সহজিয়া দর্শন ২: নিম তিতা, নিসিন্দা তিতা, তিতা সইত্য কথা (আলী আহসান মুজাহিদকে ঘৃনা)

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/১০/২০০৭ - ১০:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
আইডিয়াল স্কুলের বায়োলজীর শিক্ষক ছিলেন শফিক স্যার; অসম্ভব নীতিবান, ভীষন রকমের মুডি আর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন লোক। ছাত্ররা যমের মতো ভয় করত তাঁকে, স্যার শুধু পড়া ধরার জন্য নাম ধরে ডাকলেই অনেকের পড়া হজম হয়ে যেত, মুখ দিয়ে আর কিছু বেরুতনা। অথচ এমন একজন শিক্ষককেই সম্ভবত আইডিয়াল স্কুলের ছাত্ররা সবচেয়ে বেশী মনে রাখবে, সবাই না হলেও অন্তত আমি যে তাই করব সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কারণ, স্যার আমাকে শিখিয়েছিলেন সত্য বলার সৌন্দর্য।
আহামরি কিছুনা, খুব সাধারণ ঘটনা। আবার এটাও ঠিকনা যে স্যারের কাছ থেকে সত্যবলার সৌন্দর্যটা বোঝার পর আমি আর মিথ্যে বলিনি। তবে তাও, সেই স্মৃতিটুকু রোমন্থন করা আজ খুব জরুরী বলে মনে হলো। দশম শ্রেনীর ঘটনা। শফিক স্যার তখন আমাদের বায়োলজী পড়াতেন, প্রতিদিন ক্লাসে এসে ছবি আঁকাতেন, আর এটা ওটা পড়া ধরতেন। তখন নৈর্ব্যক্তিকের যুগ ছিল, ৫০০ প্রশ্নের ব্যাংক ছিলনা, আমাদেরকে বইয়ের একেকটা চ্যাপটারের যেন টপ-টু-বটম মুখস্থ রাখতে হতো। এমনি একদিন, স্যার উদ্ভিদের শ্বসনের সমীকরণ নিয়ে কি যেন একটা প্রশ্ন ধরলেন, আমার মাথায় বাজ পড়ল! কারণ, (ক), (খ), (গ), (ঘ) সবগুলোই খুব কাছাকাছি সংখ্যা শোনাল, আমি নিশ্চিত না কোনটা ঠিক। এখন পড়া না পারলে ডায়েরীতে শূন্য ঢুকবে, ডায়েরীর নাম্বার রেজাল্টের সাথে যোগ হয়, শূন্য ঢুকলে এভারেজ অনেক কমে যায় -- এসব হ্যানত্যান আর কি। আমি ভীষন উদ্বিগ্ন। এমন সময় পেছন থেকে এক বন্ধু বলে দিল 'খ'। আমি সাথেসাথে বলে ফেললাম, 'খ'। কিন্তু কিভাবে যেন স্যার আঁচ করতে পারলেন কেউ হয়ত বলে দিয়েছে, আবার একইভাবে তিনি পুরো নিশ্চিতওনা। স্যার আমার পেছনের বেঞ্চের কাছে এসে সেখানে বসা তিনজনের ওপর কড়া নজর রেখে বললেন, 'তোরা কেউ কি উত্তরটা বলে দিয়েছিস?' প্রশ্ন করতে করতে স্যার তিনজনের চেহারা চেক করলেন, সম্ভবতঃ ধরতে পারলেননা। এরপর স্যার আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুই ই বল। পেছন থেকে কেউ কি বলে দিয়েছে?'
আমার কি মনে হলো কে জানে! বললাম, 'জ্বী স্যার। তবে কে বলে দিয়েছে সেটা বলবনা।' বলেই আমি মনে মনে চুড়ান্ত রকমের একটা ধোলাই খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু দেখলাম স্যার আমার ডায়রী নিয়ে একটা '৫' বসিয়ে দিলেন, নিচে ছোট ছোট অক্ষরে লিখলেন 'সত্য বলার জন্য'।

আমার কাছে মনে হলো সত্য প্রচন্ড সুন্দর। শফিক স্যার মারা গেছেন আজ সম্ভবতঃ আট/নয় বৎসর। স্যারের ভাগ্য ভাল স্যারকে এজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মিথ্যেটা শুনে যেতে হয়নি।

২.
এই ঘটনাটা নিয়ে একটা গল্প লিখে পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম, সম্ভবতঃ লেখার মান খারাপ ছিল, তাই ছাপা হয়নি। কারণ গল্পের কাহিনীটা মোটেও খারাপ ছিলনা। পরে সময় পেলে গল্পটা লিখব ব্লগে, শিরোনাম 'ওয়াগ্গাছড়ার গল্প'। এক যুগ আগে ওয়াগ্গাছড়ার এক পাহাড় বেয়ে উঠছিলাম আমরা তিনবন্ধু, এক সুন্দর আলো ঝলমলে সকালে। আমি বেশ মোটাসোটা ছিলাম তখনই, অর্ধেকটা পাহাড় উঠতেই ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। পাহাড়ের মাঝমাঝি অবস্থিত পুলিশের একটা ছাউনি টাইপের জায়গায় আশ্রয় নিলাম বিশ্রামের জন্য। সেখানে এক বৃদ্ধের সাথে দেখা, যিনি পুলিশ বাহিনীতে লম্বাসময় ধরে চাকুরীরত। তখন সংসার ছেড়ে স্বেচ্ছায় রাঙামাটিতে বদলি নিয়ে ওয়াগ্গাছড়ার ঐ পাহাড়ে পড়েছিলেন, সংসারের সব কষ্ট যন্ত্রণা থেকে পালিয়ে বেড়াতে। তার বড় ছেলেটা ছাত্ররাজনীতি করে তখন লুটপাটের দায়ে জেলে ছিল, ছোট ছেলেটা মাদকাসক্ত। বড় মেয়ে একসন্তান নিয়ে বাবার বাড়ীতে তখন এক বৎসর, স্বামী মারধোর করে, মেয়ে ফিরে যেতে চায়না। আর বাকী দুসন্তানের খবরও লোকটা রাখতে চায়না যেন, সে শুধু পালিয়ে থাকতে চায়।
ওয়াগ্গাছড়ার পাহাড়ের মাঝামাঝি তৈরী করা বাঁশের কঞ্চির তৈরী ছাউনিতে বসে চা-মোল্লা খেতে খেতে বুড়ো আমাকে তার পারিবারিক হতাশার কথা বললেন। আমি ক্লান্ত শরীরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রইলাম, ভাবছিলাম কেন লোকটা এসব কথা আমাকে বলছেন।
খানিকবাদে লোকটা আমার দিকে ঝুঁকে এসে চাপা স্বরে বলতে লাগলেন, 'সবই আল্লাতালার বিচার, বুঝলেন চাচা, বিচার বড় শক্ত। সারাজীবন কি করছি জানেন? ৭১ সালে নিজদেশের সাথে বেঈমানী করছি, তারপর সারাজীবন ঘুষঘাষ খাইয়া আসছি। আইজকা আল্লায় সব ফল দিতাছে।'
আমার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া বেড়েই চলল। তাকে শুধু বললাম, 'আপনার এসব কুকর্মের কথা কি আপনার ছেলে-মেয়েরা জানেন?'
বুড়ো বললেন, 'সবাই জানে। আমিও স্বীকার যাই, হুদাহুদি লুকাইয়া লাভ আছেনি?'

৩.
ওয়াগ্গাছড়ার সেই বুড়োর নাম ভুলে গেছি। তবে তিনি হয়ত শান্তিতেই আছেন। কারণ তাঁর ছেলেমেয়েরা জানেন যে তাদের বাবা অপরাধ করেছেন, সেই অপরাধের জন্য তিনি অনুতপ্ত। সারাজীবনের ব্যর্থতা, সন্তানদের যাবতীয় কষ্ট, সবকিছুকে তিনি নিজের অপকর্মের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে মেনে নিয়েছেন।

তাকে আলী আহসান মুজাহিদদের মতো রাতে দুঃস্বপ্নের মতো ভাবতে হয়না, 'এই বুঝি আমার অপকর্ম ধরা পড়ে যাবে।' তাঁকে আলী আহসান মুজাহিদদের মতো সন্তানের দৃষ্টি দেখে ভয় পেতে হয়না এই ভেবে যে, 'ছেলেটা কি আসলেই জেনে গেল আমি কি কুকাজ করেছি?'
তাঁকে আলী আহসান মুজাহিদদের মতো নামাজে দাঁড়িয়ে ভাবতে হয়না যে পেছনে বসে পান খেতে খেতে তার স্ত্রী ভাবছেন 'হারাজাদা, কত মেয়েমানুষের ইজ্জত খাইছস, এখন আবার নামাজ দেখাস, না?'

আমি ভাবি, আলী আহসান মুজাহিদগংরা কি সত্যগুলো স্বীকার না করার কারণে একটা মুহূর্ত শান্তিতে থাকতে পারে? তাদের কি সারাক্ষণ মনে হয়না তাদের সন্তানেরা আসলে জানে তাদের বাবারা একেকটা খুনী, ধর্ষক, যুদ্ধাপরাধী এবং একই সাথে ভয়াবহ রকমের মিথ্যুক।

আচ্ছা? আলী আহসান মুজাহিদদের সন্তানদের দিন কাটে কিভাবে? তাদের কি লজ্জা লাগেনা এই ভেবে যে তাদের বাবারা একেকটা খুনী, ধর্ষক, যুদ্ধাপরাধী এবং একই সাথে ভয়াবহ রকমের মিথ্যুক!

এই প্রজন্মের কাছে এই প্রশ্নটা রেখেই শেষ করছি।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মন্ত্রী পুত্র/কন্যার সন্মান পাইয়া তাদের সন্তানেরা ভাবে বাহ্... আমার বাপ তো তাইলে ঠিকই করছিলো। আর একটু বেশি করতে পারলে তো আমার বাপেই আজকা প্রধানমন্ত্রী থাকতো।

আর এইসব দেইখা গরীব ভিক্ষুক মুক্তিযোদ্ধার ছেলেটা ভাবে... বাপটা হুদাই এইসব করছে... এত কষ্ট করার কোনো দরকার আছিলো ? তারচেয়ে রাজাকার হওনটাই তো বেশি সুবিধা। মন্ত্রী হওন যাইতো।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

তাও ... ধরেন হঠাৎ হঠাৎ যখন এই যে 'রাহেলা' নামগুলা চোখে পড়ে, তখন ঐ পোলাপানরা কি ভাবেনা, 'আইচ্ছা, আমার বাপেও তো মনে হয় একই কাম করছে!'
জানি, জামাতী রাজাকারগো পোলাপানরে জিগাইলে বলব, 'না'। কিন্তু তারপরও কানের কাছে মুখ নিয়া যদি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করি, 'আসলেই ভাবছনা?' তখন কি বলবে?
এইরকম একটা নাটকের সীন কল্পনা করতেছি এখন ...খারাপ না
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কনফুসিয়াস এর ছবি

এইটুকু বিবেকের উপস্থিতি যদি তাদের মধ্যে থাকতো, তাহলে হয়তো সেদিনের বেঈমানীটাও করতোনা।
আপনার অসম্ভব সুন্দর লেখার জন্যে পাঁচ।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ, কনফুসিয়াস।
আমার ধারনা, তারাও বুঝে ...কিন্তু আমরা সুযোগ দিচ্ছি বলেই সুবিধাটা নিচ্ছে ... আমি এখন আসলেই বুঝিনা প্রথম আলোর মতিউর রহমানদের যদি মাফ চাইতে হয়, তাহলে মুজাহিদরে নিয়ে কেন উপদেষ্টারা কিছু বলেনা? ... জামাত কি এতই শক্তিশালী যে আর্মির জামাতী পা চাটা লাগবে? আসলেই বুঝে কুলাতে পারিনা!! ....নাকি গোলাম আজমের পোলা কাঠি নাড়তেছে?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

সবজান্তা এর ছবি

কার কাছে যেন শুনেছিলাম, খন্দকার মোশতাক মৃত্যুর আগে বিভীষিকা দেখতেন, কারা যেন আসছে। সত্য-মিথ্যা জানি না।

তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, চট করে মরে গেলে, এইসব বিষ্ঠাভোজী শূকরছানাদের তো কোন শাস্তি ই হোল না। তাদের মরতে হবে পঁচে,গলে।

আমি অবসর সময়ে মাঝে মাঝে ভাবি, ঠিক কিভাবে মরলে, এরা সবচেয়ে বেশি যন্ত্রনা পাবে। মজাদার ভাবনা। প্রতিহিংসা মধুরতম অনুভূতি। আপনিও ভেবে দেখতে পারেন, দারুন সময় কেটে যায়।
----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আরো কয়েকটা ছুটে গেছে হাত থেকে ...আব্বাস আলী, আবদুর রহিম
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কয়েকজনকে দেখলে, কথা শুনলে মনেই হয় না যে তারা তাদের বাপের অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত। বরং হয় উল্টোটা। জিরাফের চাইতেও উঁচু হয়ে যায় গলা, সেই গলায় তখন বাজে ঢংকা। (বাংলাদেশদ্রোহী) পিতৃদেবের পক্ষে সাফাই দেয়া ঢংকা, ইসলামের নামে জাস্টিফিকেশনের ঢংকা, দেশের মাটিতে নিজের অবৈধ বৈধতাকে মানিয়ে নেয়ার হীন চেষ্টার ঢংকা।
চোর একটা সিরিজ লিখতো না? চোরের পোলার বড় গলা? এইটা এমনি এমনি হয় নাই। কথা আসলেই সত্য।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

হুমমম ...তবে চোরের দশদিন গেরস্থের একদিন কথাটা আছেনা?,,,ঐটা তারা মাঝেমাঝে ভুইলা যায় আর কি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

শফিক স্যার, আইডিয়াল স্কুল, ডায়েরি- কান্দাইয়া দিলেন মিয়া। আর লেখাটা? অসাধারণ!


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ পিয়াল ভাই।
শফিক স্যার আসলেই এক অন্যমাপের মানুষ ছিলেন।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কামারুজ্জামানের সন্তানদের তো দেখলাম দিনকাল ভালোই কাটছে ।
ব্রীজ পাহারা দিতো যে রাজাকার সে হয়তো বিবেকের দংশন বুঝবে,রাজাকার সর্দারেরা কখনোই নয় । যা আদতে নেই তাদের,তার আবার দংশন কি?

মাঝখানের ঘটনাটা পড়ে অনেকক্ষন 'তব্দা' খাইয়া থাকলাম
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

বস্, বিবেকের দংশন আশা করিনা এদের কাছে .... তবে ধরেন, একটু সন্দেহ...'বউ-পোলাপান আসলেই কি ভাবতেছে?' ... এটা নিয়া একটা সাইকোলজিকাল সার্ভে করা যায় ...রাজাকারগো পোলাপানরা আসলে কি ভাবে নিজেগোর বাপ সম্পর্কে ... ইনডাইরেক্ট কিছু প্রশ্ন দিয়ে বের করে আনা ... তারপর সেই রেজাল্ট তাদের সামনে প্রকাশ করা ... তখন বপ ছেলেরে/ ছেলে বাপরে বিশ্বাস করতে পারবেনা আর ,,,কারণ এরা তো রক্তগতভাবেই বিশ্বাসঘাতক
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সংগঠিত অপরাধীদের দমন করার জন্য সাংগঠনিক শক্তি দরকার । তেমন সংগঠন গড়ে উঠার আগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদের মাধ্যমে স্পিরিটটাকে জিইয়ে রাখতে হবে ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

জ্বিনের বাদশা,অমি রহমান পিয়াল -- আপনারা আইডিয়াল স্কুলে পড়তেন, ওয়াও!!!!!!!!! কোন ব্যাচ? আমি ৯৮ ব্যাচ।
শফিক স্যারের যে জিনিসটাকে রীতিমত সমীহ করতাম তা হলো তার পার্সোনালিটি।স্যারের যে কী সহজাত সুন্দর একটা গাম্ভীর্য ছিল!এস.এস.সি পরীক্ষার আগে আমরা যারা স্যারের কাছে পড়তাম না , তাদেরকে স্যার বাসায় ডেকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কোন ছবি কিভাবে আঁকতে হবে, কোন প্রশ্নের উত্তর কিভাবে লিখতে হবে, পরীক্ষার সময় কোন কোন জিনিসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের পরীক্ষার ঠিক আগে আগে স্যারের ক্যান্সার ধরা পড়ে। কোনো এক পরীক্ষার পরে আমরা সব বন্ধুরা মিলে স্যারকে দেখতে যাই। আমাদের সিংহের মত সুঠামদেহী স্যারের শরীর শুকিয়ে, কুঁকড়ে শরীরের প্রতিটি ধমনী আর শিরা নীল হয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।নিজেকে আমার আর কখনো এত অসহায় লেগেছিল বলে মনে পড়ে না!

জ্বিনের বাদশা , আপনি যে প্রশ্ন রেখে লেখাটা শেষ করেছেন-দেখি আপনাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করা যায় কিনা--
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর আমি যে মোবাইল কোম্পানিতে যোগ দিয়েছি , সেখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার কিছুদিন পরে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আমার কলিগ হিসেবে জয়েন করেছে। ব্যাপারটা জানার পর আমার বন্ধু শেহাবকে বললাম -আজকে মুজাহিদ(একটা গালি) এর ছেলে আমাদের সাথে জয়েন করেছে। কি করি? শেহাব জিজ্ঞেস করল-পড়াশোনা করেছে কোথায়?বললাম-লণ্ডনে (পরে জেনেছি-ঢাকা ইউনিভার্সিটির আই আর থেকে গ্রাজুয়েশন করে পোস্ট গ্রাজুয়েশন লণ্ডনে করেছে)।শেহাব বলল- ওর তো মাদ্রাসায় পড়ার কথা।

তো একই অফিসে প্রায় ছয়মাস ধরে আছি, নানা বিষয় নিয়ে একসাথে কাজ করতে হয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় একসাথে যেতে হয়,এমনকি অযু করার সময়ও অনেক সময় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে অযু করতে হয়-আমি আর সব কলিগদের মত আন্তরিক ব্যবহার না করলেও মোটামুটি একটা সম্পর্ক বজায় রেখে চলি।রোজার মাসে আমরা অফিসের সবাই মিলে জোহরের নামাযটা জামাতে পড়েছি-তখন এমনও হয়েছে -সে হয়ত ইমামতি করেছে ,আমি ইকামত দিয়েছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে যেদিন সারা দেশজুড়ে নৈরাজ্য তৈরি হল-সেদিন আমরা অফিসের একটা কাজে একসাথে গাজীপুর গিয়েছি।যাবার সময় বিভিন্ন জনের ফোনে, রেডিওতে নানা জায়গায় ভাংচুরের খবর শুনছি।গাড়িতে আরেকজন বি.এন.পি সাপোর্ট করা কিন্তু জামাতের জন্য সিম্প্যাথী আছে(তার নিজের ভাষ্যমতে) লোক নিজের মত করে ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা করছেন-আর আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সাথে এই সরকারের হয়ে তীব্র তর্ক করছি। এমন সময় মুজাহিদের ছেলে বলল-তার কাছে খবর আছে কারা এসব করছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম কারা এসব করছে। বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পর বলল-আওয়ামী লীগ।তো সেদিন কারফিউ দিয়েছে শুনে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার পথে একটা সময় আসল যখন আমি আর সে শুধু রিক্সায়। তখন অনেক ইচ্ছে করেছিল তাকে জিজ্ঞেস করি ১৯৭১ এ তার বাবার ভূমিকা নিয়ে সে কী ভাবে? কিন্তু সহকর্মী বিব্রত হবে ভেবে প্রশ্নটা করা হয়নি।সেদিন তাকে পথে নামিয়ে দিয়ে বাসায় পৌঁছুতে পৌঁছুতে কারফিউ প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল-রাতে ফোন করে সে খোঁজ নিলো ঠিকমত বাসায় পৌঁছুতে পেড়েছি কিনা।
এরপর আরেকবার একসাথে সিলেট যাচ্ছি , তার সাথে গায়ে গা লাগিয়ে বসতে হচ্ছে। আমরা চার যুবক এবং আমাদের ড্রাইভার নানা বিষয় নিয়ে গল্প করতে করতে রাত ২ টায় যেয়ে সিলেট পৌঁছেছি।মাঝখানে নানা জায়গায় চা-সিগ্রেট খেতে নেমেছি।এক জায়গায় সে বলল--তার বড় ভাইকে যখন জাবি থেকে বের করে দেয়--তখন নাকি ছাত্ররা তাকে সিগারেট খেতে বলেছিল--সে পারে নাই বলে তাকে অপমান করে বের করে দিয়েছিল। এরপর থেকে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবকিছু তার পারতে হবে। পরদিন সকালে হোটেল 'ফরচুন গার্ডেন' এর লবিতে বসে তার সাথে আমাদের অন্য দুই কলিগের জন্য টিভি দেখতে দেখতে অপেক্ষা করছি। সে আমার সাথে নানা বিষয় নিয়ে গল্প জুড়েছে , আমি হুঁ-হাঁ করছি।সে আমাকে বলল-ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরকে তার ভালো লাগে না । তাঁর কথাকে তার অসার মনে হয়। বরং নুরুল কবির(নিউ এজ সম্পাদক) তাদের (মানে জামাতের) বিরুদ্ধে কথা বললেও তার কথাকে অযৌক্তিক মনে হয় না। আমি বললাম নুরুল কবিরের কথা আমারও খুব ভালো লাগে।তারপর সে বলল জামাতের যে স্ট্র্যাটেজি তাতে তাদের সাথে পারা এত সহজ না।আর ৭১, মুক্তিযুদ্ধ --এসবের কথা শুনলে মানুষ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এখন বিরক্ত হয়।তাই এসব নিয়ে যতই আলোচনা হয়,ততই তারা খুশি হয় যে এইসব মানুষের কাছ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। আমি তখন বললাম--কিন্তু আপনার কি মনে হয় না যে জামাত ৭১ এ তাদের ভূমিকার জন্য অন্তত ক্ষমা যদি চাইত তাহলেও মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়ত।

আমার কথা শুনে দপ করে তার মুখটা নিভে গেল। সম্ভবত বুঝতে পারল ভুল মানুষের সাথে ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করে ফেলেছে।
-------------------------------------------------------------
মুজাহিদের নতুন ধৃষ্টতার পর আমি তার সাথে কি আচরণ করব বুঝতে পারছি না। পত্রিকায় দেখলাম সেক্টর কমাণ্ডাররা সামাজিকভাবে বয়কট করার আহবান জানিয়েছেন।আমি আপাতত তাকে এড়িয়ে থাকছি!!!!!!!!!!!!!!!!!

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

আমার মনে হয় এখন সুনির্দিষ্ট মামলা করার সময় আসছে। শমী কায়সার, আসিফ মুনীর, শিমুল ইউসুফ , জাহীদ রেজা নূরদের উচিত অতি দ্রুত মামলা করা। কি বলেন? @ হাসান মোরশেদ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জামাতের অপরাধ ছিলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে । রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হয়ে বিচার আয়োজন করতে হবে ।এই বিচারে ব্যাক্তিগতভাবে ভুক্তভোগীরা স্বাক্ষী হতে পারেন । একটা গনহত্যার বিচার ব্যাক্তির মামলায় হবার ইতিহাস নেই @রাজীব
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাপের বাচ্চা সাপই হয়। রাজাকারের পোলা নব্য রাজাকার।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।