প্রাণের টান - সচলায়তন

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি
লিখেছেন প্রোফেসর হিজিবিজবিজ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১১/০৯/২০১৩ - ৩:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার পাঠক জীবনে দুইটি দন্ত স এর প্রভাব অপরিসীম - সুকুমার রায় আর সেবা প্রকাশনী। বুঝতে পারিনি কখন যেন তৃতীয় দন্ত স এর আবির্ভাব ঘটেছে এবং তা আমার জীবনের অঙ্গাঙ্গী অংশ হয়ে পড়েছে। বুঝলাম অফ লাইনে কয়েকটি দিন কাটানোর সময়ে। বুঝতেই পারছেন এই তৃতীয় দন্ত স হচ্ছে সচলায়তন। আগে এই দন্ত স এর প্রভাব বুঝতে পারিনি, অনেকটা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝতে না পারার মত। বুঝলাম কিছুদিন আগে, যখন বিশেষ কারণ বশত: কয়েকদিন অন্তর্জাল থেকে দূরে থাকতে হলো।

না, বদনাখাতার (ফেবু) অভাব বোধ করিনি একদমই। যে সব খবরে আগ্রহী, তা পেয়ে যাচ্ছিলাম টেলিভিশন, সংবাদপত্র আর এসএমএস এই। অফিসের জরূরী মেইল চেক করা ছাড়া তাই মোবাইলের ডেটা কানেকশন চালু করিনি। সত্যি কথা বলতে কি, অন্তর্জালে না ঢুকে যেন ভালোই ছিলাম- কোনকিছুরই অভাব তো বোধ করিনি! শুধু ঝামেলা পাকালো এই সচলায়তন। আর কিছু না হোক, সচলায়তনের চেহারাখানা না দেখলে দিন শেষে কেমন যেন বিষাদে ভরে যেত অন্তর, মনে হতো কী যেন হয়নি, কী যেন পাইনি!

আবার সচল হবার পর (আই মিন, অন্তর্জালে চালু হবার পর) কয়েকদিন সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম আমার নিজের অন্তর্জালিক জীবন। ফলাফল? অফিসের কাজ বাদ দিলে নেটে আর এমন কিছু নেই যার জন্য প্রতীক্ষা করতে পারি! সচলায়তন ছাড়া আর এমন কিছু নেই যার অনুপস্থিতিতে মনের বাড়িতে হাহাকার পড়ে যায়। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম একটি দিন সচলায়তনে না ঢুকলে মনে হয় কী যেন হয়নি - কোন একটা লাইফলাইন যেন মিসিং! সারাদিন চরম ব্যস্ততার মাঝেও যখন তখন মনের মাঝে উঁকি দিয়ে যায় সচলায়তনে একবার ঢুঁ দেয়ার বাসনা। সচলায়তনে না এলে মনে হয় যেন বুক ভরে নি:শ্বাস নেয়া হয়নি আজকে।

যে কয়দিন অফলাইনে ছিলাম, ক্ষণে ক্ষণে মনে হতো বিভিন্ন লেখা আর লেখকের কথা। তবে লেখার আগেও মনে পড়ে ব্যানার আর সেই সূত্রে প্রিয় ব্যানার্জী স্যাম - এবার কোন ব্যানার এলো স্যামের হাত ধরে? নাকি অনার্য সঙ্গীতের নাড়া দিয়ে যাওয়া ব্যানার? অথবা উজান গাঁর কোন মাস্টারপীস? জি এম তানিমের কোন ডিজাইন নাতো? লেখার কথা তো বলাই বাহুল্য! কতজনের কতরকম লেখা! মনকাড়া মচমচে ভাষার সমাহার কিংবা কারো সূক্ষ ব্যঙ্গ অথবা সুতীব্র যুক্তির বাণে উন্মোচন করা বিভিন্ন অচলায়তন।

সচলায়তনের লেখা মানে মনের জানালায় এক ঝলক আলো। আর তাই বারে বারে ঘুরে ফিরে মনে হচ্ছিল বিভিন্ন লেখার কথা। তারেক অণু কি গেলো নতুন কোথাও? নাকি কোথাকার কোন খানা খাদ্য নিয়ে সচিত্র পোষ্ট দিয়ে ঈর্ষা আর হাহাকার বাড়ালো? চরম উদাসের এসো নিজে করির পরের পর্ব কি চলেই এলো? হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টির মত রিটন ভাইয়ের একটা লেখা কি পেলাম নাকি? রাগিব ভাইয়ের সুচিন্তিত ব্লগ কিংবা কোন মহতী উদ্যোগে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ? সাক্ষী দাদা (দিদি নয়) তাঁর বিজ্ঞানের রসালো গল্পের ঝাঁপি থেকে নতুন কী বের করলেন? এক লহমার মন্তব্যগুলো তারিয়ে তারিয়ে চেখে দেখা তো হলো ন! নিয়াজ ভাইয়ের গ্রীক পুরাণ কতদূর এগোলো? তুলিরেখা দেশ বিদেশের উপকথায় এবার কোথাকার লেখা আনলেন? শিমুল ভাইয়ের ঢাকা মেট্রোর চোখে ঢাকাকে দেখা হলো আবার? হিমু ভাইয়ের ঝাকানাকা কিংবা কুকিল ফিচারিং এর নতুন কোন পর্ব কি এলো? সত্যপীরের বাদার বিক্রমের পরের কিস্তি? পুতুলের তীর্থের কাকের সন্ধান কি পাওয়া গেলো? বিকট সাইজের জ্ঞান নিয়ে জ্ঞানের কথা লিখলেন কি বায়নামতি, সরি, আয়নামতি? ইতিহাসপাতালের অন্তরালে মানবতার গল্প শোনালেন কি ওডিন? পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে এবার কোথাকার ছবি দিলেন রাজু? বাংলার কোন তরু গুল্ম নিয়ে লিখলেন আব্দুল গাফফার রনি?

নীড়পাতায় এখন কী ভাসছে তা নিয়ে মাঝে মধ্যেই তীব্র কৌতুহল হতো। রনদার ‌উৎকৃষ্ট উৎবচন নাকি ঈয়াসীনের ভ্রমণে বিভ্রাট? ত্রিমাত্রিক কবির ঝাক্কাস কোন লেখা? মর্ম'র ছড়ায় ছড়ায় ছড়ানো লেখা ও মন্তব্য? তানিম এহসানেরর দুর্দান্ত কোন স্মৃতিচারণ? স্পর্শের ছুঁয়ে যাওয়া কোন লেখা? তিথীডোরের কোন "হুদাই বকবক"? অকুতোভয় বিপ্লবীর ঢাকার এমাথা ওমাথা দৌড়ানোর কোন কাহিনি? অনিকেত, সুমাদ্রী, বন্দনাদি, কৌস্তভের মনকাড়া লেখা নাকি নীড় সন্ধানী, স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট, আশালতা আপুর কোন গল্প?

কৌতুহলের সাথে সাথে প্রতীক্ষার প্রহরও তীব্র হতো। আর সেই সাথে মনে পড়তো তুলিরখাদির কথা, মানে তাঁর সেই "সচলায়তন-আমার দক্ষিণের জানালা" লেখাটার কথা। মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতাম এর সত্যতা। আর প্রতীক্ষা করতাম আবার কবে ফিরবো অনলাইনে, কবে খুলে দেবো আমার "দখিনের জানালা"।

সচলায়তনের সবাইকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই আমার জীবনকে বর্ণিল করে তুলতে বিশেষ ভূমিকার জন্য।


মন্তব্য

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

সচলায়তনের চেহারাখানা না দেখলে দিন শেষে কেমন যেন বিষাদে ভরে যেত অন্তর, মনে হতো কী যেন হয়নি, কী যেন পাইনি!

আমারেও ডুবাইছে পুরাই। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি আরি কি দারুন! আগে এমন লেখা প্রায়ই আসত। ইদানীংকালের সবেধন নীলমণি একটাই লেখা এদ্দিন পড়িনাই ক্যান? অ্যাঁ আর কিয়ের জানলা-দরজার কথা কন? ইয়ে, মানে... সচল অদ্ভুদ! পুরা অভিশাপ একটা রেগে টং

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।