প্রিয় সঙ্গীত ও নস্টালজিয়া

নাদির জুনাইদ এর ছবি
লিখেছেন নাদির জুনাইদ (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/০৭/২০১৩ - ৯:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিদেশে অনেকগুলো বছর কাটানোর পর অল্পদিন হলো আবার ফিরে এসেছি ঢাকায়। নিজ জন্মস্থানের প্রতি আকর্ষণ কী কখনো মলিন হয়? সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকী’র ঘুড্ডি (১৯৮০) ছবিটিতে এক তরুণী দেশ ছেড়ে যাবার আগে এক সন্ধ্যায় ঢাকা শহরের বাতি-জ্বলা অন্ধকার রাতের দিকে তাকিয়ে তার এক বন্ধুকে গাঢ় কন্ঠে বলেছিল -- ঢাকা, আমার স্বপ্নের শহর। এই দৃশ্যটি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে আমার দেখা প্রিয় দৃশ্যগুলির একটি। কারণ ঢাকা আমার কাছেও চিরদিন এক স্বপ্নের শহর হয়েই আছে। দেশে ফিরে আসা অবধি বার বার চেষ্টা করছি প্রিয় এই শহরের চেনা অনুভূতি আর মাধুর্যগুলোকে আবার অনুভব করতে। কিন্তু যে ঢাকা শহরে বেড়ে উঠেছি, সেই পরিচিত শহর যেন কীসের এক আগ্রাসনে কোথায় হারিয়ে গেছে। প্রায় সব রাস্তার পাশেই, আর বিভিন্ন আবাসিক এলাকাতেও কেবল উঁচু উঁচু ভবন। সকাল থেকে প্রায় মধ্যরাত, যখনই পথে বের হই না কেন চোখে পড়ে অগণিত যানবাহনের সারি। ট্রাফিক জ্যামে আটকে যেয়ে প্রতিদিন কেবল পথেই বসে থাকি দেড় ঘন্টা, দুই ঘন্টা। গাড়ির শরীর গরমে তেতে উঠে এসিও আর কাজ করে না। ক্রমাগত কানে এসে আঘাত করতে থাকে বিকট এবং অত্যন্ত ক্ষতিকর হাইড্রোলিক হর্ণ। এই হর্ণ নাকী বাংলাদেশে নিষিদ্ধ! অথচ ঢাকার রাস্তায় চলা বিভিন্ন বাস দিন রাত দম্ভের সাথে বাজিয়ে চলেছে এই হর্ণ। উড়তে থাকা ধুলো আর যানবাহনের ধোঁয়ার মধ্যে নিঃশ্বাস নেয়াও কঠিন হয়। চারদিকে চোখে পড়ে বিরক্ত, অখুশি, অস্থির মানুষের মুখ। এই দুরবস্থায় স্বপ্নের শহরটি আর খুঁজে পাই না। বরং অসহনীয় ট্রাফিক জ্যামে রাস্তায় আটকে থেকে এই শহরের বর্তমান হাল দেখে মনে পড়ে সত্যজিৎ রায়-এর “অপদার্থ” ছোটগল্পটিতে কলকাতা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় চরিত্রটির বলা একটি কথা – “শকুনির ঠোকরে ত হাড় পাঁজরা বার করে দিয়েছে শহরটার”।

ঢাকায় পথে বের হলে এখন মন আর আগের মতো আনন্দে ভরে ওঠে না। আনন্দ পেতে তাই নির্ভর করি পুরনো স্মৃতির ওপর। জানালা দিয়ে যেন এক অচেনা শহরের দিকে তাকিয়ে এই শহরেই কাটানো অনেক আনন্দময় সময়ের কথা ভাবি। পুরনো কোন গান, পুরনো একটি বই বা ম্যাগাজিন হঠাৎ মনকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় অনেক দিন আগে। আমার ১৭ বছরের পুরনো মিউজিক সিস্টেম-এ গতকাল শুনছিলাম আশির দশকের নরউইজিয়ান পপ ব্যান্ড আ-হা-র গান। মুহুর্তের মধ্যে মনে ভিড় করে এলো অনেক দিন আগে এই শহরে কাটানো কিছু সময়ের অনুভূতি। আমার বারো বছরের জন্মদিনের দিন প্রথম শুনি আ-হা-র বিখ্যাত গান -- টেক অন মি। সেই বছরই প্রথমবারের মতো শুনেছিলাম ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ডায়ার স্ট্রেইটস-এর কিছু গান। মার্ক নফলার-এর বিখ্যাত কন্ঠের গান শুনে পশ্চিমী রক সঙ্গীতের প্রতি আমার আকর্ষণ চিরস্থায়ী হয়ে গেল। পশ্চিমী সঙ্গীত এর সাথে অবশ্য যখন প্রথম পরিচয় ঘটেছিল তখনও আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করিনি। বাড়িতে বাজতো অস্ট্রেলিয়ান ব্যান্ড এয়ার সাপ্লাই-এর গান। এয়ার সাপ্লাই-এর “অল আউট অফ লাভ” গানটিই আমার প্রথম পছন্দ করা ইংরেজি সঙ্গীত। কেন জানি না এই গানটির সুর আমাকে সেই ছোট বয়সে অন্যান্য গানের চেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছিল। কিছুটা বড় হয়ে খুঁজে বের করি এই গানটির নাম, আর শুনে ফেলি এয়ার সাপ্লাই-এর অন্য সব গান। ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠার বছরগুলোতে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার পাশাপাশি প্রতি বছরই পরিচয় ঘটতে থাকে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ধরনের রক, পপ, ব্লুজ, হেভী মেটাল সঙ্গীত-এর সাথে। পছন্দের এই গানগুলো যখনই শুনি, মনে ভেসে ওঠে এখনকার চেয়ে অনেক ভিন্ন এক ঢাকা শহরে কাটানো আনন্দময় সময়ের স্মৃতি।

ক’দিন আগেই বাড়িতে পুরনো বইয়ের আলমারী গোছাতে যেয়ে পেয়ে গেলাম ঢাকা থেকে ১৯৯০ সালে ইংরেজি সঙ্গীত বিষয়ে প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিন -- রেইনবো। এই ম্যাগাজিনটিও সঙ্গে সঙ্গে অতীতকে মনে করিয়ে দিলো। আশির দশকে এলিফ্যান্ট রোডে কফি হাউসের পাশের সরু গলিতে পাশাপাশি তিনটি দোকান – সুর বিচিত্রা, রিদম আর রেইনবো – যেখান থেকে ভাল ইংরেজি গান ক্যাসেটে রেকর্ড করিয়ে নেয়া যেতো। তিনটি দোকানের মধ্যে রেইনবো-তে ইংরেজি গানের সংগ্রহ ছিল অন্য দুটি দোকানের চেয়ে বেশি। “রেইনবো” ম্যাগাজিনটি এই দোকান থেকেই প্রকাশ করা হয়েছিল। দোকানটির ভেতরে জায়গা ছিল খুব কম; পুরোটা ঠাসা পুরনো-নতুন ইংরেজি গানের অসংখ্য লং প্লে রেকর্ড দিয়ে। সেই সময় শহরের পাশ্চাত্য সঙ্গীতপ্রেমী তরুণ-তরুণীদের কাছে “রেইনবো” ছিল খু্বই প্রিয় একটি জায়গা। দোকানের চেয়ে দোকানটিতে যিনি সবসময় থাকতেন তিনিও কম আকর্ষণীয় ছিলেন না। দোকানটিতে যাওয়ার আগেই শুনেছিলাম তার কথা। সবাই তাকে ডাকতো -- কবীর ভাই। তখন যে তার বয়স কতো ছিল ঠিক বোঝা যেতো না। পিঠের মাঝামাঝি পর্যন্ত নামা লম্বা চুল, সাথে লম্বা গোঁফ-দাড়ি আর ছিপছিপে শরীর নিয়ে কবীর ভাই দেখতে অবিকল ছিলেন ষাট দশকের হিপিদের মতো। কথা বলতেন প্রমিত বাংলায়। ঠিক রেইনবো’র মতো আর কোন দোকান ঢাকায় আর কখনো ছিল বা হয়েছে বলে শুনিনি। রেইনবো-তে কোন অর্ডার দিলে ক্যাসেট ফেরত পেতে কম করে হলেও দুই মাস লাগতো। তখন নিউ মার্কেটের কিছু গানের দোকানে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেতো ইংরেজি গানের ক্যাসেট। সেখানেও কখনো খুঁজে পেতাম পাশ্চাত্যের বিখ্যাত সব ব্যান্ডের অ্যালবাম। পেয়েছিলাম পিংক ফ্লয়েড, জুডাস প্রিস্ট-এর কোন কোন অ্যালবাম। আমাদের মেট্রিক পরীক্ষার দুই কী তিন দিন আগে আমি আর আমার বন্ধু তৌহিদ টেনশন কাটাবার জন্য বিকেলবেলা একবার ঢুঁ মারলাম আমাদের বাড়ির পাশেই নিউ মার্কেটের গানের দোকানগুলিতে। পেট শপ বয়েজ-এর গান আমরা দু’জনই পছন্দ করতাম। দোকানে যেয়ে দেখি পেট শপ বয়েজ-এর নতুন একটি অ্যালবাম এসেছে। মেট্রিক পরীক্ষার তিন দিন আগে প্রিয় ব্যান্ডের নতুন অ্যালবাম কেনার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু নতুন গানগুলো শোনার লোভ সামলাতে পারলাম না। দোকানে অনুরোধ করলাম অ্যালবামটি বাজাবার জন্য। প্রথম গানটিই ছিল “বিইং বোরিং” – এই ব্যান্ডের পরবর্তী সময়ের অন্যতম বিখ্যাত গান। গানটি একটু হতেই আমরা দুই বন্ধু তাকালাম দু’জনের দিকে। কী করে এমন দারুণ একটি গান শোনার জন্য পুরো মেট্রিক পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি? শেষে কিনেই ফেললাম ক্যাসেট। জীবনে পরীক্ষাই কী সব? “বিইং বোরিং” যতোবারই শুনি আমার মনে পড়ে মেট্রিক পরীক্ষা দেয়ার সেই সময়গুলোর কথা। ক্যাসেটটি কেনার পর কী পরীক্ষার প্রতি মনোযোগ দেয়ায় কোন ব্যাঘাত ঘটেছিল? সৌভাগ্য যে তা হয়নি।

আমি বড় হয়েছি ইডেন কলেজের ঠিক উল্টোদিকে আজিমপুর কলোনীতে। জানি না এই জায়গাটির এখন কতোটা পরিবর্তন হয়েছে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত আজিমপুর কলোনী ছিল খুবই ছিমছাম, অনেক গাছপালা ঘেরা সবুজ একটি জায়গা। কলোনীর ভেতরে ছিল বড় বড় মাঠ আর পুকুর। সেই মাঠগুলোয় আমরা ফুটবল আর ক্রিকেট খেলে বড় হয়েছি। একটি মাঠ আশির দশকের ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট লীগের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দল ইয়াং পেগাসাস তাদের প্র্যাকটিস এর জন্য ব্যবহার করতো। মাঠটির নাম তাই ছিল পেগাসাস ফিল্ড। আশির দশকের দিনগুলিতে প্রতি অক্টোবর মাস থেকেই বিকেলবেলা দেখা যেতো ইয়াং পেগাসাস দলের হ্যান্ডসাম ক্রিকেট খেলোয়াড়রা এই মাঠে প্র্যাকটিস শুরু করেছে। শীতের পুরো সময়টা জুড়েই চলতো তাদের প্র্যাকটিস। দেশের সেই সময়ের অনেক সেরা খেলোয়াড়কেই এই মাঠে দেখা যেতো। কলোনীর রাস্তাগুলো ছিল ঝকঝকে, নিরিবিলি, গাছপালা আর সুন্দর বাগানে ঘেরা। বিভিন্ন বয়সের ছেলেমেয়েরা সেখানে হেঁটে বেড়াতো বিকেলবেলা। আজিমপুর কলোনীতে একসময় থাকতেন আজম খান, থাকতেন লাকী আর হ্যাপী আখন্দ। কলোনীর অনেক ছেলেমেয়েই ভক্ত ছিল ব্যান্ড সঙ্গীতের। অনেক বাড়ি থেকে প্রায়ই ভেসে আসতো জনপ্রিয় ইংরেজি গানের সুর। আশির দশকের বিভিন্ন সময়ে ইউরোপ, স্করপিয়ন্স, রেইনবো, ফরেনার, ডেফ লেপার্ড প্রভৃতি ব্যান্ডের আর লায়োনেল রিচি, ব্রায়ান অ্যাডামস, বন জভি, রিচার্ড মার্কস, ক্রিস ডি বার্গ, অ্যালিস কুপার-এর বিখ্যাত অনেক গান প্রায়ই শুনতে পেতাম আমাদের আশেপাশে। ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসের এক দুপুর আর বিকেলের মাঝামাঝি সময়ে আমি স্কুল থেকে ফিরে জানালার পাশে বসে শুনছিলাম ব্রিটিশ গায়ক অ্যাল স্টুয়ার্টের “অন দ্য বর্ডার”, “রানিং ম্যান” সহ আরো কয়েকটি গান। এতোদিন পরও স্পষ্ট মনে পড়ে, নরম লালচে রোদ ছড়ানো শীতের সেই পড়ন্ত দুপুরে সময় যেন শান্ত হয়ে থেমে ছিল জানালার বাইরে। কলোনীর পাশের মেইন রোডে যানবাহন কম ছিল দুপুরবেলা। বাইরের নিমগ্ন, শান্ত পরিবেশটির মধ্যে মাঝে মাঝে কয়েক সেকেন্ডের জন্য পাওয়া যাচ্ছিলো উড়ে যাওয়া বিমানের যান্ত্রিক শব্দ। নীল আকাশের ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছুক্ষণ পর পরই অনেক নীচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলো একটি হলুদ রঙের প্লেন। প্লেনটি কী মশার ঔষধ ছেটাচ্ছিলো? ঢাকা শহরের ওপর দিয়ে কী এখনো এতো নীচ দিয়ে বার বার উড়ে যায় কোন হলুদ রঙের ছোট বিমান? সেই শান্ত বিকেলে, শব্দহীন কলোনীতে যেন প্রাণের স্পন্দন হয়ে বার বার উড়ছিলো সেই ছোট বিমানটি। অ্যাল স্টুয়ার্টের স্নিগ্ধ গানগুলি শুনতে শুনতে আমি দেখছিলাম সেই শান্ত বিকেল, আর বাড়ির সামনে প্রায় চার তলার সমান উঁচু একটি ইউক্যালিপটাস গাছ। গাছটি কী আছে এখনো? দারুণ একটি সময়ের থেমে থাকা আমি অনুভব করছিলাম। দেশে, বিদেশে অনেক সুন্দর বিকেল দেখেছি আজ পর্যন্ত। কিন্তু ২৩ বছর আগে আজিমপুরে কোলাহলহীনতা আর সুরের মূর্চ্ছনার মিশেলে যে অপূর্ব একটি বিকেল আমি দেখেছিলাম, তা স্বপ্নময় একটি স্মৃতি হয়ে টিকে আছে আমার মনে। এমন নীরব কোন বিকেল কী এই শহরের কোথাও এখন আর পাওয়া সম্ভব?

জন ডেনভার, গ্যারী মুর, সাইমন অ্যান্ড গারফাঙ্কেল-এর শান্ত ধাঁচের গানগুলো পছন্দ করলেও স্কুলে পড়ার সময়ই চড়া হেভী মেটাল সঙ্গীত-এর প্রতি আমার একটা আকর্ষণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সমবয়সী আরো অনেকেই পছন্দ করতো হেভী মেটাল। আয়রন মেইডেন, ডিও, মেটালিকা, লেড জেপেলিন, ডিপ পার্পল, ব্ল্যাক সাবাথ, হোয়াইট স্নেক, গানস এন্ড রোজেস, এয়ারোসস্মিথ-এর অনেক গান বিটলস, রোলিং স্টোনস এর পপ এবং রক ধারার বিখ্যাত গানগুলির পাশাপাশি হেভী মেটাল সঙ্গীত শুনতেও অনেককে আগ্রহী করে তুলেছিল। কলেজে পড়ার সময় আমার নিজের ঘরের দেয়ালে লাগিয়েছিলাম মেটালিকা-র একটি বিরাট পোস্টার। তার অনেক বছর পর সিডনিতে এক সন্ধ্যায় দেখি মেটালিকা-র একটি লাইভ কনসার্ট। অল্পবয়স থেকে যাদের পোস্টার ছিল আমার ঘরে, সেই দুই প্রিয় মিউজিশিয়ান জেমস হেটফিল্ড আর কার্ক হ্যামেট-কে চোখের সামনে পারফর্ম করতে দেখার অভিজ্ঞতা ছিল খু্বই উপভোগ্য।

১৯৯১ সালে এসসসি পরীক্ষা শেষ করে যখন আয়েশী দিন কাটাচ্ছিলাম, তখনই বের হয় বাংলা ব্যান্ড ওয়ারফেইজ-এর প্রথম অ্যালবাম। বাংলা হেভী মেটাল গান প্রথমবারের মতো শুনে আমরা সব বন্ধুরাই বিস্মিত এবং আনন্দিত হয়েছিলাম। ওয়ারফেইজ-এর লাইনআপও তখন কতো আকর্ষণীয় ছিল। কমল, রাসেল, বাবনা, টিপু আর সঞ্জয় এর মতো পাঁচজন দারুণ মিউজিশিয়ান একটি ব্যান্ডে। সেসময় রক স্ট্রাটা আর ইন ঢাকা নামে আরো দুটি ব্যান্ড বাংলায় হেভী মেটাল গান করতো। তবে এই ব্যান্ডের সদস্যরা বেশিদিন ব্যান্ডদুটোকে টিকিয়ে রাখেনি। নব্বই দশকের শুরু থেকেই ঢাকায় ওপেন এয়ার কনসার্ট দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসানের পর দেশে একটা আনন্দময় পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। (সেই আনন্দময় পরিবেশ অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সব ছাত্রসংগঠন এক হয়ে তৈরি করেছিল “সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য"; তাদের অনমনীয় আন্দোলন-এর মুখে স্বৈরাচার অনেক চেষ্টা করেও ক্ষমতায় টিকতে পারেনি। অথচ স্বৈরাচারের পতনের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভেঙ্গে গিয়েছিল ছাত্রদের সেই ঐক্য। ১৯৯১ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আবার দেখেছিল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ। মারাও গিয়েছিল কয়েকজন। এমন উজ্জ্বল একটি অর্জন ধরে রাখতে না পারাটা ছিল অত্যন্ত হতাশার।) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বৈরাচার পতনের পরের বছর অনুষ্ঠিত হয়েছিল জমজমাট ওপেন এয়ার কনসার্ট। ১৯৯২-এর ডিসেম্বরে ধানমন্ডি উইমেন্স কমপ্লেক্স-এর খোলা মাঠে দেশের প্রায় সবগুলো শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ডের অংশগ্রহণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল আরেকটি বড় কনসার্ট। কনসার্টটি শুরু হয়েছিল শীতের দিন বেশ সকালেই, প্রথম পারফর্ম করেছিল সেই সময়ের খুবই জনপ্রিয় ব্যান্ড উইনিং। ২১ বছর আগে ধানমন্ডি এখনকার মতো উঁচু উঁচু অ্যাপার্টমেন্টে ঠাসা আর গিজগিজে ভিড়ে ভরা কোন জায়গা ছিল না। তখনকার নিরিবিলি ধানমন্ডিতে শীতের চমৎকার রোদে সবুজ মাঠে বসে সারাদিন দেশের সেরা ব্যান্ডগুলির পারফরম্যান্স দেখা ছিল খুব আনন্দদায়ক একটি অভিজ্ঞতা। ঠিক এমন একটি কনসার্ট হয়তো আবার কোন এক শীতে ঢাকায় আয়োজন করা যাবে না। আমাদের নির্বু্দ্ধিতা, লোভ আর অনিয়ম দেখেও নির্লিপ্ত থাকার অভ্যাস-এর কারণেই আজ ঢাকায় নিরিবিলি পরিবেশ, আর খোলা সবুজ মাঠ-এর দেখা মেলে খুবই কম। পুরনো অনেক ব্যান্ডও এখন আর নেই, সঙ্গীতে তেমন সুর আর কথাও নেই, রেইনবো'র মতো দোকানেরও হয়তো এখন আর তেমন চাহিদা নেই।

প্রিয় এইসব সঙ্গীত বার বার শুনি। জনি হেটস্ জ্যায-এর “শ্যাটারড্ ড্রিমস্”, লায়োনেল রিচি’র “রানিং উইথ দ্যা নাইট”, রেইনবো’র “স্টার গেযার” আর “টেমপল অফ দ্য কিং”, ডেফ লেপার্ডের “হিস্টিরিয়া” আর “লাভ বাইটস”, সানটানার “মুনফ্লাওয়ার” আর “ব্ল্যাক ম্যাজিক ওম্যান”, লেড জেপেলিন-এর “স্টেয়ারওয়ে টু হেভেন”, স্করপিয়ন্সের “হলিডে” আর “হোয়েন দ্য স্মোক ইজ গোয়িং ডাউন”, ডায়ার স্ট্রেইটস-এর "সো ফার অ্যা্‌ওয়ে" আর "রাইড অ্যাকরস্ দ্য রিভার" এবং পছন্দের আরো অনেক গান শুনলেই মনে পড়ে ঢাকায় কাটানো পুরনো সময়ের কথা। গানগুলো শুনতে শুনতে জানালা দিয়ে তাকাই এ্রই শহরের দিকে। গানগুলো বেজে চলে, অনেক দিন আগের স্মৃতিও দ্রুত মনকে স্পর্শ করে, কেবল বাইরে দৃষ্টি মেলে দিয়ে চেনা সেই শহরটিকে আর খুঁজে পাই না।


মন্তব্য

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ওয়ারফেজ এখনও এ্যাকটিভ তবে পুরানোদের মধ্যে কেবল কমল ভাই ও টিপু ভাই আছে। লিড ভয়েসে এখন মিজান, কিবোর্ডসে শামস, বেইস গিটারে রজার এবং লিড গিটারে অনি।

গানবাজনা নিয়ে যে কোনও লেখাই ভালো লাগে। আপনার লেখাটিও ভালো লেগেছে। চলুক

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আহা রেইনবো - আমি রাজশাহী থেকে দুই দুইবার ঢাকা এসেছিলাম শুধু বইমেলায় বই কেনার জন্য আর রেইনবো থেকে ক্যাসেট রেকর্ড করার জন্য। তখনকার দিনে টিউশনীর টাকা চরম কন্জুষের মত বাঁচাতাম ফেব্রুয়ারী মাসে ঢাকা আসার জন্য। সাউন্ড অব সাইলেন্স গানটা প্রথম আমি শুনেছিলাম রেইনবোতেই - সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ড করতে দিয়েছিলাম! হাসি
লেখা সুন্দর হয়েছে।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

গৃহবাসী বাঊল এর ছবি

ইংরেজি গান খুব একটা বুঝি না, তাই তেমন একটা শুনাও হয় না। শুনলেও জন ডেনভার, ড্যান সিলস, ক্রিস ডিবার্গ, ক্রিস আইজ্যাক, জন রি'র কান্ট্রি সংসেই সীমাবদ্ধ। তারপরও আপনার সংগীত নিয়ে এই লেখাটি খুব ভাল লাগল। মনে হয় আপনার স্মৃতিচারনের জন্যই। একটানে নিয়ে গেলেন ফেলে আসা দিন গুলিতে। আমি আমার অনুভূতি ঠিকমত বুঝাতে পারব না। তাই চেষ্টাও করছি না। তবে জীবনের আটকে যাওয়া চাকায় যখন কঠিন সময় পার করছি, তখন আপনার এই লেখা একটি অনুভুতি দিল "হায়রে অতীত, সোনালি অতীত"।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার কাছে যদি 'রেইনবো'র কপি থেকে থাকে তাহলে দয়া করে স্ক্যান করে নেটে আপ করে দিন। দোহাই লাগে। ঐ ম্যাগাজিনটা যারা দেখেনি তারা রেইনবো, কবীর ভাই আর রেইনবোপাগল একটা প্রজন্মকে চিনতে কিছুটা বাকি আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

আমার কাছে "রেইনবো"-র প্রথম সংখ্যার (আমার জানা মতে এই একটি সংখ্যাই প্রকাশিত হয়েছিল) একটি ঝকঝকে কপি আছে। আমি ম্যাগাজিনটি স্ক্যান করে আপলোড করে দেবো।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। আপলোড করলে কোথায় করলেন জানবো কী করে? ঐ একমাত্র সংখ্যাটা আমার চাই-ই চাই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

আমি সামনের সপ্তাহের মধ্যেই ম্যাগাজিনটি স্ক্যান করে ফেলার চেষ্টা করবো। স্ক্যান করা হলেই আপনাকে মেসেজ পাঠাবো। এই সংখ্যাটি আপনি অবশ্যই পাবেন।

কড়িকাঠুরে  এর ছবি

এই ম্যাগাজিনটা সবাই পেতে চাইবে মনেহয়। আমরা অনেকেই হয়তো ছিলাম না সেই সময়, কেবল শুনেই আসছি।

আপনারা স্মৃতি থেকে ফিরে এসে যে শহরের দিকে অবাক হয়ে তাকান সেটাই আমাদের বর্তমান। এক সময় এই কাঠখোট্টা স্মৃতিতেই আমাদের স্বস্তি খুঁজতে হবে হয়তো। সেই হিসেবে বলতেই পারি আপনাদের স্মৃতিই সোনালী যাতে বারবার ফিরে যাওয়া যায়...

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনি যে ঢাকা শহরের কথা বলছেন, সেটি ছিলো অন্য এক ঢাকা ! আর আমরা এখন প্রকৃতিহীন বসবাসের প্রায় অযোগ্য যে শহরটিতে বাস করছি দায়ে পড়ে সেটি আরেক ঢাকা !
আপনারটি স্মৃতির ঢাকা, যেখানে ইচ্ছে হলেই একাকী একটু কান্না করে সতেজ হওয়া যেতো। আর এখনকার ঢাকা সব যেচে হারিয়ে ফেলার ঢাকা ! এখানে চেঁচিয়ে চৌচির হওয়া যায়, নিরিবিলি কান্নার কোনো সুযোগ নেই আর !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নাদির জুনাইদ এর ছবি

তাই মনে হয়। আর এজন্যই খারাপ লাগে।

তানিম এহসান এর ছবি

কবীর ভাই দেশ ছেড়ে যাবার পর এখন মুরাদ ভাই চালান রেইনবো, ভাবী-ও থাকেন মাঝে মাঝে। আপনি একেবারে নস্টালজিক করে দিলেন! আহা, সেই সময়!

Joltorongo এর ছবি

ঠিক ঐ সময়টাতেই আমার ঢাকার জিবন শুরু।াজিমপুর কলোনিতে যাওয়া হত কলেজের টিচারদের কাছে পড়তে। কত াননো রকম ছিলো সবকিছু। মনে হয় সেসব আরেকজিবনের কথা!! মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

এই স্মৃতি-গুলোর কোনো-টির সাথে আমার কোনো সংযোগ নেই। কিন্তু আপনার লেখা এত সাবলীল, এত সুন্দর যে পড়তে পড়তে আমার স্মৃতির নানা জানালা খুলে গেল একটার পর একটা। চলুক
- একলহমা

নাদির জুনাইদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম।

সবজান্তা এর ছবি

মন্ত্রমুগ্ধের মতো একটানে পড়ে গেলাম, চমৎকার একটা ব্লগ!

আমি জন্মের পর থেকে ঢাকাতেই আছি। আক্ষরিক অর্থেই, এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু। ঘুড্ডির সেই তরুণীর মতো আমিও জানি ঢাকা আমার স্বপ্নের শহর। ঘিঞ্জি, নোংরা, ট্রাফিক জ্যাম, ছিনতাইকারী, আরো হাজারটা সমস্যা- সবমিলিয়ে জীবন্ত এক নরকের নাম ঢাকা, তবু আমি স্বপ্ন দেখি ঢাকাতে ফিরে যাওয়ার।

কাকতালীয় ব্যাপার হলো, আপনার এই লেখাটা যখন পড়ছি, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে মার্ক নফলারের সাম্প্রতিকতম অ্যালবামটা। ওয়েস্টার্ন মিউজিকের প্রতি আমার ভালোলাগার তৈরিটাও ডায়ার স্ট্রেইটস/নফলারের হাত ধরেই। আপনার লেখার মধ্যে খুব স্তিমিত সুরের বিষণ্নতার স্পর্শ পেয়েছি- হৃদয়কে ছুঁয়ে গিয়েছে। আমি জানি না, আর কোনো দিন ঢাকার সেই সোনালি দিন ফিরে আসবে নাকি। হয়তো আসবে, হয়তো আসবে না। তবুও স্বপ্ন দেখতে চাই, হয়তো আসবে।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ভাল দিকগুলি ফিরে আসুক, তা মনেপ্রাণে চাই। ফিরিয়ে আনা অসম্ভব কিছুও নয়। কিন্তু সেই চেষ্টা করার জন্য একজন, দু'জন নয়, অনেক মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। অনেক দিন ধরে আমরা সব কিছু নষ্ট হতে দিয়েছি। খারাপ সব কিছু বদলাতেও তাই এখন সময় লাগবে। তারপরও আশা তো করিই, স্বপ্নও দেখি।

লেখাটি যখন পড়ছিলেন তখন পাশে মার্ক নফলার-এর গান বাজছিলো, এটা শুনে ভাল লাগলো হাসি

রাজিব এর ছবি

আহ্‌, কতো কথা মনে পড়ে গেলো। চমৎকার স্ম্রৃতিচারন। কুমিল্লা থেকে আসতাম রেইনবো থেকে ক্যাসেট রেকর্ড করাতে। মিক্সড ক্যাসেট করালে সময় লাগতো দু মাসের ও বেশি। ঈদের দু মাস আগে ক্যাসেট দিয়ে যেতাম ঈদের দিন শুনার জন্য। ক্যাসেটের শেষে কবির ভাই নিজের পছন্দের কিছু গান ফিলার হিসেবে দিয়ে দিতেন। ওনার পছন্দ ছিলো চমৎকার। সেই সময় আরেকটি দোকান চালু হয়েছিলো সায়েন্সল্যাব এর উলটো দিকে আলপনা প্লাজার তিন তলায়, নাম ছিলো লেয়ক্স।ওরা সিডি থেকে রেকর্ড করে দিতো। রেইনবো ছাড়াও আরো কয়েকটি পত্রিকা বের হতো পাশ্চাত্য সঙ্গীত নির্ভর। নিউজপ্রিন্ট এ বের হতো রক এন রিদম। কয়েকটি সংখ্যা বের হয়েছিলো। আরেকটি বের হতো সংগীতাঙ্গন। চট্টগ্রাম এ আরেকটি গান রেকর্ড করার ভালো দোকান ছিলো মেহেদীবাগ এ। নাম বোধহয় ছিলো রেকর্ডস্‌। ওদের কালেকশন ও বেশ ভালো ছিলো। এখন আছে কিনা জানিনা। সেই সময়ে আমাদের কুমিললা ভিক্টোরিয়া কলেজে ডেফ লেপার্ডের 'লাভ বাইটস্‌' খুব জনপ্রিয় ছিলো আমাদের গুটি কয়েক পাশ্চাত্য সঙ্গীত প্রেমীদের মাঝে। সমসাময়িক সময়ে বের হয়েছিলো এল্টন জনের অসম্ভব জনপ্রিয় 'স্যাক্রিফাইস'' গানটি। আমাদের বন্ধুদের মাঝে সেই সময় খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো জার্মান গ্রুপ মিলি ভ্যানিলির আর অ্যান্ড বি ঘরানার 'গার্ল আয়াম গনা মিস ইউ' গানটি। দুঃধ পেয়েছিলাম পড়ে জেনে যে এই সুন্দর গানটি ওরা নিজেরা গায়নি।এই দু নম্বরির জন্য পিলেটাস আর মরভান এর ১৯৯০ সালে পাওয়া গ্র্যামি কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো।ঢাকা থেকে এফ আম ব্যান্ডে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ওপর খুব ভালো একটা প্রোগ্রাম প্রচারিত হতো, ওয়ার্ল্ড মিউজিক। সেই সময় পাশ্চাত্য সঙ্গীতের তরুন শ্রোতাদের মাঝে নিজের রুমে বিশাল সব পোস্টার লাগায়নি এমন বোধহয় খুব কম পাওয়া যাবে। আমার রুমে ও ছিলো 'নিঊ কিডস্‌ অন দ্য ব্লক আর 'আ-হা' র পোস্টার। ধন্যবাদ সেই সময়ের গানে বুদ হয়ে থাকা সহজ সরল দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। ভালো থাকুন।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

আপনার স্মৃতিচারণও ভাল লাগলো।
আ-হা'র যে পোস্টারগুলো তখন পাওয়া যেতো, সবগুলোই খুব সুন্দর ছিল। আমার সেই পোস্টারগুলো হারিয়ে গেছে। জানি না এখন আর কোথাও কিনতে পাওয়া যাবে কী না।

Guest এর ছবি

লেখক কে অনেক ধন্যবাদ চমৎকার লেখাটির জন্য। এয়ার সাপ্লাই এর এই গানটি আমারও সবচেয়ে প্রিয় । এভারগ্রীন।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। "অল আউট অফ লাভ" আপনারও প্রিয় জেনে ভাল লাগলো।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সুন্দর পোস্ট। সেই সময়ের না দেখা ঢাকার কিছুটা দেখা হয়ে গেল পোসট পড়ে।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

তিথীডোর এর ছবি

আমার ইংরেজি গানের সীমানা জন ডেনভার, বব ডিলান, পোয়েটস অফ দ্য ফল, গোটা কয়েক ব্রায়ান অ্যাডামস, বন জোভি, রিচার্ড মার্কস.. ব্যস এইই।
তাও আপনার স্মৃতিমেদুর লেখা বেশ ভাল্লাগলো পড়তে। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নাদির জুনাইদ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

নীলকমলিনী এর ছবি

আমি আমেরিকা আসি ৮০ সালে, এসেই ছোট ক্যাম্পাস শহরের ডাউন টাউনের একটি বুটিক স্টোরে কাজ শুরু করি, যেখানে সারাদিন রেডিও তে ইংরেজি গান বাজতো। দেশে থাকতে ইংরেজি গান তেমন শুনিনি, বাংলা গান শুনেছি প্রচুর। কিন্তু দোকানে ইংরেজি গান শুনতে শুনতে দারুন ভক্ত হয়ে গেলাম বিটলস, মাইকেল জ্যাকসন, ম্যাডোনা,সিন্ডি লোপার, বয় জর্জ, জর্জ মাইকেল, ডুরান ডুরান, মিলি ভিনেলী, এয়ার সাপলাই, ইউ রিথমিক, প্যাট বেনেটার, ফরেনার,পইন্টার সিস্টেরস, জন ম্যালেঙ্কেম্প, লিওনেল রিচি, স্টিভি ওয়ান্ডার, টিনা টারনার, ডায়েনা রস,বব ডিলান, সাইমন আন্ড গারফেঙ্কেল, ক্রিস্টফার ক্রস আরো অনেকের। তখন রেগুলার শুনতাম টপ ফরটি। এখন আমার মেয়েরা মাঝে মাঝে ৮০জ এর গান শুনায়।
আপনার লেখা পড়ে খুব নস্টালজিক হয়ে গেলাম। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্যে।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ। বিদেশের বিভিন্ন রেডিওতে এখনো বেশ নিয়মিতই আশির দশকের অনেক গান শুনতে পাওয়া যায়। এই গানগুলি আসলেই তো পুরনো হওয়ার নয়।

তারেক অণু এর ছবি

ভালো লাগল

নাদির জুনাইদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

অমিত এর ছবি

আমারও বড় হয়ে ওঠা আজিমপুর টিএন্ডটি কলোনীতে, আপনার কাছাকাছি সময়েই। বিকালের পর থেকেই বিভিন্ন বাসা থেকে গান ভেসে আসত। কোথাও মেইডেন, কোথাও মার্লি অথবা স্রেইটস। মাঝে মাঝে বিকালে খেলা হত না, তখন ছাদে বসতো আড্ডা। বিডিআরের দিকে শেষ বিকালের আলো, ঢাকা ভার্সিটির দিক থেকে সন্ধ্যাটা এগিয়ে আসছে আর সামনে ঝলমলে মিরপুর রোড আর নিউ মার্কেট ! শূণ্যে ভেসে থাকে শাইন অন ইউ ক্রেজি ডায়মন্ড ! এটাই আমার ঢাকা।

অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকলাম রেইনবো ম্যাগাজিনটার জন্য।এখনও কিছু কিছু মনে পড়ে, ভিতরে ফিচার ছিল ইয়ান গিলান আর মাল্মস্টিনের উপর। লিরিক্স ছিল বেশ কিছু গানের- মনে হয় মাল্মস্টিনের ড্রিমিং, ইওরোপের ওপেন ইওর হার্ট ! সেগুলা দেখে দেখে রেইনবোতে রেকর্ডে দিতাম।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

টিএন্ডটি কলোনীতে যেতাম মাঝে মাঝে। মিরাজ, সাইফ, দীপু আমাদের এই বন্ধুদের নাম মনে পড়ছে যারা থাকতো সেখানে।

আপানার ঠিকই মনে আছে। "ওপেন ইওর হার্ট"-এর লিরিক্স আছে ম্যাগাজিনটিতে। ইয়ান গিলিয়ান-এর ওপর ফিচারও আছে। আছে মাল্মস্টিন-এর একটি রঙীন পোস্টার। ইন্টারনেট না থাকার সেই সময়ে পছন্দের অনেক গানের লিরিক্স একসঙ্গে পেয়ে যাওয়া তো ছিল খুবই আনন্দের একটি ব্যাপার।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।