স্থানীয় উন্নয়ন ও এম.পি

শিবলী এর ছবি
লিখেছেন শিবলী [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০১/০২/২০০৯ - ৭:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্থানীয় উন্নয়ন ও এম.পি

দেশের, বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের প্রায় কোন লোকই জানেন না যে, স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন ও উন্নয়ন পরিচালনায় সংসদ সদস্যগণদের দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী প্রায় কোন ভূমিকাই নেই। যার ফলে আমার এলাকা কুয়াকাটায় আওয়ামী পন্থীদের মধ্যে এক হায় হায় শুরু হয়ে গেছে। কি হবে? কি হবে? দেশের সরকার আওয়ামী লীগের! এলাকার এম পি আওয়ামী লীগের!! আর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলো কিনা শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে?

আমি তাদের বুঝাতে চেষ্টা করি, এলাকার উন্নয়নের সকল চাবিকাঠি চেয়ারম্যান-এর নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদের হাতে। স্থানীয় প্রশাসনে উপজেলার সর্বোচ্চ সরকারী কর্মকর্তা ইউ.এন.ও থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন সরকারী কর্মচারী ওয়ার্ড চৌকিদার পর্যন্ত সকলকে পরিচালনার দায়িত্ব উপজেলা পরিষদের হাতে। পাশাপাশি এলাকার স্থায়ীয় উন্নয়ন, স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে উদ্দ্যোগ গ্রহণ ও পরিচালনা ও সকল দায়িত্ব এই একই উপজেলা পরিষদের হাতে।
বলেন কি? তাইলে এম পি সাহেব করবে কি?
আমি বলি উনি মূলতঃ সংসদে বসে দেশের আইন প্রণয়নের ভূমিকা রাখবেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে সরকার গঠিত হয়েছে সে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় তদারকির জন্য গঠিত সংসদীয় সাব- কমিটিতে কাজ করবেন।
এলাকার উন্নয়নে কোন ভূমিকা?
নেই! মোটেই নেই। তবে সংসদে বসে তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় কোন সমস্যা বা উন্নয়ন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণে নোটিস বা বক্তব্য দেবেন।
ও-ও! তাহলে এত কাল যে এলাকার উন্নয়নের জন্য অমুক লোককে এম.পি বানাবো এই সব শ্লোগান দিলাম?
ভূয়া! পুরো ভূয়া!!

আমার কথা শুনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ উভয়ের সমর্থকরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, এখন কি নিয়ে ঝগড়া, মারামারি করবে!

উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও বিএনপির আরেক নেতার মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা হয়। স্মরণকালের তীব্র প্রতিদ্বন্দিতায় বিএনপি প্রার্থী; এক বিরল ভাল মানুষ বলে পরিচিত লোকটি তার আওয়ামী প্রতিদ্বন্দীকে মাত্র ২১ ভোটে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন।
শুনে আওয়ামী প্রার্থী জন্য কষ্ট হলেও শেষ মেশ আমি খুশি। বিএনপির লোকটি নাকি ভাল। তার কাজ যদি ভাল হয়, তাহলে বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে কিছু লোক অন্তত শুধরাবে এই আশা করি। ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় সরকারের অন্ধ সমর্থক হিসেবে আমি মনে করি দল মত নির্বিশেষে সবাই মিলে বাই-পার্টিজান স্টাইলে স্থানীয় উন্নয়ন ও প্রশাসন পরিচালনা করা দরকার।

স্বপ্নে দেখি সোনার কলাপাড়া উপজেলা..... আমার নতুন আবাসিক স্থলে ইউ.এন.ও, এসি ল্যান্ড, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে মায় চৌকিদার পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রের সবাই স্থানীয় লোকদের ভয়ে থর হরি কম্প। তাদের নিজ নিজ কাজে নিয়োজিত, জনগণের সেবায় উসর্গকৃত। কারণ জনগণই সকল ক্ষমতার উতস।


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনার বক্তব্যটা থিওরিটিক্যালি সঠিক হলেও প্রাকটিক্যালি কিন্তু লোকজনের কথাটাই ঠিক

এখানে মুল সমস্যা আছে তিনটা। একটা সংবিধানে। একটা দলে আর একটা ফিল্ডে

০১

সংবিধানের আর্টিক্যাল ৭০ (ফ্লোর ক্রসিং) এর কারণে মাথা গুনতির সময় হাজির জনাব বলা ছাড়া এমপিদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই আইন তৈরির ক্ষেত্রে

ওই আর্টিক্যালের কারণে কেউ নিজের দলের বিপক্ষে ভোট দিলে কিংবা ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকলে তার সদস্যপদ আপনা আপনি বাতিল হয়ে যায়

ফলে দলীয় সিদ্ধান্তে নেয়া বিলের পক্ষে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তারা সকলের সাথে শুধু ভোট দিতে পারেন কিংবা বিরত থাকতে পারেন

অথবা উল্টো করে বললে বলতে হয় ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও তাদেরকে দলের সিদ্ধান্তে হ্যাঁ বলতে হয়

০২

বাংলাদেশে আরেকটা বড়ো সমস্যা হলো যিনি দলের প্রধান তিনিই সাধারণত প্রধানমন্ত্রী হন
আর সংসদে দলের পক্ষ থেকে বিলগুলো উত্থাপন করা হয় দলীয় (কিংবা সংসদ দলীয়) প্রধানের মতামত সাপেক্ষেই

যদিও ভোটাভুটির আগ পর্যন্ত যে কোনো সাংসদ তার নিজের দলের বিলেরও সমালোচনা করার অধিকার রাখেন (এতে ফ্লোর ক্রসিং কার্যকর হয় না)

কিন্তু সংসদের দলের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আলোচনা করা মানে হলো দলের ভেতরে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা

তাই কেউই ওই পথে পা মাড়ান না। দলের সাথে সাথে - ইয়েস আর নো করেন

০৩

এমপি মন্ত্রীরা দলীয কর্মী এবং একেকজন একেক এলাকার নিয়ন্ত্রা
স্থানীয় পর্যায় থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে পুরো সরকারেরই বিপদে পড়ে যাবার আশংকা থাকে

দ্বিতীয়ত কর্মীদের অনেক আব্দার মিটানোর জন্যও স্থানীয় এলাকায় এমপিদের কর্তৃত্ব দেবার দরকার পড়ে

তাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উপজেলা পরিষদে এমপিদেরকে বানানো হয় উপদেষ্টা (ইউপিতেও)

০৪

লোকাল গভমেন্টে সংসদের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য এবারের আগে পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশন থেকেও সরিয়ে রাখা হয়েছিল
ওটা ছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে

০৫

তদারকি সরকারের সময় উপজেলা ইলেকশন যেমন নির্বাচন কমিশনে ফিরিয়ে নেয়া হয় তেমনি উপজেলা পরিষদ থেকে এমপিদের উপদেষ্টা পদও বাতিল করে দেয়া হয়

কিন্তু যারা পাশ করেছেন তারা তো মেম্বার ইলেকশনের মতো- ঘর দিয়াম- রাস্তা দিয়াম- টিপকল দিয়াম বলেই ভোট টেনেছেন

এখন যদি সংবিধান অনুযায়ী চলতে হয় আর আইন বানাতে হয় তাহলে তো আম ছালা দুটোই যাবে

সেটা যাতে না হয় সেজন্য এই সরকার আবার আরেক কাঠি সরেস হয়ে উঠেছে
উপজেলায় এমপিদেরকে শুধু উপদেষ্টাই বানাচ্ছে না

বরং উপজেলা পরিষদে এমপিদের জন্য অফিসও বানানোর প্লান করছে

০৬

এইবার একটু হিসাব করে দেখেন তো
চার আর দুইয়ে ছয়
নাকি ছয় আর দুইয়ে চার

শিবলী এর ছবি

চমতকার বিশ্লেষণ মূলক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সব কথা মানি আপনার, শুধু শেষে এইটুকু যোগ করতে চাই... আম-ছালা দুটোই যাওয়ার ভয়ে এম.পি রা সংবিধান অনুযায়ী চলতে চাইবেন না বটে, তবে সংবিধান যদি বাধ্য করে, জনগণ ও তা বুঝবে, এবং ধীরে ধীরে নাক গলানোর কালচার বন্ধ হয়ে যাবে। দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

এনকিদু এর ছবি

আপনি যে এলাকার লোজনকে বুঝানর চেষ্টা করেছেন এম,পি, আর উপজেলা পরিষদ সম্পর্কে এটা খুব ভাল লেগেছে । আমার মনে হয় যারা এই সব ব্যাপার কিছুটা হলেও বুঝি তাদেরই উচিত যারা বুঝেনা, সুযোগ পেলে বুঝিয়ে বলা । সচেতনতা রাতারাতি বাড়েনা । কিন্তু লেগে থাকলে ঠিকই ধীরে ধীরে অনেক লোক সচেতন হয়ে উঠবে ।

স্বপ্নে দেখি সোনার কলাপাড়া উপজেলা..... আমার নতুন আবাসিক স্থলে ইউ.এন.ও, এসি ল্যান্ড, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে মায় চৌকিদার পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রের সবাই স্থানীয় লোকদের ভয়ে থর হরি কম্প। তাদের নিজ নিজ কাজে নিয়োজিত, জনগণের সেবায় উসর্গকৃত। কারণ জনগণই সকল ক্ষমতার উতস।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।