ঘুঘু সমাচার

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি
লিখেছেন প্রকৃতিপ্রেমিক (তারিখ: সোম, ২৪/১২/২০০৭ - ৯:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সে অনেক অনেক ঘন্টা আগের কথা। বঙ্গদেশে তখন দেখভাল-করিবার-সরকার ক্ষমতায় অধিস্ঠিত। তাহাদের হম্বিতম্বিতে দূর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা সকলেই জেল-হাজতের ভাত খাইতেছেন। এমনই একদিন বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বিদ্যুৎউপদেষ্টামহোদয় মধ্যাহ্নভোজের পর বিশ্রাম লইতেছিলেন। সহসাই বলা নাই কওয়া নাই বিদ্যুৎ চলিয়া গেল। শীতকযন্ত্র বন্ধ হইয়া যাওয়ায় তাহার কক্ষে কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই গুমোট পরিবেশ সৃষ্টি হইল। পাইক-পেয়াদা সরব হইল এবং মুহূর্তেই খবর হইল আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রই সমস্যার মূল। তদস্থানে কী এক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় সবকটি ইউনিট বন্ধ হইয়া গিয়াছে এবং ফলশ্রুতিতে দেশের চালু আর সকল বিদ্যুৎকেন্দ্রে একযোগে উৎপাদন বন্ধ হইয়া গিয়াছে।

কিন্তু বঙ্গদেশ বলিয়া কথা। আশুগঞ্জের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের দোষ স্বীকার করিবেন কেন? তাৎক্ষণিক নিজেদেরকে নির্দোষ দাবী করিয়া তাহারা জাতীয় গ্রীডের উপর দোষ চাপাইয়া ক্ষ্যান্ত হইতে চাহিলেন। এই দোলাচালে পড়িয়া উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ত্রুটির মূল খুঁজিতে পিডিবির হোমরাচোমরা এক প্রকৌশলীকে তাৎক্ষণিকভাবে আশুগঞ্জে পাঠাইয়া দিলেন। পূর্ববর্তী সরকার হইলে সাবোটাজ তত্ব বাহির হইয়া পড়িতো। কিন্তু এখন তো কোন রাজনীতি করিবার অধিকার নাই, সে অধিকার ফাইলচাপা দিয়া রাখা হইয়াছে। তাহা হইলে সাবোটাজ তত্ত্ব কাজ করিবে কীভাবে ইহাই দেশবাসীর মনে প্রশ্ন হইয়া দেখা দিল।

অপরদিকে বিদ্যুতের অভাবে রাজধানী ঢাকার সকল ট্রাফিক সিগন্যাল একযোগে বিকল হইয়া পড়িল ও ট্রাফিক পুলিশদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে অতিশয় বেগ পোহাইতে হইল। অবস্থা সামলাইতে ব্যারাক হইতে অতিরিক্ত পুলিশ আনিয়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করিতে হইল। বিদ্যুতের এহেন বিপর্যয় হইতে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁহার কার্যালয় অবদি রেহাই পাইল না। তাই দেখিয়া বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা অতিশয় ভীত ও পীড়িত হইয়া তদন্ত কমিটি গঠন করিল ও বিদ্যুৎ-রহস্য উদঘাটনে আদজল খাইয়া লাগিয়া পড়িল।

ঘুঘুই দায়ী: আহতাবস্থায় আটক

উপায়ান্তর না দেখিয়া সাবোটাজ তত্ত্বই কাজে লাগানো হইল। তদন্ত শুরু হইবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তদন্ত কমিটি বিপর্যয়ের জন্য একটি ঘুঘুকে দায়ি করিলেন। শক্ত একটা যুক্তিও বাহির করা হইল। ঐদিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে ভাসভারের কাছে ঘুঘুটিকে আহত অবস্থায় পাওয়া গিয়াছিল। ঘুঘুই যদি দায়ী না হইবে তো পিছনের ডানা ও লেজের সবগুলো পাখনা পুড়িল কী করিয়া? সন্দেহভাজন ঘুঘুটিকে আহতাবস্থায় গ্রেফতার করিয়া আপিসের একটি কাগজের ঝুড়িতে আটক করিয়া রাখা হইল। যতদূর জানা গেল ঘুঘুটি সুস্থ রহিয়াছে। তবে রিমান্ডে নেয়া হইতে পারে এই ভাবনায় উহা নির্বাক হইয়া মুষরে পড়িল।

এদিকে রাজধানী হইতে ছুটিয়া আসা তদন্ত কমিটির প্রধান ওকে জোতদার মহোদয়ও ঘুঘুটিকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করিলেন। প্রমাণ হিসেবে ঘুঘুটির ছবি তুলিয়া নিয়া ঐদিন বৈকালে ঢাকায় ফিরিয়া গেলেন। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি মত দিয়াছেন যে ঘুঘুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডের ১৩২ কেভি ভাসভারের জাম্পার ও হরনগেটের মধ্যদিয়ে যাইবার পথে ফ্লাশিং সৃষ্টি করে। এ সময় ঘুঘুটি ইচ্ছাকৃতভাবে সাবোটাজের উদ্দেশ্যে তার-জাতীয় কোন জিনিস পায়ে ঝুলাইয়া নিয়া যাইতেছিল বলিয়া মত প্রকাশ করা হইল। অকুস্থলে তার-জাতীয় কোন জিনিস না পাওয়া গেলেও আসামী ধরা পড়িয়াছে এবং প্যাঁদানি দিলেই সব বাহির হইয়া পড়িবে এই খুশিতে কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়া আসিল।

(পরের দিনের ঘটনা)
এদিকে ঘুঘুটি নাওয়া খাওয়া প্রায় ছাড়িয়া দিল। তাই দেখিয়া কর্তৃপক্ষ একমাত্র আসামীকে বাঁচিয়া রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করিতে লাগিল। ইত্তবসরে একজন পক্ষীবিশারদের পরামর্শে ঘুঘুটিকে খাবার হিসাবে খুদ, ধূলোমাটি, খোসাশুদ্ধ মসুরের ডাল ও সরিষা দানা দেওয়া হইল। কিন্তু ঘুঘুটি পানাহার বন্ধ করিয়া চুপচাপ বসিয়া রহিল।

(তার পরের দিন)
কিন্তু শেষ রক্ষা আর হইলনা। কী এক কারণে তদন্ত কমিটি তাহাদের মত পাল্টাইলেন। তাহারা বুঝিতে পারিলেন যে ঘুঘুকে দায়ি করা ধোপে নাও টিকিতে পারে; বরং বড় কোন পাখি যেমন বাজ হইলে হয়তো এ যাত্রা পাড় পাওয়া যাইতো। কিন্তু বাজ পাখি তাহারা কোথায় পাইবেন? তাই তাহারা নন্দঘোষে সন্ধান করিতে মনোনিবেশ করিলেন। অবশেষে একজন নন্দঘোষের সন্ধান পাওয়া গেল। আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপককে (সংরক্ষণ) দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হইল। তাহার বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারেরও অভিযোগ উঠিল।

অতপর বেচারা ঘুঘু মুক্তি পাইল এবং সুখে শান্তিতে পরিবার লইয়া দিন কাটাইতে লাগিল।


মন্তব্য

ফারুক হাসান এর ছবি

ভালোই ঘুঘু থিউরী দিলেন। হাসি
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

শামীম এর ছবি

ঘুঘু দেখেছে কিন্তু ফাঁদ দেখেনি দেঁতো হাসি
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

দুর্দান্ত এর ছবি

এই নির্দিষ্ট ঘটনার জন্য দায়ী কে, তার জবাব বিশেষজ্ঞদের কাছে...

কিন্তু ঘুঘু, চড়ুই, ইদুর, খরগোশ এদেরকে হালকা চোখে দেখার উপায় নেই।

২০০০ এর জুন মাসে বংগোপসাগরে গ্যস উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত ড্রিলরিগ EE-IV (দৈনিক ভাড়া এক লাখ ডলার) তিন দিন বন্ধ ছিল, কারন এর ইলেক্ট্রনিকস সিস্টেমস এর অতি সুক্ষ তার কেটে কেটে বাসা বানাচ্ছিল এক নেংটি ইঁদুর দম্পতি। তখন গোয়েন্দা ঝাকানাকার অনুপস্থিতিতে অধম আর মালয়শিয়া-সিঙ্গাপুরের কিছু বিটকেল পোলাপান মিলে ইঁদুর দম্পতি আর তাদের গোলাপি পাঁচটা ছানাদের বের করে এনেছিলাম। অবশ্য ভাজ্ঞিশ আন্তর্জাতিক ইন্স্যুরেন্স এই জাতীয় বিঘ্ন কভার করে, তাই সেই যাত্রা, বাংলাদেশী সরকারের তিনলাখ ডলার গচ্চা যায়নি।

পরে ইউরোপ এ এসে দেখলাম ইদুর, চড়ুই এখানে বিরাট ব্যপার। এখানকার সাইট সিকিউরিটি টিম এর ইমার্জেন্সি লিস্ট মাত্রই স্থানীয় pest control কম্পানির ফোন নম্বর থাকবে। দমকল, পুলিশ, ক্ষতিকর বস্তুর spill ইত্যাদিরে মত ইঁদুর, চিকা, খরগোশ, চড়ুই, সয়েলো ইত্যাদি ও সমান মাপের আপদ। ফ্রান্স এর দক্ষিনের মার্সেই এর কাছের বের দ"তাং এ আমাদের রিফাইনারি তে এই অবস্থা এতই সংগীন ছিল যে, ওইখানে একজন ফুল্টাইম লোক নিয়োগ করার দরকার হয়েছিল, যার কাজই ছিল ৭/৮ বর্গকিলমিটারের সাইটে খরগোশ আর খরগোশখেকোদের সংখ্যা বাগে রাখা। এম্নিতে রিফাইনারির সাইটে খরগোশ একটা সমস্যা।
কিন্তু খরগোশের লোভে তখন দিনে চিল আর রাতে প্যাঁচা/লাল শিয়ালে সারা সাইট ভরে যায়। এদের অনেকেই, কারাখানার চিম্নি, টাওয়ার, লাম্পপোস্টকে তাদের বাসা বানাত।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এ কতা কওয়া যাবিনানে। অরা শুনলি পারে বেবাক ঘুঘু মাইরা সাফা করি ফালাবে।

হিমু এর ছবি

আমার ধারণা ঘটনার পেছনে আরো বড় আকৃতির ঘুঘু আছে। তাদেরও খুঁজে বার করে পশ্চাদ্দেশের কিছু লোম বিদ্যুৎ প্রয়োগে পুড়িয়ে দেওয়া উচিত। বলা যায় না, ব্যাপারটা অর্নিথোলজি থেকে ইকথিওলজির দিকেও ঘুরে যেতে পারে, অর্থাৎ কিছু রাঘববোয়ালকেও পাওয়া যেতে পারে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

ধুসর গোধূলি এর ছবি

অপরদিকে বিদ্যুতের অভাবে রাজধানী ঢাকার সকল ট্রাফিক সিগন্যাল একযোগে বিকল হইয়া পড়িল ও ট্রাফিক পুলিশদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে অতিশয় বেগ পোহাইতে হইল।

ঘটনা হৈলো টিরাফিক লাইটের ঝিলিকেই যদি কাম হৈতো তাইলে হালায় টিরাফিক পুলিশেরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাইটানিকের নায়িকার লাহান পাংখা ছড়াইয়া খাড়াইয়া করে কী?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মনে হয় খাড়ায়া খাড়ায়া দেখে সব লাইনে আছে কী না।

নজমুল আলবাব এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।