক্যাম-স্টপওয়াচ হাতে জেরোমি আসলামরা কেই সেখানে ছিল না ।


মন্তব্য

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
পৃথিবীর এই আদিমতম দৃশ্য টেকের জন্য ক্যাম-স্টপওয়াচ হাতে জেরোমি আসলামরা কেই সেখানে ছিল না ।
তারমানে আমাদের অভাব, ক্ষুধা আর দারিদ্র সবই অন্যের পুঁজি?

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রায়হান যাকে এর ছবি

অসাধারণ।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আর্টি শর্টফিল্মের আউটলাইন। চালু....।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

মুশফিকা মুমু এর ছবি

মন খারাপ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মন খারাপ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুন..
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

নিদারুণ! নিরতিশয় বিপর্যয়কারী। অতিশয় উত্তম এবং লেখক সাতিশয় কড়া।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।