এ ও সে ও : ৫ : উড়ে যাওয়া নিশূতি মানুষের শহর

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: রবি, ২৫/০৯/২০১১ - ৯:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘বড় হলে আমি এই নিষ্ঠুর শহরটা থেকে ঠিক পালিয়ে যাবো। তুমি কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারবে না, মা।’
মাকে বলি আমি। মা হাসে। তারার আলো হয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
আর শহরটা স্টিল ক্যামেরায় তোলা একটা ছবি হয়ে চোখের উপর লেপ্টে থাকে।
নীচে রাস্তায়, উপরে ফ্লাইওভারে - বিবর্ণ বাস আর জ্বলজ্বলে গাড়িগুলো থমকে আছেতো আছেই, একটুও নড়াচড়ার নাম নেই। সেই কতক্ষণ । ভিড়ের মধ্যে জমে থাকা কোন একটা গাড়ি থেকে পুরনো দিনের একটা গান ভেসে আসে- ‘চলো না ঘুরে আসি অজানাতে- যেখানে নদী এসে থেমে গেছে’। ব্যান্ডের প্রথম যুগের গান এটা। হ্যাপি আখন্দের এই গানটা আমাদের খুব প্রিয় ছিল। এখানে ওখানে ঘুরতে গেলে গানটা বেসুরো গলায় বেজে উঠতো গুন গুন করে। সেই সব দিনের কথা মনে পড়তেই গাড়িগুলো কে জানে কোন কারণে, অকারণ হর্ণ বাজাতে শুরু করে। তার তলে চাপা পড়ে গানটার সাথে সাথে পুরনো দিনগুলোও হারিয়ে যায়।
সকাল সন্ধ্যা জুড়ে এই ঢাকা শহরের এই এক ঘোর। প্রতিদিন। ফ্লাইওভারের নিচে একটা ট্রেন ঝমঝম শব্দ তুলে দূরে কোথাও চলে যাচ্ছে। মনটা খারাপ হয়ে যায়। কেন জানি না, সবসময়ই কোন ট্রেন চলে যেতে দেখলে মনে হয় - এই ট্রেনটাতে আমার যাওয়ার কথা ছিল। আমাকে ফেলে রেখে সে এখন একলা একলা চলে যাচ্ছে। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বুক চিরে বের হয়ে ট্রেনটার পিছু নেয়। আমি আটকে থাকি। ভিড়ে কাঁচুমাচু বাসটার জানালার কাঁচ গলে একফালি আকাশ দেখা যায়। সেই আকাশে সন্ধ্যা ছায়া ফেলছে। একঝাঁক পাখি চোখে পড়ে। এরপর আর একঝাঁক। তারপর আর একঝাঁক। শেষ বিকেলের রোদ পড়ে ওদের গা থেকে সোনালী আভা বের হচ্ছে। প্রত্যেক শীতে ওরা আসে। এই যান্ত্রিক শহরের পেটের মধ্যে ওরা কোথায় লুকিয়ে থাকে? এখানেতো মানুষেরই জায়গা মেলে না।
কথাটা মনে হতেই মাথায় হুস করে ভেসে ওঠে শহরের কোল জুড়ে রমনা পার্কে এক সন্ধ্যার ছবি। পার্কটা জুড়ে সবুজ গাছ, সাজানো গোছানো মসৃন। একটা শান্ত জলাশয়, সেটাও সবুজ হয়ে থাকে। ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ বয়। তবু কেমন জানি বিবর্ণ। ক্লান্ত মানুষের মত। তবুও ভাল লাগে। এতটুকু ভাল এই শহরে আর কোথাইবা আছে। কাজ ভুলে আমি পার্কে ঢুকে পড়ি। ধুলোয় মাখা সবুজ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মাথা উচুঁ করে আকাশ দেখি। কাক। আর শুধু কাক। বিকেলের মরা আলোয় কাকগুলো আকাশ দখল করে আছে। অন্য কোন পাখি নেই কোথাও। আকাশ জুড়ে উড়ে চলা কাকদের ফাঁক গলে ঐ উচুঁতে কয়েকটা চিল- স্থির ডানা মেলে ভেসে আছে। বুকটায় একটা শূন্যতা জঁমাট বাঁধে। কোথাও কোন আশা নেই।
হাঁটতে শুরু করি। গাছ, মানুষ, বিকেলের মরা বিষন্ন আলোর ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ চমকে দাঁড়িয়ে পড়ি। একটা বিরাট গাছ। বট অথবা পাকুর।
গাছজুড়ে জুড়ে পাকা ফলের মত শ’য়ে শ’য়ে বাদুর, উল্টো হয়ে ঝুলছে।
কাছে গিয়ে বাদুরগুলোকে দেখি। আশ্চর্য্য। আবার চমকে উঠি। গলাটা শুকিয়ে আসে। বাদুরের মুখগুলো অবিকল মানুষের নবোজাত শিশুর মুখের মত- যেন চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছে। চোখ ফিরিয়ে নিতে গিয়েও আমি আরেকবার তাকাই। মুখগুলো যেন হাসছে। সন্ধ্যা নামছে তখন। আমার ভয় লাগে। দ্রুত সরে যাই।
রাস্তায় তখন রাতের আলো জ্বলে উঠেছে। বেগুণী, লাল, কমলা, নীল, হলুদ, সবুজ আলোর ভেতর দিয়ে হেঁটে যাই কিন্তু ঘোর কাটে না। ট্যাক্সি, বাস, ট্রাক আর প্রাইভেট গাড়ির তীব্র হেডলাইট আর হর্ণের ভেতরে হটাৎ হটাৎ গাছের ডাল ধরে উল্টে থাকা নবজাত শিশুর মুখগুলো উঁকি দিয়ে যায়। আলো ঝলমলে বিল্ডিংগুলোকে পাকুর কিংবা বট গাছটার মত লাগে। যেন শহরের ভেতরে আর একটা শহর।
উড়ে যাওয়া নিশুতি মানুষের শহর।
ভ্যাম্পায়ার আকাশ দিয়ে উড়ে যায়। প্রিন্স ড্রাকুলার ফ্যাকাসে রক্তহীন মুখটা ব্রাম ষ্টোকারের বই থেকে বেরিয়ে চারপাশে হেঁটে বেড়ায়। শৈশবের ভয়তাড়িত রাত জেগে ওঠে। ভয়ে পেছনে তাকাতে পারি না। খোলা জানালা দিয়ে এই বুঝি উড়ে এলো। এলোমেলো ঘুরে বেড়াই, অন্য কাজে মন বসাতে চাই কিন্তু কি এক অজানা আকর্ষণ ছেলেবেলায় টেনে নিয়ে যায়। সেবা প্রকাশনীর নিউজপ্রিন্টে ছাপানো পেপারব্যাকের গন্ধ স্মৃতির ভেতর থেকে নাকে ভেসে আসে। কতশত বই। আমাদের ছেলেবেলা তৈরী হয়েছিল এইসব পেপারব্যাকের গন্ধে। বড়রা কিছুতেই পড়ার বইয়ের বদলে গল্পের বই পড়া পছন্দ করে না। রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে, মায়ের পুরনো শাড়ি দিয়ে তৈরী কাথার মিঠে গরম উত্তাপের ভেতরে মুড়ি দিয়ে বইটা মেলে ধরি। টর্চের আলোয় বইয়ের অক্ষরগুলো ভেসে উঠে। ভোরের আজানের শব্দ বেজে উঠা পর্যন্ত সারারাত অ্যালান কোয়াটারমেইন, আইভান হো, রবিনসন ক্রুশোরা কোথায় কোথায় সব অভিযানে বের হয়। ট্রেজার আইল্যান্ডের সেই খোঁড়া দস্যূ লঙজন সিলভার ক্র্যাচের খটখট শব্দ তুলে হেঁটে যায়। ওর কাঁধে একটা তোতা পাখি - একটু পর পর চিৎকার করে ওঠে। ঘুমের মধ্যে কে যেন গান গেয়ে ওঠে- ‘সিন্দুকটা মরা মানুষের, চড়াও হলো পনেরো নাবিক... আরেক বোতল রাম নিয়ে আয়... ইয়া হো হো কি মজা’ । রবিন হুড ধনুকে তীর জুড়ে লক্ষ্যস্থির করে। ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস বসে থাকেন -চারদিকে উদগীরিত লাভার ছাই আর ধোঁয়া উড়তে থাকে। বই এর শেলফটা নাচতে থাকে। তাকে তাকে সাজানো বইগুলো মনের মধ্যে থৈ থৈ রঙ বুনে। বিনিদ্র নিশুতি রাত, উতরোল দুপুর। হাকেল বেরি ফিন জানালায় মৃদু টোকা দিয়ে বলে- ‘ টম ঘুমিয়ে পড়েছিস-?’
ঘুম না- স্মৃতির ঘোর দুচোখ জুড়ে। স্মৃতির ঘোর কেটে যায় কারো হেড়ে গলার চিৎকারে। কেউ একজন খেকিয়ে উঠে -‘শালা সিগনাল ছাড়ে না কেন। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?’- আবার জ্যাম। জটলা। থমকে পড়ে থাকা। একজন ফোড়ন কাটে, ‘রাণী যাবেন গো- রাজরাণী, এইজন্য জায়গায় দাঁড়িয়ে স্যালুট করছে সবাই।’ নিথর পড়ে থাকা গাড়িগুলোর ফাঁক গলে নিয়নের আলোয় একটা ফেরিওয়ালা ছেলের মুখ ভেসে ওঠে। তার হাতে সুতোয় বাঁধা কয়েকটা বেলুন- আকাশে দুলছে। আমার খোকাভাইয়ের কথা মনে হয়। সাথে সাথে একটা সোনা রঙ ঝলকে ওঠে। আমি চিৎকার করে উঠি - ‘খোকাভাই’।
খোকাভাই। ডাকাবুকো টাইপের একজন মানুষ। উজ্জ্বল চোখজোড়ার দিকে তাকালে মনে হয় - সবসময়ই অনেক দূরে কোথায় জানি তাকিয়ে আছে। বিনুদি বলতো - ‘দেখিস, এই ছেলে ঠিক একদিন পালিয়ে যাবে’। সেই থেকে খোকাভাইকে আমার কাছে অন্যরকম লাগতো। একটা হাতছানি। আমি খোকাভাইয়ের পেছন পেছন ঘুরঘুর করি। খোকাভাই আমাকে পাত্তাই দেয় না। সোনালী ধানের থৈ থৈ গন্ধের ভেতর আকুল লাল রঙা ঘুড়িতে সুতো বাধে। আমি চুপচাপ বসে দেখি খোকাভাইকে। ভাবি- খোকাভাই একদিন পালিয়ে যাবে। পাকা ধানের গন্ধ- খোকাভাই এর গন্ধ মনে হয়। ততক্ষণে আকাশে ঘুড়িটা একটা লাল ফোঁটা পরিয়ে দিয়েছে। আমি হারিয়ে যাওয়া আমার লাল বেলুনটা দেখি।
বাবা একবার সূতোয় বাঁধা একজোড়া বেলুন কিনে এনেছিল - টুকটুকে লাল একটার রঙ , আর একটা সাদা। ওদের খালি ফন্দি কখন উড়ে যাবে। বিনুদি আর আমি লাল বেলুনটা হাতে নিয়ে দৌড়ে বেড়াই ঘরময়। ঘর পার হয়ে সামনের উঠোন, দুজনে সেখানে দাঁড়িয়ে আকাশের নিচে বেলুন দুটোকে দেখি। আকাশী আকাশের নিচে দুটো বেলুন বাতাসে কেমন দোল খায় - খোকা ভাইটা কোত্থেকে এসে বলে,
: জানিস বেলুনটা ছেড়ে দিলে চাঁদের দেশে চলে যাবে।
: এহ বাজে কথা!
বিনুদি ভেঙচি কাটে।
: সত্যি ...
বলেই কোথায় দৌড়ে চলে গেল ও। আমি লাল টুকটুকে বেলুনটার দিকে তাকাই। বেলুনটা ছেড়ে দিলে সত্যিই চাঁদের দেশে যাবে তো- ভাবতে না ভাবতেই বিনুদি সূতোটা ছেড়ে দেয়। বেলুনটা উড়তে উড়তে নীল আকাশে উড়ে চলে যায়। এরপরে আকাশে একদিন চাঁদ উঠেছে, টকটকে লাল রঙের। বিনুুদি সেই চাঁদের দিকে স্বপ্নালু চোখে তাকিয়ে বলেছিল বেলুনটা সত্যিই চাঁদে চলে গিয়েছিল রে।
: ঐ বেলুনটাকি সত্যি সত্যি চাঁদের দেশে চলে গেয়েছিল?
অনেকদিন পরে একবার বিনুদিকে একথা বলতেই বিনুদি যেন আকাশ থেকে পড়ে
: কী বলছিস এসব পাগলের মত - কিসের বেলুন ...?
আমি বোকামী ঝরাই। তাইতো কিসের বেলুন - কিসের চাঁদ। ঠনঠনে বা¯তবতা ঠাঠা রোদ্দুরের মত। বিনুদি, সোনারঙ, লাল বেলুন, খোকাভাই, চাঁদ সব সেই রোদ্দুরে ডুবে যায়।
কেউ সত্যিই কিছু মনে রাখে না।
খোকাভাই এখন কোথায়?
এখানেই হয়তো কোথাও। এই শহরতো সবাইকে গিলে খায়। শুরুতে মাথা তারপর সব। আমার নানুর কথা মনে হয়। তিনি এই শহরে কখনও আসেন নি। কিন্তু এই শহর নিয়ে তার একটি গল্প আছে।
নানু ছিলেন ট্রেন ষ্টেশনের মাষ্টার। তার শেষ জীবন কেটেছিল ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে মানুষ গুনে গুনে। প্রতিদিন কতজন করে শহরে চলে যায় আর কতজন ফিরে আসে - কোনদিনই তার এই হিসেব মেলে না। আমি শেষবার যখন নানুর সাথে দেখা করতে যাই, আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন-
: শহরটা কত বড় রে?
কত বড়? এককোটি মানুষ এর পেটের মধ্যে ঢুকে আছে - অনেক দেশে এত লোকই নেই। অনেক বড় নিশ্চয়ই। কিন্তু আসলে কি খুব বড়? কী আছে এই শহরটার মধ্যে? ভাবনার মধ্যে রুমী ভাই উঁকি দেয়।
রুমীভাই। বিদেশ যাওয়ার আগে সবাইই একটু কেমন যেন হয়ে যায়। একটু এলোমেলো- একটু উত্তেজিত - একটু অসহিষ্ণু। রুমী ভাইও তাই।
আমেরিকা যাবার ঠিক আগের দিন এসে বললো- বের হবি একটু। আমি বলি -চলো।
আমরা রিকশায় হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াই। রুমীভাই কেমন চুপ করে বসে ড্যাবড্যাব চোখে শহরটাকে দেখে। তাকে দেখে বুঝতে পারি সবকিছু তার কাছে এখন অন্যরকম লাগছে।
প্রতিদিন যেমন- চারপাশের সবকিছু তো সবকিছু এমনকি বাড়ির মানুষগুলোও যেন সিনেমার চরিত্রের মত লাগে। সবই যেন একটা ছবি - হাঁসের পালকে পানির ফোটার মত- স্পর্শ করলেও ঠিক গায়ে লাগে না। কিন্তু বিদেশ যাত্রার ঠিক আগের দিন আজকে তার কাছে ঠিক ওরকমটা লাগছে না। একটা একলা মানুষ ভিড়ের গাদাগাদি ঠেলে সামনে এগুনোর চেষ্টা করছে- কিন্তু কিছুতেই এগুতে পারছে না... তাকেও রুমীভাইয়ের কাছে খুব জ্যান্ত মনে হচ্ছে। জ্যাম রাস্তার পাশেই পসরা সাজিয়ে সারি সারি হকার হাঁকডাক করে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। ওদের হাঁকডাকটা কানে এসে বিধছে সুঁইয়ের মত। বিরাট বিরাট শপিং মলগুলো ফুটপাতের উপর পর্যন্ত উঠে এসেছে - হাঁটবার জায়গাটুকুও সে রাখেনি। তবুও শরীর ঐ জায়গায় কোনদিনই আটকাতো না- দিব্যি চলে যাওয়া যেত, কিন্তু আজকে শরীরটা আটকে যায়। ঝলমলে দোকানের পারদ লাগানো কাঁচে মিহিদানা সুরে ভিক্ষা চাওয়া বুড়ো লোকটার পাজরের হাড়ের ছায়া পড়েছে এটা নিজেরই ছায়া মনে হয়।
এই শহরে কতশত রকম দৃশ্য বুদ্বুদের মতো উড়ে বেড়ায়- বিদেশী সাংস্কৃতিক মিশনের গেটে ফাসির আসামীর মত ঝুলে থাকা ধ্র“পদী সঙ্গীত আর ফিল্ম শোর পোষ্টার। আর তার নিচে ফুরফুরে পাঞ্জাবী গায়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছে এক যুবক। ওকে দেখলেই মনে হয় ‘নারীতে ভক্তি- নারীতেই মুক্তি’- এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে আছে। রাস্তার মাঝখানে অরুচিকর ভাষ্কর্য্যরে সাজে বিকট বিজ্ঞাপন চোখের মণি ঠেলে মগজের ভেতরে ঢুকে পড়তে চায়। চোখ ফিরিয়ে নিলে একটা দেয়াল লাফিয়ে ওঠে। তার শরীর জুড়ে রাজনৈতিক নেতা নেত্রীর নামে কুৎসিত প্রশস্তিমাখা কটকটে শ্লোগানগুলো পাশ কাটিয়ে ভুরভুরে মেয়েরা হেঁটে চলেছে। রিকশায় হুডতোলা প্রেমিকযুগল পৃথিবীতে শুধু ওদের নিয়ে ব্যস্ত- নোংরা ডাষ্টবিনে এটো কাটা খুজতে থাকা কুকুর, কাক আর ভিখারীর দলের পৃথিবীতে ওরা থাকে না। ট্রাফিক পুলিশের যান্ত্রিক হাত উঠছে নামছে আর নামছে উঠছে । ফাষ্ট ফুডের দোকানগুলো থেকে মুরগীর ঝলমলে রসনার সুঘ্রাণে ভরপুর মানুষগুলো টুংটাং নড়াচড়া করে, কাঁচের ভেতর দিয়ে ওদের পুতুলের মতো লাগে। তারপাশেই একটা চাইনিজ রেস্তোরা ম্লান আলোয় মুখ গোমড়া করে বসে আছে। একলা একটা বুড়ো রাস্তা পার হতে গিয়েও বারবার ফিরে আসছে। সিনেমা হলে ঝুলানো ব্যানারে ফ্লুরোসেন্ট রঙে আঁকা - বুকে ভাজ তোলা নায়িকারা হাতছানি দিয়ে ডাকে। মনে হয় - এই শহরের সবকিছুই আজ শরীর দুলিয়ে কথা বলছে। রেললাইনের দুধার ঘেঁষে সারি সারি ঝুপড়ি বস্তিতে বাতাস লাগিয়ে ছুটে যাওয়া ট্রেনটাকে যতটা জীবন্ত মনে হয় আজকে - রুমীভাইয়ের কাছে আগে কখনই লাগেনি। লালমাটিয়া, ধানমণ্ডি, শাহবাগ হয়ে নিউমার্কেটের মৌমৌ এলাকা ছেড়ে শহরের পুরনো অংশটায় চলে আসি আমরা।
আগামসি লেন, লালবাগ, বাদামতলীর ঘাট ধরে সদরঘাট, চকবাজার, টিকাটুলীর সরু গলিতে বুড়ো বুড়ো দালানগুলোর দেয়ালে দেয়ালে পুরনোকালের নকশা কাটা। দোকান, বাড়ি, মানুষ আর নানারকম হাঁকডাকে ঠাসাঠাসি, কর্মচাঞ্চল্যে টইটুম্বুর। কিন্তু তবুও এই ভিড়ের ধরনটা নতুন শহর থেকে আলাদা। একটা প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস মিশে থাকে তাতে। ভাল লাগে। বিখ্যাত হাজীর দোকানে আমরা শুকনো কাঠালপাতার বাটিতে বিরিয়ানী খাই। বাতাসে ঢাকাইয়া ভাষায় খোশগল্প উড়ে- কথায় কথায় গালির তুবড়ি ছুটে যায়। শব্দগুলো শুনলে মনে হয়, গালির মধ্যে প্রাণ থাকে। রুমী ভাইকে দেখে মনে হয় সমস্ত দৃশ্য আর শব্দগুলো যেন মুখস্ত করে নিচ্ছে । ভরপেটে এ গলি ও গলি উজিয়ে পাশেই নদীটা।
একটা নৌকা নিয়ে দুজনে ঘুরে বেড়াই। পুরোটা সময় বিষন্ন উদাস চোখে রুমীভাই শহরটার দিকে চেয়ে থাকে। আমিও কথা বলি না। রুমীভাইয়ের মত আমিও শুধু দেখি। লঞ্চের সারবাঁধা ঘাটের উপরে দালান কোঠাগুলো ঘিঞ্জি পাকিয়ে একে অন্যের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে। এখান থেকে তাকালে- নোঙরা, বিবর্ণ, সস্তা মনে হয় সবকিছু। নৌকাটা দুলতে দুলতে চলতেই থাকে। দুপুরের খটখটে আলোটা একটু একটু করে মরে আসে। পারের জগদ্দল দালানগুলো এখানে একটু ফাঁকা ফাঁকা , দুই একটা সবুজ গাছ -সাদা হলুদ দেয়াল উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারও পেছনে ছায়া ছায়া, ধূলার পর্দায় অস্পষ্ট ধোঁয়াটে বিরাট বিরাট দালানগুলো রাজধানীর স্মারকসম্ভ সেজে খাড়া আকাশ ছুঁয়েছে। রুমী ভাই একদৃষ্টিতে সেখানটায় তাকিয়ে কিসের ভাবনায় ডুবে আছে।
‘কষ্ট লাগছে?’ - রুমী ভাইকে জিজ্ঞাসা করি। আমি জানি- যে কোন কিছুই ছেড়ে দেবার একটা কষ্ট আছে। রুমী ভাই এরপর আর কখনও এই শহরকে নিজের ভাবতে পারবে না। আমেরিকার কত কত সুন্দর, গোছানো ছবির মত শহরের কাছে এই শহরের সব স্মৃতি একদিন তুচ্ছ হয়ে যাবে। রুমী ভাই বিদেশের হয়ে যাবে। এখানে সে আর ফিরে আসবে কেন? রুমী ভাইও সেটা জানে।
রুমী ভাই কোন উত্তর দেয় না। কেবল বৈঠার মৃদু ছপাৎ ছপাৎ শব্দ এলোমেলো ভেসে যাওয়া কচুরীপানায় ঢেউ তোলে।
: মাছ পাওয়া যায়?
মাঝির দিকে তাকিয়ে রুমীভাই জিজ্ঞেস করে।
: না।
মাঝি মাথা নাড়ে। - ‘আগে পাওয়া যাইতো। এখন আর যায় না।’
বৈঠার ছপছপানী শব্দে রুমীভাই আবার উদাস হয়ে যায়।
: পারলে তুইও বাইরে চলে যা।
রুমী ভাই আমার দিকে ফিরে।
আমি হাসি। আমি জানি, আমি এই শহরটা থেকে চলে যাবো। কিন্তু সেটা আমি আর মা জানে। আর কেউ জানে না। আমিও কাউকে বলি না।
রুমী ভাইয়ের কথায় মনে পড়ে মণিভাইও বিদেশ চলে যাবার আগে এই একই কথা বলে গিয়েছিল। ‘এই দেশে বাঁচার মত বাঁচা যাবে না। মৃত্যুর দোড়গোড়ায় চলে গেছে শহরটা। নিজের ভারেই একদিন ধ্বসে পড়বে। ঘুমের মধ্যে মরে পড়ে থাকবি - টেরও পাবি না।’- মণিভাইয়ের কথায় সেদিনও আমি চুপচাপ হেসেছিলাম। আমি যেদিন পালাবো কেউ জানবে না। কিন্তু যতদিন আছি রঞ্জুর কথা ভাবি।
রঞ্জু গিয়েছিল অষ্ট্রেলিয়ায়। কয়েকমাস কাটিয়ে সে একদিন ফিরে এলো। ‘কেন ফিরে আসলি, সবাই এত কষ্ট করে যায়- এত স্বপ্ন দেখে?’- আমাদের একতাড়া প্রশ্নের তোড়ের মুখে রঞ্জু আমার মতই হাসে। রহস্যময় কন্ঠে বলে- ‘বিরাট বিরাট গাড়ি’। আমরা অবাক। বিরাট বিরাট গাড়ি! বিরাট বিরাট গাড়িইতো থাকবে ওখানে। এত ধনী দেশ, এত জৌলুস, এত রঙ । রঞ্জুর মুখে আবার টোল পড়ে।
: কি বিরাট বিরাট গাড়ি চালায় সবাই। কিন্তু ঐ গাড়িতে কে বসে থাকে জানিস?
: কে বসে থাকে?
: বসে থাকে একটা কুকুর। কোন মানুষ কারো গাড়িতে চড়ে না। সবারইতো নিজের গাড়ি আছে। সবাই পেছনের সিটে কিংবা পাশের সিটে একটা কুকুর নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মানুষটা ককুরটাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে হয়ত বারে যায়, নাইট ক্লাবে যায়, মদ খায়। টুং টাং টুং টাং গ্লাস হাতে মানুষের সাথে দু’একটা কথা হয়। কুকুরটা ওর জন্য অপেক্ষা করে। আমাকেও কি এইরকম একটা বিরাট গাড়িতে সারজীবন একটা কুকুর নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে? আমার ভয় হলো - আমি চলে আসলাম। এখানে অন্তত কথা বলার মানুষতো আছে।
রঞ্জুর মুখটা ভেসে ওঠে। ওকে খুব আপন মনে হয়। মনের মধ্যেই ওকে রেখে দি।
মুখে শুধু একরকম একটা আলগা প্রশ্ন ছুড়ে দেই - কেন যাবো?
রুমী ভাই কিছু বলে না। একটু হাসে। দূরে একটা শুশুক লাফ দিয়ে পানিতে ডুবে যায়। বিষে কালো হয়ে যাওয়া এই পানিতে ও বেঁচে আছে কী করে- আমি ভাবি। গায়ে ফুরফুরে হাওয়া লাগে। অনেকক্ষণ পরে বাতাস ছুটেছে। রুমী ভাই একটা সিগারেট ধরিয়ে মুখভর্তি করে ধোঁয়া ছাড়ে। আকাশের দিকে তাকায়। উড়ে যাওয়া একটা পাখির দিকে চোখ রেখে বলে-
: ঝুমিকে খুন করতে ইচ্ছে করে এখনও?
ঝুমির কথায় শক্ত হয়ে যাই। আড়চোখে রুমীভাইয়ের দিকে তাকাই। ভাবলেষহীন একটা উদাসীন মুখ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
: ওর কথা মনেই হয় না,
আমি মিথ্যে বলি।
: আরেকটা প্রেমে পড়, তাহলে ঝুমিকে বুঝতে পারবি। তখন ক্ষমাও করে দিতে পারিস। চাই কি আবার প্রেমেও পড়তে পারিস।
: মানে?
আমি তড়পাই। রুমী ভাই আমার কথা শুনছে বলে মনে হয় না। একটা দুষ্টুমীতে পেয়েছে তাকে।
: একটা পরকীয়া প্রেমও করতে পারিস। প্রেমে আসলে মানুষকে চেনা যায় না। অনেক চাওয়া পাওয়ার হিসেব থাকে তো। পরকীয়া প্রেমে একটা বন্ধুত্ব থাকে। সমান সমান দুজনেই। ভাবমূর্তির ব্যাপারটা কম থাকে। ভেতরটা নিয়ে কারবার। মানুষ চেনা যায়। পরকীয়া না করে মরিস না।
রুমীভাই আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। আমার ঝুমির প্রসঙ্গটা ভাল লাগে না। ‘বাদ দাও তো ওর কথা’- আমি বলি। রুমী ভাইও আর কিছু বলে না। একটা মাটিভর্তি কার্গো পাশ দিয়ে শহরের দিকে চলে গেলে তার ঢেউ এসে নৌকায় লাগে। আমরা দুলে উঠি। রুমীভাই উদাসভঙ্গীতে উপরে তাকায়। এক টুকরো মেঘ আকাশে ভাসছে। কয়েকটা চিল খয়েরী ডানা মেলে ভেসে আছে। রুমী ভাইয়ের জন্য কেমন একটা মায়া হয় আমার। একটু কষ্ট হয়। এই রুমীভাই আর এইরকম থাকবে না। অন্য রকম হয়ে যাবে। কথায় কথায় তোমাদের শহর আর আমাদের আমেরিকা বলবে। কলম্বাসের কথা মনে হয়। সেদিন সেই সমুদ্রের তোড়ে ডালটা ভেসে না এলে রুমী ভাইয়ের আমেরিকা যাওয়া হতো না, আমাদের আজকের এই নৌকা ভ্রমনটাও হতো না।
: একটা পরকীয়াতেই জড়িয়ে পড়লাম শেষপর্যন্ত।
রুমী ভাই আলগোছে কথাটা বলে।
: মানে? আমি আতকে উঠি।
আতকে উঠি ঠিকই কিন্তু মনের ভেতরে পরকীয়া শব্দটা আলোড়ন তোলে। একটা নিষিদ্ধ আনন্দের মত। রুমী ভাইয়ের দিকে গাঢ় চোখে তাকাই।
: আমেরিকায় থাকারতো আর পারমিট নেই। ওখানে বাস করতে গেলে দেশটার সাথে একটা ইলিগ্যাল রিলেশনশিপেই জড়াতে হবে।
: ও।
আমি হতাশ হই।
: ঝামেলা হবে না?
আমি জিজ্ঞাসা করি।
: জানি না। কিন্তু কিছুই করার নেই। এই শহরটা আমাকে আটকে ফেলেছে। এখানে কিছু হবে না।
রুমী ভাইয়ের কথা শুনে ভুলে যাওয়া একটা কথা টুপ করে মাথা তুলে।
হাসান। ও একদিন খুব চিন্তিত মুখে এসে বললো- ‘ভাবছি আত্মহত্যা করবো।’ ‘কীভাবে, গলায় দড়ি দিবি?’-আমি ওর কথা উড়িয়ে দি। - ‘ওটা ওল্ড ফ্যাশন, ব্যাকডেটেড। ভাবছি বিদেশ চলে যাবো’। হাসানের শেষপর্যন্ত আর বিদেশ যাওয়া হয় নি। গার্মেন্টসের ব্যবসায় রমারমা অবস্থা এখন ওর। ওর কথা ভেবেই বলি,
: কেন? বাঁচছে না মানুষ এখানে? কিছু করছে না?
: দশটা মানুষের নাম বলতে পারবি?
: কোন দশজন?
: যারা দেশটাকে সত্যি ভালবাসে। যারা দেশের ভাল করবে তুই বিশ্বাস করিস?
আমি প্রশ্নটার অতলে পড়ে যাই। গোটা দেশ তন্ন তন্ন করে খুঁজি। আশ্চর্য্য। মাত্র দশজন ভাল মানুষও খুঁজে পাই না। যার হাতে বিশ্বাস করে নিজেকে, দেশকে সপে দেয়া যায়। মনের মধ্যে অন্ধকার নামে। অন্ধকার।
রুমীভাই আনমনে মাথা নাড়ান। তিনিও যেন এই অন্ধকারটা মাথা ঝাকিয়ে তাড়িয়ে দিতে চান।
: তাহলে আর পলিটিশানদের কাছে কেন এক্সপেক্ট করি আমরা? কেন গালি দেই ওদের? দশজন যদি খুঁজে না পাওয়া যায় ওরা কী করবে দেশটার? একটা বুদ্বুদের মধ্যে আটকে গেছে সবাই। মনের ভেতরে ঘৃণা ছড়ানো ছাড়া কারো কিচ্ছু করার নেই। কেউ কাউকে চিনি না। বিশ্বাস করি না। যেখানে নিজের নিরাপত্তা শুধু নিজেকেই তৈরী করে নিতে হয়- এরচেয়ে বড় বিদেশ আর কী আছে?
আমি চোখ কুঁচকে তাকাই। কিছু বলতে পারি না। আসলে বলার কিছু নেইও। এই দেশটায় সত্যিই সবাই সবার শত্র“ হয়ে গেছে। আবার চুপচাপ কিছুক্ষন নদীর বাতাসের সাথে উড়াউড়ি করে।
- কেন জানি মনে হয় আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, খুব বড় একটা দূর্যোগ আসছে সামনে। অনেক বড় বিপদ। এত বড় যে সেই সমস্যার সামনে দেশ-বিদেশ বলে আর কিছু থাকবে না। সব সীমান্ত ভেঙে পড়বে। প্রতিটা মানুষ হবে বিশ্বের মানুষ। প্রকৃতিই হয়তো বিপর্যয়টা ঘটাবে। এই বিপর্যয়ের ফলেই হয়তো সে এক হবে আর না হয় ডাইনোসরের দশা হবে শেষপর্যন্ত। তখন শুধু মানুষের প্রেতাত্মাই থাকবে - আর কিছু না । হয়তোবা অল্প কিছু মানুষ চাঁদে কিংবা অন্য কোন গ্রহে গিয়ে টিকে থাকবে কিছুদিনের জন্য ... কিংবা...
রুমীভাই এলোমেলোভাবে আরও কি কি সব বলে। আমি ঠিকমতো শুনি না। আমি পৃথিবীময় চড়ে বেড়ানো মানুষের প্রেতাত্মাদের কথা ভাবি। প্রেতাত্মার কথা মনে হলে কেন জানি ঐ বাদুরগুলোর মুখ ভেসে আসে। নিজেকে বাদুরের মত দেখতে কেমন লাগবে? আমি কল্পনায় দেখি বড় একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কুতকুতে চোখ মেলে একটা বিশাল বাদুর আমার দিকে চেয়ে আছে।
নানুর তাড়ায় মাথার ভেতরের বাদুর উড়ে পালায়।
: কিরে বললি না - শহরটা কত বড়?
: নিজের চোখে দেখে এসো না একবার।
: নারে , ওখানে গেলে সবাই হারিয়ে যায়।
নানু হারানোর ভয়ে শহরে আসেন নি। সত্যিইতো, কেন আসবেন তিনি। কত কত মুখ মনে পড়ে। সেই ছোট্টবেলার বন্ধুরা। ওরা এখন কোথায়? হয়ত এই শহরেই। কিংবা একটু ভাল থাকার নেশায় আরও বড় কোন শহরে পাড়ি জমিয়েছে। অথবা নিজেদের জীবনে টিকে থাকতে না পেরে কোথায় কোথায় ছিটকে পড়েছে। বিনুদির কথা রাখতে একদিন খোকাভাই সত্যিই হারিয়ে গেল। কিন্তু হারানোর কথা না থাকলেও এই শহরে অনেকজনই হারিয়ে যায়। এই শহরে প্রত্যেকেরই অনেক হারানোর গল্প আছে। অনেক ঘোরের গল্প। হাতছানির গল্প। তাই না ?
আসলেই অনেক হাতছানি এখানে। অনেক। অনেক। কোন কিছুইতো এই রাজধানীতে না এলে হয় না। এজন্যই আমাদের রাজধানীটা দেশটার ঠিক মাঝখানে। সবপ্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষগুলোর সবাই যেন ক্যারিয়ারটাকে গড়তে সমান সুযোগ পায়।


মন্তব্য

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বাদুরের মুখগুলো অবিকল মানুষের নবোজাত শিশুর মুখের মত- যেন চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছে। চোখ ফিরিয়ে নিতে গিয়েও আমি আরেকবার তাকাই। মুখগুলো যেন হাসছে। সন্ধ্যা নামছে তখন। আমার ভয় লাগে। দ্রুত সরে যাই।

একজন পলায়নপর মানুষের ভেতর থেকেও সৌন্দর্য ও মানবিকবোধ যে ছুটি নেয় না, উদ্ধৃত অংশটুকু কেন জানি এই বোধেরই জন্ম দিল!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেকদিন পর কর্ণজয়দার লেখা পড়লাম, দারুণ...
মনে হলো নিজের গল্পটা পড়লাম

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনার গল্পগুলো পড়লে ইচ্ছে হয় বেরিয়ে পড়ি, পালিয়ে যাই চেনা শহরের ভুতুড়ে আলো ছাড়িয়ে আরো দূর বহুদূরে। সেখানে বসে পা ছড়িয়ে কাঁদি, আমার প্রিয় ভুসভুসে নোংরা বিশৃংখল দেশ, আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসি।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

পাঠক এর ছবি

ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল রে ভাই.......
এই শহরটা আমার একদম ভালো লাগে না.........আমার আমিই যেন এখানে নেই......নিজেকে যেন কোথায় হারিয়ে ফেলেছি......বড্ড একা লাগে........শুধু ছুটছি আর ছুটছি.......সামনে শুধু কালিগোলা অন্ধকার.....এতো প্রতিযোগীতা ভালো লাগে না......আবার সংসারের কথা ভেবে প্রতিযোগীতার লাইন থেকে সরতেও পারি না......সরলেই তো পিষে যাবো বাকীদের পায়ের চাপে.......

ভালো লাগে না.........

নীরা

আশালতা এর ছবি

আপনি অসম্ভব সুন্দর করে লেখেন। হাততালি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তারেক অণু এর ছবি

অনেক শাখাপ্রশাখা, সব মিলে যাচ্ছে এক লক্ষ্যে। ভাল লাগল, কিন্তু সেবার বইগুলোর কথা বলে বেশী অস্থিরতা জাগিয়ে দিলেন, এখন পড়তে হবে সব একে একে আবার। চলুক

সুমন তুরহান এর ছবি

মায়ের পুরনো শাড়ি দিয়ে তৈরী কাঁথার মিঠে গরম উত্তাপের ভেতর মুড়ি দিয়ে বইটা মেলে ধরি।

অপূর্ব! চলুক

-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী

কর্ণজয় এর ছবি

আমি আছি তোমার সভায়...

রানা মেহের এর ছবি

আপনি অদ্ভুত ভালো লেখেন

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।