অচিনপুরে

পরিবর্তনশীল এর ছবি
লিখেছেন পরিবর্তনশীল (তারিখ: শুক্র, ২০/০৭/২০১২ - ১১:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শৈশব-কৈশ‌োরে আমার নিজেকে প্রায় সময় রঞ্জুর মতন মনে হতো- অচিনপুরের রঞ্জু। যে রঞ্জু মাত্র আট কী ন'বছর বয়সে মৃত্যুরহস্য নিয়ে ভাবিত হয়ে পড়েছিল, যে রঞ্জু তার নবু মামার সাথে সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফেরার পথে কবরের কাছে ধূপ শিখা দেখে আবেগে টলমল করে উঠেছিল- যে রঞ্জু পুকুরের ধারে রাত্তির বেলা একা একা বসে অকারণে ঝিঁঝির ডাক শুনে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে থেকেছিল।

নিজের বেড়ে ওঠার পরিবেশের সাথে কোন মিল নেই বলেই হয়তো- হূমায়ুন আহমেদের এই উপন্যাস আমাকে সবচেয়ে বেশি টেনেছিল- অচিনপুর। খুব ভোর বেলা কোন কোনদিন ঘুম ভেঙে যাবার পর- বুকটা কেমন কেমন করে উঠলে আমার সোনাখালির খালের ধারে রঞ্জুকে বলা বাদশা মামার সেই কথাটা মনে পড়তো, " রঞ্জু, আজ তোর খুব দুঃখের দিন। দুঃখের দিনে কী করতে হয়, জানিস?" "দুঃখের দিনে হা হা করে হাসতে হয়। হাসলেই আল্লাহ বলেন, একে দুঃখ দিয়ে কোনো লাভ নেই। একে সুখ দিতে হবে।"

আজ অনেকদিন পর নিজেকে সেই অদ্ভুত অচিনপুরের রঞ্জুর মতন মনে হলো। কেমন বিষন্ন চারপাশ, হয়তো বৃষ্টি নামবে, এখানে সেখানে ঝরে পড়বে বৃষ্টি বিলাস। তারপর একসময় সন্ধ্যে হবে, রাত নামবে- নক্ষত্রের রাত, সে অচিনপুরে সোনাখালির খালের ধারে থৈ থৈ করে ভেসে যাবে অবাক জোছনা, আমি সেই জোছনার মতনই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকব নক্ষত্রের দিকে। যে মানুষটার সাথে বহুদিন কোন যোগাযোগ ছিল না- আজ শুধু তাঁর কথা মনে পড়বে। মনে পড়বে একদিন আমার প্রায় সবকটার প্রিয় বইয়ের স্রষ্টা ছিলেন তিনি। মনে পড়বে- তিনি লিখেছিলেন বলেই ক্লাসরুমের একঘেঁয়ে ব্যাকরণ বইয়ের ফাঁকে আশ্রয় নিত নীল হাতি- বোতল ভূত কিংবা সূর্যের দিন। মনে পড়বে- ঘরের কোণার কিংবা আমাদের হৃদয়ের বুকশেলফে তিনি অনেকটুকু জুড়ে ছিলেন, আছেন, থাকবেন।

প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, আজ সূর্যের দিন নয়। ভালোই হলো, বর্ষা বিলাসী আপনাকে বিদায় জানাতে জড়ো হয়েছে অগুণতি মেঘ, বরিষণ ধারা। অচিনপুরের মেঘেরাও আপনাকে আপনার করে নিবে- এ নিশ্চিত জানি।

প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, আজ অনেক অনেকদিন পর আপনার অচিনপুর নিয়ে বসলাম। মনে হচ্ছে যেন- আমি রঞ্জু হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে কে যেন ফিসফিস করে প্রশ্ন করছে, "আজ তোর খুব দুঃখের দিন, দুঃখের দিনে কী করতে হয় জানিস?"

প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, শুধু কেউ আজ উত্তরটা বলছে না। এমন কষ্টের মূহুর্তে কি করতে হয়, আমার- আমাদের জানা নেই।


মন্তব্য

ইয়াসির এর ছবি

জানা নেই শ্রদ্ধা

অতিথি লেখক এর ছবি

" রঞ্জু, আজ তোর খুব দুঃখের দিন। দুঃখের দিনে কী করতে হয়, জানিস?" "দুঃখের দিনে হা হা করে হাসতে হয়। হাসলেই আল্লাহ বলেন, একে দুঃখ দিয়ে কোনো লাভ নেই। একে সুখ দিতে হবে।"
এমন আরো কতশত কথা প্রচন্ড মন খারাপ করা মুহূর্তগুলোতে আশা জুগিয়েছে,প্রেরণাও। তিনি বেঁচে থাকবেন আরো বহুকাল,নিঃসন্দেহে।

সুবর্ণনন্দিনী

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

শ্রদ্ধা

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

কোনো এক অদ্ভুত কারণে তাঁর কোনো বইয়ের কোনো গল্পের কথাই আমার পুরোপুরি মনে পড়ছে না। মনে পড়ছে না ক'দিন আগে লাইব্রেরি থেকে তোলা এখনো স্কুলের লকারে রাখা বইয়ের নামটাও। ছোটদের ভুতের গল্প টাইপ কোনো একটা নাম।
এখনো তাঁর পুরোনো বইগুলো পেলেই হাতে তুলে নিতে হয় কি এক নেশায়...

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পদব্রজী এর ছবি

এতদিনের সবধরনের রাগ অভিমান ছাপিয়ে কষ্টটা প্রবল হয়ে উঠছে। যতগুলো ভালোলাগার বই ছিলো সব একসঙ্গ মনে পরে যাচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

শ্রদ্ধা


_____________________
Give Her Freedom!

তিথীডোর এর ছবি

...এই অচিনপুরী তে থাকার কাল আমার শেষ হযেছে।'
#অচিনপুর, হুমায়ুন আহমেদ।

শ্রদ্ধা

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মেঘা এর ছবি

প্রচন্ড কষ্ট কতবার হাসি মুখে সামলে নিয়েছি! আজ কেন যেন কিছুতেই এই কষ্টটা সামলে নিতে পারছি না
শ্রদ্ধা

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

কড়িকাঠুরে এর ছবি

আরেক অচিনপুরে- বিদায়... শ্রদ্ধা

রানা মেহের এর ছবি

তুমি লিখলেই এত বিষন্ন কেন লেখো ভাইয়া?
এমনিতেই মন খারাপের দিন আজ

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

একটু আগেই রিটন ভাইয়ের লেখায় একটা মন্তব্যে লিখলাম এই কথা। অচিনপুর যতবার পড়েছি, চারিদিকে শূন্যতা, কি যেন নেই মনে হতো, আজ ঠিক তেমনি অনুভূত হচ্ছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।