সুবর্ণ জয়ন্তী।

পরিবর্তনশীল এর ছবি
লিখেছেন পরিবর্তনশীল (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/০২/২০০৯ - ৬:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গলির মুখে পা রাখতেই দপ করে সব বাতি নিভে গেলো। রাত নটার মতন বাজে। আর শহরের এই অংশটায় রাত নটা মানেই যেন লোডশেডিং। হঠাৎ করে অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় রাশেদ একটু থামে। পিডিবির পাশাপাশি প্রকৃতিও এই মুহুর্তে আলোর কোন ব্যবস্থা রাখেনি।

গলির একটু সামনেই পাড়ার ক্লাবঘর। ওখান থেকে হৈ হুল্লোড়ের শব্দ শোনা যায়। ক্লাবঘরে প্রতি সন্ধ্যাবেলাতেই সিনেমার আসর বসে- কিংবা নাটক হয়। সিনেমা কিংবা নাটকে ব্যঘাত ঘটায় পাড়ার ছেলেরা খেপে গিয়ে পিডিবির লোকজনের গোষ্ঠী উদ্ধার করছে- হয়তবা।

অন্ধকার একটু সয়ে আসতেই রাশেদ হাঁটে আবার। ঠিক এইখান থেকে শুরু করে বাসা পর্যন্ত কতবার হাঁটা হয়েছে। তবুও হুট করে অন্ধকার নেমে এলে কেমন অচেনা মনে হয় সবকিছু! এইতো হাতের বাঁ পাশে রতনদের বাসা। সিনেমা পার্ট করে রতন এলাকায় খুব নাম করেছে। সেদিন পাড়ার ক্লাবের নাটকে রতন প্রধান অতিথি হয়েছে। বকুলও বলছিল- রতনদার কাছ থেকে নাকি এখনো একটা অটোগ্রাফ নেয়া হয়নি! হা হা- বকুলটা এখনো ছেলেমানুষই রয়ে গেছে।

- কী ভাইজান? কই যান? দুকানে বইলেন না একটু?

শামসু কাকার গলা শোনা যায়। কিছু মানুষের উপস্থিতি সবসময় বুঝিয়ে দিতে চায়- পৃথিবীটা কত মায়াময়! শামসু কাকা তেমন একজন মানুষ। প্রতি রাতে বাড়ি ফেরার পথে শামসু ভাইয়ের দোকানে কিছুক্ষণ বসা- চা সিগারেট খাওয়া। এটা রাশেদের অভ্যেস। ঠিক যেন রাত নটা'র লোডশেডিং-এর নিয়মের মত।

শামসু কাকা ডাকতেই রাশেদের একটু লজ্জা হয়। কোন কারণ নেই। তবুও লজ্জা হয়! দোকানের দিকে রাশেদ এগিয়ে যায়। শামসু কাকা প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে রাশেদের দিকে বাড়িয়ে দেন। দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালাতে জ্বালাতে শামসু কাকা হাসেন।

- বসেন, বসেন। আরে এককাপ চা অন্তত খাইয়া যান। সারাদিন কই কই ঘুরেন! মুখটা এমন করে আছেন ক্যান?

- কেমন করে আছি কাকা? আর এই অন্ধকারে আপনি আমার মুখ দেখতে পাচ্ছেন?

- হে হে। চোখ থাকা লাগে- বুঝলেন ভাইজান। চোখ থাকা লাগে। তা সারাদিন থাকেন কই? সেই সকাল বেলা যান... সারাদিন ঘুরাঘুরি চলে?

'কাকা' ডাকলেও রাশেদ শামসু কাকার ভাইজান। কত বছর ধরে ঘটে আসা ঘটনা! রাশেদ কখনো খেয়াল করে দেখেনি।

- আর ঘোরাঘুরি। আমার তো এখন যাওয়ার একটাই জায়গা। স্টুডেন্টের বাসা। মাঝে মধ্যে একটা কথা চিন্তা করে খুব হাসি পায়- বুঝলেন কাকা। সারাজীবন পড়ালেখায় ফাঁকি দিয়ে এলাম। আর এখন নিজেকেই মাস্টারি করতে হয়, তাও টিউশনি। আজকে জীবনে প্রথমবারের মত একটা কাজ করলাম জানেন?

হাতের সিগারেট রাশেদ শামসু কাকার দিকে এগিয়ে দেয়। খুব যত্ন করেই যেন শামসু কাকা সিগারেটে টান দেন। যত্ন করে হয়তো সিগারেট টানা যায় না। তবুও রাশেদের মনে হয়! মোমবাতির আলোয় প্রায় বৃদ্ধ শামসু কাকার দিকে রাশেদ ভালো করে তাকায়। এই মানুষটা কী সুখী নয়?

- কি এমন কাজ করলেন যে মুখটা অমন বেজার কইরা রাখতে হইব? খোলাসা কইরা কন তো দেহি!

ছাত্রীর নিচু করে রাখা মুখটা রাশেদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কষ্ট হয় খুব। সামান্য একটা অংক ঠিকমত করতে না পারা এমন কী অপরাধ? আর অপরাধ হলেও রাশেদের কী কিছু আসে যায়? তার তো টাকার দরকার। সপ্তাহে পাঁচদিন দুই ঘণ্টার বিনিময়ে মাসের শেষে দুই হাজার টাকা হাতে পাওয়াই তো সব। এর মধ্যে তো অপরাধ কিংবা শাস্তির কোন হিসেব আসতে পারে না!

- হুঁ। জানেন আজকে ফার্স্ট আমার কোন স্টুডেন্টকে মারলাম। এখন খুব খারাপ লাগছে। পিচ্চি একটা মেয়ে...

শামসু কাকা খুব মজা পায় যেন। হা হা করে হেসে ওঠে। সেই হাসির শব্দে অন্ধকারের গলিটাকে বড় বেশি নিস্তব্ধ মনে হয়। ক্লাবঘরে ছেলেদের হৈ চৈ থেমে গেছে। পিডিবির গোষ্ঠী উদ্ধার করে ওরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এখন হয়ত মোড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। বড় আনন্দময় জীবন ওদের! গলিতে কাউকে দেখা যায় না। শুধু একটা কুকুর ছুটে গেলো কোনদিকে।

শামসু কাকা কিছুক্ষণ হেসে থামেন। হাসির রেশ কথাতেও থেকে যায়।

- ভাইজান। পারেন ও। ধূর এটা কোন কথা হইল? ছাত্রছাত্রীরে না মারলে পড়ালেখা শিখাইবেন ক্যাম্‌নে- কন তো দেহি? ঐ যে ছোট থাইকতে একটা কথা আছিল না? মাইরের নাম বাবাজী। হা হা। আপনারে কইছি না? আমি তো প্রাইমারি ইশকুলে পড়ছিলাম। আমাগো ইশকুলের হ্যাডমাস্টার স্যার আছিলেন ননীগোপাল স্যার। বাঘের মত লোক আছিলেন। কতবার যে স্যারের কাছে মাইর খাইছি। একখান মজার কথা কী জানেন নি ভাইজান? স্যারের মাইর খাইছি ঠিকই- কিন্তু মানুষ আর হইতে পারলাম না... হা হা হা।

রাশেদ উঠে দাঁড়ায়। প্রতিরাতের মতো আবারো বাড়ি ফেরা। এতটুকু নতুনত্ব নেই কোথাও। অথচ এমনও দিন গেছে- যখন সবকিছু নতুন লাগতো। শামসু কাকার সেই কথাটায় যেন ফিরে আসে আবার। ''মানুষ হইতে পারলাম না''। রাশেদের বলতে ইচ্ছে হয়- শামসু কাকা, জীবন বিনিময় করবেন আমার সাথে?

ঠিক যেন নাটকের মতন। রাশেদ দরজায় কড়া নাড়তেই ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমে আসে। সাথে দপ করে আলোও ফিরে আসে। বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে মায়ের কণ্ঠ শোনা যায়। প্রতিরাতের মত। ঠিক আগের রাতের পুনঃপ্রচার যেন। আজ শুধু সাথে ঝমঝম বৃষ্টি!

- বকুল, দ্যাখতো মা কে এলো। তোর ভাইয়া বোধহয়। তাড়াতাড়ি খোল্‌ দরজা- গায়ে পানি লেগে যাবে আবার!

দরজা খুলে যায়। দরজার একপাশে হেলান দিয়ে বকুল দাঁড়িয়ে থাকে। কী বড় বড় চোখ বকুলের! রাশেদের মনটা ভালো হয়ে যায় হঠাৎ। ধমকের সুরে কথা বলে ওঠে সে।

- কি হলো? ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ঢুকতে দিবি না আমাকে?

বকুলের বড় বড় চোখ দুটিতে হাসির ঝলক দেখা দেয়। সেই বড় বড় চোখ দুটি একটু বাঁকা হয়। এই বক্রতার মানে দুষ্টুমি। এই বক্রতার মানে ভালোবাসা! এই চোখ বঁকানোর মানে মায়া -মমতা। এর মানে পৃথিবী।

- কী হলো? মার খাবি কিন্তু! সর্।

- কিছু না। সারাদিন আমার ভাইয়াকে দেখি নাই তো- তাই দেখছি। খুব ভয় লাগে জানো- কখন তোমার চেহারা ভুলে যায়, হি হি হি।

- হয়েছে। এবার দূর হ। বকুল, বাবা কেমন আছে রে আজকে? কথা টথা কিছু বলেছে?

বসার ঘরেই ছোট্ট একটা খাট। খাটের উপর লাল রঙের চাদর বিছানো। ঘরের এক পাশে এক জোড়া সোফা। কোণায় একটা পড়ার টেবিল। এটাই রাশেদের শোবার ঘর। এটাই রাশেদের রাত জেগে স্বপ্ন দেখার ঘর। রাশেদ রান্নাঘরে দিকে যায়। বকুল তার কথা বলেই যায়।

- বাবা আজকে অনেক কথা বললো, জানো ভাইয়া? রসিয়ে রসিয়ে নিজের বিয়ের গল্প করলো। লজ্জায় তো মায়ের মুখটা এতটুকু হয়ে গেলো!

রান্নাঘরে মায়ের পাশে মেঝেতেই রাশেদ বসে পড়ে। মা হাসেন। ''পাগল ছেলে!'' বলে রাশেদের চুল এলোমেলো করে দেন। মাঝে মধ্যে মনে হয়- প্রিয়জনের মুখে 'পাগল' ডাক শোনার মত আনন্দ পৃথিবীর আর কোথাও নেই! রাশেদ ছোট্ট ছেলের মতন মায়ের আঁচল ধরে বলে-

- সত্যি মা? বাবা বললো তোমাদের বিয়ের গল্প?

- যাহ পাগল ছেলে। ঐ পাগলীটা একটা কথা বলল- আর তুই তা'তে নাচ্‌ছিস!

বকুল পাশে এসে বসে। রাতের বেলা ভাইয়া যখন বাড়ি ফেরে- রান্নাঘরে বসে মার আঁচল ধরে যখন গল্প করে- বকুল পাশে এসে বসে। এই বৈঠক তার সমস্ত দিনের সেরা অংশ। মা'র কথাতে বকুল কণ্ঠে রাগের চিহ্ন ফোটায়। এই কৃত্রিমতা সবার মনে দোলা দিয়ে যায়।

- হুঁম। তোমাকে বলেছে! জানো ভাইয়া বাবা আজ কী বললো?

- কী?

- তোমাকে নাকি বিয়ে করিয়ে দিবে! হি হি।

বকুলের একথা শুনে রাশেদ হাসে। বকুলের এ কথা শুনে মা হাসে। বকুলের একথা মরচে ধরা রান্নাঘরে ফুলের সৌরভ বয়ে দেয়। রাশেদ হাসতে হাসতে বলে,

- কেন? তোর বিয়ের কথা বলে নাই? আমি তো তোর জন্য জামাই দেখে রেখেছি। হা হা...

মা কথা বলে ওঠেন। সেই কথায় স্পষ্ট শাসনের সুর। আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে- শাসনের সুরটা বড় কৃত্রিম- বড় স্নেহমাখা!

- হয়েছে! ভাইবোনে মিলে আর চিৎকার করতে হবে না। তোমাদের বাবার ঘুম আবার ভেঙে না যায়! রাশেদ, হাত মুখ ধুয়ে আয়- খেতে বস‌‌। এই বকুল প্লেট ধোয়া হয়েছে?
- হুঁ ,মা। আমিও তো খাইনি এখনো।

রাশেদ বোনের দিকে তাকায়।

- এত রাত পর্যন্ত না খেয়ে জেগে রয়েছিস কেন?

- কী জানি বাবা! আমাকে তো কিছু বলে না। শুধু বলে- বলা যাবে না।

মায়ের একথা শুনে বকুল আবার হেসে নেয়। বড় বড় চোখে রহস্যের একটা ভংগি করে। গানের মত সুর করে টেনে টেনে বলে- বলব না!

রাশেদ আর কথা বাড়ায় না। হাতমুখ ধোয়ার জন্য উঠেও যায় না। মোড়াতে ঠায় বসে থাকে। হাঁটুর উপর মুখ রেখে বকুল গুনগুন করে। গ্যাসের চুলার উপর ডেকচি থেকে মা প্লেটে ভাত নিয়ে দেয়। মায়ের সাদা কালো মেশানো শাড়িটা কেমন নেতিয়ে গেছে! মায়ের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বাবার কথা মনে পড়ে রাশেদের। প্রতি রাতে বাড়ি ফিরে বাবার ঘর থেকে একবার ঘুরে আসা হয়। বাবা ঘুমিয়ে থাকেন কিংবা শুধুই চোখ বনধ করে থাকেন। রাশেদ সেই মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। বাবার সাথে কতদিন কথা হয় না! অথচ এমন্ দিন ছিল যখন বাবার সাথে কথা বলার ভয়ে রাশেদ বিছানায় ঘুমের ভান করে পড়ে থাকত। এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে রাশেদ উঠে দাঁড়ায়।

- মা, তুমি ভাত বেড়ে রাখো। আমি বাবার ঘর থেকে একবার ঘুরে আসি।

রাশেদের ঘরের এক পাশে বাবার ঘর। মাঝখানে কিছু খালি জায়গা। সেই খালি জায়গার একপাশ জুড়ে বিশাল একটা জানালা। কখন জানালা খুলে বৃষ্টির দল ঢুকে পড়েছে। বাবার ঘরে যাওয়ার পথে রাশেদের গায়ে বৃষ্টির ছটা এসে পড়ে। কী ঠান্ডা!

প্রতিবার ঘরে ঢুকে বাবার দিকে তাকালে রাশেদের একটা কথা মনে হয়! বাবা কী বেঁচে আছেন? বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বাবার বুকে হাত রেখে নিঃশ্বাসের উঠানামা অনুভব করা পর্যন্ত এই মনে হওয়াটা থেকে যায়! বাবা কী বুঝতে পারেন নিজের বুকে তাঁর সন্তানের হাতের কম্পন?
বাবার ঘুমন্ত মুখের দিকে রাশেদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। বুক পর্যন্ত চাদর টানা। মুখটা অদ্ভুত রকমের অমলিন! এখনো মাথাভর্তি চুল। রাশেদ আনমনে হাসে একটু। তার এখনি চুল পড়া শুরু হয়েছে। অনেকটা অভ্যেসের কারণে সে বাবার গায়ের চাদরটা আবার টেনে দেয়। কপালে হাত দিয়ে জ্বর দ্যাখে। বাবার জন্য রাশেদের খুব কষ্ট হয়!

- ভাইয়া। খেতে এসো।

বকুলের ফিসিফিস কণ্ঠটা বড় অদ্ভুত শোনায়। রাশেদ দরজার দিকে এগিয়ে যায়। ঠাট্টার সুরে কথা বলে।

- কীরে পাগলী! তুই আবার না চেঁচিয়ে কথা বলা শিখলি কবে?

রাশেদের এ ঘরের টিউবলাইটটা অনেকদিন হলো নষ্ট হয়ে আছে। মা মাঝে মধ্যেই বলেন- একটা মিস্ত্রী ডেকে আনিস, লাইটটা দেখে দিবে। মায়ের কথা শুনে রাশেদ হাসে। মিস্ত্রী কী করবে মা? বাজার থেকে একটা লাইট এনে লাগিয়ে দিলেই তো হয়। এরপর মা অভিযোগের সুরে বলেন- তাহলে একটা লাইট কিনে আনলেই তো পারিস। এই বাতিতে পড়াশোনা করে তো চোখের বারোটা বাজাবি। লাইট কেনার কথা রাশেদের মনে থাকে না। আর মনে পড়লেও কেনা হয় না। কী দরকার! বেশ তো চলছে ষাট পাওয়ারের বাল্বে।

বকুল- মা শুতে যাওয়ার পর রাশেদ বালিশে হেলান দিয়ে উপুড় হয়ে শোয়। সামনে সাদাখাতা বিছানো। প্রায় প্রতি রাতে এই ঘটনা ঘটে। খাতা মেলে থাকিয়ে থাকা। প্রায় রাতেই কিছু লেখা হয় না। কিংবা শুধু কাটাকুটি করা হয়। রাশেদের খুব লিখতে ইচ্ছে করে। বাসে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় মনে হয় আজ রাতে সে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখবে। কিন্তু কিছুই লেখা হয় না। শুধু খাতার দিকে তাকিয়ে থাকাই হয়।
বৃষ্টির গতি বোধহয় বেড়েছে। বদ্ধ ঘরেও বেশ জোরেশোরেই বৃষ্টির শব্দ ভেসে আসে। রাশেদের মাথার কাছেই জানালা। একবার ইচ্ছে করে জানালাটা খুলে দিতে। বৃষ্টির ছটা একটু পরশ দিয়ে যাক! সাদা পাতায় রাশেদ ধীরে ধীরে লিখে- বৃষ্টি! আবার থেমে যাওয়া। আবার খাতার দিকে তাকিয়ে থাকা। এবার সাদাখাতায় একটা শব্দ লেখা। বৃষ্টি! হঠাৎ করে রাশেদের মনে হয়- সে কোন এক মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। যে মেয়ের দিকে একপলক তাকালে বৃষ্টি ছটার আঘাত পাওয়ার মতো অনুভূতি হয়!

- ভাইয়া কী করো? কিছু লিখলে?

কখন বকুল এসে দাঁড়িয়েছে। সবুজ পোষাক পরে থাকা বকুলের দিকে তাকিয়ে রাশেদের মনে হয়- সেই মেয়েটা ঠিক বকুলের মতো। বোনের দিকে তাকিয়ে রাশেদ বলে

- বস। এত রাত পর্যন্ত যেগে আছিস কেন? কী - ঘুম আসছে না?

বকুল ভাইয়ের পাশে এসে বসে। আড়চোখে খাতার দিকে তাকায়। বড় বড় চোখদুটিতে হাসির রেখা ধরা পড়ে।

- বৃষ্টি মানে কী?

- কিছু না। এমনিই লিখলাম। তুই ঘুমাস্ নি কেনো?

হঠাৎ করেই যেন বকুলের হাসিমাখা মুখ মলিন হয়ে যায়। রাশেদ অবাক হয়।

- কীরে! সত্যি করে বল তো - তোর কী হয়েছে?

দরজায় কড়া নাড়ার সাথে সাথে যেমন দপ করে বৃষ্টি নেমে এসেছিল, ঠিক তেমনভাবে যেন বকুলের বড় বড় চোখদুটো জলে ভরে গেলো। রাশেদের বুকটা ধ্বক করে ওঠে। বকুল কাঁদছে কেন? বকুল কাঁদছে কেন? রাশেদ বোনের মাথায় হাত রাখে।

- আপুনি! কী হয়েছে বলতো! কাঁদছিস কেন? আশ্চর্য!

বকুলের নিঃশব্দ কান্নার বাঁধ হুট করে ভেঙে পড়ে। পাগলের মত সে ভাইয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাশেদ কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। কতদিন সে বকুলভাবে এভাবে কাঁদতে দেখেনি। শুধু বকুলের চুলে হাত রেখে থমকে থাকে আর জিজ্ঞেস করে- কী হয়েছে পাগলী? কী হয়েছে?

যেভাবে কান্না শুরু হয়েছিল ঠিক সেভাবে - হঠাৎ করে বকুলের কান্না থেমে যায়। আঙুল দিয়ে চোখ মুছে নেয়। রাশেদ অবাক হয়ে বকুলের দিকে তাকায়। তার বোনকে আজকে তার খুব অচেনা মনে হচ্ছে। বকুল ভেজা চোখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে। একসময় বলে

- মা'র না হয় এসব কথা মনে থাকে না। তুমিও ভুলে গেলে?

(না। বেশ বড় হয়ে গ্যাছে। আজ থাকুক। )


মন্তব্য

পরিবর্তনশীল এর ছবি

হইতে পারে নাও হইতে পারে। দেঁতো হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

(না। বেশ বড় হয়ে গ্যাছে। আজ থাকুক। )
পড়ার আগে স্ক্রল করে একদম নিচে চলে আসলাম। এই লাইনটা দেখে গল্পটা না পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পুরাটা যদি পোস্টাও, তাইলে পড়ব। নাইলে তোমার যাবতীয় অর্ধসমাপ্ত গল্প এভাবে বয়কট করে যেতেই থাকব চোখ টিপি

আর গল্প অসমাপ্ত রাখা যে কী বাজেরকম একটা কাজ, সেই উপলব্ধি কী কখনও হবে না তোমার?? মন খারাপ

পরিবর্তনশীল এর ছবি

এই গল্প একসাথে দিতে গেলে একশ পাতা লাগবে। সেটা কী সম্ভব? চিন্তিত
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

তাইলে আর গল্প বলতেসো কেন এইটারে? বলো যে- উপন্যাস! আর যদি গ্যারান্টি দাও যে পুরাটা লিখসো, অথবা পুরাটা শেষ করবা, তাইলে ধারাবাহিকভাবে পড়তে রাজি আছি। কিন্তু "চা-পানের বিরতি" সহ্য করা হবে না চোখ টিপি

আলাভোলা এর ছবি

হে হে। বাইচা গেছি।
আজকে ধরা খাই নাই।
এরে ধইরা মার দেওনের মতো কেউ কি নাই মন খারাপ

===================
আয়রে ভোলা খেয়াল-খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।

দৃশা এর ছবি


..........................................................................................
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আমারো মনে হয় জন্মদিন।
কিন্তু লোকজনরে এইভাবে ঝুলায়া রাখা ঠিক না, মহিব।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পরিবর্তনশীল এর ছবি

গল্পটা আপাতত প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে নিলাম।
পুরাটা শেষ হইলে দিব। হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ওই পুলা! মাইর খাবা? প্রথম পাতা থেকে সরানোর দরকার কী! প্রথম পাতাতেই রাখো প্লীজ। তাইলেই বরং পুরাটা শেষ করার তাগিদ অনুভব করবা, নাইলে এই নিজের ব্লগের চিপায় নিয়া রাখলে আদৌ গল্পটা শেষ হবে নাকি সন্দেহ আছে! চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।