পেটকাটি চাঁদিয়াল > ০৫ >

মনজুরাউল এর ছবি
লিখেছেন মনজুরাউল (তারিখ: শুক্র, ১৫/০৮/২০০৮ - ৭:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হলদেসবুজওরাংওটাং।ঘটত্কচ।ঝাক্কাস।বিন্দাস।খাল্লাস।সুশীল।
কৈবর্ত।চাষাড়েধানুশ।ম্যাড়া।আবাল।গিরগিটি।এ্যামিবা।কলা।নাট -মন্দির।খঁচা।কৈলাশ।সূত্রাপুর।জ্যাক।জম্পেশ।উলোটকম্বল।লোবোটমি।লিউকেটমি।ইন্দিঝাঁটেবিন্দি।দেরিদা।ফুকো।গ্রমসি।আন্দ্রিয়েভা।মইলোবি।ছোট্টফকির।কাট্টুলে।হাপিশ।কেলো।ভুঁষি।গাপ।চৌরাসিয়ার বড়শিখোঁচা।ঢ্যামনাকুলের বাপরেবাপ।বুয়েট শমশের। জাকির নায়েক।খাম্বাজরাগে বৃষহোল। বাঁশেরখাটা।চোলাই যোগে।বল হরি-হরিবোল।

আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন শব্দগুলো অর্থহীন মনে হতে পারে।কিছু করার নেই।বঙ্গসমাজে যা কিছু নিয়ম তা ধরে- ধরেই এতকাল চলছিল। এখন আর চলছেনা।সহজিয়া কাদামাটির ভ্যাবলাপনা বাঙালদিগের বোধে এবং বেধিতে এরূপ প্রত্যয় দৃঢ়তর ছিল যে, ধর্ষিতা হতে পারে কেবল প্রাপ্তবয়সী।আসামি হতে পারে ১৮। ৬এর কিশোরী স্পার্মটেস্টের টেবিলে।৮এর আসামি কাঠগড়ায়।৫২’র ধর্মবতার কুঞ্চিত ভ্রু।নৈব নৈব চ' পুলিশকুল।না সংশোধিত না লজ্জিত আমলাকুল।ঘোষডেয়ারির দৈই মেখে সব দৈবাত্ ক্রম ভুলোমন।গরান খাটা-বাঁশের খাটা ।ঈশ্বর পোড়ে-হরিবোল।

হলদেসবুজ ওরাংওটাং: চুমকির অজানা এক রোগ হয়েছে মালুম। কী রোগ? জানেন কেউ?নাও যদি হয়,হতে কতক্ষণ?
ঘটত্ কচ : বাসের এই হেল্পার মায়ের ধর্ষককে ফুটিয়ে এখন নাজিমুদ্দিনের বড়দালানে।কেউ কি দেখেছেন তাকে ?
ঝাক্কাস :হাসমির রিমোটে মল্লিকা শেরওয়াত।শেষ ঝাঁকিতেই হাসমি-ঝাক্কাস।
বিন্দাস : শব্দটা শোনার সাথে সাথে মনে হয়-এইরে,কেলো হয়ে গেল বোধহয়
খাল্লাস :এ আর এমন কি?রসিয়ে রসিয়ে যাকিছু উত্তেজনার তুঙ্গে তোলা হয় তাতো সেই শেষে এসে খাল্লাসের জন্যই!খাল্লাসেই মুক্তি। নয়ত টন টন করবেই।
সুশীল-কৈবর্ত :ছেনো-ঘনাদের প্রোফাইলে গজাল মেরে দেওয়ার এই কারিগররা সহসা চুমকিপ্রেমে মজবেন সে বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ আছে কি?
চাষাড়েধানুশ _ঘনা।ম্যাড়া_নাটাকুদ্দুস_আবালপাব্লিক। গিরগিটি_আমরা।
এ্যামিবা_আমাদের আত্মারা।কলা_কাঁচা,আধাকাঁচা দু-ই হতে পারে।হতে পারে ফাজিল কলাও।ঘনাদে_ কাছে_কেলোনো কলা।নাটমন্দির_কারোকারোকাছে পবিত্র নটীবিনোদিনী কারবারের সঙ্গমস্থল অথবা, অথবা-ই। খঁচা_একেবারেই 'খচে' নেই আমরা।কৈলাশে কেলেংকারীতেও নেই আমরা।যা আছে সব আমদের এখানে।সভ্য-ভব্যরা কাপড়তুলে দেখায়না।সূত্রাপুর_বড় একটা পালঙ্ক বেরুনোর জন্য ঝাঁপ ভাঙ্গা হলো।পরে ময়মুনের লাশ বেরুলো হাতে হাতে 'অজাতে 'অপাতে'।জ্যাক_দেওয়া এবং নেওয়া।মাঝখানে চার্জ বা রিচার্জ। ইনসার্টই এ যুগের মূল মন্ত্র।ইনসার্ট!ইনসার্ট! উলোটকম্বল_আমাদে_ কি দায় পড়েছে,হাসমির গর্মি কমাতে গেলাই?আমরা গর্মির খাল্লাস দেখে তৃপ্তি পেতে চাই।বিনে পয়সায় বায়োস্কোপ।লোবোটমি_এ বিষয়ে অচিরেই সাম্যক জ্ঞানলাভ হবে আমাদের।ইন্দিঝাঁটে বিন্দি_আছে,কিন্তু দর্শন হচ্ছে কই?
দেরিদা-ফুকো-গ্রামসি_পোস্টমর্ডানাইজেশনে পেল্লাই কারবার।কোথা থেকে শুরু,কোথায় শেষ?ভেবে হই জারবার।আন্দ্রিয়েভা_হায় সোভিয়েত ইউনিয়ন!

মইলোবি,ছোট্টফকির,কাট্টুলে_এই এলো বলে ঘনা কেসে। না এস উপায়ও নেই।
হাপিশ-কেলোঃ কেলো করার আগে হাপিস হচ্ছে চুমকি,ছেনোর মা,আরো অনেকে। খোঁজ রাখে কে? ভুঁষিমালের এই জজবায় সলিড কোথায়? টং করে বাজে যে মাল সে কি টং? গাপ হয়ে কত সুর কত গান মনে পড়ে গেল---বল ভাল আছ তো?বাঁশিতে কি সুর তোলে গোব্দামুখ,ফোলা ঠোঁট? হারানো সন্তান খোঁজে কি ছেনোর মা? কেথায়?

শমশের-নায়েকরা বলে দিল-গ্রাভিটি জোনে যাওয়া যায় ভাই, যাওয়া যায়ই। কে শোনে কার কথা? বোরাক দুল দুল আর্ধেক ঘোড়া-আর্ধেক মানুষ।ডারউইন শালা কি মরেছে ?ঘনাদের বোল লাশ নেওয়া বোল,বল হরি হরি বোল। মুসলিম পাড়ায় ধুন্ধুমার বেগে ঘৃণা উপছে পড়ে বৃষ জবেহ করে বৃষ হোল। তবুও ঘনা কুঁই কুঁই করে,ঘনাক্লাসেরা হৈ হৈ করে _বল হরি হরি বোল.......

শীর্ণ প্রাণহীন দেহটা সটান পড়ে ছিল।আগেও ওভাবে পড়ে থাকত।ফারাক,আগে কালে-ভদ্রে নড়ত।এখন নড়ে না।এর বেশি কোন বোধ ঘনার খেলে না।চাটাই বেড়ার চারধার জুড়ে সস্তা দেব-দেবী।কোজাগরি লখ্সমি,বজরংবালি,বিশ্বকর্মা আর রাম-সীতা।অনড়।হাসি হাসি মুখ। জগতের কোন বিটকেল পর্শ করে না।করেনি কোন কালে। কে মানে?বামুনের বাচ্চা হলে ঘনাকে আজই মাথামুড়োতে হতো।মুঠোবাঁধা কাঠি হাতে কাউকে কাঠি করার বদলে একবস্ত্রে ৪০দিন।আতপ চালের মাঢ়িভাতে নুন মেখে মুখে যেত। তাও জলে উব্দো করে সব ফেলে যেটুকু লেগে থাকে তাই।ঘনা হরিজন।অজাত।তাই রক্ষে !

দুপুর নাগাদ পাড়ার মালখোরেরা গলাঅব্দি ধেনো টেনে টলতে টলতে চৌবাহন কাঁধে তুলে নিল।ঘনা সজাগ। একফোঁটা মাল ছোঁয়নি।এই প্রথম ঘনা 'হরিবোলে' মাল ছুঁলো না।টিনের দরজায় সেই পাথরের মুখ। একটু কি ব্যাকুল? ঘনা বোঝেনা।ছেনোর সময়ও বোঝেনি। ছেনোকে ভাসানোর পর জলে ঘনা নিজেকে দেখেছিল। ভাঙা ভাঙা ছায়া। কাঁপা কাঁপা ছবি।ঘনা ঘনাই ছিল।

গরান কাঠের জ্বলন্ত টুকরোয় বিড়ি ঠেকিয়ে মুখটা শুয়োরের মত সুচোলো করলো একটা লোক। ঘনা আগে দেখেনি কখনো। কাট্টুলে। ও সেরকমই বলল।'ভেইঙ্গে পড়িসনি য্যান।অনেক কাজ রইয়েচে।তোকে ঠিকই চিনিচি,ঘনা। ছেনোর সাগরিদ ? ভয় পাসনি।আমরা এইসে পড়িচি।'ঘনা আবলুস কাঠের তক্তার মত নিরেট টাশকিমারা। কে এরা?

গবদা,হাবু,ভেড়ু,মন্তাজ তখন মালের ঝাঁকিতে ঝেঁকে চলেছে---'চাল উড় যা রে পানছি.....আব ইয়ে দেছ হুয়া বেগানা.....'


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

গণিতরাসায়নপদার্থবিদ্যাজীববিদ্যাইতিহাসপুরাণসাহিত্যরাজনীতিধর্মঅর্থনীতিআইনএকখানেকরেযেপিজাটাবানানোহয়েছেতামনেহচ্ছেখুবভালোকিন্তুকীযেভালোতাঘুমভাঙাআয়েশিমাথায়ধরারউপায়নাই

মনজুরাউল এর ছবি

কিন্তুকীযেভালোতাঘুমভাঙাআয়েশিমাথায়ধরারউপায়নাই

কিসে যে কী ? তা আমি কি ছাই জানি ?তবে পিত্ জা সকলে পছন্দ করে না এটা জানি।

সাধুবাদ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

দময়ন্তী এর ছবি

বা:! রবিবারের দুপুরে বালিশে ঠেসান দিয়ে পড়ে ফেলার মত লেখা এটা নয় ৷ আর সেইজন্যই ভাল লাগল ৷ চলুক চলুক ৷

আমার একটা প্রশ্ন আছে ৷ এই সিরিজটা "এন্টিগল্প' কেন? মানে এতদিন পর্যন্ত যতগুলো পড়েছি, সবকটাই গল্পের যে প্রচলিত ন্যারেটিভগুলো আছে, তাই মেনে চলেছে ৷ এইটা খানিক আলাদা ৷ তাহলে কি এইটে থেকেই "এন্টি' হয়ে উঠবে গল্পগুলো?

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মনজুরাউল এর ছবি

সম্ভবত প্রথম দিকে কোন একটা মন্তব্যে বলেছিলাম ; যে অর্থে 'এন্টি গল্প'লিখতে চেয়েছিলাম, স্থান-কাল-পাত্র নিরিখে নিয়ে সেটা পুরোপুরি হয়ে উঠছে না। অধিকাংশক্ষেত্রেই প্রচলিত ন্যারেটিভ মেনে চলতে হচ্ছে। আমি যে 'এন্টি ফর্মেট 'টা চিন্তা করে এগোতে চেয়েছিলাম সেটা নিয়ে যে বেশি দূর যাওয়া যাবে না বেশ বুঝতে পারছি। আমার নিজের কাছেই মনে হচ্ছে 'গেল ঝুলে '! "পেটকাটি চাঁদিয়াল " আরো কলেবরে এগোতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। যদিও আমি 'পাতেওঠা-জাতেওঠা 'র পরোয়া করি না,তবুও একধরণের গ্রহণযোগ্যতার বিষয় থেকেই যায়। যা-তা লিখে তো আর মেলে ধরা যায় না !

শুভকামনা।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

ঝরাপাতা এর ছবি

তার মানে এন্টিগল্পের জন্য পাঠকদেরও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে...


যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।