মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার

নাদির জুনাইদ এর ছবি
লিখেছেন নাদির জুনাইদ (তারিখ: রবি, ০২/০৭/২০১৭ - ১২:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিশ্বে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় কয়েক হাজার চলচ্চিত্র উৎসব। কিন্তু সব উৎসবই সমান মর্যাদাপূর্ণ নয়। অনেক উৎসবই অত্যন্ত মামুলি এবং সাদামাটা। বিশ্বে যেমন বহু বিশ্ববিদ্যালয় আছে, কিন্তু অল্পসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ই সুবিখ্যাত। এই ধরনের সুপ্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনও সহজ নয়। একইভাবে অজস্র চলচ্চিত্র উৎসবের মাঝে কেবল অল্প কয়েকটি উৎসবের সম্মানজনক আনুষ্ঠানিক পুরস্কার অর্জন করাকেই বিশ্বের চিন্তাশীল চলচ্চিত্রকারদের কাজের গৌরবজনক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই উৎসবসমূহে কখনো ফেস্টিভ্যাল পুরস্কারের পাশাপাশি মূল উৎসবের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন অন্য কয়েকটি পুরস্কারও থাকে। তবে এই পুরস্কারসমূহ অবশ্যই ফেস্টিভ্যালের প্রধান পুরস্কারগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিভিন্ন মহাদেশের খ্যাতিমান এবং নবীন চলচ্চিত্রকাররা তাদের সুনির্মিত, চিন্তাঋদ্ধ চলচ্চিত্র নিয়ে জগদ্বিখ্যাত বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারসমূহের জন্যই প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন। বিশ্বের বিভিন্ন বরেণ্য চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক, সমালোচক, এবং চলচ্চিত্রকারদের সমন্বয়ে তৈরি জুরি বোর্ড চুলচেরা বিশ্লেষণের পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কোন ছবি অর্জন করবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো চলচ্চিত্র উৎসবের বিভিন্ন নামীদামি পুরস্কার। এই বিচারকমন্ডলীর প্রধান থাকেন একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব।

বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এবং নামকরা চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কান, বার্লিন, ভেনিস, টোরন্টো, লোকার্ণো, কারলভি ভ্যারি, লন্ডন, মানহাইম-হাইডেলবার্গ, মেলবোর্ন, সানড্যান্স, মস্কো, শিকাগো, এডিনবরা, সান ফ্রানসিসকো, হংকং, সাংহাই, টোকিও, সিডনি, মন্ট্রিয়াল প্রভৃতি চলচ্চিত্র উৎসব। এই উৎসবগুলোর মধ্যেও আবার সবচেয়ে নামী আর বিখ্যাত হলো কান, বার্লিন আর ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব। কখনো এই তিনটি উৎসবকে ‘বিগ থ্রি’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। কান চলচ্চিত্র উৎসব প্রতি বছর ফ্রান্সের কান শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হলো সেরা চলচ্চিত্রের জন্য পাম দ’অর অথবা গোল্ডেন পাম পুরস্কার। ১৯৫৬ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে এই পুরস্কারের জন্য সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী (১৯৫৫) মনোনয়ন পেলেও পুরস্কারটি অর্জন করতে পারেনি। সেই বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার লাভ করে জ্যাক কসতু আর লুই মাল পরিচালিত ফরাসি তথ্যচিত্র দ্য সাইলেন্ট ওয়ার্লড (১৯৫৬) যেখানে দেখানো হয়েছিল সমুদ্রের নীচের জগৎ। এটিই ছিল প্রথম তথ্যচিত্র যা কান উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার অর্জন করে। এর ৪৮ বছর পর ২০০৪ সালে আবার আরেকটি তথ্যচিত্র, মাইকেল মুরের ফারেনহাইট ৯/১১, কান উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন পাম পুরস্কার পায়। ১৯৫৬ সালে পথের পাঁচালী কান উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার না পেলেও এই বিখ্যাত চলচ্চিত্রটিকে উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সাধারণ মানুষের জীবনের বাস্তবসম্মত আর মর্মস্পর্শী উপস্থাপনের জন্য সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি কান চলচ্চিত্র উৎসবে অর্জন করে ‘মানবিক দলিল পুরস্কার।’ বিশ্ববিখ্যাত অনেক চলচ্চিত্র কান উৎসবে গোল্ডেন পাম পুরস্কার পেয়েছে। যেমন - মিখাইল কালাতোজভের দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং, মার্সেল কামুর ব্ল্যাক অর্ফিউস, ফেদেরিকো ফেলিনির লা ডলসে ভিটা, মার্টিন স্করসেসির ট্যাক্সি ড্রাইভার, আকিরা কুরোশাওয়ার কাগেমুশা, আন্দজে ভাইদার ম্যান অফ আয়রন, স্টিভেন সোডারবার্গের সেক্স, লাইজ অ্যান্ড ভিডিওটেপ, জেন ক্যামপিওনের দ্য পিয়ানো, কুয়েনটিন টারানটিনোর পাল্প ফিকশন, আব্বাস কিয়ারোস্তামির টেস্ট অফ চেরি, রোমান পোলানস্কির দ্য পিয়ানিস্ট প্রভৃতি।

মৃণাল সেনের একদিন প্রতিদিন (১৯৭৯), খারিজ (১৯৮২) আর জেনেসিস (১৯৮৬) কান চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন পামের জন্য মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্তভাবে পুরস্কারটি অর্জন করতে পারেনি। তবে খারিজ (১৯৮২) কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল। এই উৎসবে সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী আর সেরা চিত্রনাট্যের জন্যও পুরস্কার দেয়া হয়। পাশাপাশি স্বতন্ত্র কয়েকটি সংগঠন পৃথকভাবে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার দিয়ে থাকে। এমন একটি সংগঠন হলো বিশ্বের পেশাদার চলচ্চিত্র সমালোচক আর চলচ্চিত্র সাংবাদিকদের ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফিল্ম ক্রিটিকস যা সংক্ষেপে ‘ফিপ্রেসকি’ নামে পরিচিত। তাদের দেয়া পুরস্কার হলো ফিপ্রেসকি পুরস্কার এবং কান ছাড়া ভেনিস, বার্লিন, টোরন্টো প্রভৃতি চলচ্চিত্র উৎসবেও এই পুরস্কারটি দেয়া হয়। ২০০২ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে তারেক মাসুদের মাটির ময়না (২০০২) অর্জন করেছিল ফিপ্রেসকি পুরস্কার। যদিও এই পুরস্কার কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল বা আনুষ্ঠানিক কোনো পুরস্কার নয় তবুও পুরস্কারটি গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন বিশ্ববরেণ্য পরিচালক যেমন সত্যজিৎ রায়, জঁ-ল্যুক গদার, রেইনার ভেরনার ফাসবিন্ডার, আন্দ্রে তারকোভস্কি, রোমান পোলানস্কি, পেদ্রো আলমোদোভার, উডি অ্যালেন, অং কার ওয়াই, আব্বাস কিয়ারোস্তামি, জাফর পানাহি, থিওডরস অ্যাঞ্জেলোপুলস, কিম কি দুক প্রমুখ তাঁদের ছবির জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত মাটির ময়না-ই বাংলাদেশের একমাত্র চলচ্চিত্র যা বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর একটি থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব প্রতি বছর জার্মানির বার্লিন শহরে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫১ সালে পশ্চিম বার্লিনে এই চলচ্চিত্র উৎসব প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। স্যার লরেন্স অলিভিয়ের আর জোয়ান ফনটেইন অভিনীত আলফ্রেড হিচককের বিখ্যাত ছবি রেবেকা (১৯৪০) দেখানোর মাধ্যমে প্রথম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছিল। এই উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার হলো সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন বেয়ার বা স্বর্ণ ভালুক। পরিচালনা আর অভিনয়ে সাফল্যের জন্য দেয়া হয় সিলভার বেয়ার পুরস্কার। সত্যজিৎ রায়ের মহানগর (১৯৬৩), চারুলতা (১৯৬৪) আর নায়ক (১৯৬৬) বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বেয়ারের জন্য মনোনয়ন পায়। কিন্তু একটি ছবিও চূড়ান্তভাবে এই উৎসবে সেরা ছবির জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার পায়নি। মহানগর আর চারুলতা-র জন্য সত্যজিৎ রায় পান সেরা পরিচালকের সিলভার বেয়ার পুরস্কার আর নায়ক-এর জন্য পান স্পেশাল রিকগনিশন আর ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড। অবশেষে ১৯৪৩ সালে বাংলায় মানুষ-সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা সত্যজিৎ রায় তুলে ধরেছিলেন যে ছবিতে সেই অশনি সংকেত (১৯৭৩) বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিবেচিত হয়ে গোল্ডেন বেয়ার পুরস্কার অর্জন করে। এই ছবির দুই মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর বাংলাদেশের অভিনেত্রী ববিতা। মৃণাল সেনের ছবি আকালের সন্ধানে (১৯৮০) ছিল চলচ্চিত্র ভাষার দিক দিয়ে উদ্ভাবনী এবং এই ছবিটিও ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের কাহিনি বর্ণনা করেছিল। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে মৃণাল সেন এই ছবির জন্য সিলভার বেয়ার পান। আর তাঁর অপর ছবি কোরাস (১৯৭৪) এই উৎসবে পেয়েছিল ফিপ্রেসকি পুরস্কার। ইংমার বার্গম্যানের ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ, মাইকেলঅ্যাঞ্জেলো আনতোনিওনির লা নত্তে, জঁ-ল্যুক গদারের আলফাভিল, রোমান পোলানস্কির কুল-দো-সাক, রেইনার ভেরনার ফাসবিন্ডারের ভেরোনিকা ভস, ফাতিহ আকিনের হেড অন, জাফর পানাহির ট্যাক্সি প্রভৃতি বিখ্যাত ছবি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের স্বীকৃতি পেয়ে গোল্ডেন বেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছিল।

ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব পৃথিবীর প্রাচীনতম চলচ্চিত্র উৎসব যা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৩২ সালে। প্রতি বছর ইটালির ভেনিস শহরে অনুষ্ঠিত এই চলচ্চিত্র উৎসব অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসবের প্রধান পুরস্কার হলো সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন লায়ন বা স্বর্ণ সিংহ পুরস্কার। দ্বিতীয় পুরস্কার হলো সেরা পরিচালকের জন্য সিলভার লায়ন পুরস্কার। এছাড়াও আছে গ্র্যান্ড জুরি পুরস্কার। ১৯৫৭ সালে অনুষ্ঠিত ১৮তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায়ের দ্বিতীয় ছবি অপরাজিত (১৯৫৬) আকিরা কুরোশাওয়া, নিকোলাস রে, ফ্রেড জিনেম্যান, লুচিনো ভিসকন্তি, আঁদ্রে কায়াত প্রমুখ বিখ্যাত পরিচালকের ছবির সাথে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং উৎসবের প্রধান পুরস্কার গোল্ডেন লায়ন অর্জন করে। বিচারকমন্ডলীর প্রধান ছিলেন বিখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্রকার রেনে ক্লেয়ার। অপরাজিত এই উৎসবে সিনেমা নুওভো আর ফিপ্রেসকি অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেছিল। পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায়ের সীমাবদ্ধ (১৯৭২) আর তাঁর শেষ ছবি আগন্তুক (১৯৯১) ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ফিপ্রেসকি পুরস্কার পেয়েছিল। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার গোল্ডেন লায়ন অর্জন করা চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে আছে আকিরা কুরোশাওয়ার রশোমন, আলা রেনের লাস্ট ইয়ার ইন মারিয়েনবাদ, মাইকেলঅ্যাঞ্জেলো আনতোনিওনির রেড ডেসার্ট, জিল্লো পন্টেকর্ভোর দ্য ব্যাটল অফ আলজিয়ার্স, লুই বুনুয়েলের বেল দো জ্যুর, জঁ-ল্যুক গদারের ফার্স্ট নেম: কারমেন, ঝ্যাং ইমুর নট ওয়ান লেস, জাফর পানাহির দ্য সার্কল, মিরা নায়ারের মনসুন ওয়েডিং সহ বিভিন্ন দেশের আরো অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র। ভেনিস উৎসবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের গৃহযুদ্ধ (১৯৮২) আর উত্তরা (২০০০) গোল্ডেন লায়নের জন্য মনোনয়ন পেলেও তা অর্জন করতে পারেনি। তবে উত্তরা-র জন্য তিনি পান সিলভার লায়ন পুরস্কার আর গৃহযুদ্ধ পায় ফিপ্রেসকি অ্যাওয়ার্ড।

১৯৮৪ সালে মৃণাল সেনের সুনির্মিত ছবি খন্ডহর (১৯৮৩) শিকাগো চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা পুরস্কার গোল্ড হুগো অর্জন করেছিল। আর মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা পুরস্কার গোল্ডেন সেন্ট জর্জের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল তাঁর কোরাস, মৃগয়া (১৯৭৬) আর পরশুরাম (১৯৭৮)। মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা পুরস্কারটি মৃণালের কোনো ছবি অর্জন করতে না পারলেও কোরাস আর পরশুরাম এই উৎসবের দ্বিতীয় সেরা পুরস্কার সিলভার প্রাইজ অর্জন করেছিল। ইউরোপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব কারলভি ভ্যারিতে মৃণাল সেনের ছবি ওকা উরি কথা (১৯৭৭) পেয়েছিল স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড। মৃণাল সেনের রাজনৈতিক ছবি ইন্টারভিউ (১৯৭০)-এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা রণজিৎ মল্লিক কারলভি ভ্যারি উৎসবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। কারলভি ভ্যারি পুরস্কার পেয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের কলকাতা-ত্রয়ীর শেষ ছবি জন অরণ্য (১৯৭৫)। সুইটজারল্যান্ডের লোকার্ণো শহরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় মর্যাদাপূর্ণ লোকার্ণো চলচ্চিত্র উৎসব। সত্যজিৎ রায়ের তথ্যচিত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯৬১) এই উৎসবে সেরা শর্ট ফিল্মের পুরস্কার পেয়েছিল। লোকার্ণো চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান পুরস্কার হলো সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন লেপার্ড বা স্বর্ণ চিতা পুরস্কার। এই পুরস্কার অর্জন করেছে এমন কয়েকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র হলো রেনে ক্লেয়ারের অ্যান্ড দেন দেয়ার ওয়্যার নান, রবার্টো রসেলিনির জার্মানি ইয়ার জিরো, গ্লবার রোশার তেররা এম ত্রানযি, রাউল রুইজের থ্রি স্যাড টাইগারস, মেড হন্ডোর সোলেই ও, ক্রিস্তফ যানুসির দি ইল্যুমিনেশন, ভারতীয় চলচ্চিত্রকার রবীন্দ্র ধর্মরাজের চক্র, জিম জারমুশের স্ট্রেঞ্জার দ্যান প্যারাডাইস, জাফর পানাহির দ্য মিরর, সাবিহা সুমারের খামোশ পানি প্রভৃতি।

ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের সহযোগিতায় যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় বিএফআই লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এই উৎসবে সবচেয়ে মৌলিক এবং উদ্ভাবনী চলচ্চিত্রের জন্য দেয়া হয় দ্য সাদারল্যান্ড ট্রফি। আর ২০০৯ সাল থেকে এই পুরস্কারের পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার নামে আরেকটি পুরস্কার। বিশ্ববিখ্যাত পরিচালকরা সাদারল্যান্ড ট্রফি পুরস্কার পেয়েছেন। সত্যজিৎ রায়ের অপু-ত্রয়ীর শেষ ছবি অপুর সংসার (১৯৫৯) অর্জন করেছিল এই পুরস্কার। ইয়াসুজিরো ওজুর টোকিও স্টোরি, জঁ-ল্যুক গদারের পিয়েরো লো ফু, বার্নার্দো বের্তোলুচ্চির দ্য কনফরমিস্ট, মাইকেলঅ্যাঞ্জেলো আনতোনিওনির লা আভেনচুরা, জ্যাক রিভেতের প্যারিস বিলংস টু আস, রবার্ট ব্রেসোর ফোর নাইটস অফ আ ড্রিমার, অকটাভিও গেটিনো আর ফার্নান্দো সোলানাসের দ্য আওয়ার অফ দ্য ফার্নেসেস, নাগিসা ওশিমার ইন দ্য রিল্ম অফ দ্য সেনসেস, আদুর গোপালকৃষ্ণানের এলিপপাথায়াম, সামিরা মাখমালবাফের দি অ্যাপল প্রভৃতি বিখ্যাত চলচ্চিত্র সম্মানজনক সাদারল্যান্ড ট্রফি অর্জন করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ্-র পার্ক সিটিতে প্রতি বছর মার্কিনী এবং অন্যান্য দেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবির জন্য অনুষ্ঠিত হয় সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। বিশ্বের স্বাধীন ধারার ছবির জন্য এটিই সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব। কুয়েনটিন টারানটিনো, জিম জারমুশ, রবার্ট রড্রিগুয়েজ, কেভিন স্মিথ, স্টিভেন সোডারবার্গ প্রমুখ মার্কিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবির বিখ্যাত পরিচালকরা তাদের কাজ নিয়ে বহু দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই। নবীন চলচ্চিত্রকারদের স্বল্প বাজেটের স্বাধীন ধারার ছবির জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব হলো স্ল্যামড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এটিও পার্ক সিটিতেই প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়।

ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব হলো মানহাইম-হাইডেলবার্গ উৎসব। জার্মানিতে এই দুই শহরের উদ্যোগে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় এই চলচ্চিত্র উৎসব যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নতুন পরিচালকদের আর্ট সিনেমা প্রদর্শিত হয়। সেই দিক দিয়ে এই চলচ্চিত্র উৎসবটির একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। চলচ্চিত্রের নয়া-বাস্তববাদী নান্দনিকতা ব্যবহার করে নির্মিত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আর্ট বা শৈল্পিক ছবি মসিহ্‌উদ্দিন শাকের আর শেখ নিয়ামত আলীর সূর্য দীঘল বাড়ী (১৯৭৯) এই উৎসবে ১৯৮০ সালে একটি পুরস্কার অর্জন করেছিল।

এশিয়ায় অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যে টোকিও, সাংহাই, হংকং প্রভৃতি চলচ্চিত্র উৎসব মর্যাদাপূর্ণ। টোকিও উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার হলো টোকিও সাকুরা গ্র্যান্ড প্রাইজ। আর সাংহাই উৎসবে সেরা ফিচার ফিল্মকে দেয়া হয় উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার গোল্ডেন গবলেট অ্যাওয়ার্ড। ভারতে অনুষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র উৎসব হলো প্রতি বছর গোয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়া, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ কেরালা প্রভৃতি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার আবু সাইয়ীদের নিরন্তর (২০০৬) এই দুটি উৎসবেই সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করেছিল। আর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার গোলাম রাব্বানী বিপ্লব নির্মিত ছবি স্বপ্নডানায় (২০০৭) ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়ার সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছিল।

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাশালী চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর সর্বোচ্চ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এখনো কোনো সাফল্য নেই। সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসবসমূহে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ কিংবা সুযোগ পাওয়া সহজ নয়। অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে সেখানে প্রতিটি ছবিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় সারা বিশ্বের সেরা পরিচালকদের বিভিন্ন সুনির্মিত চলচ্চিত্রের সাথে। তারপর খ্যাতিমান চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে তৈরি বিচারকমন্ডলী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন কোন ছবিটি অর্জন করবে সুবিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা পুরস্কার। ফলে কম বিখ্যাত কিংবা একেবারেই অপরিচিত চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করা কিংবা মূল উৎসবের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন অগুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার প্রাপ্তি আর আন্তর্জাতিক পরিসরে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করা এবং সেই উৎসবের প্রধান পুরস্কারসমূহের কোনো একটি অর্জন করা অবশ্যই এক কথা নয়। আমরা আশা করতেই পারি আগামী দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র কান, বার্লিন, ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের মতো বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবের বিভিন্ন সেরা পুরস্কার অর্জন করবে। তবে এই আশা সত্যি হবে তখনই যদি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বক্তব্য এবং নির্মাণশৈলীর মান বৃদ্ধি পায়। কেবল ব্যবসায়িক সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য দর্শককে আনন্দ দেয়ার উপকরণ যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে গতানুগতিক চলচ্চিত্র ভাষার ছবি তৈরি করলে তা হয়তো নিজ দেশে আর্থিক লাভ অর্জন করবে। কিন্তু এই ধরনের বিনোদন প্রাধান্য দেয়া ছবির মাধ্যমে বিশ্ব চলচ্চিত্রের অঙ্গনে বাংলাদেশের ছবি মর্যাদা এবং গুরুত্ব পাবে না। আমাদের চলচ্চিত্রকাররা, আমাদের দর্শক, এবং রাষ্ট্র যদি নান্দনিক দিক দিয়ে আকর্ষণীয় এবং বক্তব্যের দিক দিয়ে গভীর চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ তা অনুধাবন করতে পারে তাহলেই আমাদের চলচ্চিত্রের মঙ্গল। তখন বিশ্ব চলচ্চিত্রের মর্যাদাপূর্ণ পরিসরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জনও অসম্ভব হবে না।


মন্তব্য

সোহেল ইমাম এর ছবি

চলচিত্র উৎসব আর সেই সঙ্গেই বাংলা ছবিগুলোর সেই সব উৎসবে অবস্থান সূচক সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটা পড়ে ভালো লাগলো। সিনেমার পোস্টার গুলো একসাথে পাওয়াটাও কম না।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি লেখাটা ভাল লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম।

দারাশিকো এর ছবি

কয়েক দিন আগে পত্রিকায় পড়লাম, বাংলা সিনামার প্রবাদ পুরুষ, বাংলার আব্বাস কিয়ারুস্তমি, সেকুলারের আতংক, মস্তফা সরয়ার ফারুকী আংকেল মস্কো চলচিত্র উতসবে "কমারসেন্ট জুরি" পুরস্কার পাইছেন। বিডিনিউজে লিখছে,

"পুরস্কার হাতে নিয়ে হোটেলে ফিরেই বিডিনিউজের মুখোমুখি ফারুকী। জানালেন, “এই কেবল ফিরলাম পুরস্কার হাতে। ভাবতেও পারিনি আজ দুপুরে এমন একটা পুরস্কার আমার জন্য অপেক্ষা করছে। স্বয়ং জুরিবোর্ডের কাছ থেকে এমন সম্মানজনক পুরস্কার প্রাপ্তি আমার জন্য ও দেশের জন্য অনেক সম্মানজনক ব্যাপার।”

গর্বে উচ্চতা দশফুট হয়ে গেল, ডক্টর ইউনুসের আমলে যেমন হইছিল। বৌরে বললাম, দেখছনি কারবার? দেশে খালি খুন-চুরি-বন্যা-একসিডেন্ট, সবাই ছিছি করে, রাস্তায় মুখ দেখাইতে পারি না, কিন্তু আমাদের ফারুকী আংকেল কত বড় পুরস্কার পাইছে। আইজকা কোরমা পোলাও রান্ধ, খাইয়া রাস্তায় মুখটা দেখাইয়া আসি। বৌ তার লেপটপ দিয়া ইন্টারনেট গুতাইয়া কয়, কমারসেন্ট জুরি পুরস্কার নামে দুনিয়ায় কিছু নাই, কমারসেন্ট উইকেন্ড পুরস্কার নামে একটা কি জানি আছে, আংকেল ঐটাই পাইছে। পোলাও নিজে রাইন্ধা খাও আমার সামনে পরীক্ষা।

বৌয়ের কথার পিঠে কথা বলে বেকুব লোক। আমিও বেকুব। শিক্ষিত মহিলা আমারে চোখে আংগুল দিয়া সব দেখায় উচ্চতা আবার ছয় ফুটে নামায় দিল। বলল কমারসেন্ট রাশিয়ার ইত্তেফাক। এই চলচিত্র উতসবে তারাও একটা পুরস্কার দেয়। উহা জুরি এওয়ার্ড নহে। কমারসেন্ট উইকেন্ডের জুরিবোর্ড আর চলচিত্র উতসবের জুরিবোর্ড এক না। তোমার আংকেল জাতির সংগে ছলনা করে। কোরমা বরং তুমি আমারে রাইন্ধা খাওয়াও।

এই লেখা আপনি কয়টা দিন আগে লিখলে পাকঘরে খাটনিটা খাটতে হইত না। এখন বুঝলাম, সিনেমার পুরস্কারেও আশরাফ-আতরাফ বামুন-শুদ্র আছে। কোন পুরস্কার চৌধুরী, কোনটা হিরো আলম। ফারুকী আংকেল হিরো আলম পুরস্কার খাইয়া চৌধুরীর ঢেকুর তুলছেন। আমি জাতির কাছে বিচার দিয়া গেলাম।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

প্রেসটিজিয়াস চলচ্চিত্র উৎসব কোনগুলো আর তাদের সেরা এবং মূল পুরস্কারগুলো কী তা মানুষকে জানানোর জন্যই এই লেখা লিখলাম। আমাদের দেশে বহু মানুষেরই এই সংক্রান্ত তথ্য জানা নেই। আর এই জানা না থাকার সুযোগ নিয়ে কেউ চাইলেই অনেক কিছু দাবী করতে পারে। কারণ দাবী সঠিক না ভুল তা তো আর মানুষের কাছে তথ্য না থাকলে মানুষ বুঝবে না।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র মর্যাদাপূর্ন কোন উৎসবে যেতে পারছে না, সুযোগ পাচ্ছে না এটা চিরকালীন সত্যি। কিন্তু এই সত্যিটাকে বাংলাদেশের আইসিসি কাপে খেলার সুযোগের সাথে মেলাতে ইচ্ছে করে। একসময় ভাবা হতো বাংলাদেশের মানুষগুলো আকারে খাট, শক্তিতে দুর্বল, তারা কিছুতে ইংল্যাণ্ড অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের সাথে খেলার মতো শক্তি অর্জন করতে পারবে না। কিন্তু যেদিন আইসিসি কাপে জিতলো বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে, সেদিন থেকে একটা নুতন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেট কোথায় উঠে গেছে। এখন আর কেউ বলে না আমরা খাটো বলে পারবো না।

আমার ধারণা চলচ্চিত্রেও সেরকম একটা ঘটনার দরকার। যেখানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রেও অংশ নিতে পারবে বিশ্বপ্রতিযোগিতার আসরে। খেলতে খেলতেই শক্তির পরীক্ষা হয়। না খেলে পারবো না বলে দিলে কোন সুযোগই আসবে না। আমাদের চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নেবার জন্য সেরকম কোন প্রতিষ্ঠান বা শক্তি কী কোথাও কাজ করে? সরকার বা সরকারের বাইরে? আমার জানা নেই।

কিন্তু আমি বিশ্বাস করি বিকাশের সুযোগ দিলেই বাম্পার ফলন হবে আমাদের চলচ্চিত্রে। ভূটানের মতো দেশ যদি এই মানের সিনেমা বানাতে পারে, আমরা কেন পারি না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নাদির জুনাইদ এর ছবি

আমরা পারি না, কারণ আমাদের দেশে উঁচু মানের ছবি তৈরির তাগিদ, চেষ্টা, আগ্রহ নেই। আগে তাও ছিল কিন্তু দিন দিন আমাদের সংস্কৃতি থেকে যেন এই তাগিদ মুছে ফেলা হচ্ছে। এই প্রজন্মকে বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত তৈরি হতে থাকা হালকা বিনোদনধর্মী টিভি নাটক আর দুই একটা চাকচিক্য আর চটক যোগানো টেলিফিল্ম টাইপের ছবি দেখিয়ে শেখানো হচ্ছে নাটক-চলচ্চিত্র এমনই হয়। বিশ্বের সেরা সব ছবি না হয় দেখানো, না হয় তা নিয়ে আলোচনা। ভাল ছবি তৈরি করার জন্য তো প্রস্তুতি নিতে হবে। মন তৈরি করতে হবে। সেই প্রস্তুতি নেয়ার বা মন তৈরি করার পরিবেশই তো দিন দিন ধ্বংস করা হচ্ছে আমাদের দেশে। কী করে তাহলে এখানে বিশ্বের অনেক দেশের মতো শক্তিশালী চলচ্চিত্র তৈরি হবে।

হিমু এর ছবি

রক্তকরবীর একটা সংলাপ মনে পড়ে গেলো:

“যক্ষপুরীর হাওয়ায় সুন্দরের পরে অবজ্ঞা ঘটিয়ে দেয়, এইটেই সর্বনেশে। নরকেও সুন্দর আছে, কিন্তু সুন্দরকে কেউ সেখানে বুঝতেই পারে না, নরকবাসীর সব চেয়ে বড়ো সাজা তাই।”

আমরাও একই সাজা পেয়ে চলছি।

সিনেমা বিনিয়োগঘন শিল্প, নির্মাতারা বড় অঙ্কের লোকসান এড়াতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চটুল সিনেমাকে মিডিয়ায় ফাঁপিয়ে শিল্পগুণসম্পন্ন হিসেবে প্রচারের মধ্যে একটা অসততা আছে, যেটা এখন প্রায়ই চোখে পড়ে। এর প্রতিবাদ বা সমালোচনা নেই বললেই চলে।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

এই অসততার প্রতিবাদ নেই বললেই চলে। সব চুপ করে থাকার দল দেখতে পাই এখানে এখন।

স্পর্শ এর ছবি

কাওকে করে দেখাতে হবে। শুধু প্রতিবাদ, মুখোশ উন্মোচন ইত্যাদি করে কিছুটা বাঁধ দেওয়া গেলেও বিপর্যয় থামবে না।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।