ফালতু গল্প ২ঃ পিতা, পুত্র ও পত্রিকা

সুবোধ অবোধ এর ছবি
লিখেছেন সুবোধ অবোধ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৫/০৯/২০১৪ - ৮:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছুটির দিনে বাসার ড্রয়িং রুমে বসে চায়ে বেশ আরাম করে চুমুক দিতে দিতে পত্রিকা পড়ছিল আবুল। মনে মনে ভবছিল- নাহ্‌, বউ এর অন্যান্য রান্না বেশ কষ্ট করে গিলতে হলেও চা টা বেশ আরামসেই গেলা যায়। চায়ে তৃপ্তির চুমুক দিতে দিতে সে পাশের টেবিলে রাখা ‘দৈনিক শেষ অন্ধকার’ পত্রিকাটা তুলে নিল। চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়ার মজাই আলাদা। চায়ে বাড়তি স্বাদ আনে। পত্রিকা পড়ার সময় তার প্রথম পছন্দ বিনোদন পাতা। আর ‘শেষ অন্ধকার’ পত্রিকার বিনোদন পাতা তো তুলনাহীন! আড় চোখে আশেপাশে দেখে নিয়ে সে বিনোদন পাতায় উঁকি মারে। বাসায় ছয় বছর বয়সী ছেলে আছে। উঁকি না মেরে সরাসরি পাতা খুলে বসলে হঠাৎ ছেলে এসে হাজির হয়ে দেখে ফেললে লজ্জায় পড়তে হবে। সে যাই হোক, উঁকি মেরেই আবুলের হার্ট একটা বীট মিস্‌ করে। সানিইই!! চোখ চকচক করে ওঠে তার। সানির একটা বেশ ইয়ে টাইপের ছবি। আবুলের ভেতরে তখন যেন গনগনে গ্যাসের চুলায় ডাল টগবগ ফুটন্ত অবস্থা!

“আব্বু কি কর?”- ঠিক যে ভয়টাই পাচ্ছিল আবুল, তার ছেলে। চমকে উঠে সে অসামান্য দক্ষতার সাথে পত্রিকার পাতা ভাঁজ করে ফেলে ছেলের কাছ থেকে সানি কে লুকাতে। টগবগে ডালে কেউ যেন পঁচা এবং ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেয়।

ধ্যাত্তুরি! মনে মনে বলে সে। তবে মুখে একটা মোলায়েম হাসি টেনে বলে-“এই তো আব্বু, পেপার পড়ি। তা তুমি এখানে কেন? এক থেকে একশ পর্যন্ত লেখা শেষ?”
“হ্যা, শেষ”- ছেলে হাসি মুখে উত্তর দেয়, “এখন তুমি আমার সাথে বল্‌ নিয়ে ঢেলাঢেলি খেল।”
“আব্বু এখন পত্রিকা পড়ছে, একটু পরে”- আবুল হাসি মুখে ছেলে কে বুঝ দেয়ার চেষ্টা করে।
ছেলে মোটেও বোঝার চেষ্টা করে না, “না আব্বু, এখন” বলে গোঁ ধরে।

আবুল ফাঁপড়ে পড়ে। তার এখন মোটেও তার ছেলের সাথে বল্‌ নিয়ে ঢেলাঢেলি খেলতে মন চাচ্ছে না। তার মন চাচ্ছে ‘শেষ অন্ধকার’ পত্রিকার বিনোদন পাতার ভাঁজে মুখ গুঁজে দিতে। কিন্তু নাছোড়বান্দা ছেলে এখন ছাড়বে না।

হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। পত্রিকার কোন্‌ পাতায় যেন একটা পৃথিবীর মানচিত্রের ছবি চোখে পড়েছিল বিনোদন পাতা বের করতে গিয়ে, সেটা খুঁজে বের করে ওই অংশটুকু ছিঁড়ে নিয়ে সেটাকে কয়েক টুকড়া করে ছেলের হাতে ধরিয়ে দেয়-“আব্বু, এই মানচিত্রটা তুমি যদি ঠিক ভাবে সাজিয়ে নিয়ে আসতে পার তাহলে তোমার সাথে বল্‌ ঢেলাঢেলি খেলব। এর মধ্যে আমিও পত্রিকা পড়া শেষ করে ফেলি। ঠিক আছে?”

মনে মনে “মুহুহাহাহা” হেসে ভাবে “সাত মণ ঘী-ও জোগাড় হবে না, রাধাও নাচবে না”, এই মানচিত্র তার ছেলে ঠিকমতো সাজাতেও পারবে না, তারও বল্‌ ঢেলাঢেলি খেলতে হবে না। এই সুযোগে সে আরামসে সানির নিউজটা পড়তে পারবে, ছবিও দেখতে পারবে মন খুলে।

ছেলে চলে গেলে সে পত্রিকার পাতার ভাঁজ খুলে মন, মুখ ডুবিয়ে দেয়। টানটান উত্তেজনায় পড়তে থাকে সানি কে নিয়ে ছাপা হওয়া লেখা। পড়া শেষ হতে দুই তিন মিনিটের বেশি লাগে না। পড়া শেষ করে পত্রিকার পাতার ভাঁজ থেকে মুখ তুলে আরেক দফা চমকে ওঠে আবুল। ছেলে দাঁড়িয়ে আছে সামনে।

“তোমাকে না বললাম মানচিত্র সাজিয়ে নিয়ে আসতে? তা না করে তুমি এখানে কেন?” হড়বড় করে বলে আবুল।
“আমার তো মানচিত্র সাজানো শেষ” জোরা দেয়া মানচিত্র বাবার সামনে তুলে ধরে আবুলের সন্তান।
ঠিকঠাকভাবে সাজানো মানচিত্র দেখে আবুলের পুরোপুরি ‘আবুল’ হয়ে যায়। “নিশ্চয়ই তুমি তোমার মা কে দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছ, তাই না? সত্যি করে বল দেখি”
“মোটেও না আব্বু”, আবুলের ছেলে তীব্র প্রতিবাদ জানায়, “আমি তো আসলে পৃথিবীর মানচিত্র চিনতাম-ই না, এটার উল্টা দিকে দেখি পুনম পাণ্ডের ছবি, আমি সেটা ঠিকঠাক সাজাতেই এইদিকে মানচিত্র ঠিক হয়ে গেল!”

দ্রষ্টব্যঃ গল্পটির মানচিত্রের উল্টাদিকে অন্যের ছবি এবং সেই ছবি সাজিয়ে মানচিত্র সাজানোর এই আইডিয়াটুকু পাউলো কোয়েলহোর "Rebuilding the world" গল্প থেকে নেয়া। বাদবাকি সবকিছুই লেখকের কল্পনা প্রসূত। বাস্তবের কোন কিছুর সাথে এর কোন মিল খুঁজে পেলে তা নেহাত-ই কাকতাল।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অ্যাঁ
এই কাহিনী বহুবার "আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ" স্যারের কাছে শুনেছি।
উনি বরাবরই এটা নিজের কাহিনী হিসেবেই উপস্থাপন করেন। চিন্তিত

[ কোয়েলহোর লেখা তেমন পড়ি নাই... 'দ্য আলকেমিস্ট' আর 'ইলেভেন মিনিটস' এই দুইটার ধ্যারধ্যারে অনুবাদ পড়েছিলাম... মনে হচ্ছে এই ভদ্রলোক ছোটগপ্প ভালই লেখেন। ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুবোধ অবোধ এর ছবি

এই কাহিনী বহুবার "আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ" স্যারের কাছে শুনেছি।
উনি বরাবরই এটা নিজের কাহিনী হিসেবেই উপস্থাপন করেন।

চিন্তিত কস্কি মমিন!
উনার ছোট গল্প অধিকাংশই স্পিরিচুয়াল (আমি যেগুলো পড়েছি), ইচ্ছে আছে উনার আরও কিছু ছোট গল্প অনুবাদ করার।
বেশ কিছুদিন আগে এটা করেছিলাম। দুব্বল অনুবাদ।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দারুণ, অনুবাদকর্ম সচল থাকুক
পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম হাততালি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম হাততালি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম হাততালি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম হাততালি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম হাততালি

চাইপা যান, উনি মানী লোক, যদি অপমানিত বোধ করে বসেন, তখন? চিন্তিত
আসলে স্যার বোধহয় ভেবেছিলেন ঐ গল্প তিনি একাই পড়েছেন (ক্যান, উটপাখি'র গপ্প পড়েন নাই?)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মেঘলা মানুষ এর ছবি

তার মানে অনেক কিছুই ঠিক থাকে অন্য আরেকটা জিনিস ঠিক থাকার কারণে!

গল্প মজার, ৫ তারা।

শুভেচ্ছা হাসি

সুবোধ অবোধ এর ছবি
তুষার  এর ছবি

বড়ই বিনোদনমূলক বিদ্যা অর্জিত হইল !
"পিতা হইবার পর মনে হয় পুনরায় পূরুষ হইতে না চাওয়াই ভালো, অন্ততঃ সন্তানের ইচড়ে-পাকামির বয়সটাতে; খালি শরম আর শরম"

সুবোধ অবোধ এর ছবি

খিয়াল কইরা। খাইছে

এক লহমা এর ছবি

হাততালি
মূল গল্পের নবায়ন ভাল হয়েছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সুবোধ অবোধ এর ছবি
ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

চলুক

সুবোধ অবোধ এর ছবি
নজমুল আলবাব এর ছবি

ভালো লাগলো

সুবোধ অবোধ এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া। হাসি

গান্ধর্বী এর ছবি

মজা পাইলাম দেঁতো হাসি

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

সুবোধ অবোধ এর ছবি
তাহসিন রেজা এর ছবি

চমৎকার !

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সুবোধ অবোধ এর ছবি
abdur এর ছবি

উত্তম জাঝা!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।