নগরে নিসর্গ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি
লিখেছেন প্রকৃতিপ্রেমিক (তারিখ: শুক্র, ০৩/১০/২০১৪ - ৯:৪২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

। এক ।

মধ্য দুপুরে জানালায় ভারী পর্দা দিয়ে অন্ধকার ঘরে দিবাস্বপ্ন দেখতে দেখতে যখন দিবানিদ্রায় যাওয়ার সময় হল ঠিক তখনই খুব কাছে থেকে একটা ঘুঘু ডেকে উঠল। একবার, দুইবার। এর পর থেমে থেমে আরো কয়েকবার।

তন্দ্রা মতো ধরেছিল। ঘুঘুর ডাকে তন্দ্রার মধ্যেই স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হল। আমি কোথায়? কোথায় আমি? তিরিশ বছর আগের কোন এক দুপুরে ঘরের দরোজা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিল যে কিশোরটি--এপাশ থেকে ওপাশ ফিরে ঘুম ভেঙে জেগে উঠে সেই খোলা দরোজা দিয়ে দেখেছিল লাল-মরিচে ভরা বাড়ির আঙিনায় রৌদ্রের মেলা, আজ বহুদিন পরে ঘুঘুর ডাক যেন নিয়ে গেল সেই কৈশোরে!

ভর দুপুরে ক্লান্ত পথিকের মতোই অলস স্বরে ডাকছিল সেই ঘুঘু। অনেকক্ষণ সেই ডাক না শুনে তন্দ্রা ছুটে গেলে নিজেকে আবিষ্কার করি কাগজের তৈরী ঘরে পাতা অস্হায়ী বিছানায়। কী অদ্ভুত জীবন্ত সেই স্মৃতি! স্মৃতির সেই অযুত-নিযুত গলি পথের দিশা খুঁজতেই আবারো তন্দ্রা এলো, সেই সাথে ফিরে এল অগণিত স্মৃতি যেন একটানে দেখে ফেলা বায়োস্কোপের সুদীর্ঘ রীল-- স্টেশনে দাঁড়িয়ে সদ্য মিস করা ট্রেনের যাত্রীর মতো অপলক দৃষ্টি হারায় যার শেষ বিন্দুটুকু।

। দুই ।

এখন কয়টা বাজে?
ঘড়ি দেখবার সামর্থ্য উধাও।

হয়তো মধ্যরাতের একটু পর। দরোজার ওপাশে পার্কিং লট। মাঝখানে কংক্রিটের ওয়াকওয়ে। কংক্রিটের উপর টপ টপ শব্দ করে বৃষ্টি পড়ছে। এরই মধ্যে কোত্থেকে আদুরে গলায় কাকের বাচ্চার মতো ডাক শোনা গেল। নিশ্চয়ই সেই ঘুঘু উপরের কোন ঘুলঘুলিতে বাসা বেঁধেছে। আশেপাশে কোন কাকের দেখা মেলেনি কোনদিন। অথচ কাক দেখা যায় রকি পর্বতমালায়--১০ হাজার ফুট উপরে-- আলপাইন তুন্দ্রায়।

অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে ঘর পেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াই। সামনে একইভাবে খানিকটা বাঁকা করে পার্ক করা পুরনো সেই গাড়ি, তার ওপাশে আবার দালান, দালানের উপর আকাশ, আকাশে ইতস্তত মেঘ অলস গতিতে সময় কাটাচ্ছে। আধা একটা চাঁদ উঠেছে--কালো আকাশে অন্যের আলোয় নিজেকে সাজিয়েছে--যেন আমার জন্যই তার অপেক্ষা।

।তিন।

অক্টোবরে চলে এলো। শীতও আসি আসি করছে। আজ সকালে ধূমায়িত মেঘ যখন নেমে এসেছিল স্কুলের মাঠে, সূর্য তখন প্রাণান্ত চেষ্টা করছিল সেই আবরণ ছিঁড়ে ফেলতে। রকির চূড়ায় জমতে শুরু করেছে শাদা বরফ -- এভিনিউ ১২০ থেকে দেখে মনে হয় যেন তিমির পিঠে জমানো ফেনা। উপরে নিশ্চল নিশ্চুপ মেঘের দল ভীড় করে আছে, আর নীচে নীলচে রকি মাউন্টেন সৃষ্টি করেছে এক অদ্ভুত কালার কম্বিনেশন। চোখের দেখা আর ক্যামেরায় দেখা এক নয়। তাই ক্যামেরা ও চোখ রয়ে যায় যার যার স্থানে।


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

অসমাপ্ত, হুঁ চিন্তিত

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এই পর্ব সমাপ্ত। পরবর্তীতে আরো লিখব--সে আশা রাখছি। সেজন্যই অসমাপ্ত বলা। ধন্যবাদ আপনাকে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

যত্নে বোনা মায়াময় স্বপ্নিল লেখা। আমাকে অভিভূত করে। কিছু টাইপো আছে, তবু লেখার অসাধারণত্ব সেটুকুকে ছাপিয়ে যায়। কিন্তু কিছু কট্টর নিন্দুক আছে বলে তো কথা! তাদেরই কারো কারো অত্যাচার কখনো কখনো যে সইতেই হয়!
কৈশরে>কৈশোরে
অনেক্ষণ>অনেকক্ষণ
অগনিত>অগণিত
সামর্থ>সামর্থ্য
ধুমায়িত>ধূমায়িত (অনেকেই দেখি এই বানানটা ভুল করে)
'পাথুরে' ও 'রকি' বোধকরি একই অর্থ বহন করে।
সচলায়তনে আমার প্রথম লেখাটিতে প্রথম মন্তব্যটি ছিল আপনার। আপনার ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি প্রতি মুহূর্তেই তা ভালোবাসাভরে মনে রেখেছি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ। জানতাম কিছু বানান ভুল আছে, তবে সামর্থ্য বানানটা আজ শিখলাম হাসি
আপনার প্রথম লেখার প্রথম মন্তব্যকারি হিসেবে আমাকে যে ভালোবাসাভরে মনে রেখেছেন সেটা জেনে মনে এক ধরনের সুখানুভূতি হলো। ভালো থাকুন।

মাসুদ সজীব এর ছবি

চলুক প্রথম প্যারাটি কেমন জানি মন্ত্রমুগ্ধতা সৃষ্টি করে নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে স্মৃতির ঘরের বদ্ধ জানালাতে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

প্রথম পর্বটি লিখেই বেশী ভালো লেগেছে। সেজন্যই বোধ হয় অনুভূতিটুকু মিলে গেল। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

চোখের দেখা আর ক্যামেরায় দেখা এক নয়। তাই ক্যামেরা ও চোখ রয়ে যায় যার যার স্থানে।

অনেক ভালো লাগা।
এবং পরবর্তী অংশের অপেক্ষা!

শুভকামনা অনিঃশেষ জানবেন। সবসময়।

দীপংকর চন্দ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ধন্যবাদ দীপংকর।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আমার ছেলে বলে, ছবি তোলার মুডে থাকলে অসাধারণ কিছু মুহূর্ত মিস হয়ে যেতে পারে! তাই ক্যামেরা ও চোখ যার যার স্থানে রাখাই বাঞ্ছনীয়।
অনেকদিন পরে আপার লেখা পড়লাম। হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ঠিকই বলেছেন। লেখা আর হচ্ছে কই; টুক টাক যখন মনে কিছু আসে তখন লিখি আরকি। ধন্যবাদ ভাই।

তাসনীম এর ছবি

কোন লেখার সবচেয়ে কঠিন অংশ মনে হয় প্রথম কয়েকটি লাইন। দারুণ শুরু করেছে, অপেক্ষাতে থাকবো। সামান্য হলেও আমারও কিছুটা প্রকৃতিপ্রেম আছে দেঁতো হাসি

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হুম, জানি তো হাসি

দেখি, এরকম কয়টা লিখতে পারি দেঁতো হাসি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলেন। আপনার হাতে এই জাতের লেখাগুলো খুব পাখা মেলে। আরো পর্ব দেন জলদি হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই। দেখি, আবার লেখা হলেই দিয়ে দিব।

রংতুলি এর ছবি

কি সুন্দর! প্রকৃতিকে ছুঁয়ে লিখেছেন যেন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হুম, প্রকৃতিকে আমি ছুঁয়েছি এবং প্রকৃতিও আমাকে ছুঁয়েছে হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি

কতকিছু মনে করায়া দিলেন

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অ মর শৈশব।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বেশি করে নিয়ে বসেন, নাহলে শেষ হয়ে যেতে পারে হাসি

কল্যাণ এর ছবি

আমিও পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম নিয়া বসলাম পিপিদা।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।