বইমেলা আড্ডাম্যালা ৭

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: রবি, ১৪/০২/২০১০ - ১:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি যখন বই কিনি, সেটা খুব বিরক্তিকর। দোকানের সামনে দাঁড়ায়ে অনেকক্ষণ ধরে বই দেখি, চিন্তা করি... অনেক সময় লাগে। তাই এই কাজটা আমি সবসময় একাই করতে চাই, সঙ্গিছাড়া। কিন্তু মেলায় নূপুর নিধিকেও নিয়ে যাই। যথারীতি তারা আমার উপর মহা বিরক্ত। সেদিন তো নূপুর বলেই দিলো মেলায় সে ঘুরতেই পারতেছে না আমার জ্বালায়।
তাই গতকালকে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি বাদ, বসন্ত দিবসে মেলায় আমি নূপুরের পিছু পিছু ঘুরবো, ডানে বললে ডানে যাবো, বামে বললে বামে...
কিন্তু দেখা গেলো সে কিছু বলে না, নানাবিধ সিদ্ধান্তহীনতার ক্যাচালে নজরুল মঞ্চে দাড়িয়েঁ থাকলাম অনেকক্ষণ। তারপর শুরু হলো ঘুরাঘুরি।

বইমেলায় ঢোকার কালে দুটো টুনটুনি যন্ত্রদরোজা বসানো আছে। ঢুকতে হলে এদের ভিতর দিয়ে যেতে হয়, আর তারা টু টু করে শব্দ করে। আর কিছু হয় না। এই এক যন্ত্রদরোজা এখন সব জায়গায়, সব মেলায়, সব মার্কেটে, অনেক অফিসেও।
কিন্তু এটা দিয়ে লাভ কী আমি বুঝি না। বেল্ট চাবির ধাতব যেহেতু প্রায় সবার সঙ্গেই থাকছে, সবাইকেই লাল সিগন্যাল দিয়েই যাচ্ছে ব্যাটায়। যদি কেউ বিপজ্জনক কিছু নিয়েও মেলায় ঢুকতে চায়, তাহলে এই যন্ত্র দিয়ে তা রোখা যাবে? আমার ধারণা যাবে না। তাহলে এই সতর্কতার আনুষ্ঠানিকতার মানে কী? কী দরকার? শুধু শুধু ভোগান্তি...

ভেবেছিলাম বসন্তের দিনে মেলায় বেজায় ভীড় থাকবে, কিন্তু তেমন না। ধুলোও কম। ভালোই লাগলো। বুনোহাঁস, তারানা, দুষ্ট বালিকা ব্যাপক মাঞ্জা মেরে গেছে। নূপুরও। পান্থ বই বের হওয়ার পর থেকেই তারকাখ্যাতির বিরম্বনায় ভুগছে। ভক্তদের জ্বালায় মেলায় ঘুরে আরাম পায় না। জিএমটি আছে মৌজে... এমনিতে রমনীমোহন সুরত, তার উপরে হাতে বাহারী ক্যামেরা... মেয়েরা দেখি টপাটপ গলে যায়... চোখ টিপি

ধূলো আর ভীড়ের অত্যাচারে নিধিকে নানাবাড়িতে রেখে যাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু রিটন ভাই ফোন করে জানালেন নিধির জন্য স্পেশাল চকোলেট নিয়ে এসেছেন তিনি, তাই নিধিকে নিয়ে গেলাম। দেখি শুধু চকোলেটই না, আরো অনেক মজার মজার গিফট আছে... থ্যাঙ্কস রিটন ভাই।

লিটল ম্যাগ চত্বরে এখন আর লিটলম্যাগওয়ালারা পাত্তা পায় না। ব্লগারদের জয়জয়কার। সেখানেই অনেকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। অরূপের সঙ্গেও। অনেক আড্ডা... তারপর আবার শুদ্ধস্বরের সামনে। সেখানেও ভীড়।

মেলার ত্রয়োদশ দিন গেলো কাল। এর মধ্যে বাংলা একাডেমির হিসাবে প্রকাশ হইছে ১৫ শর উপরে বই। তবে সম্ভবত আসল সংখ্যা এরচেয়ে বেশ অনেক বেশি। কারণ অনেকেই তথ্যকেন্দ্রে বইয়ের তথ্য প্রচারের জন্য দেন না।
সংখ্যার বিচারে এ তো অনেক!


মন্তব্য

জি.এম.তানিম এর ছবি

মেয়েরা দেখি টপাটপ গলে যায়..
পুরাই মিছা কথা। আমার ব্যাপারে মেয়েরা বড়ই কঠিন, মোটেই গলনশীল নয়। মন খারাপ সুরতের যেই হাল, ক্যামেরাখানাই ভরসা। তবে গতদিন অরূপদা এর মহাকামানের কাছে আমারটা পাত্তা পায় নাই। আর বালিকারা তো তীরুদাকে ঘিরেই ছিল সবসময়। প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতে সুবিধা করতে গিয়ে রাস্তায় কাটাতে হয়েছে ঘন্টা। তাই শেষ বিকেলে বাসন্তী রঙের বাহার ক্যামেরাবন্দী করতে পারলাম না।

নিরাপত্তার ব্যাপারটা আমিও ঠিক বুঝি না। ব্যাকপ্যাকে ক্যামেরা নিয়ে দুই দিন ঢুকলাম। আগের সময়গুলোতে তো ব্যাগ চেক করা হতো। এবারে তারও বালাই দেখলাম না।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- তানিম, জনগণ কী বলে? চিন্তিত

মিয়া, আপনে আমার কাছে আইসা বইমেলার কাহিনী বয়ান করেন "সাহারা মরুভূমিতে সাঁতার কাইটা আইছেন" বলে? এক পাল বালিকার মাঝে বসে থাকলে সিদ্ধি লাভ হবে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নৈষাদ এর ছবি

দুইটা ব্যাপারে কিছুটা সহমত জানিয়ে যাই।

আপাত দৃষ্টিতে বই-মেলার যন্ত্রদরোজার কার্যকারীতা আমার কাছেও কিছুটা প্রশ্নবোধক মনে হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে আমার পকেটে যথেষ্ট পরিমানে ধাতব-বস্তু ছিল, যন্ত্রদরোজা ব্যাপক ট্যা-ম্যাও করল, কিন্তু দাঁড়ানো পুলিশ ভাইয়েরা কিছুই জানতে চাইল না (তখন তেমন লোকজনও ছিল না)। আমার ধারনা এত মানুষের মধ্যে ভালভাবে যন্ত্রদরোজা করাও সম্ভব না। হয়ত কিছুটা সাইকোলজিক্যাল সুবিধা আছে। অথবা পুলিশ ভাইরা ‘জহুরীর চোখ’ দিয়ে আরও কিছু ‘ফ্যাক্টার’খেয়াল করে এবং দরকার মত চ্যালেঞ্জ করে...। তবে আমি কষ্ট হলেও এধরনের সিকিউরিটি সিষ্টেমের দরকার আছে বলে মনে করি।

আমি যখন বই কিনি, সেটা খুব বিরক্তিকর। দোকানের সামনে দাঁড়ায়ে অনেকক্ষণ ধরে বই দেখি, চিন্তা করি... অনেক সময় লাগে। তাই এই কাজটা আমি সবসময় একাই করতে চাই, সঙ্গিছাড়া ...
ভীষণ ভাবে একমত। তাই শুক্রবারে সকালে মেলা শুরু হবার সাথে সাথে খুব কম লোকজনের মধ্যে গিয়ে বই কিনেছি। (বিকালে অবশ্য পান্ডবদাকে হ্যালো করতে গিয়েছিলাম)

কেনা-কাটার ব্যাপারে (সব-ধরনের পণ্য) আমি একধরনের ‘রিসিপ্রোক্যাল' এবং ‘দ্বিতীয়-পক্ষের-হস্তক্ষেপ-বিহীন-চুক্তিতে’ বিশ্বাসী। অসামাজিক, অন্যকে দেখে শিখো, এবং আনুভূতিকে পণ্য করা বিভিন্ন স্লোগানের সাথে তাল মেলাতে ব্যার্থ ইত্যাদি নানা বিশেষণে ভূষিত হওয়া পরও এই চুক্তিটা বেশ কার্যকরি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার মন্তব্যর সাথে চরমভাবে একমত (একটা জিনিষ ছাড়া)। তবে phrase-টা মনে হয় "তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপবিহীন" হবে। অন্য সব জিনিষ ছাড়া শুধু বইয়ের ব্যাপারে আমার একধরণের আত্মবিশ্বাস আছে যে আমি বই চিনি। এই আত্মবিশ্বাস আমার কাছে প্রতিষ্ঠিত এই জন্য যে আমি বই কিনে কখনো ঠকিনি।

আপনার মন্তব্যর যে অংশটার সাথে একমত নই তা হচ্ছে আমাকে "পাণ্ডবদা" বলা। এখন থেকে আপনার আর আমাকে "পাণ্ডবদা" বলা চলবেনা। বরং আমিই আপনাকে "নৈষাদদা" বা অবস্থা বুঝে "সুমনদা" বলব। বাবান ফোনে অভিমান না করলে সেদিন আপনার সাথে আরো কথা বলা যেত।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

Phrase এর ব্যাপারে আপনার কথা ঠিক আছে (আমি আর বিক্রেতা, স্রেফ দুই-পক্ষ, নো তৃতীয় পক্ষ )। দ্বি-পাক্ষিক ব্যাপারে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ইত্যাদি চিন্তা করতে করতে এই ভুল। ধন্যবাদ।

পান্ডবদা, নৈষাদদা ... উই উইল সর্ট থিংস আউট।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

খাইসে, পান্ডবদা'র নৈষাদদা ?? দেঁতো হাসি

_________________________________________

সেরিওজা

নিবিড় এর ছবি
নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আমি যখন বই কিনি, সেটা খুব বিরক্তিকর। দোকানের সামনে দাঁড়ায়ে অনেকক্ষণ ধরে বই দেখি, চিন্তা করি... অনেক সময় লাগে। তাই এই কাজটা আমি সবসময় একাই করতে চাই, সঙ্গিছাড়া।

আমার সাথে একদম মিলে গেল । গতকাল পান্থকে দেখলাম চ্যানেল আইয়ে ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

লইজ্জা লাগে
..................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

তিথীডোর এর ছবি

বালিকাত্রয়
পান্থদা ও
জিএমটির হালহকিকত জানিয়া বিয়াপক বিমলানন্দ দেঁতো হাসি পাইলাম...

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

তারকাখ্যাতির ম্যালা বিড়ম্বনা, এক বালিকা জোর করে ফুচকা খাওয়াইলো! এইসব খাওয়া ডাক্তারের বারণ, তবুও মুখ বুজে খেতো হলো! হাসি
..............................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

খাওয়ার সময় হা করতে হয় আর মুখ বুজে চিবাতে হয় এটাই নিয়ম। তাই মুখ বুজেই সবাই খায়, তাতে বালিকা বলুক আর না-ই বলুক।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রাহিন হায়দার এর ছবি

আবার পড়ে ফেললাম। অবশ্য না পড়েই বা উপায় কী? মন খারাপ
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

পড়লাম। না পড়ার কিছু নাই। ভালু না পাওয়ারও কিছু নাই।
কিন্তু বালকদের ব্যাপারে তো বস ভালোই স্ক্যান্ডাল ছড়ায়া যাচ্ছেন দেখি! চোখ টিপি হ ওইটাও বোধ হয় খ্যাতির ক্ষতি, তাই না? হাসি আমি দেখি ভালোই নিরাপদ আছি! খাইছে

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পড়সিলাম, সেইটা জানান দিয়া গেলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।