মেয়েদের টাকা খরচের গল্প!!!

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি
লিখেছেন পান্থ রহমান রেজা (তারিখ: রবি, ১০/০৮/২০০৮ - ৭:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার যখন টাকা পয়সার দরকার পড়ে, তখন যার মুখটি প্রথম মনে পড়ে সে হলো আমার বন্ধু রাসেল। সবসময় টাকা পয়সার এইসব সংকট ওর ঘাড়ে চড়েই পার করেছি। রাসেল সম্প্রতি সংসারী হয়েছে। এতো তাড়াতাড়ি সংসারী হওয়ার ইচ্ছে ওর ছিল না। আমরাই কয়েক বন্ধু মিলে কিলিয়ে কাঁঠাল পাকিয়েছি। বিয়ে যখন করবি তো দেরি ক্যান, তাড়াতাড়ি কর। তবে কিলিয়ে পাকানো হলেও আমরা জানতাম সে গৃহস্থ জীবনে বেশ ভালোই আছে। তো সেদিন হঠাৎ-ই কিছু টাকার দরকার পড়ল। যথারীতি রাসেলকে ফোন, মামা, কিছু টাকা দাও তো। রাসেল তিরিক্ষি জবাব দেয়, টাকা নাইরে। বলি, মাসের মাত্র শুরু, ক্যামনে কী? রাসেল বলে, বিযা তো কর নাই, ক্যামনে কী বুঝবা!বউ হলো টাকা খরচের কল। বুঝলা। এইটুকুই বললাম। বাকীটুকু নিজেদের মতো করে বুঝে নাও। রাসেল অবশ্য নিজেদের মতো বুঝে নিতে না দিয়েই বলতে শুরু করে, পাশের বাসায় ভাবীর নতুন শাড়ি, দাও কিনে শাড়ি। টিভিতে জুয়েলার্সের বিজ্ঞাপন, হিন্দি সিরিয়ালের ওমুকের ড্রেস, সেটা গাউছিয়ায় এসেছে কীনা তা জানতে বান্ধবীকে ফোন। আর এদিকে আমার মানিব্যাগের বারোটা বাজা সারা।

ফোনে রাসেলের বউয়ের খরচ সংক্রান্ত এতো কথা শুনে একটু তব্দা খেয়ে ভাবতে বসি, আচ্ছা মেয়েরা কেমনে টাকা খরচ করে। ভাবতে ভাবতে আমার এক বসের বানী মনে পড়ে যায়। তখন মাত্রই বিজ্ঞাপনে এসেছি। মাথামুন্ডু কিছুই বুঝি না। একদিন বস বললো, বুঝলা পান্থ, বড়ো বড়ো মার্কেটিয়ারদের মতো তোমারও খেয়াল রাখতে হইবো, পাবলিকের পকেট থেকে কিভাবে টাকা খসে। দেখবা, কখন কোন পরিস্থিতিতে পাবলিক তার ঘাটের পয়সা বের করে প্রডাক্ট কিনে। তোমার জন্য ওই মুহূর্তটাই জরুরি। পাবলিকে খাওয়ানো হলো আমগো পেশার আসল কথা। তাই রাসেলের বউয়ের টাকা খরচের বিষয়টা মাথার ভেতর ঢুকে বসে থাকে । সহজে চলে যায় না। আসলেই তো মেয়েরা কিভাবে টাকা খরচ করে, তা জেনে নিতে পারলে তো আমারই লাভ। তাহলে তরিকাটা জেনে সেভাবে স্ট্যাট্রেজি নিলেই কেল্লা ফতে। পণ্য না বিকিয়ে যাইবো কই। যদিও জানি ব্যাপারটা অতো সোজা না।

বিজ্ঞাপন জগতে আমি একদমই নতুন। এখনো তেমন কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। তবে এই জায়গাতে কাজ করাটা বেশ উপভোগ করছি। এই কাজ করার ক্ষেত্রেও আমার ছোট্ট একটা আগ্রহের জায়গা আছে। তা হলো মেয়ে ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করা। কারণ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সাথে সাথে মেয়েদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়তেছে। এটা যেমন বিশ্বের অন্যান্য স্থানে, তেমনি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সত্যি। ফলে বিশ্বজুড়ে বেড়ে গেছে মেয়ে ভোক্তার সংখ্যা। এই বিপুল সংখ্যক মেয়ে ভোক্তার দখল নিতে মার্কেটিয়াররা শকুন চোখ নিয়ে বসে আছে। আর তাই মেয়েদের জন্যই আসছে কাস্টম মেইড কতো প্রডাক্ট। হালের গ্রামীণফোনের মেয়েদের জন্য মঙ্গলবারের অফারটির কথাই ধরেন না। আবার বাংলালিংকের লেডিজ ফার্স্ট। বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর একটা বড়ো অংশ মেয়ে হলেও বাংলালিংক লেডিজ ফার্স্টকে যথাযথভাবে প্রচারণা চালাতে পারেনি। দিনে দিনে এইরকম আরো আরো অফার আসবে। তো তাই রাসেলের ঘটনাটি দেখে আমার ভেতরে যেন একটু ঢোলের বাড়িই পড়ে। পরিচিত কাজিন আর বান্ধবীদের ফোন করে জানতে চাই তারা কিভাবে পয়সা খরচ করে। কেউ এতে কিঞ্চিত বিরক্ত হয়, কেউ পাগল ঠাওরায়, কেউ মজা পেয়ে সাত পাঁচ মিলিয়ে উত্তর দেয়। পরে অফিসে এসে গুগলে সার্চ দিই। কয়েক সেকেন্ডে কয়েক লক্ষ লিংক আসে। দেখি কেনাকাটার তালিকায় জামাকাপড়, কসমেটিক, পারফিউম আর পার্সোনাল অ্যাকসসরিজের ছড়াছড়ি।

সাফ এক্সেলের একটা বিজ্ঞাপনের লাইন আছে- দাগ থেকে যদি কিছু শেখা যায়, এরকম আরকি। আমিও দেখছি টাকা পয়সার টানাটানিতে পড়ে মেয়েদের টাকা খরচের নানা দিক সম্পর্কে জানলাম। এটাই বা কম কিসে। নিজেই নিজেকে বাহবা দিই। আর মনে মনে বলি, মামা বিয়েটা তবে কয় বছর পেছালো!!!!


মন্তব্য

পরিবর্তনশীল এর ছবি

বাহ! বেশ এক্সপার্ট হয়ে গেলেন দেখি। তা কী জানলেন?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

এক্সপার্ট হইনি তো। তয় চেষ্টায় আছি। হইলে আপনাকে ফ্রি পরামর্শ দিবো। কথা দিলাম।

অমিত আহমেদ এর ছবি

"হোয়াট য়্যুমেন ওয়ান্ট" দেখছেন? সেখানে বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা মেল গিবসন একই কারণে মেয়েদের মন বোঝার চেষ্টা করে।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

মুশফিকা মুমু এর ছবি

বালকদের এই মুভি না দেখাই ভাল খাইছে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

"হোয়াট য়্যুমেন ওয়ান্ট" দেখেনি। তয় এর কথা অনেকবার শুনেছি।

শামীম এর ছবি

মেয়েদের উপর ঢালাও দোষ দেয়াটা মানতে পারছি না। আমার মনে হয়, যে উপার্জন করে সে এটার মর্ম উপলব্ধি করতে পারে বলে অযথা খরচ করতে পারে না।

পরিচিত অনেক কর্মজীবি মহিলাদের খরচ করার প্যাটার্ন বা সামাজিক বিভিন্ন ঘটনার প্রতিক্রিয়া ছেলেদের মতই মনে হয়েছে। আবার অনেক ছেলেদের অবিবেচক বা বেহিসাবী খরচ এবং প্রতিক্রিয়া (আমার দিকে তাকালো কেন্ ... হুহ্ ---- এই টাইপের) দেখেছি।

এখানে আমার বক্তব্যের ব্যাপারে আরেকটু স্বচ্ছতার দরকার বলে মনে করি। আসল ব্যাপার হল দৃষ্টিভঙ্গি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দেখেছি, হলে থাকা মেয়েরা বাসায় থাকা মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি ম্যাচিওরড। জোকস্ বোঝার মত মানসিকতা থাকে।

চাকুরীরত মেয়ে/মহিলারা অনেক বেশি লোকের সাথে মেশেন, দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বেশি প্রশস্ত ও উদার হয়। কাজেই অবিবেচনাপ্রসূত খরচ করানোর বিষয়টিকে সাথে ছেলে বা মেয়ে এভাবে না দেখে যদি মানসিক অবস্থা বা প্রজ্ঞা হিসেবে দেখেন তাহলে হিসেব মেলানো সহজ হবে।

এজন্যই এখন দোকানগুলোতে বাচ্চাদের খেলনা মেঝেতে বাচ্চাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে রাখে। মানুষের দূর্বলতা আছে বাচ্চাদের প্রতি বা বউয়ের প্রতি ... কাজেই তাদের আব্দার অযৌক্তিক হলেও মেটাতে চেষ্টা করবে। আর মার্কেটিংএর লোকজন দূর্বলতার ঐ পয়েন্টেই আক্রমণ করে যাবে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

শামীম ভাই, বন্ধুর বরাত দিয়ে টাকা খরচের ব্যাপারটি এসেছে। আর আমার চেষ্টা ছিল, আমি যেহেতু অ্যাড এজেন্সিতে আছি, মানুষকে পণ্য খাোয়ানো আমাদের একটা ধান্দা, সেই দিক দিয়ে বিষয়টা দেখা। কাউকে ছোট করা কিংবা কারো প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব- এমন উদ্দেশ্য থেকে লেখাটা লিখিনি।

শামীম এর ছবি

ঠিকাছে ....

আসলে জ্ঞান ঝাড়ার সুযোগ পেলে কেউ ছাড়তে চায় না তো ..... খাইছে
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আমি দাম দেখি পরে, আমার যদি মনেহয় এই জিনিসটা আমাকে মানাবে তাইলেই হল, কিনে ফেলি। কেনাকাটার মত আনন্দের আর কিছু নেই। হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

মুমু আপু, কেনাকাটার সময় ডিসিশন নেয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে পণ্যের বিজ্ঞাপন কতটা প্রভাব ফেলে তা একটু কি জানাবেন?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।