.................যেন থাকে দুধেভাতে

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৫/০৯/২০১১ - ৯:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ বড় ছেলেটা ঢাকা ছেড়ে গেল। হ্যাঁ মনটাতো খারাপ বটেই। ছেলেটা আমেরিকার অ্যামহার্স্ট লিবারাল আর্টস কলেজে পড়ে। এবছর ফাইনাল ইয়ার।

অ্যামহার্স্টে যাবার আগে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই,বি,এ, তে ভর্তি হয়েছিল। মাস কয়েক ক্লাশও করেছে।

অ্যামহার্স্টের স্কলারশিপটি যখন পেল, ওর মা তাকে কিছুতেই যেতে দেবেনা। তার কথা, আই,বি,এ, থেকে পাশ করে বেরোলেই মোটামুটি ভাল একটা চাকরি পাওয়া যাবে। আমরা একসাথেই থাকতে পারবো। বিদেশে গেলে ছেলে আমার পর হয়ে যাবে।

আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই বোঝালো, 'এমন সুযোগ জীবনে বার বার আসেনা। টিউশন, থাকাখাওয়া এমনকি হাতখরচাটি পর্যন্ত্য কলেজ কতৃপক্ষ দেবে। তাছাড়া ছেলেটাও যেতে আগ্রহী। তোমরা আর অমত করোনা।'

বিত্তের দিক থেকে আমরা মধ্যম শ্রেণীর। আর মানসিকতায় টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত। সুতরাং আমাদের জন্য এটা একটা বিশেষ সুযোগতো বটেই।

ছেলের উন্নত ভবিষ্যৎ ভাবনায় শেষপর্যন্ত্য ওর মা রাজী হল। যাবার প্রস্তুতি শুরু হল। প্রথামত ভিসার জন্য আবেদন করা হল। কয়েকটা দিন আমাদের খুব উৎকন্ঠায় কাটলো। শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদী ভিসা পাওয়া গেল। আত্মীয়স্বজনেরা অভিনন্দন জানালো। ছেলেটাকে দাওয়াত করে খাওয়ালো। কেউ কেউ উপহারও দিল। কিন্তু ছেলেটার মা'য়ের মনে একটুও সুখ নেই। কথায় কথায় শুধু কান্নাকাটি করে। সবাই ওকে বোঝাতে লাগলো, 'ছোট ছেলে, তুমি যদি এরকম কর তাহলে ওর মনটা খারাপ হয়ে যাবেনা।বরং ওকে খুশিমনে বিদায় দাও'। অবশেষে একদিন ছেলেটার যাবার দিনটি এল। অনেক বেদনা মনে চেপে ছেলেটাকে বিদায় দেওয়া হল।

প্রথম প্রথম ওর মা প্রায় রাতেই গুমরে গুমরে কাঁদতো। বোঝাবার চেষ্টা করলে বলতো, 'মায়ের মনের কষ্টটা তোমরা কেউ বুঝবেনা।' আমাদের জীবনে কেমন একটা বিষন্নতা নেমে এল। ছোট ছেলেটাও প্রায়শই মনমরা হয়ে থাকে। ওর এখন আর কোন সঙ্গী নেই। ওর কষ্টটা বুকে বড্ড বেঁধে।

আমার মা, দুই ছেলে, স্বামী-স্ত্রী এবং কাজের বুয়াকে নিয়ে আমরা ভালইতো ছিলাম। আনন্দেই ছিলাম। হঠাৎই কেমন যেন ছন্দপতন। একসময় সবাই পরিস্থিতির সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নিলাম।

ছেলেটা প্রতি বছর ছুটিতে বাড়ি আসে। আসবার কয়েকদিন আগে থেকেই ওর মায়ের কত প্রস্তুতি। অফিস থেকে দু-তিন দিনের ছুটি নেবে। বাজার থেকে এটা সেটা কিনে আনবে। ছেলেটা এটা ওটা খেতে পছন্দ করে। ওখানে ওর খাওয়ার কত কষ্ট।

আসবার দিনে ওর মায়ের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই শুরু হয় এয়ারপোর্টে যাবার প্রস্তুতি। যানজটে আটকে পড়ার ভয়ে আগেভাগেই এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ঘন্টাখানেক আগেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাওয়া। দুর থেকে ইমিগ্রেশনের লাইনে ছেলেটাকে দেখতে পাওয়া মাত্রই তার সেকি উচ্ছাস। আশপাশের লোকজনের অভিব্যক্তিতে আমি কখনও সখনও বিব্রত হলেও তার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তাকে নাগালের মধ্যে পাওয়া মাত্রই তাকে জড়িয়ে ধরে কতযে কথা। আর দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে আনন্দাশ্রু। প্রায় তিনটি বছর ধরে এমনটিই চলছে। তবে এই কবছরে ছেলেটা চলে যাবার সময় কখনও তার মা তাকে বিদায় দিতে এয়ারপোর্টে যায়নি।

এবার যাবার কয়েকদিন আগে থেকেই মা-ছেলেতে বাহাস শুরু হয়েছে। মা এর কথা, পাশ করে দেশে ফিরে আসতে হবে। আর ছেলে তার মাকে বোঝাবার চেষ্টা করছে যে উচ্চতর শিক্ষার জন্য আরেকটি স্কলারশিপের চেষ্টা করবে। না পেলে কিছুদিন চাকরি করে আবার লেখাপড়া শুরু করবে। এখানে ফিরে আসলেতো তেমন ভাল চাকরি পাওয়া যাবেনা। তাছাড়া এখানকার যানজট, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি বেশ কিছু বিষয়ে পার্থক্যটা তার চোখে পড়েছে। এসব কারনে ছেলে তার মাকে এখনই কোন কথা দিতে পারছেনা। মা ও নাছোড়বান্দা। কদিন ধরে এই চলল। যাবার দিন ছেলেটা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলে গেল, "বিদেশে আমারকি মন খারাপ হয়না, তোমাদেরকে কি আমি মিস করিনা। দেশের অবস্থা একটু ভাল হলে, সুযোগ সুবিধা তৈরি হলে নিশ্চয় ফিরে আসবো।"

আর আমি ভাবছি, এই প্রজন্মটাও নিশ্চয় তাদের দেশটাকে ভালবাসে। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনদের মাঝেই থাকতে চায়। কিন্তু আমরা তাদেরকে উপযুক্ত কাজের নিশ্চয়তা, পরিবেশ, সুযোগসুবিধা ইত্যাদি দিতে ব্যর্থ হয়েছি। এ ব্যর্থতা আমার। তাই তাদেরকে পরবাসী হয়ে যেতে দেখছি। তারপর আরও পরে একদিন পরও হয়ে যাচ্ছে। এটাই বোধহয় বর্তমান সময়ের নির্মম বাস্তবতা।

লেখাটা সম্ভবত তেমন কিছু হয়নি। মনটা বড়ই বিষন্ন। তাই মনে যা এল লিখে ফেললাম। পছন্দ না হলে নিজগুনে ক্ষমা করবেন।

লিখেছি : প্রৌঢ়ভাবনা


মন্তব্য

অপছন্দনীয় এর ছবি

মনটা খারাপ হয়ে গেলো মন খারাপ

আমার পৃথিবীতে আপনজন বলতে এক মা ছাড়া কেউ নেই - আমি একমাত্র সন্তান। মা'র বয়স চৌষট্টি - ডায়াবেটিস প্রায় ত্রিশ বছর হলো, দুই বেলা ইনসুলিন নিতে হয়, নিজেই নেয়। পুরো বাসায় একা থাকে, কাজের মেয়েও নেই।

বাইরে পড়তে আসার প্রথম অফারটা ছিলো M.Sc. Leading to PhD. ফিরিয়ে দেয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে মায়ের কাছে থাকা অন্যতম প্রধান কারণ। সে সময় তার সাথে বেশ মতবিরোধও হয়েছিলো, তবে উল্টোদিকে - আমি আসতে চাইনি সে পাঠাতে চাচ্ছিলো। এক বছর পরে যখন দ্বিতীয় অফারটা পেলাম তখন তার কারণেই আসতে হলো - অন্য কিছু কারণও ছিলো অবশ্য। কান্নাকাটি তো দূরের কথা, এয়ারপোর্টে এসে বিদায়টাও দিয়েছিলো হাসিমুখেই। মা ভেঙে পড়লে আমার পক্ষে এখানে আসাটা কোনমতেই সম্ভব হতো না।

আমার মা এরকমই। ভেতরে যত কষ্টই লাগুক মুখে কিছু প্রকাশ করবে না। ২০০৪-এ ডাক্তারের ভুলে আমার অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে প্রায় আটচল্লিশ ঘন্টা সেটা আনডিটেক্টেড ছিলো। অ্যাপেন্ডিক্স ফাটলেই রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না, সেখানে এতক্ষণ পার হয়ে গেলে তো প্রশ্নই আসে না। পরে যখন ধরা পড়লো তখন আমার সামনেই সার্জন বলে দিলেন যে আমাকে বাঁচানো পৃথিবীর কারো পক্ষেই সম্ভব না - শুধুমাত্র হাত পা গুটিয়ে মৃত্যুটা দেখতে চান না বলে তিনি অপারেশনটা করতে চান - কিছু হবে না জেনেও। সেই মুহূর্তেও সে একটুও ভেঙে পড়েনি, এক ফোঁটাও কাঁদেনি - বরং খুব শান্তভাবে বলেছিলো এগ্রিমেন্ট পেপারগুলো নিয়ে আসতে। প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে চলা পুরো অ্যাবডোমেন ওপেন করা মেজর অপারেশনটার সময়ে নাকি ওটির বাইরে চুপচাপ একটা চেয়ারে বসে ছিলো - কোন কান্নাকাটি না করে বা কথা না বলে। পরের বারো দিন কাটিয়েছে আমার বিছানার পাশে বসে - সারা দিন রাতে একটুও না ঘুমিয়ে। যেদিন ডাক্তার বলেছেন আর কোন ভয় নেই, সেদিন ঘুমাতে গেছে। পরে একজন জিজ্ঞেস করেছিলো, "এতবড় একটা ব্যাপার, আপনি একটুও কাঁদলেন না!" মা উত্তর দিয়েছিলো, "কাঁদলে কি সুস্থ হয়ে যেতো? ওই সময়ে ওর জন্যই দরকার ছিলো প্রি-অপারেটিভ ফর্মালিটিগুলো সম্পন্ন করা, আমি সেটাই করেছি।"

এখানে প্রতিটা মুহূর্ত দুশ্চিন্তায় থাকি। আর প্রতিদিনই ফোন করে আশ্বস্ত করে সে ভালো আছে আর আমি যেন কোন চিন্তা না করি। কিন্তু তাই বলে চিন্তাটাতো আর যায় না।

অপছন্দনীয় এর ছবি

বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, লেখায় চলুক হাসি

guest_writer এর ছবি

আপনার মন্তব্য থেকে ধারনা জন্মাল আমার ছেলেটাও নিশ্চয় আপনার মত করেই ভাবে। আপনার অনুভুতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

আপনার মমতাময়ী মাতা কে শ্রদ্ধা...


_____________________
Give Her Freedom!

সজল এর ছবি

আপনার অনুভূতি ছুঁয়ে গেলো। বিদেশে থেকে যাওয়া হয়তো 'প্র্যাগমাটিক' ব্যপার। কিন্তু দেশ ছাড়ার সময়ই সবার জানার কথা দুই দেশের পার্থক্য, দুই দেশের পুল আর পুশ ফ্যাক্টরগুলো। আশা করি এই দ্রুতগতির যোগে কে কোন দেশে থাকে সেটা কাছে থাকার ব্যাপারে কোন নিয়ামক হবে না।

শিরোনামে এতগুলো ডট না দিয়ে, তিনটি ডট দিলে ভালো দেখাত। আর আপনার লেখার শেষ লাইনের আগ পর্যন্ত মনে হচ্ছিলো আপনি একজন "বাবা" কিন্তু শেষ লাইনে কনফিউজড হয়ে গেলাম হাসি । লিখুন নিয়মিত।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

guest_writer এর ছবি

নতুন লিখছি। লেখালেখির অভ্যাস নাই। এই মনের ভাব প্রকাশ করা আরকি। আপনার উপদেশের জন্য ধন্যবাদ।

নজমুল আলবাব এর ছবি

মন খারাপ করা একটা লেখা। এতো বেশি ছুঁয়ে গেলো।

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ।

তিথীডোর এর ছবি

ভাল লাগা জানাতে লগালাম। চলুক
আরো লিখুন... হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

guest_writer এর ছবি

সাহস জোগাবার জন্য ধন্যবাদ।

পাগল মন এর ছবি

লেখাটা মন ছুয়ে গেল।
পরবাসী হবার ব্যাপারে দুই পয়সা:

  • দেশে আমার ধারনা অনেকেই ফিরতে চায় কিন্তু অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আর সামাজিক নিরাপত্তার অভাব সেই ইচ্ছাকে গলা টিপে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট।
  • এছাড়া আছে চাকুরীক্ষেত্রে হতাশা। আপনি যখন যথেষ্ট যোগ্য হওয়ার পরেও প্রাপ্য সম্মান না পাবেন তখন আপনার মধ্যে হতাশা তৈরি হবেই, সেটা অনেক ভালো ভালো চাকুরী করা ছেলেমেয়েকে বিদেশে আসতে উদ্ধুদ্ধ করছে।

প্রথম প্রথম এসে বাবামায়ের জন্য সারাক্ষণ মন খারাপ থাকত, মনে হত কবে শেষ হবে দেশে ফিরে যাব। কিন্তু এখন মনে হয় কিছুদিন পরে আমার নিজেরও ছেলেমেয়ে হবে। আমি কিভাবে তাদেরকে দেশের যে অবস্থা সেখানে নিয়ে যাব। যদি আল্লাহ না করুক কিছু হয়ে যায় তাহলে নিজের কাছে সারাজীবন অপরাধী হয়ে থাকতে হবে, মনে হবে দেশে না ফিরলে হয়ত এটা না-ও হতে পারতো।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

guest_writer এর ছবি

এই ভয়টাইতো তার মা করছে। ছেলেটা হয়ত ভেবেচিন্তে ওখানেই এ্যাডজাস্ট করে নেবে। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুনির্দিষ্ট মতামতের জন্য।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

আপনি আবার কীবোর্ড নিয়ে বসেছেন, দেখে ভালো লাগলো
মন খারাপ করা লেখা। যখনই মন খারাপ হবে, কীবোর্ড নিয়ে বসে যাবেন। দেখবেন, মন অনেকখনাই হালকা হয়ে গেছে

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

আশফাক আহমেদ এর ছবি

যে কথাটা লিখতে ভুলে গেছি
সবসময় প্রবাসে যাওয়ার আগে ও পরে সিনিয়র ভাইয়াদের লেখা পড়ে এসেছি। আজ একজন বাবার লেখা পড়লাম। অন্যরকম লাগছে

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

guest_writer এর ছবি

হ্যাঁ, বসে পড়লাম বইকি। লেখাটা গভীর রাতে পাঠিয়েছিলাম। ঘুম আসছিল না। সাহস করে যা মনে এল লিখে ফেললাম। সত্যিই মনটা হালকা হয়ে গেল। প্রবাসে ভাল থাকবার চেষ্টা করবেন। শেয়ার করবার জন্য ধন্যবাদ।

সাত্যকি. এর ছবি

অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল। একদিন আমিও হয়ত দূরদ্বীপবাসী হয়ে যাবো। গভীর রাতে মহাবিরক্ত হয়ে মায়ের ফোন ধরব।
দেশে ফেরার ইচ্ছা একদিন মরে যাবে। ভাববো, আরেকটু টাকা পয়সা করে নিই। তারপর মাকে এখানে নিয়ে আসা যাবে।
এরপর টেক্সাসের নদীতে আরো পানি গড়াবে। আমার রক্ত থেকে জন্মাবে লালকমল-নীলকমল।
একদিন একটা ফোন আসবে। ফ্রম বাংলাদেশ। আমি বিরক্ত হব। শেষবারের মত।
............

আমিও আপনার ছেলের বয়সী। আপনাকে কি বলে ডাকবো? হাসি

guest_writer এর ছবি

আশা করবো এমনটি যাতে না হয়। ভাল থাকবেন।

অপরাজিত অপরাজিতা এর ছবি

কষ্ট লেগেছে..........বাস্তবতা...... মন খারাপ

আম্মু কে ছেড়ে থাকার কথা চিন্তা করলেও আমার কান্না পায়।

ভালো লিখেন আপনি হাসি

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

বন্দনা কবীর এর ছবি

আমার বড় ছেলেটা বড় হচ্ছে আর এখন থেকেই নিজেকে শাষন করা শুরু করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-তে চান্স পেলে ছেলেকে এখানেই পড়াবো নইলে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবো। দূরে থাকুক ছেলে তবু ভাল থাকুক। হায়াত থাকলে দূর দেশে থেকে হলেও কিছুটা মানুষ তো হোক। ইদানিং আমি নিজেই হতাশাগ্রস্ত্য দেশের অবস্থা নিয়ে। তাই এখন থেকেই চোখের জল শুকিয়ে নিচ্ছি একটু একটু করে কেঁদে নিয়ে। সব স্বপ্নই তো পূরণ হয়না, তাই ছেলেকে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর স্বপ্নটাতেও ছাড় দিয়ে রেখেছি।

অনেক মন খারাপ হয়েছে আপনার ছেলের মায়ের জন্য। লেখাটা পড়তে পড়তে নিজের ভবিষ্যত দেখে নিজের জন্যও মন খারাপ হল। কিছু না লিখে তাই পারলামনা।
আমারো দুটো ছেলে। ছোটটাকে যতদিন কাছে রাখতে পারবো ততদিন ওকে জড়িয়ে মড়িয়েই থাকবো। বড় হলে ছেড়ে দেবো। ছেলে তো, ছাড়তে তো একদিন হবেই। না ছাড়লে চরে খাওয়া শিখবে কি করে?

নিজে মা বলেই বুঝি মায়ের আকুতিতে কখনোই ফাঁক থাকেনা। ভাল থাকুন।

guest_writer এর ছবি

ইদানিং এধরনের সমস্যা অনেক পরিবারেই দেখা দিয়েছে। যে বয়সে সন্তানদের পিতা-মাতার সাথে লেপটে থাকার কথা ( আমি কিন্তু মধ্যবিত্তের উদাহরণ টেনেছি) সেই বয়সেই তারা পরবাসি হয়ে যাচ্ছে। কিছুইকি করার নেই ? কাছে থাকলে অধবা একই শহরে থাকলে বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবারা অনেক ভরসা পান। নিদেনপক্ষে বিপদের সময় কাজে লাগে। হয়ত স্বার্থপরের মত করে ভাবছি। কিন্তু ছোটবেলা থেকে যে দরদ দিয়ে বড় করে তুলেছি তাকি সহজে ভোলা যায় । চরে খাওয়া শেখার জন্য কি পশ্চিমেই যেতে হবে ? এদেশে হবেনা ?

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার মত করে চেষ্টা করব মনটাকে শাসন করে নিতে। ভাল থাকবেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

এইটা অবশ্যই অভ্যাসের ব্যাপার। ইউরোপ-আমেরিকার সমাজের নিয়মই হল ছেলেপিলে ইস্কুল পাশ করে গেলেই বাপমায়ের বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। প্রথমে কলেজে পড়ার জন্য (বাধ্যতামূলক হোস্টেল), তারপর চাকরি-উচ্চশিক্ষা যা-ই করুক নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের মত থাকবে। কয়েকদিনের জন্য বাড়ি ফিরল সে একরকম, বেশিদিন থাকতে ছেলেরাই তখন অস্বস্তিতে থাকে। বাবা-মা নিজেদের ছোটবেলাতেও এমনই করেছিল, চারপাশেও সবাই তাই করছে, তারা অভ্যস্তই হয়ে থাকে। আমাদের দেশে অনেকে সারাজীবনই বাবা-মার সঙ্গে কাটায়, সেটা এদেশে ভাবাই কঠিন। এমনও হয়েছে, ছেলে মায়ের বাসায় টানা কয়েক মাস থাকায় মা ভাড়া দাবি করছে। আপনারা চাওয়ার কথা ভাবতে পারবেন?

কৌস্তুভ এর ছবি

বাস্তবতার কথাগুলো সরল ভাষায় লিখেছেন। এরকম সব তরুণ প্রবাসীর বাবা-মায়েরই হয় মনে হয়।

এখন অবশ্য আমেরিকাগামী ভারতীয়দের একটা বড় অংশ আবার দেশে স্থায়ীরকম ফিরে আসছে সফলভাবে। এতেও আবার আমেরিকান ইউনি-দের একটা অংশের ক্ষোভ, যে আমরাই খাইয়ে-পড়িয়ে ডিগ্রি পাওয়ালাম, তারপর আমাদের দেশের কোনো কাজে না লেগে চলে গেল দেশে। স্কিলড লেবার-এর সবারই দরকার। বাংলাদেশের যে অধিকাংশ প্রবাসীই আর ফিরে আসেন না, সেটা আমিও দেখেছি। ফেরার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা দরকার। এই একই অবস্থা চীনেরও - যারাও ওই 'সোশালিস্ট' পরিবেশ থেকে বেরিয়ে চলে আসতে পারে, আর ফিরতে চায় না...

guest_writer এর ছবি

আপনি সত্যটাকেই সামনে নিয়ে এসেছেন। তারপরও মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্ট বিষয়টি কি অত সহজে মেনে নিতে পারছে ? পরিবেশটা তৈরী হবার কি কোনই সুযোগ নেই। মনটাকে কঠিন করার চেষ্টা করতে থাকি।

আশালতা এর ছবি

চমৎকার লেখা। চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ।

শিশিরকণা এর ছবি

আমার আর কিচ্ছু চাই না। দুই বেলা ভাত জুটলেই চলবে, কেবল কাজ করার সুযোগ চাই। তারেক মাসুদ/ মিশুক মুনীর, ড: ইউনুস এরা যেমন দেশে ফিরে দেশের জন্য নিজেদের মেধা শ্রম কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন, শুধু সেটুকু সুযোগ চাই। সৎভাবে কাজ করে আয়ের সুযোগ। কিন্তু সবখানে হাত পা বাধার জন্য দড়ি নিয়ে আমলা-মন্ত্রীরা বসে আছেন। এদের ডিঙ্গিয়ে দেশের জন্য কিছু করব কিভাবে? অসহ্য লাগে। মনে হয় মুখের উপর দরজাগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

guest_writer এর ছবি

দুঃখিত। আমরা যারা পূর্ববর্তী প্রজন্ম এটা তাদেরই ব্যর্থতা। আমরা আপনাদেরকে উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারিনি। ক্ষমা করবেন আমার প্রজন্মকে।

শিশিরকণা এর ছবি

সময় তো চলে যায়নি। যখনি ইচ্ছা শুরু করা সম্ভব! সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের দেশে গুনের কদর নেই। আপনার সহকর্মী যদি ভাল কাজ করে, তবে আপনি তার প্রশংসা না করে তাকে প্রতিযোগী ভাববেন এবং ব্যাপারটা ট্যাকল করবেন নেগেটিভ ভাবে। মানে আপনি তার সাথে পাল্লা দিয়ে আরো ভাল কাজ করার চেষ্টা না করে তাকে ল্যাং মেরে কেম্নে ফেলে দেয়া যায় সেটা আগে ভাববেন। মনোভাবটা এমন, ' আরে বেটা কোথায় অফিসে চা-বিড়ি খেয়ে আড্ডা দিয়ে, মাছি মেরে সময় কাটাচ্ছি, তোর এত কাজ করে দেখানোর দরকার কি> তুই কাজ করলে আমাদেরকে যে ফাকিবাজ দেখায় , এর থেকে তুইও বেটা বসে বসে মাছি মারতে পারিস না?" এজন্য যারা কাজ করতে চা, তারা পদে পদে বাধা পেয়ে অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন বা বিদেশ পাড়ি দেন। এই মনোভাবের কিছু একটা পরিবর্তন দরকার।
পুনঃ 'আপনার' বলতে কিন্তু ব্যাক্তি আপনাকে বুঝাই নাই, এই টাইপ জনগঙ্কে বুঝিয়েছি।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

বন্দনা এর ছবি

মায়েদের যেমন কষ্ট হয়, আমরা সন্তানরা যারা দূরে থাকি তাদের যে আর ও বেশী কষ্ট হয় মাকে ছেড়ে, পরিবার পরিজনদের ছেড়ে একা থাকতে। লিখাটা পড়ে খুব মন খারাপ হোল, আমার মা ও যদি লিখতো, হয়তো এসব কথাই লিখতো।

যুমার এর ছবি

ভালো লাগল আপনি হাতে কি-বোর্ড তুলে নিয়েছেন বলে।আপনার এই অনুভূতিগুলো চিরায়ত,বৈশ্বিক।আপনাদের যেমন কষ্ট হয় তেমনি কষ্ট হয় আমাদের ও।আমি পড়াশুনো করার জন্য ভিন দেশে যাইনি,কয়েকটা জেলা পেরিয়ে ঢাকা এসেছি মাত্র, তাতেই আমার স্কুল শিক্ষক মায়ের যে অপ্রকাশ্য ব্যাকুলতা দেখেছি!
কষ্ট পেয়েছি,মায়ের জন্য গোপনে কেঁদেছি বহুবার কিন্তু ঘরের মেয়ের আর ঘরে ফেরা হয়নি।
আপনি আমার শ্রদ্ধা জানবেন।

guest_writer এর ছবি

মায়ের প্রতি অনুভুতিটি ধরে রেখেছেন, জেনে ভাল লাগলো। আপনার প্রতি রইল অঘাত স্নেহ।

guest_writer এর ছবি

'অগাধ' শব্দটি ভুলক্রমে অঘাত হয়ে গেছে। শুদ্ধ করে নিলাম।

বাউন্ডুলে এর ছবি

খুব ভাল লাগলো... চলুক

guest_writer এর ছবি

আপনিতো বাউন্ডুলে। আপনারও কি মায়ের প্রতি ভালবাসাটি অটুট আছে ? থাকলে ধরে রাখবেন।

guest_writer এর ছবি

নিশ্চয় তাদের কষ্টটা অনুধাবন করতে পারছেন। আপনাদেরও কষ্ট হয় বৈকি। পরিবর্তন অবশ্যই প্রয়োজন। আর অনেকেই বলেন পৃথিবীটাতো এখন ছোট হয়ে এসেছে, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন ইচ্ছা করলেইতো দেখে আসতে পারেন। আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলব সেটা বিত্তবানদের জন্য, আমার মত মধ্যবিত্তের জন্য নয়।

guest_writer এর ছবি

ছলেটার অনুপস্থিতি মনটাকে খুব পীড়া দিচ্ছিল। আপনাদের মন্তব্যের প্রতিউত্তর দিতে দিতে মনটা অনেক হালকা হয়ে গেল। শেয়ার করবার জন্য আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য : প্রৌঢ়ভাবনা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বিদেশ গেলে ছেলে আমার পর হয়ে যাবে

একটু অন্যভাবে দেখি। আপনার এই আশঙ্কা আরো ভয়াবহ হতে পারে যদি এভাবে ভাবেন, "বিদেশ গেলে ছেলের বংশধররা দেশের পর হয়ে যাবে"।

কি বোঝাতে পারলাম না, তাই না? আমি ‘ইনফরমেশনাল ইম্পিরিয়েলিজম’ অর্থাৎ ‘সাম্প্রচারিক সাম্রাজ্যবাদ’-এর ইঙ্গিত করছি। সময় হলে এই গল্পটি পড়ুন। আর, হ্যাঁ আপনার মতামতের অপেক্ষায় থাকছি কিন্তু!

এই তো আপনার লেখা পেখম মেলতে শুরু করেছে। বলেছিলাম না, আপনার লেখনী শেকলে বাঁধা থাকবে না! হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

guest_writer এর ছবি

@ রোমেল চৌধুরী, আপনার পাঠান লেখাটি পড়লাম। আবারও পড়লাম। কোন কোন অংশ আরও একবার। কিন্তু পুরোপুরি আত্মস্থ করতে পারলামনা। লিংকটা রাখলাম, নিরিবিলি কোন একসময় পড়বো। লেখাটা খুবই সম্বৃদ্ধ । তবে 'ইনফরমেশনাল ইম্পিরিয়েলিজম' সম্পর্কে আবছা একটা ধারনা আছে। আমাদের পরিবারে দুজন নির্ভেজাল কমুনিষ্ট আছে। আমার এক ভগ্নিপতি জাতিসঙ্ঘে চাকরি করে। সে আবার চরম বুর্জোয়া শ্রেণীর। দেশে থাকলে কখনও সখনও আমার বাসায় সারা রাত আড্ডার আসর জমে। তাতে রাজনৌতিক আলোচনাই হয় বেশি। আমাকেও সঙ্গ দিতে হয়। সেখান থেকেই এ যাবতীয় কিছু কিছু বিষয় সম্পর্কে একটা ধারনা তৈরি হয়েছে।

আর হ্যাঁ ঐযে লিখেছেন, "বিদেশ গেলে ছেলের বংশধররা দেশের পর হয়ে যাবে"। এই বেলা চুপি চুপি বলি, আমার পাঁচটি ভাই-বোন ৪০ থেকে ২৫ বছর মেয়াদে পরবাসী। তারা যখন মাকে দেখতে আসে তখন তাদের সাথে দু-একটি সন্তানও আসে। আমি এমনও দেখেছি, আমার এক ভাগ্নী সুটকেসে করে তার পুরো খাবার নিয়ে এসেছিল। অর্গানিক না কি যেন বলে ? সে এখানকার কোন খাবারই খায়নি। সে মেম সাহেবদের মত করে বাংলা বলে। আমার কোন উত্তর পুরুষ বাঙ্গালীত্ব হারাবে সেটা আমি এখনও ভাবতে পারিনা।
লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেল। ঐযে অভ্যাস। বলার মত কিছু না থাকলেও আমরা কেউ কেউ অনর্গল কথা বলে যাই। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

প্রৌঢ়ভাবনা

কৌস্তুভ এর ছবি

দাদা, দুই-তিন হাজার প্রজন্মে মানুষে তার আদিম আফ্রিকান উৎপত্তির অধিকাংশ চিহ্ন হারিয়ে বাঙালিতে (বা চীনা, বা ফরাসী) পরিণত হয়েছে। দুই-তিন প্রজন্মে বাঙালিরা মার্কিনি'তে পরিণত হবে, এ আর অভাবনীয় কী?

guest_writer এর ছবি

এই যেমন দুই প্রজন্ম আগে আমার পূর্বপুরুষেরা অখ্যাত এক ভড়গ্রামে থাকতেন। পর্যায়ক্রমে আজ আমি শিক্ষা, সংস্কৃতিতে পরিবর্তিত এক ঢাকাবাসী। গ্রামের সেই সংস্কৃতিতো ভুলেই গেছি। এও একধরনের ইমিগ্রেশন বইকি। বিষয়টা ভাবি বটে তবে নিজের ব্যাপারে মেনে নিতেই যত বিপত্তি।
ধন্যবাদ আপনাকে, বিষয়টি খোলাশা করবার জন্য। বাস্তবতার নিরিখে দেখার পরামর্শের জন্য।

প্রৌঢ়ভাবনা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

দুই-তিন হাজার প্রজন্মে মানুষে তার আদিম আফ্রিকান উৎপত্তির অধিকাংশ চিহ্ন হারিয়ে বাঙালিতে (বা চীনা, বা ফরাসী) পরিণত হয়েছে।

কৌস্তুভ,
মেনে নিতে পারলাম না। অবশ্য 'সবারই আদি পিতা আদম' এমনটি বিবেচনা করলে অন্যকথা।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সুরঞ্জনা এর ছবি

'সবারই আদি পিতা আদম' এই বিবেচনা থেকে ভাবনা মানে কি ঠিক জানি না, কিন্তু কৌস্তুভ ভাই খুব ভুল বলেননি।

আমাদের সবারই শুরু আফ্রিকার কোন এক কালো মায়ের গর্ভে।
ফসিল এবং নতুন সংযোজন, মানুষের জিন (gene) সাক্ষ্য দিয়েছে যে মানব জাতির শুরু ওখান থেকেই। আরো জানতে চাইলে দেখুন এই লিঙ্কে

এরপর মানুষ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে, পরিবেশের প্রভাবে আর জীবনযাত্রার প্রয়োজনেই বিভিন্ন জাতির মাঝে বাহ্যিক পরিবর্তন গুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এসেছে। চিন্তাধারার পার্থক্যও সে কারণেই। সুতরাং না মানার আসলে এখানে কিছু নেই। হাসি

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

কৌস্তুভ এর ছবি

ঠিক, ঠিক। উপরি কেবল আমার একটা লেখার লিঙ্ক দিয়ে গেলাম, খানিকটা প্রাসঙ্গিক।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বোন সুরঞ্জনা,
আপনার লেখাটিতে দেয়া লিংক ধরে মানব ইতিহাসের জেনোমিক এনালাইসিস সম্পর্কে ভালো ধারণা পেলাম। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।

এবার আপনার মন্তব্যে আসি,
'সবারই আদি পিতা আদম' বলতে বংশলতিকার সূত্রটির কথাই বলতে চেয়েছি। আমার মন্তব্যের কোথাও আমি বলিনি যে কৌস্তুভ ভুল বলেছেন। সেরকমটি যদি আপনার বা কৌস্তুভের মনে হয়ে থাকে তবে দুঃখপ্রকাশ করতে দ্বিধা নেই আমার। তবে আমিও যে ভুল বলিনি, সেটিও আমি নিশ্চিত।

কৌস্তুভের যে মন্তব্যের পিঠে আমি মন্তব্য করেছি তার সূত্র ধরে একটু উপরে তাকান, প্রৌঢ়ভাবনার প্রতিমন্তব্য, তার উপর আমার মন্তব্য। আলোচনার সূত্রপাত সেখানেই।

প্রেক্ষাপট বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, মানব জাতির সুলুক সন্ধান নয়। আমাকে ইদানীং ‘ইনফরমেশনাল ইম্পিরিয়েলিজম’ অর্থাৎ ‘সাম্প্রচারিক সাম্রাজ্যবাদ’ খুব বেশী চিন্তাগ্রস্থ করছে। কেন, এই গল্পটি পড়লে কিছুটা হয়ত বুঝতে পারবেন। আমি মনেপ্রাণে বেশীটুকুই নিজেকে বাঙালি বলে মনে করি, বিশ্ব-নাগরিক অল্পটুকু। তাই আমি আমার বাঙালি অস্তিত্ব নিয়ে সদাই ভাবিত। উৎকণ্ঠিত সেই সংস্কৃতি নিয়ে যার বুনন এমন একটি ভাষায়, এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র যে ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়েছিল। হতে পারে এ আমার কুপমণ্ডুকতা, তবুও অহংকার। তাই জেনোমিক এনালাইসিসের শক্ত যুক্তি আমাকে সহসাই আমার মায়ের গন্ধ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় না। আমার মেনে না নেওয়ায় 'যুক্তি' নয় বরং শক্তিটুকু ওখানেই। সুতরাং মেনে না নেবার অনেক কিছুই আছে। আমিও প্রবাসে ছিলাম দীর্ঘদিন, ছুটি পেলেই মায়ের কাছে ছুটে এসেছি, বিশ্ব-মাতার কাছে গিয়েছি ক্বচিৎ। আপনি অনেক বুদ্ধিমতী, সেই সাথে সংবেদনশীল। আমার কথাগুলোর শাব্দিক অর্থের তলায় যে শব্দোত্তর অভিজ্ঞান লুকিয়ে আছে সেটি আপনি ঠিক ঠিক বুঝে ফেলবেন।

বাঙালির ইতিহাস নিয়ে ঢের উইকি, আন্তঃজাল লিংক, বই, পুস্তক, রেফারেন্স, তত্ত্ব তালাশ দেয়া যেত। সেখানে জোনোমিক এনালাইসিসের বাইরেও কিছু ছিল। কিন্তু তার তো কোন প্রয়োজন মনে করছি না। হয়ত সেগুলোর চাইতে আরো অনেক বেশিই পড়াশোনা রয়েছে আপনার। কিন্তু,

কলমের তো দরকার নেই -- আংগুল নড়ে উঠলেই 'মা'
কালির কি অপেক্ষা আর? অশ্রুতেই 'মা'
উচ্চারণের আগেই তো ঠোঁট বিযুক্ত করলেই 'মা'
নিশ্বাস নেবারও দরকার হয় না, শ্বাস ফেললেই 'মা'

'সত্যানুসন্ধানের পথে বিজ্ঞানই একমাত্র পন্থা' এ প্রতীতি জন্ম দেবার জন্য বিজ্ঞানকে আরো বহু বহু যুগ অপেক্ষা করতে হবে বলেই মনে হয়।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

sahoshi এর ছবি

চিন্তা করেন না, আমেরিকার অর্থনীতির যা অবস্থা, কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ছেলে তার ভুল বুঝতে পারবে - ওসব আমহার্স্ট কলেজ ফলেজের ডিগ্রী থেকে ঢাবির আইবিএর ডিগ্রী নিয়ে দেশে চাকরী করাটা অনেক বেশী সিকিউরড

*** আমি উপরের কথাগুলো ইচ্ছা করেই খুব কাটঠোট্যাভাবে লিখেছি। আমেরিকার বর্তমান অর্থনীতির অবস্থা জেনেও বাংলাদেশের তরুনরা এখনো আমেরিকায় আশার স্বপ্ন দেখছে - তাদের স্বপ্ন আর বাস্তবতার ফরাক বোঝানোর জন্যই মন্তব্যটাকে কাট-খোট্টা করে লেখা।

guest_writer এর ছবি

সাহস করেই লিখেছেন। আপনার কথামত আমেরিকার অর্থনীতি যদি এরকমটাই থাকে তাতে আর যার যাই হোক আমার জন্য সেটা স্বস্তির তো বটেই।

ধন্যবাদ আপনাকে, শান্তনার বানী শোনানোর জন্য।

তারেক অণু এর ছবি
guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ।

রু (অতিথি) এর ছবি

লিখতে থাকুন, থামবেন না।

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ।

দ্যা রিডার এর ছবি

আপনার আবেগ গুলো বড্ড ছুঁয়ে যায় ... লিখতে থাকুন হাত খুলে। পাঠক হিসেবে সঙ্গে আছি হাসি

guest_writer এর ছবি

ভাই/বাছা, আমি লিখি আমার অনুভুতিগুলো শেয়ার করবার জন্য। দেয়ালের সাথেতো আর কথা বলা যায়না। অগত্যা সচলায়তন। শক্ত লেখা আমার আসেনা। সহজ ভাবে সহজ কথাগুলো লিখে যাই। আপনারা একটু সহজভাবে নিলেই বাঁচি।
সাহস দেবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। আনন্দে থাকবেন।

প্রৌঢ়ভাবনা

সুরঞ্জনা এর ছবি

আপনার লেখা খুব ভালো লাগলো। আপনার ভাষা সুন্দর, আর লেখায় সততা আর আন্তরিকতা স্পষ্ট।
একজন সদস্য দূরে গেলে বাড়িতে যে ছন্দপতন হয়, এটার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া যায় কি করে এখনো বুঝতে পারছি না। আমার ছোট ভাইটাও চলে যাচ্ছে, মাসের শেষে হয়তো।

বাবা-মা-আমি, আমরা এখনো যোগার-যন্ত্রেই এত ব্যাস্ত যে মন খারাপ করার ফুরসত পাচ্ছি না। কিন্তু ও চলে গেলে যে কি হবে, সেটা কল্পনা করতে পারছি না।

আপনি অনেক লিখুন। সহজ, সত্য লেখা পড়লে অন্য রকম ভালোলাগা তৈরী হয় ।
শুভকামনা রইলো।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

guest_writer এর ছবি

সুরঞ্জনা, আপনাকেই বলছি, পরিবারে সবাই একসাথে থাকাটা একসময় অভ্যাসে পরিনত হয়ে যায়। এর কোন ব্যতিক্রম ধারনায় আনা যায়না। এই যেমন 'দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বোঝা' আরকি। প্রথম প্রথম একটা শুন্যতা সৃষ্টি হবে, সেটাও পরিবারে সবার ক্ষেত্রে একই রকম নয়। সম্পর্কের গাঢ়তার বিচারে পৃথক পৃথক অনুভুতি। তারপর আরও পরে অভ্যাসে পরিনত হবে ( সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যেমন : মা )। অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।

দোয়া করি, শীঘ্রই যেন মানিয়ে নিতে পারেন। আরেকটি কথা, ঐ সময়টাতে মাকে একটু সঙ্গ দিবেন।

আমার লেখা ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো। আমি সহজ কথা সহজভাবে ছাড়া লিখতেও পারিনা। ভাষাজ্ঞান আমার যথেষ্ট সম্বৃদ্ধ নয়। ভালো থাকবেন। অন্তত আগামি কিছুদিন ভালো থাকার চেষ্টা করবেন। আর মাকে ভাল রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।

প্রৌঢ়ভাবনা

miti এর ছবি

অনেক ভালো লাগল ।

guest_writer এর ছবি

অনে ধন্যবাদ আপনাকে।

পাঠক এর ছবি

সচলায়তনের লেখা পড়ছি বেশ কিছুদিন ধরেই। 'সচলায়তনের নীরব পাঠকবৃন্দকে কিভাবে আলোচনায় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা যায়' শীর্ষক লেখাটিই আমাকে এই লেখাটির উপর মন্তব্য প্রদানে উৎসাহিত করেছে।

আপনার লেখাটি আগেই পড়েছি। মন্তব্য করার প্রক্রিয়াটি জানা ছিলনা। প্রক্রিয়াটি জানার পর দেরিতে হলেও মন্তব্য করবার লোভ সামলাতে পারলামনা। লেখাটিতে আপনি খুব সহজ ভাষায় প্রবাসী সন্তানের মায়েদের আকুতিটি, তাদের মর্মপীড়াটি খুবই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ছোট্র বাবুইপাখি

guest_writer এর ছবি

দেরিতে হলেও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

প্রৌঢ়ভাবনা

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মেধাগুলোকে দেশের কাজে কীভাবে লাগানো যায় সেটা নিয়ে কেউ চিন্তা/কাজ করছে না!!!! আই বি এ ই তো মনে হয় ভালো ছিল। যাই হোক শুভ কামনা রইলো!!!


_____________________
Give Her Freedom!

কল্যাণF এর ছবি

ভাল লেগেছে, অনেক বড় মন্তব্য লিখে ফেলেছিলাম কিন্তু মুছে ফেললাম কেন যেন! লিখতে থাকুন, সাথে আছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।