বিশ্বকাপের কোচেরা

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/০৭/২০১০ - ১:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিশ্বকাপের মাঠে দৌড়োদৌড়ির পরিশ্রমটা মূলতঃ খেলোয়াড়রা করলেও, বিশ্বকাপ আলোচনাকে মাতিয়ে রাখতে খেলোয়াড়দের চেয়েও কম যাননা যাঁরা, সেই কোচেরাই এই লেখার আলোচ্য। নানান ধরনের এই চরিত্রগুলো প্রতিবারই বিশ্বকাপে নানা রকমের আলোচনার জন্ম দেন, কখনও তাঁদের কেউ কেউ হয়ে যান মহান বীর, কখনও মিডিয়ার আক্রমনের মোক্ষম শিকার, আবার কখনও স্রেফ হাসির পাত্র। সব মিলিয়ে খেলোয়াড়দের চেয়ে কোন অংশেই কম রং ছড়াননা তাঁরা। এবারও বিশ্বকাপের বত্রিশটি দলের কোচদের দেখে যা মনে হয়েছিলো, বা তাঁদের সম্পর্কে এখানে ওখানে যা শুনেছি এসব মিলিয়েই একটা জগাখিচুড়ী এই লেখাটি। একেবারে আনাড়ী লেখা, তথ্যের চেয়ে বাকোয়াজই বেশী, আগেই বলে রাখি, সিরিয়াস মুডে না পড়াই ভালো।

কোচ কি আসলেই কোচ?
প্রথমেই বলা যাক খেলার মাঠের পাশেই বেঞ্চ এলাকায় বসে থাকা এই কোচদের চেহারা, পোশাক-আশাক বা আচার আচরণ দেখে যে ইম্প্রেশন আমার হয়েছে সেটা নিয়ে। খেলা দেখতে দেখতে যা লক্ষ্য করলাম তা হলো, এদের অনেককে দেখেই ফুটবলের কোচের চেয়েও অন্য কোন পেশায় বেশী মানানসই বলে মনে হয়েছে। যেমন ফ্রান্সের কোচ রেমন্ড ডমেনেখ। মাঠের বাইরে এই লোককে দেখে ফুটবল নিয়ে আলোচনা করতে কেউ উৎসাহ বোধ করবেনা আমি কনফার্ম। খেলার গো-হারা হারতে থাকা দলের দিকে কোনরকম রাগ, ক্ষোভ বা বিরক্তি ছাড়া উদাসচোখে তাকিয়ে থাকা এই কোচের উস্কোখুস্কো সাদাকালো চুল দেখলে মনে হয় তিনি অর্কেস্ট্রার মাস্টার, এখনই কোটের ভেতরের পকেট থেকে দুটো কাঠি বের করে নাচাতে শুরু করবেন।
তবে শেষদিনে ব্যাটার আচরণে আমি ভীষন বিরক্ত হয়েছি, খেলা শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ পাহেইরার সাথে সে হ্যান্ডশেক করলোইনা! কারণটা নাকি আয়ারল্যান্ডের সাথে প্রস্তুতিপর্বে আনরির হাত দিয়ে করা গোল নিয়ে পাহেইরার সমালোচনা। ভাগ্যিস ব্যাটা মিউজিক লাইনে আসেনি, এমন গোঁয়াড় লোকের কাছ থেকে কিরকম মিউজিকই বা আশা করা যায়?
অথবা ধরা যাক চিলির কোচ মার্সেলো বিয়েলসার কথা! কিরকম শূণ্যদৃষ্টি নিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকান, মনে হয় কাজী নজরুল ইসলাম! তাঁর চলাফেরাও কেমন যেনো এলোমেলো, এই দেখা গেলো বেঞ্চে বসে আছেন, পরের মুহূর্তেই দেখা গেলো বেঞ্চ ছেড়ে এরিয়ার এক কোণায় গিয়ে কি ভাবছেন। আর খেলোয়াড়দের প্রত্যেক মুভেই বিরক্তির প্রকাশ তো আছেই। কবি অথবা চিত্রশিল্পী হলেই যেন তাঁকে বেশী মানাতো। তবে এখনকার যুগের খুব হাতেগোণা কয়েকজন কোচের একজন তিনি যাঁরা এ্যাটাকিং ফুটবলকে ছাড়েননি। প্রি-কোয়ার্টারে বিদায় নিলেও এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে "সুন্দর" ফুটবল খেলেছে আর্জেন্টিনার পর চিলিই।
আবার ধরুন, হল্যান্ডের কোচ, মারউইক নাম সম্ভবতঃ, ভদ্রলোককে দেখে আপনার কি মনে হয়? দেখুন তো একমত হতে পারেনন কিনা? পোশাক, চুলের শেড, ভদ্র, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার এই লোককে দেখে আমার ফার্স্ট ইম্প্রেশনই ছিলো তিনি হল্যান্ড দলের ফ্যাশন ডিজাইনার, মনে হচ্ছিলো এঁর নাম আরমানি, রাল্ফ লরেন বা গুচ্চি টাইপের কিছু। আবার জার্মান কোচ জোয়াকিম লো, বেশ কিছু হলিউড সিনেমার পরিচালকরা কি অলরেডী এই ভদ্রলোককে নায়কের রোলে রেখে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা শুরু করে দেননি?
অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের কোচ যিনি, নাম মনে নেই, তাঁকে দেখে ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ছাড়া আর কিছুই মনে হবার কোন জো নেই। খেলোয়াড়দের ভুলে বা গোল মিস হলে ভদ্রলোক যে মৃদু প্রতিক্রিয়া দেখান, সমান্য কপাল চাপড়ে বা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে টুক করে বসে পড়ে, তা দেখে মনে হয় এর উপযুক্ত ক্যাপশন হবে, "ইশ্, অংকটা এবারও মিললোনা!" উরুগুয়ের কোচেরও একই দশা, এই ভদ্রলোকের ক্ষেত্রে আবার স্কোপটা একটু বেশী, ইউনিভার্সিটির প্রফেসরের সাথে সাথে তাঁকে হাইস্কুলের ম্যাথ বা সাইন্সের টিচার বলেও চালানো যাবে। চেহারা আর পোশাক আশাকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাঁর ধীরস্থির চালচলনও বাহ্যদৃষ্টিতে তাঁকে ফুটবল কোচের চেয়ে অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছে।
আরেক সেমিফাইনালিস্ট স্পেনের কোচ দেল বস্কের বেলায় ঘটনা আবার একশো আশি ডিগ্রী মোড় নেয়, প্রথমদিন স্পেনের খেলা দেখতে বসে আমি অনেকক্ষণ স্পেন বেঞ্চে কোচকে খুঁজেছি, কোচ কই, কোচ কই? এই লোককে দেখলে মনে হয় শুঁড়িখানার মালিক, বা বড়জোর মধ্য আমেরিকার রুক্ষ কোন অঞ্চলের পাড়া দাপিয়ে বেড়ানো শেরিফ হিসেবে মেনে নেয়া যায়, তাই বলে কোচ? ভদ্রলোক আবার ডাকসাইটে ফুটবলারও ছিলেন।
আর অতিশয় বৃদ্ধ দুই কোচ মারসেলো লিপ্পি আর ডেনিশ কোচ (নাম মনে নেই), এদের দুজনকে দেখে মনে হয়েছে "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি", বিশেষ করে ডেনিশ কোচের মনে হয় আসলেই সেই অবস্থা। দশ বছর ধরে জাতীয় দলের কোচ। আর কত? ওদিকে লিপ্পিকে বিড়বিড় করতে দেখলে দেশের নানা-দাদাদের কথা মনে পড়ে যায়, মনে হয়, অবসর সময়ে বসে আছেন, হাতে কাজ নেই, তাই কিছু দোয়া খায়ের করে নেকী বাড়িয়ে নিচ্ছেন।
কেন জানিনা, সেই ৯০/৯৪ থেকেই ব্রাজিলের দুঙ্গাকে দেখলে আমার মনে হতো এই লোকটার চেহারা নাবিক নাবিক, আর দক্ষিণ আফ্রিকার পোর্ট শহরগুলোতে খেলা চলার সময় ক্যাজুয়াল ড্রেসে বেঞ্চে থাকা দুঙ্গা শুধু সেই ইম্প্রেশনের সম্প্রসারণই করেছেন। হলিডে পোশাকের দুঙ্গাকে দেখে যদি বলি এইমাত্র জাহাজ পোর্টে ভিড়েছে, নাবিক মহাশয় একটু ফ্রেশ হয়েই সরাসরি খেলা দেখতে চলে এসেছেন -- আপত্তি করা যায়?
অন্যদিকে ইংল্যান্ডের টেন মিলিয়ন ডলার ম্যান ফ্যাবিও ক্যাপেলোকে কি কোনভাবে কোচ বলে চালানো যায়? ভাবসাব যা! এই লোককে একমাত্র কর্পোরেট সিইও'র চেয়ারেই মানায়। আর আমেরিকান কোচ ব্র্যাডলিকে দেখে তো মনে হয় সাক্ষাৎ ব্যাড বয়, বড়জোর রাগবি খেলোয়াড়। তবে স্লোভেনিয়ার ম্যাচে বেচারার দলের শেষ গোলটা অকারণে বাদ হওয়ার পর যেরকম নিরীহ গোবেচারা চেহারা করে তিনি অভিযোগ করছিলেন, তাতে আবারও মেনে নিতে হয়েছে, "যা দেখি সব ঠিক দেখিনা!"

সবার ওপরে ম্যারাডোনা, তাহার ওপরে ....
তবে সবকিছু ছাড়িয়ে গেছেন একজনই, আমাদের "দ্য ডন", হিজ এক্সেলেন্সী, সুলতান-ই-ফুটবল, সেনিওর ডিয়েগো ম্যারাডোনা। হোয়াট আ শো! ম্যারাডোনা যে আসলেই ম্যারাডোনা, আবারও প্রমাণ করলেন। শুধু ভালো খেলে নয়, সব কিছু মিলিয়েই আলোচনার একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন তিনি। দুহাতে ঘড়ি, নানারকম তন্ত্র-মন্ত্রে-রুদ্রাক্ষের মালা, কানের দুল, ছাঁটাই করা সাদা-কালো দাড়ি, ঝা-চকচকা স্যুট -- সত্যিকারের মাফিয়ার ডনের আশপাশ থেকেও তো এমন পারফেক্ট অরা বের হবার না। তার ওপর শিশুসুলভ অঙ্গভঙ্গি, বাঁধাভাঙা উল্লাস, কোলাকুলি, কোলে চড়া, ফুটবলের ক্যারিকেচার -- ম্যারাডোনাকে দেখে মনে হয়েছে তিনি আরো শিশুতে পরিণত হয়েছেন।
শুধু আচার আচরণেই নয়, কথাবার্তাতেও তাই। আগের ম্যাচে গ্রীসকে দুই গোলে হারানো কোরিয়াকে নিয়ে খানিকটা টেনশনে ছিলেন, খেলা শেষে তাই ভীষন আনণ্দিত। ফুরফুরে মেজাজে প্রেস কনফারেন্সে এসেছিলেন একটা আপেল হাতে। আপেলে কামড় বসাতে বসাতেই সেরকমই স্বাদযুক্ত উত্তর দিলেন সাংবাদিকদের। যেমন মেসির প্রসঙ্গ আসায় বললেন, মেসির পা থেকে বল কেড়ে নেয়া ক্ষুধার্ত আমার কাছ থেকে এই আপেলটি কেড়ে নেয়ার চেয়েও কঠিন! আবার খেলোয়াড়দের প্রত্যেককে ধরে ধরে চুমু খাওয়ার প্রসঙ্গে হঠাৎই গোল গোল চোখ করে নিজেকে পরিস্কার স্ট্রেইট বলে ঘোষনা দিলেন, এমনকি তাঁর বর্তমান প্রেমিকার চুল যে সোনালী সেটা বলতেও ভুললেননা। তবে এসব মিলিয়ে মনে হয়েছে ম্যারাডোনাকেই আসলে ফুটবল মাঠে মানায়।

কোচ কেন ব্যাজার?
কোন সিনেমার ট্রেইলার না, ঘানার কোচের কাহিনী। ভদ্রলোকের নামের উচ্চারণ সম্ভবতঃ রাজেভাক। যারা ঘানা-সার্বিয়ার ম্যাচটি দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও বিস্মিত হয়েছেন সারাক্ষণ গোমড়ামুখ করে থাকা এই কোচকে দেখে। ঘানা গোল দিলো, তাও গোমড়া মুখ, যেন রামগড়ুড়ের ছানা। পরে অবশ্য দেখা গেছে যে ভদ্রলোক সবসময়েই গোমড়ামুখে থাকেন, কেমন একটা কাঁদো কাঁদো চেহারা। হঠাৎ দেখে কেউ যদি ভেবে বসে যে এইমাত্র তাঁর কোম্পানীটির দেউলিয়া হবার খবরটা ফোনে শুনতে পেয়ে তাঁর এই অবস্থা, আশ্চর্য হবোনা।
তারপরও, সার্বিয়ার সাথে ম্যাচের দিন তাঁর আচরণ ছিলো রীতিমতো অস্বাভাবিক। খেলা শেষ, তাঁর দল ঘানা জিতেছে, সবাই আনন্দ করছে, আর তিনি বিমর্ষ মুখে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ফিরে যাবার জন্য রওয়ানা দিয়েছেন! যেখানে আর্জেন্টিনার মতো দলের ক্ষেত্রে নাইজেরিয়ার সাথে জিতেও প্রত্যেকটা খেলোয়াড়কে "আদর" করে দিয়েছিলেন কোচ ম্যারাডোনা, সেখানে সার্বিয়ার মতো শক্ত ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জিতেও সন্তুষ্ট নন তিনি!
কোন খেলোয়াড়কে তো অভিবাদন জানালেনই না, এমনকি যখন ঘানা দলের একজন আনন্দে লাফাতে লাফাতে তাঁকে আলিঙ্গন করতে এলো, হাত ঝামটা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিলেন। পুরো দৃশ্য দেখে তো আমি হতবাক, নানান প্রশ্ন মনে, "এই লোক কয় গোলে জিততে চাইছিলো?" , "ব্যাটা কি বর্ণবাদী নাকি?", "ঘানা সরকার তার বেতন বকেয়া রেখেছে নাকি?" -- প্রশ্নের তো আর শেষ নেই। পরে অবশ্য জানা গেলো ওসব কিছুইনা, ভদ্রলোকের মন খারাপের কারণ হচ্ছে পারজিত পক্ষ সার্বিয়া হচ্ছে তাঁর নিজের দেশ। সেজন্যই নাকি তাঁর মন এতটাই খারাপ হয়েছে যে সেটা লুকোনোর ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছিলেন।
ঘটনা এখানেই শেষ না, এমনকি, খেলা পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে তা স্বীকারও করেছেন রাজেভাক, বলেছেন, অনুভূতিটা খুব জটিল। জাতীয়তাবাদের কাছে প্রফেশনালিজমের হেরে যাওয়া সম্ভবতঃ এই প্রথম দেখলাম ফুটবল খেলায়।

জোড়ায় জোড়ায়
এবারের বিশ্বকাপে বাবা কোচ ছেলে খেলোয়াড় এমন জোড়া এসেছেন দুটি দলে -- যুক্তরাষ্ট্র আর স্লোভাকিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যাডলি বাবার মান রেখেছেন, শুধু মাঝমাঠে দুর্দান্ত খেলাই খেলেননি, যে অসামান্য গোলটির কারণে তাঁর দল পরের রাউন্ডে উঠেছে, সেটি তিনিই করেছেন। অন্যদিকে স্লোভাকিয়ার কোচের নাবালক পুত্রটির খেলা এবার অত চোখে পড়েনি, মাঝখানে এক খেলায় বসিয়েছেনও সম্ভবতঃ। জানিনা এখন দেশে ফিরে গিয়ে বাপ-বেটা কোনো রকম তোপের মুখে পড়েছে কিনা।
পুত্র পিতার মুখ রক্ষা করলেও, হবু শ্বশুরের মুখ রক্ষা করতে পারেননি কুন আগুয়েরো, অবশ্য জার্মানীর সাথে ম্যাচে সম্ভবতঃ তিন গোল খাওয়ার পর শ্বশুরমাশইয়ের জামাইর কথা মনে পড়েছে, তাই ঐ সময়ে নেমে কিছু করতে না পারার জন্য বেচারাকে তেমন দোষও দেয়া যায়না। নিদেনপক্ষে কোরিয়ার বিরুদ্ধে তো একটা এ্যাসিস্ট তার আছে। দুই জোড়া বাপ-বেটার বিপরীতে একজোড়া শ্বশুর-জামাই খুঁজে পেয়ে বাকী দলগুলোতে আর কোন শ্বশুর-জামাই পাওয়া যায় কিনা খুঁজে দেখেছি, কিন্তু পাইনি।
অবশ্য বলা যায়না, টুর্ণামেন্ট শেষ হতে হতে কোন কোচের, যেমন জোয়াকিম লো বা তাঁর কন্যার হয়তো ফাইনালে ম্যুলারের হ্যাট্রিক দেখে অন্যসেন্সে মনে হতে পারে "আরে ছেলেটিতো বেশ!" অথবা হয়তো কোচ বাবার ফাইনাল খেলা দেখতে আসা সুনয়না তন্বী তরুণীটিকে দেখে রোমাণ্টিক কোন খেলোয়াড়েরও মনে হতে পারে, "আরে!"। শ্বশুর-জামাইর আরেকটি জোড়া মিলানোর সম্ভাবনা তাই আপাততঃ সেরকম কোন কল্পকাহিনীর হাতেই ছেড়ে দিলাম।

কোচদের বেতন
আমরা সবাই জানি এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশী বেতন কে পাচ্ছেন। ফ্যাবিও ক্যাপেলো, চেহারা সুরতেও বলে দেয়, কেমন কর্পোরেট সিইও সিইও ভাব! বছরে এক কোটি ডলার তাঁর পারিশ্রমিক!!!!!!! এই "!"গুলোর গুরুত্ব বুঝতে হলে যে তথ্যটা জানতে হবে তা হলো বেতনের র্যাংকিংয়ে তাঁর পরেই আছেন যিনি, মেক্সিকোর কোচ, তিনি পান ত্রিশ লাখ ডলারের ঘরে। তিন গুণেরও বেশী হয়তো গুনছেন ক্যাপেলো। ইংলিশ ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন অবশ্য এরকম জুয়ার দান খেলে এখন ফেঁসে গেছে। প্রায় কোন অর্জন ছাড়াই ফিরে এসেছেন কোটি-ডলার ম্যান ক্যাপেলো এবং তাঁর কোটি-ডলার ম্যানদের নিয়ে গড়া ইংল্যান্ড দল। কিন্তু দু'বছরের চুক্তির পুরো টাকাই দিতে হবে বলে অমন বিশাল টাকা গচ্চা দেবার চেয়ে ক্যাপেলোকে বহাল রাখারই সিদ্ধান্ত এ্যাসিসিয়েশন নিয়েছে। চাল্লু একটা ম্যানেজার বাগানোর কৃতিত্বটা যে অন্ততঃ ক্যাপেলোর প্রাপ্য সেটা অস্বীকার করার জো নেই।
দুনিয়ার সব কিছুতেই টুইস্ট বা পেঁচগী খোঁজা আমার একটা বদঅভ্যাস। এই বেলা ইংল্যান্ডের পরাজয় বিষয়ে একটা টুইস্ট খুঁজে পেলাম। উরুগুয়ের রেফারীর ভুল ডিসিশনে সেদিন জার্মানীর সাথে খেলায় ল্যাম্পার্ডের গোলটি বাতিল হওয়ার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারী কে? এই প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখলাম, মহান ফ্যাবিও ক্যাপেলোই এর সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারী। সেদিন ইংল্যান্ড এমনেও হারতো, আর তখন প্রি-কোয়ার্টারে বিদায় নেয়ায় সব দোষ গিয়ে পড়তো ক্যাপেলোর ঘাড়েই। ভাগ্য শালার বড়লোকদের পক্ষেই কাজ করে, এখন সব দোষ সামলাচ্ছেন বেচারা উরুগুইয়ান গরীব রেফারীটি, আর ক্যাপেলো তাঁর আলীশান ড্রয়িংরুমে দুষ্প্রাপ্য কোন পাখির সুস্বাদু মাংস চিবোতে চিবোতে ঠিক করছেন এরপর হাঙ্গেরী ম্যাচে কাকে বাদ দিয়ে কাকে দলে নিলে মিডিয়ার কাছ থেকে চোস্ত ধরনের একটা হাততালি কপালে জুটবে।
পশ্চিম ইউরোপের সব দলের কোচরাই কয়েক মিলিয়ন ডলার করে বেতন পাচ্ছেন, হল্যান্ড, জার্মানী, স্পেন, পর্তুগাল সবাই। এর মধ্যে ব্যাতিক্রম বেচারা রেমন্ড ডমেনেখ, তিনি পাচ্ছেন পাঁচ লাখ ডলারের ঘরে, ক্যাপেলোর বিশ ভাগের একভাগ! অথচ পাশাপাশি দেশ ইংল্যান্ড আর ফ্রান্স, লোকজনের আয়ও মোটামুটি কাছাকাছি। এক ব্লগে দেখলাম "ডমেনেখের এই বেতনে এর বেশী আশা করা উচিত না ফ্রান্সের" বা "ডমেনেখের উচিত ম্যানেজার বদলানো" এরকম মন্তব্য এসেছে। সেসব পরে নিজে যা ভাবছিলাম, দেখা গেলো পাশাপাশি সে মন্তব্যটাও ব্লগার করে ফেলেছেন, তিনি বলেছেন, "হয়তো খুব ভালো ম্যানেজার আছে বলেই এখনও ডমেনেখের মতো ভুয়া কোচ "এত বেতনে" এখনও টিকে আছে"।
কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য পেয়েছি কোচদের বেতনে চোখ বুলাতে গিয়ে। আমেরিকা, জাপান, ডেনমার্কের মতো উচ্চ আয়ের দেশেও কোচদের বেতন ইউরোপিয়ান কোচদের ধারেকাছেও না! জাপানী কোচ ওকাদা, দুঙ্গা, ম্যারাডোনা -- এঁরা সবাই পাচ্ছেন বছরে আট লাখ ডলার করে। এতে অবশ্য ওকাদা মশায়ের খুশীই হবার কথা, ম্যারাডোনা আর দুঙ্গার মতো জগৎজয়ী কোচ তাঁর চেয়ে বেশী পায়না। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী আয়ের দেশ আমেরিকার কোচ পাচ্ছেন মাত্র তিন লাখ ডলারের কাছাকাছি, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে চাকুরী করা আমাদের বয়েসী অনেক পোলাপানও নাকি আমেরিকায় এর চেয়ে বেশী আয় করে! সর্বনাশ! ডেনিশ কোচও দুই আড়াই লাখের ঘরে পান, তার থেকে নিশ্চয়ই আবার অর্ধেকের বেশী ট্যাক্স কেটে নেয়! অথচ এই দেশের গড় আয় চোখ ধাঁধানো। সাধে তো আর দশ বছরে ধরে বেচারা কোচকে আটকে রাখেনি!
তবে আরো সর্বনাশা অবস্থা হচ্ছে বেচারা নিউজিল্যান্ডের কোচের। নিউজিল্যান্ড সরকার তাঁকে বেতন দিচ্ছে পার্ট-টাইমার হিসেবে, যেহেতু সারাবছর জাতীয় দলের দেখভাল করতে হয়না। আর এ বাবদ তাঁর পারিশ্রমিক নাকি মাত্র পঞ্চাশ হাজার ডলার! সচলায়তনেও নিশ্চয়ই অনেক সদস্য এর বেশী আয় করেন।

বিশ্বকাপ দলের কোচ, তাও আবার উন্নত দেশের, সেই কোচের চেয়েও বেশী কামাই করছি বা অচিরেই করবো -- এই অনুভূতি নিশ্চয়ই বেশ স্বস্তিদায়ক?


মন্তব্য

মুস্তাফিজ এর ছবি

জাপানের কোচের কথা তো বললেন না। ভাবলেশহীন রোবট।

...........................
Every Picture Tells a Story

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ভালো বলছেন হা হা হা ... ওকাদা লোকটা এতই বৈচিত্র্যহীন যে তার সম্পর্কে অনেক ঘেঁটেও কিছু বলার পেলামনা
একটা ব্যাপার মনে পড়লো, ওকাদার পলিসি হচ্ছে ক্যাম্প চলাকালে খেলোয়াড়দের সাথে একত্রে পার্টি বা পান করতে না যাওয়া ... তাই টুর্নামেন্ট থেকে ফিরে এসে জাপানী অধিনায়ক বললো তাড়াতাড়ি ফিরে আসার একটা ভালো দিক হলো কোচের সাথে একত্রে পান করতে যাওয়া যাবে .... জাপানে আবার খাতির-দোস্তি করার উপায় একটাই, একসাথে পান করতে যাওয়া যাকে এরা বলে "নোমি"(মানে পান করা) করতে যাওয়া ... নোমি করতে গিয়ে বন্ধুত্ব করাকে এদেশে বলে "নোমিনিকেশন" চোখ টিপি

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ভাঙ্গা পেন্সিল [অতিথি] এর ছবি

দুই জোড়া বাপ-বেটার বিপরীতে একজোড়া শ্বশুর-জামাই খুঁজে পেয়ে বাকী দলগুলোতে আর কোন শ্বশুর-জামাই পাওয়া যায় কিনা খুঁজে দেখেছি, কিন্তু পাইনি।

নেদারল্যাণ্ডসে আছে

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

তাই নাকি? তাইলে তো জোড়া মিলে গেলো, আর নতুন রোমান্টিক কাহিনীর দরকার হবেনা ... কোচের জামাইটা কে? (না, ব্যাটাকে মারধোর করার ইচ্ছে আমার নাই চোখ টিপি, এমনি কৌতুহল)

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

বেতনের তথ্যগুলি ইন্টারেস্টিং, ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে কোন বড় দলের কোচই মনে হয় মিলিয়নের নিচে পায় না ... সবচে বেশি পেতো হোসে মরিনহো, ইন্টার মিলানে বছরে প্রায় দশ মিলিয়ন; এই বছর রিয়েল মাদ্রিদে যাচ্ছে, কত বেতনে এখনো জানি না ... ম্যাঞ্চেস্টারে ফার্গুসন বছরে পাঁচ মিলিয়নের মত পায় যতদূর জানি ...

তবে কোচ হিসেবে সবচে বড় দাঁও মেরেছে ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী কোচ লুইজ ফিলিপ স্কোলারি ... বছরে ঝাড়া বিশ মিলিয়ন পায়, উজবেকিস্তানের ক্লাব বুনইয়োদকর থেকে দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আপনে তো দেখি ফুটবলের চলন্ত বিশ্বকোষ চোখ টিপি ... ইমপ্রেসড চলুক

মরিনহো শুনছি তেরো মিলিয়ন পাবে!! হে হে .... রোনালদো/কাকার চেয়েও বেশী হো হো হো ... স্কোলারি তো ভালোই দাও মারছে ... কিন্তু উজবেক ক্লাব এত খরচ করে? উজবেক লীগের তো নামও শুনিনি ... আজকে পেপারে দেখলাম সে ব্রাজিলিয়ান কোন এক ক্লাবের সাথে চুক্তি করছে, আবার জাতীয় দলের জন্যও নাকি নেক্সট ফেভারিট
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

উজবেকিস্তানে বলার মত এই একটাই ক্লাব, মালিক সম্ভবত প্রেসিডেন্টের মেয়ে, টাকার কোন সীমা-পরিসীমা নাই ... স্কোলারির আগে কিছুদিন সেখানে কোচ ছিল জিকো, প্লেয়ার হিসাবে এখনও খেলে রিভালদো, উইকি অনুযায়ী সে নাকি দুই বছরে চোদ্দ মিলিয়ন পাচ্ছে ... চিন্তা করেন, ইউরোপে খুব খেলোয়াড়ই বছরে সাত মিলিয়ন পায়, সেখানে রিভালদোর মত বুড়া উজবেকিস্তান থেকে এই পয়সা পাচ্ছে ...

তবে এত খরচ করেও লাভ হচ্ছে না ... নিজের দেশে লীগ তো পুরা একপেশে হয়ে গেসে, এইবার তাই ক্লাবের টার্গেট ছিল এশিয়ান চ্যম্পিয়ন্স লীগ, কিন্তু সাউথ কোরিয়ান টীম পোহাং স্টীলার্সের কাছে হেরে গিয়ে সেই আশা শেষ ... এর পরেই বোধহয় স্কলারিকে বিদায় করে দেয়া হয় ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বাস, পেপারে তো দেক্লাম স্কলারি ২০১২ পর্যন্ত ঐ উজবেকদের মাঝেই থাকবো।সে বলসে এরপরে (১২ সালের পরে) তাকে ব্রাজিলের কোচের পদ দিতে চাইলে সে আগ্রহী...

_________________________________________

সেরিওজা

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমি তো মনে হয় পড়লাম নতুন কোন ব্রাজিলিয়ান দলের কোচ হিসাবে চুক্তি করে ফেলায় জাতীয় দলকে ডিনাই করছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

জিকোর বৈষয়িক বুদ্ধি-জ্ঞান যে ভালো সেইটা আগেই জানতাম... জাপানী জাতীয় দলের কোচ থাকার সময় দেখছি

এখন তো দেখা যায় রিভালদোও কম যায়না! চোখ টিপি

অবশ্য খারাপ কি? সারা দুনিয়াই তো এইরকম

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কৌস্তুভ এর ছবি

উত্তর কোরিয়া তো আমাকেও কোচ করতে পারত, তিনটে ম্যাচ হারার থেকে খারাপ কি আর করতাম? কিছু ডলার তো বাগানো যেত? অবশ্য ওই কোচের মাইনে কত তা বলেননি...

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

উত্তর কোরিয়ার কোচের বেতন সেদেশের অর্থনীতির হিসেবে কম না ... দু'লাখ ডলারের কাছাকাছি ... দেখেন কি করবেন? চোখ টিপি
কোচের চাকুরি পেতে হলে হয়তো কিম জং ইলের নেকনজরে পড়তে পারলেই হবে চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সবই বুঝলাম, শুধু আর্জেন্টিনা এই বিশ্বকাপের সেরা খেলা দেখানোর অংশটা বাদে। খাইছে

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

কেন রে ভাই? এবার সবচেয়ে এ্যাটাকিং ফুটবল কি আর্জেন্টিনাই খেলেনি? জার্মানীর কাছে হারার আগ পর্যন্ত কিন্তু তাদের খেলাই সবচেয়ে আলোচনায় আসছে ... পরিসংখ্যান চেক করিনাই, কিন্তু মনে হচ্ছে গোলে শট, পজেশন, কর্ণার -- এসব দেখলেও দেখা যাবে গড়টা তাদেরই সবচেয়ে ভালো

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নাহ, আর্জেন্টিনা যেটা খেলেছে সেটা মূলত এলোমেলো ফুটবল। দলের বিভিন্ন অংশ একেবারেই সমন্বয়হীন খেলা খেলেছে। অনেক ক্ষেত্রে এলোমেলো কিংবা দুর্বল ডিফেন্সের খেলাকে অ্যাটাকিং বলে ভুল করা অসম্ভব না। স্পেন, চিলি, এবং জার্মানি আগা-গোড়া আক্রমনাত্মক খেলেছে এখন পর্যন্ত। এর বাইরে আমেরিকা, স্লোভাকিয়া, ইত্যাদি ছোট দলগুলোও চেষ্টা করেছে "পজিটিভ" খেলার। বাকি সবাই "ট্যাকটিকাল"-এর দোহাই দিয়ে ডিফেন্সিভ।

আর্জেন্টিনা ভালো খেলেছে নাইজেরিয়ার সাথে খেলার প্রথম ২০ মিনিট, কোরিয়া এবং মেক্সিকোর বিপক্ষের দ্বিতীয়ার্ধগুলো। নাইজেরিয় বেকুবি, রেফারিং-এর ভুলে মেক্সিকোর খেলোয়াড়দের মাথা গরম হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি বিবেচনায় নিলে এগুলো ভিন্ন আলোয় দেখতে হয়।

পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখলে, এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি শট নিয়েছেন আসামোয়া গিয়ান (৩৩) এবং লিওনেল মেসি (৩০)। মাঠের বাস্তবতা বলে যে এর মধ্যে সত্যিকার ভীতিকর/কার্যকর শট খুব কম ছিলো। "কার্যকর" কিছু খেলোয়াড়ের পরিসংখ্যান এখানে আছে।

শটের সংখ্যায় আর্জেন্টিনা এগিয়ে (৯৫), কিন্তু পজেশন ও কার্যকারিতা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন না, এটাই বলছিলাম।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

উঁহু, জার্মানীর কাউন্টার নির্ভর খেলাকে আক্রমণাত্মক বলা যায়না ... স্পেনেরটাকে আক্রমণাত্মক বললে মানা যায়, তবে মাঝমাঠে পাসের অহেতুক ছড়াছড়ি সেটার আক্রমণাত্মক চেহারাকে নষ্ট করেছে ...

পরাজিত দলের পক্ষে "ভালো খেলছে" বলে এ্যাডভোকেসি করা কঠিন, এটা মানি চোখ টিপি, তাও বলি আর্জেন্টিনার শুধু শেষ দিনের খেলাতেই এ্যাটাক এলোমেলো ছিলো (যদিও ফার্স্ট হাফে গুছিয়ে নেবার পর থেকে সেকেন্ড গোল খাওয়া পর্যন্ত তারাই একচেটিয়া খেলেছে)। সেদিনের এলোমেলো হবার কারণ জার্মানীর হোমওয়ার্ক, কিন্তু এর আগের ম্যাচগুলোতে তো আর্জেন্টিনা আক্রমনের জোয়ারে প্রতিপক্ষকে ঘুরে দাঁড়াতেই দেয়নি, বেচারাদের শুধু সামলাতেই হয়েছে ... এমনকি দক্ষিণ কোরিয়াকেও, যারা মূলত আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে .... গ্রুপের প্রত্যেক ম্যাচেই আর্জেন্টিনাকে মনে হয়েছে প্রতিপক্ষের তুলনায় অনেক শক্তিধর (নাইজেরিয়ার সাথে মিসের ছড়াছড়ি ছিলো, কিন্তু আক্রমণের কমতি ছিলোনা) ...

আর ইন্টারেস্টিংলি, এ্যাটাকিং ফুটবলে কার্যকারিতা কমই হবে ... কারণ আপনার দল যখন এ্যাটাকিং মোডে খেলবে প্রতিপক্ষ তখন সাত-আটজনকে নামিয়ে খেলাবে, কীপার অতিরিক্ত এ্যালার্ট ... মেসির প্লেসিং অসাধারণ হবার পরও, গোলে এত ভালো ভালো শট নেবার পরও গোল পায়নি একারণেই ... ডিফেন্ডাররা খুব অল্প জায়গাই খালি রেখেছে মারার জন্য, তারপরও সেটার চমৎকার ব্যবহার করে মারা মেসির শটগুলোর বেলায় কীপাররা ছিলো অতিরিক্ত সতর্ক।

খেয়াল করে দেখুন, জার্মানীর সাথে ম্যাচের আগ পর্যন্ত এমন কোন বিশ্লেষণ দেখা যায়নি যাতে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের সমালোচনা হয়েছে (ডিফেন্সের দুর্বলতা শুরু থেকেই আলোচিত হচ্ছিলো, মানি, এবং সেটার জন্যই তারা হেরেছে)

হেরে গেলে অনেক দোষ হঠাৎ করেই আলোচনায় আনা হয়, এখন যা হচ্ছে, তারওপর চার গোলে হারলে চোখে তো লাগবেই চোখ টিপি ... তবে ঐ খেলায় দুই গোল হবার পর আর কিছু বাকী ছিলোনা

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি ইশতিয়াক রউফের ব্যাখ্যার সাথে একমত।

আমার কাছে মনে হয়েছে এই বিশ্বকাপে একটা দল কোন কোচ ছাড়া এসেছে - সেটা আর্জেন্টিনা। তাদের কোচের অতীত ইতিহাস যাই হোকনা কেন এই বিশ্বকাপে নিজের দলের খেলা চলাকালে তার আচরণ চিয়ার লীডারের মত ছিল। দরকারের সময় খেলার স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করার চেয়ে উনি উনার স্টাইলে অন্য কিছু করেছেন। তাতে বার বার টিভি ক্যামেরা তার দিকে ঘুরেছে আর এদিকে একটু একটু করে দলের বারোটা বেজেছে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

হেরে গেছে এখন বেশী বলা যায়না, তবে ম্যারাডোনার প্রতি আপনার এটা আন্ডাররেটেড বিচার হয়ে গেলো ... আর্জেন্টিনার প্রত্যেকটা এ্যাটাকে মেসি-তেভেজ-হিগুয়াইন-মারিয়ার পজিশনিং বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে ম্যারাডোনা কিরকম দক্ষ প্ল্যানার (অন্ততঃ আক্রমনের ক্ষেত্রে) ... এটা জানা কথা যে ডিফেন্স নিয়ে তার দুর্বলতা ছিলো, এজন্য নাকি মরিনহোর উপদেশও তিনি নিয়েছেন চোখ টিপি
আর দলের খেলোয়াড়দের একীভূত করা, উজ্জীবিত করারতো একটা অসমান্য উদাহরণ তিনি দেখিয়েই গেলেন ... আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হলে এই নাটুকে চিয়ার লিডার ম্যারাডোনাই হয়তো "কিং অভ কোচ" উপাধি পেতেন ....
এটা মানি জার্মানীকে তিনি যেভাবে আমলে নেননি সেটা তাঁর ভুল ছিলো, আরো হোমওয়ার্ক দরকার ছিলো ... তবে এমনও হতে পারে যে হেরে যাওয়াতে এরকম মনে হচ্ছে, হয়তো তাঁরা যে হোমওয়ার্কগুলো করেছিলেন ওগুলো কাজে দেয়নি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অতিথী এর ছবি

গুরু ম্যরাডোনা তো আর্জেন্টিনারে আরো বিপদে ফেলে দিল। এক খেলোয়াড় ম্যারাডনার প্রভাব থেকে ২০০৬ এর আগে ওরা বের হতে পারেনি। ওইবারই ১৯৮৬ এর পরে সবচেয়ে ভালো সুজোগ ছিল। এখন কোচ ম্যারাডোনা। আল্লাহ জানে এর প্রভাব কতদিন থাকে। মনে হয় অনেকদিন থাকবে।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

কোন অসুবিধা নাই
কোচ ম্যারাডোনা তো আর কাপ জেতেনাই চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।