এন্টিগল্প > পেটকাটি চাঁদিয়াল > ০২

মনজুরাউল এর ছবি
লিখেছেন মনজুরাউল (তারিখ: সোম, ১১/০৮/২০০৮ - ৩:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

.........জীবনে এই প্রথম কাঁদল ঘনা। একটা রাতকানা পাখি ল্যাম্পপোষ্টের নিচে পোকা ধরতে চাইল-পারল না।

[এর পর যদি আর একটা কাহিনী দাঁড়িয়ে যায় তো যেতেই পারে।
তাতে আরবান পিপলদের প্রাত্যহিক-সান্ধ্যকালিন-রাত্রীকালিন লাইফসার্কেলে কোন ছন্দপতন ঘটে না।টাকা।মন।টাকা।শরীর। টাকা।ম্যানার।টাকা।আর মন।মন আর টাকা।নিশানপেট্রোল। প্রাডো।নোয়াহ।বেঞ্জ।ডানলোপিলো।ডটেডকনডম।সিল্কেরচাদর।শ্যাম্পেন।ফোমশাওয়ার।মাশরুম।চিকেন।গ্র্যাভি।প্যান্টালুন।রেবক।গুচি।ভিক্টোরিয়াসিক্রেট।ওল্ডস্মাগলার।এপিটাইজার।জোলিয়াম০.৫মিলিগ্রাম।ডাবলডোজ।ইটস অ্য হেভেনলি ড্রীম আফটার অ্য গ্লোরিয়াস ডে এন্ড]

পারার কথাও নয়। পাখিরা রাতকানাই হয়।পাখিরা রাতে ওড়ে না।বাদুড়,মশা এই জাতীয়রা নিশাচর। আর নিশাচর পুলিশ-বেশ্যা-দালাল-পাতাখোর।সে রাতে পুলিশ আড়াই ডজন ঘনা কিসিমের মাল আর বেশ্যা পাকড়েছিল।ইনফো ছিল_একজোড়া বেশ্যা আর একজোড়া পকেটমার জাসুসি করে একটা ব্রা.সু .চালান গাপ করেছে। ইনফো এক্জাম্পটেড হয় না।পুলিশ এক্জামে নয়,কর্মে বিশ্বাসী।৫৪।হাতকড়া।২৪শিক।রুলার।গুহ্যদ্বার।নী-ক্যাপ,অত:পর নখের ভেতর ছুঁচ।কথা বেরেবে না মানে ? হড়হড়িয়ে বেরুবে।

কিন্তু ঘনার মুখ থেকে কথা বেরুচ্ছিল না।কোহিনূর বগম চতুর্থ বার প্রশ্নটা করলেন_তুমি চিনতেই পাছ না?২৪ ঘন্টাও হয়নি তুমি আমার মেয়ের প্রাণ বাঁচালে !ওই সময় এ্যাম্পুল টা না পেলে......
_কেনো পট্টি মারছেন?বোললাম তো আমি ঘনা স্লা কুনো বাঁচাবাঁচির দরমিয়ায় নেই...
_উহু, আমি ঠিক চিনেছি,তুমি ছিনতাইকারীর কাছ থেকে ব্যাগ কেড়ে হাসপাতালে গিয়ে...
_দেখেন একদোম বাতেলা বোকবেন না,ঘনা পোকেটমার। জানবেন পোকেটমারের ইনসাফ নাই,লাজ নাই,আর ওই কি ছব বোলে...মানবোতাও নাই..খামখা এছে আমার লিসা জোল করে দিল !এ জোন্য স্লা মাগি.....
_ঘোনা !ধমক দেওয়া কন্ঠটি ঘনার মায়ের। _ভোদ্রবাড়ির মেয়ের ছাথে ঠিক কোরে কোথা বোল !মু মে লাত হোবে শুয়ার কা বাচ্চা!
চাকতি ঘুরছে....কিশোর কুমার গেয়ে চলেছেন...ইয়ে পাগ ঘুংরু...মীরা নাচি থি..অর হাম নাচে বিন ঘুংরু..........................

কোহিনূর বেগম নিশ্চিত জানেন।ঘনা। ঘনাই তার ব্যাগ ছিনিয়েছিল,ঘনাই খানিক বাদে হাসপাতালে হাজির হয়েছিল।
কেন?সব 'কেন'র উত্তর তারাই খুঁজতে চায়,যাদের স্টকে 'উত্তর'কম।কোহিনূরের তো তেমন নয়!তিনি তো সব উত্তরই পেয়ে গেছেন!কেন তার স্বামী ২০ বছরের একটা ডবকা মেয়ের সাথে পার্কে বসে বাদাম ফোটায়,কেন সেই মেয়েটা আবেশে ঢলে ঢলে পড়ে, সবই জানেন।আরো জানেন খোঁচা খোঁচা দাড়ির প্রেমপাগল বাউন্ডুলের হাত ধরে সে যেদিন ঘর ছেড়েছিল সেদিন থেকেই বাপ-ভাইয়ের বাড়ি তার জন্য পাঁতারা হোটেল হয়ে গিয়েছিল,অগম্য-সুদুরপরাহত।

ওরা চলে যেতেই ঘনার নেশাটেশা কেটে যায়। ঘনা নেশা করে । ঘনার কখনো নেশা হয়না।কাল রাতের পর ঘনার মন ভাল নেই।ওর যেদিন মন খারাপ থাকে সেদিন চুমকির ঘরে যায়।জানে,ওখানে যেয়ে আরো মন খারাপই হয়, তবুও যায়।চুমকিও যানে শুধু মন খারাপ হলেই ঘনা আসে,এমনিতে ঘনা বাবুর সেকি ঠাঁট।
নেংটিপরামাগী ছাপঅলা গেঞ্জি চড়িয়ে ঘনা চুমকির ঘরে হাজির।
_এটা কোন আসার সময়?
_কেনো প্রোবলেম কি?
_লাও ! বাবু আবার ইংরেজি মারাচ্ছে! আমি তো এখন কাজে যাব
_যা না,কে আটকায়?ফিন দুটো কোথা তো বলবি? নাকি সেও হোবে না?আমার মোন ভাল নেই চুমকি.....
_এই বাল রোজ রোজ বলবি নাতো,মন মারাতে হলেই আমার কাছে না?দিন ভর তো শুনি চোরাই ভ্যানিটি ব্যাগের টিকানা নিয়ে ফর্সা মাগীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরিস?তখন চুমকির মুখ মনে পড়ে না?
_চুমকি তুই আছলে আমাকে পোছনদো করিছনা।এ আমি বুঝি..
তা কোরলে তুই হোটেলে কাস্টোমারের ঘোরে কেনো যাস...........
হঠাত্ চুমকি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে,আঁচলটা ঘুরিয়ে অন্যপাশে গুজে ঘুরে দাঁড়ায়। তারপর সোজা ঘনার মুখের সামনে মুখ নিয়ে হিস হিস করে বলে.........তুই জানিস না ঘনা?কেন যাই জানিস না?আমার বাপ তোর মায়ের ঠেকে গড়াগড়ি যায়,আমার মা আমাকে জন্মাতে গিয়ে স্বগ্গে যায়,আমার বোন রমনাপার্কের পাশ থেকে এক লোকের সঙ্গে রিক্সায় উঠে যায়,আমার ভাই ট্রাকচাপায় মরে যায়.......
_থাম থাম! সোব জানি..
_কেন কথা তুলিস তাহলে?ঘা খোঁচা দিস কেন?মুরোদ হয়না ঘরে তোলার! লজ্জা করে না তোর?
ঘনা মাথা নিচু করে ফিরে যায়...বিড় বিড় করে কি বলে বোঝা যায়না। বড় রাস্তায় পড়ে যখন একটা নুড়ি পাথরে লাত্থি দেয়,তখন বোঝা যায়..ল্যাওড়া !
হিসেব রাখলে বোঝা যেত এই নাটকীয় পর্বটুকু অন্তত বিরাশী বার রিহার্সেল হয়েছে।

বলধাগার্ডেনের দেওয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে ঘনা অনেকক্ষণ ধরে মোতে।একই সময় আরো চার জন মুতে দিয়েছিল।থানা কাস্টডিতে
,কাল যে দুইজোড়া মাগী-মরদ ধরা হয়েছিল আজ তাদের ওষুধদেয়া হচ্ছে।যে মেয়ে দুটোকে ধরা হয়েছিল তার একটাকে দেখে খোরশেদ সেপাই শিস দিয়ে বলে....এত যে দিয়ে বেড়াইশ কই শুয়ে তো পড়ে নাই! কি দিয়া বানাইছস...হালার য্যান...পুরা হাতের মইদ্যে আইব....... সার....এই 'সারটা'মোবাইল ফোনের বোতাম টেপাটেপি করছে,আপাতত অন্য কিছু টেপার তেমন একটা আগ্রহ নাই,মোবাইল টিপে যাকে পাওয়া এবং টেপার ধান্ধা কিছুতেই তাকে পাচ্ছে না।

অন্যমনষ্ক।গভীর চিন্তিত ঘনা বাড়িমুখো হাঁটে।আজ আর কাজেই যাবে না।ঘনা মনে করে দেখল আগেও এরকম হয়েছে,কত বার ? তাও অনেক বার তো হবেই.....ঘরে ঢুকেই ঘনা চাটাইবিছানায় শুতে যাবে,...এই হারামি,দেখিস থালা-বাটির উপর বসিস না।ঝট করে ফিরে তাকায় ঘনা।দরজার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুমকি!পাথরের মত মুখ।ঢোকগেলে ঘনা।......নে আর ন্যাকামি মারাইশ না,খা।থালাবাটি নেব,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।বাধ্য ছেলের মত খেতে বসে ঘনা। মুখতুলে তাকায়,না,সেই পাথরমুখ।বাসি মাংশ আর উচ্ছিষ্ট বিরিয়ানি মুখে তোলে আবার তাকায়। পাথরমুখ।ঘনা জানে খাওয়া হয়ে গেলে চুমকি একটাও কথা না বলে থালাবাটি নিয়ে চলে যাবে,কারণ এই দৃশ্যটাও বহুপুরোনো!...
কি মনে করে তুলির কথা মনে আসে হঠাত্ ...........
_চুমকি তুলিকে দেখতে যাবি আমার ছাথে?
_কোন তুলি?
_কেনো কাল রাতে তোকে বোললামনা....চুমকি মিষ্টিকরে হাসে....
এটা নতুন।


মন্তব্য

অবাঞ্ছিত এর ছবি

কঠিননননন...

I think , therefore i am - Descartes

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

কীর্তিনাশা এর ছবি

আপনার গল্প কেবল মুগ্ধ হয়ে পড়েই যাচ্ছি, পড়েই যাচ্ছি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সুমন সুপান্থ এর ছবি

গল্প বটে মনজুরাউল ভাই !
কিন্তু আপনার প্রায় সব গল্প পড়েই মনে প্রশ্ন জন্মে , ডাল-পালা কি আরেকটু ছড়াতে পারতো না ? কেন জানি,ভাবি, পোস্টানোর কালে পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতির আশংকা আপনার মনে বাসা বাধঁতে শুরু করে । পুতুপুতু গল্প যারা লিখি, তারা না হয় তাই ভাবলাম ; ভেবে, টেনেটুনে,সাইজ করে পাতে তুলে দেবার ধান্দা করলাম । কিন্তু কমরেড , আপনার গল্প সেসবের তোয়াক্কা করে বলে তো মনে হয় না ! প্রশ্ন এখন, গল্প না করলেও,গল্পকার কি করেন ?
হুম, মুগ্ধতা বেড়েই চলেছে । বেড়েই চলুক ।

---------------------------------------------------------

আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

নিরিবিলি এর ছবি

অনেক ভাল লাগলো। আরও লিখতে থাকুন। হাসি

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

দয়া করে উপন্যাস করুন। অসম্ভব রকমের অসাধারণ।
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

ঝরাপাতা এর ছবি

হুমমম... শুধুই কষ্টের কথা বলেন.... তাও শুনতে ভালো লাগে... আমরা শালাও কষ্টবিলাসী.... দুই সেকেন্ডের জন্য.... তারপর বেলী ড্যান্স ইউথ সোয়ান লেক....


যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

রোহন পাত্র এর ছবি

ছেলেটা ছোট্ট, বয়স হবে বছর নয়,
এখন তার জীবনের সব আশাগুলি ভ্রুন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।