আমার বাঙলা সিনেমা ভাবনা

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি
লিখেছেন পান্থ রহমান রেজা (তারিখ: রবি, ০৬/০৭/২০০৮ - ৮:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেকদিন বাঙলা সিনেমা দেখা হয় না। অনেকদিন বলতে গেলে মেলা দিনই। আঙুল গুনে হিসাব করতে চেয়েছিলাম, শেষ কবে, কোন সিনেমাটি দেখেছি। স্মৃতি প্রচারণা করলো। কয়েকবার চেষ্টা করেও বের করতে পারিনি।
আপনারা হয়তো ভাবছেন, হঠাত্ বাঙলা সিনেমা নিয়ে ভাবনা কেন? আসলে বাঙলা সিনেমা নিয়ে ভাবতে যাইনি। প্রসঙ্গক্রমে এসে পড়েছে। আমি একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করি। এ কাজের জন্য আমাকে প্রায়ই মানুষের প্রোফাইল অ্যানালাইসিস করতে হয়। সে অনুযায়ী কমিউনিকেশন ডেভলপ করতে হয়। তো আমি ভাবছিলাম একজন ভিলেন টাইপ মানুষের প্রোফাইল নিয়ে। আর এই ভিলেন টাইপ মানুষের প্রোফাইল নিয়ে ভাবতে গিয়ে বাঙলা সিনেমার প্রসঙ্গ এলো।
গল্পকাররা নাকি গল্প লেখেন নিজের জীবন, চারপাশ থেকে শেখা, দেখা, জানা অনুষঙ্গগুলো নিয়ে। কাজেই আমি যখন একজন ভিলেন টাইপ মানুষের ক্যারেক্টার নিয়ে ভাবছি, স্বভাবতই স্কুল পালিযে দেখা, সেইসব সিনেমার ভিলেনরা আমার সামনে চলে এলো। আর আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, ভিলেন মানেই তারা যেন চুড়ান্ত পর্যায়ের ভিলেন। মানুষের যত মন্দ গুণ আছে, তার সবগুলোর সমাবেশ করেই যেন তাদের চরিত্র বানানো হয়েছে। আচ্ছা, ভিলেনরাও তো মানুষ। তাদের মধ্যে মানবীয় কোনো গুণই কেন নেই। হঠাত্-ই আমার এই প্রশ্নটি মাথায় চলে এলো। যদিও আমার বুদ্ধি এর কোনো উত্তর জোগাতে পারেনি। তাছাড়া সিনেমার ইতিবৃত্তও আমি জানি না। উত্তর না পাওয়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে।
উত্তর না পাই, তবে আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নিতে তো দোষ নেই। জাহাজের খবর নিতে গিয়ে দেখলাম, আমার দেখা মুলধারার গুটিকয় হলিউডি, বলিউডি সিনেমার ভিলেনরাও একই রকম। সেখানেও ভিলেন মানে যেন চুড়ান্ত মন্দ একজন মানুষ।
আচ্ছা, আপনাদের কী মনে হয়, ভিলেনদের কী কোনো দয়ামায়াবোধ নেই। প্রজাপতির পাখনা, ফুলের সুবাস, বৃষ্টির রিমঝিম, রঙধনুর সাত রঙ তাদের মুগ্ধ করে না। প্রেমিকার একটু আলতো স্পর্শে তাদের কী মনে হয় না, আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

একবার একেবারেই কমার্শিয়াল একটা বাংলা সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখনের ক্ষ্যাপ জুটছিলো... (শেষতক লেখা হয় নাই অবশ্য)। তখন সিনেমার কিছু বেসিক ব্যাপার বুঝতে হইছে... সিনেমায় কোনও ধীরলয়ের কিছু নাই... মাঝামাঝি কিছু নাই... যা হবে সরাসরি... সকলই সাদা কালোর মতো... হয় এসপার নাহয় ওসপার... ভালো নয় মন্দ...
সিনেমাতে সবকিছু একেবারেই মোটাদাগে বিবেচনা করতে হবে... সুক্ষ্ম চিন্তাভাবনার কিছু নাই... বড় পর্দার ধামাকা এবং দর্শক শ্রেণীর রুচির কথা চিন্তা করে এই পথ। তাছাড়া উপায় নাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

নজরুল ভাই, এইসব বেসিকের কিছু ব্যাপার-স্যাপার এসপার-ওসপার কইরা দেন তো আমাকে। আমিও বাঙলার সিনেমার স্ক্রিপ্টরাইটার হমু।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনারে গাজি উপাধি দিলাম, একেবারে খাদের কিনার থেকে ফিরে আসছেন, তো সঙ্গে সিনেমাটিক কোনো অভিজ্ঞতা-টভিজ্ঞতা....নাই?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

নাহ্, কোনো অভিজ্ঞতা-টভিজ্ঞতা নাই ফারুক ভাই। নজরুল ভাইয়ের কাছে ধর্না দিয়েছি। দেখি কী হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এখনও একটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখার ক্ষেপ ঝুলতেছে... কিন্তু সময় পাইতেছি না... ছয় মাস ধইরা ঘুরাইতেছি। এইটা আবার জটিল... কর্মার্শিয়াল, নাচ গান থাকতে হবে, আবার ক্লাসিকও হইতে হবে... এ্যাওয়ার্ডের ধান্দাও আছে... কন তো দেহি কই যাই? প্রযোজক পরিচালক দুইজনেই দেশের খুব বিখ্যাত লোক... পয়লা সিনেমা।

সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা বস অনেক আছে... গোটা পাঁচেক বিজ্ঞাপন আর দুইটা বড় প্রোগ্রাম পরিচালনার সুবাদে আমারে মাসের পর মাস এফডিসিতে কাজ করতে হইছে... তবে সত্যি বলি এদেরে আমার খুব পছন্দ হইছে। দেশের মিডিয়ার নানান সেক্টরে কাজ করছি আমি... এফডিসিওয়ালাদের মতো প্রফেশনাল আর কেউ না। প্রফেশনালদের সাথে কাজ করার সুবিধা অনেক... আজাইরা ঝামেলা নাই।

যা হোক... সিনেমা তো একখান বানামু... সবকুছ ঠিক ঠাক ধাকলে বছর দুয়েকের মধ্যেই বানামু... দেখা যাউক...

আর পান্থ... আপনের সাথে যোগাযোগ হবে... কথাকথিও হবে... ভালো থাইকেন। আপনে কি মাছরাঙায় না মিডিয়াকমে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

নজরুল ভাই, মিডিয়াকমে আছি। বাচ্চা টাইপের কপিরাইটার আর কী।

নিরিবিলি এর ছবি

ভিলেনকে যেভাবে দেখানো হবে সেভাবেই তো দেখবো। ভিলেন সম্পর্কে সবার মতো আমারও একই ধারনা-চুড়ান্ত খারাপ কেউ।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

একটা মানুষ কিভাবে সব ভালো গুণ ছাড়া হয়, এইটাই আমার মাথায় ঢুকছে না নিরিবিলি ভাই।

নিশাচর এর ছবি

ভিলেন যদি দানব না হয় তাহলে বুঝব কি করে?

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ভাই নিশাচর, একদম হাছা কতা কইছেন।

সৌরভ এর ছবি

বাস্তবের খলনায়ক "এরশাদ শিকদার" এর প্রোফাইল নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। কী নির্মম অথচ, তার গাওয়া গানটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে কীভাবে যেনো।
অনেকদিন রিক্শাঅলা বা চায়ের দোকানে শোনা গেছে , আমি তো মরেই যাবো..
মানুষকে ছুঁয়ে যায় খলনায়কেরাও।



আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ফেরারী ফেরদৌস এর ছবি

অনেক দিন পর এই খলনায়কের কথা মনে করিয়ে দিলেন। এই ব্যাটা আস্ত পিশাচ একটা!

ফেরারী ফেরদৌস এর ছবি

বাংলা সিনেমার বাণিজ্যিক ধারার সিনেমাগুলো যারা দেখে, তাদের বেশির ভাগের রুচির উপর নির্ভর করে এই ভিলেন চরিত্রের রূপদান করা হয়। বেশির ভাগ দর্শক এসব দেখে ২/৩ ঘন্টার একটা ধুম-ধাড়াক্কা আনন্দ পায়। ভিলেনের মাঝের মানবীয় গুণগুলো অনুভব করার অবকাশ তাদের কই?

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

দর্শকদের ভিলেনদের মানবীয় গুণাবলী অনুভব করার অবকাশ আছে কীনা তা মনে হয় আমরা কখনো তলিয়ে দেখিনি ফেরারি ভাই।

নিঘাত তিথি এর ছবি

বাংলা সিনেমায় ভিলেনদের মানবিক গুনাবলি বলতে সাধারণত যা দেখানো হয় সেটা হলো, হয়ত ভিলেনের কোন ছোট ভাই বা ছেলে আছে (যেই ব্যাটা নিজেও ভিলেন), সেই ছোট ভিলেন কোন কারনে মারা গেলো। তখন আসলে ভিলেন তার রক্ত ছুঁয়ে বিরাট চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করে। এই হলো ভাইয়ের প্রতি বা ছেলের প্রতি তার ভালোবাসার (মানবিক গুনাবলি!) প্রকাশ। এরপরে আবার সেই ভাইয়ের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নেয়া হয় নতুন কোন নৃশংসতার জন্য। এই তো। এটাও বাংলা, হিন্দী, ইংলিশ সব কমার্শিয়াল সিনেমার জন্যই মনে হয় প্রযোজ্য।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

সৌরভ হোসেন এর ছবি

বাংলা সিনেমা এখন ভাবতে অবাক লাগে। পরিবর্তন এসেছে সব খানে । নায়ক নায়িকার প্রেম সম্পর্কে একটু বলি- প্রথমে দেখা যেতো (ষাটের দশকে) নায়ক নায়িকার কখন প্রেম হতো তাহা বলা মুসকিল। টোটাল তিন ঘন্টার সিনেমাতে প্রেম হতে লাগতে এক/দুই ঘন্টা। আর এখন ধাক্কা লাগলেই প্রেম, চোখে চোখ পরলেই প্রেম। বাংলা সিনেমার নামেও এসেছে অবাস্তব পরির্ব্তন। বাংলা সিনেমার নামের আকিকা হয় মুখ ও মুখোস সিনেমা থেকে এর পর অনেক সুন্দর সন্দর নাম- আকাশ ও মাটি, এ দেশ তোমার আমার, রাজধানির বুকে, সাত ভাই চম্পা, নাগ নাগিনির প্রেম, ইত্যাদি আর এখন মারছি তোরে, খাইছি তোরে ইত্যাদি।।

বিবর্তন, অবাক পরিবর্তন.......

দেখা হবে অন্য কোন শরৎ এর বিকালে।।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।