মূর্তালা রামাতের গল্প-১

মূর্তালা রামাত এর ছবি
লিখেছেন মূর্তালা রামাত (তারিখ: রবি, ০১/০২/২০০৯ - ৩:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাঁটাতারের কাক

ক.

সাঁই করে ছুটে এলো রক্তলাল মারুতি গাড়িটা। কলাভবনের পেছনের গেটের সিঁড়িতে বসেছিলো সজীব। গাড়িটা তার সামনেই ঘ্যাচ করে ব্রেক কষলো। খানিক আগে ওখানেই এক রিক্সায়ালা কয়েকদলা থুতু ফেলেছিলো। সজীবের মনে হলো ওই কফমিশ্রিত থুতুর সজোরে থাপ্পড় খেয়েই গাড়িটার ডানলপ চাকা ওমন ঠাস করে থেমে যেতে বাধ্য হলো।

কীরে সাতসকালে ভোদাইয়ের মতো অমন কী ভাবছিস? গাড়ি থেকে নামতে নামতে মৌসুমী জিজ্ঞাসা করে। তার পরনেও গাঢ় লাল রংয়ের পোশাক। জুতা, কানের দুল, হাতের চুড়ি, গলার মালা, চুলের ক্লিপ, ঠোটের রং, গালের মেকাপ- সবই লাল। তাকে দেখে যেকারোরই মনে হতে পারে পৃথিবীর আনাচে কানাচে কোথাও যুদ্ধের ময়দানের পাশের রক্তের নদীতে ডুব দিয়ে সকালের সূর্যটা অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার আকাশসীমার বদলে কলাভবনের গেটে এসে উপস্থিত হয়েছে।
কীরে!!
নাকে ফরাসি সেন্টের কড়া ঘ্রাণ এসে লাগতেই সজীব সম্বিত ফিরে পায়। না , ভাবছিলাম কবে কিনলি?
জামাটা? আর বলিসনা সে এক মজার কাহিনী, সজীবের পাশে বসতে বসতে মৌসুমী বলতে থাকে। পাপা হংকংয়ে যেয়ে এই ড্রেসটা মমের জন্য কিনেছিলো। কিন্তু মম্ যখনই এটা পরে তখনই নাকি পাপার প্রেশার অকারণে হাই হয়ে যায়। শেষে মম ড্রেসটা আমাকে দিয়ে দিয়েছে- মজার না? মৌসুমী দুষ্টুমীর হাসি হাসে। তোর প্রেশার আবার হাই হয়ে যাচ্ছে নাতো! মৌসুমীর কনুইয়ের গুতোয় সজীব নড়েচড়ে বসে।
আরে না। তোকে কী আমি ওই জামার কথা বলছি? আমিতো বলছিলাম ওই গাড়িটার কথা। মৌসুমীর গাড়িটা ততোক্ষণে তার লাল পশ্চাৎদেশে ধূলো মেখে চলে গেছে।
ও গাড়ি! ওটাতো পাপার এক ফ্রেন্ড পাপাকে গিফট করেছে। শুনে সজীব মনে মনে না হেসে পারে না। সরকারি চাকরিজীবী বাবার মেয়ে মৌসুমীদের ক্যান্টনমেন্টের মতো এলাকায় আলিশান ফ্ল্যাট, এসি লাগানো ঘর, গোটাতক গাড়ি, বিলাসবহুল জীবনযাপন এসবের উৎস বুঝতে কারোরই বেগ পেতে হয় না। অথচ যদি বলা যায়- মৌসুমী কাস্টমস অফিসারদের পায়ের নখ পর্যন্ত ঘুষ খায়, তোর বাপ....? কথা শেষ হবার আগেই জবাব পাওয়া যায়, আমার পাপার মতো সৎ লোক হয় না। অফিসের কলিগেরা পর্যন্ত পাপাকে বলে, রহমান সাহেব কাস্টমসে অনেক লোক দেখলাম কিন্তু আপনার মত নিরামিষ....! পাপাতো এজন্য প্রেসিডেন্টের মেডেল পর্যন্ত পেয়েছে। তখন বাধ্য হয়েই বলতে হয়, আরে আমিতো জাস্ট একটু মজা করছিলাম। তোর আব্বু কেমন সেতো তোর সাধারণ বেশভূষা দেখলেই বোঝা যায়। মৌসুমী তখন খুশি হয়, বুঝলি আম্মুও মাঝে মাঝে আফসোস করে বলে তোর বাবাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আমার মেয়ের জামাইও এমন হলেতো মুশকিল! তুই মনে হয় হাসলি?
মৌসুমীর কাছে ধরা পড়ে গিয়ে সজীব কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে সাথেসাথেই নিজেকে সামলে নেয়- না, ভাবছিলাম তোর আঙ্কেলের মতলবটা কী, ছেলেটেলে আছে নাকি?
আরে না, আঙ্কেলতো এখনো বিয়েই করেনি!
তাইলে মনে হয় তোকে দিয়েই সে....সজীব কথা শেষ করতে পারে না, তার আগেই দুম করে একটা কিল এসে ওর পিঠে পড়ে, কুত্তা! সজীব ব্যথায় চোখ মুখ কোঁচকায়। সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ না করে মৌসুমী জিজ্ঞাসা করে, আর সবাই কোথায়? ওপরে?
হ্যা। রিয়া আর রবিন চা খেতে গেছে।
তাহলে আমি একটু ওপর থেকে ঘুরে আসি, তুই বস। মৌসুমী চলে যায়।
তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে সজীব ভাবে একটু আগেই একজন মানুষকে ধাক্কা দেয়া একটা লাল রোল্যান্ডের পেছনটা যেন তাকে নির্লজ্জ উপহাস করছে- বাই বাই! বাই বাই! সজীবের সহ্য হয় না। তার মনে হয় এখুনি সে গিয়ে তার বাবাকে বলে- আব্বা আমার একটা গাড়ি চাই, একদিনের জন্য হলেও আমারে একটা গাড়ি কিনা দেন। মুহূর্তেই সে যেন চলে যায় স্বর্ণপুরের একেবারে পশ্চিম প্রান্তের জং ধরা খয়েরি টিনের ঘরটায়। টেবিলের ওপর হারিকেন জ্বলছে। সেই আলোয় প্রাইমারি স্কুৃলের হেড মাস্টার আনোয়ার মিয়া তার ছেলেকে পড়াচ্ছেন-সৎ পথে চলি, সদা সত্য কথা বলি। ছেলের তার মাথা ভালো, ক্লাসে ফার্স্ট হয়। ছেলেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। বউকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বুজলা আমেনা তোমার না খুব গাড়িতে চড়নের শখ? সজীব তোমার ইচ্ছা পূরণ করবো ইনশাল্লাহ। কি বাপ পারবানা তোমার মারে গাড়িতে চড়াইতে? ছেলের থুতনী উঁচু করে স্বপ্নালু চোখে তিনি জিজ্ঞাসা করেন। হ পারমু, তেল জবজবা চুল ঝাঁকিয়ে ঘুমঘুম চোখে ছোট্ট সজীব জবাব দেয়। তয়লে মন দিয়া পড়ো। সজীব পড়ে, মন দিয়ে লেখাপড়া করে যেইজন বড় হয়ে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই জন...

এই সজীব কী অমন বিড়বিড় করছিস! জাহিদের কথায় সজীব বড় হয়ে ঢাকায় ফিরে আসে। কিছু না!
শাকিলার বোনের বিয়েতে যাচ্ছিস? জাহিদ জিজ্ঞেস করে।
না। সজীব এদিক ওদিক মাথা নাড়ে।
ক্যান তোকে কার্ড দেয়নি? জাহিদ অবাক হয়।
কই এখনোতো পেলাম না! কবে বিয়ে?
পরশুদিন! রবিন, রিয়া, মৌসুমী, নিশাত, বিপাশা এরা সবাইতো যাচ্ছে! জাহিদ আরো অবাক হয়।
তোকে দাওয়াত দিছে? সজীব জাহিদকে উল্টো প্রশ্ন ছোড়ে।
আরে আমারে দাওয়াত দিবো ক্যান? আমি কী ওগোর সাথে ঘুরি। ওইসব ভাবওয়ালা পোলাপানরে আমি দুই চোক্ষে দেখতে পারি না। তুই ওই সার্কেলে মিশস দেইখা তোরে জিগাইলাম। এখন দেখি তুইও ইনভাইটেড না। জাহিদ কিছুটা বিরক্ত হয়।
সজীব জাহিদের পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে ঠাট্টার সুরে বলে, ঠাণ্ডা হও দোস্ত ঠাণ্ডা হও। তারপর ঈষৎ বিষণœ কণ্ঠে সে বিবর্ণ হয়ে যেন নিজেকেই শোনায়, আমি কী আর গাড়িওয়ালার ছেলে যে দাওয়াত পাবো!
ঠিক কইছস। জাহিদ ভরা বর্ষার নদীর মতো ফুঁসে ওঠে। গাড়ি থাকলে তোরে ঠিকই দাওয়াত দিতো। সেনাকুঞ্জে বিয়ে। সিএনজিতে চইড়া গেস্ট আইলে প্রেস্টিজ পাংচার হইয়া যাইবো না! জাহিদের গলায় যেনো ফুটন্ত পানির মতো চরম শ্লেষ টগবগ টগবগ করে ফোটে।
বাদ দে।চল ক্লাসে যাই। জাহিদের কাঁধে ভর দিয়ে সজীব উঠে দাঁড়ায়। তার মাথার ভেতর একটা কালো ভোমরার মতো ভনভন করে ঘুরতে থাকে মৌসুমীর লাল মারুতিটা।

খ.

সাত নম্বর বাসটা প্যারালাইজড রুগীর মতো হেঁচড়ে হেঁচড়ে চলছে। পুরো গাড়ির ভেতর মানুষ নয় যেনো ফার্মের মুরগী ঠেসেঠেসে ভরা হয়েছে। তারপরও হেলপারের গলায় , দেহি ভাই, একটু চাইপ্যা খাড়ান...পিজেতো পুরা বাস খালি...মহিলা সিটডা ছাড়েন....। সজীবের ডান পাশের সিটে বসা টুপি পরা লোকটা আর সহ্য করতে পারে না- ওই হালার পো, গাড়ি টানস না কেন? তার সাথে আরো অনেক কণ্ঠ শোনা যায়, ওই শুয়োরের বাচ্চা ড্রাইবার....ওই মাঙ্গীর পো....। দুই একজন জানালা গলিয়ে হাত দিয়ে বাসের গায়ে কষে তিন চারটা থাবড়া লাগায়। বাসের গতি একটু বাড়তে না বাড়তেই আবার থেমে যায়। কেউ একজন চেঁচায়, ওই চুতমারানীর পোলা কী অইল আবার? জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে বাইরে দেখে কেউ একজন জানায় , সারজেনটে ধরছে। নানারকম খিস্তি খেউড়ে জর্জরিত হতে হতে বাসটা দ্রুত খালি হয়ে যায়। এ আর তেমন কিছু না। রাতে শ্যামলী থেকে টিউশনী করে ফেরার পথে প্রায়ই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়; সজীব নেমে হাঁটা ধরে। সাইন্স ল্যাব পার হতেই রিক্সা পাওয়া যায়। মধ্যবয়সী দাড়িয়ালা রিক্সায়ালা আস্তে আস্তে প্যাডেল মারতে মারতে বলে, বুঝলেন ভাইজান দেশটা আল্লায় চালাইতেছে!
কেন?
নাইলে আমাগো মতন এই গরিবডি বাঁইচা আছে কেমনে?
কেন আপনাগো আবার কী হইছে?
কী হয় নাই তাই কন ভাই। আইজকাওতো শাহাবাগের তন আমার রিক্সাডা পুলিশে আডকাইছিলো। কয় লাইসেন্স নাই। হেরপর ৫০০ ট্যাহা দিয়া ছুটাইছি। তয় দেহেন ভাই এইসব বড়লুকের গাড়িডিরেতো ধরে না। জ্যামের মধ্যে আটকাপড়া রং রেংয়ের গাড়িগুলো দেখিয়ে রিক্সায়ালা বলতে থাকে, হেগোর সগলেরই কি লইসেন্স আছে? সজীব চুপচাপ শুনে যায়। তার চোখের সামনে দিয়ে ছোটবড় অনেক গাড়ি বিদ্বেষের হেডলাইট জ্বালিয়ে চলে যায় আর সুর করে বলতে থাকে-
মাস্টারের ঘর টিনের বাড়ি
পোলার জন্য ঠেলাগাড়ি
...রিক্সায়ালা বলেই চলেছে-গরিবের হোগাডি মাইরা হেরা বড়লুক হইছে, গাড়ি কিনছে...পিছন থেকে একটা গাড়ির হর্ন শোনা যায়। রিক্সায়ালা খেঁকিয়ে ওঠে, মাদারচোত, খানকির পোলা চুপ কর। গাড়িটা একসময় সাঁ করে সজীবের রিক্সাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ড্রাইভারের কটমট চোখকে রিক্সায়ালা তোয়াক্কা করে না। তার গলা থেকে বেরিয়ে আসা একদলা কফ গাড়ির পেছনের ডালায় গিয়ে পড়ে। রিক্সায়ালা ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি নিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে সজীবের দিকে তাকায়, ভাইজান এক্কেরে সই হইছে না? সজীব মাথা ঝাঁকায়।

গ.

মাঝরাত। রুমের সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। সজীব টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে টেবিলে বসে আছে। কাল একটা অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। কিন্তু কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। সেই বারোটা থেকে বসেও এপর্যন্ত একপাতার বেশি সে লিখতে পারেনি। সজীব লেখাগুলো আবার পড়ে। নিজের কাছেই অর্থহীন মনে হয়। দূর ছাই বলে সে মাথা নাড়ে। আজ হবে না, চোখের পাতাও কেমন ভার হয়ে আসছে। ঘুমিয়ে পড়াই ভালো, সজীব মনেমনে বলে। কাগজপত্রগুলো গোছাতে গোছাতে হঠাৎ সে দেখে টেবিলের উপরের কিনার ঘেষে একদল কালো পিঁপড়া ব্যস্ত হয়ে সার বেধে হেঁটে যাচ্ছে। নিশ্চয় কোনো লোভনীয় খাবারের সন্ধান পেয়েছে। পিঁপড়ার লাইনটাকে অনুসরণ করতেই সজীব তেলাপোকাটাকে দেখতে পায়। চিৎ হয়ে একদল পিঁপড়ার স্তুপের নিচে অসহায়ভাবে পড়ে আছে। পিঁপড়েগুলোর কেই তার পা, কেউ শুড়, কেউ পাখা ধরে টানছে। যেনো একদল ভুখা নাঙ্গা লোক মনের সাধ মিটিয়ে তাদের রক্ত চুষে খাওয়া মনিবের অহংকার বিএমডব্লিউ গাড়িটিকে টুকরো টুকরো করে নায্য পাওনা বুঝে নিচ্ছে। নিজের অজান্তেই সজীব সেই পিঁপড়ের দলে ভিড়ে যায়, হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে নীলক্ষেতে। সেখানে প্রচণ্ড গণ্ডগোল। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র প্রাইভেট কারের নিচে চাপা পড়েছে। সজীব এগিয়ে যায়। গাড়ি ঘিরে অনেক লোকের জটলা। কেউ একজন বললো, আগুন লাগাইয়া দে। কথা শেস হবার আগেই জ্বলে ওঠে আগুন। গাড়িটার সাথে সাথে দাউদাউ আগুন কালবৈশাখীর বাতাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে সমবেত ছাত্রজনতার ভেতর। কারো চিৎকার শোনা যায় , ভাঙ্গ গাড়ি। নিমেষেই রাস্তার গতিময় গাড়িগুলো ছাতু হয়ে যেতে থাকে। সজীব সেই রিক্সায়ালাকে দেখে, জাহিদকেও দেখে একটা লাঠি হাতে দৌঁড়ে যাচ্ছে। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতেই সে বলে, দোস্ত খাড়ায় ক্যান? আসো, তুমিতো আর গাড়িওয়ালার পুলা না! সজীবের মাথার ভেতর ঘুমিয়ে থাকা অগ্নেয়গিরি জেগে ওঠে। চল, জাহিদের পেছন পেছন সজীব দৌঁড়ায়। নিউমার্কেটের পাশে সার বেধে পার্ক করা গাড়ি। নীল, হলুদ, সাদা দাম্ভিক গাড়িগুলোর তথাকথিত সম্মান, মর্যাদা, প্রতিপত্তি অচিরেই বাস্তিল দূর্গের মতো গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। হঠাৎ সজীবের চোখ যায় লাল একটা মারুতির দিকে। ঝকঝকে নতুন মারতি, মৗসুমীর মারুতি...কাস্টমস অফিসার বাপের ঘুষের মারুতি সজীবের আঘাতে আঘাতে কাপুরুষের মতো যেনতেনভাবে দুমড়েমুচড়ে কুঁকড়ে যেতে লাগলো; যেন একটা অসহায় তেলাপোকা.....সজীব হাসতে থাকে, হাঃ হাঃ হাঃ...
কী হলো সজীব ভাই হাসেন কেনো! ও সজীব ভাই, টেবিলে বসেই দেখি ঘুমায় পড়ছেন, সজীব ভাই?!! বেডমেটের ধাক্কায় সজীব অবাক হয়ে চোখ মেলে তাকায়। চড়–ই পাখির কণ্ঠে সরগরম কড়ই গাছের সবুজ পাতার ফাঁক গলে জানালা দিয়ে উঁকি দেয়া রাতজাগা লাল সূর্যের সাথে সহসাই তার চোখাচোখি হয়।

ঘ.

কলাভবনের পেছনের গেটের সিঁড়িতে সজীব ঘুমঘুম চোখে বসে আছে। কালো মার্সিডিজ বেঞ্চ গাড়িটা থেকে সম্পূর্ন শবযাত্রীর বেশে মৌসুমী নামে, গুড মর্নিং সজীব।
সজীব অবজ্ঞাভরে একদলা থুতু গাড়িটার সামনে ছুঁড়ে ফেলে বলে, মর্নিং।

murtala31@gmail.com


মন্তব্য

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

সুন্দর গল্প। আপনার লেখা পড়তে পড়তে কেন যেন জহির রায়হানের কথা মনে পড়ে গেল। তাঁর লেখার ধরনের সঙ্গে আপনার লেখার ধরনের কোথায় যেন একটু সূক্ষ্ম মিল আছে। আমারই মতামত একেবারে।
রিক্সাঅলা বা সজীবের আক্রোশের ব্যাপারটা বুঝতে পারছি, স্টুপিড ধনীদের সব সম্পদ একদিন গরিবরা কেড়ে নেবে, এরকম স্বপ্ন একটা বয়সে নিয়মিত দেখতাম। তবে আক্রোশটা অন্য কিছুর ওপর ঝাড়লে বোধহয় আক্রোশটার আরো ভালো প্রয়োগ হয়। একটা কারণ, গাড়ি এখন আর স্টুপিড ধনীদের জিনিস না, অনেক মধ্যবিত্তরাও ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে গাড়ি কেনেন, সেটা তাদের কষ্টের অর্জনের টাকা দিয়েই। আর যারা গাড়ি ভাঙ্গতে যায়, তাদের মধ্যে সজীবদের সংখ্যা বলতে গেলে নেই। অতি উত্সাহী একটা শ্রেণী থাকে, যাদের কাজই হচ্ছে, যেকোনো ইসু্যতে গাড়ি বা মার্কেটের দোকান ভাঙ্গাভাঙ্গি করা।
আপনি কষ্ট পাবেন না। আমি এই ভাঙ্গাভাঙ্গির কালচারকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখি। যারা ভাঙ্গে তাদেরকেও। আমার দেখামতে কোনো সজীব তাদের মধ্যে কখনো ছিল না, আপনার গল্পেও সে অংশ নেয় নি, স্বপ্ন দেখেছে মাত্র। কিন্তু যারা ভাঙ্গছে, তাদের প্রতি সিমপ্যাথি তৈরির প্রেরণা আছে এই গল্পটার ভেতরে, যেটা হয়ত আপনা থেকেই তৈরি হয়েছে লেখকের দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে... সেটা একেবারেই ভালো লাগে নি।
ভালো থাকুন। অপেক্ষায় আছি পরের গল্পের। দারুণ সিরিজ হবে নিশ্চয় একটা।
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মূর্তালা রামাত এর ছবি

আপনার বড় মন্তব্যের পেয়ে ভালো লাগলো। আপনার কথাগুলো নিয়ে ভাবছি। কবিতা লেখার ব্যাপারে আমি বেশ অভিজ্ঞ হলেও, গল্পের ক্ষেত্রে একেবারেই নভিশ। আশা করছি ধীরে ধীরে গল্প লেখার পুরো প্রক্রিয়াটি আমার আয়ত্ত হবে। এবং এক্ষেত্রে আপনার মন্তব্যটি দিকনির্দেশনায় ভালো ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখছি। ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আরে, আপনার গদ্য তো চমত্কার! গল্প বলার ভঙ্গিও দারুণ! আমি শুধু গল্পটির মূলকথা কী, সেটা নিয়েই আমার একান্ত মতামত বলছিলাম... গাড়ি ভাঙ্গা ব্যাপারটা পছন্দ হয় নি, কিন্তু গল্প বলার ভঙ্গিটা চমত্কার! আমার মন্তব্যে কাজ নেই, আপনার যেভাবে ভালো লাগে, সেভাবেই নিজের মতো করে লিখুন!
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মূর্তালা রামাত এর ছবি

উৎসাহজাগানিয়া মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

মূর্তালা রামাত

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- গাড়ি ভাঙলে মৌসুমীরে পাওয়া সম্ভব না। হিরোইক এ্যাকশনে তার গাড়িকে জাহিদের হাত থেকে বাঁচাতে পারলেই তবে কপালে সেই মৌসুম আসা সম্ভব। তাই আসুন ভাঙচুর নয় বরং মেতে উঠি রক্ষণের খেলায়! হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মূর্তালা রামাত এর ছবি

হাঃ হাঃ হাঃ...

মূর্তালা রামাত

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বেশ, চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আরো লিখুন, বেশি বেশি লিখুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।