ছোট মেয়ের গল্পের বই

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি
লিখেছেন প্রকৃতিপ্রেমিক (তারিখ: শুক্র, ০৮/০১/২০১৬ - ৯:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছোট বেলায় লেখার অভ্যাস থাকলেও বড় বেলায় এসে অভ্যাসটা চলে গিয়েছিল। তারপর অনেকদিন ব্লগে লিখেছি। মাঝখানে বেশ কিছুদিন বিরতির পর আবারো লেখার ইচ্ছা জেগে উঠেছে। লেখা মানে সময়কে ওয়েবের পাতায় ধরে রাখা। আগে ডাইরির পাতায় মানুষ স্মৃতিকথা লিখে রাখতো। ডাইরি হয়তো এখনো কেউ কেউ লেখে। তবে ওয়েবেই স্বাচ্ছন্দ বেশী পাই।

অনেকের মতই আমিও চেয়েছিলাম আমার বাচ্চারা লিখতে শিখুক। সৃজনশীল লেখা না হোক, লেখার অভ্যাসটা গড়ে উঠুক। বড় মেয়েটা গ্রেড সেভেন এ যায়। জোর করে মাঝে মধ্যে ওকে দিয়ে লিখিয়েছি। লেখে ভালোই। এসব দেশে স্কুল থেকেই এরা লেখালেখির সাথে পরিচিত হয়। লেখা শেখানোর উপর এসব দেশে বাবা-মা রা বেশ গুরুত্ব দেয়। অনেকে অনলাইনে লেখালেখি শেখানোর ট্রেনিংও দেয়।

আমার ছোটবেলায় স্কুলে কোনদিন লেখা কেউ শিখিয়েছে বলে মনে করতে পারি না। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনা করে আমরা অনেকেই দেশেরটাকে ভালো মনে করে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পছন্দ করি। আমি নিজেও একসময় সেরকম চিন্তা করতাম। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই ভিন্ন। সে কথা পরে কখনো লেখা যাবে। সংক্ষেপে আমার উপলব্ধি হলো দেশে বাবা-মায়ের প্রচেষ্টায় যারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তারাই উঠে আসে। বাকীরা যারা উঠতে পারে না তারা আসলে সুযোগ পায়না। সেটা স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব খানের জন্যই সত্যি। অপরদিকে এখানে বাচ্চাদের গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়, তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের চেষ্টা করা হয়। সেটা মূলত স্কুলে সীমাবদ্ধ। ইউনিভার্সিটির আন্ডারগ্রাড পার হলে এরা ইন্ডিপেন্ডেট থিংকিং শিখে যায়। যারা সে পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে না, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারি ডিগ্রী না নিয়ে অন্য কিছু করে। এবং সেখানে তারা সফলও হয়।

বড়টার লেখার ইচ্ছে একেবারেই নেই। অনেক বলিয়ে কইয়েও ওকে দিয়ে লেখানো যায় না। অন্যদিকে ছোটটা, যে কিন্ডারগার্টেন-এ যায় সে মনে হচ্ছে লেখালেখিতে আগ্রহী হবে।

আজ সন্ধ্যায় আমার প্রিন্টারের ট্রে থেকে কাগজ চুরি করে বইয়ের মতো ভাঁজ করে বসে বসে দেখি টেপ মারছে। উদ্দেশ্য বইয়ের মতো শেইপ দেয়া যেটা বাঁধাই করা বইয়ের মতো দেখায়। দেখলাম ভালোই বই বানিয়েছে।

বই বানিয়েই শেষ করে নি। সেটা কিসের বই তাও দেখিয়েছে। ইংরেজী বাক্য গঠন এখনো তার শেখা হয়ে ওঠেনি। তবে তার সাহায্য নিয়ে আমি ইংরেজি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিলাম।

_MG_2740.jpg
ইলিয়ার হাতে বানানো গল্পের বই - জানুয়ারি ৭, ২০১৬

_MG_2734.jpg
A book about flowers - by Eiliyah Jan 7, 2016

_MG_2735.jpg
Once there was a kid named Eiliyah. She was planting in the garden

_MG_2736.jpg
and one flower started to grow. That flower was a sunflower

A book about flowers

-by Eiliyah

Once there was a kid named Eiliyah
She was planting in the garden
One flower started to grow
That flower was a sunflower

(Jan 7, 2016)

ধারণা করি বাংলাদেশের এই বয়সী বাচ্চারা আরো অনেক অগ্রগামি। সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। বরং নিজে থেকেই যে আগ্রহ প্রকাশ করে একটা গল্প লিখে নিয়ে এসেছে, আমি সেজন্যই খুশি। তাকে জিজ্ঞেস করলাম বানান গুলো এভাবে নয়, অন্যভাবে হবে। তখন সে বলে-- না এটা তো এভাবেই প্রনাউন্স করে। আমি আরো মুগ্ধ হলাম এটা ভেবে যে সে নিজের মতো করে চিন্তা করা শিখেছে।

আগ্রহ ধরে রাখা গেলে আসল বানান পরে শেখানো যাবে।

সবাইকে ধন্যবাদ।


মন্তব্য

মোখলেছুর রহমান সজল  এর ছবি

পড়ে এক ধরণের সতেজ ভালোলাগায় ভরে গেলো।

এদেশে এখনও পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্যবই কিংবা আউটবুক পড়া মানে পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়ার মত। যার ক্ষেত্রে এটা ঘটে খুব সহজেই তকমা পেয়ে যায় 'লেখাপড়ায় মন নাই'। এবং প্রায়শই এই আউটবুক পড়া কিংবা আউট অ্যাক্টিভিটিগুলো নেগেটিভ অর্থে প্রয়োগ করতে দেখা যায়। আশার কথা এই যে, এই চিত্র অনেকাংশেই কমে যাচ্ছে। তবুও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে শিশুকে বিকশিত করার সুষ্ঠু পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হ্যাঁ, আমিও শুনেছি এখন পড়ানোর ধারায় পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে প্রাইভেট স্কুল গুলিতে। সরকারি স্কুলে সম্ভবত আগের মতই ধর তক্তা মার পেরেক স্টাইলে পড়ানো চলছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ওকে জানাবেন তার ইতোমধ্যেই একজন ভক্ত হয়েছে, পরের লেখার জন্য যে অপেক্ষা করছে।

স্বয়ম

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আরিব্বাস আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

শিশিরকণা এর ছবি

তারপর কি হলো?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দেখা যাক, আবার কবে সে বাকীটা লেখে হাসি

এক লহমা এর ছবি

চমৎকার! ফুল ফুটতে থাকুক।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

জ্বী, জনাব হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার ছেলেকে স্কুল (গ্রেড ওয়ান) থেকে দুদিনের জন্য একটা সাদা কুকুর ছানা দিয়েছিল। আসল না, পুতুল। নাম ছিল লিও। সে লিওকে নিয়ে শপিং, রেস্টুরেন্টে যেতে পারবে। রাতে পাশে নিয়ে ঘুমাতে পারবে। তবে লিওকে নিয়ে সে দুদিন কি কি করেছে তা লিখতে হবে। এটা আমার কাছে ইনোভেটিভ মনে হয়েছিল।
____________
সৌমিত্র পালিত

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সেটাই। লিও নামের এক বিড়াল এসেছিল বাসায়। আমার বাচ্চাটা সেটা নিয়ে বেশ মজা করে খেলেছে।

দেবদ্যুতি এর ছবি

ইস! ইলিয়াটা একটা জাদুবাচ্চা পুরো। এত্ত চমৎকার ক্ষুদে গল্প লিখে ফেলল এই বয়সে! ওর জন্য অনেক ভালোবাসা, অভিনন্দন আপনাদের, এমন লিখিয়ে বাচ্চার বাবা-মা হবার জন্য হাসি

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি কি দারুণ!

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।