নিজ দেশে পরবাসী বাংলাদেশের আদিবাসী

মনজুরাউল এর ছবি
লিখেছেন মনজুরাউল (তারিখ: রবি, ১০/০৮/২০০৮ - ৩:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিশ্বে দিবস আর দিবসসমূহ পালন করতে করতে মানুষ এখন ভুলেই গেছে 'আজ কোন দিবস নয় কেবলই একটি দিন মাত্র '। মা দিবস,ভালবাসা দিবস,বাবা দিবস,মেয়ে দিবস,বন্ধু দিবসগুলোতে আমরা যে পরিমান ভালবাসাবাসী বিলিয়ে ফতুর হতে চাই, যে পরিমান ঘটা করে প্যাশন ও ফ্যাশন প্রদর্শনের মচ্ছব করি সেই পরিমান দূরের কথা, গুরুত্বপূর্ণ দিবসে তার সিকি ভাগও আমাদের কার্যসূচীর মধ্যে থাকে না। এখানেও আমাদের পর্ব্বতপ্রমান হিপোক্রাসি। এখানেও আমাদের জাত-পাতের বেড়াজালের ফাঁকফোঁকোড়ে সুঁই পরিমানে ফাঁক নেই। আজ অর্থাত্ ৯ আগষ্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস। জাতিসঙ্ঘ আহ্লাদকরে এটিকে পালনের জন্য ফরমায়েশ-টরমায়েশ করে দিয়েছে। আমরা সেইমত নামকাওয়াস্তে সেমিনার-টেমিনার করে আদিবাসী কেতাঅলা দু’চার জনকে ধরে এনে বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালনের নাটক করেছি। প্রতিবারই তাই করি। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি।

আজ আদিবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রগুলোতে সরজমিন রিপোর্টও আছে। তথ্যবহুল ভাল রিপোর্ট।ওই রিপোর্টে আদিবাসী বিষয়ে অন্যান্যবারের মত এবারো তাদের সত্যিকারের কল্যাণের জন্য কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এ পর্যন্তই। এ দিনটা পার হয়ে গেলে কেউ এ নিয়ে আর একটি বাক্যও উচ্চারণ করবে না এটা নিশ্চিত।তার পরও এটা আমাদের করতেই হয়। আদিষ্ট হওয়া বলে কথা!

এমনিতেই বাংলাদেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ ভিটে মাটিহীন,জায়-জিরাতহীন,আশা-ভরসাহীন চলমান এলিমেন্ট বিশেষ।এমনিতেই যারা এদেশে ভাগ্যবান তারা ছাড়া আর বাকি কোটি কোটি মানুষ না-মানুষ না-পশু! এই মানুষদের সংখ্যা কত তা নিয়ে পরিসংখ্যানবিদ দের ভলিউমের পর ভলিউম দলিল দস্তাবেজ আছে,তার পরও তাদের হিসেবটা চন্দ্র মাসের তিথীর মত বাড়ে-কমে।যেমন এই সংখ্যা দিয়ে যদি অনুদান-টনুদান বাগাতে হয় তাহলে একরকম,আর বরাদ্দ বিষয়ে সরকারকে অবহিত করতে হলে অন্যরকম।তাহলে হিসেবে দাঁড়াচ্ছে,যাদের প্রায় ৯কোটি মানুষের দুবেলা দু’মুঠো খেতে-পরতে পারার সুযোগ নেই,তিন থেকে চার কোটি মানুষের বাসস্থান নেই,চার থেকে সাড়েকোটি মানুষের নিয়মিত কর্মসংস্থান নেই,আড়াইকোটি শিতি বেকার,মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ভাগ মানুষ ভূমিহীন এবং এই সংখ্যাটা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে , সেই দেশের সরকার, এস্টাবলিশমেন্ট,ব্যুরোক্র্যাসি দেশের খুবই মাইক্রোস্কোপিক একটা অংশ-আদিবাসীদের ভাল-মন্দ নিয়ে ভাববে,করবে সেটা সোনর পাথর বাটির মত ব্যাপার।

পাকিস্তান আমলের কথা বাদ, এই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত সারা দেশের কত শত কত হাজার আদিবাসী ধর্মান্তরীত হয়েছেন, কত হাজার দেশ ছেড়ে ভীন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন,কত শত সংখ্যাগুরু বাঙালির অত্যাচারে নিশ্চি‎হ্ন হয়ে গেছেন তার কোন হিসেব সরকারের কাছেতো নেই-ই,এদের নিয়ে মায়াকান্নাকাঁদা এনজিও মহাজনদেরও নেই।

আজ এই বিশেষ দিনে তাই সংবাদপত্রের প্রতিবেদককে খুঁজেপেতে হদীস বের করতে হয় কোথায় কোথায় তারা আছেন,কোথায় কতজন কীভাবে আছেন! পাহাড়ে যে আদিবাসীরা আছেন তারা তো নিজেদের দুর্গম অঞ্চলে আজন্ম লড়াই করে বেঁচে আছেন। যদিও তাদের প্রতি মুহূর্তে দ্বৈত শত্র“র মোকাবেলা করে বাঁচতে হচ্ছে। তার পরও তারা একটা গননার মধ্যে আছেন। কিন্তু যারা সমতলে আছেন তাদের অবস্থা তো নৌকাচারী বেদেদের মত! আজ এখানে তো কাল সেখানে! আদিবাসীদের এক সময় অসংখ্য গোত্র বা ধর্ম থাকলেও সময়ের ব্যবধানে তা বিলীন হয়ে গেছে। তবে এখনো ১৪টি গোত্রকে চিহ্নিত করা গেছে। এরা হলো ওরাও, সাঁওতাল, মাহাতো, বরাইক/বসাইক, তুরি, মাহালী, মুণ্ডারী, সিং, রায় ও রবিদাস। বর্তমানে আদিবাসীদের মধ্যে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রবণতা। এরা সমতলে সাধারণ বাঙালিদের মধ্যে থেকের নেই।একটা দুর্ভেদ্য প্রাচীর বাঙালি আর আদিবাসীদের পৃথক করে রেখেছে।একমাত্র পাহাড়ি আদিবাসী ছাড়া অন্য কোন আদিবাসীর সরকারি চাকরির কোন কোটা নেই। পাহাড়ি যাদের আছে তারাও শুধুমাত্র কোন বিশেষ সশস্ত্রবাহিনীতে চাকরির সুযোগ পান।অসম্ভব ভাগ্য নিয়ে জন্মানো কিছু আদিবাসী অন্যান্য চাকরি ক্ষেত্রে ছিঁটেফোঁটা সুযোগ পান। সাঁওতাল,মাহাতো,বরাইকদের সেরকম কোন সুযোগও নেই।

আদিবাসী নেতারা যেহেতু এদেশেরই জলহাওয়ায় মানুষ,তাই এদেশের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের মত,সরকারি হুকুমবরদারদের মত তারাও ল্যলচাঘাটাষঁঢ়খন্ড ক্লিবে পরিনত হয়েছেন।তারাও নিজ নিজ কায়েমী সুযোগ-সুবিধের চাদরের তলে বাকি সব ঝাপসা দেখেন।নিজেদের কচুটা,মূলোটা,ব্যাসনটা-বসনটা হাসিল করতে পারলে 'বাঙালি-আদিবাসী ভাই ভাই ' শ্লোগান তুলে যেখানকার ঘুটি সেখানে গিয়ে থেমে যান। শুধু থামলে তো চলবে না,তাই দিনান্তে এক ধরণের বহুলচর্বিত,বহুলকর্ষিত দাবি বরাবরের মত এবারো রেখেছেন।

দাবিগুলি এমন:জাতিসংঘ ঘোষিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ, পৃথক ভূমি কমিশন, জাতীয় সংসদে আদিবাসীদের জন্য সংরতি আসন, পৃথক মন্ত্রণালয়, উত্তরাঞ্চলের আদিবাসী উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ এসব দাবি দীর্ঘ দিনের। চাকরির ক্ষেত্রে উপজাতি, সমতল ভূমি জাতির জন্য কোটা থাকলেও আদিবাসীদের জন্য কোনো কোটা নেই।
আদিবাসী বহুমূখী উন্নয়ন সংস্থা, ওরাও ফাউন্ডেশনসহ নানা নামে বেসরকারি সংস্থা গড়ে উঠলেও আদিবাসী সংস্কৃতি, কৃষ্টি, মাতৃভাষা রা, মানবাধিকার ও শিক্ষা নিয়ে কেউ কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। আদিবাসীদের নামের পদবী এমনকি স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময়ই তাদের গোত্র পরিবর্তন করে দেওয়া হয়ে থাকে। আদিবাসীদের ভূমি ও সংস্কৃতি রা বিষয়ক আদিবাসী উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে ২ বছর মেয়াদে কাজ করছে ফাড ফোরাম (এসএফএফ)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মির্জা মোঃ আজিম হায়দার জানান, আদিবাসীরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। দির্ঘদিনেও এ সম্প্রদায়ের কোনো উন্নতি না হওয়ায় আদিবাসীদের নিয়ে ইতিপূর্বে যেসকল সংগঠন কাজ করেছেন তাদের ওপর আর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না আদিবাসীরা। এসব সংগঠনে রয়েছে নেতৃত্বের কোন্দল। আদিবাসীরা তাদের ভূমি, সংস্কৃতি অধিকার থেকে বঞ্চিত। খাজনা প্রদান, মিউটেশন, জাল দলিল, ভূমি রেজিস্ট্রিসহ নানা বিষয়ে আদিবাসীদের স্বার্থ রা করা হয়নি। এ ব্যাপারে সরকার কিংবা দাতা সংস্থাগুলোর আরো কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানান তিনি।

এই ধরণের 'কার্যকর পদক্ষেপের দাবি ' কেবল এই বিশেষ দিনেই যেন জানাতে হয়,এবং এই বিশেষ দিন উতরে গেলে সবাই সব কিছু ভুলে যায়।এদেশের আদি মানুষ, যাদের রক্তের উত্তরাধীকার বয়ে চলেছি আমরা নিলাজের মত,যাদের রক্তভেজা মাটিতে ইঁটের পর ইঁট তুলে অট্টালিকা বানিয়ে তার ছাতে বসে সবকিছু ছোট দেখছি ,তাদের জন্য আমাদের সর্বশেষ বিবেকতাড়িত সমাধান 'কার্যকর পদক্ষেপের দাবি '! চলেস রিসেলের কালোপনা লাশ সামনে নিয়ে আদিবাসীরাও তাদের অস্থি-মজ্জা,হাড়-গোড় আর অস্তিত্ব দিয়ে বুঝে গেছেন দু’পায়ের ওপর শরীর,শরীরের ওপর মাথা নিয়ে এখনো যে লিকলিকে পায়ে ভূমিতে দাঁড়িয়ে মাংনা বাতাস নিতে পারছি তা-ই কত !

৯আগষ্ট,২০০৮ ।


মন্তব্য

নিঝুম এর ছবি

আদিবাসীদের নিয়ে আপনার এই লেখাটি ভালো লাগলো । ব্লগার বিপ্লব রহমান আদিবাসীদের অধিকার বা তাদের অনুভূতির কথা অনেক বার তার ব্লগে লিখেছিলেন । আপনি পড়ে দেখতে পারেন ।

এদেশের আদি মানুষ, যাদের রক্তের উত্তরাধীকার বয়ে চলেছি আমরা নিলাজের মত,যাদের রক্তভেজা মাটিতে ইঁটের পর ইঁট তুলে অট্টালিকা বানিয়ে তার ছাতে বসে সবকিছু ছোট দেখছি ,তাদের জন্য আমাদের সর্বশেষ বিবেকতাড়িত সমাধান 'কার্যকর পদক্ষেপের দাবি '!

আপনার এই কথা গুলো তীব্র হয়ে বুকে বাজল । যে অধিকার আদিবাসীদের পাবার কথা বাংলাদেশ সরকার কোন কালে , কখনই তাদের অধিকার, সুযোগ সুবিধা গুলোর দিকে নজর দেয়নি । শুধু পেরেছে হিংস্র সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিতে । আদিবাসি কিছু তথাকথিত নেতাও অর্থের লোভে , ক্ষমতার লোভে তাদের গোত্রের লোকদের নিয়ে শুধু খেলেছে... খেলছে । কাজের কাজ কিছুই হয় নি ।

আমরা আদিবাসীদের যতদিন একটি নির্দিষ্ট গন্ডীর ভেতর আবদ্ধ একটি সম্প্রদায় মনে করব, যতদিন মনে করব না তারাও আমাদের ভাই কিংবা বোন ... ততদিন হিংসা আর স্বার্থের আগুন জ্বলবেই । একদিন তারা স্বাধীনতার জন্য মরণ-পণ লড়বে... কিছুই করার কিংবা বলবার থাকবে না তখন ।
--------------------------------------------------------
... বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ের গালি খাবেন, 'কীসের মুক্তিযোদ্ধা তুমি, কী দিয়েছ আমাদের'? তিনি তখন আবারো বাড়ির বাইরে যাবেন, আবারো কান পাতবেন, মা জননী কি ডাক দিল?

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

মনজুরাউল এর ছবি

ধন্যবাদ নিঝুম। সম্পূর্ণ একমত আপনার সাথে। আমরা ক্রমাগত বোমা'র নিচে আগুন দিয়ে চলেছি ....ফাটবে তো আমাদের দোষেই

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

আলমগীর এর ছবি

তথ্য, আবেগ আর এনজিও মিলে প্যাঁচ লেগে গেল। মূল বক্তব্য বুঝতে পারলাম না।

মনজুরাউল এর ছবি

আমার দশাও আপনার মতই

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

১. আমরা যখন ঢালাওভাবে এই আদিবাসীদেরও বাঙালী বানিয়ে ফেলতে চাই তখনই মূলত নতুন জট লাগে।

২. বাংলাদেশের আদিবাসীরা যখন নিজেদের একটি স্বতন্ত্র জাতি বা গোষ্ঠী ভাবে তখন মূলত নতুন জট লাগে।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

মনজুরাউল এর ছবি

ফলত জট লেগেই আছে।
নতুন জট + নতুন জট = নিত্যনতুন জট ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বিশ্বায়ন থিওরি কিংবা একটি আদর্শ খামার

আপনারা কেউ কি সুবই পাত্রের ঠিকানা জানেন?
কেউ কি আমার একটা সংবাদ পৌঁছাতে পারেন তার কাছে তার আদিবাসী কথায়
অনুবাদ করে?

সুবইরা রাজা গৌড় গোবিন্দের বংশধর
তেরো শ' সালে তারা বনবাসী হয় সেনাপতি নাসিরুদ্দিনের ভয়ে- বিশ শতকে
শা'জলালের নামে করা সেনা ছাউনিতে হারায় বনের দখল
তারপর তাদের কেউ ধরা পড়ে যিশুর খোঁয়াড়ে। কেউ মিশে যায় খাসিয়ার দলে আর কেউ মাঝে মাঝে দেখা দিত কয়লার পসরা নিয়ে

এখন বৃক্ষ নিধনও নিষিদ্ধ আর কয়লার ব্যবহারও ভুলে গেছে নাগরিক লোক
এবং আমি জানি না
জালালি আক্রমণ আর খ্রিষ্টের জাল থেকে পালিয়ে পাত্র নামে কোনো আদিবাসী আজও আছে কি না পৃথিবীতে কোথাও

সুবই শিখিয়েছে আমায়- বালাবালি দাহাং মানে ভালো আছো তুমি?
আর দাহাং দাহাং মানে আছি আছি। ভালো আছি

ভালো নেই কথাটি পাত্র ভাষায় কী করে বলতে হয় আমাকে শেখায়নি সে
হয়ত পাত্র ভাষায় ভালো নেই বলে কোনো কথা নেই
তবু তাকে আমার জানাতে ইচ্ছে করে- নট দাহাং- নট দাহাং সুবই; দাহাং নেহি- দাহাং নেহি অথবা না দাহাং- না দাহাং সুবই। আমি ভালো নেই- আমি ভালো নেই- ভালো নেই কেউ
আমাকেও তাড়ায় অন্য নামের নাসিরুদ্দি। আমাকেও জাল পেতে ধরে নিয়ে যায় কেউ
শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে

নো দাহাং- নো দাহাং সুবই। তুই আর আমি দুজনেই এখন একই ফিশারিতে চাষ করা
তেলতেলে মাছ
২০০৪.১১.১৮
মাংসপুতুল ২০০৫

০২

খুনিচক্র

সুবই পাত্র আমার শিশুকালের সহচর। কোনোকিছু দেখলে খামাখাই ঢিল মারা বয়সের বন্ধু সে। বুনো পাখি আর ছোট ছোট প্রাণীদের উপর আমার দাপুটে শৈশব কেটেছে সুবই পাত্রের শিকারি কৌশল আর পাহাড়ি সাহস সঙ্গী করে। তারপর বইয়ে নাক গুঁজে নিজেকে সভ্য বানানোর লোভে পাহাড়ি ক্ষিপ্রতা আর পাহাড়ি মানুষদের আমি ছেড়ে চলে আসি
তার তেইশ বছর পরে সভ্যতা ও মেদমাংসে ভারী হয়ে একদিন আবার সুবইর সন্ধানে তার পাহাড়ি নিবাসে গিয়ে ফেঁদে বসি স্বপ্নময় শিকার প্রসঙ্গ
কিন্তু...

শিকারি গোত্রের সুবই পাত্র কোনো প্রাণীহত্যা করে না আর
মৃত্যুর আগে প্রাণীর মুমূর্ষু মুখ দেখলে তার প্রথম সন্তানের জন্ম সময়ের কথা মনে পড়ে যায়
শিশু আর প্রাণী একই রকম করে শ্বাস নেয় বিপন্ন হলে

প্রথম সন্তান জন্মের পর থেকে সুবই পাত্র তীর ধনুক ফেলে দিয়ে পাহাড়ের ভেতর বুদ্ধের মতো থাকে। প্রকৃতির এই দীক্ষা নিতে তার দরকার পড়েনি কোনো অক্ষর কিংবা ইসকুলের পাঠ। অথচ অক্ষরজীবী আমরা শত শত বছর ধরে পাহাড়ি সুবইদের শিকার করি সভ্যতার ধারালো ছোরায়
কেননা...

আদিবাসী সুবইরা নিশ্চিহ্ন না হলে আমাদের সভ্যতায় আসে না কাঙ্ক্ষিত জৌলুস
২০০৭.১০.২৩
খেরোখাতা ২০০৮

মনজুরাউল এর ছবি

অসাধারণ দু'টি লেখা। ইচ্ছে হয় এরকম ক'টা 'লেখবোম্ব ' নিয়ে মেজবাহ কামালদের পোঁদের কাছে ফাঁটাই। পোঁদ ফাঁটলে বুঝবে 'চেলা কানা বাং বাঠো ' কী?এই মাষ্টোরগুলোর ছেনালি দেখলে বমি আসে।
আজ সময় নেই। পঞ্চগড়,ঠাকুরগাঁও আর দিনাজপুরের কিছু সাঁতালের সাথে আমার ওঠবস ছিল। পরে জানাব সময় করে।

ধন্যবাদ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পোষ্টের সাথে দুর্দান্ত সহমত ।
কিছুটা অফটপিকে অন্য একটা বিষয়ঃ
'আদিবাসী' শব্দটা শুনলেই আমি নিজে কিছুটা আত্নপরিচয়ের সংকটে ভুগি । পাহাড় কিংবা সমতলের কথিত আদিবাসীর বাইরে যে বিপুল জনগোষ্ঠী তারা কি সবাই এই ভূ-খন্ডে অনুপ্রবেশকারী?
আজ যে আমি নিজেকে বাংলাদেশের বাংগালী পরিচয় দেই, আমি যদি আদিবাসী না হই তাহলে কি আমার পূর্বপুরুষ অন্য কোথাও থেকে এইখানে এসে বসত গড়েছিল?
তাহলে এই মাটির সাথে কথিত আদিবাসীদের শেকড়ের সম্পর্ক যতোটা জোরালো, আমার ততোটা নয়?

বোদ্ধা সচলগন একটু আলোচনা করবেন?
-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।